মানুষ আল্লাহর সৃষ্টি। আর আল্লাহ তাআলা কেবল ইবাদতের জন্য মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন, وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنْسَ إِلَّا لِيَعْبُدُوْنِ ‘আমি জিন ও মানুষকে কেবল আমারই ইবাদত-বন্দেগী করার জন্য সৃষ্টি করেছি’ (আয-যারিয়াত, ৫১/৫৬)।
আয়াতের বাচনভঙ্গি থেকে বুঝা যায়, মানুষ সৃষ্টির একমাত্র উদ্দেশ্য হলো, তারা আল্লাহর ইবাদত করবে। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তার হুকুম পালন করবে।
পূর্বের আলোচনা থেকে জেনেছি, আল্লাহর ইবাদতের জন্য মানুষের সৃষ্টি হয়েছে। মানুষ আল্লাহর গোলামি করবে, তার দাসত্ব করবে, তিনি এমনটিই চান। আর এর মাধ্যমেই যেহেতু কাঙ্ক্ষিত ভালোবাসা নিবেদন পুরোপুরি প্রকাশ পায়। তাই পবিত্র কুরআনে বারবার এ কথাই বলা হয়েছে।
এখানে লক্ষণীয় বিষয় হলো, আমরা আল্লাহর ইবাদত করি। আমাদের সেই ইবাদত একনিষ্ঠভাবে তার সন্তুষ্টি লাভের জন্য হতে হবে। লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে তা যেন নিষ্প্রাণ হয়ে না যায়। অবশ্যই এ বিষয়ে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে, অন্যথা নিষ্প্রাণ ইবাদত কঙ্ক্ষিত ফলাফল অর্জনের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে। যেমন আমরা ছালাত পড়ি, কুরআনে বলা আছে ‘ছালাত গুনাহ থেকে ফেরায়’ বাস্তবে দেখা যায়, আমরা ছালাতও পড়ি, আবার গুনাহও করি। যে ছালাত আমাকে গুনাহ থেকে ফেরাতে পারে না, কোন অর্থে তাকে ছালাত বলতে পারি?
লোক দেখানো ছালাত বা অন্য কোনো ইবাদত আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের মাধ্যম হয় না। মূলত লোক দেখানো ইবাদত মুনাফেক্বদের অভ্যাস। জনসম্মুখে খুব ভালোভাবে ইবাদতের আনুষ্ঠানিকতা পালন করলেও বস্তুত তাতে প্রাণ বলতে কিছু নেই। এমন ইবাদতকারীর বিরুদ্ধে কুরআনে কঠিন সতর্কবাণী উচ্চারণ করা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন,فَوَيْلٌ لِلْمُصَلِّيْنَ -الَّذِيْنَ هُمْ عَنْ صَلَاتِهِمْ سَاهُوْنَ -الَّذِيْنَ هُمْ يُرَاءُوْنَ ‘দুর্ভোগ ওই ছালাত আদায়কারীদের, যারা তাদের ছালাতে উদাসীন, যারা লোক দেখানোর জন্য তা আদায় করে’ (আল-মাঊন, ১০৭/৪-৬)। তাই ইবাদতের ক্ষেত্রে আন্তরিক হওয়া কাম্য। কেননা তা একমাত্র আল্লাহর জন্য নিবেদন করা হচ্ছে।
দ্বীনের শাখাগত আমলগুলোর মধ্যে ছালাতের কথা এখানে উল্লেখ করা হয়েছে। কেননা এটি যাবতীয় সৎকর্মের প্রাণ ও দ্বীনের স্তম্ভ। অন্যসব ইবাদত তথা সমগ্র জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপও একনিষ্ঠভাবে বিশ্ব পালনকর্তা আল্লাহর জন্য নিবেদিত হতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন, قُلْ إِنَّ صَلَاتِيْ وَنُسُكِيْ وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِيْ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ ‘বলুন! আমার ছালাত, আমার ইবাদত, আমার জীবন, আমার মরণ, সবই বিশ্ব পালনকর্তা আল্লাহর জন্য নিবেদিত’ (আল-আনআম, ৬/১৬২)।
এটিই হচ্ছে পূর্ণ বিশ্বাস ও পূর্ণ আন্তরিকতার ফল। জীবনের প্রতিটি কাজ ও অবস্থায় এ কথা মনে রাখা যে, সমগ্র বিশ্বের একজন পালনকর্তা আছেন, আমি তাঁর গোলাম। তিনি দেখছেন, সর্বদা তাঁর দৃষ্টির সামনে আমি ও আমরা। আমার অন্তর, মস্তিষ্ক, চোখ, কান, হাত, পা ও প্রতিটি পদক্ষেপ তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে যেতে পারে না। মানুষ যদি অন্তর ও মস্তিষ্কে এ মুরাকাবা ও ধ্যানকে সদা সর্বদা উপস্থিত রাখে, তবে সে বিশুদ্ধ অর্থে পরিপূর্ণ মানুষে পরিণত হতে পারবে। যাবতীয় পাপ ও অপরাধ থেকে পুত-পবিত্র জীবনযাপন করতে পারবে।
মাহমুদ হাসান ফাহিম
শিক্ষক, বায়তুল আকরাম মসজিদ ও মাদরাসা কমপ্লেক্স, সুরতরঙ্গ রোড, টঙ্গী, গাজীপুর।