শরীআত নির্দেশিত বৈধ অসীলা : ইসলামী শরীআতে তিন ধরনের অসীলা বৈধ, যা কুরআন ও ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত। আর তা হলো,
(ক) কৃত সৎ আমলকে অসীলা করে প্রার্থনা করা : কোনো ব্যক্তির বিপদে-আপদে বা জরুরী প্রয়োজেনে নিজের কৃত সৎ আমলকে অসীলা করে আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করা বৈধ (আল-মায়েদা, ৫/৩৫)। এ মর্মে হাদীছ এসেছে, ইবনু উমার রযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘একদা তিন ব্যক্তি পথ চলছিল, এমন সময় তারা বৃষ্টির কবলে পড়ল এবং একটি পর্বতের গুহায় আশ্রয় নিল। তৎক্ষণাৎ পর্বত হতে একখানা প্রকাণ্ড পাথর এসে গুহার মুখে পতিত হওয়ায় গুহার পথ বন্ধ হয়ে গেল। তখন তাদের একজন অপরজনকে বলল,انْظُرُوْا أَعْمَالًا عَمِلْتُمُوْهَا لِلَّهِ صَالِحَةً فَادْعُوْا اللهَ بِهَا তোমরা নিজেদের এমন কোনো নেক কাজকে স্মরণ করো, যা একমাত্র আল্লাহ তাআলার উদ্দেশ্যেই করেছ। আর সেই কাজটিকে অসীলা করে আল্লাহ তাআলার কাছে প্রার্থনা করো। আশা করা যায়, এর অসীলায় তিনি এই বিপদ দূর করে দিবেন।
অতঃপর তাদের একজন বলল, হে আল্লাহ! আমার অতি বৃদ্ধ পিতা-মাতা ছিল এবং আমার ছোট ছোট কয়টি বাচ্চাও ছিল। আমি তাদের জন্য মেষ-দুম্বা চরাতাম। আর যখন সন্ধ্যায় তাদের কাছে ফিরে আসতাম, তখন তাদের জন্য দুধ দোহন করে আনতাম। কিন্তু আমি আমার সন্তানদেরকে পান করানোর আগেই প্রথমে আমার পিতা-মাতাকে পান করাতাম। ঘটনাক্রমে একদিন চারণভূমি আমাকে দূরে নিয়ে গেল। ফলে ঘরে পৌঁছতে সন্ধ্যা হয়ে গেল, তখন আমি তাদেরকে ঘুমন্ত অবস্থায় পেলাম; কিন্তু আমি প্রতিদিনের মতো আজও দুধ দোহন করলাম এবং দুধের পাত্র নিয়ে তাদের কাছে আসলাম এবং পাত্র হাতে তাদের শিয়রের কাছে দাঁড়িয়ে রইলাম। তাদেরকে ঘুম হতে জাগানো সমীচীন মনে করলাম না। আর তাদের আগে বাচ্চাদেরকে দুধ পান করানোও কল্যাণকর মনে করলাম না। অথচ বাচ্চাগুলো (ক্ষুধার তাড়নায়) আমার পায়ের কাছে কাঁদছিল। ভোর পর্যন্ত আমার ও তাদের অবস্থা এভাবে বিদ্যমান ছিল। (অবশেষে ঘুম হতে জাগার পর তাদেরকেই আগে দুধপান করালাম)। হে আল্লাহ! যদি তুমি জানো যে, এই কাজটি আমি একমাত্র তোমার সন্তুষ্টির জন্য করেছিলাম, তাহলে এর অসীলায় আমাদের জন্য এতটুকু পথ করে দাও, যেন আকাশ দেখতে পাই। তখন আল্লাহ তাআলা পাথরটিকে এই পরিমাণ সরিয়ে দিলেন যে, তারা আকাশ দেখতে পেল।
দ্বিতীয়জন বলল, আমার এক চাচাত বোন ছিল, তাকে আমি অত্যধিক ভালোবাসতাম, যতটা পুরুষেরা মহিলাদেরকে ভালোবাসতে পারে। আমি তাকে উপভোগ করতে চেয়েছিলাম। সে তা অস্বীকার করল, যে পর্যন্ত না আমি তাকে ১০০ দীনার প্রদান করি। অতঃপর আমি চেষ্টা করতে লাগলাম। অবশেষে ১০০ দীনার সংগ্রহ করে তার সাথে সাক্ষাৎ করলাম। তারপর যখন আমি তার দুই পায়ের মধ্যখানে বসলাম, সে বলল,يَا عَبْدَ اللهِ اتَّقِ اللهَ وَلَا تَفْتَحِ الْخَاتَمَ فَقُمْتُ عَنْهَا ‘হে আল্লাহর বান্দা! আল্লাহ তাআলাকে ভয় করো, মোহর খুলে দিয়ো না (অর্থাৎ আমার কুমারিত্ব নষ্ট করো না)’। তৎক্ষণাৎ আমি তাকে ছেড়ে উঠে দাঁড়ালাম। হে আল্লাহ! যদি তুমি জানো, এই কাজ আমি একমাত্র তোমার সন্তুষ্টির জন্য করেছি, তবে আমাদের জন্য তার অসীলায় পথ প্রশস্ত করে দাও। তখন আল্লাহ তাআলা তাদের জন্য পাথরটি আরও কিছু সরিয়ে দিলেন।
তৃতীয়জন বলল, হে আল্লাহ! আমি এক ব্যক্তিকে এক ‘ফারক’ (টুকরী) পরিমাণ চাউলের বিনিময়ে শ্রমিক নিয়োগ করেছিলাম। যখন সে কাজ সম্পাদন করল, তখন বলল, আমাকে আমার প্রাপ্য দিয়ে দাও। আমি তার পাওনা তাকে পেশ করলাম। সে অবহেলা করে তা ফেলে চলে গেল, অবশেষে আমি তাকে চাষাবাদে লাগালাম এবং পরিশেষে তা দ্বারা (বর্ধিত করতে করতে) অনেকগুলো গরু ও রাখাল যোগাড় করলাম। এরপর একদা সে আমার কাছে আসল এবং বলল, আল্লাহ তাআলাকে ভয় করো, আমার উপর অবিচার করো না। আমাকে আমার পাওনা দিয়ে দাও। আমি বললাম, এই গরুগুলো এবং তার রাখালগুলো নিয়ে যাও। (এইগুলো সমুদয় তোমারই)। সে বলল, আল্লাহ পাককে ভয় করো, আমার সাথে উপহাস করো না। তখন আমি বললাম, আমি তোমার সাথে ঠাট্টা করছি না। ঐ গরুগুলো রাখালসহ নিয়ে যাও। অতঃপর সে ঐগুলো নিয়ে চলে গেল। হে আল্লাহ! যদি তুমি জানো যে, এই কাজটি আমি তোমার ভয় ও সন্তুষ্টির জন্যই করেছিলাম, তবে তার অসীলায় পাথরের অবশিষ্টাংশ খুলে দাও। অতঃপর আল্লাহ তাআলা পাথরখানি সরিয়ে অবশিষ্ট অংশ উন্মুক্ত করে দিলেন’।[1]
(খ) আল্লাহর গুণবাচক নামসমূহের অসীলায় দু‘আ করা : আল্লাহর গুণবাচক নামসমূহ দ্বারা দু‘আ করা বৈধ। বরং তাঁর নামে দু‘আ করাই উচিত। আল্লাহ বলেন, وَلِلهِ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَى فَادْعُوْهُ بِهَا ‘আল্লাহর অনেক সুন্দর সুন্দর নাম রয়েছে। অতএব তোমরা সেগুলো দ্বারা তাঁকে ডাকো’ (আল-আ‘রাফ, ৭/১৮০)।
عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ رضي الله عنه أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِنَّ لِلَّهِ تِسْعَةً وَتِسْعِينَ اسْمَا مِائَةً إِلاَّ وَاحِدًا مَنْ أَحْصَاهَا دَخَلَ الْجَنَّةَ.
আবু হুরায়রা রযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহর নিরানব্বইটি এক কম একশতটি নাম রয়েছে। যে তা স্মরণ করবে সে জান্নাতে যাবে’।[2]
বুরায়রা রযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে এরূপ বলতে শুনলেন, اللَّهُمَّ إِنِّى أَسْأَلُكَ بِأَنِّى أَشْهَدُ أَنَّكَ أَنْتَ اللَّهُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ الأَحَدُ الصَّمَدُ الَّذِى لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করি এবং জানি যে, তুমিই আল্লাহ। তুমি ব্যতীত কোনো মা‘বূদ নেই। তুমি এক, অনন্য ও অমুখাপেক্ষী যিনি কাউকে জন্ম দেননি আর তাকেও কেউ জন্ম দেয়নি এবং যাঁর কোনো সমকক্ষ নেই’। তখন রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে আল্লাহকে তাঁর ইসমে আযম তথা সর্বাধিক বড় ও সম্মানিত নামের মাধ্যমে ডাকল, যা দ্বারা যখন কেউ তাঁর নিকট কিছু চায়, তিনি তাকে তা দান করেন। আর যা দ্বারা যখন কেউ তাঁকে ডাকে, তিনি তার ডাকে সাড়া দেন।[3]
(গ) জীবিত তাক্বওয়াশীল ব্যক্তির মাধ্যমে দু‘আ চাওয়া : কোনো জীবিত তাক্বওয়াশীল ব্যক্তির মাধ্যমে আল্লাহর নিকট কিছু চাওয়া বা দু‘আ-প্রার্থনা করা বৈধ। এ বিষয়ে হাদীছে স্পষ্ট ইঙ্গিত রয়েছে। যেমন-
عَنْ أَنَسٍ أَنَّ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ رضي الله عنه كَانَ إِذَا قَحَطُوْا اسْتَسْقَى بِالْعَبَّاسِ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ فَقَالَ اللَّهُمَّ إِنَّا كُنَّا نَتَوَسَّلُ إِلَيْكَ بِنَبِيِّنَا فَتَسْقِينَا وَإِنَّا نَتَوَسَّلُ إِلَيْكَ بِعَمِّ نَبِيِّنَا فَاسْقِنَا قَالَ فَيُسْقَوْنَ.
আনাস রযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, মানুষ যখন দুর্ভিক্ষের মাঝে পড়ত, তখন উমার রযিয়াল্লাহু আনহু আব্বাস ইবনে আব্দুল মুত্তালিব রযিয়াল্লাহু আনহু-এর মাধ্যমে পানি প্রার্থনা করতেন। তিনি বলতেন, হে আল্লাহ! আমরা আপনার কাছে পানি প্রার্থনা করতাম আপনার নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মাধ্যমে। আপনি আমাদের পানি দিতেন। এখন আমরা আমাদের নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চাচার মাধ্যমে পানি প্রার্থনা করছি। আপনি আমাদেরকে পানি দান করুন। রাবী বলেন, অতঃপর পানি হতো।[4]
সুধী পাঠক! কোনো মানুষ যেন শিরকী অসীলা ধরতে না পারে, সে বিষয়ে সকল নবী-রাসূল আলাইহিমুস সালাম সোচ্চার ছিলেন। তারা সকলে শিরকের শিখণ্ডীগুলো ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছেন। পৃথিবীর শুরু থেকেই প্রত্যেক নবী ও রাসূল আলাইহিমুস সালাম আপসহীনভাবে শিরকের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন। প্রয়োজনে স্বীয় জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন, কিন্তু শিরকের সাথে সমোঝতা করেননি। যেমন নূহ আলাইহিস সালাম অলীদের নামে তৈরিকৃত মূর্তির সাহচর্য ত্যাগ করতে বলেছেন।[5] মূসা আলাইহিস সালাম শিরককে প্রত্যাখ্যান করতে স্বীয় উম্মতকে নছীহত করেন।[6] ইবরাহীম আলাইহিস সালাম স্বীয় বংশধরের তৈরিকৃত মূর্তি ভেঙে চুরমার করে দিয়েছিলেন।[7] অনুরূপই মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও মক্কা বিজয়ের দিন কা‘বা ঘরের মূর্তিগুলোকে ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছিলেন। যেমনটি হাদীছে বিধৃত হয়েছে-
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ رضي الله عنه قَالَ دَخَلَ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَكَّةَ وَحَوْلَ الْبَيْتِ سِتُّونَ وَثَلاَثُمِائَةِ نُصُبٍ فَجَعَلَ يَطْعُنُهَا بِعُودٍ فِى يَدِهِ وَيَقُوْلُ (جَاءَ الْحَقُّ وَزَهَقَ الْبَاطِلُ إِنَّ الْبَاطِلَ كَانَ زَهُوقًا) (جَاءَ الْحَقُّ وَمَا يُبْدِئُ الْبَاطِلُ وَمَا يُعِيدُ).
আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ রযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, (মক্কা বিজয়ের দিন) রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মক্কায় প্রবেশ করলেন, তখন কা‘বা ঘরের চারপাশে ৩৬০টি মূর্তি ছিল। তখন তিনি তাঁর হাতের ছড়ি দিয়ে এগুলোকে আঘাত করতে লাগলেন এবং বলতে লাগলেন, ‘সত্য এসেছে আর মিথ্যা অপসারিত হয়েছে। মিথ্যা তো ধ্বংস হওয়ারই’ (বানী ইসরাঈল, ১৭/৮১)। ‘সত্য এসেছে আর অসত্য না পারে নতুন কিছু সৃষ্টি করতে এবং না পারে পুনরাবৃত্তি করতে’।[8]
অপর এক হাদীছে রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আমাকে পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছে মূর্তি ভাঙার জন্য এবং আল্লাহর তাওহীদ প্রতিষ্ঠা করার জন্য, যেন তাঁর সাথে কোনো কিছুকে শরীক না করা হয়’।[9] অন্য হাদীছে এসেছে,
عَنْ أَبِى الْهَيَّاجِ الأَسَدِىِّ رضي الله عنه قَالَ قَالَ لِىْ عَلِىُّ بْنُ أَبِىْ طَالِبٍ أَلاَّ أَبْعَثُكَ عَلَى مَا بَعَثَنِىْ عَلَيْهِ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ لاَّ تَدَعَ تِمْثَالاً إِلاَّ طَمَسْتَهُ وَلاَ قَبْرًا مُشْرِفًا إِلاَّ سَوَّيْتَهُ
আবুল হাইয়াজ রযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আলী রযিয়াল্লাহু আনহু একদা আমাকে বলেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে যে জন্য পাঠিয়েছিলেন, আমি কি তোমাকে সে জন্য পাঠাব না? তিনি বলেছিলেন, ‘তুমি কোনো মূর্তি না ভেঙ্গে ছেড়ে দিবে না এবং কোন উঁচু কবর ছেড়ে দিবে না, যতক্ষণ তা ভেঙে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে না দিবে’।[10]
عَنْ نَافِعٍ قَالَ بَلَغَ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ رضي الله عنه أَنَّ أُنَاسًا يَأْتُوْنَ الشَّجَرَةَ الَّتِىْ بُوْيِعَ تَحْتَهَا قَالَ فَأَمَرَ بِهَا فَقُطِعَتْ
নাফে‘ রযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, উমার রযিয়াল্লাহু আনহু এ মর্মে জানতে পারলেন যে, যে গাছের নিচে রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বায়আত নিয়েছিলেন, ঐ গাছের কাছে মানুষ ভিড় করছে। তখন তিনি তা ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিলেন।[11] উল্লেখ্য, শয়তানের পরামর্শেই মূর্তি ও প্রতিকৃতি পূজার সূচনা হয়েছে।
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ صَارَتِ الأَوْثَانُ الَّتِى كَانَتْ فِى قَوْمِ نُوحٍ فِى الْعَرَبِ بَعْدُ أَمَّا وُدٌّ كَانَتْ لِكَلْبٍ بِدَوْمَةِ الْجَنْدَلِ وَأَمَّا سُوَاعٌ كَانَتْ لِهُذَيْلٍ وَأَمَّا يَغُوثُ فَكَانَتْ لِمُرَادٍ ثُمَّ لِبَنِى غُطَيْفٍ بِالْجُرُفِ عِنْدَ سَبَا وَأَمَّا يَعُوقُ فَكَانَتْ لِهَمْدَانَ وَأَمَّا نَسْرٌ فَكَانَتْ لِحِمْيَرَ لآلِ ذِى الْكَلاَعِ أَسْمَاءُ رِجَالٍ صَالِحِينَ مِنْ قَوْمِ نُوحٍ فَلَمَّا هَلَكُوا أَوْحَى الشَّيْطَانُ إِلَى قَوْمِهِمْ أَنِ انْصِبُوا إِلَى مَجَالِسِهِمُ الَّتِى كَانُوا يَجْلِسُونَ أَنْصَابًا وَسَمُّوهَا بِأَسْمَائِهِمْ فَفَعَلُوا فَلَمْ تُعْبَدْ حَتَّى إِذَا هَلَكَ أُولَئِكَ وَتَنَسَّخَ الْعِلْمُ عُبِدَتْ.
ইবনু আব্বাস রযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, যে মূর্তির পূজা নূহ আলাইহিস সালাম-এর যুগে চালু ছিল, পরবর্তী সময়ে আরবদের মাঝেও তার পূজা প্রচলিত হয়েছিল। ‘ওয়াদ’ দুমাতুল জান্দাল নামক জায়গায় কালব গোত্রের একটি দেবমূর্তি। ‘সূওয়া‘’ হলো, হুযায়ল গোত্রের একটি দেবমূর্তি এবং ‘ইয়াগূছ’ ছিল মুরাদ গোত্রের, অবশ্য পরবর্তীতে তা গুতায়ফ গোত্রের হয়ে যায়। এর আস্তানা ছিল ক্বওমে সাবার নিকটবর্তী জাওফ নামক স্থান। ‘ইয়াঊক্ব’ ছিল হামাদান গোত্রের দেবমূর্তি, ‘নাসর’ ছিল যুলকালা‘ গোত্রের হিময়ার শাখার মূর্তি। এসব আসলে নূহ আলাইহিস সালাম-এর সম্প্রদায়ের কতিপয় সৎ লোকের নাম। তারা মারা গেলে শয়তান তাদের ক্বওমের লোকদের অন্তরে একথা ঢেলে দিল যে, তারা যেখানে বসে মজলিস করত, সেখানে তোমরা কতিপয় মূর্তি স্থাপন করো এবং ঐ সমস্ত পুণ্যবান লোকের নামেই এগুলোর নামকরণ করো। কাজেই তারা তাই করল, কিন্তু তখনো ঐসব মূর্তির পূজা করা হতো না। তবে মূর্তি স্থাপনকারী লোকগুলো মারা গেলে এবং মূর্তিগুলোর ব্যাপারে সত্যিকারের জ্ঞান বিলুপ্ত হলে লোকজন তাদের পূজা আরম্ভ করে দেয়’।[12]
তাই আমাদের উচিত, সব ধরনের অবৈধ অসীলা চিরতরের জন্য বর্জন করা। আর বৈধ অসীলা গ্রহণ করা। পাশাপাশি সকল প্রকার শিরক পরিহার করে খালেছ তাওহীদ ভিত্তিক আক্বীদা সুদৃঢ় করা। শিরকমুক্ত আক্বীদা পোষণ করে জান্নাতের পথিক হওয়া।
(চলবে)
ড. ইমামুদ্দীন বনি আব্দুল বাছীর
শিক্ষক, আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ, ডাঙ্গীপাড়া, পবা, রাজশাহী।
[1]. ছহীহ বুখারী, হা/২৩৩৩, ৫৯৭৪; ছহীহ মুসলিম, হা/৭১২৫; ছহীহুল জামে‘, হা/২৮৭০; ছহীহ আত-তারগীব, হা/২৪৭৯; মিশকাত, হা/৪৯৩৮।
[2]. ছহীহ বুখারী, হা/২৭৩৬; ছহীহ মুসলিম, হা/৬৯৮৬; তিরমিযী, হা/৩৫০৬; ইবনু মাজাহ, হা/৩৮৬০; আহমাদ, হা/১০৬৯৬; ত্বাবারানী, হা/৯৮১; মিশকাত, হা/২২৮৭।
[3]. আবূ দাঊদ, হা/১৪৯৩; তিরমিযী, হা/৩৪৭৫; ইবনু মাজাহ, হা/৩৮৫৭; আহমাদ, হা/২৩০১৫; ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৮৯১; মিশকাত, হা/২২৮৯, সনদ ছহীহ।
[4]. ছহীহ বুখারী, হা/১০১০; ইবনু হিব্বান, হা/২৮৬১; বায়হাক্বী কুবরা, হা/৬২২০; কানযুল উম্মাল, হা/৩৭২৯৬; আল-মুসনাদুল জামে‘, হা/১০৪৭৬; মিশকাত, হা/১৫০৯।
[5]. সূরা নূহ, ৭১/২৩।
[6]. সূরা আল-আ‘রাফ, ৭/১৩৮; তিরমিযী, হা/২১০৬, সনদ ছহীহ।
[7]. সূরা আছ-ছাফফাত, ৩৭/৯৩।
[8]. ছহীহ বুখারী, হা/৪৭২০; ছহীহ মুসলিম, হা/৪৭২৫; তিরমিযী, হা/৩১৩৮; আহমাদ, হা/৩৫৮৪; ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৬৫২২; ত্বাবারানী আওসাত্ব, হা/৩১৬।
[9]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৯৬৭; বায়হাক্বী কুবরা, হা/৪১৭৮।
[10]. ছহীহ মুসলিম, হা/২২৮৭; আহমাদ, হা/৭৪১; মুসতাদরাকে হাকেম, হা/১৩৬৬; ইরওয়াউল গালীল, হা/১৫৩০; আল-মুসনাদুল জামে‘, হা/১০০৮১; মিশকাত, হা/১৬৯৬।
[11]. মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ, হা/৭৫৪৫, ৭৬২৭; তাহযীরুস সাজেদ, পৃ. ৮৩।
[12]. সূরা নূহ, ৭১/২৩; ছহীহ বুখারী, হা/৪৯২০; তাফসীরে ইবনু কাছীর, ৮/২৩৫।