কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

আদর্শ মুমিনের গুণাবলি

post title will place here

দুনিয়া হোক বা আখেরাত হোক কেবল মুমিনরাই সফলকাম। আল্লাহ তাআলা দুনিয়াতে দান করেন পবিত্র সুখময় জীবন। আল্লাহ তাআলা বলেন,﴿مَنْ عَمِلَ صَالِحًا مِنْ ذَكَرٍ أَوْ أُنْثَى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَنُحْيِيَنَّهُ حَيَاةً طَيِّبَةً﴾ ‘মুমিন পুরুষ ও নারীর মধ্যে যে কেউ সৎকাজ করবে তাকে আমি নিশ্চয়ই আনন্দময় জীবন দান করব’ (আন-নাহল, ১৬/৯৭)। আর আখেরাতে তাদেরকে জাহান্নাম থেকে নাজাত দেন এবং তারা প্রবেশ করে চির সুখময় জান্নাতে। আপনি কি জানেন প্রকৃত সফল কে? প্রকৃত সফল হচ্ছে তারাই, যারা মুমিন। এই সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন,﴿فَمَنْ زُحْزِحَ عَنِ النَّارِ وَأُدْخِلَ الْجَنَّةَ فَقَدْ فَازَ وَمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا إِلَّا مَتَاعُ الْغُرُورِ﴾ ‘যাকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে সে-ই সফলতা পাবে, আর পার্থিব জীবন প্রতারণার সম্পদ ছাড়া আর কিছুই নয়’ (আলে ইমরান, ৩/১৮৫)

সফল মানে এই নয় যে, দুনিয়াতে যাদের টাকা-পয়সা, ধন-দৌলত, বাড়ি-গাড়ি আছে বলেই তারা সফল? কখনই না, তারাই তো সুখী, যারা মুমিন। আল্লাহ তাআলা স্পষ্ট করে দিলেন কে সফল। তাহলে কেন আজ আমরা নির্ভয়ে আছি। দুনিয়া এবং আখেরাতে সফল হতে গেলে একজন আদর্শ মুমিনের বিকল্প নেই। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন,﴿قَدْ أَفْلَحَ الْمُؤْمِنُونَ﴾ ‘অবশ্যই মুমিনগণ সফল হয়েছে’ (আল-মুমিনূন, ২৩/১)। কিন্তু একটা জিনিস খেয়াল করতে হবে। একজন প্রকৃত মুমিন হতে হলে অবশ্যই আপনার মধ্যে কয়েকটি গুণের সমাবেশ ঘটাতে হবে। সেই গুণগুলো কী, তা আমরা একটু জেনে নিই। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে মুমিনের গুণাবলি নিয়ে অনেক আলোচনা করেছেন।

প্রথম গুণ : মুমিনরা ছালাতে একনিষ্ঠ, বিনয়ী ও নম্র থাকবে। আল্লাহ তাআলা বলেন,﴿الَّذِينَ هُمْ فِى صَلَاتِهِمْ خٰشِعُونَ﴾ ‘যারা নিজেদের ছালাতে বিনয়াবনত’ (আল-মুমিনূন, ২৩/২)

তাহলে ছালাতে বিনয়ী, নম্র হওয়া একজন আদর্শ মুমিনের গুণ। যদি সে ছালাতে বিনয়ী থাকতে না পারে তাহলে সে প্রকৃত মুমিন হতে পারে না। কারণ ছালাত হলো প্রতিটি আমলের মূল। যার ছালাত সুন্দর হয় তার সব আমল সুন্দর হয়। ছালাত মানুষকে সব ধরনের গুনাহ থেকে বিরত রাখে। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন,﴿إِنَّ الصَّلٰوةَ تَنْهٰى عَنِ الْفَحْشَآءِ وَالْمُنكَرِ﴾ ‘নিশ্চয় ছালাত অশ্লীল ও মন্দকাজ থেকে বিরত রাখে’ (আল-আনকাবূত, ২৯/৪৫)

আপনি যদি মনে করেন, আমি আজ থেকে আমার জীবন পরিবর্তন করব, তাহলে ছালাতের সাথে একনিষ্ঠ থাকতে হবে। ছালাতকে আঁকড়ে ধরতে হবে। আপনার মনের সমস্ত চাওয়া নিয়ে প্রতিদিন পাঁচবার ছালাতে উপস্থিত হন এবং সিজদায় গিয়ে মনের সব কথা আল্লাহকে খুলে বলুন। ইনশাআল্লাহ আপনার জীবন পাল্টে যাবে।

দ্বিতীয় গুণ : মুমিনরা বেহুদা কথা ও কাজ থেকে বিরত থাকে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ﴿وَالَّذِينَ هُمْ عَنِ اللَّغْوِ مُعْرِضُونَ﴾ ‘আর যারা অনর্থক কথা-কর্ম থেকে বিমুখ’ (আল-মুমিনূন, ২৩/৩)

অহেতুক কথা ও কাজ থেকে বিরত থাকা আদর্শ মুমিনের অন্য একটা গুণ। যারা মুমিন হবে তারা একটা কথা মুখ থেকে বের করার আগে ভেবে নেয়, তার কথাটা দুনিয়া ও আখেরাতে কোনো উপকার করবে কি-না। যদি উপকার না করে তাহলে বলবে না। তারাই হলো প্রকৃত মুমিন। কাজের ক্ষেত্রেও একই, চিন্তা-ভাবনা করে কাজ করে। এভাবে মুমিন ব্যক্তি তার প্রতিটি কাজ সুন্দর করে গড়ে তোলে এবং তার জীবন হয় সুন্দর।

তৃতীয় গুণ : মুমিনরা যাকাত আদায় করে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ﴿وَالَّذِينَ هُمْ لِلزَّكٰوةِ فٰعِلُونَ﴾ ‘আর যারা যাকাতের ক্ষেত্রে সক্রিয়’ (আল-মুমিনূন, ২৩/৪)

যাকাত ইসলামের একটা গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। মুমিন ব্যক্তি কখনো যাকাত আদায়ে অবহেলা করে না। যাকাত আদায় করলে মাল পবিত্র হয়। কারণ যাকাত ধনীদের সম্পদ হলেও এটা গরীবদের হক্ব। কাজেই যারা মুমিন হবে তারা কখনো যাকাত আদায়ে অবহেলা করবে না।

চতুর্থ গুণ : মুমিনরা লজ্জাস্থানের হেফাযত করবে। আল্লাহ তাআলা বলেন,﴿وَالَّذِينَ هُمْ لِفُرُوجِهِمْ حَافِظُونَ- إِلَّا عَلَى أَزْوَاجِهِمْ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُمْ فَإِنَّهُمْ غَيْرُ مَلُومِينَ - فَمَنِ ابْتَغَى وَرَاءَ ذَلِكَ فَأُولَئِكَ هُمُ الْعَادُونَ﴾ ‘আর যারা তাদের নিজেদের লজ্জাস্থানের হেফাযতকারী। তবে তাদের স্ত্রী ও তাদের ডান হাত যার মালিক হয়েছে তারা ছাড়া, নিশ্চয় এতে তারা নিন্দিত হবে না। অতঃপর যারা এদের ছাড়া অন্যকে কামনা করে তারাই সীমালঙ্ঘনকারী’ (আল-মুমিনূন, ২৩/৫-৭)

লজ্জাস্থানের হেফাযত করা মুমিনের জন্য একটা আদর্শ গুণ। মুমিনরা যেকোনো মূল্যে তাদের লজ্জাস্থানের হেফাযত করবে। বিশেষ করে আপনারা যারা যুবক ভাইয়েরা আছেন, আপনাদের জীবনকে পবিত্র রাখুন। বর্তমান প্রেম-ভালোবাসার আগুনে ঝাঁপিয়ে পড়বেন না। নিজেদের দাম্পত্য জীবনের মধুর আয়োজনকে আগেই নষ্ট করবেন না। মনে রাখবেন আপনার যৌবন আপনার আখেরাত। আর বেশি বেশি আল্লাহর কাছে দু‘আ করুন। আপনি যদি আপনার জীবনকে পবিত্র রাখতে পারেন, তাহলে আল্লাহ তাআলা আপনাকে একজন পবিত্র জীবনসঙ্গী দান করবেন ইনশাআল্লাহ।

পঞ্চম গুণ : মুমিনরা আমানত রক্ষা করে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ﴿وَالَّذِينَ هُمْ لِأَمٰنٰتِهِمْ وَعَهْدِهِمْ رٰعُونَ﴾ ‘আর যারা নিজদের আমানতসমূহ ও অঙ্গীকারে যত্নবান’ (আল-মুমিনূন, ২৩/৮)

একজন আদর্শ মুমিনের অন্য একটি গুণ হলো সে আমানত ও ওয়াদা রক্ষা করবে। তার কাছে কোনো কিছু আমানত রাখলে তা খেয়ানত করবে না। যে কেউ ইচ্ছা করলে তার কাছে নিশ্চিন্তে আমানত রাখতে পারবে ইনশাআল্লাহ। কারণ যে ব্যক্তি আমানতের খেয়ানত করে সেই ব্যক্তি মুনাফেক্ব আর মুমিন ব্যক্তি কখনই মুনাফেক্বী আচরণ করে না। যে ব্যক্তি যথাযথভাবে আমানতের হেফাযত করে তাকে সবাই বিশ্বাস করে। এমনকি যারা তার শত্রু তারাও তাকে সম্মান করে। আপনি একটু চিন্তা করে দেখুন, এই গুণটি আপনার মাঝে আছে কি-না। আদর্শ মুমিন হতে গেলে আপনাকে এই গুণটি অর্জন করা একান্ত কর্তব্য।

ষষ্ঠ গুণ : মুমিনরা ছালাতের প্রতি যত্নবান থাকে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ﴿وَالَّذِينَ هُمْ عَلٰى صَلَوٰتِهِمْ يُحَافِظُونَ﴾ ‘আর যারা নিজেদের ছালাতসমূহ হেফাযত করে’ (আল-মুমিনূন, ২৩/৯)

মুমিন ব্যক্তি কখনো ছালাতকে অবহেলা করে না। ছালাতকে কেন্দ্র করেই গড়ে ওঠে তাদের জীবন। সে এক ওয়াক্ত ছালাত আদায় করার পর পরবর্তী ওয়াক্তের অপেক্ষায় থাকে। তাহলে একজন আদর্শ মুমিন হতে চাইলে তাকে ছালাতে যত্নবান হওয়া জরুরী।

সুধী পাঠক! লক্ষ করুন, আপনার মধ্যে এই গুণগুলো কি আছে? যদি না থাকে তাহলে কেন নির্ভয়ে আছেন? আপনি যদি একজন আদর্শ মুমিন হতে চান, তাহলে এই গুণগুলো অবশ্যই অর্জন করতে হবে। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন- আমীন!

মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ রাসেল

শিক্ষার্থী, আল-হাদীছ এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।

Magazine