মুসলিমদের একক খলীফা ছাড়া অন্যান্য রাষ্ট্রপ্রধানের বায়‘আত নেওয়া কি বৈধ নয়?
মুসলিমদের মূল ও কাঙ্ক্ষিত বিষয় হচ্ছে, তারা সকলে একজন শাসকের অধীনে থাকবে, তার বায়‘আত গ্রহণ করবে এবং তারই আনুগত্য করে চলবে। একক শাসকের অধীনে সকলে সংগঠিতভাবে শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার সাথে বসবাস করবে।
তবে শাসক গোটা মুসলিম জাহানের খলীফা তথা শাসক না হওয়া সত্ত্বেও সেই সরকারের অনুসরণ করা ওয়াজিব, যদিও তিনি কোনো অঞ্চল বা দেশের শাসক হন। তার নাম খলীফা হোক বা বাদশাহ হোক বা আর কিছু হোক, তাতে কিছু যায় আসে না। তবে, একক খলীফার জন্য মুসলিম উম্মাহর প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকা উচিত।
উল্লেখ্য, শত শত বছর ধরে গোটা মুসলিম উম্মাহ একক খলীফার অধীনে নেই। কিন্তু তারা ঠিকই বায়‘আতের মাধ্যমে স্ব-স্ব রাষ্ট্রপ্রধানদের অধীনে সুসংগঠিতভাবে বসবাস করে আসছে। একক খলীফা ছাড়া অন্য কারো বায়‘আত জায়েয না হলে পুরো দুনিয়া ফেতনা-ফাসাদ ও বিশৃঙ্খলায় ভরে যেত।
মুসলিমদের একক খলীফা ছাড়া অন্যান্য রাষ্ট্রপ্রধানের বায়‘আত নেওয়া যাবে কিনা সে ব্যাপারে কয়েকজন আলেমের বক্তব্য নিচে তুলে ধরা হলো—
(১) শায়খুল ইসলাম ইবনু তায়মিয়া রাহিমাহুল্লাহ বলেন,
وَيَجُوْزُ تَسْمِيَةُ مَنْ بَعْدَ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِيْنَ "خُلَفَاءَ" وَإِنْ كَانُوْا مُلُوْكًا؛ وَلَمْ يَكُوْنُوْا خُلَفَاءَ الْأَنْبِيَاءِ بِدَلِيلِ مَا رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ وَمُسْلِمٌ فِي صَحِيْحَيْهِمَا...
‘খোলাফায়ে রাশেদীনের পরে যে-সব শাসক এসেছেন, তারা নবীগণের খলীফা না হয়ে সাধারণ বাদশাহ হওয়া সত্ত্বেও তাদের নাম ‘খলীফা’ দেওয়া জায়েয। এর দলীল হচ্ছে ছহীহ বুখারী ও মুসলিমের হাদীছ...’।[1]
(২) তিনি আরো বলেন,
وَالسُّنَّةُ أَنْ يَكُونَ لِلْمُسْلِمِينَ إمَامٌ وَاحِدٌ وَالْبَاقُونَ نُوَّابُهُ فَإِذَا فُرِضَ أَنَّ الْأُمَّةَ خَرَجَتْ عَنْ ذَلِكَ لِمَعْصِيَةِ مِنْ بَعْضِهَا وَعَجْزٍ مِنْ الْبَاقِينَ أَوْ غَيْرِ ذَلِكَ. فَكَانَ لَهَا عِدَّةُ أَئِمَّةٍ: لَكَانَ يَجِبُ عَلَى كُلِّ إمَامٍ أَنْ يُقِيمَ الْحُدُودَ وَيَسْتَوْفِيَ الْحُقُوقَ.
‘সুন্নাত হচ্ছে, মুসলিমদের একজন শাসক হবেন আর বাকীরা হবে তার প্রতিনিধি। কিন্তু যদি ধরে নেওয়া হয় যে, উম্মাহ তাদের কারো অবাধ্যতার কারণে বা কারো দুর্বলতার সুযোগে অথবা অন্য কোনো কারণে এখান থেকে বেরিয়ে যায় এবং তাদের কয়েকজন শাসক হন, তাহলে দণ্ডবিধি বাস্তবায়ন করা ও অধিকার বুঝিয়ে দেওয়া প্রত্যেক শাসকের জরুরী কর্তব্য হিসেবে বিবেচিত হবে’।[2]
(৩) আমীর ছান‘আনী রাহিমাহুল্লাহ রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী: مَنْ خَرَجَ عَنْ الطَّاعَةِ (যে ব্যক্তি আনুগত্য থেকে বের হয়ে গেল)-এর ব্যাখ্যায় বলেন,
قَوْلُهُ عَنْ الطَّاعَةِ أَيْ طَاعَةِ الْخَلِيفَةِ الَّذِي وَقَعَ الِاجْتِمَاعُ عَلَيْهِ وَكَأَنَّ الْمُرَادَ خَلِيفَةُ أَيِّ قُطْرٍ مِنْ الْأَقْطَارِ إذْ لَمْ يُجْمِعْ النَّاسُ عَلَى خَلِيفَةٍ فِي جَمِيعِ الْبِلَادِ الْإِسْلَامِيَّةِ مِنْ أَثْنَاءِ الدَّوْلَةِ الْعَبَّاسِيَّةِ بَلْ اسْتَقَلَّ أَهْلُ كُلِّ إقْلِيمٍ بِقَائِمٍ بِأُمُورِهِمْ إذْ لَوْ حُمِلَ الْحَدِيثُ عَلَى خَلِيفَةٍ اجْتَمَعَ عَلَيْهِ أَهْلُ الْإِسْلَامِ لَقَلَّتْ فَائِدَتُهُ.
‘(আনুগত্য থেকে বের হয়ে গেল) মানে এমন খলীফার আনুগত্য থেকে বের হয়ে গেল, যার আনুগত্য করার ব্যাপারে ঐকমত্য তৈরি হয়েছে। এখানে যে-কোনো অঞ্চলের খলীফাকে বুঝানো হয়েছে বলে মনে হয়। কেননা আব্বাসীয় শাসনামলের মাঝামাঝি সময় থেকে (অদ্যাবধি) সমগ্র মুসলিম জাহানে একক খলীফার ব্যাপারে
মানুষ একমত হয়নি; বরং প্রত্যেকটা অঞ্চলের মানুষ নিজেদের শাসক নিয়ে পৃথক হয়ে গেছে। তাছাড়া হাদীছটিকে যদি মুসলিমদের একক খলীফার ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়, তাহলে এর উপকার কমে যাবে’।[3]
(৪) আল্লামা শাওকানী রাহিমাহুল্লাহ বলেন,
وَأَمَّا بَعْدَ انْتِشَارِ الْإِسْلَامِ وَاتِّسَاعِ رُقْعَتِهِ وَتَبَاعُدِ أَطْرَافِهِ فَمَعْلُوْمٌ أَنَّهُ قَدْ صَارَ فِيْ كُلِّ قُطْرٍ أَوْ أَقْطَارٍ الْوَلَايَةُ إِلَى إِمَامٍ أَوْ سُلْطَانٍ وَفِي الْقُطْرِ الْآخَرِ أَوِ الْأَقْطَارِ كَذَلِكَ وَلَا يَنْفُذُ لِبَعْضِهِمْ أَمْرٌ وَلَا نَهْيٌ فِيْ قُطْرِ الْآخَرِ وَأَقْطَارِهِ الَّتِيْ رَجَعَتْ إِلَى وَلَايَتِهِ فَلَا بَأْسَ بِتَعَدُّدِ الْأَئِمَّةِ وَالسَّلَاطِيْنِ وَيَجِبُ الطَّاعَةُ لِكُلِّ وَاحِدٍ مِّنْهُمْ بَعْدَ الْبَيْعَةِ لَهُ عَلَى أَهْلِ الْقُطْرِ الَّذِيْ يُنْفُذُ فِيْهِ أَوَامِرُهُ وَنَوَاهِيْهِ وَكَذَلِكَ صَاحِبُ الْقُطْرِ الْآخَرِ فَإِذَا قَامَ مَنْ يُّنَازِعُهُ فِي الْقُطْرِ الَّذِيْ قَدْ ثَبَتَتْ فِيْهِ وَلَايَتُهُ وَبَايَعَهُ أَهْلُهُ كَانَ الْحُكْمُ فِيْهِ أَنْ يُّقْتَلَ إِذَا لَمْ يَتُبْ وَلَا تَجِبُ عَلَى أَهْلِ الْقُطْرِ الْآخَرِ طَاعَتُهُ وَلَا الدُّخُوْلُ تَحْتَ وَلَايَتِهِ لِتَبَاعُدِ الْأَقْطَارِ فَإِنَّهُ قَدْ لَا يَبْلُغُ إِلَى مَا تَبَاعَدَ مِنْهَا خَبَرُ إِمَامِهَا أَوْ سُلْطَانِهَا وَلَا يُدْرَى مَنْ قَامَ مِنْهُمْ أَوْ مَاتَ فَالتَّكْلِيْفُ بِالطَّاعَةِ وَالْحَالُ هَذِهِ تَكْلِيْفٌ بِمَا لَا يُطَاقُ وَهَذَا مَعْلُوْمٌ لِّكُلِّ مَنْ لَّهُ اطِّلَاعٌ عَلَى أَحْوَالِ الْعِبَادِ وَالْبِلَادِ فَإِنَّ أَهْلَ الصِّيْنِ وَالْهِنْدِ لَا يَدْرُوْنَ بِمَنْ لَّهُ الْوَلَايَةُ فِيْ أَرْضِ الْمَغْرِبِ فَضْلًا عَنْ أَنْ يَتَمَكَّنُوْا مِنْ طَاعَتِهِ وَهَكَذَا الْعَكْسُ وَكَذَلِكَ أَهْلُ مَا وَرَاءَ النَّهْرِ لَا يَدْرُوْنَ بِمَنْ لَّهُ الْوَلَايَةُ فِي الْيَمَنِ وَهَكَذَا الْعَكْسُ فَاعْرِفْ هَذَا فَإِنَّهُ الْمُنَاسِبُ لِلْقَوَاعِدِ الشَّرْعِيَّةِ وَالْمُطَابِقُ لِمَا تَدُلُّ عَلَيْهِ الْأَدِلَّةُ وَدَعْ عَنْكَ مَا يُقَالُ فِيْ مُخَالَفَتِهِ فَإِنَّ الْفَرْقَ بَيْنَ مَا كَانَتْ عَلَيْهِ الْوَلَايَةُ الْإِسْلَامِيَّةُ فِيْ أَوَّلِ الْإِسْلَامِ وَمَا هِيَ عَلَيْهِ الْآنَ أَوْضَحُ مِنْ شَمْسِ النَّهَارِ وَمَنْ أَنْكَرَ هَذَا فَهُوَ مُبَاهِتٌ لَا يَسْتَحِقُّ أَنْ يُخَاطَبُ بِالْحُجَّةِ لِأَنَّهُ لَا يَعْقِلُهَا.
‘আর ইসলামের ব্যাপক প্রচার-প্রসার ও এর সীমানা প্রশস্ত হওয়ার পর একথা সুবিদিত যে, এখন প্রত্যেকটা অঞ্চলের শাসনভার একেকজন শাসকের উপর পড়েছে। অন্যান্য অঞ্চলেও একই অবস্থা। তাদের কারো আদেশ-নিষেধ অন্যের অঞ্চলে বাস্তবায়িত হয় না। এমন অনেক শাসক হওয়াতে কোনো দোষ নেই। এসব শাসকের প্রত্যেকের বায়‘আত সংঘটিত হওয়ার পর তার আনুগত্য করা ঐ অঞ্চলের লোকদের জন্য ওয়াজিব হয়ে যাবে, যেখানে তার আদেশ-নিষেধ কার্যকর হয়। যে অঞ্চলে কারো শাসন ক্বায়েম হয়েছে এবং সেখানকার লোকজন তার বায়‘আত নিয়েছে, সে অঞ্চলে যদি কেউ তার বিরোধিতা করতে আসে, তাহলে তওবা না করলে তাকে হত্যা করতে হবে। দূরে হওয়ার কারণে অন্য অঞ্চলের মানুষের জন্য এই শাসকের আনুগত্য করা এবং তার শাসনের আওতাভুক্ত হওয়া ওয়াজিব নয়। কেননা দূরবর্তী অঞ্চলের লোকদের কাছে এই শাসকের খবর নাও পৌঁছতে পারে, তাদের মধ্যে কে শাসনভার গ্রহণ করেছে আর কে মারা গেছে, তাও জানা যায় না। আর এমতাবস্থায় তার আনুগত্যের ভার চাপিয়ে দিলে তা হবে সামর্থ্যের বাইরে বোঝা চাপিয়ে দেওয়া। জনগণ ও বিভিন্ন দেশ সম্পর্কে যার জ্ঞান আছে, তার কাছে এটা জানা বিষয়। কারণ চীন ও ভারতের মানুষ মরক্কো-এর শাসকের আনুগত্য করা তো দূরের কথা, তার সম্পর্কে জানেও না। মরক্কোবাসীর ক্ষেত্রেও তাই। অনুরূপভাবে তুর্কিস্তানের জনগণ ইয়ামানের শাসক সম্পর্কে জানে না। ইয়ামানের ক্ষেত্রেও ঠিক তাই। (পাঠক!) এই বিষয়টি উপলব্ধি করুন। কারণ তা শরী‘আতের সাধারণ নিয়ম এবং দলীল-প্রমাণের সাথে মিলে যায়। আর আপনি এর বিপরীত বক্তব্যকে পরিহার করুন। কেননা ইসলামের শুরুতে ইসলামী শাসনব্যবস্থা এবং বর্তমান সময়ের শাসনব্যবস্থার মধ্যে পার্থক্য সূর্যালোকের চেয়েও স্পষ্ট। যে ব্যক্তি এটাকে অস্বীকার করবে, সে মিথ্যুক; তার কাছে দলীল পেশ করার উপযুক্ত সে নয়। কারণ সে তা উপলব্ধি করতে পারে না’।[4]
উল্লেখ্য, আধুনিক যুগে উল্লিখিত কারণ অবশিষ্ট না থাকলেও অন্যান্য কারণে মুসলিম উম্মাহ এখনও একজন শাসকের অধীনে বসবাসরত নয়। সুতরাং এখনও পর্যন্ত একাধিক শাসক ও তাদের বায়‘আতের বৈধতা রয়েছে।
(৫) শায়খ মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল ওয়াহ্হাব রাহিমাহুল্লাহ বলেন,
اَلْأَئِمَّةُ مُجْمِعُوْنَ مِنْ كُلِّ مَذْهَبٍ، عَلَى أَنَّ مَنْ تَغَلَّبَ عَلَى بَلَدٍ أَوْ بُلْدَانٍ لَّهُ حُكْمُ الْإِمَامِ فِيْ جَمِيْعِ الْأَشْيَاءِ، وَلَوْلَا هَذَا مَا اسْتَقَامَتِ الدُّنْيَا، لِأَنَّ النَّاسَ مِنْ زَمَنٍ طَوِيْلٍ قَبْلَ الْإِمَامِ أَحْمَدَ إِلَى يَوْمِنَا هَذَا، مَا اجْتَمَعُوْا عَلَى إِمَامٍ وَاحِدٍ، وَلَا يَعْرِفُوْنَ أَحَدًا مِّنَ الْعُلَمَاءِ ذَكَرَ أَنَّ شَيْئًا مِّنَ الْأَحْكَامِ، لَا يَصِحُّ إِلَّا بِالْإِمَامِ الْأَعْظَمِ.
‘সকল মাযহাবের ইমামগণ ইজমা পোষণ করেছেন যে, যে ব্যক্তি কোনো দেশ বা অঞ্চলের ক্ষমতা দখল করে, সকল ক্ষেত্রে তার বিধান গোটা মুসলিম জাহানের একক খলীফার মতোই। এটা যদি না হতো, তাহলে দুনিয়া ঠিক থাকত না। কেননা ইমাম আহমাদের পূর্ব থেকে আজ পর্যন্ত এই লম্বা সময় ধরে মানুষ কেবল একজন শাসকের অনুসরণের ব্যাপারে একমত পোষণ করেনি; অথচ তারা এমন একজন আলেমের কথাও জানে না, যিনি বলেছেন যে, সারা জাহানের একক খলীফা ছাড়া কোনো হুকুম ও বিচার বিশুদ্ধ হবে না’।[5]
(৬) যুগশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিছ শায়খ আলবানী রাহিমাহুল্লাহ একসময় সমগ্র মুসলিম জাহানের একক খলীফা ছাড়া বায়‘আত সম্পন্ন হবে না বলে মন্তব্য করলেও পরবর্তীতে তিনি এই মত থেকে ফিরে আসেন। শায়খ আলবানীর বিখ্যাত ছাত্র শায়খ আলী হালাবী হাফিযাহুল্লাহ প্রণীত ‘মাসায়েল ইলমিইয়্যাহ ফিস সিয়াসাতি ওয়াদ দা‘ওয়াতিশ শার‘ইয়্যাহ’ গ্রন্থটি তিনি সম্পাদনা করেন এবং জরুরী অবস্থায় একাধিক শাসক থাকতে পারেন বলে এই বইয়ের তথ্যকে তিনি গ্রহণ করেন। শায়খ হালাবী বলেন,
وَلَمَّا رَاجَعَ نَفَعَهُ اللهُ بِعُلُومِهِ كِتَابَنَا هَذَا، وَصَحَّحَهُ وَوَقَفَ عَلَى هَذِهِ الكَلِمَاتِ العِلْمِيَّةِ العَالِيَةِ الَّتِي تُجِيزُ مِثْلَ هَذَا التَّعَدُّدِ لِلضَّرُورَة، تَبَنَّاهُ وَانْشَرَحَ لَهُ صَدْرُهُ، وَاطْمَأَنَّ بِهِ.
‘(শায়খ আলবানী) যখন আমার প্রণীত এই বইটি সম্পাদনা ও সংশোধন করেছিলেন এবং উচ্চ গবেষণালব্ধ বক্তব্যগুলো অবগত হয়েছিলেন, যেগুলো জরুরী কারণে একাধিক শাসকের বৈধতা দেয়, তখন এটাকেই তিনি গ্রহণ করেছিলেন, এর জন্য তার বক্ষ প্রসারিত হয়েছিল এবং এতেই প্রশান্তি লাভ করেছিলেন -আল্লাহ তার ইলমের মাধ্যমে উপকৃত করুন-’।[6]
(৭) শায়খ মুহাম্মাদ ইবনে ছালেহ আল-উছায়মীন রাহিমাহুল্লাহ বলেন,
«الإِمَامُ» هُوَ وَلِيُّ الأَمْرِ الأَعْلَى فِي الدَّوْلَةِ، وَلَا يُشْتَرَطُ أَنْ يَكُوْنَ إِمَامًا عَامًّا لِلْمُسْلِمِيْنَ؛ لِأَنَّ الإِمَامَةَ العَامَّةَ انْقَرَضَتْ مِنْ أَزْمِنَةٍ مُتْطَاوِلَةٍ، وَالنَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «اسْمَعُوا وَأَطِيعُوا وَلَوْ تَأْمَّرَ عَلَيْكُمْ عَبْدٌ حَبِشِيٌّ»، فَإِذَا تَأَمَّرَ إِنْسَانٌ عَلَى جِهَةٍ مَا، صَارَ بِمَنْزِلَةِ الإِمَامِ العَامِّ، وَصَارَ قَوْلُهُ نَافِذًا، وَأَمْرُهُ مُطَاعًا. وَمِنْ عَهْدِ أَمِيْرِ المُؤْمِنِيْنَ عُثْمَانَ بْنِ عَفَّانَ ـ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ ـ وَالأُمَّةُ الإِسْلَامِيَّةُ بَدَأَتْ تَتَفَرَّقُ، فَابْنُ الزُّبَيْرِ فِي الحِجَازِ، وَبَنُو مَرْوَانَ فِي الشَّامِ، وَالمُخْتَارُ بْنُ عُبَيْدٍ وَغَيْرُهُ فِي العِرَاقِ، فَتَفَرَّقَتِ الأُمَّةُ، وَمَا زَالَ أَئِمَّةُ الإِسْلَامِ يَدِيْنُوْنَ بِالوَلَاءِ وَالطَّاعَةِ لِمَنْ تَأَمَّرَ عَلَى نَاحِيَتِهِمْ، وَإِنْ لَمْ تَكُنْ لَهُ الخِلَافَةُ العَامَّةُ؛ وَبِهَذَا نَعْرِفُ ضَلَالَ نَاشِئَةٍ نَشَأَتْ تَقُوْلُ: إِنْهُ لَا إِمَامَ لِلْمُسْلِمِيْنَ اليَوْمَ، فَلَا بَيْعَةَ لِأَحَدٍ!! ـ نَسْأَلُ اللَّهَ العَافِيَةَ ـ وَلَا أَدْرِيْ أَيُرِيْدُ هَؤُلَاءِ أَنْ تَكُوْنَ الأَمُوْرُ فَوْضَى لَيْسَ لِلنَّاسِ قَائِدٌ يَقُوْدُهُمْ؟! أَمْ يُرِيْدُوْنَ أَنْ يُقَالَ: كُلُّ إِنْسَانٍ أَمِيْرُ نَفْسِهِ؟! هَؤُلَاءِ إِذَا مَاتُوْا مِنْ غَيْرِ بَيْعَةٍ فَإِنَّهُمْ يَمُوْتُوْنَ مِيْتَةً جَاهِلِيَّةً ـ وَالعِيَاذُ بِاللَّهِ ـ.
‘ইমাম হলেন রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নেতা। শাসক হওয়ার জন্য সকল মুসলিমের একক খলীফা হতে হবে এমন কোনো শর্ত নেই। কেননা দীর্ঘকাল ধরে একক খলীফার শাসন শেষ হয়ে গেছে। এদিকে নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমরা শোনো ও আনুগত্য করো, যদিও আবিসিনীয় দাস তোমাদের শাসক হন”। অতএব, কেউ যখন কোনো অঞ্চলের শাসক হবেন, তখন তিনি হবেন একক খলীফার স্থানে এবং তার কথা ও আদেশ হবে শিরোধার্য। আমীরুল মুমিনীন উছমান ইবনে আফফান রাযিয়াল্লাহু আনহু-এর সময় থেকে মুসলিম উম্মাহ বিভক্ত হতে শুরু করেছে। ইবনুয যুবাইর হিজাযে, বানু মারওয়ান শামে এবং মুখতার ইবনে উবাইদ ইরাকে ক্ষমতা নেন বলে মুসলিম উম্মাহ বিভক্ত হয়ে যায়। উল্লেখ্য, যে ব্যক্তি কোনো অঞ্চলের শাসক নিযুক্ত হন, তিনি মুসলিমদের একক খলীফা না হওয়া সত্ত্বেও উলামায়ে কেরাম তার সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখা এবং তার আনুগত্য করার ব্যাপারে অদ্যাবধি বিশ্বাস পোষণ করে আসছেন। এর দ্বারা আমরা কিছু নতুন প্রজন্মের ভ্রষ্টতা বুঝতে পারি, যারা বলছে, আজ মুসলিমদের কোনো ইমাম নেই। অতএব, কারো জন্য বায়‘আত চলবে না। আমি জানি না, তারা কি মানুষের শাসক না থাকা অবস্থায় তাদের বিশৃঙ্খলা চাচ্ছে? নাকি তারা বলতে চাচ্ছে যে, প্রত্যেকটা মানুষ তার নিজের শাসক? এরা যদি বায়‘আত ছাড়া মারা যায়, তাহলে তাদের মৃত্যু হবে জাহেলী মৃত্যু’।[7]
বুঝা গেল, যারা বলছে, যে খলীফার আনুগত্য করা ওয়াজিব, তিনি কেবল মুসলিম উম্মাহর একক খলীফা এবং যারা বিভিন্ন দেশের শাসক, তাদের বায়‘আত ও আনুগত্য করা ওয়াজিব নয়, তাদের এই বক্তব্য দলীল বিরোধী, ইজমা বিরোধী, আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের মূলনীতি বিরোধী এবং বাস্তবতা বিরোধী। তাদের এই বক্তব্য শাসকশ্রেণির বিরুদ্ধে বিপ্লব এবং তাদের বায়‘আত ছিন্নের দিকে ঠেলে দেয়। আর এটাই হচ্ছে খারেজীদের বক্তব্য।
(ইনশা-আল্লাহ চলবে)
-আব্দুল আলীম ইবনে কাওছার মাদানী
বি. এ. (অনার্স), উচ্চতর ডিপ্লোমা, এম. এ. এবং এম.ফিল., মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সঊদী আরব; অধ্যক্ষ, আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ, রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ।
[1]. মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ইবনে তায়মিয়া, ৩৫/২০।
[2]. মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ইবনে তায়মিয়া, ৩৪/১৭৫-১৭৬।
[3]. সুবুলুস সালাম, (দারুল হাদীছ, তা. বি.), ২/৩৭৪।
[4]. আস-সায়লুল জাররার, (দারু ইবনে হাযম, প্রথম প্রকাশ, তা. বি.), পৃ. ৯৪১।
[5]. আদ-দুরার আস-সানিইয়্যাহ ফিল আজবিবাতিন নাজদিইয়্যাহ, (তাহক্বীক্ব: আব্দুর রহমান ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে ক্বাসেম, ৬ষ্ঠ প্রকাশ: ১৪১৭ হি./১৯৯৬ খৃ.), ৫/৯।
[6]. আলী আল-হালাবী, মাসায়েল ইলমিইয়্যাহ ফিস সিয়াসাতি ওয়াদ দা‘ওয়াতিশ শার‘ইয়্যাহ, (মাকতাবাতু ইবনিল ক্বাইয়িম, কুয়েত, দ্বিতীয় প্রকাশ: ১৪২২ হি./২০০১ খৃ.), পৃ: ৭৪, টীকা নং- ২।
[7]. আশ-শারহুল মুমতে‘, ৮/৯।