কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

রহস্যে ভরা কান ও আধুনিক বিজ্ঞান

post title will place here

কান মহান আল্লাহর এক অপার সৃষ্টি। কানের ভেতরে রয়েছে প্রায় ১ লক্ষ শ্রবণকোষ। এ শ্রবণকোষগুলো মস্তিষ্কে শব্দ প্রেরণ করে এবং শ্রবণকার্য সম্পন্ন হয়। মহান আল্লাহ কানের প্রবেশমুখে এক ধরনের কটু স্বাদের ময়লা থাকার ব্যবস্থা করেছেন। সে কটু গন্ধ ও বিস্বাদ ময়লা থাকার কারণে কোনো কিট কানে ঢুকতে পারে না। আবার দেখুন! কানের বন্ধ পথটা শামুকের উদর পথের মতো ঘোরানো করে তৈরি করেছেন। তাতে বাইরের শব্দ ওই প্যাঁচের মাঝে বাধা পেয়ে ধীরে প্রগাঢ় ও গম্ভীর হয়। শেষে উঁচু আওয়াজ কর্ণকুহরে ঢোকে। আকৃতিটি ফানেলের মতো হওয়ার কারণে শব্দ একসাথে প্রবেশ করে কানের পর্দার ক্ষতি করতে পারে না। রন্ধ্র পথটা প্যাঁচালো হওয়াতে ঘুমন্ত অবস্থায় পিঁপড়া বা পোকা একেবারে শেষ প্রান্তে পৌঁছতে পারে না। ঘোরানো পথ পেরুতেই তার পায়ের আওয়াজ পেয়ে আমরা জেগে ওঠি। তারপর প্রতিরোধে সমর্থ হই। মহান আল্লাহ তাঁর এ আশ্চর্য সৃষ্টিগুলোকে তার নেয়ামত হিসেবে উল্লেখ করেছেন। অধ্যাপক আব্দুর রাযযাক নওফেল-এর ‘আধুনিক বিজ্ঞান ও আল্লাহ’ নামক গ্রন্থে বলা হয়েছে, ‘মানুষের কানের একটি অংশ (অর্থাৎ কানের ভেতরের অংশ) প্রায় ৪ হাজার সূক্ষ্ম ও জটিল বক্র যন্ত্রের সমষ্টি। এর প্রত্যেকটি যন্ত্র ও ব্যাপ্তির দিক দিয়ে ধারাবাহিকভাবে এক সাথে বাঁধা। বলা যেতে পারে যে, এই ক্ষুদ্র যন্ত্রগুলো বাদ্যযন্ত্র সদৃশ। মনে হয়, এটি এমন একটি হাতিয়ার, যা মেঘের গর্জন থেকে শুরু করে গাছের পাতার মর্মরধ্বনি পর্যন্ত এবং বাদ্যযন্ত্রের মিহি সুর পর্যন্ত সকল তীব্র বা মৃদু শব্দকে মগজ পর্যন্ত পৌঁছে দেয়’। আল্লাহ আমাদের কৃতজ্ঞতা আদায় করতে বলেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন,قُلْ هُوَ ٱلَّذِىٓ أَنشَأَكُمْ وَجَعَلَ لَكُمُ ٱلسَّمْعَ وَٱلْأَبْصَٰرَ وَٱلْأَفْـِٔدَةَ قَلِيلًا مَّا تَشْكُرُونَ ‘আপনিই বলুন, আল্লাহ তাআলাই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদের কান, চোখ ও অন্তর বানিয়েছেন, কিন্তু তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর না’ (আল-মুলক, ৬৭/২৩)

কানের কাজ ও গঠন :

কানের প্রধান তিনটি অংশ। যথা— (১) বহিঃকর্ণ বা বাইরের কান, (২) মধ্যকর্ণ বা মাঝের কান এবং (৩) অন্তঃকর্ণ বা ভিতরের কান।

(১) বহিঃকর্ণ : কান বলতে আমরা সাধারণভাবে যা দেখি, সেটা মূলত বহিঃকর্ণ। এটির আবার দুটো অংশ রয়েছে। একটা হচ্ছে কানের পাতা, যা তরুণাস্থি ও চামড়া দিয়ে গঠিত। আরেকটা হচ্ছে কানের বাইরের ছিদ্রপথ বা এক্সটারনাল অডিটরি ক্যানেল। এই ছিদ্রপথের বাইরের এক-তৃতীয়াংশ তরুণাস্থি ও চামড়া দিয়ে গঠিত। আর ভিতরের দিকের দুই-তৃতীয়াংশ অস্থি চামড়া দিয়ে গঠিত। এই ছিদ্রপথ একটা আঁকাবাঁকা সুড়ঙ্গের মতো। সুড়ঙ্গের শেষপ্রান্তে রয়েছে কানের পর্দা বা টিমপেনিক মেমব্রেন। এই অন্ধ গলিপথটি আঁকাবাঁকা থাকায় কানের পর্দায় সহজে বাইরের আঘাত এসে লাগে না। 

কাজ : এই অংশের কাজ হচ্ছে বাইরের শব্দতরঙ্গ যা আমাদের কানে পৌঁছে, তাকে মধ্যকর্ণের দিকে পরিচালিত করা। এছাড়া সৌন্দর্য বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও কানের এই অংশের যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে।

(২) মধ্যকর্ণ: মধ্যকর্ণে রয়েছে কানের পর্দা বা টিমপ্যানিক মেমব্রেন এবং ছোট ছোট তিনটি হাড়। কানের পর্দা বহিঃকর্ণ ও মধ্যকর্ণের মধ্যে অবস্থিত। এটি একটি পাতলা পর্দা, যা একটি প্রায় গোলাকার হাড়ের রিং দিয়ে টানটান অবস্থায় থাকে। মধ্যকর্ণে অডিটরি টিউব নামে একটি নালি থাকে, যা নাকের ভিতরের অংশে ন্যাসোফ্যারিংস এর সাথে মাঝের কানের সংযোগ রক্ষা করে। খাওয়ার সময় বা ঢোক গেলার সময় এই নলের মুখ খুলে যায় ও হাওয়া ঢোকে। মধ্যকর্ণের ভিতরে সবসময় কিছু বাতাস থাকে। এই হাওয়া বাইরের পারিপার্শ্বিক বায়ুচাপের সঙ্গে মধ্যকর্ণের সমতা রক্ষা করে। এই বায়ুচাপের ভারসাম্যের হেরফের হলেই মধ্যকর্ণে অসুবিধা দেখা দেয়। এছাড়া মধ্যকর্ণে রয়েছে মাস্টয়েড বায়ুকোষ প্রণালির মুখ। মাস্টয়েড কোষে টিমপেনিক ক্যাভিটির মতো বাতাস থাকে। এই বাতাস অডিটরি নালি দিয়ে ঐ জায়গাতে যায়।

কাজ : শোনার ক্ষেত্রে কানের এই অংশের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে। বায়ুর মাধ্যমে শব্দতরঙ্গ কানের পর্দার ওপর পড়ে। তরঙ্গের ধাক্কায় কানের পর্দা আন্দোলিত হয় এবং এর ভিতরের গায়ে লেগে থাকা ছোট ছোট হাড়গুলোতে তা ছড়িয়ে দেয়। এভাবেই মধ্যকর্ণ থেকে শব্দতরঙ্গ অন্তঃকর্ণে গিয়ে পৌঁছে।

(৩) অন্তঃকর্ণ : কানের ভিতরের এই অংশটি অনেকটা শামুকের খোলের মতো অস্থি দিয়ে গঠিত। অস্থির ভিতরে আছে পর্দার মতো বস্তু। এর তিনটি অংশ রয়েছে। যথা- (ক) কর্ণমুখ (ভেসটিবিউল), (খ) অর্ধবৃত্তাকার নালিপথ (সেমিসারকুলার ক্যানেল) এবং (গ) শ্রবণযন্ত্র (ককলিয়া)।

কাজ : কানের ভিতরের এই অংশে এসে শব্দতরঙ্গ বিদ্যুৎ তরঙ্গে পরিণত হয়। এই বিদ্যুৎ তরঙ্গগুলো মস্তিষ্কে পৌঁছলে আমরা শুনতে পাই। এছাড়া এই অংশে যে যন্ত্রাদি রয়েছে, তার সাহায্যে মানুষ নিজের ভারসাম্য রক্ষা করা, চলাফেরা করা, দাঁড়িয়ে থাকা ইত্যাদি যাবতীয় কাজকর্ম করে থাকে। অনেক সময় দেখা যায়, চরকির মতো কিছুক্ষণ ঘোরার পর স্থির হয়ে দাঁড়ানো যায় না, মাথা ঘুরতে থাকে। এর পিছনে যে কারণ দায়ী তা হলো, ক্রমাগত ঘোরার ফলে ফেসটিবিউল বা কর্ণমূলে যে উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়, তার জের বেশ কিছুক্ষণ ধরে অনুভূত থাকে। আর তাতেই মাথা ঘোরে। ভেসটিবিউলের ক্রটি কিংবা অস্বাভাবিক থাকলে একই উপসর্গ দেখা দেয়।

আল-কুরআনে কানের মাহাত্ম্য :

স্বাভাবিকরূপে অথবা বৈজ্ঞানিক ধারায় যে কোনোভাবে চিন্তা করলেই কানের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারি। চোখ না থাকলেও যেমন দুনিয়া অন্ধকার, কান না থাকলেও তেমনি মনে হয় দুনিয়া নিশ্চুপ, নিস্তব্ধ। অতি জটিল ও অতি সূক্ষ্ম খিলেনের সমবায়ে গঠিত এই কান। অতি মূল্যবান এই শ্রবণেন্দ্রিয় তথা কানের নেয়ামতমান সম্পর্কে আজ অধিকাংশ মানুষ উদাসীন। আল্লাহর পবিত্র সত্তার পরিচয় লাভ, তার সৃষ্টিরাজি সম্পর্কে যথার্থ চিন্তা ও গবেষণা, তার নিদর্শনসমূহ অনুধাবন করা থেকে বঞ্চিত।

আল্লাহ তাআলা মানুষকে চোখ, কান ও অন্তর দান করার উদ্দেশ্য হচ্ছে মহান প্রভুর আনুগত্য। যেমন আল্লাহ তাআলা কুরআনে ঘোষণা করেছেন,وَهُوَ ٱلَّذِىٓ أَنشَأَ لَكُمُ ٱلسَّمْعَ وَٱلْأَبْصَٰرَ وَٱلْأَفْـِٔدَةَ قَلِيلًا مَّا تَشْكُرُونَ ‘তিনিই তোমাদের জন্য কান, চোখ ও অন্তঃকরণ সৃষ্টি করেছেন; তোমরা অল্পই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে থাক’ (আল-মুমিনূন, ২৩/৭৮)। তিনি অন্যত্র বলেছেন,قُلْ هُوَ ٱلَّذِىٓ أَنشَأَكُمْ وَجَعَلَ لَكُمُ ٱلسَّمْعَ وَٱلْأَبْصَٰرَ وَٱلْأَفْـِٔدَةَ قَلِيلًا مَّا تَشْكُرُونَ ‘বলুন, তিনিই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এবং দিয়েছেন কর্ণ, চক্ষু ও অন্তর। তোমরা অল্পই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর’ (আল-মুলক, ৬৭/২৩)

মানুষের শ্রবণ (Human hearing) ও দর্শন অন্য যে কোনো প্রাণীর তুলনায় অধিক শক্তিশালী। কারণ, মানুষ শ্রবণশক্তি দ্বারা শরীআত ও রাসূলগণের দাওয়াত কবুল করে। এ শক্তির মাধ্যমে মানুষ এই মহাজগতের বিস্ময় সম্পর্কে শুনতে পারছে। এজন্য কানের গুরুত্ব, ব্যবহারবিধি, প্রয়োগস্থল এবং সৃষ্টিগত তাৎপর্য অনেক বেশি। আমাদের এই বস্তুগত জীবনে কান যে কত জরুরী অঙ্গ এবং কত মহামূল্যবান নেয়ামত, তা শুধু টের পাই তাদের দেখে, যারা এই অঙ্গের অভাবে বধির। আল্লাহ তাআলা এই নেয়ামতের কথা উল্লেখ করে আরও বলেন,قُلْ مَن يَرْزُقُكُم مِّنَ ٱلسَّمَآءِ وَٱلْأَرْضِ أَمَّن يَمْلِكُ ٱلسَّمْعَ وَٱلْأَبْصَٰرَ ‘বলুন, কে রূযী দান করে তোমাদেরকে আসমান থেকে ও যমীন থেকে, কিংবা কে তোমাদের কান ও চোখের মালিক?’ (ইউনুস, ১০/৩১)। অন্যত্র আল্লাহ তাআলা বলেন,وَلَا تَقْفُ مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ إِنَّ السَّمْعَ وَالْبَصَرَ وَالْفُؤَادَ كُلُّ أُولَئِكَ كَانَ عَنْهُ مَسْئُولًا ‘যে বিষয়ে তোমার কোনো জ্ঞান নেই, তার পিছনে পড়ো না। নিশ্চয় কান, চক্ষু ও অন্তঃকরণ এদের প্রত্যেকটিই জিজ্ঞাসিত হবে’ (বনী ইসরাঈল, ১৭/৩৬)

উল্লেখ্য, এসব আয়াত ও অন্যান্য আয়াতে যেখানেই কুরআন মাজীদে শ্রবণ, দর্শন ও অন্তঃকরণের উল্লেখ হয়েছে, শ্রবণেন্দ্রিয়কে অন্যান্য ইন্দ্রিয়ের পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। এটি একটি জ্ঞাত বিষয় যে, মানুষের জ্ঞান অর্জনের বিষয়টি অন্যান্য অঙ্গের তুলনায় শ্রবণেন্দ্রিয়ের ওপর বহুলাংশে নির্ভরশীল। একজন শিশু অন্ধ হয়ে জন্ম নিলে তাকে অনেক বিপত্তির সম্মুখীন হতে হয়। কিন্তু অল্প আয়াসেই সে বিভিন্ন বিষয়ে জানতে পারে। পক্ষান্তরে, যে শিশু বধির হয়ে জন্ম নেয়, যে কোনো বস্তু সম্পর্কে জানতে তার অনেক সময়ের প্রয়োজন হয়।

কুরআন মাজীদ এভাবে অন্যান্য ইন্দ্রয়ের ওপর শ্রবণেন্দ্রিয়ের গুরুত্ব তুলে ধরেছে। আরও উল্লেখ থাকে যে, ভ্রূণ শ্রবণেন্দ্রিয় বিকশিত হয় গর্ভধারণের কেবল ২২ দিনের মধ্যেই এবং গর্ভধারণের চতুর্থ মাসে তা পুরোপুরি কাজ করতে শুরু করে। তখন ভ্রূণ মায়ের পাকস্থলীর গুড়গুড় শব্দ শুনতে পায় এবং সে শব্দও শুনতে পায় যা সে (মা) আহার ও পান করার সময় সৃষ্টি করে। এমন কি মায়ের চারপাশের শব্দও ক্রণটি শুনতে পায়। এভাবে শ্রবণেন্দ্রিয় বিকশিত হয় এবং জীবনের অন্যান্য ইন্দ্রিয়ের অনেক আগেই একজন নবজাতকের মধ্যে তা কাজ করতে শুরু করে। কুরআন মাজীদ মানুষের অন্যান্য অঙ্গের পূর্বে শ্রবণেন্দ্রিয়ের কথা উল্লেখ করার পিছনে এটিকে একটি কারণ বলা যেতে পারে। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাতও এই বিষয়টিকে সমর্থন করে। তাঁর সুন্নাত আমাদেরকে শিক্ষা দেয়, যখনই কোনো নতুন শিশু জন্মগ্রহণ করে আমরা যেন তার কানে আযান শোনাই।

এটি অত্যন্ত লক্ষণীয় বিষয় যে, কুরআন মাজীদ শ্রবণেন্দ্রিয়ের ক্ষেত্রে সর্বদা একবচনের শব্দ ব্যবহার করেছে, পক্ষান্তরে দর্শনেন্দ্রিয়ের জন্যে বহুবচনের শব্দ ব্যবহার করেছে। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, ব্রেইনে যে ভিজুয়েল সেন্টার (দর্শনকেন্দ্র) রয়েছে যাকে Occipital lobe বলা হয়,  তা দুইটি সমজাতীয় অংশে বিভক্ত। পক্ষান্তরে হিয়ারিং সেন্টার (শ্রবণকেন্দ্র) হচ্ছে একটি। কুরআন মাজীদের এ ধরনের সুনির্দিষ্ট শব্দচয়ন তার অন্য একটি মু‘জেযা।

কান মাসাহ করা ও আধুনিক বিজ্ঞান :

কান মাসাহ করা রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাত। কানের ভেতরের দিকে (পেট) ভিজা শাহাদাত আঙুল দ্বারা এবং বাইরের দিক (পিঠ) আঙুল দ্বারা মাসাহ করার মাধ্যমে কানের সকল প্রকারের ময়লা দূর হয়ে যায় এবং এর দ্বারা শ্রুতির ওপর অন্তরঙ্গ প্রভাব পড়ে থাকে। যখন কানগুলো মাসাহ করা হয় তখন হৃদয়ের ওপর আশ্চর্য রকমের আনন্দের ছাপ পড়ে থাকে।

ফ্রান্সের গবেষকের মতে, মায়ের গর্ভে শব্দ শুনতে পায় শিশু। মানুষ জানত, ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরেই শিশুর কান ফোটে। অর্থাৎ শুনতে পায়। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, জন্মের তিন মাস আগে থেকে শিশু মানুষের কথা শুনতে পায় এবং তা বুঝতেও পারে। আর এভাবে মাতৃগর্ভেই শিশুর বাকশক্তির বিকাশ ঘটে বলে ধারণা করছেন গবেষকরা। মাতৃগর্ভে থাকাকালে জন্মের তিন মাস আগে থেকেই শিশুরা মানুষের কথা শুনতে পায় এবং তা বুঝতেও পারে বলে জানিয়েছেন ফ্রান্সের একদল গবেষক। সময়ের আগে জন্ম নেওয়া ১২টি নবজাতকের মস্তিষ্ক পরীক্ষায় এর প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে জানান তারা। গবেষণায় দেখা গেছে, মাতৃগর্ভে ২৮ সপ্তাহ পূর্ণ হওয়ার পরই শিশুরা ‘গা’ কিংবা ‘বা’ এর মতো ধ্বনি আলাদা করে বুঝতে পারে, এমনকি নারী পুরুষের কণ্ঠও আলাদা করে চিনতে পারে। 

বাবা-মা’র কণ্ঠস্বর শুনে গর্ভাবস্থায়ই শিশুরা ভাষাদক্ষতা অর্জন করে বলে যে ধারণা রয়েছে তাই-ই আরও দৃঢ় হয়েছে নতুন এ গবেষণায়। শিশুরা গর্ভে থাকাকালে কোলাহল শুনতে পায়। এ বিষয়টি আগেও গবেষণা থেকে জেনেছেন বিশেষজ্ঞরা। শিশুর কান এবং শ্রবণেন্দ্রিয় গঠিত হয়ে যায় প্রায় ২৩ সপ্তাহ সময়েই। কিন্তু তারপরও মানবশিশু জন্মগতভাবেই বাকশক্তি নিয়ে জন্মায় নাকি জন্মের পর শব্দ শুনে বাকশক্তির বিকাশ ঘটে, তা নিয়ে এখনো বিতর্ক রয়ে গেছে। প্রসেডিংস অব দ্যা ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সেস (পিএনএএস)-এ ফ্রান্সের গবেষকদের নতুন গবেষণা প্রতিবেদনে শিশুর ভাষা দক্ষতায় পারিপার্শ্বিক পরিবেশকে সন্দেহাতীতভাবে গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে গবেষণার প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে গবেষকরা ধারণা করছেন, শিশুর এ দক্ষতা জন্মগত।

মো. হারুনুর রশীদ

ফরক্কাবাদ, বিরল, দিনাজপুর।

Magazine