কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

তারাবীহর রাকআত সংখ্যা : একটি তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ

ভূমিকা : রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, عَلَيْكُمْ بِقِيَامِ اللَّيْلِ فَإِنَّهُ دَأَبُ الصَّالِحِينَ قَبْلَكُمْ، وَإِنَّ قِيَامَ اللَّيْلِ قُرْبَةٌ إِلَى اللَّهِ، وَمَنْهَاةٌ عَنْ الإِثْمِ ‘ক্বিয়ামুল লায়লকে আবশ্যিকভাবে আঁকড়ে ধরো। কেননা তোমাদের পূর্বের সৎ বান্দাদের এটাই ত্বরীক্বা ছিল। আর এটা আল্লাহর নৈকট্য, গুনাহের কাফফারা ও গুনাহসমূহ থেকে হেফাযতে থাকার উপায়’।[1] এই ছালাতই যখন রামাযান মাসে আদায় করা হয়, তখন ক্বিয়ামে রামাযান ও সাধারণ লোকদের নিকটে তারাবীহ বলা হয়।

এত গুরুত্বপূর্ণ ছালাতটির রাকআত সংখ্যা কত? তারাবীহর ছালাত ৮ রাকআত। এ ব্যপারে ছাহাবীদের মধ্যে কোনো বিভেদ ছিল না। তার কয়েকটি দলীল নিম্নরূপ :

দলীল-১ : উম্মুল মুমিনীন সাইয়্যেদা আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত আছে, كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي فِيمَا بَيْنَ أَنْ يَفْرُغَ مِنْ صَلَاةِ الْعِشَاءِ وَهِيَ الَّتِي يَدْعُو النَّاسُ الْعَتَمَةَ إِلَى الْفَجْرِ، إِحْدَى عَشْرَةَ رَكْعَةً، يُسَلِّمُ بَيْنَ كُلِّ رَكْعَتَيْنِ، وَيُوتِرُ بِوَاحِدَةٍ ‘রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আতামাহ’ বা এশার ছালাত হতে অবসর হওয়ার পর ফজর পর্যন্ত ১১ রাকআত পড়তেন। তিনি প্রত্যেক দুই রাকআতে সালাম ফেরাতেন এবং ১ রাকআত বিতর পড়তেন’।[2]

দলীল-২ : আবূ সালামাহ ইবনু আব্দুর রহমান উম্মুল মুমিনীন সাইয়্যেদা আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা-কে জিজ্ঞেস করলেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রামাযানের মধ্যে (রাতের) ছালাত (তারাবীহ) কেমন হত? তখন উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা বললেন, مَا كَانَ يَزِيدُ فِي رَمَضَانَ وَلاَ فِي غَيْرِهِ عَلَى إِحْدَى عَشْرَةَ رَكْعَةً ‘রামাযান হোক বা রামাযানের বাইরে হোক রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ১১ রাকআতের অধিক পড়তেন না’।[3]

প্রশ্ন : এই হাদীছটির সাথে তাহাজ্জুদের কী সম্পর্ক? জবাব : তাহাজ্জুদ, তারাবীহ, ক্বিয়ামুল লায়ল, ক্বিয়ামে রামাযান একই ছালাতের ভিন্ন ভিন্ন নাম। কেননা নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে তাহাজ্জুদ ও তারাবীহ আলাদা আলাদা আদায় করা একেবারেই প্রমাণিত নেই। মুহাদ্দিছ ইমামগণ ও অন্য আলেমগণ আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা-এর হাদীছের উপর ‘ক্বিয়ামে রামাযান’ ও ‘তারাবীহ’-এর অনুচ্ছেদ বেঁধেছেন। যেমন- (১) ছহীহ বুখারী, কিতাবুছ ছওম (ছওম পর্ব), কিতাবু ছালাতিত তারাবীহ (তারাবীহর অনুচ্ছেদ), ক্বিয়ামে রামাযানের ফযীলত পরিচ্ছেদ। (২) মুওয়াত্ত্বা মুহাম্মাদ ইবনিল হাসান আশ-শায়বানী (পৃ. ১৪১, ‘ক্বিয়ামে রামাযান ও এর ফযীলত’ অনুচ্ছেদ)। আব্দুল হাই লাখনভী রাহিমাহুল্লাহ এর উপর টীকা লিখেছেন, قوله: شهر رمضان، ويسمّى التراويح ‘ক্বিয়ামে রামাযানকে তারাবীহ নামে নামকরণ করা হয়েছে’। (৩) বায়হাক্বী, আস-সুনানুল কুবরায় (২/৪৯৫, ৪৯৬) আছে, بَابُ مَا رُوِيَ فِي عَدَدِ رَكَعَاتِ الْقِيَامِ فِي شَهْرِ رَمَضَانَ ‘রামাযান মাসের ক্বিয়ামে রাকআত সংখ্যা সম্পর্কে যা বর্ণিত হয়েছে’ অনুচ্ছেদ।

পূর্ববর্তীদের মধ্য হতে কোনো একজন মুহাদ্দিছ বা ফক্বীহ এটা বলেননি যে, এই হাদীছের সম্পর্ক তারাবীহর ছালাতের সাথে নেই। এই হাদীছটিকে অসংখ্য আলেম ২০ রাকআত সম্বলিত বানোয়াট ও মুনকার হাদীছের মোকাবেলায় বিপক্ষীয় দলীল হিসাবে পেশ করেছেন। যেমন- (১) আল্লামা যায়লাঈ হানাফী,[4] (২) হাফেয ইবনু হাজার আসক্বালানী,[5] (৩) আল্লামা ইবনু হুমাম হানাফী,[6] (৪) আল্লামা আইনী হানাফী,[7] (৫) আল্লামা সুয়ূত্বী[8]o।

প্রশ্নকর্তার প্রশ্ন স্রেফ ক্বিয়ামে রামাযান সম্পর্কিত ছিল, যাকে তারাবীহ বলে। তাহাজ্জুদ ছালাত সম্পর্কে প্রশ্নকর্তা প্রশ্নই করেননি। কিন্তু উম্মুল মুমিনীন আয়েশা ছিদ্দীক্বা রাযিয়াল্লাহু আনহা জবাবের মধ্যে প্রশ্নের চাইতে অধিক ব্যাখ্যা দিয়ে দিলেন নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রামাযানের ক্বিয়াম ও রামাযান ব্যতীত ক্বিয়াম সম্পর্কে। সুতরাং এই হাদীছ থেকে ১১ রাকআত তারাবীহর প্রমাণ স্পষ্টভাবে পাওয়া যায়।

দলীল-৩ : জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ আনছারী রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত আছে, আমাদেরকে নিয়ে রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রামাযান মাসে ৮ রাকআত ও ১ রাকআত বিতর পড়িয়েছেন।[9]

দলীল-৪ : উবাই ইবনু কা‘ব রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত আছে, আমি রামাযানের মধ্যে ৮ রাকআত ও বিতর পড়েছি। আর নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বললাম, তো তিনি কিছুই বললেন না। فكانت سنة الرضا ‘অতএব এটা সন্তুষ্টিমূলক সুন্নাত হয়ে গেল’।[10] আল্লামা হায়ছামী এই হাদীছ সম্পর্কে বলেছেন, ‘এর সনদটি হাসান’।[11]

দলীল-৫ : আমীরুল মুমিনীন উমার ইবনুল খাত্ত্বাব রাযিয়াল্লাহু আনহু উবাই ইবনু কা‘ব এবং তামীম আদ-দারী রাযিয়াল্লাহু আনহুমা-কে হুকুম দিয়েছিলেন যে, লোকদেরকে (রামাযানে রাতের সময়) ১১ রাকআত পড়াবে।[12]

খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাত : রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,فَمَنْ أَدْرَكَ ذَلِكَ مِنْكُمْ فَعَلَيْهِ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ الخُلَفَاءِ الرَّاشِدِينَ المَهْدِيِّينَ، عَضُّوا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ ‘তোমাদের মধ্য হতে যে এই ইখতিলাফ পাবে, তার উপর আবশ্যক যে, সে আমার সুন্নাত ও হেদায়াতপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাতকে অবশ্যই আঁকড়ে ধরবে’।[13]

দলীল-১ : আস-সায়েব ইবনু ইয়াযীদ রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত আছে, كُنَّا نَقُومُ فِي زَمَانِ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ بِإِحْدَى عَشْرَةَ رَكْعَةً ‘আমরা (ছাহাবীগণ) উমার ইবনু খাত্ত্বাবের যুগে ১১ রাকআত পড়তাম’।[14]

জালালুদ্দীন সুয়ূত্বী (মৃ. ৯১১ হি.) এই রেওয়ায়েত সম্পর্কে লিখেছেন, وَفِي مُصَنَّفِ سَعِيدِ بْنِ مَنْصُورٍ بِسَنَدٍ فِي غَايَةِ الصِّحَّة ‘এটা (১১ রাকআতের বর্ণনাটি) মুছান্নাফ সাঈদ ইবনু মানছূরের মধ্যে অত্যন্ত ছহীহ সনদের সাথে রয়েছে’।[15]

দলীল-২ : أَنَّ عُمَرَ جَمَعَ النَّاسَ عَلَى أُبَيٍّ وَتَمِيمٍ فَكَانَا يُصَلِّيَانِ إِحْدَى عَشْرَةَ رَكْعَةً ‘নিশ্চয়ই উমার রাযিয়াল্লাহু আনহু লোকদেরকে উবাই (ইবনু কা‘ব ও তামীম আদ-দারী রাযিয়াল্লাহু আনহুমা-এর ইমামতিতে একত্র করেছেন। তারা উভয়ই ১১ রাকআত পড়াতেন’।[16]

এই বর্ণনাটির সনদ ছহীহ। এর সকল রাবী ছহীহ বুখারী ও মুসলিমের রাবী এবং ইজমা অনুপাতে আস্থাভাজন।

২০ রাকআত তারাবীহর হাদীছগুলো এক নযরে : নিচে কয়েকটি হাদীছ পর্যালোচনাসহ তুলে ধরা হলো-

দলীল-১ : عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يُصَلِّي فِي رَمَضَانَ عِشْرِينَ رَكْعَةً وَالْوِتْرَ ইবনু আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহুমা হতে বর্ণিত আছে, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রামাযান মাসে ২০ রাকআত তারাবীহ ও বিতর পড়তেন।[17]

জবাব : এই রেওয়ায়াত সম্পর্কে আনওয়ার শাহ কাশ্মীরী দেওবন্দী রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন, بِسَنَدٍ ضَعِيْفٍ وَعَلى ضَعْفِهِ اِتِّفَاقٌ ‘এটি যঈফ সনদে বর্ণিত হয়েছে। আর এর যঈফ হওয়ার উপর ঐকমত্য আছে’।[18]

দলীল-২ : عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ قَالَ خَرَجَ النبي صلى الله عليه وسلم ذَاتَ لَيْلَةٍ فِي رَمَضَانَ فَصَلَّى النَّاسُّ أَرْبَعَةً وَعِشْرِينَ رَكْعَةً وَأَوْتَرَ بِثَلاثَة ‘জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ রাযিয়াল্লাহু আনহুমা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রামাযানে কোনো একদিন রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হলেন। তিনি লোকদেরকে ২০ রাকআত এবং ৩ রাকআত বিতর পড়ালেন’।[19]

জবাব : এটি জাল হাদীছ। এর একজন রাবী মুহাম্মাদ ইবনু হুমায়েদ সম্পর্কে দেওবন্দী আলেম খান বাদশাহ লিখেছেন, ‘ইনি হলেন মহা মিথ্যুক ও মুনকারুল হাদীছ’।[20] এর অপর রাবী উমার ইবনু হারূনও সমালোচিত।[21] অবশিষ্ট সনদেও আপত্তি আছে।

দলীল-৩ : আব্দুর রহমান ইবনে আব্দুল ক্বারী হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, আমি রামাযানের এক রাতে উমার ইবনুল খাত্ত্বাবের সাথে একটি মসজিদের পানে বের হলাম। লোকেরা এলোমেলাভাবে (বিভিন্ন) জামাআতে বিভক্ত। কেউ একাকী ছালাত আদায় করছে। আবার কোনো ব্যক্তি ছালাত আদায় করছে এবং (তার ইক্তিদা করে) একদল লোক ছালাত আদায় করছে। উমার রাযিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আমি মনে করি যে, এই লোকদের যদি আমি একজন ক্বারীর (ইমামের) পিছনে একত্রিত করে দেই, তবে তা উত্তম হবে। অতঃপর তিনি দৃঢ় (প্রতিজ্ঞ) হলেন। এরপর তিনি উবাই ইবনু কা‘ব এর উপরে সকলকে জমা করে দিলেন। অতঃপর অন্য আরেকটি রাতে আমি তার সাথে বের হই। তখন লোকেরা তাদের ক্বারীর (ইমামের) সাথে ছালাত আদায় করছিল। উমার রাযিয়াল্লাহু আনহু বললেন, কতই না সুন্দর এই নতুন ব্যবস্থা। লোকেরা রাতের যে অংশে ঘুমিয়ে থাকে তা রাতের ঐ অংশ অপেক্ষা উত্তম, যে অংশে তারা ক্বিয়াম করে। (এর দ্বারা) তিনি শেষ রাত বুঝিয়েছেন। আর লোকেরা রাতের প্রথমভাগে ছালাত আদায় করত।

জবাব : এই হাদীছটি ছহীহ, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু এর দ্বারা হানাফীদের ২০ রাকআতের দলীল প্রমাণিত হয় না। উল্লেখ্য, এ হাদীছ থেকে পাঁচটি মাসআলা প্রমাণিত হয়। যথা- (ক) তারাবীহর জামাআত জায়েয ও উত্তম। (খ) এতে রাকআতের সংখ্যা উল্লেখ নেই। (গ) তারাবীহ এবং তাহাজ্জুদ একই ছালাত।[22] (ঘ) এই বিদআত দ্বারা আভিধানিক বিদআত উদ্দেশ্য, পারিভাষিক নয়। (ঙ) এই হাদীছটি ছহীহ বুখারীর ‘কিতাবু ছলাতিত তারাবীহ’-এর মধ্যে রয়েছে।[23]

দলীল-৪ : উবাই ইবনু কা‘ব রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত আছে, নিশ্চয়ই উমার ইবনু খাত্ত্বাব রাযিয়াল্লাহু আনহু তাকে আদেশ করেছিলেন, রামাযানের রাতে ছালাত পড়াতে। তিনি বললেন, নিশ্চয়ই লোকেরা দিনে ছওম রাখে। কিন্তু তারা উত্তমভাবে ক্বিরাআত পারে না। তুমি যদি রাতে তাদের সামনে কুরআন পড়তে। তিনি (উবাই ইবনু কা‘ব) বললেন, হে আমীরুল মুমিনীন! এ বিষয়টি তো পূর্বে ছিল না। তিনি বললেন, আমি জানি। কিন্তু এটি উত্তম। এরপর তিনি তাদেরকে নিয়ে ২০ রাকআত পড়লেন।

জবাব : এই রেওয়ায়াতটির সনদ মাক্বদেসীর ‘আল-মুখতারাহ’ গ্রন্থে পাওয়া যায়।[24] এটা যঈফ। হাফেয ইবনু হিব্বান বলেছেন, ‘আবূ জা‘ফর আর-রাযীর রবী ইবনু আনাস থেকে রেওয়ায়াত করায় অসংখ্য ইযত্বিরাব সংঘটিত হয়েছে’।[25]

দলীল-৫ : عَنِ الْحَسَنِ أَنَّ عُمَرَ بْن الْخَطَّابِ جَمَعَ النَّاسَ عَلَى أُبَيِّ بْنِ كَعْبٍ فِي قِيَامِ رَمَضَانَ فَكَانَ يُصَلِّيْ بِهِمْ عِشْرِيْنَ رَكْعَةً ‘হাসান হতে বর্ণিত আছে, নিশ্চয়ই উমার ইবনুল খাত্ত্বাব রাযিয়াল্লাহু আনহু উবাই ইবনু কা‘ব রাযিয়াল্লাহু আনহু-এর উপর লোকদেরকে রামাযানের ক্বিয়ামে একত্র করেছিলেন। তিনি তাদেরকে নিয়ে ২০ রাকআত পড়েছিলেন।

জবাব : এই রেওয়ায়াতটি মুনক্বাত্বি‘ হওয়ার কারণে যঈফ। হানাফী ইমাম আইনী বলেছেন, ‘এই রেওয়ায়াতের মধ্যে ইনক্বিত্বা আছে। কেননা হাসান (বাছরী) উমার ইবনুল খাত্ত্বাব রাযিয়াল্লাহু আনহুকে পাননি’।[26]

দলীল-৬ : عَنْ يَحْيَى بْنِ سَعِيدٍ، أَنَّ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ أَمَرَ رَجُلًا يُصَلِّي بِهِمْ عِشْرِينَ رَكْعَةً ‘ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ হতে বর্ণিত আছে, নিশ্চয়ই উমার ইবনুল খাত্ত্বাব রাযিয়াল্লাহু আনহু একজন ব্যক্তিকে হুকুম দিয়েছিলেন যে, সে যেন লোকদেরকে ২০ রাকআত পড়ায়।

জবাব : এই হাদীছ সম্পর্কে নিমাবী (হানাফী) লিখেছেন, ‘ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ আনছারী উমার রাযিয়াল্লাহু আনহুকে পাননি’।[27] ইমাম ইবনু হাযম বলেছেন, ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ সাইয়্যেদুনা উমার রাযিয়াল্লাহু আনহু-এর মৃত্যুর ২৫ বছর পর জন্মগ্রহণ করেছেন।[28]

দলীল-৭ :عَنْ عَبْدِ الْعَزِيزِ بْنِ رُفَيْعٍ قَالَ: كَانَ أُبَيُّ بْنُ كَعْبٍ يُصَلِّي بِالنَّاسِ فِي رَمَضَانَ بِالْمَدِينَةِ عِشْرِينَ رَكْعَةً، وَيُوتِرُ بِثَلَاثٍ আব্দুল আযীয ইবনু রুফাঈ হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, উবাই ইবনু কা‘ব রাযিয়াল্লাহু আনহু মদীনাতে রামাযানে লোকদেরকে নিয়ে ২০ রাকআত এবং ৩ রাকআত বিতর পড়তেন।[29]

জবাব : এই রেওয়ায়াত সম্পর্কে নিমাবী সাহেব লিখেছেন, আব্দুল আযীয ইবনু রুফাঈ উবাই ইবনু কা‘ব রাযিয়াল্লাহু আনহুকে পাননি।[30] অর্থাৎ এই রেওয়ায়াতটি মুনক্বাত্বি‘। আর মুনক্বাত্বি‘ বর্ণনা আলেমদের ঐকমত্যানুসারে যঈফ।[31]

দলীল-৮ :عَنْ يَزِيدَ بْنِ رُومَانَ؛ أَنَّهُ قَالَ: كَانَ النَّاسُ يَقُومُونَ فِي زَمَانِ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ، فِي رَمَضَانَ، بِثَلاَثٍ وَعِشْرِينَ رَكْعَة ‘ইয়াযীদ ইবনু রূমান হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেছেন, রামাযানে উমারের যামানায় লোকেরা ২৩ রাকআত পড়তেন।

জবাব : এই রেওয়ায়াতটিও মুনক্বাত্বি‘।[32]

(আগামী সংখ্যায় সমাপ্য)


‘ভাগ্যের লিখন না যায় খণ্ডন’ বাক্যটি প্রায় সবার মুখ থেকেই শুনা যায়; আলেম হোক বা জাহেল। তাক্বদীর বা ভাগ্য শরীআতের অদৃশ্য স্পর্শকাতর বিষয়াবলির মাঝে অন্যতম। তাক্বদীর সম্পর্কে সঠিক বুঝ ও ধারণা না থাকার কারণে অনেক মুসলিম নামধারী মানুষও পথভ্রষ্ট হয়েছে, সৃষ্টি হয়েছে ইসলামে বিভিন্ন দল ও উপদলের। অনেক লোক তাক্বদীর অস্বীকারকারীদের রসব্যঞ্জক আলোচনায় প্রতারিত হয়ে বিপথগামী হয়েছে। তাদের কথা ও যুক্তি খুবই চমৎকার ও শ্রুতিমধুর; যার ফলশ্রুতিতেই মানুষ দিনে দিনে তাদের পিছনে ছুটছে। তাক্বদীর নামক পথটি খুবই সংকীর্ণ, পিচ্ছিল ও কর্দমাক্ত। অনেকেই এ পথে হাঁটতে গিয়ে হোঁচট খেয়েছে। হ্যাঁ, তাক্বদীর খুবই পিচ্ছিল একটি পথ! পিচ্ছিল বলে হাঁটা যাবে না বিষয়টা এমন নয়; বরং খুব সতর্কতার সাথে হাঁটতে হবে। অনুসন্ধিৎসু পাঠকদের তাক্বদীর সম্পর্কে জানার কৌতূহল জাগাটা স্বাভাবিক। কারণ জানলেই তো ঐ পিচ্ছিল পথ পাড়ি দেওয়া সম্ভব। পাঠকদের জ্ঞান পিপাসা নিবারণের লক্ষ্যে ও মুসলিম জাতিকে সঠিক দিশা দেওয়ার উদ্দেশ্যে নিজের অপ্রতুল জ্ঞান দিয়েই কিছু লিখার কথা অনুভব করছি। তাই কাল বিলম্ব না করে শুরু করা যাক তাক্বদীরের যাত্রা।*

তাক্বদীর পরিচিতি :

অতি সংক্ষেপে যদি তাক্বদীর পরিচিতি তুলে ধরা হয়, তাহলে এভাবে বলা উচিত, ‘ভাগ্যের ভালো-মন্দের উপর বিশ্বাস স্থাপন করা ও সন্তুষ্ট থাকা’। অর্থাৎ পৃথিবীতে জীবনযাপন করার ক্ষেত্রে মাঝে মাঝে যে সমস্ত উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, বিপদাপদ আমাদের উপর আপতিত হয়, তার উপর সন্তুষ্ট থাকা ও হায়-হুতাশ না করা। ধৈর্যধারণ করা এবং এই বিপদ থেকে পুণ্যের আশা করা।

তাক্বদীরের প্রকারভেদ :

তাক্বদীরের প্রকারভেদ সম্পর্কে ধারণা না থাকার কারণে অনেক মানুষ বিপদগামী হয়েছে। তাই নিম্নে তা উল্লেখ করা হলো- তাক্বদীর দুই প্রকার। (১) মুবরাম (স্থায়ী) (২) মুআল্লাক্ব (ঝুলন্ত)। মুবরাম এমন তাক্বদীর যা কখনো পরিবর্তন হয় না; বান্দার জন্য যা নির্ধারণ করা হয়েছে, তা অনিবার্যভাবে ঘটবেই। যেমন- আপনি কোনো স্থানে মৃত্যুবরণ করবেন এটা পূর্ব থেকে নির্ধারিত। একটি হাদীছে নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,‏إِذَا قَضَى اللَّهُ لِعَبْدٍ أَنْ يَمُوتَ بِأَرْضٍ جَعَلَ لَهُ إِلَيْهَا حَاجَةً ‏ ‘আল্লাহ তাআলা যখন যে জায়গায় কারো মৃত্যু হওয়ার ফয়সালা করেন, তখন ঐ জায়াগায় গমনের উদ্দেশ্যে তার কোনো প্রয়োজন সৃষ্টি করে দেন’।[33] মুবরাম তাক্বদীরের উপর সন্তুষ্ট থাকতে হবে ও পুণ্যের আশা করতে হবে। অহেতুক ও অযাচিত কথা বলা উচিত যাবে না। মুআল্লাক্ব হলো এমন তাক্বদীর, যা পরিবর্তন হয়। যেমন- আল্লাহ তাআলা কারো ভাগ্য নির্ধারণ করেন এভাবে, যদি আমার উমুক বান্দা উমুক স্থানে যায়, তাহলে গাড়ি এক্সিডেন্টে সে মৃত্যুবরণ করবে। হ্যাঁ, তবে সে যদি যাওয়ার আগে কোনো কিছু দান করে বা আমার কাছে হঠাৎ মৃত্যু থেকে পরিত্রাণ চায়, তাহলে সে এই বিপদ থেকে পরিত্রাণ পাবে। এ ধরনের তাক্বদীর সাধারণত শর্তযুক্ত থাকে। পবিত্র কুরআনে তাক্বদীরে মুআল্লাক্ব সম্পর্কে আল্লাহ তাআলার সুস্পষ্ট বাণী রয়েছে,وَمَا يُعَمَّرُ مِنْ مُعَمَّرٍ وَلَا يُنْقَصُ مِنْ عُمُرِهِ إِلَّا فِي كِتَابٍ إِنَّ ذَلِكَ عَلَى اللَّهِ يَسِيرٌ ‘কারো বয়স বৃদ্ধি বা হ্রাসকরণ সবই কিতাবে রয়েছে; আর এটা আল্লাহর কাছে অতি সহজ বিষয়’ (আল-ফাত্বির, ৩৫/১১)। এখানে দেখুন, কারো হায়াত যদি চূড়ান্তভাবে ৬০ বছর লেখা থাকে, তাহলে আবার তা বৃদ্ধি হবে কীভাবে? অথচ আল্লাহ বলছেন বয়স বৃদ্ধি পায়। বুঝা যাচ্ছে, এটা তাক্বদীরে মুবরাম নয়; বরং মুআল্লাক্ব। এ ব্যাপারটি আরো একটু সুস্পষ্ট হয় যামাখশারীর বক্তব্য দ্বারা। তিনি তাফসীরে কাশশাফে উল্লেখ করেছেন,

أَنَّهُ لاَ يَطُوْلُ عُمُرُ الْإِنْسًانِ وَلاَ يَقْصُرُ إِلاَّ فِيْ كِتَابٍ وَصُوْرَتُهُ أَنْ يُّكْتَبَ فِي اللَّوْحِ إِنْ لَمْ يَحُجَّ فُلاَنٌ أَوْ يَغْزُ فَعُمْرُهُ أَرْبَعُوْنَ سَنَةً ، وَإِنْ حَجَّ وَغَزَا فَعُمْرُهُ سِتِّوْنَ سَنَةً ، فَإِذَا جَمَعَ بَيْنَهُمَا فَبَلَغَ السِّتِّيْنَ ، وَإِذَا أَفْرَدَ أَحَدُهُمَا فَلَمْ يَتَجَاوَزْ بِهِ الْأَرْبَعِيْنَ فَقَدْ نُقِصَ مِنْ عُمُرِهِ الَّذِيْ هُوَ الْغَايَةُ وَهُوَ السِّتُّوْنَ وَذَكَرَ نَحْوَهُ فِيْ مَعَالِمِ التَّنْزِيْلِ

‘মানুষের বয়স বৃদ্ধি পাওয়া বা হ্রাস ঘটার উদাহরণটা হলো এমন, আল্লাহ তাআলা লাওহে মাহফূযে কারো ভাগ্য এভাবে লিখে রেখেছেন, যদি উমুক হজ্জব্রত পালন না করে ও যুদ্ধে না যায়, তাহলে তার বয়স হবে ৪০। আর যদি হজ্জব্রত পালন করে ও যুদ্ধে যায়, তাহলে তার বয়স হবে ৬০। এখানে ব্যক্তি দুটি শর্ত পূর্ণ করার কারণে তার বয়স হয়েছে ৬০। কিন্তু ব্যক্তি যদি একটি শর্ত পূরণ করে, তাহলে সে চূড়ান্ত বয়সে ৬০ বছর) পৌঁছতে পারবে না, বরং তার বয়স হবে ৪০; মাআলিমুত তানযীল গ্রন্থেও এ ধরনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।[34] অনেক মানুষ তাক্বদীরে মুআল্লাক্ব না জানার কারণে অহেতুক আল্লাহকে দোষারোপ করে থাকে, রোগ হলে অনেকে ভাগ্যের উপর নির্ভর করে বসে থাকে এবং বলে, ভাগ্যে যা আছে তাই হবে। আরো বলে, আল্লাহ ভাগ্যে যা রেখেছেন, তাই হবে। এ কথা বলে সে আর চেষ্টাই করে না। রোগ হলে সাধ্যানুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে, এটাই আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন। তিনি বলেননি যে, ভাগ্যের উপর নির্ভর করে বসে থাকো। একটি হাদীছে আছে, ছাহাবায়ে কেরাম নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করেন, আমাদের রোগ হলে কি আমরা তাক্বদীরের উপর নির্ভর করে বসে থাকব, নাকি প্রতিষেধক গ্রহণ করব? প্রত্যুত্তরে তিনি বলেন, ‘প্রতিষেধক গ্রহণ করো; এটাও তাক্বদীরে রয়েছে’।[35] আমরা তো জানি না আমাদের তাক্বদীরে কী লেখা আছে, তাই তাক্বদীরের উপর নির্ভর করে বসে থাকলে চলবে না; বরং আমাদের সাধ্যানুযায়ী চেষ্টা করতে হবে। চেষ্টা করার পরও যদি সফলতা অর্জন করা সম্ভব না হয়, ঐ সময় মনে করতে হবে তাক্বদীরে আমার সফলতা নেই, তাই আমি সফল হতে পারিনি। তাই চেষ্টা না করে তাক্বদীরের উপর নির্ভর করে বসে থাকা অনুচিত।

তাক্বদীর কি পরিবর্তন হয়?

আমরা ইতোপূর্বেও বলেছি যে, তাক্বদীরে মুআল্লাক্ব পরিবর্তনশীল। অর্থাৎ এই তাক্বদীর পরিবর্তন হয়। আমরা যেহেতু জানি না, আমাদের ভাগ্যে কী লেখা আছে, সেহেতু আমাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করতে হবে। কিছু ভালো কাজ করলে মানুষের তাক্বদীরে মুআল্লাক্ব পরিবর্তন হয়, তবে তাক্বদীরে মুবরাম কোনো অবস্থাতেই পরিবর্তন হয় না। যেমন- নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি হাদীছে বলেন,‏لاَ يَرُدُّ الْقَضَاءَ إِلاَّ الدُّعَاءُ وَلاَ يَزِيدُ فِي الْعُمُرِ إِلاَّ الْبِرُّ ‘দু‘আ ব্যতীত অন্য কোনো কিছুই ভাগ্যের পরিবর্তন করতে পারে না এবং সৎকাজ ব্যতীত অন্য কোনো কিছুই হায়াত বাড়াতে পারে না’।[36] আরো একটি হাদীছে নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‏ مَنْ سَرَّهُ أَنْ يُبْسَطَ عَلَيْهِ رِزْقُهُ أَوْ يُنْسَأَ فِي أَثَرِهِ فَلْيَصِلْ رَحِمَهُ‏ ‘যে ব্যক্তি তার জীবিকার প্রশস্ততা কিংবা দীর্ঘায়ু পছন্দ করে, সে যেন তার আত্মীয়ের সাথে সদ্ব্যবহার করে’।[37] এই দুটি হাদীছ থেকে আমরা বুঝতে পারলাম যে, দু‘আ, পুণ্যের কাজ ও আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার দ্বারা মানুষের তাক্বদীর পরিবর্তন হয়। এ জন্য আমাদের পুণ্যের কাজ করতে হবে। পুণ্যের কাজ করার পরও যদি কোনো বিপদ চলে আসে, তাহলে মনে করতে হবে এটা তাক্বদীরে মুবরাম অর্থাৎ অবশ্যম্ভাবী তাক্বদীর। তাই এ তাক্বদীরের উপর বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে ও সন্তুষ্ট থাকতে হবে।
তাক্বদীর নিয়ে অতিরিক্ত ঘাঁটাঘাঁটি করা নিষেধ :

আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনের শুরুতেই মুত্তাক্বীদের একটি বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেছেন। আর সেটা হলো- না দেখে আল্লাহকে বিশ্বাস করা। কেউ যদি আল্লাহর প্রস্তুতকৃত ছায়াময় কষ্ট-ক্লেশমুক্ত জান্নাতের অধিবাসী হতে চায়, তাহলে আল্লাহকে না দেখে তাকে বিশ্বাস করতে হবে। এখন কেউ যদি জান্নাতে যেতে না চায়, তাহলে সে বিশ্বাস করবে না! তাক্বদীরের পুষ্পটি যেহেতু কাঁটাযুক্ত, সেহেতু এই পুষ্প স্পর্শ করবে না এবং পুষ্প আছে শুধু এ কথা বিশ্বাস করবে! শুধু শুধু অযথা ঘাঁটাঘাঁটি করা নিষ্ফল; বরং কখনো কখনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। এজন্যই নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছাহাবীদের তাক্বদীর নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করতে নিষেধ করেন। যেমন- একটি হাদীছে এসেছে,

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ خَرَجَ عَلَيْنَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَنَحْنُ نَتَنَازَعُ فِي الْقَدَرِ فَغَضِبَ حَتَّى احْمَرَّ وَجْهُهُ حَتَّى كَأَنَّمَا فُقِئَ فِي وَجْنَتَيْهِ الرُّمَّانُ فَقَالَ ‏ "‏ أَبِهَذَا أُمِرْتُمْ أَمْ بِهَذَا أُرْسِلْتُ إِلَيْكُمْ إِنَّمَا هَلَكَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ حِينَ تَنَازَعُوا فِي هَذَا الأَمْرِ عَزَمْتُ عَلَيْكُمْ أَلاَّ تَتَنَازَعُوا فِيهِ

আবূ হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো এক সময় আমাদের সামনে এসে দেখলেন যে, আমরা তাক্বদীর বিষয়ক তর্কে-বিতর্কে লিপ্ত হয়েছি। তিনি ভীষণ রাগান্বিত হলেন, এতে তাঁর মুখমণ্ডল এমন লাল বর্ণ ধারণ করল যেন তাঁর দুই গালে ডালিম নিংড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তারপর তিনি বললেন, ‘তোমরা কি এজন্য আদেশপ্রাপ্ত হয়েছ, না আমি তোমাদের প্রতি এটা নিয়ে প্রেরিত হয়েছি? এ বিষয়ে তোমাদের পূর্ববর্তী জনগণেরা যখনই বাক-বিতণ্ডা করেছে, তখনই তারা ধ্বংস হয়েছে। আমি দৃঢ় প্রতিজ্ঞার সাথে তোমাদেরকে বলছি, তোমরা এ বিষয়ে কখনো যেন বিতর্কে লিপ্ত না হও’।[38] শয়তান কখনো কখনো তাক্বদীরের মাধ্যমে মানুষকে বিভ্রান্তির মাঝে ফেলে, মনের মাঝে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করে। যার ফলশ্রুতিতে চলে আসে মনের অজান্তেই উদ্ভট প্রশ্ন।

(আগামী সংখ্যায় সমাপ্য)

 সৈয়দপুর, নীলফামারী।


[1]. কিতাবু ফাযলি ক্বিয়ামিল লায়ল ওয়াত-তাহাজ্জুদ, হা/৪, সনদ হাসান; সুনানে তিরমিযী, হা/৩৫৪৯।

[2]. ছহীহ মুসলিম, হা/৭৩৪।

[3]. ছহীহ বুখারী, হা/২০১৩; উমদাতুল ক্বারী, ১১/১২৮।

[4]. যায়লাঈ হানাফী, নাছবুর রায়, ২/১৫৩।

[5]. হাফেয ইবনু হাজার আসক্বালানী, আদ-দিরায়াহ, ১/২০৩।

[6]. ইবনু হুমাম হানাফী, ফাতহুল ক্বাদীর (প্রকাশনায় : দারুল ফিকর), ১/৪৬৭।

[7]. আল্লামা আইনী হানাফী, উমদাতুল ক্বারী, ১১/১২৮।

[8]. আল্লামা সুয়ূত্বী, আল-হাবী লিল ফাতাওয়া, ১/৩৪৮।

[9]. ছহীহ ইবনু খুযায়মা, হা/১০৭০।

[10]. মুসনাদু আবী ইয়া‘লা, হা/১৮০১।

[11]. মাজমাউয যাওয়ায়েদ, ২/৭৪।

[12]. মুওয়াত্ত্বা ইমাম মালেক, হা/২৪৯।

[13]. তিরমিযী, হা/২৬৭৬।

[14]. হাশিয়া আছারুস সুনান, পৃ. ২৫০।

[15]. সুয়ূত্বী, আল-মাছাবীহ ফী ছালাতিত তারাবীহ, পৃ. ১৫; আল-হাবী লিল ফাতাওয়া, ১/৩৫০।

[16]. মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বা, হা/৭৬৭০।

[17]. মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বা, হা/৭৬৯২।

[18]. আল-আরফুশ শাযী, ১/১৬৬।

[19]. তারীখে ইবনু জুরজান, হা/৫৫৬।

[20]. আল-ক্বওলুল মুবীন ফী ইছবাতিত তারাবীহ আল-ইশরীন ওয়ার রাদ্দু আলাল আলবানী আল-মিসকীন, পৃ. ৩৩৪।

[21]. নাসবুর রায়াহ, ১/৩৫১, ৩৫৫, ৪/২৭৩।

[22]. বিস্তারিত দেখুন : ফায়যুল বারী, ২/৪২০।

[23]. ছহীহ বুখারী, হা/২০১০।

[24]. আল-মুখতারাহ, হা/১১৬১।

[25]. আছ-ছিক্বাত, ৪/২২৮; আনওয়ারুছ ছাহীফা ফিল আহাদীছিয যঈফা, আবূ দাঊদ, হা/১১৮২।

[26]. শরহে সুনান আবূ দাঊদ, ৫/৩৪৩।

[27]. আছারুস সুনান, হা/৭৮০-এর টীকা দ্রষ্টব্য।

[28]. আল-মুহাল্লা, ১০/৬০, মাসআলা-১৮৯৯।

[29]. মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বা, হা/৭৬৮৪।

[30]. আছারুস সুনান, হা/৭৮১-এর টীকা দ্রষ্টব্য।

[31]. তায়সীরু মুছত্বলাহিল হাদীছ, পৃ. ৭৮।

[32]. উমদাতুল কারী, ১১/১২৭, হা/২০১০-এর অধীনে।

* শিক্ষক, আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ, বীরহাটাব-হাটাব, রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ।

[33]. তিরমিযী, হা/২১৪৬; মিশকাত, হা/১১০।

[34]. তুহফাতুল আহওয়াযী, ৫/৬৪৩।

[35]. তিরমিযী, হা/২১৪৮।

[36]. তিরমিযী, হা/২১৩৯; সিলসিলা ছহীহা, হা/১৫৪; মিশকাত, হা/২২৩৩।

[37]. ছহীহ মুসলিম, হা/৬৪১৭; আবূ দাঊদ, হা/১৬৯৩।

[38]. তিরমিযী, হা/২১৩৩; মিশকাত, হা/৯৮।

Magazine