উমরা ও হজ্জের বিস্তারিত বিবরণ
এক নযরে উমরার কার্যাবলি :
(১) ইহরামের প্রস্তুতি নিয়ে মীক্বাত হতে মনে মনে উমরার নিয়্যত করে ‘আল্লাহুম্মা লাব্বাইকা উমরাতান’ বলে ইহরাম বাঁধা।
(২) মক্কায় পৌঁছে পবিত্র হয়ে ওযূ করে কা‘বায় সাত বার ত্বাওয়াফ করা এবং ত্বাওয়াফ শেষে দুই রাকআত ছালাত আদায় করা।
(৩) ছাফা ও মারওয়ায় সাত চক্কর সাঈ করা।
(৪) পুরুষের মাথা ন্যাড়া করা অথবা চুল ছোট করা এবং হালাল হওয়া। আর মহিলাদের চুলের আগা হতে কিছু অংশ কেটে হালাল হওয়া।
এক নযরে হজ্জের কার্যাবলি :
(১) ইফরাদ এবং ক্বিরান হজ্জের ইহরাম বেঁধে কা‘বায় সাতবার ত্বাওয়াফে কুদূম এবং ছাফা ও মারওয়ার মধ্যে সাতবার সাঈ করা। আর তামাত্তু হজ্জের জন্য মক্কায় অবস্থানরত হাজীদের নিজ বাসস্থান হতে ৮ যিলহজ্জে ইহরাম বাঁধা।
(২) ৮ তারিখে মিনায় যোহর, আছর, মাগরিব, এশা ও ফজরের ছালাত আদায় করা এবং সূর্য উদিত হওয়া পর্যন্ত মিনায় অবস্থান করা।
(৩) ৯ তারিখে সূর্য উদিত হওয়ার পর আরাফায় গমন করা। যোহরের সময় হলে এক আযানে এবং দুই ইক্বামতে যোহর ও আছরের ছালাত ক্বছর করে একত্রে আদায় করা। আর সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফায় অবস্থান করা।
(৪) মুযদালিফায় এক আযান ও দুই ইক্বামতে মাগরিব ও এশার ছালাত আদায করে রাত্রিযাপন করা এবং ফজর ছালাত আদায়ের পর ফর্সা হলে সূর্য উদিত হওয়ার আগেই মিনার উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়া।
(৫) মিনায় পৌঁছে বড় জামরায় সাতটি পাথর নিক্ষেপ করা। কুরবানী সম্পন্ন করে মাথার চুল ন্যাড়া অথবা ছোট করে প্রথম হালাল হওয়া। তারপর কা‘বায় ত্বাওয়াফ ও সাঈ করে পূর্ণ হালাল হওয়া।
(৬) ১১, ১২ ও ১৩ তারিখে মিনায় রাত্রিযাপন করা এবং প্রত্যেক দিন সূর্য ঢলার পরে তিনটি স্থানে ২১টি করে পাথর নিক্ষেপ করা।
(৭) বিদায়ের পূর্বমুহূর্তে বিদায়ী ত্বাওয়াফ সম্পন্ন করা।
বিস্তারিত বিবরণ :
১. ইহরামের প্রস্ততি : কোনো মুসলিম উমরা বা হজ্জের ইচ্ছা পোষণ করলে ইহরাম বাঁধার পূর্বে নখ, চুল ইত্যাদি কেটে পরিষ্কার হয়ে যাওয়া ভালো। তবে কুরবানী করার ইচ্ছা থাকলে নখ, চুল ইত্যাদি কাটতে পারবে না। এ কারণে চাঁদ দেখার আগেই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হতে হবে। মীক্বাত বা ইহরাম বাঁধার স্থানে গিয়ে ওযূ-গোসল সম্পন্ন করে ইহরামের পোশাক পরিধান করতে হবে। আর যদি মীক্বাত দূরে হয় অথবা মীক্বাতে অবতীর্ণ হওয়া সম্ভব না হয়, তাহলে বিমানে ইহরাম বাঁধবে এবং আগেই ওযূ-গোসল করে ইহরামের কাপড় পরিধান করে প্রস্তুত হয়ে থাকবে। আর এ সময় মহিলারা যদি হায়েয বা নিফাস অবস্থায় থাকে, তাহলেও তারা গোসল করে নিবে এবং মীক্বাতে পৌঁছালে অথবা মীক্বাত বরাবর হলে ইহরাম বাঁধবে।
২. ইহরাম বাঁধা : উমরা ও হজ্জের প্রথম রুকন হলো ইহরাম বাঁধা। উমরা ও হজ্জের ইহরামের জন্য অন্তরে নিয়্যত করে মৌখিকভাবে হাদীছে বর্ণিত শব্দগুলো পাঠ করতে হবে। শুধু উমরা করলে অন্তরে নিয়্যত করে মুখে পাঠ করবে, لَبَّيْكَ عُمْرَةً ‘লাব্বাইকা উমরাতান’ ক্বিরান হজ্জ হলে অন্তরে নিয়্যত করে বলবে, لَبَّيْكَ عُمْرَةً وَحَجًّا ‘লাব্বাইকা উমরাতান ওয়া হাজ্জান’। আর ইফরাদ হজ্জ হলে অন্তরে নিয়্যত করে মৌখিকভাবে বলবে, لَبَّيْكَ حَجًّا ‘লাব্বাইকা হজ্জান’। আর لَبَّيْكَ শব্দের পরে اللهم ‘আল্লাহুম্মা’ শব্দ বলা যায়।[1]
৩. ইহরাম বাঁধার সময় অসুস্থ হলে বা সমস্যায় পড়লে করণীয় : ইহরাম বাঁধার সময় অসুস্থ হলে বা কোনো সমস্যা মনে করলে ইহরামে শর্ত যুক্ত হতে পারে। ইহরামের শব্দগুলো আগের মতই বলবে। তারপরে শর্ত হিসেবে এই শব্দগুলো যোগ করতে হবে তখন ইহরামের শব্দগুলো এভাবে বলতে হবে,اَللَّهُمَّ مَحِلِّى حَيْثُ حَبَسْتَنِى‘হে আল্লাহ! আমি উমরার জন্য তোমার নিকট উপস্থিত হয়েছি। যেখানে আমি কোনো বাধার সম্মুখীন হই, সেখানেই আমাকে বাধাগ্রস্ত করো। সেটাই আমার ইহরাম হতে হালাল হওয়ার স্থান’।[2]
৪. ইহরামের ছালাত : ইহরামের জন্য কোনো ছালাত নেই। নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজ্জের ইহরাম ফরয ছালাতের পর বেঁধেছেন। ইবনু উমার রাযিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুলহুলায়ফাতে কছর করে দুই রাকআত ফরয ছালাত আদায় করেন। তারপর তিনি যুলহুলায়ফা মসজিদের পাশে বাহনে আরোহণ করেন এবং ইহরামের বাক্যগুলো পাঠ করেন।[3] যে কোনো মীক্বাতের মসজিদে প্রবেশ করে শুধু মসজিদের হক্ব হিসাবে দুই রাকআত ছালাত আদায় করবে। তবে শুধু মদীনার মীক্বাত যুলহুলায়ফার মসজিদে দুই রাকআত ছালাত আদায় করার নিয়ম রয়েছে। কারণ যুলহুলায়ফা স্থানটি ‘আক্বীক্ব’ নামক স্থানে অবস্থিত। আর ‘আক্বীক্বে’ নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দুই রাকআত ছালাত আদায়ের জন্য আদেশ করা হয়েছে। উমার রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ‘আক্বীক্ব’ উপত্যকায় অবস্থানকালে বলতে শুনেছি,أَتَانِى اللَّيْلَةَ آتٍ مِنْ رَبِّى فَقَالَ صَلِّ فِى هَذَا الْوَادِى الْمُبَارَكِ وَقُلْ عُمْرَةً فِى حَجَّةٍ ‘আজ রাতে আমার প্রতিপালকের পক্ষ হতে একজন আগন্তুক এসে বললেন, আপনি এই বরকতময় উপত্যকায় ছালাত আদায় করুন এবং বলুন, উমরা চিরদিনের জন্য হজ্জের অন্তর্ভুক্ত’।[4]
(৫) ঋতুবতী মহিলার ইহরাম : মীক্বাতে পৌঁছে হজ্জ ও উমরার উদ্দেশ্যে আসা কোনো মহিলার হায়েয বা নিফাস শুরু হলে ভালোভাবে গোসল সম্পন্ন করে মীক্বাতেই ইহরাম বাঁধবে। জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নয় বছর (মাদীনায়) অবস্থান করেন এবং এ সময়ের মধ্যে হজ্জ করেননি। অতঃপর দশম হিজরীতে লোকদের মধ্যে ঘোষণা দেওয়া হলো যে, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বছর হজ্জে যাবেন। সুতরাং মদীনায় বহু লোকের আগমন হলো। তাদের প্রত্যেকে রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুসরণ করতে এবং তার অনুরূপ আমল করতে আগ্রহী ছিলেন। আমরা তার সঙ্গে রওনা হলাম। আমরা যখন যুলহুলায়ফাহ নামক স্থানে পৌঁছলাম, তখন আসমা বিনতু উমায়স রাযিয়াল্লাহু আনহা মুহাম্মাদ ইবনে আবূ বকরকে প্রসব করলেন। তিনি রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট লোক পাঠিয়ে জানতে চাইলেন, এখন আমি কী করব? তিনি বললেন, اغْتَسِلِى وَاسْتَثْفِرِى بِثَوْبٍ وَأَحْرِمِى ‘তুমি গোসল করো, একখণ্ড কাপড় দিয়ে পট্টি বেঁধে নাও এবং ইহরামের পোশাক পরিধান করো’।[5]
উক্ত হাদীছ প্রমাণ করে যে, হায়েয-নিফাস অবস্থায় মহিলারা ইহরাম বাঁধতে পারে। বিমানে যাত্রা করলে আরোহণের পূর্বে গোসল করে নিবে। গোসল করা সম্ভব না হলে ওই অবস্থায় ইহরাম বাঁধবে। মক্কায় পৌঁছে পবিত্র না হলে ত্বাওয়াফ ছাড়া হজ্জ ও উমরার বাকী সব কাজ করবে। এরপর পবিত্র হলে গোসল সম্পন্ন করে ত্বাওয়াফ করবে। আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা বলেন, আমরা হজ্জের উদ্দেশ্যেই (মদীনা হতে) বের হলাম। ‘সারিফ’ নামক স্থানে পৌঁছার পর আমার হায়েয আরম্ভ হলো। আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে আমাকে কাঁদতে দেখলেন এবং বললেন, কী হলো তোমার? তোমার হায়েয আরম্ভ হয়েছে? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, ‘এটা তো আল্লাহ তাআলাই আদমের কন্যাদের জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন। সুতরাং তুমি বায়তুল্লাহর ত্বাওয়াফ ছাড়া হজ্জের বাকী সব কাজ করে যাও’।[6] এই হাদীছ প্রমাণ করে যে, হায়েয অবস্থায় হজ্জ বা উমরার ইহরাম বাঁধতে হবে। যখন হায়েয অবস্থা হতে মুক্ত হবে, তখন ত্বাওয়াফ করে নিবে।
(৬) ছোট বাচ্চার পক্ষ থেকে ইহরাম বাঁধা বিধান :
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ عَنِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَقِىَ رَكْبًا بِالرَّوْحَاءِ فَقَالَ مَنِ الْقَوْمُ قَالُوا الْمُسْلِمُونَ فَقَالُوا مَنْ أَنْتَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ فَرَفَعَتْ إِلَيْهِ امْرَأَةٌ صَبِيًّا فَقَالَتْ أَلِهَذَا حَجٌّ قَالَ نَعَمْ وَلَكِ أَجْرٌ.
ইবনু আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাওহা নামক স্থানে এক কাফেলার সাথে মিলিত হন। তিনি বলেন, আপনারা কে? তারা বললেন, আমরা মুসলিম। তারা বললেন, আপনি কে? তিনি বললেন, আল্লাহর রাসূল। তখন একজন মহিলা একটি বাচ্চা উঠিয়ে ধরলেন এবং বললেন, এ বাচ্চার জন্য হজ্জ রয়েছে কি? নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ। তার জন্য হজ্জ রয়েছে। তবে নেকী আপনার হবে।[7] এই হাদীছ প্রমাণ করে যে, অভিভাবক তাদের ছোট বাচ্চাদের নিয়ে হজ্জ করতে পারে।
(৭)বদলি হজ্জ ও উমরা করার পূর্বে নিজে তা করা : এ অবস্থায় অবশ্যই নিজের হজ্জ বা উমরা আগে করতে হবে। ইহরাম বাঁধার সময় ‘লাব্বাইকা উমরাতান আন....’ বলে যার হজ্জ বা উমরা, তার নাম বলবে।
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّ النَّبِىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَمِعَ رَجُلاً يَقُولُ لَبَّيْكَ عَنْ شُبْرُمَةَ قَالَ مَنْ شُبْرُمَةَ قَالَ أَخٌ لِى أَوْ قَرِيبٌ لِى قَالَ حَجَجْتَ عَنْ نَفْسِكَ قَالَ لاَ قَالَ حُجَّ عَنْ نَفْسِكَ ثُمَّ حُجَّ عَنْ شُبْرُمَةَ.
ইবনু আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন লোককে বলতে শুনলেন, ‘লাব্বাইকা আন শুবরুমা’ (আমি শুবরুমার পক্ষ থেকে উপস্থিত হয়েছি। নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, শুবরুমা কে? তিনি বললেন, আমার ভাই অথবা আমার নিকটাত্মীয়। তখন নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি কি তোমার পক্ষ থেকে হজ্জ করেছ? লোকটি বললেন, না। নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আগে তোমার পক্ষ থেকে হজ্জ করো, তারপর শুবরুমার পক্ষ থেকে হজ্জ করো।[8] এই হাদীছ প্রমাণ করে যে, কেউ কারো পক্ষ থেকে হজ্জ বা উমরা আদায় করতে পারে এবং এভাবে হজ্জ-উমরা করতে চাইলে নিজের হজ্জ-উমরা আগে সম্পন্ন করতে হবে।
(৮) মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে হজ্জ করার বিধান : মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে ইহরাম বেঁধে হজ্জ করতে হবে।
عَنْ أَبِى الْغَوْثِ بْنِ حُصَيْنٍ رَجُلٌ مِنَ الْفُرْعِ أَنَّهُ اسْتَفْتَى النَّبِىَّ - صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ حِجَّةٍ كَانَتْ عَلَى أَبِيهِ مَاتَ وَلَمْ يَحُجَّ قَالَ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حُجَّ عَنْ أَبِيكَ.
আবূ গাউছ ইবনু হুছাইন বলেন, একজন লোক তার পিতার পক্ষ থেকে হজ্জ করার ব্যাপারে নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলেন। তার পিতার উপর হজ্জ ফরয ছিল। তার পিতা হজ্জ না করে মারা গেছে। নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘তুমি তোমার পিতার পক্ষ থেকে হজ্জ করো’।[9] অতএব, মৃত ব্যক্তির পক্ষ হতে এবং অতিবৃদ্ধ আরোহণে অক্ষম এবং এমন অসুস্থ যার সুস্থতার আশা করা যায় না, এমন সব ব্যক্তির পক্ষ হতে বদলি হজ্জ করা যায়। তবে কোনো জীবিত সুস্থ-সবল ব্যক্তির পক্ষ হতে বদলি হজ্জ ও উমরা করা যাবে না।
(৯) পুরুষ ব্যক্তির শুধু দুটি কাপড়ে ইহরাম বাঁধা : পুরুষ ব্যক্তি শুধু দুটি কাপড়েই ইহরাম বাঁধবে। ইবনু উমার রাযিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের পুরুষেরা ইহরাম বাঁধবে দুটি কাপড়ে। একটি লুঙ্গি অপরটি চাদর এবং পায়ে দুটি জুতা’।[10] ইহরামের কাপড় ময়লা হলে পরিবর্তন করতে পারবে। প্রয়োজনে কাপড় পরিষ্কার করতে পারে। ইহরাম অবস্থায় গোসল করা যায়। নাফে‘ o হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইবনু উমার রাযিয়াল্লাহু আনহুমা যুলহুলায়ফায় ফজরের ছালাত শেষ করে বাহন প্রস্তুত করার আদেশ করতেন। প্রস্তুত হলে আরোহণ করতেন। বাহন তাঁকে নিয়ে দাঁড়িয়ে গেলে তিনি সোজা কেবলামুখী হয়ে হারামের সীমারেখায় পৌঁছা পর্যন্ত তালবিয়া পাঠ করতে থাকতেন। তারপর বিরতি দিয়ে ‘যু-তুওয়া’ নামক স্থানে পৌঁছে ভোর পর্যন্ত রাত্রিযাপন করতেন। তারপর ফজরের ছালাত আদায় করে গোসল করতেন এবং বলতেন, আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরূপ করেছিলেন।[11] এই হাদীছ প্রমাণ করে, ইহরাম বাঁধার পর গোসল করা যায়। এখানে মহিলাদের ইহরামের পোশাক সম্পর্কে আলোচনা নিষ্প্রয়োজন।
(১০) মীক্বাতে ইহরাম বাঁধা : হজ্জ ও উমরার উদ্দেশ্যে মক্কায় প্রবেশকারীকে অবশ্যই মীক্বাতে ইহরাম বাঁধতে হবে। যারা মীক্বাত এবং মক্কার মাঝে অবস্থান করে তারা নিজ স্থান হতে হজ্জ ও উমরার ইহরাম বাঁধবে।[12] হজ্জ ও উমরা পালনকারী যে কোনো ব্যক্তি ইহরামের স্থান অতিক্রম করলে পুনরায় তাকে ইহরাম বাঁধার স্থানে ফিরে যেতে হবে এবং সেখান থেকে ইহরাম বাঁধতে হবে। ভেতরে ইহরাম বাঁধলে দম ওয়াজিব হবে। কেননা নির্ধারিত স্থানে ইহরাম বাঁধা ওয়াজিব।
(চলবে)
[1]. ছহীহ বুখারী, হা/১৫৭০।
[2]. ছহীহ বুখারী, হা/৫০৮৯।
[3]. ছহীহ মুসলিম, হা/১১৮৪; মিশকাত, হা/২৫৫১।
[4]. ছহীহ বুখারী, হা/১৫৩৪।
[5]. ছহীহ মুসলিম, হা/১২১৮।
[6]. ছহীহ বুখারী, হা/২৯৪।
[7]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৩৩৬; মিশকাত, হা/২৫১০।
[8]. আবূ দাঊদ, হা/১৮১১, হাদীছ ছহীহ; মিশকাত, হা/২৫২৯।
[9]. ইবনু মাজাহ, হা/২৯০৫।
[10]. মুসনাদে আহমাদ, হা/৪৮৯৯।
[11]. ছহীহ বুখারী, হা/১৫৫৩।
[12]. ছহীহ বুখারী, হা/১৫২৪।