ফিলিস্তীন কখন আমাদের নিকট ফিরে আসবে?[1]
প্রাককথন:
প্রশংসা মাত্রই আল্লাহ তাআলার জন্য। আমরা তাঁর প্রশংসা করছি, তাঁর নিকটেই সাহায্য চাচ্ছি, ক্ষমা প্রার্থনাও করছি তাঁর কাছেই এবং আমাদের নফসের অনিষ্ট ও মন্দ কর্মফল থেকে তাঁর কাছেই আশ্রয় চাচ্ছি। আল্লাহ তাআলা যাকে হেদায়াত দান করেন, তাকে পথভ্রষ্ট করার কেউ নেই। আর তিনি যাকে পথভ্রষ্ট করেন, তাকে সুপথ দেখানোরও কেউ নেই। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া সত্যিকারার্থে কোনো মা‘বূদ নেই এবং আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল।
আল্লাহ তাআলা বলেন,يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ حَقَّ تُقَاتِهِ وَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنْتُمْ مُسْلِمُونَ ‘হে মুমিনগণ! তোমরা যথার্থভাবে আল্লাহকে ভয় করো এবং তোমরা মুসলিম না হয়ে কোনো অবস্থায় মারা যেও না’ (আলে ইমরান, ৩/২)। তিনি আরো বলেন,يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُمْ مِنْ نَفْسٍ وَاحِدَةٍ وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالًا كَثِيرًا وَنِسَاءً وَاتَّقُوا اللَّهَ الَّذِي تَسَاءَلُونَ بِهِ وَالْأَرْحَامَ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلَيْكُمْ رَقِيبًا ‘হে মানুষ! তোমরা তোমাদের রবকে ভয় করো, যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন ও তার থেকে তার স্ত্রীকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাদের দু’জন থেকে বহু নর-নারী ছড়িয়ে দিয়েছেন। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, যার নামে তোমরা একে অপরের কাছে নিজ নিজ হক্ব দাবি করো এবং ভয় করো রক্ত-সম্পর্কিত আত্মীয়ের ব্যাপারেও। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের উপর পর্যবেক্ষক’ (আন-নিসা, ৪/১)। তিনি আরো বলেন,يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَقُولُوا قَوْلًا سَدِيدًا يُصْلِحْ لَكُمْ أَعْمَالَكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَمَنْ يُطِعِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ فَازَ فَوْزًا عَظِيمًا ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সরল সঠিক কথা বল। তাহলে তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের আমলকে সংশোধন করবেন এবং তোমাদের পাপ ক্ষমা করবেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে, সে অবশ্যই মহাসাফল্য অর্জন করবে’ (আল-আহযাব, ৩৩/৭০-৭১)।
অতঃপর আল্লাহর কিতাবই হলো সর্বাপেক্ষা সত্য বাণী। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দিকনির্দেশনাই হলো সর্বোত্তম দিকনির্দেশনা আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট বিষয় হলো দ্বীনের মধ্যে নবাবিষ্কৃত বিষয়। দ্বীনের মধ্যে নবাবিষ্কৃত প্রত্যেক বিষয়ই হলো বিদআত। প্রত্যেক বিদআতই হলো গোমরাহী আর প্রত্যেক গোমরাহীই হলো জাহান্নামে যাওয়ার কারণ।
পরকথা হলো, সাবেক মুফতী শায়খ মুহাম্মাদ আল-আমীন আল-হুসাইনীর সাথে একদল ফিলিস্তীনীর সাক্ষাৎ হলে তারা তাকে জিজ্ঞেস করেন, শায়খ! আমরা কবে আমাদের ফিলিস্তীনে ফিরে যেতে পারব?
তখন তিনি বললেন, যেদিন তোমরা আল্লাহ তাআলার দিকে (সম্পূর্ণরূপে) ফিরে যাবে, সেদিন তোমরা ফিলিস্তীনে ফিরে যেতে পারবে।
কবে আমরা ফিলিস্তীনে ফিরে যেতে পারব?
বর্তমানে পৃথিবীর যেকোনো দেশের মানুষ যদি জানতে চায় যে, আমাদের ফিলিস্তীন কখন আবার আমাদের হাতে ফিরে আসবে?
এর জবাবে আমি সেই উত্তরই দিব, যে উত্তর সম্মানিত শায়খ মুহাম্মাদ আল-আমীন দিয়েছিলেন। আর তা হলো, যেদিন আপনারা আল্লাহর দিকে (সম্পূর্ণরূপে) ফিরে যাবেন, সেদিন আপনাদের নিকট ফিলিস্তীন ফিরে আসবে। আর এ উত্তরটি রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মুখনিঃসৃত বাণী থেকেই গৃহীত। যেমনটি ইমাম আহমাদ ও আবূ দাঊদ ছাওবান রাযিয়াল্লাহু আনহু-এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন। তিনি রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন,تَدَاعَى عَلَيْكُمْ الأمم ،كما تَدَاعَى الأَكَلَةُ إِلَى قَصْعَتِهَا.قالوا: أوَ مِنْ قِلَّةٍ نَحْنُ يَوْمَئِذٍ يا رسول الله؟ فقَالَ لا إنكمْ يَوْمَئِذٍ كَثِيرٌ وَلَكِن كثرة غُثَاءٌ كَغُثَاءِ السَّيْلِ، وَلَيَنْزِعَنَّ اللَّهُ الرهبة منكم مِنْ قلوب أعدائكُمُ ، وَلَيَقْذِفَنَّ اللَّهُ فِي قُلُوبِكُمُ الْوَهَنَ قالوا و ما الوهن يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ حُبُّ الدُّنْيَا وَكَرَاهِيَةُ الْمَوْتِ ‘খাদ্য গ্রহণকারীরা যেভাবে খাবারের পাত্রের চতুর্দিকে একত্রিত হয়, অচিরেই বিজাতিরা তোমাদের বিরুদ্ধে সেভাবেই একত্রিত হবে’। ছাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! সেদিন কি আমাদের সংখ্যা কম হওয়ার কারণে এরূপ হবে? তিনি বললেন, ‘না, বরং তোমরা সেদিন সংখ্যাগরিষ্ঠ হবে; কিন্তু তোমরা হবে প্লাবনের স্রোতে ভেসে যাওয়া আবর্জনার মতো। আর আল্লাহ তোমাদের শত্রুদের অন্তর হতে তোমাদের পক্ষ হতে আতঙ্ক দূর করে দিবেন এবং তোমাদের অন্তরে আল-ওয়াহন ভরে দিবেন’। ছাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! ‘আল-ওয়াহন’ কী? তিনি বললেন, ‘দুনিয়ার মোহ এবং মৃত্যুকে অপছন্দ করা’।[2]
সুতরাং আমরা যেদিন আল্লাহ তাআলার দিকে ফিরে যাব, সেদিন তিনি আমাদের হারিয়ে ফেলা জিনিসগুলো আমাদের নিকট ফিরিয়ে দিবেন। কিন্তু যদি রবের সাথে আমাদের দূরত্ব বাড়তেই থাকে; তবে আমাদের অধীনস্থ, কর্তৃত্বাধীন যা কিছু আছে, সেটাও একসময় হারিয়ে ফেলতে হবে। আল্লাহ তাআলা মহিমান্বিত কুরআনে এরূপই ফয়সালা করে রেখেছেন। তিনি বলেন,وَإِذْ تَأَذَّنَ رَبُّكُمْ لَئِنْ شَكَرْتُمْ لَأَزِيدَنَّكُمْ وَلَئِنْ كَفَرْتُمْ إِنَّ عَذَابِي لَشَدِيدٌ ‘আর স্মরণ করো! যখন তোমাদের রব ঘোষণা দিলেন, তোমরা কৃতজ্ঞ হলে অবশ্যই আমি তোমাদেরকে আরো বাড়িয়ে দেব আর যদি অকৃতজ্ঞ হও, তাহলে জেনে রেখো, নিশ্চয় আমার শাস্তি বড় কঠিন’ (ইবরাহীম, ১৪/৭)।
উক্ত আয়াতে আল্লাহ তাআলা স্পষ্ট করে বলে দিলেন যে, কোনো নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় না করলে তা সেই নেয়ামতকে দূরীভূত করে দেয়। তিনি আয়াতে বললেন, তোমরা যদি আমার নেয়ামতকে অস্বীকার করো, কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন না করো আর শুকরিয়া আদায়ের মাধ্যমে সেটাকে ধরে না রাখো, তবে আমি তোমাদেরকে কঠিন শাস্তি দিব। কেননা বিষয়টি তেমনই, যেমনটি রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘নেয়ামত হলো শিকার এবং শুকরিয়া হলো বন্ধন বা রশি’। আর আলেমগণও এই কথার পরিপ্রেক্ষিতে এমনটিই বলেছেন।
সুতরাং আল্লাহ যখন কোনো বান্দাকে কোনো নেয়ামত দেন এবং সে বান্দা চায় যে, এ নেয়ামতটি স্থায়ী হোক, উঠে না যাক, তাহলে তার উপর আবশ্যক হলো- এ নেয়ামতের কারণে আল্লাহ তাআলার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা। কিন্তু যদি সে শুকরিয়া আদায় করার ব্যাপারে গড়িমসি করে, তবে তার থেকে সেই নেয়ামত ছিনিয়ে নেওয়া হয় এবং এ কারণে তাকে অপমানিত ও লাঞ্ছিত করা হয়। এটাই হলো আল্লাহ তাআলার নির্ধারিত ফয়সালা। এটা সৃষ্টিকুলের মাঝে তাঁর একটি বিধান।
কখন আমাদের নিকট ফিলিস্তীন ফিরে আসবে?
এ প্রশ্নের একমাত্র উত্তর হলো, যেদিন আমরা আল্লাহর দিকে ফিরে যাব, সেদিন ফিলিস্তীন আমাদের নিকট ফিরে আসবে। নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও তাঁর হাদীছে আমাদেরকে এমনটিই জানিয়েছেন। কেননা তিনি বলেছেন যে, উম্মত যখন রবের দ্বীন থেকে বিমুখ হয়ে যায়, নবীর সুন্নাহকে ছেড়ে দেয়, তখন তাদের উপর নেমে আসে লাঞ্ছনা। চারিদিক থেকে তাদেরকে ঘিরে ধরে অপমান। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,إِذَا تَبَايَعْتُمْ بِالْعِينَةِ وَأَخَذْتُمْ أَذْنَابَ الْبَقَرِ وَرَضِيتُمْ بِالزَّرْعِ وَتَرَكْتُمُ الْجِهَادَ سَلَّطَ اللَّهُ عَلَيْكُمْ ذُلاًّ لاَ يَنْزِعُهُ حَتَّى تَرْجِعُوا إِلَى دِينِكُمْ ‘যখন তোমরা ঈনা[3] পদ্ধতিতে ব্যবসা করবে, গরুর লেজ আঁকড়ে ধরবে, কৃষিকাজেই সন্তুষ্ট থাকবে এবং জিহাদ ছেড়ে দিবে, তখন আল্লাহ তোমাদের উপর লাঞ্ছনা ও অপমান চাপিয়ে দিবেন। তোমরা তোমাদের দ্বীনে ফিরে না আসা পর্যন্ত আল্লাহ তোমাদেরকে এই অপমান থেকে মুক্তি দিবেন না’।[4]
সুতরাং বিশ্বজাহানের প্রতিপালক আল্লাহ তাআলার দিকে প্রত্যাবর্তন ব্যতীত হারানো সম্মান ফিরিয়ে নিয়ে আসা ও গৌরব অর্জন করা সম্ভব নয়।
حَتَّى تَرْجِعُوا إِلَى دِينِكُمْ ‘যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা তোমাদের দ্বীনে ফিরে না আসো’-এর মর্মার্থ হলো, যতক্ষণ না আপনারা সে দ্বীনে ফিরে আসেন যে দ্বীন নিয়ে মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আগমন করেছিলেন। যতক্ষণ না আপনারা সে পথে ফিরে আসেন, যে পথ দেখিয়েছেন বিশ্বনবী মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
বর্তমানে ফিলিস্তীনের গাযায় যেটা ঘটছে, সেটা কেবল ত্রাণ বিতরণ ও মানবিকতা প্রদর্শনের বিষয় নয়। ব্যাপারটা এমন না যে, যারা ধনবান দানশীল আছেন তাদেরকে ফিলিস্তীনীদের জন্য শুধু অনুদান ও ত্রাণ বিতরণ করতে বলব। এটা তো আক্বীদাগত ইস্যু। মূলত এটি আক্বীদার সাথে সম্পৃক্ত একটি বিষয়। দ্বীনের মূল অংশের সাথে জড়িত একটি বিষয়।
এটি এমন কোনো বিষয় নয়, যা মুসলিমদের পক্ষ থেকে কাফেররা করছে। বরং এ আক্বীদাগত অধঃপতন মুসলিমদের নিজের হাতের কামাই। কেননা (ফিলিস্তীনী ইস্যুর প্রতিকারের লক্ষ্যে) বাহ্যিকভাবে যে কর্মসূচিগুলো পুরো বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে, এর কোনোটাই কোনো কাজে আসবে না। কারণ অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য সঠিক পন্থায় কাজ করা হচ্ছে না। কিন্তু কেন?
যারা চক্ষুষ্মান, বিবেকসম্পন্ন ব্যক্তি তাদের নিকট এর কারণটা স্পষ্ট। এর কারণ হলো, এ অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনের প্রচেষ্টা শারঈ পদ্ধতিতে হচ্ছে না। আর যে পদ্ধতিতে বর্তমানে করা হচ্ছে, সে পদ্ধতিতে রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও আমাদেরকে করতে বলেননি।
ফিলিস্তীনের ইস্যুটা কেবল দান করার ইস্যু নয় যে, এর জন্য অনুদান তহবিল গঠন ও সাহায্য সংগ্রহ করা হবে। পোশাক-আশাক ও ত্রাণসামগ্রী জমা করা হবে। এগুলো হলো বাহ্যিক বিষয়ের প্রতিকার; আসল রোগকে শিকড়সমেত উপড়ে ফেলা নয়। শরীআত কখনো এভাবে প্রতিকার করা শিক্ষা দেয় না।
হ্যাঁ, তবে মাযলূমদের জন্য পোশাক-আশাক ও ত্রাণ সংগ্রহ করা ওয়াজিব। মানুষের কাছ থেকে এটি কাম্য। কিন্তু এটাই মূল বিষয় নয়। আমাদের জন্য মোটেও উচিত নয় মূল মাসআলা তথা তাওহীদ ভুলে যাওয়া, মূল রোগের প্রতিকার করতে গড়িমসি করা। আসল রোগকে শিকড়সমেত উপড়ে ফেলতে বিলম্ব করা কখনোই উচিত নয়।
আর আমাদের জন্য আবশ্যক কর্তব্য হলো, হঠাৎ আপতিত সমস্যার সমাধানে সদা প্রস্তুত থাকা। এ সমস্ত সমস্যাগুলো বারবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। কেননা রোগটি মূলত মুসলিম উম্মাহর পিঠকে ভেঙে দিচ্ছে।
কোনো একপ্রান্তে সমস্যা একটু স্তিমিত হচ্ছে, তো অপর প্রান্তে অগ্নিশিখা দাউদাউ করে জ্বলে উঠছে। জাতির শত্রুরা ভিন্ন ভিন্ন দ্বীনের অনুসারী হওয়া সত্ত্বেও মুসলিম উম্মাহর ধ্বংস সাধনের অভিপ্রায়ে তাদের উপর উন্মাদের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ছে। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সংবাদ দিয়েছেন, নির্দ্বিধায় বিনা পয়সার খাদকরা যেভাবে খাবারের পাত্রের চতুর্দিকে একত্রিত হয়, তোমাদের ধ্বংস সাধনের অভিপ্রায়ে পৃথিবীর সকল প্রান্তের বিজাতিরা তোমাদের বিরুদ্ধে ঠিক সেভাবেই একত্রিত হবে। বস্তুত মনে হবে মুসলিম উম্মাহ যেন এক প্রাপ্ত গনীমত, খাওয়ার জন্য পেশকৃত গোশত, লুণ্ঠিত সম্পদ যার কোনো রক্ষকারী নেই, নেই কোনো তদারককারী।
নিশ্চয় নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে মূল রোগ সম্পর্কে জানিয়ে দিয়েছেন। সুতরাং মূল রোগের চিকিৎসা বাদ দিয়ে বাহ্যিক বিষয়ের প্রতিকার নিয়ে ডুবে থাকা আমাদের মোটেও উচিত নয়। যেখানে সেখানে হামলা করে বেড়ানোটাও অনুচিত। কেননা এ হামলার মাধ্যমে কোনো এক স্থানের ক্ষত কমে, কিন্তু মুসলিম উম্মাহর শত্রুরা অন্য স্থানে আরো রক্ত ঝরায়। তারা মুসলিমদের মূল রোগের প্রতিকার করা থেকে বিরত রেখে বাহ্যিক বিষয়ে ব্যতিব্যস্ত করে রাখে, যার কারণে বিষয়টি আরো খারাপ আকার ধারণ করে। আল্লাহ আমাদের সঠিক বুঝ দান করুন- আমীন!
মূল: আবূ আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ ইবনু সাঈদ রসলান
অনুবাদ: মাহফুজুর রহমান ও আব্দুল্লাহ
[1]. متى تعود إلينا فلسطين গ্রন্থ থেকে অনূদিত, পৃ. ৫-১২।
উভয়ে অধ্যয়নরত, কুল্লিয়্যাহ, ১ম বর্ষ, মাদরাসা মুহাম্মাদীয়া আরাবীয়া, উত্তর যাত্রাবাড়ী, ঢাকা।
[2]. মুসনাদে আহমাদ, হা/২১৮৯১; আবূ দাঊদ, হা/৪২৯৭; ছহীহুল জামে‘, হা/৮১৮৩।
[3]. কোনো জিনিস কারো কাছে বাকীতে বিক্রি করে তা নগদে বিক্রয় মূল্যের চেয়ে কম দামে তার কাছ থেকে কিনে নেওয়াকে ‘বায়‘উল ঈনা’ বলে।
[4]. আবূ দাঊদ, হা/৩৪৬২; সিলসিলা ছহীহা, হা/১১।