কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

মদীনার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ও ফযীলত

পবিত্র মদীনা নগরী মুসলিম উম্মাহর কাছে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মর্যাদাপূর্ণ শহর। মুসলিমহৃদয়ে এই নগরীর প্রতি রয়েছে অপরিসীম শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও মর্যাদা। কেননা এখানেই শুয়ে আছেন প্রিয় নবী মুহাম্মদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। পবিত্র এই ভূমিতেই ইসলামের উত্থান হয়েছে এবং এখান থেকেই সারা পৃথিবীতে ইসলাম ছড়িয়ে পড়েছে। মাতৃভূমি মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করেন রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তিনি তাঁর জীবনের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ শেষ ১০ বছর এই নগরীতেই কাটিয়েছেন। মূলত আল্লাহ এই নগরীকে ইসলামের জন্য কবুল করেছেন। মদীনা শহরের উত্তরে উহুদ পাহাড়, দক্ষিণ-পশ্চিমে আইর পাহাড় অবস্থিত। মদীনায় রয়েছে অসংখ্য উপত্যকা। উল্লেখযোগ্য উপত্যকা হলো- বাতহান, মাহরূয, আকিক প্রভৃতি। মদীনায় ইসলাম উত্থানের পূর্বে প্রথম অধিবাসী ছিলেন— আমালিকা সম্প্রদায়, এরপর ইয়াহূদীরা শাম থেকে এবং বায়তুল মাক্বদেস থেকে ১৩২-১৩৫ খ্রিষ্টাব্দে মদীনায় হিজরত করে আসেন। তাদের আসার কারণ হলো— তাদের উপর রোম সম্রাট আক্রমণ করে তাদেরকে উচ্ছেদ করেন।

মদীনার আশেপাশে ইয়াহূদীদের প্রসিদ্ধ গোত্র বানু কুরাইযা, বানু কাইনুকা ও বানুন নাযীর বসবাস করত।[1] অন্যদিকে ২০৭ খ্রিষ্টাব্দে ইয়ামান থেকে হিজরত করে খাযরাজ ও আউস মদীনায় এসে বসবাস শুরু করেন।[2] ইয়াহূদী সম্প্রদায় ইসলাম প্রত্যাখ্যানসহ ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করায় বানু কুরাইযার পুরুষদের হত্যা করা হয়। আর বানু কাইনুকা এবং বানুন নাযীরকে মদীনা থেকে উচ্ছেদ করা হয়। তবে খাযরাজ ও আউস ইসলাম কবুল করেন এবং তারাই রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মদীনায় হিজরতের আমন্ত্রণ জানান। নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় পৌঁছলে তারাই তাঁকে সর্বাত্মক সাহায্য-সহযোগিতা করেন। এমনকি ইসলামের সকল যুদ্ধে তাদের ভূমিকা ছিল সবচেয়ে বেশি। তাঁরা ইসলামে আনছার ছাহাবা হিসেবে খ্যাত। তাঁরা তাদের ঘরবাড়ি, স্ত্রী, সম্পত্তি সবকিছু মুহাজির ছাহাবীগণের জন্য উৎসর্গ করেন। মক্কা থেকে হিজরতকারী ছাহাবীগণের সঙ্গে তাদের অটুট ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সৃষ্টি হয়। আল্লাহ তাআলা তাদের প্রতি ‍ও তাদের কর্মে সন্তুষ্ট রযিয়াল্লাহু আনহুম।[3]

রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুই ইয়াতীম সন্তান সাহল ও সুহাইলের কাছ থেকে মসজিদে নববীর জায়গা ক্রয় করে নিয়ে মসজিদ তৈরি করেন। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যামানা এবং পরবর্তী তিন খলীফা আবূ বকর রযিয়াল্লাহু আনহু, উমার রযিয়াল্লাহু আনহু ও উছমান রযিয়াল্লাহু আনহু-এর সময়কালে মদীনা মুনাওয়ারা মুসলিম জাহানের রাজধানী ছিল। আলী রযিয়াল্লাহু আনহু ৩৬ হিজরীতে কূফায় রাজধানী স্থানান্তর করেন। এরপর আর মদীনায় মুসলিম জাহানের রাজধানী ফিরে আসেনি।

মুআবিয়া রযিয়াল্লাহু আনহু ৪১ হিজরীতে খেলাফত লাভ করলে তিনি মুসলিম জাহানের রাজধানী হিসেবে দামেস্ক নির্ধারণ করেন। প্রায় ৯০ বছর পর্যন্ত দামেস্ক মুসলিম জাহানের রাজধানী ছিল। এই দীর্ঘ সময় মদীনা মুনাওয়ারা উমাইয়া শাসন ব্যবস্থার অধীনে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রদেশ ছিল। উমাইয়া শাসক ইয়াযীদ ইবনু মুআবিয়া মদীনায় ৬৩ হিজরীতে সেনাপতি মুসলিম ইবনু উক্ববা আল-মুররির নেতৃত্বে সৈন্যবাহিনী প্রেরণ করেন। কারণ মদীনাবাসীরা ইয়াযীদের হাতে বায়আত নেওয়া থেকে বিরত ছিল। অতঃপর মদীনাবাসীদের প্রতি বায়আতের আহ্বান জানালে তারা তা প্রত্যাখ্যান করেন, এতে ভয়াবহ যুদ্ধ সংঘঠিত হয় এবং অনেক হতাহতের ঘটনা ঘটে।[4]

উমাইয়া শাসক খলীফা ওয়ালীদ ইবনে আব্দুল মালেক ৮৮ হিজরীতে মদীনার গভর্নর হিসেবে উমার ইবনু আব্দুল আযীয রহিমাহুল্লাহ-কে নিয়োগ দেন, তাঁর শাসনামলে মসজিদে নববী ব্যাপক প্রশস্ত করা হয়। সেসময় নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রীগণের ঘরবাড়ি ভেঙে মসজিদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।[5] ১৩২ হিজরীতে আব্বাসীয়দের উত্থান ঘটে। তারা বাগদাদ রাজধানী হিসেবে গ্রহণ করেন এবং ১৩২ থেকে ৬৫৬ হিজরী পর্যন্ত মুসলিমজাহান শাসন করেন। তাদের এই দীর্ঘ প্রায় ৫২৪ বছর শাসনামলে মদীনা অন্যতম প্রদেশ হিসেবেই ছিল। আব্বাসীয়দের ৬৫৬ হিজরীতে পতন ঘটলে মামলূকীদের উত্থান ঘটে। তারা ৬৪৮ হিজরী থেকে ৯২৩ হিজরী পর্যন্ত প্রায় ২৭৫ বছর ফিলিস্তীন, সিরিয়া ও মিশর শাসন করেন। হিজায তথা মক্কা, মদীনা, তায়েফ অঞ্চলের প্রতি মামলূকীদের নজর বেশ ভালোই ছিল। এসময় মামলূকীরা মদীনায় প্রসিদ্ধ যে বিদআত শুরু করে, তাহলো রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কবরের উপর গম্বুজ তৈরি।

মামলূকী সুলতান মানছূর কালাউন ছালেহী ৬৭৮ হিজরীতে সর্বপ্রথম রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কবরের উপর কাঠের গম্বুজ তৈরি করেন। প্রায় ১০০ বছর পর ৭৬৫ হিজরীতে হাসান ইবনু মুহাম্মাদ গম্বুজ সংস্কার করেন। এরপর আবার প্রায় ১০০ বছর পর ৮৮১ হিজরীতে মামলূকী সুলতান ক্বাইতবাই গম্বুজ সংস্কার করেন। ৮৮৬ হিজরীতে মসজিদে নববীতে আগুন লাগলে গম্বুজের ক্ষতি হলে পুনরায় সুলতান ক্বাইতবাই ৮৮৭ হিজরীতে গম্বুজ সংস্কার করেন। এরপর প্রায় ৩৬০ বছর পর উছমানী সুলতান আব্দুল হামীদ বর্তমান সবুজ গম্বুজ তৈরি করেন, এই হলো সবুজ গম্বুজের ইতিকথা।[6] বিদআতী কবরপূজারীরা এই গম্বুজকে দলীল হিসেবে উল্লেখ করেন এবং তাদের পীরবাবাদের কবরের উপর গম্বুজ তৈরি করছেন; যা খুবই হাস্যকর ও বিবেকহীন নোংরা কাজ। তারা একটু চিন্তাও করে না যে, কেমন করে এটা গ্রহণ করছি? অথচ তা রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মৃত্যুর ৬০০ বছর পর তৈরি করা হয়েছে।

উছমানী সুলতান সেলিম আওয়াল ৯২৩ হিজরীতে মামলূকীদের থেকে মিশর জয়লাভ করলে পুরো হিজায তথা মক্কা-মদীনা অটোমান সাম্রাজ্যের অধীনে চলে আসে। ফলে ৯২৩ হিজরী থেকে ১৩৪৪ হিজরী পর্যন্ত প্রায় ৪০০ বছর মদীনা তাদের অধীনে ছিল। এসময় বিভিন্ন রকমের বিদআত চালু হয়। কবরের উপর গম্বুজ তৈরি হওয়াসহ শিরক-বিদআতে মদীনা ছেয়ে যায়।

সঊদ বংশের সন্তান আব্দুল আযীয ইবনে আব্দুর রহমান রহিমাহুল্লাহ ১৩৪৪ হিজরী মোতাবেক ১৯২৪/২৫ খ্রিষ্টাব্দে মদীনা জয়লাভ করলে সেখানকার সকল প্রকার শিরক-বিদআত উৎখাত করেন। মদীনা নগরীকে তাওহীদী নগরী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে আলেমদের দাওয়াতী কাজে নিয়োগ দেন। একই সঙ্গে মদীনা শহর ও মসজিদে নববী উন্নতকরণের সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। বাদশা আব্দুল আযীয রহিমাহুল্লাহ-এর যোগ্য সন্তান বাদশা ফাহাদ রহিমাহুল্লাহ বর্তমান মসজিদ নববী তৈরি করেন। এরপর তার ভাই বাদশা আব্দুল্লাহ প্রায় দ্বিগুণ বেশি প্রশস্ত করে মসজিদে নববী সম্প্রসারণ করছেন।[7] তাদের খেদমত আল্লাহ কবুল করুন এবং এর উত্তম প্রতিদান দান করুন।

মদীনার নাম :

ঐতিহাসিক সামহূদী মদীনার ৯৪টি নাম উল্লেখ করেছেন।[8] এর মধ্যে ‘মদীনা’ নামটি সর্বাধিক প্রসিদ্ধ, যা কুরআনে চার বার এসেছে (আত-তওবা, ৯/১০১ ও ১২০; আল-আহযাব, ৩৩/৬০, আল-মুনাফিকূন, ৬৩/৮)। মদীনার কয়েকটি প্রসিদ্ধ নাম ‘তাবাহ’ ‘তাইবাহ’, যার অর্থ- উত্তম। জাহেলি যুগে মদীনার নাম ছিল ‘ইয়াছরিব’, কিন্তু নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই নাম অপছন্দ করতেন। তাই এর নাম রাখেন ‘আল-মাদীনা’।[9] পবিত্র কুরআনে মদীনাকে ‘আদ-দার ওয়াল ঈমান’ বলা হয়েছে (আল-হার, ৫৯/)

মদীনার সম্মান, মর্যাদা ‍ও ফযীলত :

১. রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রিয় নগরী : রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনা নগরীকে ভালোবাসতেন এবং তা যেন অন্যদের প্রিয় হয় সেই দু‘আ করতেন। তিনি বলতেন, ‘হে আল্লাহ! তুমি মদীনাকে আমাদের কাছে প্রিয় করে দাও, যেমনিভাবে প্রিয় করেছো মক্কাকে, বরং তার চেয়েও বেশি প্রিয় করো’।[10]

২. বরকতময় শহর ও মদীনা হারাম এলাকা : মদীনাকে শরীআতে ‘হারাম’ বলে ঘোষণা করেছে। হারাম শব্দের একটি অর্থ নিষিদ্ধ এবং আরেকটি পবিত্র। দুটি অর্থই এই নগরীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘হে আল্লাহ! নিশ্চয় ইবরাহীম আলাইহিস সালাম মক্কাকে হারাম ঘোষণা করেছেন এবং তা পবিত্র ও সম্মানিত হয়েছে। আর আমি মাদীনাকে হারাম ঘোষণা করলাম; যা দুই পাহাড়ের (আইর ও উহুদ) মধ্যস্থলে অবস্থিত। অতএব এখানে রক্তপাত করা যাবে না, এখানে যুদ্ধের উদ্দেশ্যে অস্ত্র বহন করা যাবে না এবং গাছপালার পাতাও পাড়া যাবে না। হে আল্লাহ! আমাদের এ শহরে বরকত দান করুন। হে আল্লাহ! আমাদের ছা‘-এ বরকত দান করুন। হে আল্লাহ! আমাদের মুদ-এ বরকত দান করুন। হে আল্লাহ! আমাদের বরকত দ্বিগুণ করুন। উল্লেখ্য, ‘মদীনার ‘আইর ও ছাওর’ পর্বতের মাঝখানের স্থানটুকু হারাম’। [11]

৩. নিরাপদ নগরী মদীনা, মহামারি ও দাজ্জাল প্রবেশ করতে পারবে না : আল্লাহ তাআলা মদীনার প্রবেশদ্বারগুলোতে ফেরেশতাদের মধ্য থেকে প্রহরী নিযুক্ত করেছেন, যারা এতে মহামারি ও দাজ্জালের প্রবেশ প্রতিহত করবেন। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘মদীনার পথে-প্রান্তরে রয়েছে (প্রহরী) ফেরেশতারা, (তাই) এখানে মহামারি ও দাজ্জাল প্রবেশ করতে পারবে না’।[12]

৪. মদীনাবাসীদের ক্ষতিসাধনকারীরা ধ্বংস হয়ে যাবে : মদীনায় বসবাসের প্রতি রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উৎসাহ দিয়ে বলেন, ‘মদীনাই তাদের জন্য উত্তম, যদি তারা জানত। যে সত্তার হাতে আমার প্রাণ, তাঁর শপথ করে বলছি, মদীনার প্রতি বিরাগভাজন হয়ে যে ব্যক্তিই এখান থেকে বের হয়ে যায়, আল্লাহ সেখানে তার চেয়ে উত্তম ব্যক্তিকে স্থলাভিষিক্ত করে দেন। সাবধান! মদীনা (কামারের) হাপরের ন্যায় নিকৃষ্ট ব্যক্তিকে বের করে দেবে। হাপর যেভাবে লোহার ময়লা বের করে দেয়, তেমনি মদীনাও তার মন্দ ব্যক্তিদের বের না করা পর্যন্ত ক্বিয়ামত হবে না’।[13] রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,لاَ يَكِيدُ أَهْلَ المَدِينَةِ أَحَدٌ إِلَّا انْمَاعَ كَمَا يَنْمَاعُ المِلْحُ فِي المَاءِ ‘যে কেউ মদীনাবাসীর সঙ্গে ষড়যন্ত্র বা প্রতারণা করবে, সে লবণ যেভাবে পানিতে গলে যায়, সেভাবে গলে যাবে’।[14]

৫. মদীনা ঈমানের স্থান : রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,إِنَّ الإِيمَانَ لَيَأْرِزُ إِلَى المَدِينَةِ كَمَا تَأْرِزُ الحَيَّةُ إِلَى جُحْرِهَا ‘ঈমান মদীনার দিকে ফিরে আসবে, যেভাবে সাপ তার গর্তের দিকে ফিরে আসে’।[15]

. মদীনায় জ্ঞানচর্চা ও আলেমদের মর্যাদা : মদীনা ছিল প্রথম বিদ্যালয়, যেখানে মহানবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন একটি প্রজন্মকে প্রস্তুত করেছিলেন, যাদের হাতে তিনি ইসলামের আমানত তুলে দেন। ইসলামী জ্ঞানের সূতিকাগার হিসেবে মদীনার রয়েছে বিশেষ মর্যাদা। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘অচিরেই মানুষ উটে চড়ে ইলম অন্বেষণের উদ্দেশ্যে দুনিয়া ঘুরে বেড়াবে। কিন্তু তারা মদীনার আলেমদের অপেক্ষা বিজ্ঞ আলেম আর কোথাও খুঁজে পাবে না’।[16]

মদীনায় আমাদের করণীয় ও বর্জনীয় :

১. মদীনায় বিদআত ও যেকোনো পাপ পরিহার করতে হবে। নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,مَنْ أَحْدَثَ فِيهَا حَدَثًا فَعَلَيْهِ لَعْنَةُ اللهِ وَالْمَلَائِكَةِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ لَا يَقْبَلُ اللهُ مِنْهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ صَرْفًا، وَلَا عَدْلًا ‘যে ব্যক্তি মদীনায় কোনো বিদআত করে অথবা বিদআতীকে আশ্রয় দান করে, তার ওপর আল্লাহ, ফেরেশতা ও সব মানুষের লা‘নত পড়বে। ক্বিয়ামতের দিন তার কাছ থেকে আল্লাহ কোনো ইবাদত ও দান গ্রহণ করবেন না’।[17]

২. মদীনা মুনাওয়ারায় অত্যন্ত বিনয়-নম্রতার সঙ্গে বসবাস করতে হবে। বিশেষত মসজিদে নববীতে পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত জামাআত সহকারে আদায় করতে হবে। কেননা অন্য মসজিদের চেয়ে এখানে ১ হাজারেরও বেশি গুণ ছওয়াব হয়। সামর্থ্য অনুযায়ী তাসবীহ-তাহলীল, ইস্তিগফার, যিকির-আযকার ও জনকাল্যাণমূলক কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখতে হবে।

৩. মাঝে মাঝে মসজিদে কুবায় ছালাত পড়তে যেতে হবে। কারণ তাতে উমরার ছওয়াব হয়।

৪. বাক্বীউল গারকাদ কবরস্থান ও উহুদের শহীদ ছাহাবীগণের কবরস্থান যিয়ারত করতে হবে।

আল্লাহ আমাদের মদীনার ফযীলত হৃদয়ঙ্গম করে সে অনুযায়ী আমল করার তাওফীক্ব দান করুন। আমীন!

আব্দুল মালেক আহমাদ মাদানী

বি.এ. (অনার্স), এম.এ. এবং এম.ফিল., মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সঊদী আরব;
শিক্ষক, মাদরাসাতুল হাদীস, নাজির বাজার, ঢাকা।

[1]. ড. জাওয়াদ, আল-মুফাছছাল ফী তারিখুল আরাব ক্ববলাল ইসলাম, ৬/৫১৩-৫১৪।

[2]. ড. জাওয়াদ, আল-মুফাছছাল ফী তারিখুল আরাব ক্ববলাল ইসলাম, ২/২৮৫।

[3]. বালাযারী, আনসাবুল আশরাফ, ১/২৭০; ড. আকরাম যিয়া আল-উমরী, আস-সিরাতুন নাববিয়া ছহীহা, ১/২৪০-২৪৮।

[4]. আল-কামিল ফিত তারিখ, ৩/২১৩-২২৫; আল-‍বিদায় ওয়ান নিহায়া, ১১/৬৫০-৬৬০।

[5]. ইমাম সামহূদী, ওফাউল ওফা বিআখবারে দারুল মুছত্বফা, ২/১১১-১২০।

[6]. ফাছূলুত তারিখ মিন মদীনা আল-মুনাওয়ারা, পৃ. ২২৭-২৩০।

[7]. বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন : আব্দুল্লাহ ছালেহ, ‘তারিখে সঊদী আরব’।

[8]. ইমাম সামহূদী, ওফাউল ওফা বিআখবারে দারুল মুছত্বফা, ১/১৩-৩০।

[9]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৩৮২; মুসনাদে আহমাদ, হা/২১০২২।

[10]. ছহীহ বুখারী, হা/১৮৮৯।

[11]. ছহীহ বুখারী, হা/৬৭৫৫; ছহীহ মুসলিম, হা/১৩৬৯, ১৩৭০, ১৩৭৪।

[12]. ছহীহ বুখারী, হা/১৮৮০।

[13]. ছহীহ মুসলিম, হা/৩৪১৮।

[14]. ছহীহ বুখারী, হা/১৮৭৭; ছহীহ মুসলিম, হা/১৩৬৩, ১৩৮৬।

[15]. ছহীহ বুখারী, হা/১৮৭৬।

[16]. সুনানে তিরমিযী, হা/২৬৮০; ইমাম নাসাঈ, সুনানুল কুবরা, হা/৪২৭৭, ইমাম তিরমিযী হাদীছটি হাসান বলেছেন; ইমাম হাকেম হাদীছটি ছহীহ বলেছেন; ইমাম ইবনু হিব্বান ছহীহ বলেছেন।

[17]. ছহীহ বুখারী, হা/৭৩০৬; ছহীহ মুসলিম, হা/১৩৬৬।

Magazine