কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

হে পবিত্র ভূমি আল-আক্বছা!

হে আল-আক্বছা! হৃদয়ের মণিকোঠায় তুমি। হে ফিলিস্তীন! হে জেরুযালেম! হে প্রাণের স্পন্দন আক্বছা! তোমার রক্তিম আকাশ আমার বিষণ্নতা বাড়িয়ে দিচ্ছে। তোমার বারুদময় জীবন, দুশ্চিন্তার ক্লান্তিভাব, ছেলেহারা মায়ের ক্রন্দনরত রক্তচক্ষুর আড়ালে বিজয়ের প্রতিচ্ছবি—যা স্বপ্ন দেখায় নতুন দিগন্তের। যালেমের শত আঘাত পাথর বানিয়ে দিয়েছে, তবু তোমার মনোবল হারায়নি। তুমি যেন সেই হিত্তীনের প্রতিচ্ছবি।

হে ফিলিস্তীন! মনে রেখো, বিজয় তোমাদেরই। এ তো সাময়িক পরীক্ষা মাত্র, আল্লাহর বিচার অবধারিত। আজ না হোক কাল, বিজয় তোমাদেরই। নতুন দিগন্তের সুলতান ছালাহউদ্দীন হয়ে ফিরে এসো, হিত্তীন তো আমাদেরই। নতুন দিগন্তের নতুন হিত্তীন, যে হিত্তীন-যুদ্ধের জয় অবধারিত—সেই মহান জেরুযালেমের অধিপতি তোমায় ভুলে যাননি, হে আক্বছা!

জানো হে আক্বছা? শায়খ আলী মিয়াঁ নদভী যখন ছালাহউদ্দীন আইয়ূবীর কবর যিয়ারতে যান, সেদিন তিনি কী বলেছিলেন? তিনি সেদিন যিরিকলির সেই কবিতার পঙক্তিমালা আবৃত্তি করলেন—

ابعثوا لنا صلاح الدين من جديد

وأقيموا حطين أخرى أو مثل حطين

أعيدوا لنا العرب التي لا تُغلب

‘আমাদের মাঝে ছালাহউদ্দীনকে আবার পাঠান। নতুন করে হিত্তীন কিংবা হিত্তীনের মতো আরেকটি যুদ্ধ সংঘটিত করুন। আমাদের সেই আরব জাতিকে আবার ফিরিয়ে দিন, যারা কখনো পরাজিত হয় না’।

হে আক্বছা! তোমার সেই লাবণ্যময় যৌবনের রণাঙ্গনের সেই বীরত্বগাথা ইতিহাস কি তুমি ভুলতে বসেছ? ক্রুসেডারদের বিধ্বস্ত পরাজয়। তুমি কি ভুলে গেছ, সেই গৌরবমাখা বিজয়ের কথা—যেখানে ছিল তোমার একচ্ছত্র আধিপত্য। কোথায় তোমার সেই সুলতান নূরুদ্দীন যিনকি? কোথায় হারিয়ে গেছে ছালাহউদ্দীন আইয়ূবী? কবি নিজার কুবানি বলেছিলেন—

يا قدس، يا مدينة تفوح أنبياء

يا أقصر الدروب بين الأرض والسماء

يا دمعة كبيرة تجول في الأجفان

من يوقف العدوان؟

عليك، يا لؤلؤة الأديان

من يغسل الدماء عن حجارة الجدران؟

من ينقذ الإنسان؟

يا قدس، يا مدينتي

يا قدس، يا حبيبتي

غداً، غداً، سيزهر الليمون

وتفرح السنابل الخضراء والزيتون

‘হে জেরুযালেম! হে নবীদের তীর্থভূমি! হে আসমানের সর্বোচ্চ নিকটবর্তী পথ! তোমার চোখে ঘুরে বেড়ায় কত শত অশ্রুবিন্দু। কে থামাবে তোমার ওপর এই আগ্রাসন? হে সকল ধর্মের কাঙ্ক্ষিত ভূমি! কে ধুয়ে দেবে দেয়ালের পাথরে জমে থাকা তোমার রক্তিম ছাপ? কে উদ্ধার করবে মানবতাকে? হে জেরুযালেম! হে আমার শহর! হে জেরুযালেম! হে আমার প্রিয়! আগামীকাল‌ই তো ফুটবে লেবুর ফুল। সবুজ শস্যের জলপাই বাগান হবে আনন্দে মাশগূল’।

হে উমারের সেই বিজয়গাথা সৈনিক! ঈমান শক্ত করে মনোবল দৃঢ় রাখো, বিজয় আসন্ন। নির্বোধ নৈতিকতার অধঃপতনে নিমজ্জিত মুসলিম সমাজ তোমায় ভুলতে বসেছে, ভুলতে বসেছে বিজয়ের সেই গৌরবময় ইতিহাস। হে আক্বছা! তোমার রব কিন্তু তোমায় ভুলেনি। সেদিন আল-আক্বছা বিজয়ের পর উমার রাযিয়াল্লাহু আনহু একটি বিখ্যাত উক্তি করেছিলেন, যা আজ আবার তোমায় স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। তিনি বলেছিলেন— ‘আজ আমরা সেই শহরে প্রবেশ করলাম, যেখানে আমাদের নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বহু বছর আগে দু‘আ করেছিলেন। আল্লাহর কসম! আমাদের পূর্বসূরিরা যদি আল্লাহর উপর ঈমান রাখে এবং তাঁর রাস্তায় জীবন পরিচালনা করে, তাহলে এই ভূমিতে অবশ্যই তারা বিজয়ী হবে’।

প্রিয় আক্বছা! ঈমানের ওপর অবিচল থেকো। হাজারো কষ্টের মাঝে বিচলিত হয়ো না। মনে রেখো, ‘যালেমের চক্রান্তই চূড়ান্ত চক্রান্ত নয়’। আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَمَكَرُوا وَمَكَرَ اللَّهُ وَاللَّهُ خَيْرُ الْمَاكِرِينَ

‘তারা ষড়যন্ত্র করেছে এবং আল্লাহও তাদের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে পরিকল্পনা করেছেন। আর আল্লাহ তাআলা সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ পরিকল্পনাকারী’ (আলে ইমরান, ৩/৫৪)

মানবতার বুলি আওড়ানো মহান সেই নেতাগুলো তোমার পাশে থাকবে না। পশ্চিমা রঙে রঙিন হয়ে যাওয়া অন্তঃসারশূন্য মুসলিমরাও তোমার পাশে থাকবে না।

মনে রেখো, মুসলিমরা কখনো সংখ্যায় বিজয়ী হয়নি। বিজয় হয়েছে ঈমানের। বিজয় হয়েছে রবের আনুগত্যের।

আল্লাহ! তুমি রণাঙ্গনে সেই বীরদের মতো বীরদর্পে যুদ্ধ করার মতো মহান নেতা আমাদেরকে দাও, যার সামনে টিকবে না কোনো ক্রুসেডার বাহিনী, টিকবে না কোনো যালেমের চক্রান্ত।

বিজয়ের সুবাতাস নিয়ে ছালাহউদ্দীন আইয়ূবীরা আবার ফিরে আসবে প্রিয় আল-আক্বছার নীড়ে। আক্বছা নিয়ে লেখা কোনো এক কবির হৃদয় নিংড়ানো কবিতা দিয়ে আজকের কথামালার ইতি টানছি—

فلسطينُ في القلبِ

قلبي في فمِ القدسِ

وهذا السّحابُ الأبيضُ

يسقطُ على الجراحِ، على الجروحِ

من أجل القدس

من أجل القدس نعيشُ كالأبطالِ

سنبقى على العهدِ مهما طالَ الزمانُ

في كلّ زاويةٍ نزرعُ الأملَ

وتظلّ القدسُ في قلوبنا بَقِيَّةً

‘ফিলিস্তীন আমার হৃদয়ে। আমার হৃদয় কুদসের ঠোঁটে। আর এই সাদা মেঘগুলো, ছায়া দেয় আহত স্থানগুলোকে, সেই ক্ষতগুলোকে। কুদসের জন্য আমরা বাঁচব— বীরের মতো, আমরা থাকব চির-প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। প্রতি ক্ষণে আমরা আশা বুনব, কুদস থাকবে চিরকাল আমাদের অন্তরের দহলিজে’।

কী করে ভুলি তোমায়, হে আক্বছা! আমার এ বিষণ্ন মন তোমার বিজয়ের অপেক্ষায়।

অধ্যয়নরত, আল-আযহার বিশ্ববিদ্যালয়, কায়রো, মিশর।

Magazine