কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

ইসলামে বায়‘আত (পর্ব-৪)

post title will place here

সরকার ছাড়া কোনো জামা‘আত, দল, সংগঠন, প্রতিষ্ঠানপ্রধান বা অন্য কেউ বায়‘আত নিতে পারবেন কিনা? এ ব্যাপারে সাফ কথা হচ্ছে— কোনো সংস্থা, সংগঠন, দল, প্রতিষ্ঠান, ত্বরীক্বা বা জামা‘আতের নেতার জন্য বায়‘আত আদৌ বৈধ নয়। মনে রাখতে হবে, বিভিন্ন দ্বীনী সংগঠন ও প্রচলিত ত্বরীক্বায় যেসব বায়‘আত চলছে, সেগুলো ছূফীতান্ত্রিক সংগঠনগুলো থেকে ধার করা বিদ‘আতী বায়‘আত। ইসলামের নামে সেগুলো চালানো বিভ্রাট ছাড়া আর কিছুই নয়। বরং কোনো দলীয় নেতা বায়‘আত নিলে নিঃসন্দেহে তা হবে সম্পূর্ণ বিদ‘আতী ও ছূফী বায়‘আত। কুরআন মাজীদ, ছহীহ সুন্নাহ এবং সালাফে ছালেহীনের বক্তব্য, মূলনীতি ও জীবনাদর্শ সন্দেহাতীতভাবে একথাই প্রমাণ করে। এতে কোনো প্রকার অপব্যাখ্যা, ধূম্রজাল, বিভ্রাট ও সন্দেহ সৃষ্টির কোনো প্রকার সুযোগ নেই। আমরা ইতোপূর্বে বায়‘আত বিষয়ক দলীল উপস্থাপনের সময় রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম–এর শব্দচয়ন এবং আয়াত ও হাদীছগুলো থেকে ভাষ্যকার উলামায়ে কেরামের মন্তব্য দেখে এসেছি, যার সবগুলোই প্রমাণ করে, বায়‘আত কেবল সরকারের জন্য। নিচে এ সম্পর্কে আরো কয়েকজন আলেমের বক্তব্য উপস্থাপন করা হলো—

এ সম্পর্কে উলামায়ে কেরামের বক্তব্য:

(১) সঊদী আরবের উচ্চ উলামা পরিষদের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য আল্লামা বাকর আবূ যায়েদ রাহিমাহুল্লাহ বায়‘আত সম্পর্কে বলেন,

إِنَّ الْبَيْعَةَ فِي الْإِسْلَامِ وَاحِدَةٌ، مِنْ أَهْلِ الْحَلِّ وَالْعَقْدِ لِوَلِيِّ أَمْرِ الْمُسْلِمِيْنَ وَسُلْطَانِهِمْ، وَأَنَّ مَا دُوْنَ ذَلِكَ مِنَ الْبَيْعَاتِ الطُّرُقِيَّةِ وَالْحِزْبِيَّةِ فِي بَعْضِ الْفِرَقِ (الْجَمَاعَاتِ) الدِّيْنِيَّةِ الْمُعَاصِرَةِ كُلُّهَا بَيْعَاتٌ لَا أَصْلَ لَهَا فِي الشَّرْعِ لَا مِنْ كِتَابِ اللهِ وَلَا سُنَّةِ رَسُوْلِهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَلَا عَمَلِ صَحَابِيٍّ، وَلَا تَابِعِيٍّ، فَهِيَ بَيْعَاتٌ مُبْتَدِعَةٌ، وَكُلُّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ. وَكُلُّ بَيْعَةٍ لَا أَصْلَ لَهَا فِي الشَّرْعِ فَهِيَ غَيْرُ لَازِمَةِ الْعَهْدِ، فَلَا حَرَجَ وَلَا إِثْمَ فِي تَرْكِهَا وَنَكْثِهَا، بَلْ الإِثْمُ فِي عَقْدِهَا؛ لِأَنَّ التَّعَبُّدَ بِهَا أَمْرٌ مُحْدَثٌ لَا أَصْلَ لَهُ، نَاهِيْكَ عَمَّا يَتَرَتَّبُ عَلَيْهَا مِنْ تَشْقِيْقِ الْأُمَّةِ وَتَفْرِيْقِهَا شِيَعًا وَإِثَارَةِ الْفِتَنِ بَيْنَهَا وَاسْتِعْدَاءِ بَعْضِهَا عَلَى بَعْضٍ، فَهِيَ خَارِجَةٌ عَنْ حَدِّ الشَّرْعِ سَوَاءً سُمِّيَتْ بَيْعَةً أَوْ عَهْدًا أَوْ عَقْدًا.

‘ইসলামে বায়‘আত মাত্র একটিই। ‘আহলুল হাল ওয়াল আক্বদ’ তথা নেতৃস্থানীয় ও শীর্ষ ব্যক্তিবর্গ কর্তৃক মনোনীত মুসলিম সরকারের বায়‘আত ছাড়া ইসলামে দ্বিতীয় কোনো বায়‘আত নেই। এর বাইরে বর্তমান বিভিন্ন ধর্মভিত্তিক দলে-উপদলে যেসব বায়‘আত দেখা যাচ্ছে, সেগুলো তরীক্বতী ও দলীয় বায়‘আত; সেগুলোর কোনো শারঈ ভিত্তি নেই। কুরআন ও হাদীছে এগুলোর ভিত্তি থাকা তো দূরের কথা, এমনকি কোনো ছাহাবী বা তাবেঈর আমল থেকেও এর স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ মিলে না। বরং এগুলোর সবই বিদ‘আতী বায়‘আত এবং প্রত্যেক বিদ‘আতই পথভ্রষ্ট। আর যেসব বায়‘আতের শারঈ কোনো ভিত্তি নেই, সেগুলো ভঙ্গ করলে কোনো দোষ নেই এবং কোনো গোনাহও নেই; বরং সেসব বায়‘আত সম্পন্ন হলেই পাপ হবে। কেননা এসব বায়‘আতের মাধ্যমে ধার্মিক হওয়ার চেষ্টা করা নবাবিষ্কার, যার কোনো ভিত্তি নেই। তাছাড়া এসব বায়‘আতের উপর ভিত্তি করে মুসলিম উম্মাহর মধ্যে বিভক্তি ও দলাদলির সৃষ্টি হয় এবং তাদের মধ্যে ফেতনা-ফাসাদ ছড়িয়ে পড়ে। উপরন্তু একজনকে আরেক জনের উপর ক্ষেপিয়ে তোলা হয়। অতএব, বায়‘আত, শপথ, চুক্তি বা অন্য যে নামই দেওয়া হোক না কেনো এসব বায়‘আত শরী‘আতের গণ্ডির বাইরে’।[1]

(২) রিয়াদের ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে সুঊদ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ভারতীয় শিক্ষার্থীর ভারতে প্রচলিত বায়‘আত সম্পর্কিত প্রশ্নের জবাবে সঊদী আরবের সাবেক প্রধান মুফতী আল্লামা আব্দুল আযীয ইবনে বায রাহিমাহুল্লাহ স্পষ্ট বলেন,

فَلَا نَعْلَمُ أَصْلًا لَهَذِهِ الْبَيْعَةِ، إِلَّا مَا يَحْصُلُ لِوُلَاةِ الْأُمُورِ، فَإِنَّ اللَّهَ شَرَعَ سُبْحَانَهُ أَنْ يُبَايِعَ وَلِيُّ الْأَمْرِ عَلَى السَّمْعِ وَالطَّاعَةِ فِي الْمَنْشَطِ وَالْمَكْرَهِ وَالْعُسْرِ وَالْيُسْرِ، وَفِي الْأَثَرَةِ عَلَى الْمُبَايِعِ، كَمَا بَايَعَ الصَّحَابَةُ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمْ وَأُرْضِاهُمْ نَبِيَّنَا -عَلَيْهِ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ-. فَالْبَيْعَةُ تَكُوْنُ لِوُلَاةِ الْأُمُوْرِ عَلَى مُقْتَضَى كِتَابِ اللَّهِ وَسُنَّةِ رَسُوْلِهِ -عَلَيْهِ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامِ- وَأَنْ يَقُوْلُوْا بِالْحَقِّ أَيْنَمَا كَانُوْا، وَأَلَا يُنَازِعُوْا الْأَمْرَ أَهْلَهُ، إِلَّا أَنْ يَرَوْا كُفْرًا بَوَاحًا عِنْدَهُمْ مِنَ اللَّهِ فِيْهِ بُرْهَانٌ.

أَمَّا بَيْعَةُ الصُّوْفِيَّةِ بَعْضِهِمْ لِبَعْضٍ فَلَا أَعْلَمُ لَهَا أَصْلًا، وَهَذَا قَدْ يُسَبِّبُ مَشَاكِلَ، فَإِنَّ الْبَيْعَةَ قَدْ يَظُنُّ الْمُبَايِعُ أَنَّهُ يَلْزَمُ الْمُبَايِعَ طَاعَتَهُ فِي كُلِّ شَيْءٍ، حَتَّى وَلَوْ قَالَ بِالْخُرُوْجِ عَلَى وُلاَةِ الأُمُوْرِ، وَهَذَا شَيْءٌ مُنْكَرٌ لا يَجُوْزُ...

‘এই বায়‘আতের কোনো ভিত্তি আছে মর্মে আমাদের জানা নেই। তবে সরকারের জন্য যেসব বায়‘আত হয়, সে সম্পর্কে আমাদের জানা আছে। মহান আল্লাহ বিধান দিয়েছেন যে, সরকার (জনগণের কাছ থেকে) আনুগত্যের বায়‘আত নিবেন দুখে-সুখে, অনুরাগ-বিরাগে এবং বায়‘আত গ্রহণকারীর উপর অন্যকে প্রাধান্য দেওয়ার সময়; যেমনভাবে নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছাহাবীবৃন্দ আলাইহিস সালাম-এর বায়‘আত নিয়েছেন। অতএব, বায়‘আত কুরআন-সুন্নাহর আলোকে সরকারের জন্য হবে। জনগণ যেখানেই থাক না কেনো হক্ব কথা বলবে। তারা যোগ্য ব্যক্তির আনুগত্য করার ব্যাপারে পরস্পর দ্বন্দ্বে জড়াবে না। তবে যদি তারা (সরকারের) স্পষ্ট কুফর দেখতে পায় এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে সে ব্যাপারে তাদের নিকট দলীল থাকে, তাহলে ভিন্ন কথা।

ছূফীদের পরস্পরের বায়‘আতের ব্যাপারে কোনো ভিত্তি আছে মর্মে আমার জানা নেই। তাছাড়া এই বায়‘আত অনেক সমস্যার সৃষ্টি করে থাকে। যেমন- বায়‘আত প্রদানকারী মনে করতে পারে, (এর মাধ্যমে) সবকিছুতে বায়‘আত গ্রহণকারীর আনুগত্য করা তার জন্য আবশ্যক হয়ে যায়। এমনকি বায়‘আত প্রদানকারী সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার কথা বললেও তার আনুগত্য করা আবশ্যক। এটা ঘৃণ্য কাজ, নাজায়েয’।…[2]

(৩) বায়‘আতের শর্ত সংশ্লিষ্ট একটি প্রশ্নের উত্তরে শায়খ মুহাম্মাদ ইবনে ছলেহ আল-উছাইমীন রাহিমাহুল্লাহ বলেন,

الْبَيْعَةُ الَّتِيْ تَكُوْنُ فِيْ بَعْضِ الْجَمَاعَاتِ بَيْعَةٌ مُنْكَرَةٌ شَاذَّةٌ؛ لِأَنَّهَا تَتَضَمَّنُ أَنَّ الْإِنْسَانَ يَجْعَلُ لِنَفْسِهِ إِمَامَيْنِ وَسُلْطَانَيْنْ؛ الْإِمَامُ الْأَعْظَمُ الَّذِي هُوَ عَلَى جَمِيعِ الْبِلَادِ، وَالْإِمَامُ الَّذِيْ بَايَعَهُ، وَتُفْضِيْ إِلَى شَرٍّ بِالْخُرُوْجِ عَلَى الْأَئِمَّةِ الَّذِيْ يَحْصُلُ بِهِ مِنْ سَفْكِ الدِّمَاءِ، وَإِتْلَافِ الْأَمْوَالِ، مَا لَا يَعْلَمُهُ إِلَّا اللَّهُ، وَأَمَّا التَّأْمِيْرُ عَلَى الْجَمَاعَةِ، فَهَذَا قَدْ جَاءَتْ بِهِ السُّنَّةُ فِيْمَا إِذَا سَافَرَ جَمَاعَةٌ أَنْ يُؤَمِّرُوْا أَحَدَهُمْ.

‘বিভিন্ন জামা‘আতে যে বায়‘আত হয়, তা অস্বীকৃত ও বিচ্ছিন্ন বায়‘আত। কেননা এসব বায়‘আতের অনিবার্য দাবি হচ্ছে, মানুষ নিজের জন্য দুইজন ইমাম ও রাষ্ট্রনেতা গ্রহণ করতে পারে। একজন বড় রাষ্ট্রনেতা, যিনি পুরো দেশের দায়িত্বে আছেন। অপরজন তিনি, ব্যক্তি যার বায়‘আত নিয়েছেন। এসব বায়‘আত সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের মাধ্যম হওয়ার কারণে রক্ত ঝরা, সম্পদ নষ্ট হওয়া ইত্যাদি অনিষ্ট ডেকে আনে, যা কেবল আল্লাহই জানেন। আর হাদীছের ভাষ্যমতে কোনো দলের আমীর বানানোর বিষয়টি সফরের সাথে নির্দিষ্ট; যখন তারা সফর করবে, তখন তাদের একজনকে আমীর বানাবে’।[3]

(৪) কিছু কিছু দল তাদের দলীয় লোকদের বায়‘আত গ্রহণ করে— এ বিষয়ে যুগশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিছ শায়খ নাছিরুদ্দীন আলবানী রাহিমাহুল্লাহ-কে জিজ্ঞেস করা হলে তিন বলেন,

نَحْنُ فِيْمَا عَلِمْنَا لَا نَرَى أَبَدًا هُنَاكَ بَيْعَةً إِلَّا لِمَنْ لَا وُجُودَ لَهُ الْيَوْمَ؛ فَإِذَا وُجِدَ بُوْيِعَ وَهُوَ الْخَلِيْفَةُ الَّذِيْ يُجْمِعُ الْمُسْلِمُوْنَ عَلَى مُبَايَعَتِهِ؛ أَمَّا مُبَايَعَةُ حِزْبٍ مِنَ الْأَحْزَابِ، لِفَرْدٍ لِرَئِيْسٍ لَهُمْ أَوْ جَمَاعَةٍ مِنَ الْجَمَاعَاتِ لِرَئِيسِهِمْ وَهَكَذَا، فَهَذَا فِي الْوَاقِعِ مِنَ الْبِدَعِ الْعَصْرِيَّةِ الَّتِيْ فَشَتْ فِي الزَّمَنِ الْحَاضِرِ، وَذَلِكَ بِلَا شَكٍّ مِمَّا يُثِيْرُ فِتَنًا كَثِيْرَةً جِدًّا بَيْنَ الْمُسْلِمِيْنَ، لِأَنَّ كُلَّ جَمَاعَةٍ تَجِدُ نَفْسَهَا وَقَدْ أَخَذَتْ بِرَهْبَةِ الْبَيْعَةِ أَنْ تَلْتَزِمَ الْخَطَّ الَّذِيْ يَمْشِيْ فِيْهِ حِزْبُهُ، فَهَذَا الْمُبَايَعُ لَهُ الْأَمْرُ وَالنَّهْيُ كَمَا لَوْ كَانَ خَلِيْفَةَ الْمُسْلِمِيْنَ، وَهُنَاكَ مُبَايَعٌ آخَرُ وَلَهُ خَطٌّ آخَرُ وَهَكَذَا تَتَبَاعَدُ الْجَمَاعَاتُ بَعْضُهَا عَنْ بَعْضٍ بِسَبَبِ هَذِهِ الْبَيْعَاتِ الْعَدِيدَةِ الْمُخْتَلِفَةِ...

‘আমাদের জানা মতে, আজকে যার অস্তিত্ব নেই, কেবল তিনি ছাড়া অন্য কারো বায়‘আত হতে পারে, তা আমরা মনে করি না। যখন তিনি অস্তিত্বে আসবেন, তখন তার বায়‘আত করতে হবে। অর্থাৎ তিনি হলেন সেই খলীফা, যার বায়‘আত গ্রহণে মুসলিমগণ একমত হবেন। পক্ষান্তরে, কোনো দলের বায়‘আত, যা দলের যে-কোনো সদস্য তার নেতাকে দেন, সে বায়‘আত আসলে আধুনিক বিদ‘আত, যা বর্তমান সময়ে ছড়িয়ে পড়েছে। নিঃসন্দেহে এই বায়‘আত মুসলিমদের মধ্যে অনেক ফেতনা সৃষ্টি করে থাকে। কারণ প্রত্যেকটি জামা‘আত বায়‘আতের ভীতি কাঁধে নিয়ে নিজ দলের অঙ্কিত পথে চলতে বাধ্য হয়। আর মুসলিমদের একক খলীফার যেমন কর্তৃত্ব থাকে, এই বায়‘আত গ্রহণকারী ব্যক্তিরও তেমন কর্তৃত্ব থাকে। দেখা যায়, এরকম অন্য আরো বায়‘আত গ্রহণকারী নেতা থাকে এবং তারও চলার ভিন্ন পথ থাকে। আর এসব বায়‘আতের কারণে এভাবে দলগুলো পরস্পর দূরে সরতে থাকে’।…[4]

(৫) ইয়ামানের বিখ্যাত আলেম শায়খ মুক্ববিল ইবনে হাদী আল-ওয়াদিঈ রাহিমাহুল্লাহ বলেন,

لاَ شَكَّ اَنَّ البَيْعَاتِ الْمَوْجُودَة عِنْدَ الْفُرَقِ الإِسْلَامِيَّةِ لَا أَصْلَ لَهَا مِنَ الْكِتَابِ وَالسُّنَّةِ فَهِيَ بَيْعَاتٌ مُبْتَدَعَةٌ خَارِجَةٌ عَنْ حَدِّ الشَّرْعِ سَوَاءَ سُمِّيَتْ بَيْعَةً أَوْ عَهْدًا أَوْ عَقْدً فَالسُّؤَالُ هَلْ يَجُوزُ أَنْ يَحْكُمَ عَلَى الْأَفْرَادِ الْمُبَايِعِينَ لَهَا أَنَّهُمْ مُبْتَدَعُونَ بِسَبَبِ الْبَيْعَةِ الْبِدْعِيَّةِ؟
لاَ شَكَّ فِي هَذَا فَلِيَبْلُغَ الشَّاهِدُ الْغَائِبَ أَنَّ الَّذِينَ يُفْرِضُونَ عَلَى أَصْحَابِهِمْ الْبَيْعَةَ أَنَّهُمْ يُعْتَبَرُونَ مُبْتَدَعَةً ، فَهَذَا لَمْ يَكُنْ فِي زَمَنِ الصَّحَابَةِ وَلَا التَّابِعِينَ وَلَا تَابِعِي التَّابِعِينَ...

وَأَمَا اسْتِدْلَالُهُمْ بِالْآيَاتِ وَالْأَحَادِيْثِ الَّتِيْ فِيْهَا البَيْعَةُ فَهَذَا اسْتِدْلَالٌ فِيْ غَيْرِ مَوْضِعِهِ، لِأَنَّهَا بَيْعَةٌ لِإِمَامِ الْمُسْلِمِيْنَ...

‘এ ব্যাপারে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই যে, কুরআন ও সুন্নাহয় বিভিন্ন ইসলামী দলে বিদ্যমান বায়‘আতের পক্ষে কোনো ভিত্তি নেই। এগুলোর নাম বায়‘আত, অঙ্গীকার বা চুক্তি যেটাই দেওয়া হোক না কেনো এগুলো সব ইসলামী শরী‘আতের গণ্ডির বাইরের বিদ‘আতী বায়‘আত। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, বিদ‘আতী বায়‘আত করার কারণে বায়‘আতকারীদেরকে কি বিদ‘আতী ট্যাগ দেওয়া জায়েয হবে?

এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। অতএব, উপস্থিতিগণ যেনো অনুপস্থিতগণকে জানিয়ে দেয় যে, যারা তাদের অনুসারীদের উপর বায়‘আত চাপিয়ে দেয়, তারা বিদ‘আতী হিসেবে গণ্য হবে। এই বায়‘আত ছাহাবী, তাবেঈ বা তাবে-তাবেঈ কোনো আমলেই ছিল না।

বায়‘আত সম্বলিত যেসব আয়াত ও হাদীছ তারা দলীল হিসেবে উপস্থাপন করে, সেগুলো থেকে তাদের দলীল গ্রহণের পদ্ধতি যথার্থ নয়। কেননা সেই বায়‘আত মুসলিম সরকারের বায়‘আত’।[5]

(৬) শায়খ ছলেহ আল-ফাওযান হাফিযাহুল্লাহ বিভিন্ন দলের বায়‘আত সম্পর্কিত প্রশ্নের উত্তরে বলেন,

البَيْعَةُ لَا تَكُونُ إِلَّا لِوَلِيِّ أَمْرِ الْمُسْلِمِينَ، وَهَذِهِ الْبَيْعَاتُ الْمُتَعَدِّدَةُ مُبْتَدَعَةٌ، وَهِيَ مِنْ إِفْرَازَاتِ الْاِخْتِلَافِ، وَالْوَاجِبُ عَلَى الْمُسْلِمِينَ الَّذِينَ هُمْ فِي بَلَدٍ وَاحِدٍ وَفِي مَمْلَكَةٍ وَاحِدَةٍ أَنْ تَكُونَ بَيْعَتُهُمْ وَاحِدَةً لِإِمَامٍ وَاحِدٍ، وَلَا يَجُوزُ الْمُبَايِعَاتُ الْمُتَعَدِّدَةُ.

‘মুসলিম সরকার ছাড়া অন্য কারো জন্য বায়‘আত হবে না। বিভিন্ন ধরনের এসব বায়‘আত বিদ‘আত। এগুলো মতভেদ উস্কে দেয়। যেসব মুসলিম একই দেশে থাকে, তাদের জন্য আবশ্যক হচ্ছে, তাদের বায়‘আত একটাই হতে হবে এবং তা হবে সরকারের জন্য। বিভিন্ন ধরনের বায়‘আত জায়েয নেই’।[6]

(৭) সঊদী আরবের স্থায়ী ফতওয়া বোর্ড ‘আল-লাজনাহ আদ-দায়েমাহ’-এর সম্মানিত সদস্যবৃন্দ বিজ্ঞ উলামায়ে কেরাম বলেন,

الْبَيْعَةُ لَا تَجُوزُ إِلَّا لِوَلِي أَمْرِ الْمُسْلِمِينَ عَلَى السَّمْعِ وَالطَّاعَةِ، كَمَا كَانَ الصَّحَابَةُ يُبَايِعُونَ النَّبِيَ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَكَمَا بَايَعَ الْمُسْلِمُونَ الْخُلَفَاءَ الرَّاشِدِينَ، أَمَّا الْبَيْعَةُ لِغَيْرِ وَلِي الْأَمْرِ فَهِيَ بِدْعَةٌ وَبَاطِلَةٌ؛ لِقَوْلِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ عَمِلَ عَمَلًا لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌ»، وَفِي رِوَايَةٍ: «مَنْ أَحَدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رَدٌ » مُتَّفَقٌ عَلَى صَحَّتِهِ».

‘মুসলিম সরকার ছাড়া অন্য কারো জন্য আনুগত্যের বায়‘আত গ্রহণ জায়েয নেই। যেমনটি ছাহাবীগণ আলাইহিস সালাম নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম–এর নিকট বায়‘আত করেছিলেন এবং মুসলিমগণ খুলাফায়ে রাশেদীন আলাইহিস সালাম-এর নিকট বায়‘আত করেছিলেন। সরকার ছাড়া অন্য কারো জন্য বায়‘আত করলে তা বিদ‘আত এবং বাতিল। কেননা নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি এমন আমল করলো, যে ব্যাপারে আমাদের নির্দেশনা নেই, সেই আমল প্রত্যাখ্যাত’। অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘যে ব্যক্তি আমাদের দ্বীনে নতুন কিছু সংযুক্ত করল, যা তার মধ্যে নেই, তাহলে তা প্রত্যাখ্যাত’ (বুখারী ও মুসলিম)[7]

(৮) শায়খ ছালেহ আল-মুনাজ্জিদ পরিচালিত সঊদী আরবভিত্তিক বিশ্বখ্যাত ফতওয়ার ওয়েবসাইট islamqa-এর ২৩৩২০ নম্বর প্রশ্নের সার্থকথা ছিল, বায়‘আত হবে কার জন্য? এর উত্তরে ওয়েবসাইটটিতে বলা হয়েছে,

اَلْبَيْعَةُ لَا تَكُوْنُ إِلَّا لِوَلِيِّ أَمْرِ الْمُسْلِمِيْنَ.

‘মুসলিম সরকার ছাড়া অন্য কারো জন্য বায়‘আত হবে না’।[8]

(৯) কাতারভিত্তিক ফতওয়ার ওয়েবসাইট islamweb-এর 111159 নম্বর প্রশ্নে একজন প্রশ্নকারী বলেন,

أَفِيْدُوْنِيْ فِيْ إِمَامٍ يَدَّعِيْ أَنَّهُ لَا يَكُوْنُ الْمَرْءُ مُسْلِمًا أَبَدًا وَ لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ حَتَّى يُبَايِعَ إِمَامًا أَوْ وَلِيَّ أَمْرٍ، وَ بِهَذِهِ الْقَوْلَةِ جَمَعَ حَوْلَهُ جَمْعًا غَفِيْرًا وَيَأْتِيْ بِأَحَادِيْثَ عَلَى ذَلِكَ وَآيَاتٍ قُرْآنِيَّةٍ، أَفْتُوْنِيْ فِيْ هَذَا الْأَمْرِ.

‘আমাকে সেই নেতার ব্যাপারে জ্ঞান দিয়ে উপকৃত করুন, যিনি দাবি করেন যে, একজন ব্যক্তি কখনই মুসলিম হতে পারবে না এবং জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, যতক্ষণ না সে কোনো নেতা বা নেতৃস্থানীয় ব্যক্তির নিকট বায়‘আত করবে। একথা দ্বারা তিনি তার আশপাশে বিপুল সংখ্যক মানুষকে সমবেত করেন। আর এর পক্ষে তিনি হাদীছ ও কুরআনের আয়াত উপস্থাপন করেন। এ ব্যাপারে আপনারা আমাকে ফতওয়া দিন’।

এর জবাবে তারা বলেন,

فَلْيَحْذَرِ الْمُسْلِمُوْنَ مِنْ أَمْثَالِ هَؤُلَاءِ فَإِنَّهُمْ يَأْتُوْنَ بِآيَاتٍ وَأَحَادِيْثَ تَحُضُّ عَلَى اجْتِمَاعِ الْمُؤْمِنِيْنَ عَلَى بَيْعَةِ إِمَامٍ وَاحِدٍ ِللْأُمَّةِ، وَيُسْقِطُوْنَهَا جَهْلاً أَوِ اتِّبَاعًا لِلْهَوَى عَلَى أَحْزَابٍ يَخْتَرِعُوْنَهَا، كَحَدِيْثِ: مَنْ مَاتَ وَلَيْسَ فِيْ عُنُقِهِ بَيْعَةٌ مَاتَ مِيْتَةً جَاهِلِيَّةً. رَوَاهُ مُسْلِمٌ.

فَيَحْمِلُوْنَ ذَلِكَ عَلَى شَخْصٍ مِنْهُمْ، وَهَذَا وَهَمٌ قَبِيْحٌ وَخَطَأٌ فَادِحٌ يَتَبَيَّنَ بِالرُّجُوْعِ إِلَى كَلَامِ أَهْلِ الْعِلْمِ.

‘এ ধরনের ব্যক্তি থেকে মুসলিমদের সতর্ক থাকা উচিত। কেননা তারা সেসব আয়াত ও হাদীছ (নিজেদের পক্ষে) উপস্থাপন করে, যেগুলো মুমিনদের এক শাসকের অধীনে সমবেত হওয়ার প্রতি উৎসাহিত করে। আর অজ্ঞতাবশত হোক বা প্রবৃত্তির অনুসরণের কারণে হোক তারা এসব আয়াত ও হাদীছ নিজেদের তৈরিকৃত বিভিন্ন দলে প্রয়োগ করে। যেমন এই হাদীছটি: “যে ব্যক্তি মারা গেল, অথচ তার গর্দানে বায়‘আত নেই, তার জাহেলী মরণ হলো”।[9]

এসব হাদীছকে তারা তাদের মধ্যে কোনো একজন ব্যক্তির উপর প্রয়োগ করে। এটা জঘন্য ধারণা এবং মারাত্মক ভুল; উলামায়ে কেরামের বক্তব্যে ফিরে গেলে বিষয়টি স্পষ্ট হয়’।[10]

(১০) একই ওয়েবসাইটের ৫৯০০ নম্বর প্রশ্নে বিভিন্ন ইসলামী দলের সাথে কাজ করার হুকুম সম্পর্কে চমৎকার বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে। বিবরণটির একাংশ আমাদের আলোচ্য বিষয় বায়‘আতের সাথে সম্পর্কিত হলেও পুরো উত্তরটার মাঝে রয়েছে অনেক উপকার। সেজন্য, পূর্ণাঙ্গ উত্তরটি নিচে তুলে ধরা হলো—

فَإِنَّ الْعَمَلَ الْجَمَاعِيَّ نَوْعٌ مِنَ التَّعَاوُنِ وَالتَّنَاصُرِ وَالتَّآخِيْ عَلَى الْحَقِّ، وَلِذَا فَهُوَ مُشْرُوْعٌ مَرْغُوْبٌ فِيْهِ لِعُمُوْمِ الْأَدِلَّةِ الدَّالَّةِ عَلَى فَضِيْلَةِ الْجَمَاعَةِ وَالْاِتِّفَاقِ وَالتَّعَاوُنِ، مَا لَمْ يُتَّخَذْ ذَلِكَ ذَرِيْعَةً إِلَى التَّحَزُّبِ وَالتَّعَصُّبِ لِلْأَسْمَاءِ وَالشِّعَارَاتِ، أَوْ رَفْضِ الْحَقِّ وَإنْكَارِهِ حِيْنَ يَأْتِيْ مِنْ خَارِجِ جَمَاعَتِهِ. وَإِذَا كَانَتِ الْجَمَاعَةُ الْمَذْكُوْرَةُ تَتَبَنَّى مَنْهَجَ أَهْلِ السُّنَّةِ وَالْجَمَاعَةِ فِي الْمُعْتَقَدِ وَالْفِكْرِ وَالسُّلُوْكِ وَالْمَنْهَجِ، جَازَ لَكَ التَّعَاوُنُ مَعَهَا وَمُنَاصَرَتُهَا وَتَأْيِيْدُهَا فِيْ مَا عِنْدَهَا مِنَ الْحَقِّ. وَيَنْبَغِيْ أَنْ يَكُوْنَ مَعْلُوْمًا أَنَ الْحَقَّ لَا يُعْرَفُ بِالرِّجَالِ، وَأَنَّ كُلَّ أَحَدٍ يُؤْخَذُ مِنْ قَوْلِهِ وَيُتْرَكُ إِلَّا النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. وَأَمَّا غَيْرُهُ فَإِنْ طَاعَتَهُ مُقَيَّدَةٌ بِطَاعَةِ اللَّهِ وَرَسُولِهِ. كَمَا يَنْبَغِيْ لِلْمُسْلِمِ أَنْ يُوَطِّنَ نَفْسَهُ عَلَى قَبُوْلِ الْحَقِّ مِنْ كُلِّ مَنْ جَاءَ بِهِ، مَهْمَا كَانَ شَأْنُهُ أَوْ انْتِمَاؤُهُ. وَنَنْصَحُ كُلَّ مَنْ يَتَعَاوَنُ مَعْ هَذِهِ الْجَمَاعَاتِ أَنْ يَكُوْنَ وَاضِحًا صَرِيْحًا فِيْ مَنْهَجِهِ، يُبَيِّنُ لِإِخْوَانِهِ أَنَّ وَلَاؤَهُ لِلْحَقِّ، وَأَنَّ عَمَلَهُ مَعْ مَجْمُوعَةٍ مَا، لَا يَعْنِيْ بَرَاءَتَهُ أَوْ كُرْهَهُ لِغَيْرِهَا، بَلْ كُلُّ مُؤْمِنٍ يُوَالِي، وَيُحِبُّ عَلَى قَدْرِ طَاعَتِهِ وَدِيْنِهِ مِنْ أَيِّ طَائِفَةٍ كَانَ. وَأَمَّا عَقْدُ الْوَلَاءِ عَلَى اسْمٍ أَوْ شِعَارٍ أَوْ شَخْصٍ، فَهَذَا مِنْ فِعْلِ أَهْلِ الْبِدَعِ. وَمَنْ زَعَمَ أَنَّهُ يَجِبُ مُبَايَعَتُهُ أَوْ مُبَايَعَةُ طَائِفَتِهِ، وَنَزَّلَ أَحَادِيْثَ الْبَيْعَةِ فِي ذَلِكَ فَهُوَ مُبْتَدِعٌ مُخَالِفٌ لِمَا عَلَيْهِ أَهْلُ السُّنَّةِ وَالْجَمَاعَةِ. فَإِنَّ البَيْعَةَ الْمَذْكُورَةَ فِي الْأَحَادِيْثِ إِنَّمَا هِيَ لِلإِمَامِ الْعَامِّ الَّذِيْ يَجْتَمِعُ عَلَيْهِ النَّاسُ، وَلْيَكُنْ مَعْلُوْمًا أَيْضًا أَنَّ هَذِهِ الْجَمَاعَاتِ وَإِنْ كَانَ قَصْدُ أَصْحَابِهَا نُصْرَةَ الْحَقِّ وَالدَّعْوَةَ إلَى الِالتِّزَامِ بِالإِسْلامِ إِلَّا أَنَّهَا لَيْسَتْ عَلَى قَدَمٍ سَوَاءٍ فِيْ سَلَامَةِ الْمَنْهَجِ وَشُمُوْلِهِ لِجَوَانِبِ الإِسْلَامِ الْمُخْتَلِفَةِ. وَالإِسْلَامُ لَيْسَ مَحْصُوْرًا فِيْ شَيْءٍ مِنْهَا… وَقُصَارَى أَمْرِهَا أَنْ تَكُوْنَ طَرَائِقَ فِي الدَّعْوَةِ وَفَهْمِ الإِسْلَامِ، وَالإِسْلَامُ حَاكِمٌ عَلَيْهَا، وَأَكْثَرُ الْمُسْلِمِيْنَ لَا يَتَّبِعُوْنَ أَيًّا مِنْ هَذِهِ الْجَمَاعَاتِ وَفِيْهِمُ الْعُلَمَاءُ وَالدُّعَاةُ وَالْمُجَاهِدُونَ. فَيَجِبُ أَنْ نَفْقَهَ أَسْبَابَ نَشْأَةِ هَذِهِ الْجَمَاعَاتِ، وَأَنْ نَضَعَهَا فِيْ إطَارِهَا الطَّبِيْعِيِّ، وَأَلاَّ تَنْقَلِبَ الْوَسَائِلُ إلَى غَايَاتٍ تُفْضِيْ إِلَى نَقِيْضِ الْمَقْصُوْدِ. وَاللهُ تَعَالَى أَعْلَمُ.

‘হক্বের ব্যাপারে পারস্পরিক সাহায্য-সহযোগিতা এবং ভ্রাতৃত্বের অন্যতম দিক হচ্ছে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করা। সেজন্য ঐক্যবদ্ধ কাজ শরী‘আতসম্মত এবং ‍শরী‘আতের কাঙ্ক্ষিত বিষয়। কারণ জামা‘আতবদ্ধ ও ঐক্যবদ্ধ থাকা এবং পারস্পরিক সহযোগিতার মর্যাদা বিষয়ক সাধারণ দলীলগুলো এর পক্ষ সমর্থন করে। তবে সেই ঐক্যবদ্ধ কাজকে যদি দলাদলি ও বিভিন্ন নাম এবং প্রতীকের প্রতি অন্ধভক্তির কারণ হিসেবে গ্রহণ করা হয় অথবা তার দল ছাড়া অন্য কোনো উৎস থেকে হক্ব আসলে তা অস্বীকার ও প্রত্যাখ্যাত করা হয়, তাহলে হিসাব ভিন্ন হবে।

যদি উল্লিখিত দল আক্বীদা, চিন্তা-চেতনা, চালচলন ও মানহাজে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের মানহাজ ধারণ করে, তাহলে আপনার জন্য তার সাথে সাহায্য-সহযোগিতা বজায় রেখে চলা এবং তার নিকট যতটুকু হক্ব আছে, ততটুকুতে তার পক্ষাবলম্বন করা জায়েয।

একটা কথা জেনে রাখা উচিত, মানুষের মাধ্যমে হক্ব নির্ণয় করা যাবে না এবং নবী ছাড়া ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেকের কথা থেকে কিছু কথা গ্রহণীয় ও কিছু কথা বর্জনীয়। আর নবী ছাড়া ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্য যে কারো আনুগত্যের বিষয়টি মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম–এর আনুগত্যের সাথে শর্তযুক্ত। অনুরূপভাবে একজন মুসলিমের উচিত, প্রত্যেকের কাছ থেকে হক্ব গ্রহণের ক্ষেত্রে নিজেকে প্রস্তুত রাখা— তিনি যে মানেরই হোক না কেনো বা যে দলেরই হোক না কেনো।

যারা বিভিন্ন দলের সাথে সহযোগিতা বজায় রেখে কাজ করতে চায়, তাদের জন্য আমাদের বিশেষ উপদেশ হচ্ছে, তাদেরকে তাদের মানহাজ স্পষ্ট করতে হবে, তাদের ভাইদেরকে খোলাখুলি বলে দিতে হবে যে, তার ‘অলা’ তথা সম্প্রীতির বন্ধন কেবল হক্বের পক্ষেই থাকবে। আর কোনো দলের সাথে তার কাজ করার অর্থ এই নয় যে, তিনি অন্যদের সাথে ‘বারা’ তথা সম্পর্ক ছিন্ন করে চলবেন অথবা তাদেরকে ঘৃণা করবেন। বরং তিনি আনুগত্য ও দ্বীনদারিতার পরিমাণের উপর ভিত্তি করে প্রত্যেক মুমিনের সাথে সম্পর্ক বজায় রেখে চলবেন এবং তাকে ভালোবাসবেন। মনে রাখতে হবে, কোনো নাম, প্রতীক বা ব্যক্তিত্বের উপর অলা তথা ভ্রাতৃত্বের বন্ধন প্রতিষ্ঠা করা বিদ‘আতীদের কাজ।

যে ব্যক্তি মনে করেন, তার কাছে বা তার দলের কাছে বায়‘আত করা ওয়াজিব এবং বায়‘আত সম্পর্কিত হাদীছগুলো সেখানে ভিড়ান, তিনি বিদ‘আতী এবং আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের মূলনীতি বিরোধী। কারণ হাদীছে উল্লিখিত বায়‘আত কেবল সরকারের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, যার ব্যাপারে জনগণ একমত হয়েছেন।

আরো একটা বিষয় জেনে রাখতে হবে যে, এসব দলের ধ্বজাধারীদের উদ্দেশ্য যদিও হক্বের পক্ষে সহযোগিতা করা এবং ইসলাম আঁকড়ে ধরার দাওয়াত দেওয়া হয়ে থাকে, তথাপিও সব দল কিন্তু সমান নয়; বরং মানহাজ বিশুদ্ধ হওয়ার দিক দিয়ে এবং ইসলামের বিভিন্ন দিক ও বিভাগকে অন্তর্ভুক্ত করার দিক দিয়ে এসব দল সমান নয়। ইসলাম এসব কোনো দলের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এসব দলের সর্বোচ্চ দিক হতে পারে, সেগুলো দাওয়াত ও ইসলাম বুঝার মাধ্যম। কিন্তু ইসলাম এসবগুলোর উপর ফয়সালাকারী। বেশিরভাগ মুসলিমের মধ্যে আলেম, দাঈ ও মুজাহিদগণ থাকা সত্ত্বেও তারা এসব কোনো দলেরই অনুসরণ করেন না। যাহোক, এসব দলের উৎপত্তির কারণ সম্পর্কে আমাদের সূক্ষ্ম জ্ঞান রাখা এবং এগুলোকে যথাস্থানে রাখা আবশ্যক। আমাদের জন্য আরো জরুরী হচ্ছে, এসব মাধ্যম যেন লক্ষ্যে পরিবর্তিত হয়ে না যায়, যা লক্ষ্যের উল্টো দিকে নিয়ে যাবে। ওয়াল্লাহু আ‘লাম’।[11]

(১১) কুয়েতী আলেম ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক শায়খ আব্দুর রহমান আল-জীরান হাফিযাহুল্লাহ বলেন,

الْبَيْعَةُ لَا تَجُوزُ إِلَّا لِلْحَاكِمِ الشَّرْعِيِّ لِلْبِلَادِ وَجَمِيعُ الْبَيْعَاتِ دَاخِلَ تَنْظِيمِ الْجَمَاعَاتِ الإِسْلَامِيَّةِ بِدِعْيَةٍ لَا شَرْعِيَّةٍ وَمُخَالَفَةٍ لِلسَّلَفِ الصَّالِحِ.

‘রাষ্ট্রের বৈধ সরকার ছাড়া অন্য কারো জন্য বায়‘আত গ্রহণ জায়েয নেই। বিভিন্ন ইসলামী সংগঠনে প্রচলিত বায়‘আত বিদ‘আতী বায়‘আত। এটি শরী‘আত অনুমোদিত বায়‘আত নয় এবং তা সালাফে ছালেহীনের নীতি পরিপন্থী’।[12]

(ইনশা-আল্লাহ চলবে)


[1]. আব্দুল্লাহ আত-তামীমী, মুহাযযাবু হুকমিল ইনতিমা ইলাল ফিরাক্ব ওয়াল আহযাব ওয়াল জামা‘আত আল-ইসলামিইয়াহ, পৃ. ৯৭ (মূল গ্রন্থটি শায়খ বাকর আবূ যায়েদের)।

[2]. আব্দুল আযীয ইবনে বায, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ দারব, ৩/১৭৫-১৭৬।

[3]. এই লিংক থেকে সংগৃহীত: https://al-fatawa.com/fatwa/124089

মূলত: ফতওয়াটি ‘লিক্বাউল বাবিল মাফতূহ’-এর অন্তর্ভুক্ত। শায়খ উছাইমীন রহিমাহুল্লাহ প্রতি বৃহস্পতিবার নিজ বাসভবনে উল্লিখিত শিরোনামে ইলমী মজলিসের আয়োজন করতেন। সেই মজলিসে শায়খ উপর্যুক্ত উত্তরটি প্রদান করেন, যা অডিও আকারে ছিল। পরবর্তীতে http://www.islamweb.net সেই দারসগুলো টেক্সটে রূপান্তরিত করে।

[4]. শাদী ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে সালেম আলে নু‘মান, জামি‘উ তুরাছিল আল্লামা আলবানী ফিল মানহাজ ওয়াল আহদাছিল কুবরা, ৪/১১৫।

[5]. শায়খ মুক্ববিল ইবনে হাদী আল-ওয়াদিঈ রাহিমাহুল্লাহ-এর ‘আত-তিবয়ান আলা আস-ইলাতি আহলি কুরদিস্তান’ শিরোনামে একটি অডিও ক্যাসেট থেকে নিয়ে টেক্সট আকারে শায়খের নিজস্ব ওয়েবসাইটে ফতওয়াটি প্রকাশিত হয়েছে।

দেখুন: https://www.muqbel.net/fatwa.php?fatwa_id=1826

[6]. আল-মুনতাক্বা মিন ফাতাওয়াশ শায়খ আল-ফাওযান, প্রশ্ন: ৪৭১, পৃ. ৪৬৪।

[7]. ফাতাওয়াল লাজনাহ আদ-দায়েমাহ, ২/২৭৯।

[8]. আল-মুনতাক্বা মিন ফাতাওয়াশ শায়খ আল-ফাওযান, প্রশ্ন: ৪৭১, পৃ. ৪৬৪।

[9]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৮৫২।

[10]. আল-মুনতাক্বা মিন ফাতাওয়াশ শায়খ আল-ফাওযান, প্রশ্ন: ৪৭১, পৃ. ৪৬৪।

[11]. দ্রষ্টব্য: https://www.islamweb.net/ar/fatwa/5900/

[12]. কুয়েতী দৈনিক ‘আল-আনবা’-তে প্রকাশিত প্রবন্ধ থেকে সংগৃহীত। দ্রষ্টব্য: https://www.alanba.com.kw/ar/kuwait-news/incidents-issues/576916/07-08-2015-

Magazine