কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

বিরুদ্ধাচরণের পরিণতি

ধরুন আপনি কোনো প্রতিষ্ঠানে চাকরি নিয়েছেন।*বছরের শুরুতে প্রতিষ্ঠানের মালিক ঘোষণা দিয়েছেন যে, আমার প্রতিষ্ঠানে একজন ম্যানেজার নিয়োগ দিয়েছি। যে ব্যক্তি তার কথা শুনে তাকে মান্য করবে, সে প্রকারান্তরে আমার কথাই মান্য করল। আর যে ব্যক্তি আমার কথা শুনবে, তাকে চাকরিতে স্থায়ী করা হবে, বিভিন্ন প্রকার সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে, তাকে পরিপূর্ণ বেতন-ভাতা দেওয়া হবে ও বছর শেষে বেতনের সাথে সাথে বোনাসও দেওয়া হবে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি তার কথা শুনবে না; বিরুদ্ধাচরণ করবে, তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে ও তার জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। ধরুন, আল্লাহ তাআলা ইসলাম নামক প্রতিষ্ঠানে মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে একজন ম্যানেজার হিসেবে মনোনীত করেছেন। যে ব্যক্তি তাঁকে ভালোবাসবে ও তাঁর কথার অনুসরণ করবে, সে প্রকারান্তরে আল্লাহকেই ভালোবাসল ও তাঁরই কথাকে অনুসরণ করল। আল্লাহ তাআলা বলেন,قُلْ إِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّونَ اللَّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللَّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَحِيمٌ ‘(হে নবী!) বলো, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাস, তাহলে আমার অনুসরণ করো। তিনিও তোমাদের ভালোবাসবেন ও তোমাদের পাপরাশি ক্ষমা করে দিবেন। আল্লাহ হলেন ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু’ (আলে ইমরান, ৩/৩১)

আর যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভালোবাসবে তিনি তাকে চিরশান্তির নিবাস জান্নাতে প্রবেশ করাবেন এবং তারাই সফলকাম। আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَيُدْخِلُهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ أُولَئِكَ حِزْبُ اللَّهِ أَلَا إِنَّ حِزْبَ اللَّهِ هُمُ الْمُفْلِحُونَ

‘তিনি তাদের এমন জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যার পাদদেশ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত হয়। আর তারা সেখানে চিরস্থায়ীভাবে বসবাস করবে। আল্লাহ তাদের উপর সন্তুষ্ট এবং তারাও তাঁর উপর সন্তুষ্ট; তারাই তো আল্লাহর দল আর আল্লাহর দল অবশ্যই সফলকাম হবে’ (আল-মুজাদালা, ৫৮/২২)। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি তাঁকে অস্বীকার করবে ও তাঁর কথার বিরুদ্ধাচরণ করবে, তার জন্য রয়েছে ইহকাল ও পরকালে কঠিন যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। পরকালে তো তার শাস্তি হবেই, ইহকালেও কিঞ্চিৎ হবে। মহান আল্লাহ বলেন,وَلَنُذِيقَنَّهُمْ مِنَ الْعَذَابِ الْأَدْنٰى دُونَ الْعَذَابِ الْأَكْبَرِ لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ ‘আমরা অবশ্যই তাদেরকে বড় শাস্তি দেওয়ার পূর্বে ছোট শাস্তি দিয়ে থাকি, যাতে তারা ফিরে আসে’ (আস-সাজদাহ, ৩২/২১)

পৃথিবীতে মানুষের জীবনে যে সমস্ত কারণে শাস্তি আসে, তার মধ্যে অন্যতম হলো নবী-রাসূলগণ আলাইহিমুস সালাম-এর ‘বিরুদ্ধাচরণ’। বিরুদ্ধাচরণের অর্থ হলো, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা আদেশ বা নিষেধ করেছেন, তা মান্য না করে উল্টোটা করা। কেউ যদি আল্লাহর সাথে বেয়াদবী করে বা তাঁর বিরুদ্ধাচরণ করে, তাহলে তিনি তাকে সাথে সাথে শাস্তি দেন না, বরং কিছুকাল অবকাশ দেন। যেমন- আল্লাহ বলেছেন,وَلَوْ يُؤَاخِذُ اللَّهُ النَّاسَ بِظُلْمِهِمْ مَا تَرَكَ عَلَيْهَا مِنْ دَابَّةٍ وَلَكِنْ يُؤَخِّرُهُمْ إِلَى أَجَلٍ مُسَمًّى فَإِذَا جَاءَ أَجَلُهُمْ لَا يَسْتَأْخِرُونَ سَاعَةً وَلَا يَسْتَقْدِمُونَ ‘আল্লাহ যদি মানুষকে তাদের সীমালঙ্ঘনের জন্য শাস্তি দিতেন, তাহলে ভূপৃষ্ঠে কোনো জীব-জন্তুকেই রেহাই দিতেন না; কিন্তু তিনি এক নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত তাদের অবকাশ দিয়ে থাকেন। অতঃপর যখন তাদের সময় আসবে, তখন তারা মুহূর্তকাল আগাতে বা পিছাতে পারবে না’ (আন-নাহল, ১৬/৬১)। কিন্তু কেউ যদি রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বিরুদ্ধাচরণ করে, তাহলে তার শাস্তি অবধারিত। আমরা যদি শাস্তিপ্রাপ্ত পূর্ববর্তী জাতির প্রতি লক্ষ্য করি, তাহলে দেখতে পাই যে, তাদের কাছে শাস্তি আসার প্রধান কারণ হলো, রাসূল আলাইহিমুস সালাম-দের বিরুদ্ধাচরণ। ফেরাউন যখন নিজেকে বড় প্রভু বলে দাবি করেছিল, তখন আল্লাহ তাআলা তাকে সাথে সাথে শাস্তি দেননি, বরং অবকাশ দিয়েছিলেন। কিন্তু যখনই সে মূসা আলাইহিস সালাম-এর বিরুদ্ধাচরণ করে তাঁকে হত্যা করতে গেল, তখনই তাকে সমুদ্রে নিমজ্জিত করলেন। এমনিভাবে আদ জাতি যখনই হূদ আলাইহিস সালাম-এর বিরুদ্ধাচরণ করে তাঁকে হত্যা করতে উদ্যত হলো, তখনই আল্লাহ তাআলা তাদেরকে সাত রাত আট দিন ধারাবাহিক ঝঞ্ঝাবায়ু দ্বারা পাকড়াও করলেন। ছামূদ জাতি যখনই উষ্ট্রীর পা কেটে দিয়ে ছালেহ আলাইহিস সালাম-কে হত্যা করার পরিকল্পনা করছিল, তখনই আল্লাহ তাদেরকে শাস্তি দিয়েছিলেন।

আমরা বুঝতে পারলাম যে, যুগে যুগে মানুষের নিকট শাস্তি আসার অন্যতম কারণ হলো রাসূল আলাইহিমুস সালাম-দের বিরুদ্ধাচরণ। আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বিরুদ্ধাচরণ করার কারণে দুনিয়াতে কী পরিণতি হয়েছিল নিম্নের হাদীছগুলোর প্রতি একটু নযর দেওয়া যাক-

সালামা ইবনু আক্বওয়া রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,أَنَّ رَجُلاً أَكَلَ عِنْدَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِشِمَالِهِ فَقَالَ‏ كُلْ بِيَمِينِكَ قَالَ لاَ أَسْتَطِيعُ قَالَ لاَ اسْتَطَعْتَ مَا مَنَعَهُ إِلاَّ الْكِبْرُ قَالَ فَمَا رَفَعَهَا إِلَى فِيهِ ‘এক লোক রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট বাম হাতে খাদ্য গ্রহণ করছিল। তিনি বললেন, ‘তুমি তোমার ডান হাতে খাও’। সে বলল, আমি পারব না। তিনি বললেন, ‘তুমি যেন না-ই পার’। শুধু অহমিকাই তাকে বারণ করছে। সালামা রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, সে আর কখনো তার ডান হাত মুখের নিকট উঠাতে পারেনি’।[1]

উক্ত হাদীছের প্রতি একটু গভীরভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথা অমান্য করার কারণে ঐ ব্যক্তির হাত সারা জীবনের জন্য অকেজো হয়ে গেছে। বর্তমানেও এমন অনেক লোক আছে, যারা বাম হাতে চা, কফি ও পানি জাতীয় খাদ্য পান করে থাকে। যদি তাদের ডান হাতে পান করার জন্য বলা হয়, তাহলে ইসলাম নিয়ে কটূক্তি শুরু করে দেয়। তাদের এই হাদীছ থেকে উপদেশ গ্রহণ করা ও সাবধান হওয়া উচিত, অন্যথা তাদের পরিণতি খুবই ভয়াবহ হতে পারে। অনেক মানুষ আছে, যারা ইসলামের বিধি-বিধান নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে। ছালাত পড়তে বললে বলে, মৃত্যুর পর কী হবে দেখা যাবে, পর্দা করতে বললে ইসলাম নিয়ে অযাচিত কথা বলে, কবরের শাস্তির কথা বললে বলে, যা চোখে দেখি তা বিশ্বাস করি আর যা দেখি না, তা বিশ্বাস করি না; কবরের শাস্তি যেহেতু দেখা যায় না, সেহেতু আমরা তা বিশ্বাস করি না। শুধু কী তাই, অবান্তর কথা বলে এসব বিধানকে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে চলে যায়। এমনকি কিছু মানুষকে বলতে শোনা যায়, পরকালে তারা এসব বিষয় নিয়ে আল্লাহর সাথে তর্ক-বিতর্কে লিপ্ত হবে। আমাদের এসব বিরুদ্ধাচরণ থেকে বিরত থাকা উচিত; তা না হলে ইহজগতেই আমাদেরকে এর প্রতিফল ভোগ করতে হতে পারে। টাকা-পয়সা, পরিবার-পরিজন, সন্তান-সন্ততি ও আত্মীয়-স্বজন নিয়ে আমাদেরকে বিষণ্নতায় কালাতিপাত করতে হবে, মনের মাঝে তৃপ্তি পাব না, সবসময় হতাশাগ্রস্ত থাকতে হবে এবং মুসলিম হওয়া সত্ত্বেও মনের অজান্তে আমরা কাফেরে পরিণত হবো। কারণ আমরা ইসলামের বিধান নিয়ে হাসি-তামাশা করেছি। আর কেউ যদি ইসলামের কোনো বিধান নিয়ে মজা-তামাশা করে, তাহলে সে কাফের হয়ে যায়। দেখুন, আল্লাহ তাআলা কী বলেন,

وَلَئِنْ سَأَلْتَهُمْ لَيَقُولُنَّ إِنَّمَا كُنَّا نَخُوضُ وَنَلْعَبُ قُلْ أَبِاللَّهِ وَآيَاتِهِ وَرَسُولِهِ كُنْتُمْ تَسْتَهْزِئُونَ لَا تَعْتَذِرُوا قَدْ كَفَرْتُمْ بَعْدَ إِيمَانِكُمْ إِنْ نَعْفُ عَنْ طَائِفَةٍ مِنْكُمْ نُعَذِّبْ طَائِفَةً بِأَنَّهُمْ كَانُوا مُجْرِمِينَ

‘যদি তাদের জিজ্ঞেস করো তাহলে তারা বলবে, আমরা তো খেল-তামাশা করেছি মাত্র। বলো, আল্লাহ, তাঁর নিদর্শন ও তাঁর রাসূলকে নিয়ে তোমরা বিদ্রুপ করছ? আজকে আর ওযর-আপত্তি উত্থাপন করবে না। তোমরা তো ঈমান আনার পরও কাফেরে পরিণত হয়েছ। আমরা যদি তোমাদের একটি দলকে ক্ষমা করি, তাহলে অপর দলকে শাস্তি দিয়ে থাকি, এর কারণ হলো তারা অপরাধী’ (আত-তওবা, ৯/৬৬)। 

রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও একটি হাদীছে অনুরূপ কথা বলেছেন,

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ ‏ بَادِرُوا بِالأَعْمَالِ فِتَنًا كَقِطَعِ اللَّيْلِ الْمُظْلِمِ يُصْبِحُ الرَّجُلُ مُؤْمِنًا وَيُمْسِي كَافِرًا وَيُمْسِي مُؤْمِنًا وَيُصْبِحُ كَافِرًا يَبِيعُ أَحَدُهُمْ دِينَهُ بِعَرَضٍ مِنَ الدُّنْيَا‏.

আবূ হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘রাতের অন্ধকারাচ্ছন্ন অংশের ন্যায় বিপর্যয় আগমনের পূর্বেই তোমরা সৎকাজের প্রতি অগ্রসর হও। ঐ সময় যে ব্যক্তি সকাল বেলায় মুমিন থাকবে, সে সন্ধ্যায় কাফের হয়ে যাবে এবং যে ব্যক্তি সন্ধ্যা বেলায় মুমিন থাকবে, সে সকালে কাফের হয়ে যাবে। দুনিয়াবী (সামান্য) স্বার্থের বিনিময়ে মানুষ তার ধর্ম বিক্রয় করে দিবে’।[2] সুধী পাঠক! তাই আমাদেরকে খুবই সাবধানতা ও সতর্কতার সাথে কথা বলতে হবে। কারণ মনের অজান্তে অসঙ্গতিপূর্ণ কথা মুখ দিয়ে বের হয়ে যেতে পারে, যার পরিণতি হবে জাহান্নাম।

عَنْ أَبِي حُمَيْدٍ السَّاعِدِيِّ قَالَ فَلَمَّا أَتَيْنَا تَبُوكَ قَالَ‏ أَمَا إِنَّهَا سَتَهُبُّ اللَّيْلَةَ رِيحٌ شَدِيدَةٌ فَلاَ يَقُومَنَّ أَحَدٌ وَمَنْ كَانَ مَعَهُ بَعِيرٌ فَلْيَعْقِلْهُ فَعَقَلْنَاهَا وَهَبَّتْ رِيحٌ شَدِيدَةٌ فَقَامَ رَجُلٌ فَأَلْقَتْهُ بِجَبَلِ طَيِّئٍ‏.

আবূ হুমাইদ আস-সা‘এদী রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা যখন তাবূকে আসলাম, তখন নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘সাবধান! আজ রাতে প্রবল ঝড় প্রবাহিত হবে। কাজেই কেউ যেন দাঁড়িয়ে না থাকে এবং প্রত্যেকেই যেন তার উট বেঁধে রাখে’। তখন আমরা নিজ নিজ উট বেঁধে নিলাম। প্রবল ঝড় হতে লাগল। এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে গেলে ঝড় তাকে ‘ত্বয়’ নামক পর্বতে নিক্ষেপ করল।[3] এই হাদীছের টিকায় ইবনে বায রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন, ‘ঝঞ্ঝাবায়ু ঐ ছাহাবীকে ছয়শ কিলোমিটার দূরে নিক্ষেপ করে’।[4] দেখুন, ছাহাবী নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথা অমান্য করার জন্য দাঁড়াননি, বরং মনের অজান্তেই ভুল করে দাঁড়িয়েছিলেন; তথাপিও তার উপর শাস্তি আপতিত হয়। একটু ভেবে দেখুন, যারা জেনেশুনে নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথা অমান্য করে, তাদের পরিণতি কেমন হবে?

عَنْ أَنَسٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَعَثَ رَجُلًا مَرَّةً إِلَى رَجُلٍ مِنْ فَرَاعِنَةِ الْعَرَبِ فَقَالَ اذْهَبْ فَادْعُهُ لِي، قَالَ يَا رَسُولَ اللهِ إِنَّهُ أَعْتَى مِنْ ذَلِكَ قَالَ اذْهَبْ فَادْعُهُ لِي قَالَ فَذَهَبَ إِلَيْهِ قَالَ يَدْعُوكَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ لَهُ مَنْ رَسُولُ اللهِ وَمَا اللَّهُ مِنْ ذَهَبٍ هُوَ أَمْ مِنْ فِضَّةٍ هُوَ أَمْ مِنْ نُحَاسٍ هُوَ قَالَ فَرَجَعَ إِلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَخْبَرَهُ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللهِ قَدْ أَخْبَرْتُكَ إِنِّهُ أَعْتَى مِنْ ذَلِكَ قَالَ لِي كَذَا وَكَذَا فَقَالَ اِرْجِعْ إِلَيْهِ الثَّانِيَّةَ فَقُلْ لَهُ مِثْلَهَا أَرَاهُ فَذَهَبَ فَقَالَ لَهُ مِثْلَهَا فَرَجَعَ إِلٰى رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ : يَا رَسُوْلَ اللهِ قَدْ أَخْبَرْتُكَ أَنَّهُ أَعْتٰى مِنْ ذَلِكَ قَالَ ارْجِعْ إِلَيْهِ فَادْعُهُ فَرَجَعَ إِلَيْهِ الثَّالِثَةَ قَالَ فَأَعَادَ عَلَيْهِ ذَلِكَ الْكَلاَمَ فَبَيْنَمَا هُوَ يُكَلِّمُهُ إِذْ بَعَثَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ سَحَابَةً حِيَالَ رَأْسِهِ فَرَعَدَتْ فَوَقَعَتْ مِنْهَا صَاعِقَةٌ فَذَهَبَتْ تَقْذِفُ رَأْسَهُ.

আনাস রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, একবার রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে আরবের কোনো এক অহংকারী লোকের কাছে প্রেরণ করেন। তিনি (আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তুমি যাও, তাকে আমার নিকট ডেকে আনো। তিনি (জনৈক ছাহাবী) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! সে এর চাইতেও ঔদ্ধত্যপূর্ণ ব্যক্তি। তিনি (আবার) বললেন, যাও, তাকে আমার নিকট ডেকে আনো। তিনি (সেখানে) গিয়ে বললেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাকে ডেকেছেন। ঐ ব্যক্তি তাকে বলল, আল্লাহ ও রাসূল আবার কে? স্বর্ণের, না-কি রূপার, না-কি তামার? তারপর সে রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট ফিরে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনাকে সংবাদ দিচ্ছি যে, সে ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করে এই এই কথা বলেছে। তখন তিনি তাকে বললেন, দ্বিতীয়বার যাও, তাকে গিয়ে আগের মতোই বলো, আমি তাকে দেখতে চাই। অতপর সে গেল এবং ঐ ব্যক্তি তাকে একই কথা বলল। সে ফিরে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনাকে সংবাদ দিচ্ছি যে, সে (আগের বারের চাইতে আরও বেশি) ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করেছে। তারপর তিনি বললেন, যাও, তাকে আসতে বলো। সে তৃতীয়বার তার কাছে গিয়ে বলল, আর ওই ব্যক্তি ওই কথাই পুনরাবৃত্ত করল। এভাবেই সে কথা বলছিল; এমন সময় আল্লাহ তাআলা তার মাথার সামনে এক খণ্ড মেঘমালা প্রেরণ করেন। আর বিদুৎ চমকে উঠল এবং সেখান থেকে একটি বজ্র পড়ে তার মাথার খুলি উড়ে গেল।[5]

সম্মানিত দ্বীনি ভাই-বোন! লক্ষ্য করুন, হাদীছে বর্ণিত লোকটিকে কী লোমহর্ষক শাস্তি দেওয়া হয়েছে; তারপরও কি আমরা রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বিরুদ্ধাচরণ করা পরিত্যাগ করব না? আপনার সাথে বা পাশে যে সহকর্মী বা সহপাঠী আছে, যে পাঁচওয়াক্ত ছালাত আদায় করে, নিজ জীবনে নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আদর্শ বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করে। তার সময়ও কিন্তু ধীরে ধীরে চলে যাচ্ছে আর আপনার সময়ও কিন্তু ধীরে ধীরে চলে যাচ্ছে। সেও কিন্তু নিজ কাজ ঠিকঠাক আঞ্জাম দিচ্ছে আর আপনিও দিচ্ছেন। আপনার সহকর্মী বা সহপাঠী নিয়মিত ছালাত আদায় করার কারণে কিন্তু তার ইহলৌকিক কোনো ক্ষতি হচ্ছে না, আর আপনারও হচ্ছে না; কিন্তু তার পরকাল হবে সুখময়, স্বাচ্ছন্দ্যময় ও আরামদায়ক। আপনার কী অবস্থা হবে তা একটু কল্পনা করে দেখেছেন? আপনার কি মনে চায় না এমন এক উদ্যানে বিচরণ করতে, সেখানে থাকবে অনিন্দ্য সুন্দর পুষ্পকানন, থাকবে না কোনো প্রকার হৈ-হুল্লোড়, থাকবে না সূর্যের প্রখর তাপ, চারপাশে থাকবে শুধু হিমশীতল বাতাস আর বাতাস। ঐ উদ্যানে প্রিয়তমা সঙ্গিনীকে নিয়ে প্রেমালাপ করা কত যে আনন্দদায়ক, তা বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না! আপনি যদি এই অপরূপ সৌন্দর্যপূর্ণ উদ্যানে যেতে চান, তাহলে নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আদর্শকে নিজ জীবনে বাস্তবায়ন করুন। একটা কথা মনে রাখবেন, আপনি যদি রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বিরোধিতা করেন. এতে কিছু আসে যায় না; কিন্তু আপনার ঠিকানা হবে জাহান্নাম। আপনি জানেন কি, জাহান্নাম কেমন? চারদিকে অমাবস্যার ন্যায় ঘোর অন্ধকার। বিকট আওয়াজ, যেন কর্ণ নিস্তেজ হওয়ার উপক্রম। নেই কোনো প্রকার আলো-বাতাস, আরাম-আয়েশ করার মতো কোনো বস্তু; আছে শুধু নাড়ি-ভুঁড়ি বিগলিত করার জন্য ফুটন্ত পানি, গলায় আটকে যায় দু্র্গন্ধযুক্ত এমন ফল, পচা রক্ত-পুঁজের পানীয় ও চর্ম দগ্ধ করার জন্য প্রচণ্ড ও প্রখর অগ্নি। সহ্য করতে পারবেন কি ঐ যন্ত্রণা? না পারলে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে চলে আসুন। মনে রাখবেন, ইসলাম কিন্তু বিজয়ী হবেই। এতে আপনি অন্তর্ভুক্ত হৌন আর নাই হৌন। আপনাকে নিয়ে আপনি ভেবে দেখুন কোন দলে থাকবেন।

পরিশেষে একটি আয়াত উল্লেখ করে লেখার ইতি টানছি। আল্লাহ তাআলা বলেন,يُرِيدُونَ لِيُطْفِئُوا نُورَ اللَّهِ بِأَفْوَاهِهِمْ وَاللَّهُ مُتِمُّ نُورِهِ وَلَوْ كَرِهَ الْكَافِرُونَ - هُوَ الَّذِي أَرْسَلَ رَسُولَهُ بِالْهُدَى وَدِينِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهُ عَلَى الدِّينِ كُلِّهِ وَلَوْ كَرِهَ الْمُشْرِكُونَ ‘তারা মুখের ফুৎকারে আল্লাহর আলোকে নির্বাপিত করতে চায়, আর আল্লাহ তাঁর আলোকে অবশ্যই পরিপূর্ণ করবেন, যদিও কাফেররা তা অপছন্দ করে। তিনি ওই সত্তা, যিনি তাঁর রাসূলকে সঠিক পথ ও বিশুদ্ধ দ্বীন দিয়ে প্রেরণ করেছেন, সকল দ্বীনকে পরাভূত করার জন্য; যদিও মুশরিকরা অপছন্দ করে’ (আছ-ছফ, ৬১/৮-৯)

সাঈদুর রহমান

 শিক্ষক, আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ, বীরহাটাব-হাটাব, রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ।


[1]. ছহীহ মুসলিম, হা/২০২১।

[2]. তিরমিযী, হা/২১৯৫, হাসান ছহীহ।

[3]. ছহীহ বুখারী, হা/ ১৪৮১।

[4]. প্রাগুক্ত।

[5]. তাফসীর ইবনু কাছীর, সূরা রা‘দ।

Magazine