কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

কেন আল্লাহর ইবাদত করব

post title will place here

কিছু মানুষ আল্লাহর ইবাদত করে আর কিছু মানুষ করে না। যারা আল্লাহর ইবাদত করে না তারা বলে, কেন আল্লাহর ইবাদত করব? কেন আমরা তাঁর কথা শুনব? তিনি আমাদের এমন কী দান করেছেন, যার জন্য তাঁর কথা শুনতে আমরা বাধ্য হব? প্রথমেই আপনাকে একটা কথা বলি- আপনি যদি আল্লাহর ইবাদত না করেন, তাহলে এতে আল্লাহর কিছু যায় আসে না। আপনি আল্লাহর ইবাদত না করলে তাঁর কোনো ক্ষতি নেই। এমনকি গোটা পৃথিবীর সবাই যদি আল্লাহর কথা না শুনে মূর্তিপূজা করে, তাতেও তিনি কোনো পরোয়া করেন না। আল্লাহ তাআলা বলেন,إِنْ تَكْفُرُوا أَنْتُمْ وَمَنْ فِي الْأَرْضِ جَمِيعًا فَإِنَّ اللَّهَ لَغَنِيٌّ حَمِيدٌ ‘তোমরা ও গোটা পৃথিবীর সবাই যদি কুফরী করো, তাহলে জেনে রাখো নিশ্চয় আল্লাহ অমুখাপেক্ষী, সপ্রশংসিত’ (ইবরাহী, ১৪/৮)

গোটা পৃথিবীর সকল মানুষ যদি কাজকর্ম বাদ দিয়ে সিজদায় পড়ে থাকে, তাহলেও আল্লাহর যে সম্মান আছে এতে বিন্দু পরিমাণও বৃদ্ধি পাবে না। আর সকল মানুষ যদি আল্লাহকে বাদ দিয়ে মূর্তিপূজা শুরু করে, তাহলে এতে আল্লাহর যে সম্মান আছে তার বিন্দু পরিমাণও কমবে না। আল্লাহ তাআলা বলেন,وَاللَّهُ الْغَنِيُّ وَأَنْتُمُ الْفُقَرَاءُ وَإِنْ تَتَوَلَّوْا يَسْتَبْدِلْ قَوْمًا غَيْرَكُمْ ثُمَّ لَا يَكُونُوا أَمْثَالَكُمْ ‘আল্লাহ হলেন অমুখাপেক্ষী আর তোমরা হলে মুখাপেক্ষী। তোমরা যদি পৃষ্ঠপ্রদর্শন করো, তাহলে তিনি তোমাদের পরিবর্তে অন্যদের নিয়ে আসবেন, যারা তোমাদের মতো হবে না’ (মুহাম্মাদ, ৪৭/৩৮)। আল্লাহ তাআলা আরও বলেন, قُلْ مَا يَعْبَأُ بِكُمْ رَبِّي لَوْلَا دُعَاؤُكُمْ ‘বলুন, যদি তোমরা না-ই ডাকো, তাহলে আমার রব তোমাদের কোনো পরওয়া করেন না’ (আল-ফুরক্বা, ২৫/৭৭)। নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,لَوْ كَانَتِ الدُّنْيَا تَعْدِلُ عِنْدَ اللَّهِ جَنَاحَ بَعُوضَةٍ مَا سَقَى كَافِرًا مِنْهَا شَرْبَةَ مَاءٍ‏‏ ‘আল্লাহ তাআলার নিকট যদি এই পৃথিবীর মূল্য মশার একটি পাখার সমানও হতো, তাহলে তিনি কোনো কাফেরকে এখানকার পানির এক ঢোকও পান করাতেন না’।[1]

আরও একটা কথা শুনে রাখুন, আমরা যদি আল্লাহর ইবাদত না করি, তাঁর কাছে মাথা নত না করি, তাহলে তিনি আমাদের শাস্তি দিয়ে মৃত্যু দিবেন। তারপর আমাদের বাদে ভিন্ন এক প্রজন্ম নিয়ে আসবেন, যারা আমাদের মতো হবে না। আল্লাহ তাআলা বলেন,يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا مَنْ يَرْتَدَّ مِنْكُمْ عَنْ دِينِهِ فَسَوْفَ يَأْتِي اللَّهُ بِقَوْمٍ يُحِبُّهُمْ وَيُحِبُّونَهُ أَذِلَّةٍ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ أَعِزَّةٍ عَلَى الْكَافِرِينَ ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের মাঝে কেউ বেদ্বীন হয়ে গেলে আল্লাহ এমন এক সম্প্রদায়কে নিয়ে আসবেন, তিনি যাদের ভালোবাসবেন এবং তারাও আল্লাহকে ভালোবাসবে। তারা মুমিনদের প্রতি কোমল ও কাফেরদের প্রতি হবে কঠোর’ (আল-মায়েদা, ৫/৫৪)। আল্লাহ তাআলা আরও বলেন,وَإِنْ تَتَوَلَّوْا يَسْتَبْدِلْ قَوْمًا غَيْرَكُمْ ثُمَّ لَا يَكُونُوا أَمْثَالَكُمْ ‘তোমরা মুখ ফিরিয়ে নিলে তিনি (আল্লাহ) তোমাদের পরিবর্তে অন্যদের নিয়ে আসবেন, যারা তোমাদের মতো হবে না’ (মুহাম্মা, ৪৭/৩৮)

তিনি আমাদেরকে তাঁর ইবাদত করতে কখনো বাধ্য করবেন না। আমাদেরকে শুধু জান্নাতের ও জাহান্নামের পথ বাতলে দিবেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, وَهَدَيْنَاهُ النَّجْدَيْنِ ‘আমরা তাকে দুটি পথ (ভালোমন্দ) দেখিয়েছি’ (আল-বালাদ, ৯০/১০)। আল্লাহ তাআলা আরও বলেন,إِنَّا هَدَيْنَاهُ السَّبِيلَ إِمَّا شَاكِرًا وَإِمَّا كَفُورًا ‘আমরা তাকে পথ দেখিয়ে দিয়েছি। হয় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে, নয়তো অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে’ (আদ-দাহর, ৭৬/৩)। অন্যত্র আল্লাহ তাআলা বলেন,وَقُلِ الْحَقُّ مِنْ رَبِّكُمْ فَمَنْ شَاءَ فَلْيُؤْمِنْ وَمَنْ شَاءَ فَلْيَكْفُرْ ‘বলুন, সত্য তোমার রবের পক্ষ থেকে। যার ইচ্ছা ঈমান আনবে, যার ইচ্ছা কুফরী করবে’ (আল-কাহফ, ১৮/২৯)

তিনি যদি আমাদের বাধ্য করেন, তাহলে তো তাঁর উদ্দেশ্য সাধিত হবে না। তিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন পরীক্ষা করার জন্য। যদি বাধ্য করা হয় ঈমান আনার জন্য, তাহলে তো এটা পরীক্ষা থাকছে না। আল্লাহ তাআলা বলেন,الَّذِي خَلَقَ الْمَوْتَ وَالْحَيَاةَ لِيَبْلُوَكُمْ أَيُّكُمْ أَحْسَنُ عَمَلًا ‘তিনি জীবন ও মৃত্যু সৃষ্টি করেছেন তোমাদের পরীক্ষা করার জন্য যে, তোমাদের মাঝে কার আমল সুন্দর’ (আল-মুলক,৬৭/২)। আল্লাহ তাআলা আরও বলেন,وَرَفَعَ بَعْضَكُمْ فَوْقَ بَعْضٍ دَرَجَاتٍ لِيَبْلُوَكُمْ فِي مَا آتَاكُمْ ‘তিনি তোমাদের একজনকে অপরের উপর প্রাধান্য দিয়েছেন তিনি তোমাদের যা দিয়েছেন, তা দ্বারা পরীক্ষা করার জন্য’ (আল-আন, ৬/১৬৫)

আমরা তাঁর ইবাদত করব নিজেদের ভালোর জন্য। তাঁর কথা শুনলে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারব। আল্লাহ তাআলা বলেন, وَتِلْكَ الْجَنَّةُ الَّتِي أُورِثْتُمُوهَا بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُونَ ‘তোমরা কর্ম করার কারণে এই জান্নাতের উত্তরাধিকারী হয়েছো’ (আয-যুখরুফ, ৪৩/৭২)

আল্লাহ তাআলা প্রতিটি মানুষকে দাসত্বের গুণ দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। হয় সে আল্লাহর দাসত্ব করবে, নচেৎ অন্য কোনো ব্যক্তি বা বস্তুর দাসত্ব করবে। এখন আপনার সিদ্ধান্ত, ইচ্ছা হলে আল্লাহর দাসত্ব করবেন আর ইচ্ছা না হলে করবেন না, বরং মনের অজান্তেই অন্যের দাসত্ব করবেন। কেউ দাসত্ব করে টাকাপয়সার, কেউ দাসত্ব করে নারীর, কেউ দাসত্ব করে ক্ষমতার, কেউ দাসত্ব করে প্রতাপশালী দাপুটে ব্যক্তির, আবার কেউ দাসত্ব করে আল্লাহর। আমরা আল্লাহর দাসত্ব না করলে তিনি আমাদের পরিবর্তে অন্য কোনো জাতি নিয়ে আসবেন যারা তাঁর দাসত্ব করবে। আপনি প্রায় শুনতে পান, অমুক জায়গায় এক হিন্দু পরিবার ইসলাম কবুল করেছে, অমুক খ্রিষ্টান মুসলিম হয়েছে, অমুক বেদ্বীন দ্বীনে ফিরে এসেছে; তখন আপনি একবারের জন্যও ভাবনার পৃষ্ঠাটা উল্টিয়ে দেখেন না, কেন এমন হলো? এভাবেই আমরা আল্লাহর দাসত্ব না করলে তিনি অমুসলিমদের মুসলিম বানাবেন, যারা তাঁর দাসত্ব করবে। ক্ষতিটা কিন্তু আল্লাহর হচ্ছে না, ক্ষতিটা আমার আপনার হচ্ছে। আপনি যদি আল্লাহর ইবাদত না করেন, তাহলে আল্লাহর পক্ষ থেকে এই দুটি চ্যালেঞ্জ গ্ৰহণ করুন। আপনি মৃত্যুকে ঠেকান। মৃত্যু থেকে বাঁচার জন্য সব চেষ্টা-তদবির করুন, দেখুন বাঁচতে পারেন কি-না। আল্লাহ চ্যালেঞ্জ করছেন,قُلْ فَادْرَءُوا عَنْ أَنْفُسِكُمُ الْمَوْتَ إِنْ كُنْتُمْ صَادِقِينَ ‘বলুন, তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাকলে মৃত্যুকে প্রতিহত করো’ (আলে ইমরান, ৩/১৬৮)। আল্লাহ তাআলা আরও বলেন, كُلُّ نَفْسٍ ذَائِقَةُ الْمَوْتِ ‘প্রতিটি প্রাণকে মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতেই হবে’ (আলে ইমরান, ৩/১৮৫)। অন্যত্র আল্লাহ তাআলা বলেন,أَيْنَمَا تَكُونُوا يُدْرِكُكُمُ الْمَوْتُ وَلَوْ كُنْتُمْ فِي بُرُوجٍ مُشَيَّدَةٍ ‘তোমরা যেখানেই থাকো না কেন মৃত্যু তোমাদের নাগাল পাবে, যদিও তোমরা সুদৃঢ় দুর্গে অবস্থান করো’ (আন-নিসা, ৪/৭৮)। অন্যত্র আল্লাহ তাআলা আরও বলেন,قُلْ إِنَّ الْمَوْتَ الَّذِي تَفِرُّونَ مِنْهُ فَإِنَّهُ مُلَاقِيكُمْ ‘হে নবী! বলুন, যে মৃত্যু থেকে তোমরা পালিয়ে বেড়াচ্ছ, তা তোমাদের সম্মুখীন হবেই’ (আল-জুমুআ, ৬২/৮)

আল্লাহ দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ করেছেন যদি তাঁর দাসত্ব করতে ভালো না লাগে, তাহলে এই আসমানের নিচ থেকে অন্য কোথাও চলে যাও। এই আসমান তো আল্লাহর। আল্লাহ তাআলার বাণী,يَا مَعْشَرَ الْجِنِّ وَالْإِنْسِ إِنِ اسْتَطَعْتُمْ أَنْ تَنْفُذُوا مِنْ أَقْطَارِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ فَانْفُذُوا لَا تَنْفُذُونَ إِلَّا بِسُلْطَانٍ ‘হে জিন ও মানুষেরা! আসমান ও যমীনের সীমানা থেকে বের হয়ে যেতে পারলে তোমরা বের হয়ে যাও। কিন্তু তোমরা বের হতে পারবে না। সব জায়গায় রয়েছে তাঁর রাজত্ব’ (আর-রহমান, ৫৫/৩৩)

এখন আপনি চ্যালেঞ্জ গ্ৰহণ করে এই আসমানের নিচ থেকে চলে যান দেখি! কখনো পারবেন না। যেখানে যাবেন, সেখানেই দেখবেন আল্লাহর রাজত্ব। এ কথাটাই তিনি কুরআনে এভাবে বলেছেন,أَفَغَيْرَ دِينِ اللَّهِ يَبْغُونَ وَلَهُ أَسْلَمَ مَنْ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ طَوْعًا وَكَرْهًا وَإِلَيْهِ يُرْجَعُونَ ‘আল্লাহর দ্বীন ব্যতীত তারা কি অন্য দ্বীনের প্রত্যাশী। অথচ স্বেচ্ছায় ও অনিচ্ছায় আসমান-যমীনের সবাই তাঁর কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। তাঁর সমীপেই তাদের ফিরে যেতে হবে’ (আলে ইমরান, ৩/৭৩)

তিনি আপনাকে আরো কিছু চ্যালেঞ্জ করছেন। তিনি বলছেন, আমার বান্দা! তুমি যদি আমার ইবাদত ও দাসত্ব না করো, তুমি যদি আমাকে একক হিসেবে বিশ্বাস না করো; তাহলে তুমি বলো তো তুমি কোথায় মৃত্যুবরণ করবে? উহুঁ, বুঝতে পারছি এটা আপনি জানেন না। আচ্ছা বলুন তো, কখন বৃষ্টি হবে? এটাও তো জানেন না। মায়ের পেটে পূর্ণ বাচ্চা আছে নাকি অপূর্ণ বাচ্চা আছে বলুন তো দেখি? এটাও জানেন না, তাহলে জানেন কী? আল্লাহ তো সূর্য পূর্ব দিক থেকে উদিত করেন ও পশ্চিম দিকে ডুবিয়ে দেন। আপনি এর বিপরীত করুন তো? কখনোই পারবেন না। আপনি আল্লাহর সাথে কখনোই পেরে উঠবেন না।

এখন কথা হচ্ছে, আমরা কেন আল্লাহর ইবাদত করব, তিনি আমাদের এমন কী নেয়ামত দান করেছেন যে, যার দরুন তাঁর দাসত্ব করতে হবে! তাহলে শুনুন কেন তাঁর ইবাদত করতে হবে। আপনি তো মাঝেমধ্যে ঢাকা শহরে কোনো কাজে অবশ্যই যাতায়াত করেন। রাস্তার ধারে বা ফুটপাতে ভ্যানগাড়িতে দেখবেন অসুস্থ বিকলাঙ্গ কত লোক পড়ে আছে। শুক্রবারে বায়তুল মোকাররমে গেলে দেখতে পাবেন কত অসুস্থ বিকলাঙ্গ মানুষ মুছল্লীদের নিকট হাত পাতছে। ঢাকা মেডিকেল বা যে-কোনো হাসপাতালে গেলে দেখতে পাবেন আপনার চোখের সামনে কত মানুষ কাতরাচ্ছে। একবার কি আপনি চিন্তা করেছেন এই অসুস্থ বিকলাঙ্গ মানুষটা যদি আমি হতাম! আল্লাহ যদি আমাকে এর মতো করে সৃষ্টি করতেন, তাহলে আমার অবস্থাও এমন হতো। এই লোকটা যে অসুস্থ বিকলাঙ্গ, এই বিকলাঙ্গ হওয়ার পেছনে তার কি কোনো হাত আছে? কেউ কি বিকলাঙ্গ হতে চায়? আপনি যদি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে কাতরাতেন, তাহলে কেমন হতো! আল্লাহ তাআলা এত মানুষের ভিড়ে আপনাকে সুস্থ-সবল করে সৃষ্টি করেছেন। মানুষের কাছে হাত পাতা থেকে অমুখাপেক্ষী করেছেন, তারপরও কি আল্লাহর ইবাদত করবেন না? ওই বিকলাঙ্গ লোকটার কী দোষ? সে তো নিজে এমন হতে চায়নি। একটু বিবেকের দরজায় কড়া নাড়া দিন। সবকিছু আপনার সামনে প্রস্ফুটিত হয়ে যাবে। আপনি কি একবারও চিন্তা করেছেন, যখন আপনি ছোট্ট শিশু ছিলেন, এপাশ থেকে ওপাশ হতে পারতেন না, নিজ ঘাড়টা কাত হয়ে থাকলে সোজা করতে পারতেন না, বিছানায় প্রস্রাব-পায়খানা করে দিতেন, নিজ কষ্টের কথা কাউকে বলতে পারতেন না, ক্ষুধা লাগলে মায়ের কাছে চাইতে পারতেন না, মশা কামড় দিলে বা মাছি বিরক্ত করলে কিছু বলতে পারতেন না, ওই অসহায় ও অতিশয় দুর্বল মুহূর্তে আল্লাহ তাআলা আপনাকে মা নামক বটবৃক্ষ দিয়ে সংরক্ষণ করেছেন! ক্ষুধার যন্ত্রণায় যখন ছটফট করতেন, রোদের তাপে কষ্ট অনুভব করতেন, মশা-মাছির জ্বালায় অস্থির হয়ে উঠতেন, তখন মা নামক বটবৃক্ষ আপনার কান্নার শব্দ পেয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়তেন। আপনাকে সান্ত্বনার শীতলতায় আচ্ছাদিত করার জন্য যারপরনাই কোশেশ করতেন। আপনার জন্য কত রাত যে বিনিদ্র যাপন করেছেন তার ইয়ত্তা নেই। কোন স্বার্থে আপনার মা আপনার সাথে এমন কোমল আচরণ করেছেন? ওই সময় তো আপনি তাকে টাকাপয়সাও ইনকাম করে দেননি যে, আপনার প্রতি আলাদা একটা টান থাকবে! আল্লাহ তাআলা আপনার মায়ের হৃদয়ের মণিকোঠায় আপনার প্রতি একটা আলাদা ভালোবাসা ও টান সৃষ্টি করে দিয়েছেন, যার দরুন শত বাধাবিপত্তি উপেক্ষা করে আপনার মা আপনার কাছে ছুটে আসতেন! এভাবেই আপনি ধীরে ধীরে প্রাপ্তবয়সে উপনীত হলেন। এখন আপনার বয়স ২৫। আপনার শরীরে বইছে তারুণ্যের মনমাতানো হাওয়া। আশপাশে সবকিছুই আছে আগের মতো। মা ঠিকমতো খোঁজখবর নিচ্ছেন, বাবা আগের মতোই ভালোবাসেন। তথাপি মনটা কেন জানি ভালো লাগে না। কী জানি একটা শূন্যতা অনুভব করেন। সবার সাথে হাসিখুশি থাকলেও হৃদয়টা কেন জানি কারো জন্য সদাসর্বদা সাগ্ৰহে বসে থাকে। আমি আপনার হৃদয়ের অস্থিরতা, হৃদয়ের ব্যাকুলতা ঠাহর করতে না পারলেও আমার আপনার পরম রব ঠিকই বুঝতে পেরেছেন। তিনি মা-বাবার মনে ইঙ্গিত দিয়ে দিয়েছেন, তোমার ছেলে বা মেয়েকে বিয়ে করাতে হবে। ঘটা করেই একদিন বিয়ে হয়ে গেল। আপনি এখন ভীষণ সুখী। এতদিনের না বলা কথামালা একজনের সাথে বিনা সংকোচে বলতে পারেন, আপনার গোপন বিষয়গুলো সে সযতনে লুকিয়ে রাখে, কারো কাছে বলে না। আপনার জীবনটাই এখন এক মিষ্টি বউ দিয়ে আনন্দময় হয়ে উঠেছে। এভাবেই চলছে বছর খানেক। এখন দেখা যাচ্ছে বউ এর সাথে ভালোবাসা আগের তুলনায় খানিকটা কমে গেছে। আগে যেমন এক মুহূর্ত না দেখলে ছটফট করতেন, কোথাও থেকে এসে তাকে না পেলে ঘরদোর মাতিয়ে তুলতেন, এখন এমনটা কেন জানি হয় না। ঠিক ওই মুহূর্তে আপনার জীবনটা আরো সুখময় ও প্রাণবন্ত করার জন্য আল্লাহ তাআলা আপনাকে দান করলেন চোখ জুড়ানো ফুটফুটে একটা ছেলে বা মেয়ে সন্তান। আপনার স্ত্রীর শূন্য কোল পুরা হলো এই সন্তান নিয়ে। আপনার মা-বাবা মারা গেছেন বেশ কয়েক বছর হলো। এখন আপনি আপনার সন্তানের চেহারার দিকে তাকিয়ে শান্তি অনুভব করেন। আপনার সন্তানের চেহারায় আপনার মা-বাবার প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠে। বারবার বলেন, এটাই আমার মা, এটাই আমার বাবা। দিনে কতবার যে সন্তানের মুখ থেকে অস্ফুট আব্বু আম্মু ডাক শুনার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন! আপনি নিজেও কতবার যে আব্বু আম্মু বলে ডাকেন আল্লাহই ভালো জানেন। কাজ থেকে এসেই হাত থেকে ব্যাগ রেখে আগে পরখ করেন প্রিয় সন্তানের মুখ। কত প্রশান্তি যে অনুভব করেন, তা শুধু আপনিই অনুভব করেন। নিজে না খেয়ে না পরে থাকতে পারেন, কিন্তু আদরের সন্তানের জন্য চাওয়ার আগেই সব প্রস্তুত। এভাবেই সন্তান বড় হয়ে যায়। এখন তাকে আগের মতো একটা ভালো লাগে না। কিছুদিন পর তার জন্য ফুটফুটে একটা বউ আনলেন। তাদের থেকে এক সন্তান হলো। এখন নাতি-নাতনি নিয়ে বেশ আনন্দ-ফুর্তিতে আছেন। একবেলা তাদের না দেখলে পেটের ভাত হজম হয় না। কোথাও বেড়াতে গেলে তাড়াতাড়ি বাড়িতে আসতে তাগিদ দেন। জীবনটা এখন শূন্য নয়। সবসময় প্রাণবন্ত থাকেন। নাতি-নাতনিদের সাথে খুনশুটি আর খোশগল্পে দিনটা কখন যে কেটে যায়! আল্লাহ তাআলা এসব কিছু আমাকে আপনাকে দিয়েছেন। তারপরও কি আল্লাহর ইবাদত করব না? এগুলো কি আল্লাহর পক্ষ থেকে নেয়ামত নয়? জানেন কত মানুষের বাচ্চা হয় না। তারা তো হাজারো চেষ্টা-তদবির করছে। তারা কী দোষ করেছে? আল্লাহ তাআলা আমাকে আপনাকে না চাইতেই ফুটফুটে সুন্দর সন্তান দান করলেন। এটা কি আল্লাহর নেয়ামত নয়? আল্লাহ তাআলা আমাদের আরো কত নেয়ামত দিয়েছেন দেখুন। যে জিনিসের আমাদের বেশি প্রয়োজন, সেই জিনিসটা আমরা অতি স্বল্প মূল্যে পাই। যেমন অক্সিজেনের কথা বলি। অক্সিজেন ছাড়া মানবদেহ এক মুহূর্তও কল্পনা করা যায় না। জলে-স্থলে যেখানেই থাকুন না কেন অক্সিজেন থাকতেই হবে। নচেৎ আপনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়বেন। অক্সিজেন যেহেতু মানবদেহের জন্য অপরিহার্য একটা বিষয়, সেহেতু আল্লাহ তাআলা এই সবচেয়ে দামি সম্পদটা আমাকে আপনাকে ফ্রি ফ্রি অবিরত দিয়ে যাচ্ছেন। এই অক্সিজেনের কত যে মূল্য তা আপনি বুঝতে পারবেন, কখনো আইসিইউ এর মধ্যে গেলে –আল্লাহ আপনাকে হিফাযতে রাখুন-। আইসিইউ এর মধ্যে আপনাকে একদিনের জন্য অক্সিজেন দেওয়ার জন্য নেওয়া হলে দেখবেন আপনার বিল হচ্ছে লাখ খানেক টাকা। এখন আপনি হিসেব করুন একদিনে যদি অক্সিজেন গ্ৰহণ করে এক লাখ টাকা দিতে হয়, তাহলে ৬০-৭০ বছর যে জীবিত ছিলেন এর জন্য কত টাকা খরচ হতো! আল্লাহ তাআলা এই সম্পদটা আমাদের ফ্রি দিয়েছেন।

এরপর মানুষের জন্য প্রয়োজন হচ্ছে পানির। আল্লাহ তাআলা এই জিনিসটাও স্বল্প মূল্যে আমাদের দান করেছেন। অনায়াসে ভূগর্ভ থেকে পানি অবিরাম উঠছে। আল্লাহ তাআলা যদি এই পানি আটকে রাখতেন কে আমাকে আপনাকে সুপেয় পানি দিত। আল্লাহ তাআলা বলেন,قُلْ أَرَأَيْتُمْ إِنْ أَصْبَحَ مَاؤُكُمْ غَوْرًا فَمَنْ يَأْتِيكُمْ بِمَاءٍ مَعِينٍ ‘বলুন, তোমরা আমাকে বলো, যদি পানি ভূগর্ভে তোমাদের নাগালের বাইরে চলে যায়, তাহলে কে তোমাদের প্রবাহমান পানি এনে দেবে? (আল-মুলক, ৬৭/৩০)। আল্লাহ তাআলা আরও বলেন,أَفَرَأَيْتُمُ الْمَاءَ الَّذِي تَشْرَبُونَ - أَأَنْتُمْ أَنْزَلْتُمُوهُ مِنَ الْمُزْنِ أَمْ نَحْنُ الْمُنْزِلُونَ - لَوْ نَشَاءُ جَعَلْنَاهُ أُجَاجًا فَلَوْلَا تَشْكُرُونَ ‘তোমরা যে পানি পান করো, সে সম্পর্কে আমাকে জানাও। তোমরা কি সেটা মেঘ থেকে বর্ষণ করেছ নাকি আমরা বর্ষণ করেছি? আমরা ইচ্ছা করলে তা লবণাক্ত করে দিতে পারি। তথাপি তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে না? (আল-ওয়াক্বিয়া, ৫৬/৬৮-৭০)

পানি নামক এই বড় নেয়ামতটা আপনি উপলব্ধি করতে পারবেন কখন জানেন? যাদের পাম্প আছে অর্থাৎ পাম্পের মাধ্যম পানি উঠান, চাপ কল নেই তাদের যদি দুয়েক দিন বিদ্যুৎ না থাকে, তাহলে হাড়েহাড়ে টের পাবেন পানির যে কত মূল্য! ঢাকায় যারা অবস্থান করেন, তারা মাঝেমধ্যে বিষয়টা আঁচ করতে পারেন।

এরপর আসি আগুন প্রসঙ্গে। আমাদের প্রতিটা কাজে আগুনের প্রয়োজন। রান্নাবান্না থেকে শুরু করে কলকারখানায় আগুন ছাড়া এক মুহূর্তও চলে না। দোকান থেকে দুই টাকা দিয়ে একটা দিয়াশলাই কিনবেন, ১ মাস যাবে। এই আগুন ও জ্বালানি কিন্তু আমরা সৃষ্টি করিনি। আল্লাহ তাআলা সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন,أَفَرَأَيْتُمُ النَّارَ الَّتِي تُورُونَ - أَأَنْتُمْ أَنْشَأْتُمْ شَجَرَتَهَا أَمْ نَحْنُ الْمُنْشِئُونَ ‘তোমরা যে আগুন প্রজ্বলিত করো, সে সম্পর্কে আমাকে জানাও। তোমরা কি এর গাছ সৃষ্টি করেছ নাকি আমরা সৃষ্টি করেছি? (আল-ওয়াক্বি‘আহ, ৫৬/৭১-)

দেখলেন আল্লাহ তাআলা আমাদের প্রতিটি প্রয়োজনীয় জিনিস কত স্বল্প মূল্যে দান করলেন! তারপরও কি আমি আপনি আল্লাহর ইবাদত করব না?

আমরা যে যমীন থেকে উৎপাদিত ফসল খাই, এই ফসলও আল্লাহ তাআলা সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন,أَفَرَأَيْتُمْ مَا تَحْرُثُونَ - أَأَنْتُمْ تَزْرَعُونَهُ أَمْ نَحْنُ الزَّارِعُونَ - لَوْ نَشَاءُ لَجَعَلْنَاهُ حُطَامًا فَظَلْتُمْ تَفَكَّهُونَ ‘তোমরা যে বীজ বপন করো সে সম্পর্কে চিন্তা করেছ কি? তোমরা কি সেটা অঙ্কুরিত করো নাকি আমরা অঙ্কুরিত করি? আমরা ইচ্ছা করলে এটাকে খড়কুটায় পরিণত করতে পারি, তখন তোমরা হতভম্ব হয়ে যাবে’ (আল-ওয়াক্বি‘আহ, ৫৬/৬৩-৬৫)

আমাদের দেহে কত মূল্যবান সম্পদ যে আল্লাহ তাআলা না চাইতেই দিয়েছেন তা আপনি জানেন না। আপনাকে বলছি কিছু সম্পদের কথা। নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,فِي السِّنِّ خَمْسًا مِنَ الإِبِلِ ‘প্রতিটি দাঁতের দিয়াত পাঁচটি উট দিতে হবে’।[2] অন্যত্র নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, الأَصَابِعُ سَوَاءٌ كُلُّهُنَّ فِيهِنَّ عَشْرٌ عَشْرٌ مِنَ الإِبِلِ ‘সবগুলো আঙুলের (দিয়াত) সমান। প্রতিটি আঙুলের দিয়াত ১০টি করে উট’।[3]

আল্লাহ তাআলা আমাদের দাঁত দিয়েছেন চিবিয়ে খাওয়ার জন্য। কেউ যদি এই দাঁত ভেঙে ফেলে, তাহলে ওই ব্যক্তিকে একটি দাঁত ভাঙলে পাঁচটি উট ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। তাহলে আপনি হিসেব করুন ৩২টি দাঁতের মূল্য হচ্ছে ১৬০টি উট। একটা উটের দাম যদি ৫ লাখ টাকা করে হয়, তাহলে কত টাকা আপনিই হিসাব করুন। আপনার দাঁত না থাকলে তো হাজারো টাকা খরচ করে দাঁত লাগান। আল্লাহ তাআলা এমনিতেই আপনাকে দাঁত দিয়েছেন! আপনার দুইটা চোখের মূল্য হচ্ছে ১০০টি উট। নাকের মূল্য হচ্ছে ৫০টি উট। একটা আঙুলের মূল্য হচ্ছে ১০টি উট। তাহলে পাঁচটি আঙুলের মূল্য হচ্ছে ৫০টি উট। হাত-পায়ের মোট আঙুল হচ্ছে ২০টি, তাহলে ২০টি আঙুলের মূল্য হচ্ছে ২০০টি উট। দুইটা হাতের মূল্য হচ্ছে ১০০টি উট এবং দুইটা পায়ের মূল্য হচ্ছে ১০০টি উট। এত মূল্যবান সম্পদ আল্লাহ তাআলা আমাকে আপনাকে বিনামূল্যে দিয়েছেন! তারপরও কি আল্লাহর ইবাদত করবেন না?

আমাদের মনোরঞ্জনের জন্য আল্লাহ তাআলা গোটা পৃথিবীটা সাজিয়েছেন মনোরম করে। গাছে গাছে পাখপাখালির কলকাকলি, সরোবর ভর্তি মাছ, নদীর পানির ছলাত ছলাত কলতান, জোছনাভরা পূর্ণিমার চাঁদ, প্রাত্যহিক তারাদের মেলা, সোনালি রবি, মাঠে-তেপান্তরে জীবজন্তুর হুড়োহুড়ি, দূর আকাশের নীলিমা, মধ্য শ্রাবণে উতলা বর্ষণ- এসব দেখে, উপভোগ করে আমাদের হৃদয় আপ্লুত হয়। গ্রীষ্মের সন্ধ্যায় ঝিল্লিমুখর পরিবেশ, ঝিঁঝি পোকার ঝিঁ ঝিঁ ঝংকার, শীতের মধ্যভাগে রজনিতে হাসনাহেনার মৌ মৌ ঘ্রাণ, ঋতুরাজ বসন্তের পেলব স্নিগ্ধ পবন, আষাঢ়ের থেমে থেমে ইলশেগুঁড়ি বাদল, শরতের শুভ্র বলাকা সদৃশ আসমান- এসব আমাদের নয়ন জুড়ায়। আমরা কি আল্লাহর দেওয়া এই নেয়ামতগুলো ঠাহর করতে পারি? উপলব্ধির দ্বার উন্মোচন করেছি কোনোদিন?

আপাদমস্তক আমাদের পাপে ঘেরা, জীবন খাতার আদ্যোপান্ত ভুলে ভরা। তথাপি দয়াময় আমাদের জীবিকা দিয়ে যাচ্ছেন অবিরত। এখনো সময় আছে প্রিয়! রবের সমীপে ফিরে এসো। তাঁর ইবাদতে নিমগ্ন হও। নচেৎ তিনি পাকড়াও করলে কিন্তু রক্ষা নেই। এখনো বেলা ফুরাবার ঢের সময় বাকি। শেষ লগ্নে ইবনুল ক্বাইয়িম রাহিমাহুল্লাহ-এর কয়েকটি হৃদয় জাগানিয়া উক্তির মাধ্যমে লেখার ইতি টানছি, ‘তুমি যদি মসজিদ ছেড়ে দাও, মসজিদে না আসো; তাহলে মসজিদ কিন্তু খালি থাকবে না। তোমার পরিবর্তে অন্য আরেকজন আসবে। তুমি যদি ছালাত ছেড়ে দাও, তাহলে অন্য আরেকজন ছালাত ঠিকই পড়বে। তুমি যদি কুরআন পড়ে ভুলে যাও, তাহলে অন্য আরেকজন কুরআন মুখস্থ করবে। কুরআন অনুযায়ী জীবন বাস্তবায়ন করার প্রাণান্তকর চেষ্টা করবে। তুমি যদি দ্বীন থেকে বিমুখ হয়ে যাও, তাহলে অন্য আরেকজন দ্বীনের বিধান দৃঢ়তার সাথে আঁকড়ে ধরবে। মনে রেখো! এতে ইসলামের কোনো ক্ষতি হয়নি; বরং তুমি নিজেই নিজের ক্ষতি করলে। আল্লাহ তাআলা তোমার পরিবর্তে আরেকজন নিয়ে আসবেন, যে তোমার মতো অকৃতজ্ঞ হবে না’।[4]

শিক্ষক, আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ, বীরহাটাব-হাটাব, রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ।


[1]. তিরমিযী, হা/২৩২০, হাদীছ ছহীহ।

[2]. ইবনু মাজাহ, হা/২৬৫১, হাদীছ ছহীহ।

[3]. ইবনু মাজাহ, হা/২৬৫৩, হাসান।

[4]. মিফতাহু দারিস সায়াদা, ‘কুরআন’ অধ্যায়।

Magazine