কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

ইসলামে বায়‘আত

post title will place here

ভূমিকা: বায়‘আত ছাড়া ইমামত ও খেলাফত বা রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হওয়া সম্ভব নয়। আর ইমামত, খেলাফত বা রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত না হলে দেশ ও জনগণের কী ভয়াবহ পরিণতি হতে পারে, তা খুব সহজেই অনুমেয়। বায়‘আত ছাড়া জনগণের শান্তি, শৃঙ্খলা, সমৃদ্ধি সবকিছুই অধরা রয়ে যাবে। বায়‘আত ও ইমামত ছাড়া সমাজে অন্যায়-অনাচার, যুলম-অবিচার, ফেতনা-ফাসাদের কালো মেঘ নেমে আসবে। বায়‘আত ও খেলাফত ছাড়া মানুষের অধিকারসমূহ ভূলুণ্ঠিত হবে। মানুষের জান, মাল ও সম্মানের হানি হবে। বায়‘আতের মাধ্যমে স্থিতিশীল পরিবেশের অবর্তমানে বহু সংখ্যক মানুষ বন্য হয়ে যাবে। এটা ছাড়া ইসলামের সর্বোচ্চ চূড়া জিহাদসহ শরী‘আতের নানা দণ্ডবিধি ও হুকুম-আহকাম বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না; নিশ্চিন্তে-নির্বিঘ্নে মহান আল্লাহর ইবাদত করা যাবে না। মু‘আমালাত বা দুনিয়াবী লেনদেনের স্বাভাবিক গতি ব্যাহত হবে। এককথায়, দুনিয়াবী শান্তি ও পরকালীন মুক্তির রসদ বায়‘আত ও খেলাফতের মধ্যেই নিহিত রয়েছে। সেকারণে মহান আল্লাহ শাসকশ্রেণির আনুগত্য করতে বলেছেন। তিনি বলেন,يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য করো এবং আনুগত্য করো রাসূলের ও তোমাদের মধ্যকার কর্তৃস্থানীয় ব্যক্তিগণের’ (আন-নিসা, ৪/৫৯)। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বায়‘আতের সর্বোচ্চ গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, مَنْ مَاتَ وَلَيْسَ فِي عُنُقِهِ بَيْعَةٌ، مَاتَ مِيتَةً جَاهِلِيَّةً ‘যে ব্যক্তি এমন অবস্থায় মারা যাবে যে, তার কাঁধে কোনো বায়‘আত নেই, তার মৃত্যু হবে জাহেলী মৃত্যু’।[1]

কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে, দক্ষিণ এশিয়ার বেশ কিছু দেশে, বিশেষ করে বাংলাদেশে এই বায়‘আত নিয়ে আছে এক ধরনের ধোঁয়াশা ও বিভ্রান্তি। আরো দুঃখের বিষয় হচ্ছে, বিভিন্ন বিভ্রান্ত ছূফী তরীক্বা ও দল-মতের মাঝে বায়‘আতের ব্যাপক চর্চা থাকলেও তার দুর্গন্ধ হাওয়া আমাদেরকেও স্পর্শ করেছে। ফলে বায়‘আত সম্পর্কিত আয়াত ও হাদীছগুলো এ অঞ্চলে খুবই নির্যাতিত (!) এ বিষয়ক আয়াত ও হাদীছগুলো নিজেদের মতো করে ও নিজেদের পক্ষে ব্যাখ্যা করে অনেকেই ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, দেদারসে বায়‘আত গ্রহণ করছেন! চারিদিকে মনে হচ্ছে বায়‘আতের হিড়িক পড়েছে!

মূলত বায়‘আতসহ ইসলামের প্রতিটি বিষয়ের ব্যাখ্যা সালাফে ছালেহীন থেকেই নিতে হবে আর কুরআন ও হাদীছের বক্তব্য সালাফে ছালেহীনের বুঝ অনুযায়ী ব্যাখ্যা করার মধ্যেই প্রকৃত ইসলাম নিহিত রয়েছে। এ লেখাটিতে বায়‘আতের সঠিক ও নিরপেক্ষ ব্যাখ্যা তুলে ধরার প্রয়াস চালানো হয়েছে, যাতে ইসলামের সব ব্যাপারে সঠিক ব্যাখ্যা আমরা জানতে পারি ও মানতে পারি। সাথে সাথে আমাদের মধ্যে বিদ্যমান ভুলভ্রান্তিও দূর করতে পারি। আর সেটাই সবার ব্রতী হওয়া উচিত। এখানে কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, দল বা মতকে আঘাত দেওয়া মোটেও উদ্দেশ্য নয়। অন্তরের খবর আমার রবই ভালো জানেন।

মহান আল্লাহ এ ক্ষুদ্র প্রয়াসটুকু কবুল করুন। আমীন!

বায়‘আতের সংজ্ঞা: আভিধানিক অর্থে বায়‘আত (الْبَيْعَةُ) শব্দটি বায়‘উন (بَيْعٌ) মূলধাতু থেকে এসেছে, যার অর্থ— ক্রয়-বিক্রয় করা, চুক্তি বা শপথ করা। যেন চুক্তি সম্পন্নকারী উভয় পক্ষ পরস্পরের কাছে নিজের জিনিসটি বিক্রি করে দেয়, আনুগত্য হস্তান্তর করে, নিজেকে উজাড় করে দেয়।[2]

পরিভাষায়— এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ঐতিহাসিক ইবনে খালদূন রাহিমাহুল্লাহ বলেন, أَنَّ اَلْبَيْعَةَ هِيَ اَلْعَهْدُ عَلَى اَلطَّاعَةِ كَأَنَّ اَلْمُبَايِعَ يُعَاهِدُ أَمِيرَهُ عَلَى أَنَّهُ يُسَلِّمُ لَهُ اَلنَّظَرَ فِي أَمْرِ نَفْسِهِ وَأُمُوْرِ الْمُسْلِمِيْنَ لَا يُنَازِعُهُ فِي شَيْءِ مِنْ ذَلِكَ، وَيُطِيْعُهُ فِيْمَا يُكَلِّفُهُ بِهِ مِنَ الْأَمْرِ عَلَى الْمَنْشَطِ وَالْمَكْرَهِ وَكَانُوْا إِذَا بَايَعُوا الْأَمِيْرُ وَعَقَدُوْا عَهْدَهُ جَعَلُوْا أَيْدِيَهُمْ فِيْ يَدِهِ تَأْكِيْدًا لِلْعَهْدِ فَأَشْبَهَ ذَلِكَ فِعْلَ اَلْبَائِعِ وَالْمُشْتَرِي فَسُمِّيَ بَيْعَةً ‘আনুগত্যের চুক্তি, শপথ বা অঙ্গীকারকে বায়‘আত বলা হয়। যেন বায়‘আতদাতা তার আমীরকে এমন অধিকার দিচ্ছে যে, তিনি তার ও মুসলিমদের ব্যাপারে লক্ষ্য রাখবেন। এ ব্যাপারে সে আমীরের বিরুদ্ধাচরণ করবে না; বরং সুখে-দুখে তার অনুসরণ করবে। তারা যখন আমীরের কাছে শপথ করত, তখন চুক্তিকে জোরদার করার জন্য তাদের হাতকে আমীরের হাতে রাখত, ঠিক ক্রেতা-বিক্রেতার মতো। একারণেই একে বায়‘আত বলা হয়’।[3]

বায়‘আতের উক্ত সংজ্ঞা ও অন্যান্য সংজ্ঞা থেকে এর যে মর্মার্থ দাঁড়ায়, তা হচ্ছে— গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ সরাসরি রাষ্ট্রপ্রধানের হাতে হাত রেখে সুখে-দুখে তাকে মেনে চলার অঙ্গীকার করবেন, সাধারণ জনগণও দূর থেকে তাঁকে সমর্থন করবেন এবং মেনে চলবেন। অপরপক্ষে, রাষ্ট্রপ্রধানও কুরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী চলবেন। তিনি তাঁর দায়িত্ব আমানতের সাথে পালন করবেন এবং দেশ ও জনগণের অধিকার রক্ষায় কাজ করবেন। এই যে মেনে নেওয়া ও পরস্পর পরস্পরের অধিকার রক্ষার প্রতি সচেষ্ট থাকা— মূলত এটাই বায়‘আতের মর্মকথা।

বায়‘আতের প্রকার: কখনও ব্যক্তি আবার কখনও বিষয়বস্তু এ দুই দিক বিবেচনায় বায়‘আতের অনেক প্রকার হতে পারে। এখানে বায়‘আতের প্রকারসমূহ পেশ করে কলেবর বৃদ্ধি করতে চাই না। বরং রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেসব বিষয়ে বায়‘আত গ্রহণ করেছিলেন, তার কয়েকটি এখানে তুলে ধরা হলো।

() ইসলাম মেনে চলার বায়আত: এটি বায়‘আতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রকার। এ প্রকারের বায়‘আত সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন,يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِذَا جَاءَكَ الْمُؤْمِنَاتُ يُبَايِعْنَكَ عَلَى أَنْ لَا يُشْرِكْنَ بِاللَّهِ شَيْئًا وَلَا يَسْرِقْنَ وَلَا يَزْنِينَ وَلَا يَقْتُلْنَ أَوْلَادَهُنَّ وَلَا يَأْتِينَ بِبُهْتَانٍ يَفْتَرِينَهُ بَيْنَ أَيْدِيهِنَّ وَأَرْجُلِهِنَّ وَلَا يَعْصِينَكَ فِي مَعْرُوفٍ فَبَايِعْهُنَّ وَاسْتَغْفِرْ لَهُنَّ اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَحِيمٌ ‘হে নবী! যখন মুমিন নারীগণ আপনার কাছে এসে এ মর্মে বায়‘আত করে যে, তারা আল্লাহর সাথে কোনো কিছুর শরীক করবে না, চুরি করবে না, ব্যভিচার করবে না, নিজেদের সন্তানদের হত্যা করবে না, তারা জেনেশুনে কোনো অপবাদ রচনা করে রটাবে না এবং সৎকাজে তারা আপনার অবাধ্য হবে না, তখন আপনি তাদের বায়‘আত গ্রহণ করুন এবং তাদের জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করুন। নিশ্চয় আল্লাহ অতিশয় ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’ (আল-মুমতাহিনা, ৬০/১২)। জারীর রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন,بَايَعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى شَهَادَةِ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ، وَإِقَامِ الصَّلاَةِ، وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ، وَالسَّمْعِ وَالطَّاعَةِ، وَالنُّصْحِ لِكُلِّ مُسْلِمٍ ‘আমি রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এ মর্মে বায়‘আত করেছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো (হক্ব) মা‘বূদ নেই এবং মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল— এ বাণীর সাক্ষ্য দেওয়া, ছালাত প্রতিষ্ঠা করা, যাকাত দেওয়া, আনুগত্য করা এবং প্রত্যেক মুসলিমের জন্য কল্যাণ কামনা করা বা নছীহত করা’।[4]

() সাহায্য-সহযোগিতা ও প্রতিরক্ষার বায়আত: যেমনটি আনছার ছাহাবীগণ মিনায় দ্বিতীয় আক্বাবার বায়‘আতে রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সহযোগিতা করার এবং প্রতিরক্ষার ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে বায়‘আত করেছিলেন। সেই বায়‘আতে রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন,وَعَلَى أَنْ تَنْصُرُونِي إِذَا قَدِمْتُ يَثْرِبَ، فَتَمْنَعُونِي مِمَّا تَمْنَعُونَ مِنْهُ أَنْفُسَكُمْ وَأَزْوَاجَكُمْ وَأَبْنَاءَكُمْ وَلَكُمُ الْجَنَّةُ ‘যখন আমি ইয়াছরিবে আগমন করব, তখন তোমরা আমাকে সাহায্য করবে। সেসব অনিষ্ট থেকে তোমরা আমার প্রতিরক্ষার ব্যবস্থা করবে, যা থেকে তোমরা তোমাদের নিজেদের, তোমাদের স্ত্রীদের এবং তোমাদের সন্তানদের প্রতিরক্ষার ব্যবস্থা করে থাকো। আর (এর বিনিময়ে) তোমাদের জন্য রয়েছে জান্নাত’।[5]

() জিহাদ করার বায়আত: মহান আল্লাহ বলেন,لَقَدْ رَضِيَ اللَّهُ عَنِ الْمُؤْمِنِينَ إِذْ يُبَايِعُونَكَ تَحْتَ الشَّجَرَةِ فَعَلِمَ مَا فِي قُلُوبِهِمْ فَأَنْزَلَ السَّكِينَةَ عَلَيْهِمْ وَأَثَابَهُمْ فَتْحًا قَرِيبًا-وَمَغَانِمَ كَثِيرَةً يَأْخُذُونَهَا وَكَانَ اللَّهُ عَزِيزًا حَكِيمًا ‘অবশ্যই আল্লাহ মুমিনদের উপর সন্তুষ্ট হয়েছেন, যখন তারা গাছের নিচে আপনার হাতে বায়‘আত গ্রহণ করেছিলেন। আল্লাহ জানতেন তাদের অন্তরে কী আছে, এজন্য তিনি তাদের উপর প্রশান্তি অবতীর্ণ করলেন আর পুরস্কার হিসেবে তাদেরকে দিলেন আসন্ন বিজয় এবং বিপুল পরিমাণ যুদ্ধলব্ধ সম্পদ, যা তারা গ্রহণ করবেন। আর আল্লাহ হলেন মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।’ (আল-ফাতহ, ৪৮/১৮-১৯)। আনাস ইবনু মালেক রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আনছার ছাহাবীগণ খন্দকের যুদ্ধের দিন আবৃত্তি করছিলেন, نَحْنُالَّذِينَبَايَعُوامُحَمَّدًا عَلَى الإِسْلاَمِ مَا بَقِينَا أَبَدًا ‘আমরাই হচ্ছি সে সকল লোক, যারা রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাতে জিহাদ করার বায়‘আত গ্রহণ করেছি, যতদিন আমরা বেঁচে থাকব’। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তদুত্তরে বলেন,اللَّهُمَّ لاَ عَيْشَ إِلاَّ عَيْشُ الآخِرَهْ فَأَكْرِمِ الأَنْصَارَ وَالْمُهَاجِرَهْ ‘হে আল্লাহ! আখেরাতের সুখ হচ্ছে প্রকৃত সুখ। সুতরাং আপনি আনছার ও মুহাজিরগণকে সম্মানিত করুন’।[6]

() হিজরত করার বায়আত: মক্কা বিজয়ের মধ্য দিয়ে মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু কাফের রাষ্ট্র থেকে ইসলামী রাষ্ট্রে হিজরতের বিষয়টি ক্বিয়ামত পর্যন্ত অবশিষ্ট থাকবে। মুজাশে‘ ইবনে মাসঊদ আস-সুলামী রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি আমার ভাই আবু মা‘বাদকে নিয়ে রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আসলাম। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! একে আপনি হিজরত করার বায়‘আত নিন। তিনি বললেন, قَدْ مَضَتِ الْهِجْرَةُ بِأَهْلِهَا ‘যারা হিজরত করেছে, তাদেরকে নিয়ে হিজরত শেষ হয়ে গেছে’। আমি বললাম, তাহলে কোন ব্যাপারে তার বায়‘আত নিবেন? তিনি বললেন,عَلَى الْإِسْلَامِ وَالْجِهَادِ وَالْخَيْرِ ‘ইসলাম, জিহাদ ও কল্যাণকর কাজে’।[7]

() আনুগত্যের বায়আত: এই বায়‘আত রাষ্ট্রপ্রধানগণের সাথে সম্পর্কিত। সাধারণত বায়‘আত বললে এই প্রকারকেই বুঝায়। উবাদাহ ইবনুছ ছমেত রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন,بَايَعْنَا رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى السَّمْعِ وَالطَّاعَةِ فِي الْعُسْرِ وَالْيُسْرِ، وَالْمَنْشَطِ وَالْمَكْرَهِ، وَعَلَى أَثَرَةٍ عَلَيْنَا، وَعَلَى أَنْ لَا نُنَازِعَ الْأَمْرَ أَهْلَهُ، وَعَلَى أَنْ نَقُولَ بِالْحَقِّ أَيْنَمَا كُنَّا، لَا نَخَافُ فِي اللهِ لَوْمَةَ لَائِمٍ ‘আমরা রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম–এর নিকট এ মর্মে বায়‘আত গ্রহণ করেছি যে, দুখে-সুখে, অনুরাগ-বিরাগে এবং আমাদের উপর অন্যকে প্রাধান্য দেওয়ার সময় সর্বদা আমরা আনুগত্য করব। আর এ মর্মে বায়‘আত গ্রহণ করেছি যে, যোগ্য ব্যক্তির আনুগত্য করার ব্যাপারে আমরা পরস্পর দ্বন্দ্বে জড়াবো না, আমরা যেখানেই থাকি, হক্ব কথা বলব এবং আল্লাহর ব্যাপারে কোনো নিন্দুকের নিন্দার তোয়াক্কা করব না’।[8]

এছাড়া আরো বহু বিষয়ে নারী-পুরুষ ছাহাবায়ে কেরাম n রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম–এর নিকট বায়‘আত গ্রহণ করেছিলেন।[9]

(ইনশা-আল্লাহ চলবে)

আব্দুল আলীম ইবনে কাওছার মাদানী

 বি. এ. (অনার্স), উচ্চতর ডিপ্লোমা, এম. এ. এবং এম.ফিল., মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সঊদী আরব;
অধ্যক্ষ, আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ, রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ।


[1]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৭১৭০, ২১৫৬।

[2]. ইবনু মানযূর, লিসানুল আরাব (বৈরূত: দারু ছাদের, প্রকাশকাল: ১৪১৪ হি.), ৮/২৬।

[3]. ইবনে খালদূন, তারীখ ইবনে খালদূন, (বৈরূত: দারুল ফিকর, ২য় প্রকাশ: ১৪০৮ হি./১৯৮৮ খৃ.), পৃ. ২৬১।

[4]. ছহীহ বুখারী, হা/২১৫৭।

[5]. মুসনাদে আহমাদ, হা/১৪৬৫৩, ‘ছহীহ’।

[6]. ছহীহ বুখারী, হা/২৯৬১; ছহীহ মুসলিম, হা/১৮০৫।

[7]. ছহীহ বুখারী, হা/৪৩০৫; ছহীহ মুসলিম, হা/১৮৬৩।

[8]. ছহীহ বুখারী, হা/৭০৫৬; ছহীহ মুসলিম, হা/১৭০৯।

[9]. দ্রষ্টব্য: মুহাম্মাদ ইবনে ইবরাহীম আত-তুওয়াইজিরী, মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিল ইসলামী, ৫/৩০৪-৩০৫; আহমাদ মাহমূদ আলে মাহমূদ, আল-বায়‘আতু ফিল ইসলাম, পৃ. ৬৭-১৩১।

Magazine