অস্থায়ী মাহরাম:
কতিপয় নারী, যাদেরকে বিশেষ কারণে বিয়ে করা একজন পুরুষের জন্য সাময়িক সময়ের জন্য হারাম। সেই সময় বা কারণ চলে গেলে তাদেরকে বিয়ে করা জায়েয। এ শ্রেণির নারীকে আমরা অস্থায়ী মাহরাম নারী হিসেবে অভিহিত করছি।
উল্লেখ্য, এখানে বিয়ে হারাম হওয়ার বিষয়টি কিন্তু কেবল ‘একত্রিত করা’র কারণে; অন্য কোনো কারণে নয়। সেজন্য কারো স্ত্রী মারা গেলে অথবা তালাক হয়ে গেলে সে তার স্ত্রীর বোনকে বা স্ত্রীর ফুফুকে বা খালাকে বিয়ে করতে পারে।[1]
মনে রাখতে হবে, স্থায়ী মাহরাম নারীদের সাথে সাধারণত যা যা বৈধ, তার কোনোটাই অস্থায়ী মাহরাম নারীদের সাথে বৈধ নয়। কিন্তু এখানেই অনেকেই ভুল করে থাকে, সবকিছু একাকার করে ফেলে। অস্থায়ী মাহরাম নারীদেরকে স্থায়ী মাহরাম নারীদের মতো গণ্য করে তাদের সাথে নির্জনে মিলিত হয়, দেখাদেখি করে, মুছাফাহা করে, একসাথে সফরে বের হয় ইত্যাদি। অথচ এগুলোর কোনোটাই অস্থায়ী মাহরামদের ক্ষেত্রে বৈধ নয়।[2]
নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত যে সমস্ত নারীকে বিবাহ করা হারাম, তারা কয়েক ধরনের। তাদেরকে বিয়ে করা হারাম হওয়ার কারণও ভিন্ন ভিন্ন। নিচে তাদের সংক্ষিপ্ত বিবরণ পেশ করা হলো-
(১) দুই মাহরামকে একই সময়ে স্ত্রী হিসেবে রাখা: এক্ষেত্রে সূত্র হচ্ছে,يَحْرُمُ الْجَمْعُ بَيْنَ كُلِّ امْرَأَتَيْنِ بَيْنَهُمَا قَرَابَةٌ، لَوْ كَانَتْ إِحْدَاهُمَا رَجُلًا، لَمْ يَجُزْ لَهُ الزَّوَاجُ بِالْأُخْرَى ‘এমন দুই মাহরাম নারীকে একই সময়ে একত্রে স্ত্রী হিসেবে রাখা হারাম, যাদের মধ্যে আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে এবং যাদের একজন পুরুষ হলে তার জন্য অপরজনকে বিয়ে করা জায়েয নেই’। যেমন- দুই বোন; যদি আমরা তাদের একজনকে পুরুষ ধরি, তাহলে তাদের পরস্পর বিয়ে বৈধ নয়। অনুরূপভাবে কোনো নারী ও তার ফুফুকে বা তার খালাকে একই সাথে স্ত্রী হিসেবে রাখা যাবে না।[3] একজনকে পুরুষ ধরলে প্রথম উদাহরণে তাদের পরস্পরের সম্পর্ক হয় ভাই-বোনের, দ্বিতীয় উদাহরণে হয় ভাতিজি-চাচা বা ভাতিজা-ফুফুর আর তৃতীয় উদাহরণে হয় ভাগ্নী-মামা বা ভাগ্নে-খালার। আর আমরা জানি, এরকম সম্পর্ক তাদের পরস্পরের মধ্যে বিবাহবন্ধন হারাম।
মহান আল্লাহ বলেন, وَأَنْ تَجْمَعُوا بَيْنَ الْأُخْتَيْنِ إِلَّا مَا قَدْ سَلَفَ ‘আর (তোমাদের উপর হারাম করা হয়েছে) দুই বোনকে একত্রিত করা। তবে অতীতে যা হয়ে গেছে, তা ভিন্ন কথা’ (আন-নিসা, ৪/২৩)। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,لاَ يُجْمَعُ بَيْنَ المَرْأَةِ وَعَمَّتِهَا، وَلاَ بَيْنَ المَرْأَةِ وَخَالَتِهَا ‘কোনো নারীকে তার ফুফুর সাথে (স্ত্রী হিসেবে) একত্রিত করা যাবে না। অনুরূপভাবে কোনো নারীকে তার খালার সাথে (স্ত্রী হিসেবে) একত্রিত করা যাবে’।[4]
কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:
ক. এখানে দুই বোনকে একত্রে স্ত্রী হিসেবে রাখার ব্যাপারটি সহোদরা, বৈমাত্রেয় বা বৈপিত্রেয় বোনের ক্ষেত্রে যেমন প্রযোজ্য, তেমনি তারা বংশীয় কারণে বোন হোক বা দুধপান সূত্রে বোন হোক সেক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। ফলে এদের কাউকেই স্ত্রী হিসেবে একত্রিত করা যাবে না।[5]
খ. এখানকার এই নিষেধাজ্ঞা কোনো নারী স্ত্রী হিসেবে থাকা অবস্থার ক্ষেত্রেও যেমন প্রযোজ্য, তেমনি স্ত্রী ইদ্দত অবস্থায় থাকার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। সেজন্য কেউ স্ত্রীকে তালাক দিলে এবং তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রী ইদ্দত পালন শুরু করলে ঐ ব্যক্তি যদি উক্ত মহিলার বোনকে বিয়ে করে, তাহলে তা হারাম হবে; ইদ্দতকাল শেষ না হওয়া পর্যন্ত তার বোনকে বিয়ে করতে পারবে না। কারণ তালাকের ক্ষেত্রে ইদ্দতকালীন সময়ে তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রী তার স্বামীর স্ত্রী হিসেবেই থাকে। অনুরূপভাবে স্ত্রীর ইদ্দতকালীন সময়ে তার খালা ও ফুফুকেও বিয়ে করা যাবে না।[6]
গ. দুই বোন দাসী হলে তাদেরকে একই ব্যক্তির মালিকানায় রাখা বৈধ। তবে তাদের যে কোনো একজনের সাথে সহবাস হলে অপরজন সহবাসের ক্ষেত্রে হারাম হয়ে যাবে।[7]
(২) অন্যের স্ত্রী বা তার ইদ্দতপালনরত স্ত্রী: একজন মুসলিমের উপর অন্যের স্ত্রীকে বা তার ইদ্দতপালনরত স্ত্রীকে বিয়ে করা হারাম। মহান আল্লাহ বলেন,وَالْمُحْصَنَاتُ مِنَ النِّسَاءِ إِلَّا مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ ‘আর নারীদের মধ্যে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ নারীগণও তোমাদের জন্য হারাম। তবে তোমাদের ডান হাত যাদের মালিক হয়েছে (দাসীগণ), তারা ছাড়া’ (আন-নিসা, ৪/২৪)।
অতএব, অন্যের স্ত্রীকে তার স্ত্রী থাকা অবস্থায় বিয়ে করা হারাম। এক্ষেত্রে শুধু নারী যুদ্ধবন্দীর বিধান ব্যতিক্রম। কারণ জিহাদে কোনো বিবাহিতা নারী যুদ্ধবন্দী হলে এবং পূর্ব থেকে গর্ভবতী কিনা সে ব্যাপারে নিশ্চিত হলে সে হালাল হিসেবে পরিগণিত হবে।[8]
এখানে ইদ্দতপালনের বিষয়টি তালাকের ক্ষেত্রেও হতে পারে আবার স্বামীর মৃত্যুর ক্ষেত্রেও হতে পারে। মহান আল্লাহ বলেন, وَالْمُطَلَّقَاتُ يَتَرَبَّصْنَ بِأَنْفُسِهِنَّ ثَلَاثَةَ قُرُوءٍ ‘আর তালাকপ্রাপ্তা নারীরা তিন মাসিক পর্যন্ত প্রতীক্ষা করবে’ (আল-বাক্বারা, ২/২২৮)। অন্যত্র আল্লাহ তাআলা বলেন,وَالَّذِينَ يُتَوَفَّوْنَ مِنْكُمْ وَيَذَرُونَ أَزْوَاجًا يَتَرَبَّصْنَ بِأَنْفُسِهِنَّ أَرْبَعَةَ أَشْهُرٍ وَعَشْرًا ‘আর তোমাদের মধ্য থেকে যারা মারা যাবে এবং স্ত্রীদেরকে রেখে যাবে, তাদের স্ত্রীগণ চার মাস দশ দিন অপেক্ষায় থাকবে’ (আল-বাক্বারা, ২/২৩৪)।
(৩) তিন তালাকপ্রাপ্তা নারী: কোনো নারীকে তার স্বামী তৃতীয় তালাক দিয়ে দিলে সেই নারী ঐ পুরুষের জন্য হারাম হয়ে যায়। ঐ নারীর অন্য পুরুষের সাথে স্বাভাবিক ও বিশুদ্ধ বিয়ে হয়ে আবার স্বাভাবিক তালাক না হওয়া পর্যন্ত তার পূর্বের স্বামীর সাথে তার পুনরায় বিয়ে বৈধ নয়; কেবল এই শর্তসাপেক্ষে তাদের পুনরায় বিয়ে বৈধ। মহান আল্লাহ বলেন,فَإِنْ طَلَّقَهَا فَلَا تَحِلُّ لَهُ مِنْ بَعْدُ حَتَّى تَنْكِحَ زَوْجًا غَيْرَهُ فَإِنْ طَلَّقَهَا فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا أَنْ يَتَرَاجَعَا إِنْ ظَنَّا أَنْ يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ ‘অতঃপর যদি সে তাকে (চূড়ান্ত) তালাক দেয়, তবে এরপর সেই পুরুষের জন্য সেই স্ত্রী (বিবাহ) হালাল হবে না, যে পর্যন্ত না সে অন্য কাউকে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করে। অতঃপর যদি সে তাকে তালাক দেয়, তবে উভয়ের পুনরায় পরস্পর মিলিত হওয়াতে কোনো গুনাহ নেই, যদি উভয়ের আস্থা জন্মে যে, উভয়ে আল্লাহর দণ্ডসমূহ বাস্তবায়ন করতে পারবে’ (আল-বাক্বারা, ২/২৩০)। হাদীছে এসেছে, আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রিফাআ রাযিয়াল্লাহু আনহু-এর স্ত্রী নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে বললেন, আমি রিফাআর নিকট ছিলাম। তিনি আমাকে চূড়ান্ত তালাক দিয়েছেন। তারপর আমি আব্দুর রহমান ইবনুয যুবায়েরকে বিয়ে করি। কিন্তু তার কাছে যা রয়েছে, তা কাপড়ের আঁচলের মতো। এতে রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুচকি হাসি হাসলেন এবং বললেন, أَتُرِيدِينَ أَنْ تَرْجِعِي إِلَى رِفَاعَةَ لاَ حَتَّى تَذُوقِي عُسَيْلَتَهُ وَيَذُوقَ عُسَيْلَتَكِ ‘তুমি কি রিফাআর নিকট ফিরে যেতে চাও? না, (তা হয় না) যতক্ষণ না সে তোমার স্বাদ গ্রহণ করে এবং তুমি তার স্বাদ গ্রহণ করো’।[9] অর্থাৎ যতক্ষণ তোমাদের মধ্যে সহবাস না হয়।
এই মাসআলাটির ব্যাপারে ইজমা রয়েছে।[10]
(৪) ইহরাম অবস্থায় থাকা নারী: কোনো নারী হজ্জ বা উমরার ইহরাম অবস্থায় থাকলে ইহরাম থেকে হালাল না হওয়া পর্যন্ত সাময়িক সময়ের জন্য তাকে বিয়ে করা হারাম। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, لَا يَنْكِحُ الْمُحْرِمُ، وَلَا يُنْكَحُ، وَلَا يَخْطُبُ ‘মুহরিম ব্যক্তি নিজে বিয়ে করবে না, তাকে কেউ (কোনো নারীর সাথে) বিয়ে দেবে না এবং সে নিজে বিয়ের প্রস্তাবও দেবে না’।[11]
(৫) একসাথে ৪ জনের বেশি স্ত্রী রাখা: যে কোনো পুরুষের জন্য একসাথে ৪ জনের বেশি স্ত্রী রাখা হারাম। মহান আল্লাহ বলেন,وَإِنْ خِفْتُمْ أَلَّا تُقْسِطُوا فِي الْيَتَامَى فَانْكِحُوا مَا طَابَ لَكُمْ مِنَ النِّسَاءِ مَثْنَى وَثُلَاثَ وَرُبَاعَ فَإِنْ خِفْتُمْ أَلَّا تَعْدِلُوا فَوَاحِدَةً أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ ذَلِكَ أَدْنَى أَلَّا تَعُولُوا ‘আর যদি তোমরা আশঙ্কা করো যে, ইয়াতীম মেয়েদের প্রতি সুবিচার করতে পারবে না, তবে নারীদের মধ্যে যাকে তোমাদের ভালো লাগে তাকে বিয়ে করবে, দুই, তিন বা চারজনকে। আর যদি আশঙ্কা করো যে, সুবিচার করতে পারবে না, তবে একজনকেই বা তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসীকেই গ্রহণ করো। এতে পক্ষপাতিত্ব না করার সম্ভাবনা বেশি’ (আন-নিসা, ৪/৩)। গয়লান ছাক্বাফী রাযিয়াল্লাহু আনহু যখন ইসলাম গ্রহণ করেন, তখন তার অধীনে ১০ জন স্ত্রী ছিল। ফলে রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে যে কোনো ৪ জনকে বেছে নেওয়ার আদেশ দেন।[12]
(৬) স্বাধীন নারীকে বিয়ে করার সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও দাসীকে বিয়ে করা: কোনো পুরুষ স্বাধীন নারীকে বিয়ে করার সামর্থ্য রাখলে তার জন্য নিজের দাসীকে বিয়ে করা বৈধ নয়। এ ব্যাপারে ইজমা রয়েছে।[13] তবে ৩টি শর্তে দাসীকে বিয়ে করতে পারে:
ক. স্বাধীন নারীকে বিয়ে করার সামর্থ্য না থাকা। খ. নিজের দ্বারা যেনা হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকা। গ. দাসী মুসলিম নারী হওয়া। মহান আল্লাহ বলেন,وَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ مِنْكُمْ طَوْلًا أَنْ يَنْكِحَ الْمُحْصَنَاتِ الْمُؤْمِنَاتِ فَمِنْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ مِنْ فَتَيَاتِكُمُ الْمُؤْمِنَاتِ ‘আর তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি স্বাধীন মুমিন নারীদেরকে বিয়ে করার সামর্থ্য রাখে না, সে (বিয়ে করবে) তোমাদের মুমিন যুবতীদের মধ্য থেকে তোমাদের হাত যাদের মালিক হয়েছে তাদের কাউকে’ (আন-নিসা, ৪/২৫)।
কেউ তার নিজের দাসীকে বিয়ে করতে চাইলে আগে তাকে স্বাধীন করে নিবে, অতঃপর বিয়ে করবে। এর বিশেষ ফযীলতও রয়েছে। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,ثَلاَثَةٌ لَهُمْ أَجْرَانِ: رَجُلٌ مِنْ أَهْلِ الكِتَابِ، آمَنَ بِنَبِيِّهِ وَآمَنَ بِمُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَالعَبْدُ المَمْلُوكُ إِذَا أَدَّى حَقَّ اللَّهِ وَحَقَّ مَوَالِيهِ، وَرَجُلٌ كَانَتْ عِنْدَهُ أَمَةٌ فَأَدَّبَهَا فَأَحْسَنَ تَأْدِيبَهَا، وَعَلَّمَهَا فَأَحْسَنَ تَعْلِيمَهَا، ثُمَّ أَعْتَقَهَا فَتَزَوَّجَهَا فَلَهُ أَجْرَانِ ‘তিন ধরনের লোকের জন্য দু’টি নেকী রয়েছে: (১) আহলে কিতাবের যে ব্যক্তি তার নবীর উপর ঈমান এনেছে এবং মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপরও ঈমান এনেছে। (২) যে ক্রীতদাস আল্লাহর হক্ব আদায় করে এবং তার মালিকের হক্বও (আদায় করে)। (৩) যার একটি দাসী ছিল, যার সাথে সে মিলিত হতো। তারপর তাকে সে সুন্দরভাবে শিষ্টাচার শিক্ষা দিয়েছে এবং ভালোভাবে দ্বীনী ইলম শিক্ষা দিয়েছে, এরপর তাকে মুক্ত করে বিয়ে করেছে; তার জন্য দু’টি নেকী রয়েছে’।[14]
(৭) যেনাকার নারী বা পুরুষকে বিয়ে করা: কোনো পুরুষের জন্য যেমন কোনো যেনাকার নারীকে বিয়ে করা বৈধ নয়, তেমনি কোনো মহিলার জন্য কোনো যেনাকার পুরুষের সাথে বিয়ে করা বৈধ নয়। তবে তারা খাঁটি তওবা করে নিলে বিয়ে করা যেতে পারে। মহান আল্লাহ বলেন,الزَّانِي لَا يَنْكِحُ إِلَّا زَانِيَةً أَوْ مُشْرِكَةً وَالزَّانِيَةُ لَا يَنْكِحُهَا إِلَّا زَانٍ أَوْ مُشْرِكٌ وَحُرِّمَ ذَلِكَ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ ‘ব্যভিচারী কেবল ব্যভিচারিণী অথবা মুশরিক নারীকে ছাড়া বিয়ে করবে না এবং ব্যভিচারিণীকে কেবল ব্যভিচারী অথবা মুশরিক ছাড়া বিয়ে করবে না। আর মুমিনদের উপর এটা হারাম করা হয়েছে’ (আন-নূর, ২৪/৩)।
(৮) মুশরিক নারীকে বিয়ে করা: আলেমগণ একমত হয়েছেন যে, কোনো মুসলিমের জন্য কোনো মূর্তিপূজক, যিন্দীক, মুরতাদ, গো-পূজারী নারীকে বিয়ে করা বৈধ নয়। অনুরূপভাবে বাহাঈ, কাদিয়ানী, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ বা এরকম অন্য কোনো মতবাদে বিশ্বাসী কোনো নারীকে বিয়ে করাও বৈধ নয়।[15] মহান আল্লাহ বলেন,وَلَا تَنْكِحُوا الْمُشْرِكَاتِ حَتَّى يُؤْمِنَّ وَلَأَمَةٌ مُؤْمِنَةٌ خَيْرٌ مِنْ مُشْرِكَةٍ وَلَوْ أَعْجَبَتْكُمْ وَلَا تُنْكِحُوا الْمُشْرِكِينَ حَتَّى يُؤْمِنُوا وَلَعَبْدٌ مُؤْمِنٌ خَيْرٌ مِنْ مُشْرِكٍ وَلَوْ أَعْجَبَكُمْ ‘আর তোমরা মুশরিক নারীদের বিয়ে করো না, যতক্ষণ না তারা ঈমান আনে এবং মুমিন দাসী মুশরিক নারীর চেয়ে নিশ্চয় উত্তম, যদিও সে তোমাদেরকে মুগ্ধ করে। আর মুশরিক পুরুষদের সাথে বিয়ে দিয়ো না, যতক্ষণ না তারা ঈমান আনে। আর একজন মুমিন দাস একজন মুশরিক পুরুষের চেয়ে উত্তম, যদিও সে তোমাদেরকে মুগ্ধ করে’ (আল-বাক্বারা, ২/২২১)।
আহলে কিতাবের নারীদেরকে বিয়ে করার হুকুম কী?
আহলে কিতাবের সতী নারীদেরকে বিয়ে করা জায়েয। মহান আল্লাহ বলেন,الْيَوْمَ أُحِلَّ لَكُمُ الطَّيِّبَاتُ وَطَعَامُ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ حِلٌّ لَكُمْ وَطَعَامُكُمْ حِلٌّ لَهُمْ وَالْمُحْصَنَاتُ مِنَ الْمُؤْمِنَاتِ وَالْمُحْصَنَاتُ مِنَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ مِنْ قَبْلِكُمْ إِذَا آتَيْتُمُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ مُحْصِنِينَ غَيْرَ مُسَافِحِينَ وَلَا مُتَّخِذِي أَخْدَانٍ وَمَنْ يَكْفُرْ بِالْإِيمَانِ فَقَدْ حَبِطَ عَمَلُهُ وَهُوَ فِي الْآخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ ‘আজ তোমাদের জন্য বৈধ করা হলো সব ভালো বস্তু এবং যাদেরকে কিতাব প্রদান করা হয়েছে, তাদের খাবার তোমাদের জন্য বৈধ এবং তোমাদের খাবার তাদের জন্য বৈধ। আর মুমিন সচ্চরিত্রা নারী এবং তোমাদের পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেওয়া হয়েছে, তাদের সচ্চরিত্রা নারীদের সাথে তোমাদের বিবাহ বৈধ। যখন তোমরা তাদেরকে মোহর দেবে, বিবাহকারী হিসেবে, প্রকাশ্য ব্যভিচারকারী বা গোপনপত্নী গ্রহণকারী হিসেবে নয়। আর যে ঈমানের সাথে কুফরী করবে, অবশ্যই তার আমল বিনষ্ট হবে এবং সে আখেরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত’ (আল-মায়েদা, ৫/৫)। উল্লেখ্য, আহলে কিতাবের মেয়েকে বিয়ে করতে হলে তাকে সচ্চরিত্রা হওয়া শর্ত। আয়াতটিতে উল্লিখিত الْمُحْصَنَاتُ শব্দটি সেকথারই প্রমাণ বহন করে।[16]
তবে, আহলে কিতাবের নারীদের বিয়ে করা এড়িয়ে চলাই বাঞ্ছনীয়। কারণ এতে ক্ষতি ও ঝুঁকির অনেক দিক রয়েছে।
পুরুষের জন্য মাহরাম ও গায়ের মাহরাম নারীর তালিকা:
আপনার সাথে সম্পর্ক | মাহরাম/গায়ের মাহরাম |
দাদী | মাহরাম |
মা/দুধ মা | মাহরাম |
বোন/দুধ বোন | মাহরাম |
শাশুড়ি | মাহরাম |
স্ত্রী | মাহরাম |
মেয়ে/দুধ মেয়ে/সৎ মেয়ে | মাহরাম |
ছেলের/দুধ ছেলের স্ত্রী | মাহরাম |
ফুপু | মাহরাম |
খালা | মাহরাম |
ভাইয়ের/বোনের মেয়ে | মাহরাম |
নানী | মাহরাম |
মায়ের খালাতো/চাচাতো/মামাতো/ফুফাতো বোন | গায়ের মাহরাম |
চাচাতো বোন | গায়ের মাহরাম |
ভাবী | গায়ের মাহরাম |
বাবার খালাতো/চাচাতো/মামাতো/ফুফাতো বোন | গায়ের মাহরাম |
চাচী | গায়ের মাহরাম |
ফুফাতো বোন | গায়ের মাহরাম |
খালাতো বোন | গায়ের মাহরাম |
মামাতো বোন | গায়ের মাহরাম |
শ্যালক/শ্যালিকার মেয়ে | গায়ের মাহরাম |
শ্বশুর/শাশুড়ির বোন | গায়ের মাহরাম |
শ্যালিকা | গায়ের মাহরাম |
মামী | গায়ের মাহরাম |
স্ত্রীর খালাতো/চাচাতো/মামাতো/ফুফাতো বোন | গায়ের মাহরাম |
স্ত্রীর ভাবী | গায়ের মাহরাম |
মেয়ের ননদ | গায়ের মাহরাম |
ছেলে/মেয়ের শাশুড়ি | গায়ের মাহরাম |
আব্দুল আলীম ইবনে কাওছার মাদানী
বি. এ. (অনার্স), উচ্চতর ডিপ্লোমা, এম. এ. এবং এম.ফিল., মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সঊদী আরব; অধ্যক্ষ, আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ, রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ।
[1]. মুহাম্মাদ সাঈদ রসলান, আল-মুহাররামাত মিনান নিসা, পৃ. ৭০।
[2]. মুহাম্মাদ সাঈদ রসলান, আল-মুহাররামাত মিনান নিসা, পৃ. ৬৮।
[3]. আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়্যাতিল কুয়েতিয়্যাহ, ৩৬/২১৮; মুহাম্মাদ সাঈদ রসলান, আল-মুহাররামাত মিনান নিসা, পৃ. ৬৮-৬৯।
[4]. ছহীহ বুখারী, হা/৫১০৯; ছহীহ মুসলিম, হা/১৪০৮।
[5]. ছহীহ বুখারী, হা/৫১০৯; ছহীহ মুসলিম, হা/১৪০৮।
[6]. ফাতাওয়া ইবনে বায, ২১/৭।
[7]. আল-উছাইমীন, তাফসীরুল কুরআনির কারীম, ১/১৯৫।
[8]. মুহাম্মাদ সাঈদ রসলান, আল-মুহাররামাত মিনান নিসা, পৃ. ৭১।
[9]. ছহীহ বুখারী, হা/২৬৩৯; ছহীহ মুসলিম, হা/১৪৩৩, শব্দচয়ন ইমাম মুসলিমের।
[10]. তাফসীর কুরতুবী, ৩/১২৭-১২৮।
[11]. তাফসীর কুরতুবী, ৩/১২৭-১২৮।
[12]. সুনানে তিরমিযী, হা/১১২৮, ‘ছহীহ’।
[13]. ছলেহ আল-ফাওযান, আল-মুলাখখাছুল ফিক্বহী, ২/৩৪৪।
[14]. ছহীহ বুখারী, হা/৯৭।
[15]. দ্রষ্টব্য: ইবনু কুদামা, আল-মুগনী, ৭/১৩১; মুহাম্মাদ সাঈদ রসলান, আল-মুহাররমাত মিনান নিসা, পৃ. ৮৮।
[16]. দ্রষ্টব্য: তাফসীর ইবনে কাছীর, ৩/৪২।
* তালিকাটি ‘বাংলা হাদিস’-এর এ্যাপ থেকে সংগৃহীত। সংক্ষিপ্ত এই তালিকায় একজন পুরুষের জন্য মাহরাম নারীদের বিবরণ পেশ করা হয়েছে। তালিকাটি আমার বেশ ভালো লেগেছে। আপনারা এই লিংক থেকে তালিকাটি দেখে নিতে পারেন:
https://www.hadithbd.com/mahram/