ইসলাম আমাদের সম্প্রীতি ও সহমর্মিতা শিক্ষা দেয়। রামাযানের এক মাস ছিয়াম সাধনার পর আসে পবিত্র ঈদুল ফিতর। ধনী-গরীব সকলে মিলে যেন সমানভাবে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারে, সেজন্য ইসলাম ব্যবস্থা করেছে ছাদাক্বাতুল ফিতর নামে একটি দানের খাত। এই দানকে যাকাতুল ফিতরও বলা হয়। আজ আমরা ফিতরা নামে যে দানের পদ্ধতি ইসলামে চালু রয়েছে, সে সম্পর্কে আলোচনা করার চেষ্টা করব ইনশা-আল্লাহ।
ছাদাক্বাতুল ফিতর কী?
ফিতরা আরবী শব্দ, যা ইসলামে যাকাতুল ফিতর বা ছাদাক্বাতুল ফিতর ইত্যাদি নামে পরিচিত। ছাদাক্বা অর্থ হলো দান, আর ফিতর অর্থ ছিয়ামের সমাপন বা শেষ। ফাতূর বলতে সকালের খাদ্যদ্রব্যকে বোঝানো হয়। আবার ফাতূর, ফিতর ও ইফতার— এই শব্দগুলো সে খাবার অর্থে ব্যবহার হয়ে থাকে যা দ্বারা সূর্যাস্তের পর ছিয়াম পালনকারীরা তাদের ছিয়াম ভঙ্গ করেন।[1] সুতরাং ছাদাক্বাতুল ফিতর বা যাকাতুল ফিতর হলো আবশ্যিক দান, যা প্রত্যেক মুসলিম রামাযান মাস শেষে ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে গরীব ও দুঃখীদের প্রদান করে থাকেন।[2]
ছাদাক্বাতুল ফিতর কেন দিতে হয়?
ইসলামে সম্পদের পবিত্রতার জন্য যেমন যাকাত দিতে হয়, ঠিক তেমনি রামাযানের ছিয়ামের পবিত্রতার জন্যও ছাদাক্বাতুল ফিতর আদায় করতে হয়। আরও সহজ করে বললে বলতে হয়, রামাযানে ছিয়াম পালন করতে গিয়ে প্রতিটি মানুষেরই অবচেতন মনে কোনো না কোনোভাবে ছিয়ামের অনেক সাধারণ ভুলত্রুটি (যেমন: ছিয়ামরত অবস্থায় অবাঞ্ছনীয় ও অসার কথা বলা, গীবত করা, অশ্লীল কথাবার্তা, গালিগালাজ করাসহ নানান ছোটখাটো গুনাহ) হয়ে থাকে। সেই ত্রুটিবিচ্যুতিরই ক্ষতিপূরণ ও সংশোধনী হচ্ছে ছাদাক্বাতুল ফিতর, যা স্বয়ং রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উম্মতের উপর ফযর করেছেন। যাকাত যেমন অর্থ-সম্পদকে পবিত্র করে, ঠিক তেমনি ফিতরাও ছিয়ামকে পরিশুদ্ধ করে। ইবনু আব্বাস রযিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাকাতুল ফিতর ফরয করেছেন ছিয়াম পালনকারীকে অনর্থক ও অশ্লীল কথাবার্তা থেকে পবিত্র করতে ও গরীবের আহারের ব্যবস্থা করতে…’।[3]
উক্ত হাদীছ থেকে বুঝা যাচ্ছে যে, ছাদাক্বাতুল ফিতরের উদ্দেশ্য গরীবদের ঈদের খুশিতে শরীক করার পাশাপাশি এই দানের ফলে আমাদের ছিয়ামের ত্রুটি-বিচ্যুতিও দূরীভুত হয়।
কাদের উপর ফিতরা ওয়াজিব?
ফিতরা সেই মুসলিমের উপর ফরয, যে ব্যক্তির নিকট ঈদের রাত ও দিনে নিজের এবং পরিবারের আহারের প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত খাদ্য মজুদ থাকে। আর এই ছাদাক্বার হিসাবের মধ্যে প্রতিটি মুসলিম অন্তর্ভুক্ত। এক্ষেত্রে পরিবারে স্বাধীন ও ক্রীতদাস, পুরুষ ও নারী, ছোট, বড়, বাচ্চা, ধনী ও গরীব, শহরবাসী ও মরুবাসী ছিয়াম পালনকারী, ভঙ্গকারী ইত্যাদির মাঝে কোনো পার্থক্য নেই।[4] এক কথায় এ দান পরিবারের সকল সদস্যকে হিসাবে রেখে পরিবারে যতজন সদস্য আছে, ততজনের ফিতরা আদায় করতে হবে। ছাদাক্বাতুল ফিতর ফরয হওয়ার জন্য যাকাতের সমপরিমাণ নিসাব হওয়া শর্ত নয়। যেহেতু তা ব্যক্তির উপর ফরয, সম্পদের উপর নয়।
ফিতরা ও যাকাতের মাঝে পার্থক্য:
ফিতরাকে যাকাত সম্বোধন করলেও উভয়ের মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে। যেমন: ফিতরা এমন ব্যক্তির উপরও ওয়াজিব, যার বাড়িতে সামান্য কিছু খাবার আছে। কিন্তু যাকাত কেবল তার উপর ফরয, যার নিসাব পরিমাণ অর্থসম্পদ রয়েছে। যাকাত বাৎসরিক জমাকৃত ধনসম্পদের কারণে দিতে হয়। আর ফিতরা ছিয়ামের ত্রুটিবিচ্যুতির কারণে দিতে হয়।
ছাদাক্বাতুল ফিতর আদায়ের সময়:
ছাদাক্বাতুল ফিতর আদায়ের ফযীলতপূর্ণ সময় হলো রামাযানের শেষ ছিয়ামের সূর্যাস্তের পর থেকে ঈদের ছালাতের পূর্ব পর্যন্ত। ইবনু উমার রযিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, ‘নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের ঈদের ছালাতের জন্য বের হওয়ার পূর্বে ফিতরা আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন’।[5] সুতরাং ঈদের দিন ফিতরা আদায় করা সর্বোত্তম। তবে ঈদের এক-দুই দিন পূর্বেও আদায় করা যায়। কেননা ছাহাবায়ে কেরাম এরূপ করেছেন।[6]
ঈদের ছালাতের পর ছাদাক্বাতুল ফিতর আদায় করা শুদ্ধ নয়। করলে তা ছাদাক্বাতুল ফিতর হবে না; বরং সাধারণ ছাদাক্বা বলে গণ্য হবে। ইবনু আব্বাস রযিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘…যে ব্যক্তি ছালাতের আগে তা আদায় করবে, তবে তার ছাদাক্বা গ্রহণযোগ্য হবে। আর যে ব্যক্তি ছালাতের পর আদায় করবে, তার ছাদাক্বা সাধারণ দান বলে গণ্য হবে’।[7] অর্থাৎ কেউ ঈদের জামাআতের পর ফিতরা আদায় করলে তা সাধারণ দানে পরিণত হবে। ছাদাক্বাতুল ফিতরের যে নেকী, তা পাওয়া যাবে না। তাই ফিতরার খাদ্য ঈদের ছালাতের আগেই বণ্টন করা ওয়াজিব। ঈদের ছালাত পর্যন্ত দেরি করা উত্তম নয়। বরং ঈদের এক বা দুই দিন আগে আদায় করলেও অসুবিধা নেই। যাতে গরীব-দুঃখীরা আগে থেকেই ঈদের আনন্দে শরীক হতে পারে। এছাড়া ফিতরা আদায়ের সময় যাতে সংকীর্ণ না হয়, সেইজন্য ঈদুল ফিতরের ছালাত সামান্য দেরিতে পড়া উত্তম। এতে করে ফিতরা আদায়ের যথেষ্ট সময় পাওয়া যায়।
কে ফিতরা পাবে?
কারা ফিতরা পাওয়ার যোগ্য বা কোন কোন প্রকারের লোক ফিতরা নিতে পারবে? এ বিষয়ে আলেমদের মধ্যে কিছু মতভেদ রয়েছে। একদল আলেম মনে করেন, যারা সাধারণ সম্পদের যাকাতের হক্বদার, তারাই ছাদাক্বাতুল ফিতরের হক্বদার। তাদের দলীল হলো, ফিতরাকে রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাকাত ও ছাদাক্বা বলেছেন। তাই যেটা সম্পদের যাকাতের খাত হবে, সেটা ফিতরারও খাত হবে। ছাদাক্বার যেই খাত আল্লাহ সূরা তওবায় উল্লেখ করেছেন সেই খাতগুলো ছাদাক্বাতুল ফিতরের জন্যও হবে। সুতরাং সেই হিসাবে আট প্রকার লোক ছাদাক্বাতুল ফিতরের হক্বদার। মহান আল্লাহ বলেন,
إِنَّمَا الصَّدَقَاتُ لِلْفُقَرَاءِ وَالْمَسَاكِيْنِ وَالْعَامِلِيْنَ عَلَيْهَا وَالْمُؤَلَّفَةِ قُلُوْبُهُمْ وَفِي الرِّقَابِ وَالْغَارِمِيْنَ وَفِيْ سَبِيْلِ اللَّهِ وَابْنِ السَّبِيْلِ فَرِيْضَةً مِنَ اللَّهِ وَاللَّهُ عَلِيْمٌ حَكِيْمٌ
‘যাকাত হলো কেবল ফকীর, মিসকীন, যাকাত আদায়কারী ও যাদের চিত্ত আকর্ষণ প্রয়োজন তাদের হক্ব এবং তা দাস-মুক্তির জন্য, ঋণগ্রস্তদের জন্য, আল্লাহর পথে জিহাদকারীদের জন্য এবং মুসাফিরদের জন্য। এই হলো আল্লাহর নির্ধারিত বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়’ (আত-তওবা, ৯/৬০)।
আরেক দল আলেম মনে করেন, ছাদাক্বাতুল ফিতর বা ফিতরা কেবল ফকীর-মিসকীনদের হক্ব; অন্যদের নয়। তাদের দলীল হলো, ইবনু আব্বাস রযিয়াল্লাহু আনহুমা-এর হাদীছ, তিনি বলেন, ‘আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাকাতুল ফিতর ফরয করেছেন ছিয়াম পালনকারীর অশ্লীলতা ও অনর্থক ক্রিয়াকলাপ হতে পবিত্রতা এবং মিসকীনদের আহারস্বরূপ...’।[8]
সুতরাং উপর্যুক্ত হাদীছে স্পষ্ট বর্ণিত হয়েছে, ‘মিসকীনদের আহারস্বরূপ’ তথা— গরীব, দুস্থ, অসহায়, অভাবগ্রস্তকেই ফিতরা প্রদান করতে হবে। উক্ত মতকে সমর্থন করেছেন ইবনু তায়মিয়া, ইবনুল ক্বাইয়িম, শাওকানী, আযীমাবাদী, ইবনু উছায়মীনসহ আরও অনেকে।[9] অধিকাংশ উলামায়ে কেরামের মতে এই মতটি অধিক ছহীহ। কারণ এই মতের পক্ষে স্পষ্ট দলীল বিদ্যমান।
উল্লেখ্য, কারো অধীনস্থ চাকরবাকরকে বেতনের পরিবর্তে ফিতরা দেওয়া যাবে না। প্রয়োজনে বেতনসহ ফিতরা দেওয়া যেতে পারে। ফিতরার খাদ্যসমূহের মধ্যে মসজিদ, মাদরাসা অন্তর্ভুক্ত নয়। তবে মাদরাসার ছাত্র, শিক্ষক এবং মসজিদের ইমাম যদি ফকীর-মিসকীনদের অন্তর্ভুক্ত হয়, তাহলে তারা ফিতরার হক্বদার হবেন। বরং তারা অন্যান্য ফকীর-মিসকীনদের থেকেও বেশি হক্বদার হবেন। কেননা এরা দ্বীনের শিক্ষা অর্জনে ও অন্যকে শিক্ষা দানে নিয়োজিত, যে গুণটি অন্যান্য ফকীর-মিসকীনের নেই।
কী দিয়ে ফিতরা দিতে হয়?
আমাদের উপমহাদেশে টাকা দিয়ে ফিতরা আদায় করা হলেও হাদীছে খাদ্যদ্রব্য দ্বারা ফিতরা আদায়ের কথা এসেছে। আবূ সাঈদ আল-খুদরী রযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মাঝে বর্তমান থাকা অবস্থায় আমরা ছাদাক্বাতুল ফিতর বাবদ এক ছা‘ খাদ্য (গম) বা এক ছা‘ খেজুর বা এক ছা‘ যব বা এক ছা‘ পনির অথবা এক ছা‘ কিশমিশ দান করতাম। আমরা অব্যাহতভাবে এ নিয়মই পালন করে আসছিলাম। অবশেষে মুআবিয়া রযিয়াল্লাহু আনহু মদীনায় আমাদের নিকট আসেন এবং লোকদের সাথে আলোচনা প্রসঙ্গে বলেন, আমি শাম দেশের উত্তম গমের দুই মুদ পরিমাণকে এখানকার এক ছা‘র সমান মনে করি। তখন থেকে লোকেরা এ কথাটিকেই গ্রহণ করে নিল। আবূ সাঈদ রযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি কিন্তু সারা জীবন ঐ হিসাবেই ছাদাক্বাতুল ফিতর পরিশোধ করে যাব, যে হিসাবে আমি রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে তা পরিশোধ করতাম।[10]
উপরিউক্ত হাদীছ দ্বারা সুস্পষ্ট হয় যে, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে ফিতরা আদায়ের নির্দেশ হচ্ছে, খাদ্যদ্রব্য। যেমন: গম, খেজুর, যব, পনির, কিশমিশ। এই পাঁচটি নিয়মিত খাদ্য দ্বারা রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সময়ে ফিতরা আদায় করা হতো। সুতরাং খাদ্যদ্রব্য দ্বারা ফিতরা আদায় করা সুন্নাহ।
ফিতরার পরিমাণ:
উল্লিখিত হাদীছেও এসেছে কী পরিমাণ খাদ্য দিয়ে রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফিতরা আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন। সুতরাং প্রত্যেকের জন্য মাথাপিছু এক ছা‘ খাদ্যশস্য ছাদাক্বাতুল ফিতর হিসাবে দিতে হবে। ছা‘ হচ্ছে তৎকালীন সময়ের এক ধরনের পরিমাপক পাত্র, যাতে মধ্যম আকৃতির চার অঞ্জলি খাবার ধরত। এজন্য বিভিন্ন শস্যের ওযন থেকে কমবেশি হবে।
রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাহ হচ্ছে তৎকালীন প্রচলিত খাদ্যদ্রব্যের এক ছা‘ দ্বারা একজনের ফিতরা আদায় করা। সেই হিসাবে আমাদের উপমহাদেশে প্রচলিত খাদ্যদ্রব্য হচ্ছে চাউল এবং আটা। সুতরাং সুন্নাহ হলো চাউল বা আটা দ্বারা এক ছা‘ করে একজনের ফিতরা আদায় করা। বর্তমানে আমাদের দেশে এক ছা‘-তে প্রায় আড়াই কেজি চাউল হয়।
ছা‘নিয়ে মতভেদ:
আমাদের উপমহাদেশে অর্ধ ছা‘ গম বা আটার পরিমাপের অর্থ দ্বারা ফিতরা নির্ধারণ করা হয়। যদিও হাদীছে পাঁচটি খাদ্যদ্রব্যের এক ছা‘ দেওয়ার কথা এসেছে। অর্ধ ছা‘ ফিতরা দেওয়ার ফতওয়াটি মুআবিয়া রযিয়াল্লাহু আনহু-এর। যা উল্লিখিত হাদীছ থেকে বুঝা যায়।
একই সাথে হাদীছে এসেছে এক ছা‘ দেওয়ার কথা। যা রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং ইসলামের চার খলীফা পর্যন্ত বলবৎ ছিল। পরে মুআবিয়া রযিয়াল্লাহু আনহু ইসলামী রাষ্ট্রের খলীফা নির্বাচিত হন এবং ইসলামী রাষ্ট্রের রাজধানী মদীনা থেকে দামেস্কে প্রতিষ্ঠিত করেন। এরপর দামেস্ক থেকে মদীনায় গম আমদানি হতে থাকে। সে সময় সিরিয়ার গমের মূল্য খেজুরের দ্বিগুণ ছিল। তাই খলীফা মুআবিয়া কোনো এক হজ্জ বা উমরা করার সময় মদীনায় আসলে মিম্বারে বলেন, আমি অর্ধ ছা‘ গমকে এক ছা‘ খেজুরের সমতুল্য মনে করি। লোকেরা তার এই কথা মেনে নেয়। এর পর থেকে মুসলিম জনগণের মধ্যে অর্ধ ছা‘ ফিতরার প্রচলন শুরু হয়।
উপর্যুক্ত কারণগুলো থেকে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে, এক ছা‘ মদীনার পরিমাপেই একটি ফিতরা আদায় করতে হবে। কেউ যদি মুআবিয়া রযিয়াল্লাহু আনহু-এর ফতওয়া অনুযায়ী অর্ধ ছা‘ দিয়ে ফিতরা দেয়, তাহলে তা সুন্নাহসম্মত হবে না। কেননা উপরের উল্লিখিত হাদীছে ছাহাবী আবূ সাঈদ আল-খুদরী রযিয়াল্লাহু আনহু-সহ তৎকালীন অনেকে মুআবিয়ার ফতওয়াকে মেনে নেননি।
ছাদাক্বাতুল ফিতরের উপকারিতা:
(১) এ দান ছিয়াম পালনকালীন সময়ে অনর্থক কথা ও অশ্লীল কথা বলার কারণে ছিয়ামের মধ্যে যে ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছিল তা পুষিয়ে দেয়।
(২) রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হচ্ছেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ জ্ঞানী। তিনি সমাজে সমাজব্যবস্থা তৈরি করার জন্য এই ছাদাক্বার প্রচলন করেছেন। যাতে ধনী, গরীব, দুঃস্থ, অসহায় সকলে মিলে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারে।
(৩) এছাড়াও আল্লাহ আমাদের শারীরিক সুস্থতা দান করেছেন। যার কারণে আমরা বেঁচে থেকে সুস্থ শরীরে এক মাস ছিয়াম পালন করতে পারছি। সুস্থতা এবং আমল করতে পারার কারণে আল্লাহর নিকট শুকরিয়াস্বরূপ এই ফিতরা।
উপরিউক্ত আলোচনা থেকে এটা স্পষ্ট হলো যে, এমন প্রত্যেক মুসলিমকে তার ও তার পরিবারের সকল সদস্যের পক্ষ থেকে ফিতরা আদায় করতে হবে, যার ঘরে দুই তিন বেলার পর্যাপ্ত খাবার রয়েছে। একইসাথে খাদ্যদ্রব্য দ্বারাই ফিতরা আদায় করতে হবে। সুতরাং আমাদের সকলের উচিত সামর্থ্য অনুযায়ী সুন্নাহ পদ্ধতিতে ফিতরা আদায় করা। আল্লাহ আমাদের তাওফীক্ব দান করুন- আমীন।
সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী
পতেঙ্গা, চট্টগ্রাম।
[1]. মু‘জামুল লুগাহ আল-আরাবিয়া আল-মুআছারা, আল-মুহীত্ব।
[2]. প্রাগুক্ত।
[3]. আবূ দাঊদ, হা/১৬০৯।
[4]. ছহীহ বুখারী, হা/১৫০৩।
[5]. ছহীহ বুখারী, হা/১৫০৯।
[6]. ছহীহ বুখারী, হা/১৫১১।
[7]. আবূ দাঊদ, হা/১৬০৯।
[8]. আবূ দাঊদ, হা/১৬০৯; ইরওয়াউল গালীল, হা/৮৪৩।
[9]. মাজমুউ ফাতাওয়া, ২৫/৭৩; যাদুল মাআদ, ২/২২; নায়লুল আওতার, ৩-৪/৬৫৭; আওনুল মা‘বূদ, ৫-৬/৩; শারহুল মুমতি, ৬/১৮৪।
[10]. ছহীহ বুখারী, হা/১৫০৫, ১৫০৬, ১৫০৮, ১৫১০; ছহীহ মুসলিম, হা/৯৮৫।