কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

কিতাবুল ঈমান (২য় পর্ব)

post title will place here

 (মিন্নাতুল বারী- ২৯তম পর্ব)

ঈমানের ফযীলত :

পবিত্র কুরআনে মোট ৫১ জায়গায় ঈমান আনয়ন এবং সৎআমল মর্মে আয়াত এসেছে। যার প্রায় অধিকাংশ জায়গায় জান্নাতের সুসংবাদ প্রদান করা হয়েছে। নিম্নে পবিত্র কুরআন ও হাদীছের আলোকে ঈমান আনয়নের ফযীলত ও উপকারিতা বর্ণনা করা হলো—

(১) জান্নাত লাভ : জান্নাত লাভের সবচেয়ে বড় চাবি-কাঠি ঈমান। আল্লাহ তাআলা বলেন, وَبَشِّرِ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ أَنَّ لَهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ ‘আর যারা ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম করেছে, তাদেরকে সুসংবাদ দিন যে, তাদের জন্য রয়েছে এমন জান্নাতসমূহ, যার তলদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত’ (আল-বাক্বারা, ২/২৫)। মহান আল্লাহ আরো বলেন, وَالَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ أُولَئِكَ أَصْحَابُ الْجَنَّةِ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ ‘আর যারা ঈমান আনে ও সৎকাজ করে, তারা জান্নাতের অধিবাসী হবে। তারা সেখানে চিরকাল থাকবে’ (আল-বাক্বারা, ২/৮২। মহান আল্লাহ আরো বলেন,﴿إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ كَانَتْ لَهُمْ جَنَّاتُ الْفِرْدَوْسِ نُزُلًا - خَالِدِينَ فِيهَا لَا يَبْغُونَ عَنْهَا حِوَلًا ‘নিশ্চয়ই যারা ঈমান আনে ও সৎকাজ করে, আপ্যায়নের নিমিত্তে তাদের জন্য থাকবে জান্নাতুল ফেরদাউস, তারা সেখানে চিরকাল থাকবে; সেখান থেকে তারা স্থানান্তরিত হতে চাইবে না’ (আল-কাহফ, ১৮/১০৭-১০৮)

এরকম অসংখ্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা ঈমান ও সৎআমলের জন্য সরাসরি জান্নাতের ঘোষণা দিয়েছেন।

সকল সৎআমলের ভিত্তি ঈমান : আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনের প্রায় ৮৯ জায়গায় যত আদেশ-নিষেধ প্রদান করেছেন, তা ঈমানের উপর ভিত্তি করে প্রদান করেছেন এবং ঈমানদারগণকে আহ্বান করে প্রদান করেছেন। যেমন তিনি বলেছেন, يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُلُوا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ ‘হে ঈমানদারগণ! আমি তোমাদেরকে যে জীবিকা দান করেছি, তা হতে তোমরা পবিত্র বস্তু ভক্ষণ করো’ (আল-বাক্বারা, ২/১৭২)

এরকম ৮৯ জায়গায় মহান আল্লাহ ঈমানদারগণকে সম্বোধন করে বিভিন্ন আদেশ-নিষেধ প্রদান করেছেন। যা মহান আল্লাহর নিকটে ঈমানদারদের গুরুত্ব বুঝানোর জন্য যথেষ্ট।

(২) সকল বিপদ থেকে মুক্তি : মহান আল্লাহ বলেন, وَمَنْ يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَلْ لَهُ مَخْرَجًا - وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لاَ يَحْتَسِبُ ‘আর যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য (মুক্তির) পথ তৈরি করে দিবেন এবং তাকে এমন (উৎস) থেকে রিযিক্ব দেবেন, যেখান থেকে (রিযিক্ব প্রাপ্তি) সে আশা করে না’ (আত-তালাক, ৬৫/২-৩)। মহান আল্লাহ আরো বলেন,﴿وَمَنْ يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَلْ لَهُ مِنْ أَمْرِهِ يُسْرًا ‘আর যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য তার কাজ সহজ করে দেবেন’ (আত-তালাক, ৬৫/৪)

উল্লেখ্য, ইমাম বুখারী রহিমাহুল্লাহ আল্লাহর ভয় এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান দুটিকে সমার্থবোধক হিসেবেই পেশ করেছেন। যা আমরা বিস্তারিত আলোচনা করব ইনশা-আল্লাহ।

(৩) পাপ মোচন : মহান আল্লাহ বলেন, وَٱلَّذِينَ ءَامَنُوا وَعَمِلُوا ٱلصَّٰلِحَٰتِ لَنُكَفِّرَنَّ عَنْهُمْ سَيِّـَٔاتِهِمْ وَلَنَجْزِيَنَّهُمْ أَحْسَنَ ٱلَّذِى كَانُوا يَعْمَلُونَ ‘আর যারা ঈমান এনেছে ও সৎকাজ করেছে, আমরা অবশ্যই তাদের থেকে তাদের পাপ মোচন করে দেব এবং তারা যা আমল করত, সেজন্য আমরা অবশ্যই তাদেরকে সর্বোত্তম প্রতিদান দেব’ (আল-আনকাবূত, ২৯/৭)

(৪) শত্রুদের ষড়যন্ত্র থেকে হেফাযত : মহান আল্লাহ বলেন, إِنَّ اللَّهَ يُدَافِعُ عَنِ الَّذِينَ آمَنُوا ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ যারা ঈমান আনয়ন করে, তাদের থেকে (শত্রুদের সকল প্রকার ষড়যন্ত্র, অনিষ্টসাধনের অভিলাষ প্রভৃতি) প্রতিহত করেন’ (আল-হজ্জ, ২২/৩৮)

(৫) বরকতময় জীবন : মহান আল্লাহ বলেন, مَنْ عَمِلَ صَالِحًا مِنْ ذَكَرٍ أَوْ أُنْثَى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَنُحْيِيَنَّهُ حَيَاةً طَيِّبَةً وَلَنَجْزِيَنَّهُمْ أَجْرَهُمْ بِأَحْسَنِ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ ‘নর অথবা নারীর মধ্য হতে যে ব্যক্তি মুমিন অবস্থায় সৎকাজ করবে, আমরা অবশ্যই তাকে পবিত্র জীবন দান করব এবং তারা যা আমল করত, সেজন্য আমরা অবশ্যই তাদেরকে সর্বোত্তম প্রতিদান দেব’ (আন-নাহল, ১৬/৯৭)

(৬) প্রকৃত সফলতা : মহান আল্লাহ বলেন, الَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِالْغَيْبِ وَيُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُونَ - وَالَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِمَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ وَمَا أُنْزِلَ مِنْ قَبْلِكَ وَبِالْآخِرَةِ هُمْ يُوقِنُونَ - أُولَئِكَ عَلَى هُدًى مِنْ رَبِّهِمْ وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ ‘যারা অদৃশ্যে বিশ্বাস করে, ছালাত ক্বায়েম করে এবং আমি তাদেরকে যে জীবিকা দিয়েছি, তা থেকে তারা খরচ করে। আর যারা আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে এবং আপনার পূর্বে যা অবতীর্ণ হয়েছে, তাতে বিশ্বাস করে এবং পরকালের ব্যাপারে তারা সুনিশ্চিত বিশ্বাস রাখে। তারা তাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে হেদায়াতের উপর রয়েছে এবং তারাই সফলকাম’ (আল-বাক্বারা, ২/৩-৫

(৭) সম্মান ও মর্যাদা বৃদ্ধি : মহান আল্লাহ বলেন, يَرْفَعِ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا مِنْكُمْ وَالَّذِينَ أُوتُوا الْعِلْمَ دَرَجَاتٍ ‘তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং যাদেরকে ইলম দান করা হয়েছে আল্লাহ তাদের মর্যাদা বহুগুণ উন্নীত করবেন’ (আল-মুজাদালাহ, ৫৮/১১)

(৮) প্রকৃত নেকী : মহান আল্লাহ বলেন, لَيْسَ الْبِرَّ أَنْ تُوَلُّوا وُجُوهَكُمْ قِبَلَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ وَلَكِنَّ الْبِرَّ مَنْ آمَنَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَالْمَلَائِكَةِ وَالْكِتَابِ وَالنَّبِيِّينَ ‘এটা পুণ্য নয় যে, তোমরা (ছালাতে) পূর্ব ও পশ্চিম দিকে তোমাদের মুখ ফেরাবে; কিন্তু পুণ্য আছে কেউ আল্লাহ, শেষ দিবস, ফেরেশতাগণ, (আসমানী) কিতাব ও নবীগণের প্রতি ঈমান আনয়ন করলে’ (আল-বাক্বারা, ২/১৭৭)

(৯) উত্তম ও অধমের মধ্যে পার্থক্য ঈমান : মহান আল্লাহ বলেন, لَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنْسَانَ فِي أَحْسَنِ تَقْوِيمٍ - ثُمَّ رَدَدْنَاهُ أَسْفَلَ سَافِلِينَ - إِلَّا الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ فَلَهُمْ أَجْرٌ غَيْرُ مَمْنُونٍ‘আমি মানুষকে সর্বোত্তম গঠনে সৃষ্টি করেছি। তারপর তাকে (মানুষের মাঝে কতেককে) নিম্নস্তরে নামিয়ে দিয়েছি। তবে যারা ঈমান এনেছে ও সৎকাজ করেছে, তারা ব্যতীত, অতঃপর তাদের জন্য রয়েছে অফুরন্ত প্রতিদান’ (আত্ব-ত্বীন, ৯৫/৪-৬)

(১০) আল্লাহর ক্ষমা : মহান আল্লাহ বলেন, وَعَدَ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ لَهُمْ مَغْفِرَةٌ وَأَجْرٌ عَظِيمٌ ‘যারা ঈমান আনয়ন করেছে এবং সৎআমল করেছে, মহান আল্লাহ তাদেরকে ওয়াদা করেছেন যে, তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও মহাপ্রতিদান’ (আল-মায়েদা, ৫/৯)

(১১) প্রশস্ত রিযিক্ব : মহান আল্লাহ বলেন, فَالَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ لَهُمْ مَغْفِرَةٌ وَرِزْقٌ كَرِيمٌ ‘আর যারা ঈমান আনয়ন করেছে এবং সৎআমল করেছে, তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও সম্মানজনক রিযিক্ব’ (আল-হাজ্জ, ২২/৫০)। মহান আল্লাহ আরো বলেন,﴿وَلَوْ أَنَّ أَهْلَ الْقُرَى آمَنُوا وَاتَّقَوْا لَفَتَحْنَا عَلَيْهِمْ بَرَكَاتٍ مِنَ السَّمَاءِ وَالأَرْضِ ‘আর যদি নগরবাসীরা ঈমান আনত এবং আল্লাহকে ভয় করত, তবে আমরা তাদের জন্য আসমান ও যমীনের বরকতসমূহ খুলে দিতাম’ (আল-আ‘রাফ, ৭/৯৬)

(১২) ক্ষতি থেকে মুক্তি : আল্লাহ তাআলা বলেন, وَالْعَصْرِ - إِنَّ الْإِنْسَانَ لَفِي خُسْرٍ - إِلَّا الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَتَوَاصَوْا بِالْحَقِّ وَتَوَاصَوْا بِالصَّبْرِ ‘সময়ের শপথ! নিশ্চয় মানুষ ক্ষতির মধ্যে রয়েছে; তবে তারা ব্যতীত, যারা ঈমান আনয়ন করে, সৎআমল করে, পরস্পরকে সৎকাজের উপদেশ দেয় এবং পরস্পরকে সবরের উপদেশ দেয়’ (আল-আছর, ১০৩/১-৩)

(চলবে)

ফাযেল, দারুল উলূম দেওবান্দ, ভারত; বি. এ (অনার্স), মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সঊদী আরব; এমএসসি, ইসলামিক ব্যাংকিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স, ইউনিভার্সিটি অফ ডান্ডি, যুক্তরাজ্য।

Magazine