মাহরাম নারীগণ
স্থায়ী মাহরাম:
(ক) বংশসূত্রে স্থায়ী মাহরাম নারীগণের বিবরণ:
বংশীয় নিকটাত্মীয় হওয়ার কারণে যেসব নারীর সাথে চিরস্থায়ীভাবে বিবাহবন্ধন হারাম, তারাই এ শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত। তারা কয়েক প্রকারের হয়ে থাকে। যথা-
প্রথম প্রকার:ব্যক্তির জন্মগ্রহণ সম্বন্ধীয় বা বংশ সম্বন্ধীয় মাহরাম
কারো জন্মগ্রহণ সম্বন্ধীয় মাহরাম বলতে সেসব নারী উদ্দেশ্য, যাদের থেকে সে জন্মগ্রহণ করেছে। তারা হচ্ছেন তার ‘মূল’ (উছূল/أُصُوْلٌ)।
নিচে একজন পুরুষের জন্মগ্রহণ সম্বন্ধীয় নারী মাহরামগণের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা পেশ করা হলো:
(১) মা:الْأُمُّ اسْمٌ لِكُلِّ أُنْثَى لَهَا عَلَيْكَ وِلَادَةٌ ‘মা বলতে প্রত্যেক এমন নারীকে বুঝায়, আপনার জন্মে যাদের অংশগ্রহণ রয়েছে’, তিনি যত ঊর্ধ্বতনই হন না কেন। অর্থাৎ প্রত্যেক এমন নারীকে মা বলা হয়, যিনি আপনাকে সরাসরি বা মধ্যস্থতায় জন্ম দিয়েছেন। যিনি আপনাকে সরাসরি জন্ম দিয়েছেন, তিনি হচ্ছেন আপনার মা। আর যিনি মধ্যস্থতায় জন্ম দিয়েছেন, তিনি হচ্ছেন আপনার দাদী ও নানী এবং তাদের ঊর্ধ্বতন মহিলাগণ। অর্থাৎ তিনি হচ্ছেন আপনার দাদী, দাদীর মা, তার মা... এভাবে যত উপরে যাক না কেন এবং নানী, নানীর মা, তার মা... এভাবে যত উপরে যাক না কেন। সেই হিসেবে মা, দাদী, নানী ও তাদের ঊর্ধ্বতন মহিলাগণ মায়ের শ্রেণিভুক্ত।[1] মহান আল্লাহ বলেন,حُرِّمَتْ عَلَيْكُمْ أُمَّهَاتُكُمْ ‘তোমাদের উপর হারাম করা হয়েছে তোমাদের মাতাগণকে’ (আন-নিসা, ৪/২৩)। ‘হারাম করা হয়েছে’ অর্থাৎ তাদের সাথে বিবাহবন্ধন চিরস্থায়ীভাবে হারাম করা হয়েছে। আয়াতাংশটিতে মাতাগণ বলতে মা, দাদী, নানী ও ঊর্ধ্বতন মহিলাগণ উদ্দেশ্য। আর এ ব্যাপারে ইজমা রয়েছে।[2]
সম্মানিত পাঠক! সূত্রটি ভালোভাবে মনে রাখবেন, আপনার জন্মগ্রহণে যাদের অংশগ্রহণ রয়েছে, কেবল তারাই আপনার মা। অতএব, পাতানো মা, ধর্ম মা, মায়ের মতো, মায়ের বয়সী, দাদী-নানীর মতো ইত্যাদি অজুহাতে আল্লাহর বিধান লঙ্ঘন করবেন না।
আরেকটি জরুরী জ্ঞাতব্য বিষয় হচ্ছে, দাদী, নানী ও তাদের ঊর্ধ্বতন মহিলাগণ যেহেতু মায়ের শ্রেণিভুক্ত, সেহেতু নাতি-নাতনীর পক্ষ থেকে তাদেরকে দাদী আপু, নানী আপু ইত্যাদি সম্বোধন করা বর্জন করা ভালো। অনুরূপভাবে দাদী, নানী ও তাদের ঊর্ধ্বতন মহিলাগণের পক্ষ থেকে নাতি-নাতনীদেরকে আপা, আপু, বোন ইত্যাদি সম্বোধন করাও এড়িয়ে চলা ভালো।
তাছাড়া হাদীছে নাতিকে সন্তান হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর প্রিয় নাতি হাসান ও হুসাইন রাযিয়াল্লাহু আনহুমা সম্পর্কে বলেন,هَذَانِ ابْنَايَ، وَابْنَا ابْنَتِي এরা দু’জন আমার ছেলে এবং আমার মেয়ের ছেলে’।[3]
দ্বিতীয় প্রকার:ব্যক্তির জন্মদান সম্বন্ধীয় মাহরাম
কারো জন্মদান সম্বন্ধীয় মাহরাম বলতে সেসব নারী উদ্দেশ্য, যাদের জন্মদানে তার অংশগ্রহণ রয়েছে। এ শ্রেণিকে একজন ব্যক্তির ‘শাখা’ (ফুরূ/فُرُوْعٌ) হিসেবে অভিহিত করা হয়ে থাকে।
নিচে একজন পুরুষের জন্মদান সম্বন্ধীয় নারী মাহরামগণের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা পেশ করা হলো:
(২) মেয়ে:الْبِنْتُ اسْمٌ لِكُلِّ أُنْثَى لَكَ عَلَيْهَا وِلَادَةٌ ‘প্রত্যেক এমন নারীকে মেয়ে বলে, যার জন্মদানে আপনার অংশগ্রহণ রয়েছে’। অথবা,كُلُّ أُنْثَى يَرْجِعُ نَسَبُهَا إِلَيْكَ بِالْوِلَادَةِ بِدَرَجَةٍ أَوْ دَرَجَاتٍ، فَيَدْخُلُ فِي ذَلِكَ بِنْتُ الصُّلْبِ وَبَنَاتُهَا وَبَنَاتُ الْأَبْنَاءِ وَإِنْ نَزَلْنَ ‘প্রত্যেক এমন নারীকে মেয়ে বলে, যার বংশীয় ধারা জন্মসূত্রে আপনার দিকে ফিরে— সেই বংশীয় ধারার ব্যবধান এক স্তর পরে হোক বা একাধিক স্তর পরে হোক। সেজন্য, একজন ব্যক্তির মেয়ে, মেয়ের মেয়ে, ছেলের মেয়ে এবং তাদের অধস্তন নারীগণ সবাই মেয়ের অন্তর্ভুক্ত’।[4]
মহান আল্লাহ এ প্রসঙ্গে বলেন, وَبَنَاتُكُمْ ‘আর (তোমাদের উপর হারাম করা হয়েছে) তোমাদের মেয়েদেরকে’ (আন-নিসা, ৪/২৩)।
অতএব, পালিত মেয়ে, মেয়ের বান্ধবী, মেয়ের বয়সী, নিজের ছাত্রী, বন্ধুর মেয়ে ইত্যাদি দোহাই দিয়ে মহান আল্লাহর ফরয বিধান অমান্য করার দুঃসাহস দেখাবেন না।
উল্লেখ্য, যেনার মাধ্যমে জন্ম নেওয়া মেয়ে অর্থাৎ জারজ মেয়ে যেনাকার সেই পুরুষের জন্য হারাম। অর্থাৎ তার সাথে বিবাহবন্ধন হারাম। অনুরূপভাবে লি‘আনের* পরে জন্ম নেওয়া মেয়ে, যাকে লি‘আনকারী পুরুষটি ইতোপূর্বে অস্বীকার করেছে, তাকে বিয়ে করা সেই পুরুষের জন্য হারাম।[5]
তৃতীয় প্রকার:ব্যক্তির পিতা-মাতার জন্মদান সম্বন্ধীয় মাহরাম
অর্থাৎ একজন ব্যক্তির পিতা-মাতা যেসব নারীকে জন্ম দিয়েছেন, ঐ ব্যক্তি সেসব নারীর জন্য মাহরাম। আর তারা হচ্ছেন, ঐ ব্যক্তির বোন, বোনের মেয়ে (ভাগনি), ভাইয়ের মেয়ে (ভাতিজি/ভাস্তি/ভাইঝি) এবং তাদের অধস্তন নারীগণ। এ শ্রেণিকে আমরা ‘ব্যক্তির পিতা-মাতার জন্মদান সম্বন্ধীয় মাহরাম’ (فُرُوْعُ أَبَوَيِ الرَّجُلِ) হিসেবে অভিহিত করছি।
(৩) বোন: الْأُخْتُ اسْمٌ لِكُلِّ أُنْثَى جَاوَرَتْكَ فِي أَصْلَيْكَ أَوْ فِي أَحَدِهِمَا ‘বোন বলতে প্রত্যেক এমন নারীকে বুঝায়, যে আপনার পিতা-মাতা উভয়ের অথবা দু’জনের যে কোনো একজনের জন্মদানসূত্রে আপনার পাশাপাশি বসবাস করে’। অর্থাৎ সে হচ্ছে আপনার সহোদরা বোন, বৈমাত্রেয় বোন ও বৈপিত্রেয় বোন। মহান আল্লাহ বোন সম্পর্কে বলেন, وَأَخَوَٰتُكُمْ ‘আর (তোমাদের উপর হারাম করা হয়েছে) তোমাদের বোনদেরকে’ (আন-নিসা, ৪/২৩)।
অতএব, বোনের সংজ্ঞাটি মনে রাখবেন এবং মামাতো বোন, খালাতো বোন, ফুফাতো বোন, চাচাতো বোন, পাতানো বোন প্রমুখের সাথে পর্দার বিধান মেনে চলবেন। বোনের বান্ধবী, বোনের মতো, পড়শি বোন ইত্যাদি অজুহাত দেখিয়ে পর্দার বিধান অমান্য করবেন না। কারণ তারা কেউ আপনার পিতা-মাতার জন্মদান সম্বন্ধীয় বোন নয়। সেজন্যই মহান আল্লাহ বলেন,يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِنَّا أَحْلَلْنَا لَكَ أَزْوَاجَكَ اللَّاتِي آتَيْتَ أُجُورَهُنَّ وَمَا مَلَكَتْ يَمِينُكَ مِمَّا أَفَاءَ اللَّهُ عَلَيْكَ وَبَنَاتِ عَمِّكَ وَبَنَاتِ عَمَّاتِكَ وَبَنَاتِ خَالِكَ وَبَنَاتِ خَالَاتِكَ اللَّاتِي هَاجَرْنَ مَعَكَ وَامْرَأَةً مُؤْمِنَةً إِنْ وَهَبَتْ نَفْسَهَا لِلنَّبِيِّ إِنْ أَرَادَ النَّبِيُّ أَنْ يَسْتَنْكِحَهَا خَالِصَةً لَكَ مِنْ دُونِ الْمُؤْمِنِينَ قَدْ عَلِمْنَا مَا فَرَضْنَا عَلَيْهِمْ فِي أَزْوَاجِهِمْ وَمَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُمْ لِكَيْلَا يَكُونَ عَلَيْكَ حَرَجٌ وَكَانَ اللهُ غَفُورًا رَحِيمًا ‘হে নবী! আমি আপনার জন্য আপনার স্ত্রীদেরকে হালাল করেছি, যাদেরকে আপনি মোহরানা দিয়েছেন। আর আল্লাহ আপনাকে ফায় (বিনা যুদ্ধে লব্ধ মাল) হিসেবে যা দিয়েছেন, তন্মধ্যে যারা আপনার মালিকানাধীন তাদেরকেও আপনার জন্য হালাল করেছি এবং (বিয়ের জন্য বৈধ করেছি) আপনার চাচার মেয়ে, ফুফুর মেয়ে, মামার মেয়ে ও খালার মেয়েকে, যারা আপনার সাথে হিজরত করেছে। আর কোনো মুমিন নারী যদি নবীর জন্য নিজেকে হেবা করে, নবী তাকে বিয়ে করতে চাইলে সেও তার জন্য বৈধ। এটি (শেষোক্তটি) বিশেষভাবে আপনার জন্য, অন্য মুমিনদের জন্য নয়। আমি তাদের উপর তাদের স্ত্রীদের ও তাদের ডান হাত যার মালিক হয়েছে তাদের ব্যাপারে যা ধার্য করেছি, তা আমি নিশ্চয় জানি; যাতে আপনার কোনো অসুবিধা না হয়। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’ (আল-আহযাব, ৩৩/৫০)।
(৪) ভাইয়ের মেয়ে (ভাতিজি/ভাস্তি/ভাইঝি): بِنْتُ الْأَخِ اسْمٌ لِكُلِّ أُنْثَى لِأَخِيكَ عَلَيْهَا وِلَادَةٌ بِوَاسِطَةٍ أَوْ مُبَاشَرَةً ‘প্রত্যেক এমন নারীকে ভাইয়ের মেয়ে বা ভাতিজি বলে, যার জন্মে আপনার ভাইয়ের সরাসরি বা মধ্যস্থতায় অংশগ্রহণ রয়েছে’।[6] অর্থাৎ আপনার ভাইয়ের মেয়ে, ভাইয়ের মেয়ের মেয়ে, ভাইয়ের ছেলের মেয়ে ও তাদের অধস্তন নারীগণ সকলেই এই শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত।
উল্লেখ্য, এখানে ভাই বলতে সহোদর, বৈমাত্রেয় বা বৈপিত্রেয় ভাই উদ্দেশ্য।
(৫) বোনের মেয়ে বা ভাগনি সম্পর্কেও অনুরূপ কথা প্রযোজ্য। অর্থাৎ যার জন্মে আপনার সহোদরা, বৈমাত্রেয় বা বৈপিত্রেয় বোনের সরাসরি বা মধ্যস্থতায় অংশগ্রহণ রয়েছে, সে-ই বোনের মেয়ে। এই দুই শ্রেণি সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন,وَبَنَاتُ الْأَخِ وَبَنَاتُ الْأُخْتِ ‘আর (তোমাদের উপর হারাম করা হয়েছে) তোমাদের ভাতিজিদেরকে ও ভাগনিদেরকে’ (আন-নিসা, ৪/২৩)।
সুতরাং এই সূত্রের বাইরে গিয়ে দূরসম্পর্কের কোনো ভাতিজি বা ভাগনির সাথে চলাফেরায় পর্দার বিধান লঙ্ঘন করবেন না।
চতুর্থ প্রকার:ব্যক্তির দাদা-দাদী ও নানা-নানীর জন্মদান সম্বন্ধীয় মাহরাম
এখানে দাদা-দাদী ও নানা-নানীর জন্মদান সম্বন্ধীয় মাহরাম বলতে তাদের কন্যাগণ উদ্দেশ্য। আপনার দাদা-দাদীর কন্যা হচ্ছেন আপনার ফুফু। আর আপনার নানা-নানীর কন্যা হচ্ছেন আপনার খালা।
(৬) ফুফু: الْعَمَّةُ اسْمٌ لِكُلِّ أُنْثَى شَارَكَتْ أَبَاكَ أَوْ جَدَّكَ فِي أَصْلَيْهِ أَوْ فِي أَحَدِهِمَا ‘প্রত্যেক এমন নারীকে ফুফু বলে, যারা আপনার বাবার বা দাদার সঙ্গী হয়েছে তাদের পিতা-মাতা উভয়ের জন্মদান সূত্রে অথবা দু’জনের যে কোনো একজনের জন্মদান সূত্রে’।[7] এভাবেও বলা যেতে পারে,كُلُّ ذَكَرٍ رَجَعَ نَسَبُهُ إِلَيْكَ فَأُخْتُهُ عَمَّتُكَ ‘প্রত্যেক এমন পুরুষের বোন আপনার ফুফু, যার বংশসূত্র আপনার দিকে ফিরে’।[8]
অতএব, এখানে ফুফু বলতে আপন ফুফু, পিতার ফুফু, দাদা-দাদীর ফুফু, মায়ের ফুফু ও নানা-নানীর ফুফু সকলেই উদ্দেশ্য।
(৭) খালা: الْخَالَةُ اسْمٌ لِكُلِّ أُنْثَى شَارَكَتْ أُمَّكَ فِي أَصْلَيْهَا أَوْ فِي أَحَدِهِمَا ‘প্রত্যেক এমন নারীকে খালা বলে, যারা আপনার মায়ের সঙ্গী হয়েছে তাদের পিতা-মাতা উভয়ের জন্মদান সূত্রে অথবা দু’জনের যে কোনো একজনের জন্মদান সূত্রে’।[9] এভাবেও বলা যেতে পারে,كُلُّ أُنْثَى رَجَعَ نَسَبُهَا إِلَيْكَ بِالْوِلَادَةِ فَأُخْتُهَا خَالَتُكَ ‘প্রত্যেক এমন নারীর বোন আপনার খালা, যার বংশসূত্র আপনার দিকে ফিরে’।[10]
অতএব, এখানে খালা বলতে আপন খালা, পিতার খালা, দাদা-দাদীর খালা, মায়ের খালা ও নানা-নানীর খালা সকলেই উদ্দেশ্য।
বুঝা গেল, এখানে ‘ব্যক্তির দাদা-দাদী ও নানা-নানীর জন্মদান সম্বন্ধীয় মাহরাম’ দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে, আপনার ফুফু ও খালা। অনুরূপভাবে আপনার বাবার ফুফু ও খালা, আপনার মায়ের ফুফু ও খালা, আপনার দাদা-দাদীর ফুফু ও খালা, আপনার নানা-নানীর ফুফু ও খালা, এভাবে যত ঊর্ধ্বতনই হোক না কেনো।অনুরূপভাবে ফুফু বা খালা সহোদরাও হতে পারে অথবা বৈপিত্রেয় বা বৈমাত্রেয় তথা সৎ ফুফু বা সৎ খালাও হতে পারে।
ফুফু ও খালার ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে, তাদের মাহরাম হওয়ার বিষয়টি কেবল প্রথম স্তরের মধ্যে সীমাবদ্ধ। প্রথম স্তর অতিক্রম করলেই তারা আর আপনার মাহরাম গণ্য হবেন না। যেমন- আপনার ফুফুর মেয়ে তথা ফুফাতো বোন ও আপনার খালার মেয়ে তথা খালাতো বোন আপনার মাহরাম নয়। কেননা তারা আপনার দাদা-দাদী ও নানা-নানীর সূত্রে প্রথম স্তর অতিক্রম করেছে। এটি বাবা-মা, দাদা-দাদী, নানা-নানী প্রমুখের ফুফু ও খালার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।[11] মহান আল্লাহ বলেন, وَعَمَّاتُكُمْ وَخَالَاتُكُمْ ‘আর (তোমাদের উপর হারাম করা হয়েছে) তোমাদের ফুফুদেরকে ও খালাদেরকে’ (আন-নিসা, ৪/২৩)।
মোদ্দাকথা: ব্যক্তির জন্মগ্রহণ সম্বন্ধীয় বা বংশ সম্বন্ধীয় মাহরাম নারীদের ব্যাপারে মূলনীতি হচ্ছে, কোনো মহিলা যখনই মূল হবেন বা শাখা হবেন অথবা আপনার পিতা-মাতা বা দাদা-দাদী ও নানা-নানীর যে কারোর শাখা হবেন, তখনই তিনি আপনার জন্য চিরতরে হারাম হয়ে যাবেন।
অর্থাৎ কোনো মহিলা যখনই মূল হবেন তথা মা বা দাদী-নানী হবেন অথবা শাখা হবেন তথা মেয়ে বা ছেলের মেয়ে বা মেয়ের মেয়ে হবেন বা পিতা-মাতা যে কোনো একজনের শাখা হবেন তথা বোন হবেন অথবা দাদা-নানা যে কোনো একজনের শাখা হবেন তথা ফুফু বা খালা হবেন, তখনই তিনি আপনার জন্য চিরতরে হারাম হয়ে যাবেন।[12]
জন্মগ্রহণ বা বংশসূত্রে মাহরাম নারীগণ হচ্ছেনমোট ৭ শ্রেণির, নিচে যাদের সংক্ষিপ্ত তালিকা পেশ করা হলো:
(১) মা, দাদী-নানী ও তদূর্ধ্ব নারীগণ।
(২) মেয়ে, ছেলের মেয়ে, মেয়ের মেয়ে, ছেলের মেয়ের মেয়ে— এভাবে যত নিচে নামুক।
(৩) সহোদরা বোন, বৈমাত্রেয় বোন ও বৈপিত্রেয় বোন।
(৪) ভাইয়ের মেয়ে, ভাইয়ের মেয়ের মেয়ে, ভাইয়ের ছেলের মেয়ে।
(৫) বোনের মেয়ে, বোনের ছেলের মেয়ে, বোনের মেয়ের মেয়ে।
(৬) ফুফু।
(৭) খালা।
এই ৭ শ্রেণির বিবরণ মহান আল্লাহ সূরা আন-নিসার ২৪ নম্বর আয়াতের শুরুতে টানা উল্লেখ করেছেন এভাবে,حُرِّمَتْ عَلَيْكُمْ أُمَّهَاتُكُمْ وَبَنَاتُكُمْ وَأَخَوَاتُكُمْ وَعَمَّاتُكُمْ وَخَالَاتُكُمْ وَبَنَاتُ الْأَخِ وَبَنَاتُ الْأُخْتِ ‘তোমাদের উপর হারাম করা হয়েছে তোমাদের মাতাদেরকে, তোমাদের মেয়েদেরকে, তোমাদের বোনদেরকে, তোমাদের ফুফুদেরকে, তোমাদের খালাদেরকে, ভাতিজিদেরকে, ভাগনিদেরকে’।
বংশসূত্রে এর বাইরে যারা আছেন, তারা মাহরাম নন। যেমন- ফুফুর মেয়ে, চাচার মেয়ে, মামার মেয়ে, খালার মেয়ে। তাই তো মহান আল্লাহ দ্ব্যর্থহীন ঘোষণা দিয়েছেন, وَأُحِلَّ لَكُمْ مَا وَرَاءَ ذَلِكُمْ ‘এদের বাইরে যারা রয়েছে, তাদেরকে তোমাদের জন্য বৈধ করা হয়েছে’ (আন-নিসা, ৪/২৪)।[13]
সুতরাং যে কোনো খোঁড়া অজুহাত দেখিয়ে মহান আল্লাহর ফরয এ বিধান লঙ্ঘন করা হারাম। কারণ তিনি মাহরাম নারীগণের তালিকা পেশ করার পরে স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন, كِتَابَ اللَّهِ عَلَيْكُمْ ‘আল্লাহ এসব ব্যবস্থা তোমাদের উপর ফরয করে দিয়েছেন’ (আন-নিসা, ৪/২৪)।
(চলবে)
আব্দুল আলীম ইবনে কাওছার মাদানী
[1]. কুরতুবী, আল-জামে‘ লিআহকামিল কুরআন (তাফসীর কুরতুবী), সূরা আন-নিসার ২৩ নম্বর আয়াতের ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য, ৫/১০৮।
[2]. মুহাম্মাদ সাঈদ রসলান, আল-মুহাররমাত মিনান নিসা, পৃ. ৩৮।
[3]. সুনানে তিরমিযী, হা/৩৭৬৯, ‘হাসান’।
[4]. তাফসীর কুরতুবী, সূরা আন-নিসার ২৩ নম্বর আয়াতের ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য, ৫/১০৮।
* স্বামী স্ত্রীকে যেনার অপবাদ দিলে এবং স্ত্রীর গর্ভস্থ ভ্রূণ তার সন্তান হিসেবে গ্রহণে অস্বীকৃতি জানালে স্বামীকে ৪ জন সাক্ষী উপস্থিত করতে হবে। অন্যথা দণ্ড থেকে বাঁচতে হলে তাকে ৪ বার আল্লাহর কসম করে বলতে হবে যে, সে সত্যবাদী এবং পঞ্চমবার বলতে হবে, সে যদি মিথ্যাবাদী হয়ে থাকে, তাহলে তার উপর আল্লাহর লা‘নত হোক। স্ত্রীও যদি দণ্ড থেতে বাঁচতে চায়, তাহলে তাকেও এরূপ করতে হবে। তবে তাকে পঞ্চমবার বলতে হবে, তার স্বামী যদি সত্যবাদী হয়ে থাকে, তাহলে তার উপর অর্থাৎ স্ত্রীর নিজের উপর আল্লাহর গযব হোক। এই নিয়মকে লি‘আন বলে।
লি‘আনের মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক চিরতরে শেষ হয়ে যায়; ফিরে আসার আর কোনো সুযোগ থাকে না। যে গর্ভাবস্থার কারণে এই লি‘আন সম্পন্ন হয়েছে, তাতে যদি কন্যা সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়, তাহলে সে বিবাহের উপযুক্ত হলে তাকে বিয়ে করা ঐ স্বামীর জন্য হারাম।
[5]. বাকর মুহাম্মাদ ইবরাহীম, আল-মুহাররমাত মিনান নিসা, পৃ. ৭।
[6]. তাফসীর কুরতুবী, সূরা আন-নিসার ২৩ নম্বর আয়াতের ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য, ৫/১০৮।
[7]. তাফসীর কুরতুবী, সূরা আন-নিসার ২৩ নম্বর আয়াতের ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য, ৫/১০৮।
[8]. প্রাগুক্ত।
[9]. প্রাগুক্ত।
[10]. প্রাগুক্ত।
[11]. দ্রষ্টব্য: বাকর মুহাম্মাদ ইবরাহীম, আল-মুহাররমাত মিনান নিসা, পৃ. ৭; মুহাম্মাদ সাঈদ রসলান, আল-মুহাররমাত মিনান নিসা, পৃ. ৩৮।
[12]. মুহাম্মাদ সাঈদ রসলান, আল-মুহাররমাত মিনান নিসা, পৃ. ৩৮-৩৯।
[13]. প্রাগুক্ত, পৃ. ৪২।