কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

ফিলিস্তীন ইস্যুতে মুসলিম উম্মাহর শিক্ষা!

post title will place here

ফিলিস্তীন ইস্যুতে ইতিহাস এবং করণীয় নিয়ে গুণীজনরা নানা কথা বললেও এই ইস্যুর মাঝে অনেক বাস্তব শিক্ষা আছে, সেটা নিয়েও লেখা দরকার। ফিলিস্তীনে বর্তমান কী হচ্ছে, সেটা সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাবে আমাদের অজানা নয়। তাই এই প্রবন্ধ থেকে ফিলিস্তীন ইস্যুতে আমাদের শিক্ষা কী? সে বিষয়ে ক্ষুদ্র আলাপ হবে ইনশা-আল্লাহ।

৭ অক্টোবর ২০২৩ থেকে নতুন করে ইসরাঈলী হত্যাযজ্ঞ শুরু হয়। এসব হামলায় ৫০ হাজারের বেশি মুসলিম নিহত হয়েছে। এসব হামলায় আহতের সংখ্যা— ১ লক্ষ ১৩ হাজারের বেশি। ফিলিস্তীনের ৯০ ভাগ জনসংখ্যা বাস্তচ্যুত হয়েছে।[1]

ফিলিস্তীন ইস্যুতে আমাদের শিক্ষা কী?

দেখুন পৃথিবীর প্রতিটি ঘটনা ও কাজে শিক্ষা আছে। ঠিক তেমনি ফিলিস্তীন থেকে আমাদের অনেক শিক্ষা রয়েছে। তাই নিচে সে বিষয়ে আলোচনা করা হলো।

(১) ঐক্যের বিকল্প নেই: মুসলিমদের মাঝে সকল দল-উপদল এই একটা আয়াত দিয়ে মানুষকে একতার দিকে ডাক দেয়। এমন কোনো মুসলিম দল, ব্যক্তি, পাওয়া যাবে না, যে এই আয়াতের কথা উল্লেখ করে না। সেই আয়াতটি হলো, وَاعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللَّهِ جَمِيعًا وَلَا تَفَرَّقُوا ‘তোমরা সকলে একসঙ্গে আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করো এবং বিভক্ত হয়ো না’ (আলে ইমরান, ৩/১০৩)

সকল দল-উপদল এই আয়াতের কথা বললেও আজ সকল দল-উপদল এক হতে পারেনি। যা মুসলিম বিশ্বের জন্য ক্ষতি ছাড়া কিছুই বয়ে আনছে না। তাই আমাদের উচিত কুরআন ও হাদীছ অনুযায়ী মুসলিম বিশ্বের স্বার্থে সকলে এক থাকা। আমাদের উচিত, এই মুসলিম বিশ্বকে কীভাবে এক করা যায়—তা নিয়ে চিন্তা করা। বিশেষ করে মুসলিম দেশগুলো উম্মাহর স্বার্থকে ভুলে নিজের জাতীয়তাবাদ কিংবা গণতন্ত্র পূজারি হওয়ার ফলে মুসলিম বিশ্বের এই অবস্থা।

আমাদের মুসলিম দেশগুলো আজ কেবল নিজের স্বার্থকে প্রাধান্য দিচ্ছে। ভুলে গেছে ফিলিস্তীন শব্দটির কথা। তাই আমাদের উচিত হবে, মুসলিম বিশ্বের মাঝে ঐক্য ফিরিয়ে আনা।

(২) ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা: গণতন্ত্রের দাস হয়ে বর্তমান মুসলিম বিশ্ব পশ্চিমাদের অলিখিত দাস হয়ে আছে। গণতন্ত্রের মুখে লাথি মেরে যতদিন না এই বিশ্বে ইসলামী আইন ক্বায়েম হবে, ততদিন এই বিশ্বে মুসলিমদের উপর নির্যাতন হবেই। বিশ্বে সবচেয়ে বেশি যে জাতির উপর নির্যাতন করা হচ্ছে, সেটা মুসলিম জাতি। তাই আমাদের উচিত হবে, সকলে কুরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। আজ যদি গণতন্ত্রের দাস না হয়ে বিশ্বে ইসলামী শরীআহ থাকত, তাহলে এই অত্যাচার কি কখনো হতো?

(৩) আত্মরক্ষায় অগ্রগামী হওয়া: এক্ষেত্রে প্রথমে একটা হাদীছ উল্লেখ করি। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘শক্তিশালী মুমিন দুর্বল মুমিনের তুলনায় আল্লাহর কাছে অধিক উত্তম ও প্রিয়। কিন্তু উভয়ের মধ্যেই কল্যাণ রয়েছে’।[2]

উক্ত হাদীছে শক্তিশালী বলতে কি শুধু ঈমান ও আমলকে বুঝানো হয়েছে? বিষয়টি এমন নয়। এখানে মানসিক ও শারীরিক শক্তিও উদ্দেশ্য। পাকিস্তানসহ মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মাদরাসায় কুংফু, সাঁতার, তিরন্দাজ, ঘোড়া চালনা শিখানো হচ্ছে। সাথে সাথে মুসলিম নারীদেরকেও আত্মরক্ষার স্বার্থে কুংফু শিখানো হচ্ছে। আমাদের সমাজ মনে করছে, এই ধরনের খেলা খেললেই জঙ্গি। বিষয়টি এমন হওয়ার অপরাধ আমার আপনার। আমরা এই বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলি না।

নিজের অধিকার, নিজেকে রক্ষা করা কি জঙ্গিবাদ হতে পারে? তাই আমাদের উচিত এখন থেকে আত্মরক্ষার কৌশল রপ্ত করা।

(৪) নিজস্ব মিডিয়া তৈরি করা: খুব ভারাক্রান্ত মন নিয়ে বলতে হচ্ছে, মুসলিম বিশ্বে আমাদের মিডিয়া নেই। আপনি জানলে অবাক হবেন, বর্তমান গাযায় পানি শূন্যতায় ভুগছে মুসলিমরা। বিভিন্ন মিডিয়াতে বলা হলেও ইসরাঈল ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দিচ্ছে। বাস্তবতা হলো অনুমতি দিচ্ছে। তবে, পর্যাপ্ত ত্রাণ অনুমতি দিচ্ছে না। এখনও গাযায় প্রতি ১ সপ্তাহে শুধু এক দিন পানির ট্যাংক আসে। সেই পানি সকলের জন্য পর্যাপ্ত নয়। যার ফলে গাযার মুসলিম ভাইরা লবণাক্ত পানি খাচ্ছে। গাযাতে এই অবস্থা কেন পানি নিয়ে? কারণ গাযায় বিদ্যুৎ বন্ধ করে রেখেছে ইসরাঈল। আমি এই তথ্যগুলো ফিলিস্তীনি গণমাধ্যম থেকে ব্যক্তিগতভাবে জানি গত ২ মাস ধরে। কিন্তু বিশ্ব মিডিয়া গাযার লবণাক্ত পানি ইস্যুতে ঘুমিয়ে আছে। আসলে ফিলিস্তীনে কী হচ্ছে? সেটা জানতে দিচ্ছে না ইয়াহূদীরা।

গাযার সরকারি মিডিয়া অফিসের মতে, এ পর্যন্ত ২১১ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে, ওয়াটসন ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড পাবলিক অ্যাফেয়ার্সের ‘কস্টস অফ ওয়ার’ প্রকল্পের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, গাযায় সংঘর্ষে ২৩২ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন, যা এটিকে সাংবাদিকদের জন্য ইতিহাসের সবচেয়ে প্রাণঘাতী সংঘর্ষে পরিণত করেছে। এছাড়া, কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে) জানায় যে, ২০২৪ সালে বিশ্বব্যাপী নিহত ১২৪ জন সাংবাদিকের মধ্যে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই ফিলিস্তীনি, যারা ইসরাঈল-গাযা সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন।[3]

তাই আমাদের উচিত, মুসলিম বিশ্বের জন্য সত্য প্রচারে মিডিয়া তৈরি করা। বর্তমানে কিছু মিডিয়া মুসলিমদের দখলে থাকলেও তা মোটেও যথেষ্ট নয়।

(৫) মুসলিম সেনাবাহিনী তৈরি করা: সঊদী আরব ২০১৫ সালে সারা বিশ্বের মুসলিম দেশগুলো নিয়ে মুসলিম সেনাবাহিনী করতে চাইলেও পরে সাড়া না পাওয়ায় তা হয়ে উঠেনি! অবশ্য নামকা ওয়াস্তে একটি সংগঠন করা হয় ২০১৫ সালে। সে সংগঠনটির নাম- Islamic Military Counter Terrorism Coalition (আরবী: التحالف الإسلامي العسكري لمحاربة الإرهاب)। বর্তমানে এই সংগঠনটির সদস্য ৪১টি মুসলিম দেশ।[1]

আজ পর্যন্ত মুসলিম বিশ্বের ৪১টি দেশ নিয়ে গঠিত এই সংগঠনটি ফিলিস্তীন ইস্যুতে পক্ষে বা বিপক্ষে কোনো বিবৃতি দেয়নি। সামরিক সাহায্য তো দূরের কথা সামান্য দুঃখ প্রকাশও করেনি।

মুসলিম বিশ্বের শাসকরা যেন এই গণহত্যার এক ক্ষমতাধর দর্শক! ৫৭টি মুসলিম দেশের শাসকরা যেন হাতে চুড়ি পরে বসে আছে। আজ যদি আমাদের একটি সম্মিলিত সেনাবাহিনী থাকত, তাহলে কি ইসরাঈলের মতো দেশ আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পারত? তাই ফিলিস্তীন ইস্যুতে আমাদের বড় একটি শিক্ষা হলো, মুসলিম সেনাবাহিনীর অভাব।

ফিলিস্তীন ইস্যুর মাঝে শিক্ষা ও ইতিহাসের অভাব নেই, যা ক্ষুদ্র প্রবন্ধে বিশদ আকারে আলোচনা অসম্ভব। তাই পাঠকদের প্রতি আহ্বান— আপনার অবস্থান থেকে মুসলিম ভাইদের জন্য কিছু করুন। সাধ্য অনুযায়ী ফিলিস্তীনি ভাইদের জন্য দান করুন। আর মহান রবকে বলুন, ‘হে রব! তুমি ফিলিস্তীনকে মুক্ত করো’- আমীন!

ইবনু মাসউদ

অর্গানাইজার, রেনেসাঁ লিটারেচার অ্যান্ড কালচারাল ডিপার্টমেন্ট, রেনেসাঁ ফাউন্ডেশন।


[1].https://apnews.com/article/israel-palestinians-hamas-war-lebanon-hezbollah-iran-news-11-20-2024-5da3ce43df8662fe9eeab4ad804bdc0f

[2]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৬৬৪।

[3]. https://cpj.org/2025/03/cpj-denounces-israels-killing-of-2-more-gaza-journalists-in-return-to-war/

https://www.aljazeera.com/news/2025/4/2/gaza-war-deadliest-ever-for-journalists-says-report?utm_source=chatgpt.com

https://en.mehrnews.com/news/230322/Israel-s-war-on-Gaza-killed-211-journalists-Media-Office?utm_source=chatgpt.com

[4]. https://www.reuters.com/article/world/saudi-arabia-announces-34-state-islamic-military-alliance-against-terrorism-idUSKBN0TX2PG/?utm_source=chatgpt.com

Magazine