উদাহরণস্বরূপ মাহাত্ম্য যদি*এর মধ্যে থাকে,**যে কোনো এমন জাতির সংস্কার করা যে জাতি বর্বরতায় প্লাবিত ও নৈতিক অন্ধকারে নিমজ্জিত তাহলে মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অবশ্যই মহৎ। কারণ তিনি আরবের মতো অত্যন্ত নিমগ্ন জাতিকে মুক্ত ও পবিত্র করে তোলেন এবং তাদেরকে সত্যতা ও জ্ঞানের আলোকবর্তিকা বানিয়ে দেন। তাঁর কাছে এই মাহাত্মের পুরো দাবি রয়েছে। মাহাত্ম বলতে যদি কোনো একটি সমাজের পরস্পর বিরোধী তত্ত্বকে ভ্রাতৃত্ব এবং দানশীলতার সূত্রে বেঁধে দেওয়াকে বোঝায়, তাহলে মরুভূমিতে জন্ম নেওয়া এই নবী মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিঃসন্দেহে মহত্ত্বের অধিকারী। মহত্ত্বের অর্থ যদি হয় ঐ মানুষদের সংশোধন ও পবিত্র করা, যারা অন্ধ কুসংস্কার ও সকল ক্ষতিকারক প্রথাতে জড়িত, তাহলে বলতে পারি যে, ইসলামের পয়গম্বর লক্ষ লক্ষ মানুষকে কুসংস্কার ও অযৌক্তিক ভয় থেকে মুক্তি দান করেছেন। যদি বলি, মহত্ত্ব এক উচ্চতর নৈতিক মান, তাহলেও বলতে পারি যে, মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শত্রু-মিত্র সবার কাছেই ছিলেন আল-আমীন ও আছ-ছাদিক্ব অর্থাৎ পরম বিশ্বস্ত ও সত্যবাদী। যদি বিজেতা মহান ব্যক্তি হন, তাহলে তিনি এমন এক ব্যক্তি যিনি অসহায়, অনাথ ও সাধারণ ব্যক্তির অবস্থা থেকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছিলেন এবং খসরু ও কিসরার মতো আরবদের শাসক হয়েছিলেন। তিনি এমন এক মহান সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা, যা চৌদ্দশ বছর ধরে এখনও অক্ষত। নেতার প্রতি যে আনুগত্য ও ভালোবাসা, তাকেও যদি মহত্ত্বের পরিচয় বলে বিবেচনা করি, তাহলে দেখব এই নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নামের শক্তি ও মহিমা আজ পর্যন্ত সমগ্র বিশ্বের কোটি কোটি হৃদয়কে মোহিত করে।
নিরক্ষর নবী : তিনি এথেনস, রোম, পারস্য, ভারত, কিংবা চীনের বিদ্যালয়ে দর্শণশাস্ত্র অধ্যয়ন করেননি, কিন্তু তিনি মানবজাতিকে দিয়েছেন চিরকল্যাণকর এক মহাসত্যের বাণী। তিনি নিজে নিরক্ষর ছিলেন, কিন্তু এমন বাগ্মিতা ও সৌরভের সাথে কথা বলতেন যে, শ্রোতারা কান্নায় ভেঙে পড়তেন। তিনি অনাথ ছিলেন এবং পার্থিব পণ্যও ছিল না তাঁর, কিন্তু সকলেরই প্রিয়পাত্র ছিলেন। তিনি কোনো সামরিক একাডেমিতে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেননি, কিন্তু তিনি ভয়াবহতম অবস্থাতেও সৈন্যবাহিনী সংগঠন করতেন এবং শুধু নৈতিক শক্তির কারণে বহু বিজয় লাভ করেন।
প্রতিভাবান প্রচারক পৃথিবীতে খুবই বিরল। দেকার্তের মতে, ‘আদর্শ প্রচারক বিশ্বের মধ্যে সবচাইতে বিরল’। হিটলারও তাঁর ‘mein kamp’ মেইন ক্যাম্প গ্রন্থে এই একই অভিমত ব্যক্ত করেছেন; বলেছেন, ‘এক মহান তাত্ত্বিক কদাপি এক মহান নেতা হতে পারেন। এর বিপরীত একজন আন্দোলনকারীর মধ্যে নেতৃত্বের যোগ্যতা অনেক বেশি থাকে। তিনি সর্বদা উৎকৃষ্ট নেতা হবেন। কারণ নেতৃত্ব মানে জনগণকে চালনা ও প্রভাবিত করার শক্তি। নেতৃত্বদানের ক্ষমতা ও তাত্ত্বিকতার মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই’। কিন্তু তিনি আগে বলেন, ‘একই ব্যক্তি তাত্ত্বিক, সংগঠক এবং নেতাও হবে এটা এই পৃথিবীতে বিরল, কিন্তু একেই বলে মহত্ত্ব’। সারা বিশ্ব প্রত্যক্ষ করেছে যে, রক্তমাংসের মানুষ এই নবী মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মধ্যে এই দুর্লভতম মহত্ত্ব বিদ্যমান ছিল।
এরচেয়ে আরো বেশি বিস্ময়কর মত বসওয়ার্থ স্মিথ প্রকাশ করেন, তিনি বলেন, ‘তিনি (মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যেমন রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন, তেমনি তিনি ধর্মগুরুও ছিলেন, তিনি বাদশাহও ছিলেন এবং ধর্মনেতাও ছিলেন, তিনি ধর্মগুরু ছিলেন বটে কিন্তু তাঁর মধ্যে ধর্মগুরুদের ভণ্ডামি ছিল না, তিনি এমন বাদশাহ ছিলেন, যাঁর না ছিল কোনো সৈন্যবাহিনী, না কোনো দেহরক্ষী, না রাজপ্রাসাদ। যদি কোনো ব্যক্তি এটা দাবি করবার অধিকার রাখে যে সে অতি চমৎকারভাবে শাসন করেছেন তাহলে তিনি মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। কারণ ক্ষমতার সকল ভিত্তি ও সহায়তা ছাড়াই তাঁর শাসন করার ক্ষমতা ছিল। তিনি ক্ষমতার সজ্জিকরণের কোনো পরোয়া করেননি। তাঁর ব্যক্তিগত জীবনে যে সরলতা ছিল তাঁর প্রশাসনিক জীবনেও সেই সরলতা প্রলক্ষিত’।
অকৃত্রিম ও অকলঙ্ক মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম : মক্কা জয়ের পর ১০ লক্ষ বর্গমাইলেরও অধিক ভূমি তাঁর পায়ের নিচে ছিল। সমগ্র আরবের অধিপতি তিনি, অথচ নিজের জুতো নিজেই মেরামত করতেন, মোটা পশমের কাপড় সেলাই করতেন, নিজ হাতে ছাগলের দুধ দোহন করতেন, ঘর-বাড়ি ঝাড়ু দিতেন, আগুন জ্বালাতেন এবং সংসারের অন্যান্য কাজ নিজেই করতেন। তাঁর জীবনের শেষ দিকে পুরো মদীনা শহর সম্পদশালী হয়ে গিয়েছিল, প্রত্যেক স্থানে প্রচুর পরিমাণে সোনা-চাঁদি ছিল, অথচ এমন প্রাচুর্যের মধ্যেও আরবের এই সম্রাটের গৃহে কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত চুলায় আগুন জ্বালানো হতো না। তাঁর খাবার শুধু শুকনো খেজুর আর পানি হতো। তাঁর পরিজনদের অনেক রাত কেটেছে ক্ষুধার্ত অবস্থায়। কারণ তাঁদের কাছে সন্ধ্যায় খাবার জন্য কিছু থাকত না। পুরো দিন ব্যস্ত থাকার পর তিনি রাত্রে খেজুর পাতার মাদুরে ঘুমাতেন, তিনি কখনো নরম বিছানায় শয়ন করেননি, অধিকাংশ রাত্রি ইবাদতে কাটাতেন। প্রায়ই তিনি আপন স্রষ্টার কাছে কান্নাই ভেঙে পড়তেন এবং তাঁর কাছে প্রার্থনা করতেন যে, তিনি যেন তাঁকে তাঁর দায়িত্ব পালন করার শক্তি প্রদান করেন। বর্ণনা দ্বারা জানা যায় যে, তিনি এমন ক্রন্দন করতেন যে, তাঁর ধ্বনি রুদ্ধ হয়ে যেত এবং মনে হতো যেন কান্নার ফলে হাড়ির মধ্যে টগবগে ফুটন্ত পানির শব্দের ন্যায় তাঁর বক্ষদেশে শব্দ বিরাজ করছে। তাঁর মৃত্যুর দিন তাঁর মোট সম্পদ ছিল কিছু মুদ্রা, যার একভাগ ঋণ পরিশোধ করতে, আর বাকিটা অভাবী লোকের মধ্যে বিতরণেই শেষ হয়ে যায়। যে কাপড় পরিধান করে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সেই কাপড় ছিল বহু স্থানে তালিযুক্ত। যে গৃহ থেকে সারা বিশ্বে আলো ছড়িয়ে পড়ে, সেই গৃহ ছিল অন্ধকার। কারণ প্রদীপ জ্বালানোর জন্য তেল ছিল না।
মৃত্যু পর্যন্ত অটল : অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে কিন্তু মহানবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। জয়ে-পরাজয়ে, ক্ষমতায়-রিক্ততায়, প্রাচুর্যে-দারিদ্রে প্রত্যেক অবস্থাতে তিনি একই ছিলেন। তাঁর চরিত্রে কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি। সত্যই আল্লাহর নিয়ম ও বিধানের মতো আল্লাহর পয়গম্বরও পরিবর্তনহীন।
চতুর্থ অধ্যায় : পুরো বিশ্বজগতের জন্য চিরস্থায়ী উত্তরাধিকার
অত্যন্ত ন্যায়বান : প্রবাদ আছে যে, ‘একজন সৎ মানুষ আল্লাহর চমৎকার সৃষ্টি’। মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো ছিলেন সততার সর্বোচ্চ উদাহরণ। তাঁর অঙ্গে-প্রত্যঙ্গে মানবতা বিরাজ করত। মানবপ্রেম ও সহানুভূতি তাঁর আত্মার সংগীত ছিল। মানুষের সেবা, মানুষের উত্থান, মানুষকে বিশুদ্ধ ও পবিত্র করা ও মানুষকে শিক্ষিত করা। এককথায় মানুষকে প্রকৃত মানুষে পরিণত করাই ছিল তাঁর মিশনের মূল উদ্দেশ্য। এই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্যই তাঁর জীবন ও মৃত্যু অর্পিত ছিল। যেমন তাঁর অদ্বিতীয় অনুপ্রেরণা ও পথনির্দেশক নীতিতে মানবকল্যাণ ছিল তেমনি তাঁর চিন্তা-ভাবনায়, কথায় ও কর্মে, সবকিছুতেই শুধু মানবকল্যাণ ছিল। তিনি অতি সাধারণ, সাদাসিধা ও নিঃস্বার্থ ছিলেন। কী পরিচয়ে তিনি আখ্যায়িত হতে চেয়েছেন? শুধু দুটি, আল্লাহর বান্দা ও তাঁর পয়গম্বর। প্রথমে বান্দা (দাস) তার পরে পয়গম্বর ও রাসূল। তিনি সেই মতোই পয়গম্বর ও বার্তাবাহক ছিলেন, যেমন বহু পয়গম্বর ও বার্তাবাহক তাঁর পূর্বে পৃথিবীর প্রতিটি অংশে অতিবাহিত হয়ে গেছেন, যাদের মধ্যে কিছুকে আমরা জানি আর অনেককে জানি না। এই নিরেট সত্য আক্বীদা ও বিশ্বাসগুলোর প্রতি যদি কোনো ব্যক্তির ঈমান ও বিশ্বাস না থাকে, তাহলে সে ব্যক্তি মুসলিম হতে পারে না। উক্ত বিষয়গুলো মূল আক্বীদা বা বিশ্বাস।
জনৈক ইউরোপীয় লেখক লিখেছেন, ‘সেই সময়ের পরিস্থিতি এবং মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি তাঁর অনুগামীদের অগাধ শ্রদ্ধা দেখে বলতে পারি যে, মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ব্যাপারে সবচেয়ে বিস্ময়কর বস্তু হলো যে, তিনি কখনো অলৌকিক শক্তি দেখানোর দাবি করেননি’। তাঁর দ্বারা মু‘জিযা ও নিদর্শন সংঘটিত হয়েছে। তিনি এর কৃতিত্ব আল্লাহ পাক ও তাঁর অলৌকিক পদ্ধতিকে প্রদান করেন। তিনি স্পষ্টভাবে বলতেন যে, আমি তোমাদের মতোই একজন মানুষ। মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভূমণ্ডল ও নভোমণ্ডলের ধনভাণ্ডারের মালিক ছিলেন না, আর তিনি এ কথাও বলেননি যে, তিনি অদৃশ্য বিষয়ের খবর রাখেন। যদিও যে সেই যুগে অলৌকিক ঘটনা দেখানো সাধু-সন্তদের জন্য স্বাভাবিক ব্যাপার ছিল, আর তখন পুরো বিশ্বজগৎ আরব হোক বা অনারব অদ্ভুতকাণ্ড ও অলৌকিক ঘটনার বেড়াজালে আবদ্ধ ছিল।
বৈজ্ঞানিক অভিযোজন : তিনি প্রকৃতির পরীক্ষা-নিরীক্ষার দিকে তাঁর অনুসারীদের দৃষ্টি ফিরিয়ে দিলেন, যাতে তাঁরা প্রকৃতিকে অনুধাবন করতে পারেন আর আল্লাহর গুণগান বর্ণনা করেন। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, ‘আমি নভোমণ্ডল, ভুমণ্ডল ও ওদের মধ্যে কোনো কিছুই খেলাচ্ছলে সৃষ্টি করিনি, আমি এগুলো যথাযথ উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছি, কিন্তু তাদের অধিকাংশই তা জানে না’ (আদ-দুখান, ৪৪/৩৮-৩৯)।
কুরআনের যে আয়াতগুলোতে প্রকৃতি নিয়ে পর্যবেক্ষণ করার কথা বলা হয়েছে, সেই আয়াতসমূহের সংখ্যা অনেক বেশি ঐ আয়াতগুলোর অপেক্ষায় যে আয়াতগুলোতে ছালাত, ছিয়াম, হজ্জ ইত্যাদির কথা বলা হয়েছে। এই আয়াতসমূহ দ্বারা প্রভাবিত হয়ে মুসলিম গবেষকরা প্রকৃতির অতি নিকট থেকে পর্যবেক্ষণ শুরু করেন এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও গবেষণার এমন সূত্রপাত ঘটান, যা গ্রীকদেরও অজানা ছিল। মুসলিম উদ্ভিদবিজ্ঞানী ইবনে বাইতার পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে উদ্ভিদ সংগ্রহ করে এমন এক গ্রন্থ রচনা করেন যাকে মেয়ার তাঁর ‘gesch der Botanika’ নামক গ্রন্থে অতুলনীয় ও কঠিন পরিশ্রমের স্মৃতি বলে উল্লেখ করেন। আল-বিরুনী দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে দেশে দেশে ভ্রমণ করে খনিজধাতুর নমুনা সংগ্রহ করেন।
আর কিছু মুসলিম জ্যোতিষশাস্ত্রবিদ বারো বছর পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা করতে থাকেন, এর বিপরীত আরাস্তু একটিও বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণ না করেই পদার্থ বিজ্ঞানের উপর বই লেখেন এবং প্রাকৃতিক ইতিহাস নিয়ে লিখতে গিয়ে মহা অগোছালের প্রমাণ দেন, তিনি বলেন, অন্য প্রাণীদের তুলনায় মানুষের দাঁত সংখ্যা বেশি। কিন্তু তিনি এটা প্রমাণ করার জন্য কোনো কষ্টও স্বীকার করেননি, যেহেতু এটা কোনো বড় কঠিন কাজ ছিল না।
পশ্চিমারা বিজ্ঞানের জন্য আরবের কাছে ঋণী : শরীর বিদ্যার মহান ব্যক্তি গ্যালেন বলেন যে, ‘মানুষের চোয়ালের নিম্নভাগে দুটো হাড় থাকে এবং এই ধারণাই বহু শতাব্দী ধরে আপত্তিহীনভাবে গ্রহণ করা হয়, কিন্তু এক মুসলিম গবেষক আব্দুল লতীফ মানুষের কঙ্কালের সরাসরি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সঠিক ধারণা সম্পর্কে পৃথিবীকে অবগত করান।
Making of Humanity’ গ্রন্থে নিজ মন্তব্য এই শব্দ দ্বারা ব্যক্ত করেন যে, ‘বিজ্ঞান আরবদের কাছে কেবল বিষ্ময়কর কিছু আবিষ্কার ও তত্ত্বের জন্যই ঋণী নয়, বরং বিজ্ঞান তার অস্তিত্ত্বের জন্যও আরবদের কাছে ঋণী’। তিনি আরো বলেন, তত্ত্বীয় নিয়মমালা রচনা করা গ্রীকদের অবদান কিন্তু তদন্ত করার ধৈর্য, সন্দেহাতীত জ্ঞান অর্জন করা, বিজ্ঞানের পদ্ধতিগুলোকে পুঙ্খানুপঙ্খভাবে লেখা, দীর্ঘায়িত পর্যবেক্ষণ গবেষণা, পরীক্ষা-নীরিক্ষা এসবই ছিল গ্রীকদের স্বভাবের সম্পূর্ণ বিপরীত। যেটাকে আমরা আজ বিজ্ঞান বলি, আর যা হচ্ছে অনুসন্ধানের নিত্য নতুন পদ্ধতি, পরীক্ষা-নিরীক্ষার নিয়ম, পরিমাপের শৃঙ্খলা এবং গণিতশাস্ত্রের উন্নয়নের প্রণালী, যেগুলো আজ ইউরোপে বিকশিত হয়, তা থেকে ইউরোপ একেবারে অজ্ঞ ছিল, আরবরাই ইউরোপ জগতকে এই সব নীতি ও পদ্ধতির ব্যাপারে পরিচয় করান’।
মূল : প্রফেসর কে এস রামাকৃষ্ণ রাও*
* চেয়ারম্যান, দর্শন বিভাগ, মহীশুর মহিলা বিশ্ববিদ্যালয়, কর্ণাটক, ভারত।
অনুবাদ ও পরিমার্জন : আব্দুর রহমান বিন লুতফুল হক ভারতী**
** পিএইচডি গবেষক, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সঊদী আরব।