(সেপ্টেম্বর’২১ সংখ্যায় প্রকাশিতের পর)
আল্লাহ তাআলা আপনাকে, *আমাকে শরীরিক সুস্থতা দান করেছেন, খাদ্য ও পানীয় এর ব্যবস্থা করেছেন, আবাসনের জন্যে যমীনকে উপযুক্ত করেছেন— এসবই তাঁর নিয়ামত। আবূ হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,إِنَّ أَوَّلَ مَا يُسْأَلُ عَنْهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يَعْنِى الْعَبْدَ مِنَ النَّعِيمِ أَنْ يُقَالَ لَهُ أَلَمْ نُصِحَّ لَكَ جِسْمَكَ وَنُرْوِيكَ مِنَ الْمَاءِ الْبَارِدِ ‘কিয়ামতের দিন বান্দাকে সর্বপ্রথম যে সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে, তা হচ্ছে নিয়ামত। তাকে বলা হবে আমি কি তোমার শরীর সুস্থ রাখিনি এবং সুশীতল পানির মাধ্যমে তোমাকে তৃপ্ত করিনি?’[1] অন্য হাদীছে এসেছে, আবূ হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ثُمَّ لَتُسْأَلُنَّ يَوْمَئِذٍ عَنِ النَّعِيْمِ ‘তারপর তোমাদেরকে সেদিন নিয়ামত সম্পর্কে অবশ্যই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে’ (আত-তাকাছুর, ১০২/৮)। আয়াতটি যখন অবতীর্ণ হয়, তখন লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমাদের কোন নিয়ামত প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হবে? আমাদের নিকট তো শুধু দুইটি জিনিস (খেজুর ও পানি) রয়েছে, আর সর্বদা শত্রু প্রস্তুত রয়েছে এবং আমাদের তরবারিগুলো আমাদের কাঁধে ঝুলন্ত রয়েছে? তিনি বললেন, إِنَّ ذَلِكَ سَيَكُونُ ‘এটা অদূর ভবিষ্যতে হবে’।[2] তাই অসংখ্য নিয়ামত ভোগ করে প্রত্যেকের আল্লাহ তাআলার নিকট শুকরিয়া আদায় করা উচিত। কেননা তাঁর প্রদত্ত সকল নিয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। সুতরাং আল্লাহ তাআলার যমীনে বসবাস করে তার নিয়ামত উপভোগ করে শুকরিয়া আদায় করার জন্য সঠিকভাবে তাঁর ইবাদত-বন্দেগী করাই হবে আমাদের একমাত্র দায়িত্ব ও কর্তব্য।
মোদ্দাকথা, সূরা আন-নাবার শেষাংশ থেকে আমরা যে শিক্ষা পাই তা হচ্ছে, আল্লাহ তাআলার অসংখ্য নিয়ামতের মধ্যে প্রধান হচ্ছে এই যমীন। মানুষের আরাম-আয়েশে বসবাস, চাষাবাদ করে হালাল জীবিকা উপার্জন এবং ফল-ফসলাদি উৎপাদন করে খাওয়ার জন্যে আল্লাহ তাআলা এই যমীনকে বিছানাস্বরূপ তৈরি করেছেন। গোশত ভক্ষণ করার জন্য পশু-পাখির সৃষ্টি, নিরাপদে বসবাসের জন্যে পাহাড় দিয়ে পৃথিবীকে সুদৃঢ়করণ, আকাশকে ছাদস্বরূপ এবং তা থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করে খাদ্য উৎপাদন এ সবই মানুষের কল্যাণের জন্য করা হয়েছে। এসবই আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষের জন্য অফুরন্ত অনুগ্রহ। তাই আমাদের উচিত হবে, আমাদের সকল চাওয়া-পাওয়া এবং আশা-আকাঙ্ক্ষা সবকিছু একমাত্র আল্লাহ তাআলার নিকটই পেশ করা। তার সাথে কাউকেও অংশীদার করা হতে বিরত থাকা। আল্লাহ যেন আমাদের তাঁর নিয়ামতরাজির শুকরিয়া আদায় করার তাওফীক্ব দান করেন। ইবাদত-বন্দেগী করে এই পৃথিবী থেকে বিদায় গ্রহণ করার সুযোগ দান করেন- আমীন!
(৩) মহান আল্লাহ মানবজাতিকে জোড়ায়-জোড়ায় সৃষ্টি করেন : আমাদের পূর্ব ইতিহাস লক্ষ করলে বুঝতে পারব যে, আদম ও হাওয়া আলাইহিস সালাম আমাদের সবার আদি পিতা-মাতা। এভাবে আজ অবধি স্বামী-স্ত্রী একে অপরের মায়া-মহব্বতের বন্ধনে পরিবার গঠিত হয়। জন্ম নেয় সন্তানসন্ততি। তারা পরস্পরের জন্য দু‘আ করেন। সন্তানসন্ততি পিতা-মাতাকে ভালোবাসে, অনুরূপভাবে পিতা-মাতাও সন্তানসন্ততিকে অনেক ভালোবাসেন। এভাবেই মানব জীবনে কল্যাণ বয়ে আসে। মহান আল্লাহ বলেন, وَخَلَقْنَاكُمْ أَزْوَاجًا ‘আমি তোমাদের জোড়ায়-জোড়ায় সৃষ্টি করেছি’ (আন-নাবা, ৭৮/৮)। স্বামী বা পুরুষ মানুষ বাইরে কাজ-কর্ম করে এবং নারীরা বাড়ির কাজ-কর্ম দেখাশুনা করে, সন্তানসন্ততি লালনপালন করে। মূলত মা হলো জাতির শ্রেষ্ঠ শিক্ষক, একজন আদর্শ মা’ই পারে আদর্শ সন্তান, আদর্শ পরিবার উপহার দিতে, আদর্শ সমাজ গড়তে। তাইতো স্বামী-স্ত্রীর মাঝে ভালোবাসা যত বেশি গভীর হবে, ততবেশি সন্তানসন্ততি নিয়ে আরাম-আয়েশে জীবনযাপন করতে পারবে। আল্লাহ তাআলা বলেন,وَمِنْ آيَاتِهِ أَنْ خَلَقَ لَكُمْ مِنْ أَنْفُسِكُمْ أَزْوَاجًا لِتَسْكُنُوا إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُمْ مَوَدَّةً وَرَحْمَةً إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآيَاتٍ لِقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ ‘আর তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য হতে তোমাদের সঙ্গিনীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের নিকট শান্তি পাও এবং তিনি তোমাদের পরস্পরের মধ্যে ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্যে এতে অবশ্যই বহু নিদর্শন রয়েছে’ (আর-রূম, ৩০/২১)। মহান আল্লাহ বলেন,يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّا خَلَقْنَاكُمْ مِنْ ذَكَرٍ وَأُنْثَى وَجَعَلْنَاكُمْ شُعُوبًا وَقَبَائِلَ لِتَعَارَفُوا إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِنْدَ اللَّهِ أَتْقَاكُمْ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌ ‘হে মানুষেরা! আমি তোমাদের এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি। পরে তোমাদের বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে, যাতে তোমরা একে অপরের সাথে পরিচিত হতে পার। তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তিই আল্লাহর নিকট অধিক মর্যাদাসম্পন্ন, যে অধিক মুত্তাক্বী, আল্লাহ সব কিছু জানেন, সব কিছুর খবর রাখেন’ (আল-হুজুরাত, ৪৯/১৩)। মহান আল্লাহ আরো বলেন,
وَالسَّمَاءَ بَنَيْنَاهَا بِأَيْدٍ وَإِنَّا لَمُوسِعُونَ - وَالْأَرْضَ فَرَشْنَاهَا فَنِعْمَ الْمَاهِدُونَ وَمِنْ كُلِّ شَيْءٍ خَلَقْنَا زَوْجَيْنِ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُونَ
‘আমি আকাশ বানিয়েছি আমার (নিজ) হাতে এবং আমি অবশ্যই মহা সম্প্রসারণকারী এবং আমি পৃথিবীকে বিছিয়ে দিয়েছি, সুতরাং আমি কত সুন্দরভাবে বিছিয়েছি! আমি প্রত্যেক বস্তুকে জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছি, যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ করতে পার’ (আয-যারিয়াত, ৫১/৪৭-৪৯)। তাইতো স্বামী-স্ত্রী একে অপরের জন্য দু‘আ করবে। মহান আল্লাহ বলেন,وَالَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَامًا ‘আর যারা প্রার্থনা করে, হে আমাদের প্রতিপালনক! আমাদের জন্য এমন স্ত্রী ও সন্তানসন্ততি দান করুন যারা হবে আমাদের চক্ষু শীতলকারী এবং আমাদেরকে মুত্তাক্বীদের প্রতিনিধি বানান’ (আল-ফুরক্বান, ২৫/৭৪)। দু‘আটি যেমন স্বামী পড়বে, তেমনি স্ত্রীও পড়বে। এটি যেমন যুবক পড়বে, তেমনিভাবে যুবতীও পড়বে। এভাবে আমরা একে অপরের জন্য কল্যাণ কামনা করব, সন্তানসন্ততির জন্য দু‘আ করব, যাতে তারা মুমিন ও মুত্তাক্বী হতে পারে এবং রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আদর্শে আদর্শবান হতে পারে। মহান আল্লাহ বলেন, وَإِنَّكَ لَعَلَى خُلُقٍ عَظِيمٍ ‘নিশ্চই আপনি মহান চরিত্রের অধিকারী’ (আল-ক্বালাম, ৬৮/৪)।
তাই মানব জীবনের কল্যাণার্থে ছেলে-মেয়েদের বিয়ের বয়স হলে বিয়ে দেওয়াটা বাবা-মায়ের দায়িত্ব ও কর্তব্য। আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, কোনো এক সময় রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে আমরা বের হলাম। আমরা ছিলাম যুবক। (বিয়ের খরচ বহনের) আমাদের আর্থিক সামর্থ্য ছিল না। তিনি বললেন, হে যুব সমাজ! তোমাদের বিয়ে করা উচিত। কেননা, এটা দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং লজ্জস্থানকে সুরক্ষিত রাখে। আর তোমাদের যে লোকের বিয়ের সামর্থ্য নেই, সে যেন ছিয়াম আদায় করে। কেননা, এটা তার যৌনশক্তিকে নিয়ন্ত্রণে রাখবে।[3] বিয়ের সামর্থ্য থাকলে বিয়ে করাটাই তার জন্য কল্যাণকর। আবূ হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমরা যার দ্বীনদারী ও নৈতিক চরিত্রে সন্তুষ্ট আছ, সে তোমাদের নিকট বিয়ের প্রস্তাব করলে তার সাথে বিয়ে দাও। তা যদি না কর, তাহলে পৃথিবীতে ফেতনা-ফাসাদ ও চরম বিপর্যয় সৃষ্টি হবে’।[4] ছেলে-মেয়েকে দ্বীনদার পরহেযগার দেখে বিয়ে দেওয়ার স্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে। জাবের রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘মহিলাদের বিয়ে করা হয় তাদের দ্বীনদারী, ধনসম্পদ, বংশমর্যাদা ও সৌন্দর্য দেখে। অবশ্যই তুমি দ্বীনদার পাত্রীকে বেশি অগ্রধিকার দিবে। কল্যাণে তোমার হাত পরিপূর্ণ হবে’।[5] আজকে বর্তমান সমাজে আমরা শুধু টাকা-পয়সা ও ধনসম্পদ এ বিষয়গুলো বেশি লক্ষ করি, ছেলে অথবা মেয়েটা ছালাত আদায় করে কিনা, সে কুরআন পড়তে পারে কিনা, সে কোনো মাযারপূজায় বিশ্বাস করে কিনা, তার আক্বীদাগত কোনো ক্রটি আছে কিনা, ধূমপান ও নেশা জাতীয় দ্রব্য থেকে দূরে আছে কিনা, এসব বিষয় লক্ষ করা দরকার। এসব দেখার আগেই একে অপরের প্রেমপ্রীতি ও ভালোবাসা হয়ে গেছে।
আপনি তো বাবা, আপনি তো মা, আপনার মেয়ে কোথায় যাচ্ছে খোঁজ খবর তো রাখছেন না, আপনার ছেলে কোনো মেয়েকে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে কিনা, আপনি তো একটিবারও খোঁজ নেননি। যখন তারা একে অপরে কোর্ট ম্যারেজ করছে, তখনই আপনার মাথায় হাত পড়ছে। কারণ কোর্ট ম্যারেজ করে বিয়ে হয় না। আবূ মূসা রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘অভিভাবক ব্যতীত বিয়ে সম্পন্ন হতে পারে না’।[6] আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘অভিভাবকের অনুমতি ব্যতীত কোনো মহিলা বিয়ে করলে তার বিয়ে বাতিল, তার বিয়ে বাতিল, তার বিয়ে বাতিল’।[7] পবিত্র কুরআনে সূরা আন-নাবার শিক্ষা থেকে আমরা যা পাই, তা হলো মহান আল্লাহ মানবজাতি, জিনজাতি এবং যে সমস্ত জীবজন্তু সৃষ্টি করেছেন, তাদের মাঝে নারী-পুরুষ রয়েছে। তাদের মধ্যে উৎকৃষ্ট জাতি হলো মানুষ। এদেরকে আল্লাহ শ্রেষ্ঠ করেছেন, যাতে করে তাদের উভয়ের মিলনে সন্তানসন্ততি হয় এবং তারা আ‘মালে ছালেহা করে, অন্যায়-অপকর্ম থেকে নিজেকে রক্ষা করে এবং নিজ সন্তানদের আদর্শবান করে গড়ে তুলে। তাইতো লোক্বমান হাকীমের উপদেশ প্রতিটি পিতা-মাতা সন্তানসন্ততি গ্রহণ করলে তাদের জীবনে কল্যাণ বয়ে আসবে। লোক্বমান হাকীম সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, ‘যখন লোক্বমান তার পুত্রকে উপদেশ দিচ্ছিল আর বলছিল, হে প্রিয় বৎস! আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে শরীক করো না। নিশ্চয় শিরক মহাঅন্যায়। আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার প্রতি সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছি। তার জননী তাকে কষ্টের পর কষ্ট সহ্য করে গর্ভধারণ করেছে এবং তার দুধ ছাড়ানো হয় দু্ই বছরে। সুতরাং আমার প্রতি ও তোমার পিতা-মাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। প্রত্যাবর্তন তো আমারই দিকে। তারা উভয়ে যদি তোমাকে আমার সাথে শিরক করতে বাধ্য করে, তাহলে তুমি তাদের কথা মানবে না। তবে পৃথিবীতে তাদের সাথে সদ্ভাবে বসবাস করবে এবং যে বিশুদ্ধচিত্তে আমার অভিমুখী হয়েছে, তার পথ অবলম্বন করো। অতঃপর তোমাদের প্রত্যাবর্তন আমারই নিকট এবং তোমরা যা করতে সে বিষয়ে আমি তোমাদেরকে অবহিত করব।
হে বৎস! তা (পুণ্য ও পাপ) যদি সরিষার দানা পরিমাণও হয় এবং তা যদি থাকে শিলাগর্ভে অথবা আকাশ কিংবা ভূগর্ভে থাকে, আল্লাহ ওটাও হাযির করবেন। আল্লাহ সূক্ষ্মদর্শী, সকল বিষয় তিনি খবর রাখেন। হে আমার প্রিয় সন্তান! ছালাত ক্বায়েম করবে, ভালো কাজের আদেশ করবে এবং মন্দ কাজ হতে নিষেধ করবে এবং বিপদাপদে ধৈর্যধারণ করবে। নিশ্চয়ই এটা দৃঢ় সংকল্পের কাজ। (অহংকার করে) তুমি মানুষ হতে মুখ ফিরিয়ে নিয়ো না এবং পৃথিবীতে উদ্ধতভাবে বিচরণ করো না। কারণ আল্লাহ কোনো উদ্ধত, অহংকারীকে পছন্দ করেন না। তুমি পদচারণায় মধ্যবর্তী পন্থা অবলম্বন করবে এবং তোমার কণ্ঠস্বর নিচু করবে। নিশ্চয় স্বরের মধ্যে গাধার স্বরই সর্বাপেক্ষা অপ্রীতিকর’ (লোক্বমান, ৩১/১৩-১৯)। মোদ্দাকথা, আল্লাহ তাআলার এটা একটা বিশেষ নেয়ামত যে, তিনি নর-নারী জোড়া জোড়া করে সৃষ্টি করেছেন। যাতে স্বামী-স্ত্রীর মিলনে সন্তানসন্ততি হয়ে একে অপরের প্রতি মায়া-মহব্বত সৃষ্টি হয়। তারা আরাম-আয়েশে বসবাস করতে পারে। একে অপরকে পরামর্শ দিবে এবং একে অপরের জন্য দু‘আ করবে, স্ত্রী-স্বামীর কথামতো চলবে- যদি শরীআতের সাথে বিরোধপূর্ণ না হয়। স্ত্রী-স্বামীর আনুগত্য করবে, সম্মান করবে। অনুরূপ স্বামী তার স্ত্রীকে সম্মান-মর্যাদা দিবে, স্ত্রীকে কোনো অশ্লীল কথাবার্তা বলে গালিগালাজ করবে না, তার হক্ব ঠিকভাবে আদায় করবে। স্ত্রী ও স্বামীর হক্ব ঠিকভাবে আদায় করবে। সন্তানসন্ততিদের আদর্শ দিয়ে মানুষ করবে। সন্তানদের প্রথমে আল্লাহ সম্পর্কে আক্বীদা শেখাবে, আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে অংশী স্থাপন করা যাবে না, আল্লাহ আরশের উপর সমুন্নত, আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্যের নামে কসম করা যাবে না ইত্যাদি। মৃত ব্যক্তির কাছে কিছু চাওয়া যাবে না এবং তার নিকট মানত মানা যাবে না। কবরের পার্শ্বে নীরবতা পালন করা যাবে না।
বিদআত সম্পর্কে ধারণা দিবেন, যাতে সকল প্রকার বিদআত থেকে দূরে থাকতে পারে। কারণ বড় শিরক করলে তার অতিতের সমস্ত আমল নষ্ট হয়ে যাবে। আর বিদআত করলে তার আমল কবুল হবে না। এজন্যই বিদআতী বিষয় জেনে তার থেকে সাবধান থাকতে হবে। সন্তানের বয়স সাত বছর হলে ছালাতের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। বাবা ছেলেদের নিয়ে মসজিদে যাবেন। মা মেয়েকে নিয়ে বাড়িতে হাসি-খুশি থেকে ছালাত আদায়ের প্রশিক্ষণ দিবেন। বাবা ছেলে সন্তানদের মসজিদে নিয়ে যাওয়ার সময় হাশিমুখে থাকবেন যাতে তারা বুঝতে পারে যে, আমরা ছালাত আদায় করলে আব্বু-আম্মু খুব খুশি হন। সন্তানের বয়স ১০ বছর হলে ছালাত না পড়লে বেত্রাঘাত করবেন। বাড়িতে অবশ্যই আদবের বেত থাকতে হবে। ১০ বছর বয়সে তাদের বিছানা পৃথক করে দিবেন। বাবা সন্তানসন্ততি ও মাকে নিয়ে ফজর ছালাতের পর কুরআন তেলাওয়াতের চেষ্টা করবেন। তাই রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমানোর চেষ্টা করবেন, তাহাজ্জুদ ছালাতে অভ্যস্ত হবেন। নিছাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে যাকাত আদায় করবেন, হজ্জ ফরয হলে তা আদায়ের চেষ্টা করবেন। প্রত্যেক মাসে তিনটি ছিয়াম রাখবেন এবং সপ্তাহের সোম ও বৃহস্পতিবার ছিয়াম রাখার চেষ্টা করবেন। হালাল রূযী ভক্ষণ করবেন এবং সকল প্রকার হারাম থেকে নিজেকে রক্ষা করবেন। সূদ-ঘুষ থেকে নিজেকে রক্ষা করবেন। মিথ্যা বলা, মুনাফিক্বী করা, গীবত করা, যেনা-ব্যভিচার করা ও মানুষের ক্ষতি করা থেকে নিজেকে বিরত রাখার চেষ্টা করবেন। পরিবারের সকলে যাবতীয় অন্যায় কাজ থেকে রক্ষা করবেন।
(চলবে)
হাফেয আব্দুল মতীন মাদানী
এম. এ, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সঊদী আরব; শিক্ষক, আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ, বীরহাটাব-হাটাব, রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ।
[1]. সুনানে তিরমিযী, হা/৩৩৫৮, হাদীছ ছহীহ।
[2]. সুনানে তিরমিযী, হা/৩৩৫৭, হাদীছ হাসান লিগয়রিহী।
[3]. তিরমিযী, হা/১০৮১।
[4]. তিরমিযী, হা/১০৮৪।
[5]. বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী, হা/১০৮৬।
[6]. তিরমিযী, হা/১১০১, সনদ ছহীহ।
[7]. তিরমিযী, হা/১১০২, সনদ ছহীহ।