হজ্জ ও উমরার ওয়াজিবসমূহ :
হজ্জ কিংবা উমরায় যে সকল আমল সম্পাদন করা জরুরী, কিন্তু ছুটে গেলে হজ্জ-উমরা বাতিল হয়ে যায় না, তবে জরিমানা স্বরূপ কাফফারা দিতে হয়, সে সকল আমলকে হজ্জ-উমরার ওয়াজিব বলা হয়। ইবনে আব্বাস রযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, যে ব্যক্তি হজ্জ বা উমরার জরুরী আমল ভুলে গেছে অথবা ছেড়ে দিয়েছে, সে যেন রক্ত প্রবাহিত করে।[1] অর্থাৎ পশু যবেহ করে।
হজ্জের ওয়াজিবসমূহ :
হজ্জের ওয়াজিব আটটি। যথা :
১. নির্ধারিত মীক্বাত হতে ইহরাম বাঁধা।
২. সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফার মাঠে অবস্থান করা।
৩. মুযদালিফায় রাত্রিযাপন করা।
৪. ১০ তারিখে বড় জামরায় ৭টি এবং ১১, ১২ ও ১৩ তারিখে ছোট জামরা, মধ্য জামরা ও বড় জামরায় প্রতিদিন মোট ২১টি পাথর মারা।
৫. কুরবানী করা।
৬. মাথা ন্যাড়া অথবা চুল ছোট করা।
৭. ১১, ১২ ও ১৩ তারিখ মিনায় রাত্রিযাপন করা।
৮. বিদায় ত্বাওয়াফ করা।
ওয়াজিবসমুহের সংক্ষিপ্ত বিবরণ :
নির্ধারিত মীক্বাত হতে ইহরাম বাঁধা : হজ্জ ও উমরার জন্য ইহরাম বাঁধা ফরয। যারা যে মীক্বাত অতিক্রম করে বায়তুল্লাহয় প্রবেশ, তারা সে মীক্বাত হতে ইহরাম বাঁধবে। আর মীক্বাত থেকে ইহরাম বাঁধা ওয়াজিব।
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: وَقَّتَ رَسُوْلُ اللّٰهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِأَهْلِ الْمَدِينَةِ: ذَا الْحُلَيْفَةِ وَلِأَهْلِ الشَّامِ: الْجُحْفَةَ وَلِأَهْلِ نَجْدٍ: قَرْنَ الْمَنَازِلِ وَلِأَهْلِ الْيَمَنِ: يَلَمْلَمَ فَهُنَّ لَهُنَّ وَلِمَنْ أَتٰى عَلَيْهِنَّ مِنْ غَيْرِ أَهْلِهِنَّ لِمَنْ كَانَ يُرِيدُ الْحَجَّ وَالْعُمْرَةَ فَمَنْ كَانَ دُونَهُنَّ فَمُهَلُّه مِنْ أَهْلِه وَكَذَاكَ وَكَذَاكَ حَتّٰى اَهْلُ مَكَّةَ يُهِلُّوْنَ مِنْهَا.
আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস রযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাদীনাবাসীদের জন্য ‘যুল হুলায়ফাহ’ শাম বা সিরিয়াবাসীদের জন্য, ‘জুহফাহ’ নাজদবাসীদের জন্য, ‘ক্বরনুল মানাযিল’ এবং ইয়ামানবাসীদের জন্য ‘ইয়ালামলাম’-কে মীক্বাত নির্দিষ্ট করেছেন। এ সকল স্থানে বসবাসরত জনগণ আর যারা এ স্থান অতিক্রম করে হজ্জ বা উমরার উদ্দেশ্যে বায়তুল্লাহয় প্রবেশ করবে তাদের জন্য মিকাত এ সকল স্থান। আর যারা মীক্বাতের সীমার মধ্যে অবস্থান করবে, তাদের ইহরামের স্থান তাদের ঘর। এভাবে পর্যায়ক্রমে নিকটবর্তী লোকেরা স্বীয় বাড়ি হতে এমনকি মাক্কাবাসীরা ইহরাম বাঁধবে মক্কা হতেই।[2] এই হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত হয়, ইহরাম বাঁধার জন্য নির্ধারিত স্থান রয়েছে। নির্ধারিত স্থানে ইহরাম বাঁধতে না পারলে পুনরায় মীক্বাতে ফিরে গিয়ে ইহরাম বাঁধতে হবে। সম্ভব না হলে জরিমানা হিসাবে দম দিতে হবে।
সূর্য ডুবা পর্যন্ত আরাফায় অবস্থান করা : হজ্জের দিন আরাফার মাঠে অবস্থান করা ফরয। আর সূর্য ডুবা পর্যন্ত অবস্থান করা ওয়াজিব। জাবের রযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরাফার দিন আরাফার মাঠে যোহর ও আছর এক সাথে আদায় করলেন এবং ক্বিবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে দু‘আ করতে লাগলেন এমনকি সূর্য ডুবে গেল।[3] এই হাদীছে প্রমাণিত হয়, তিনি নিজেই সূর্যস্ত পর্যন্ত আরাফার মাঠে অবস্থান করেছেন। আর তিনি আমাদেরকে বলেছেন, তোমরা তোমাদের হজ্জের নিয়ম-কানুন আমার নিকট হতে গ্রহণ করো। জাবের রযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজ্জে আদেশ করেন, তোমরা তোমাদের হজ্জের নিয়ম-কানুন শিখে নাও। আমার মনে হচ্ছে, আমি এবার হজ্জ করার পর আর হজ্জ করার সুযোগ পাব না।[4] অতএব সূর্য ডুবা পর্যন্ত আরাফায় অবস্থান করতে হবে। সূর্য ডুবার আগেই আরাফা ত্যাগ করলে দম দেওয়া জরুরী হয়ে পড়বে।
মুযদালিফায় অবস্থান করা : আল্লাহ তাআলা আদেশ করেন, فَإِذَا أَفَضْتُمْ مِنْ عَرَفَاتٍ فَاذْكُرُوا اللَّهَ عِنْدَ الْمَشْعَرِ الْحَرَامِ ‘যখন তোমরা আরাফা হতে মাশআরে হারামে বা মুযদালিফায় ফিরে আসবে, তখন তোমরা আল্লাহর যিকির করো’ (আল-বাক্বারা, ২/১৯৮)। এই আয়াত প্রমাণ করে, মুযদালিফায় অবস্থান করতে হবে। তারপর তিনি আরাফার ময়দান হতে মুযদালিফায় চলে আসলেন। তিনি সেখানে এক আযানে এবং দুই ইক্বামতে মাগরিব ও এশার ছালাত আদায় করলেন। তিনি দুই ছালাতের মাঝে কোনো সুন্নাত পড়লেন না। তারপর তিনি বাহনে আরোহণ করে মাশআরে হারামে তথা মুযদালিফায় আসলেন। ক্বিবলামুখী হয়ে আল্লাহর নিকট দু‘আ করলেন, তাকবীর পাঠ করলেন, ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বললেন এবং আল্লাহর একত্বের বর্ণনা করলেন। তিনি এভাবে দাঁড়িয়ে দু‘আ করতে থাকলেন, এমনকি পূর্ব আকাশ খুব বেশি উজ্জ্বল হয়ে গেল।[5] এই হাদীছ প্রমাণ করে, নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে মুযদালিফায় রাত্রিযাপন করেছেন। সুস্থ পুরুষ-নারী মুযদালিফায় রাত্রি যাপন না করলে তার উপর দম দেওয়া ওয়াজিব হয়ে যাবে। তবে অসুস্থ মহিলা এবং ছোট বাচ্চারা প্রয়োজন মনে করলে অর্ধরাতের পর মুযদালিফা ত্যাগ করতে পারে; তারা বাকি সময় মিনায় থাকতে পারে।
১০ তারিখে বড় জামরায় এবং ১১, ১২ ও ১৩ তারিখে তিন জামরায় পাথর নিক্ষেপ করা : ১০ তারিখে শুধু বড় জামরায় সকাল হতে সন্ধ্যা পর্যন্ত ৭টি পাথর মারতে হবে এবং ১১, ১২ ও ১৩ তারিখে সূর্য ঢলার পর হতে সন্ধ্যা পর্যন্ত সময়ে তিনটি স্থানে ২১টি পাথর মারতে হবে। হাদীছে এসেছে,
عَنْ جَابِرٍ رضي الله عنه قَالَ رَمَى رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْجَمْرَةَ يَوْمَ النَّحْرِ ضُحًى، وَأَمَّا بَعْدَ ذَلِكَ، فَإِذَا زَالَتِ الشَّمْسُ
জাবের রযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানীর দিন বড় জামরায় পাথর মারেন। আর পরের দিনগুলোতে সূর্য ঢলে যাওয়ার পর পাথর মারেন।[6] অন্য হাদীছে এসেছে,
عَنْ عَبْدِ اللّٰهِ بْنِ مَسْعُودٍ أَنَّهُ انْتَهٰى إِلَى الْجَمْرَةِ الْكُبْرٰى فَجَعَلَ الْبَيْتَ عَنْ يَسَارِه وَمِنًى عَنْ يَمِينِه وَرَمٰى بِسَبْعِ حَصَيَاتٍ يُكَبِّرُ مَعَ كُلِّ حَصَاةٍ ثُمَّ قَالَ: هٰكَذَا رَمَى الَّذِىْ أُنْزِلَتْ عَلَيْهِ سُورَةُ الْبَقَرَةِ.
আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ রযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি জামরাতুল কুবরার (বড় জামরার) নিকট পৌঁছে বায়তুল্লাহকে বামে আর মিনাকে ডানে রেখে এর উপর সাতটি পাথর মারলেন, এতে প্রত্যেকবার ‘আল্লাহু আকবার’ বলেছেন। অতঃপর তিনি বললেন, যার ওপর সূরা আল-বাক্বারা নাযিল হয়েছে, তিনি ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও এভাবে পাথর মেরেছেন।[7] এই হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ১০ তারিখ সকালে পাথর মারতেন, আর পরের দিনগুলোতে সূর্য ঢলে যাওয়ার পর পাথর মারতেন।
عَنْ وَبَرَةَ قَالَ سَأَلْتُ ابْنَ عُمَرَ مَتٰى أَرْمِى الْجِمَارَ قَالَ إِذَا رَمٰى إِمَامُكَ فَارْمِه فَأَعَدْتُ عَلَيْهِ الْمَسْأَلَةَ فَقَالَ كُنَّا نَتَحَيَّنُ فَإِذَا زَالَتِ الشَّمْسُ رَمَيْنَا.
ওয়াবারা রহিমাহুল্লাহ হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনু উমার রযিয়াল্লাহু আনহু-কে জিজ্ঞেস করলাম, আমি কোন দিন পাথর মারব? তিনি বললেন, তোমার ইমাম যেদিন মারবে, তুমিও সেদিন পাথর মারবে। আবার আমি তাকে এ মাসআলাটি জিজ্ঞেস করলাম। তখন তিনি বললেন, আমরা সময়ের অপেক্ষায় থাকতাম, যখন সূর্য অস্ত যেত তখন আমরা পাথর মারতাম।[8] অতএব পরের দিনগুলোতে সূর্য ঢলার আগে পাথর মারলে ওয়াজিব পালন হবে না। ফলে পুনরায় সঠিক সময়ে মারতে হবে; নতুবা দম দিতে হবে। তবে কেউ যদি পাথর মারতে অক্ষম হয়, তাহলে তার পক্ষ হতে অন্যজন পাথর মারতে পারে।
হাদী কুরবানী দেওয়া : ১০ তারিখের দ্বিতীয় কাজ হলো হাদী (কুরবাণীর পশু)ক যবেহ করা। হাদীর উত্তম পশু হলো উট, তারপর গরু, তারপর ছাগল বা দুম্বা। আর একটি গরুতে কিংবা উটে সাতজন হাজী অংশগ্রহণ করা জায়েয আছে। হাদীছে এসেছে,
عَنْ جَابِرٌ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ الْبَقَرَةُ عَنْ سَبْعَةٍ وَالْجَزُوْرُ عَنْ سَبْعَةٍ
জাবের রযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘একটি উট সাতজনের পক্ষ হতে এবং একটি গরু সাতজনের পক্ষ থেকে (কুরবানী) করা বৈধ হবে’।[9]
পশু যবেহ করার স্থান : সম্পূর্ণ মিনা ও মক্কার প্রতিটি পথ পশু যবেহ করার স্থান। জাবের রযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,مِنًى كُلُّهَا مَنْحَرٌ وَكُلُّ فِجَاجِ مَكَّةَ طَرِيقٌ وَمَنْحَرٌ وَكُلُّ عَرَفَةَ مَوْقِفٌ وَكُلُّ الْمُزْدَلِفَةِ مَوْقِفٌ ‘মিনা সম্পূর্ণটাই কুরবানীর স্থান। মক্কার প্রতিটি পথ মানুষ চলাচলের জন্য এবং কুরবানী করার জন্য। পূর্ণ আরাফা অবস্থানের জন্য এবং পূর্ণ মুযদালিফা অবস্থানের জন্য।[10] এই হাদীছ প্রমাণ করে, মিনা এবং মক্কার মানুষ চলাচলের সকল পথগুলো কুরবানী করার স্থান।
হাদী ও কুরবানীর সময়সীমা : হাদী ও কুরবানীর সময়সীমা চার দিন। ১০ তারিখে এবং ১১, ১২ ও ১৩ তারিখে কুরবানী করা যায়। ইবনু উমার রযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, لَمْ يُرَخَّصْ فِي أَيَّامِ التَّشْرِيقِ أَنْ يُصَمْنَ، إِلَّا لِمَنْ لَمْ يَجِدِ الهَدْيَ ‘তাশরীকের দিনগুলোতে ছিয়াম পালনের অনুমতি দেননি। তবে যারা কুরবানীর পশু সংগ্রহ করতে পারেননি (তারা ছিয়াম থাকতে পারে)’।[11] এই হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, ১০ তারিখের পরে ১১, ১২ ও ১৩ তারিখও কুরবানী করার দিন।
নুবাইশা হুযালী রযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,أَيَّامُ التَّشْرِيقِ أَيَّامُ أَكْلٍ وَشُرْبٍ وَذِكْرِ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ ‘তাশরীকের দিনগুলো খাওয়া, পান করা এবং আল্লাহকে স্মরণ করার জন্য’।[12] এই হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, ১০ তারিখের পরের দিনগুলো খাওয়া ও পান করার জন্য।
আবূ হুরায়রা রযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,كُلُّ أَيَّامِ التَّشْرِيقِ ذَبْحٌ ‘তাশরীকের সকল দিন হচ্ছে পশু যবেহ করার দিন’।[13] এই হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, তাশরীকের দিনগুলো পশু যবেহ করার দিন, তা মোট চার দিন হয়।
১১, ১২ ও ১৩ তারিখের রাতগুলো মিনায় থাকা : এই রাতগুলো মিনায় যাপন করা ওয়াজিব। কেউ যদি ১২ তারিখ পাথর নিক্ষেপ করে চলে আসতে চায়, তাহলে ১০ ও ১১ তারিখ দিবাগত রাত মিনায় যাপন করতে হবে। কারণ নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুধু রাখাল ও পানি পানের দায়িত্বশীলদের বলেছেন, তাদের মিনায় রাত্রি যাপন করা লাগবে না। এছাড়া অন্য কাউকে তিনি অনুমতি দেননি। হাদীছে এসেছে,
عَنِ ابْنِ عُمَرَ أَنَّ الْعَبَّاسَ بْنَ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ اسْتَأْذَنَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ يَبِيتَ بِمَكَّةَ لَيَالِىَ مِنًى مِنْ أَجْلِ سِقَايَتِهِ فَأَذِنَ لَهُ.
ইবনু উমার রযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নিশ্চয় ইবনু আব্বাস রযিয়াল্লাহু আনহু রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে হাজীদের পানি পান করানোর জন্য মিনার রাত্রিগুলো মক্কায় থাকার জন্য অনুমতি চেয়েছিলেন। ফলে রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে অনুমতি দিয়েছিলেন।[14] এই হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, মিনার রাত্রিগুলো মিনায় থাকতে হবে, নতুবা দম দিতে হবে।
বিদায় ত্বাওয়াফ করা : হজ্জের সর্বশেষ কাজ হলো, বিদায় ত্বাওয়াফ করা। ইবনু আব্বাস রযিয়াল্লাহু আনহু বলেন,أَنَا مِمَّنْ قَدَّمَ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَيْلَةَ الْمُزْدَلِفَةِ فِى ضَعَفَةِ أَهْلِهِ ‘আমি তাদের মধ্যে ছিলাম, যাদেরকে আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুর্বলতার কারণে মুযদালিফা হতে (মিনায় পাঠিয়ে দিয়েছিলেন)’।[15]
ইবনু আব্বাস রযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, كَانَ النَّاسُ يَنْصَرِفُونَ كُلَّ وَجْهٍ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لاَ يَنْفِرَنَّ أَحَدٌ حَتَّى يَكُونَ آخِرُ عَهْدِهِ بِالْبَيْتِ ‘হজ্জ শেষে মানুষ বিভিন্ন পথে ফিরে যেতে লাগল, তখন রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কা‘বায় সর্বশেষ ত্বাওয়াফ না করে কেউ যেন বিদায় না হয়’।[16] এই হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, বিদায় ত্বাওয়াফ হতে হবে, যা ওয়াজিব।
ইবনু উমার রযিয়াল্লাহু আনহু বলেন,نَهَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ يَنْفِرَ الرَّجُلُ حَتَّى يَكُونَ آخِرُ عَهْدِهِ بِالْبَيْتِ ‘রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষ বিদায় ত্বাওয়াফ না করে যেতে নিষেধ করেছেন’।[17] এই হাদীছ প্রমাণ করে, বিদায় ত্বাওয়াফ করতে হবে। অতএব, বিদায় ত্বাওয়াফ না করলে দম দিতে হবে। মক্কা হতে দেশে ফেরার পূর্বে বিদায় ত্বাওয়াফ এবং দুই রাকআত ছালাত আদায় করতে হবে। অবশ্য এ হুকুম ঋতুবতী মহিলাদের জন্য নয়। বিদায় হওয়ার সময় যদি কোনো মহিলা ঋতুবতী হয়, তাহলে তাকে বিদায় ত্বাওয়াফ করতে হবে না। ইবনু ইব্বাস রযিয়াল্লাহু আনহু বলেন,أُمِرَ النَّاسُ أَنْ يَكُونَ آخِرُ عَهْدِهِمْ بِالْبَيْتِ إِلاَّ أَنَّهُ خُفِّفَ عَنِ الْمَرْأَةِ الْحَائِضِ ‘মানুষকে আদেশ করা হয়েছিল এ মর্মে যে, তাদের শেষ বিদায় হবে বায়তুল্লাহ ত্বাওয়াফের মাধ্যমে। তবে ঋতুবতীদের প্রতি বিষয়টি হালকা করা হয়েছে।[18]
(চলবে)
[1]. মুওয়াত্ত্বা মালেক, ১/৪১৯।
[2]. ছহীহ বুখারী, হা/১৫২৬; মিশকাত, হা/১১৮১
[3]. ছহীহ মুসলিম, হা/১২১৮; মিশকাত, হা/২৫৫৫।
[4]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৬৯০।
[5]. ছহীহ মুসলিম, হা/১২১৮; মিশকাত, হা/২৫৫৫।
[6]. ছহীহ মুসলিম, হা/১২৯৯; নাসাঈ, হা/৩০৬৩; মিশকাত, হা/২৬২০।
[7]. ছহীহ বুখারী, হা/১৭৪৮; ছহীহ মুসলিম, হা/১২৯৬; আবূ দাউদ, হা/১৯৭৪; মিশকাত, হা/২৬২১।
[8]. ছহীহ বুখারী, হা/১৭৪৬; আবূ দাউদ, হা/১৯৭২; মিশকাত, হা/২৬৬০।
[9]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৩১৮; আবূদাউদ, হা/২৮০৭; মিশকাত, হা/১৪৫৮।
[10]. ইবনু মাজাহ, হা/৩০৪৮; সিলসিলা ছহীহ, হা/২৪৬৪।
[11]. ছহীহ বুখারী, হা/১৯৯৮।
[12]. ছহীহ মুসলিম, হা/১১৪১; মিশকাত, হা/২০৫০।
[13]. মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬৭৯৭; সিলসিলা ছহীহা, হা/২৪৭৬।
[14]. ছহীহ বুখারী, হা/১৬৩৪; ছহীহ মুসলিম, হা/১৩১৫; মিশকাত, হা/২৬৬২।
[15]. ছহীহ বুখারী, হা/১৬৭৮; নাসাঈ, হা/৩০৩২; মিশকাত, হা/২৬০৯।
[16]. ইবনু মাজাহ, হা/৩০৭০; ছহীহ ইবনু খুযায়মা, হা/৩০০০।
[17]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৩২৭; ইবনু মাজাহ, হা/৩০৭১; মিশকাত, হা/২৬৬৮।
[18]. ছহীহ বুখারী, হা/১৭৫৫; ছহীহ মুসলিম, হা/১৩২৮; ছহীহ ইবনু খুযায়মা, হা/২৯৯৯।