কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

শিরক নিয়ে অজানা কিছু কথা

post title will place here

৭০ বছর ধরে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে অসাধ্যকে সাধন করে টাকাপয়সা সংগ্ৰহ করেছেন। কোনো একদিন অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনায় আগুন লেগে আপনার সব টাকা পুড়ে ছাই হয়ে গেল। বলুন তো আপনার কাছে তখন কেমন লাগবে? দুচোখ দিয়ে শ্রাবণের ধারা বইতে থাকবে। আপনাকে না বলেই তপ্ত অশ্রুরা আপনার গণ্ডদেশে মাখামাখি করবে। ভেতরটা ফেটে যাবে। এক পর্যায়ে আপনি গুঙিয়ে কেঁদে উঠবেন।

এমনই হলো শিরক। একটা মানুষের সারা জীবনের আমলের কাঠখড়ি শিরকের বারুদে পুড়ে সাথে সাথেই শেষ। এটার কথাই মহান আল্লাহ কুরআনে বলেছেন,﴿وَلَقَدْ أُوْحِيَ إِلَيْكَ وَإِلَى الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِكَ لَئِنْ أَشْرَكْتَ لَيَحْبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُوْنَنَّ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ ﴾ ‘তোমার কাছে ও তোমার পূর্বের জাতির কাছে অহী করা হয়েছে যে, তুমি শিরক করলে তোমার আমল বিনষ্ট হয়ে যাবে এবং তুমি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে’ (আয-যুমার, ৩৯/৬৫)। অন্যত্র আল্লাহ তাআলা বলেন,﴿ وَقَدِمْنَا إِلٰى مَا عَمِلُوْا مِنْ عَمَلٍ فَجَعَلْنَاهُ هَبَاءً مَنْثُوْرًا ﴾‘আর তারা যা আমল করেছে, আমরা তৎপ্রতি মনোনিবেশ করব, অতঃপর তা বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত করব’ (আল-ফুরক্বান, ২৫/২৩)

আমরা আমাদের যাপিত জীবনে মাঝেমধ্যে মনের অজান্তেই শিরক নামক আগুনে ঢুকে সকল আমলের কাঠখড়ি পুড়ে ফেলি। আমাদের এ বিষয়ে বিন্দু পরিমাণ খবর নেই। আমরা যেন শিরক নামক এই আগুন থেকে বিরত থাকতে পারি এজন্যই আজকের লেখাটা। তাই চলুন শুরু করা যাক শিরক সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ কিছু আলোচনা।

শিরকের সংজ্ঞা : উলূহিয়্যাত, রুবূবিয়্যাহ এবং নাম ও গুণাবলির ক্ষেত্রে আল্লাহর সাথে কোনো কিছুকে অংশীদার বা সমকক্ষ সাব্যস্ত করাকে শিরক বলে।

শিরকের প্রকারভেদ : শিরক দুই প্রকার। যথা— (১) বড় শিরক এবং (২) ছোট শিরক।

(১) বড় শিরক : বড় শিরকের ভয়াবহতা সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন,﴿وَلَقَدْ أُوحِيَ إِلَيْكَ وَإِلَى الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِكَ لَئِنْ أَشْرَكْتَ لَيَحْبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُوْنَنَّ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ﴾ ‘তোমার কাছে ও তোমার পূর্বে যারা গত হয়ে গেছে, তাদের কাছে অহী করা হয়েছে যে, যদি তুমি শিরক কর, তাহলে তোমার আমল বিনষ্ট হয়ে যাবে এবং তুমি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে’ (আয-যুমার, ৩৯/৬৫)। নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তাআলা বলেন,مَنْ عَمِلَ عَمَلًا أَشْرَكَ فِيْهِ مَعِيْ غَيْرِيْ تَرَكْتُهُ وَشِرْكَهُ ‘যে ব্যক্তি এমন আমল করবে, যাতে সে আমার সাথে অন্যকে শরীক করে, তবে আমি তাকে ও তার শিরককে বর্জন করব’।[1]

(২) ছোট শিরক : ছোট শিরক আবার দুই প্রকার। যথা— (ক) গোপন শিরক ও (খ) বাহ্যিক শিরক।

(ক) গোপন শিরক : যেমন- লোক দেখানো আমল। নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি লোক দেখানোর জন্য ছালাত পড়ে, সে শিরক করে, যে ব্যক্তি লোক দেখানোর জন্য ছিয়াম রাখে, সে শিরক করে এবং যে ব্যক্তি লোক দেখানোর জন্য দান করে, সে শিরক করে’।[2] নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,إنَّ أخْوَفَ ما أَخَافُ عَلَيْكُمْ الشِّرْكُ الْأَصْغَرُ، قَالُوْا : وَمَا الشِّرْكُ الْأَصْغَرُ يَا رَسُوْلَ اللهِ؟ قَالَ : الرِّياءُ ‘আমি তোমাদের উপর সবচেয়ে বেশি ভয় করি ছোট শিরক নিয়ে’। তারা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! ছোট শিরক কী? তিনি বলেন, ‘রিয়া’ তথা লোক দেখানো আমল।[3]

(খ) বাহ্যিক শিরক : কখনো কথার মাধ্যমে হয়। যেমন- নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, مَنْ حَلَفَ بِغَيْرِ اللَّهِ فَقَدْ أَشْرَكَ ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে শপথ করল, সে শিরক করল’।[4] আবার কখনো কাজের মাধ্যমে হয়। যেমন- নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, مَنَ تَعَلَّقَ تَمِيْمَةً فَقَدْ أَشْرَكَ ‘যে ব্যক্তি তাবিজ ঝুলাল, সে শিরক করল’।[5]

রোগমুক্তির জন্য তাবিজ ঝুলানো জায়েয নেই। তবে শারঈ পদ্ধতিতে ঝাড়ফুঁক জায়েয আছে। ঝাড়ফুঁক করার জন্য পাঁচটি শর্ত রয়েছে।

বড় শিরক ও বড় কুফর এবং ছোট শিরক ও ছোট কুফর চেনার কিছু মূলনীতি :

(১) দলীলেই উল্লেখ থাকবে যে এটা ছোট শিরক নাকি বড় শিরক। যেমন- নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,إنَّ أخْوَفَ مَا أَخَافُ عَلَيْكُمْ الشِّرْكُ الْأَصْغَرُ، قَالُوْا : وَمَا الشِّرْكُ الْأَصْغَرُ يَا رَسُوْلَ اللهِ؟ قَالَ : الرِّياءُ ‘আমি তোমাদের উপর সবচেয়ে বেশি ভয় করি ছোট শিরক নিয়ে’। তারা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! ছোট শিরক কী? তিনি বললেন, ‘রিয়া’।[6]

(২) দলীলে স্পষ্ট থাকবে এটা শিরক বা কুফর। কিন্তু অন্যান্য দলীলের আলোকে ব্যক্তিকে ইসলামী মিল্লাত থেকে বের করে কাফের বা মুশরিক সাব্যস্ত করা যাচ্ছে না, তাহলে এটা ছোট শিরক বা ছোট কুফর হবে। যেমন- নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, سِبَابُ الْمُسْلِمِ فُسُوْقٌ، وَقِتَالُهُ كُفْرٌ ‘মুসলিমকে গালি দেওয়া ফাসেক্বী এবং তার সাথে লড়াই করা কুফরী’।[7] অন্যত্র রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,‏لاَ تَرْجِعُوْا بَعْدِيْ كُفَّارًا يَضْرِبُ بَعْضُكُمْ رِقَابَ بَعْضٍ ‘আমার পরে তোমরা মারামারিতে লিপ্ত হয়ে পুনরায় কাফের হয়ে যেয়ো না’।[8]

উপরিউক্ত দুটি হাদীছের মাধ্যমে বুঝা গেল যে, মুমিন ব্যক্তির সাথে লড়াই করা বা তাকে হত্যা করা কুফর। কিন্তু অপর আয়াত দ্বারা বুঝা যায় এটা এমন কুফর, যা দ্বীনের গণ্ডি থেকে বের করে দেয় না। যেমন আল্লাহ বলেন,﴿وَإِنْ طَائِفَتَانِ مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ اقْتَتَلُوْا فَأَصْلِحُوْا بَيْنَهُمَا﴾ ‘যদি মুমিনদের দুটি দল পরস্পরে লড়াইয়ে লিপ্ত হয়, তবে তোমরা উভয় দলের মাঝে আপস-মীমাংসা করে দাও’ (আল-হুজুরাত, ৪৯/৯)। এর পরের আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন,﴿إِنَّمَا الْمُؤْمِنُوْنَ إِخْوَةٌ فَأَصْلِحُوْا بَيْنَ أَخَوَيْكُمْ﴾ ‘মুমিনরা পরস্পর পরস্পরের ভাই। অতএব, তোমরা তোমাদের ভাইদের মাঝে মীমাংসা করে দাও’ (আল-হুজুরাত, ৪৯/১০)

এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা যুদ্ধরত মুসলিমদেরকেও পরস্পরের ভাই হিসেবে সম্বোধন করেছেন। তারা যদি লড়াই করার কারণে বা মারামারির কারণে কাফের হয়ে যেত, তাহলে ভাই বলে সম্বোধন করতেন না। আরেকটা আয়াত দেখুন। আল্লাহ তাআলা বলেন,﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الْقِصَاصُ فِي الْقَتْلَى الْحُرُّ بِالْحُرِّ وَالْعَبْدُ بِالْعَبْدِ وَالْأُنْثَى بِالْأُنْثَى فَمَنْ عُفِيَ لَهُ مِنْ أَخِيهِ شَيْءٌ فَاتِّبَاعٌ بِالْمَعْرُوفِ وَأَدَاءٌ إِلَيْهِ بِإِحْسَانٍ﴾ ‘হে ঈমানদারগণ! হত্যার ব্যাপারে তোমাদের জন্য ক্বিছাছ নির্ধারণ করা হয়েছে। স্বাধীন ব্যক্তির বিনিময়ে স্বাধীন ব্যক্তি, দাসের বিনিময়ে দাস ও নারীর বিনিময়ে নারী। যাকে তার ভাইয়ের পক্ষ থেকে কিছুটা ক্ষমা করে দেওয়া হবে, সে সততার অনুসরণ করবে এবং সুন্দরভাবে তাকে আদায় করে দেবে’ (আল-বাক্বারা, ২/১৭৮)

এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা নিহত ব্যক্তির উত্তরাধিকারী ব্যক্তিদের হত্যাকারীর ভাই বলা হয়েছে। হত্যা করার কারণে যদি ব্যক্তি কাফের হয়ে যেত, তাহলে আল্লাহ তাআলা তাকে তাদের ভাই বলে উল্লেখ করতেন না। যেমন আল্লাহ বলেছেন, ﴿وَالْمُؤْمِنُوْنَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ﴾ ‘মুমিন পুরুষরা ও মুমিন নারীরা পরস্পর পরস্পরের বন্ধু’ (আত-তাওবা, ৯/৭১)

আর আল্লাহ তাআলা মুনাফিক্ব ও কাফেরদেরকে পরস্পর পরস্পরের ভাই বলেছেন,﴿الْمُنَافِقُوْنَ وَالْمُنَافِقَاتُ بَعْضُهُمْ مِنْ بَعْضٍ﴾ ‘মুনাফিক্ব পুরুষরা ও মুনাফিক্ব নারীরা পরস্পর পরস্পরের অন্তর্ভুক্ত’ (আত-তাওবা, ৯/৬৭)। অন্যত্র আল্লাহ তাআলা বলেন,﴿أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِيْنَ نَافَقُوْا يَقُوْلُوْنَ لِإِخْوَانِهِمُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ﴾ ‘তুমি কি মুনাফিক্বদের দেখনি? যখন তারা আহলে কিতাবের মধ্যে থেকে তাদের কাফের ভাইদের বলেছিল’ (আল-হাশর, ৫৯/১১)। হাদীছে নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, أَيُّمَا رَجُلٍ قَالَ لِأَخِيْهِ يَا كَافِرُ‏.‏ فَقَدْ بَاءَ بِهَا أَحَدُهُمَا‏ ‘কেউ তার ভাইকে কাফের বললে, তাদের দুজনের একজনের উপর তা বর্তাবে’।[9]

এ হাদীছের ব্যাখ্যায় শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তায়মিয়া রহিমাহুল্লাহ বলেন, ‘হাদীছে কাফের বলার সময় সম্বোধনকৃত ব্যক্তিকে সম্বোধনকারীর ভাই বলে উল্লেখ করা হয়েছে। যদি একজন আরেকজনকে কাফের বলার কারণে দুজনের একজন কাফের হয়ে যেত, তাহলে নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো ভাই বলতেন না’। সুতরাং আমরা বুঝতে পারলাম উপরের আয়াত ও হাদীছে যে কুফরীর কথা বলা হয়েছে, তা বড় কুফর নয়; বরং ছোট কুফর।

নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,لاَ يَزْنِي الزَّانِيْ حِيْنَ يَزْنِيْ وَهُوَ مُؤْمِنٌ وَلاَ يَسْرِقُ السَّارِقُ حِيْنَ يَسْرِقُ وَهُوَ مُؤْمِنٌ ‘ব্যভিচারী যখন ব্যভিচার করে, তখন সে মুমিন থাকে না। আর চোর যখন চুরি করে, তখন সে মুমিন থাকে না’।[10] এই হাদীছে বলা হয়েছে, চুরি, ছিনতাই ও ব্যভিচার করার সময় তাদের ঈমান থাকে না। এর দ্বারা তারা মুশরিক হয়ে যায় এটা উদ্দেশ্য নয়। কারণ ব্যভিচার ও চুরি সাব্যস্ত হওয়ার পর তাদের বেত্রাঘাত ও হাত কাটা হয়। যদি হাদীছের আলোকে তারা কাফের মুরতাদ বা ধর্মচ্যুত হয়ে যেত, তাহলে তাদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হতো। তাদের তো মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হচ্ছে না। সুতরাং ওই অবস্থায় তারা মুসলিম থাকে, যা ঈমানের সর্বনিম্ন স্তর। তাই তাদের কাফের বলা যাবে না।

(৩) কুফর ও শিরক শব্দ দুটি নাকেরা (অনির্দিষ্ট) ব্যবহার করা হলে তা ছোট শিরক বা ছোট কুফর হবে। আর আলিফ লাম দ্বারা মা‘রেফা (নির্দিষ্ট) ব্যবহার করা হলে বড় শিরক বা বড় কুফর হবে।[11] যেমন- নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,بَيْنَ الْعَبْدِ وَبَيْنَ الْكُفْرِ تَرْكُ الصَّلاَةِ ‘বান্দা ও কুফরের মধ্যে পার্থক্য হলো ছালাত ছেড়ে দেওয়া’।[12]

উপরিউক্ত হাদীছে যে কুফর শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে তা মা‘রেফা (নির্দিষ্ট) ব্যবহার করা হয়েছে। অতএব এই কুফর দ্বারা বড় কুফর উদ্দেশ্য।

(৪) ব্যক্তির বিশ্বাস, নিয়্যত ও উদ্দেশ্যের কারণে কখনো কখনো ছোট শিরক ও ছোট কুফর বড় শিরক ও বড় কুফর হবে। যেমন- কেউ তাবিজ ব্যবহার করে এবং সে বিশ্বাস করে যে তাবিজের প্রভাবেই সে ভালো হয়েছে তাহলে এটা বড় শিরক হবে। আর কেউ যদি এই বিশ্বাস করে যে তাবিজ একটি মাধ্যম মাত্র। আল্লাহই প্রকৃতপক্ষে ভালো করেন, তাহলে এটা ছোট শিরক হবে। এমনিভাবে কেউ যদি বিশ্বাস করে যে আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নামে শপথ করা বেশি আস্থাপূর্ণ, তাহলে এটা বড় শিরক হবে। আর যদি এমন মনে না করে তবে ছোট শিরক হবে।

ছোট শিরক ও বড় শিরকের মাঝে পার্থক্য :

(১) বড় শিরক করলে ওই ব্যক্তি ইসলাম থেকে বের হয়ে কাফের মুশরিক হয়ে যায়। কিন্তু ছোট শিরক করলে কাফের ও মুশরিক হয় না।

(২) বড় শিরক করলে তওবা ছাড়া এ পাপ ক্ষমা হয় না। কিন্তু ছোট শিরক করলে আল্লাহ ইচ্ছা করলে তওবা ছাড়াই বিভিন্ন ধরনের সৎ আমলের মাধ্যমে ক্ষমা করে দিতে পারেন।

(৩) বড় শিরক করলে চিরস্থায়ীভাবে জাহান্নামে থাকতে হবে। কিন্তু ছোট শিরক করলে চিরস্থায়ীভাবে থাকতে হবে না; বরং আল্লাহ ইচ্ছা করলে ক্ষমাও করে দিতে পারেন।

(৪) বড় শিরক করলে যাপিত জীবনের সমস্ত আমল বিনষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু ছোট শিরক করলে শুধু ওই আমলটাই নষ্ট হবে, যেটাতে শিরক পাওয়া গেছে।

(৫) বড় শিরক করলে ব্যক্তি ইসলামী রাষ্ট্রে তার জানমালের নিরাপত্তা হারিয়ে ফেলে। কিন্তু ছোট শিরক করলে পূর্ণ নিরাপত্তা থাকে।

শিক্ষক, আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ, বীরহাটাব-হাটাব, রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ।

[1]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৯৮৫।

[2]. যঈফুত তারগীব, হা/১৯। হাদীছটি দুর্বল হলেও এর ভাব ছহীহ হাদীছের সাথে মিলে যায়।

[3]. মুসনাদে আহমাদ, হা/২৩৬৩০।

[4]. আবূ দাঊদ, হা/৩২৫১, হাদীছ ছহীহ।

[5]. মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭৪০৪।

[6]. মুসনাদ আহমাদ, হা/২৩৬৩০।

[7]. ছহীহ বুখারী, হা/৪৮।

[8]. আবূ দাঊদ, হা/৪৬৮৬, হাদীছ ছহীহ।

[9]. ছহীহ বুখারী, হা/৬১০৪।

[10]. ছহীহ বুখারী, হা/৬৭৮২।

[11]. দ্রষ্টব্য: ইবনু তাইমিয়াহ, ইক্বতিযাউছ ছিরাতিল মুস্তাক্বীম, ১/২৩৭।

[12]. আবূ দাঊদ, হা/৪৬৭৮, হাদীছ ছহীহ।

Magazine