আমাদের স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অভিভাবকরা সচেতন হচ্ছেন। দরিদ্রতা, কম আয়, গ্রামে বসবাস করা সত্ত্বেও তারা তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাচ্ছেন— এ এক বিশাল সামাজিক পরিবর্তন।*এই পরিবর্তনের স্রোতে মাধ্যমিক স্তরের মোট ১,০৪,৭,১০০০ শিক্ষার্থীর বড় অংশকে যদি মানসম্মত শিক্ষার আওতায় নিয়ে আসা যায়, সেটা বাংলাদেশের জন্য অনেক বড় একটা ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে। ২০১৯ সালের সরকারি হিসাব মতে, মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার্থী স্কুলে ভর্তি হবার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে মেয়ে এবং ছেলের হার ৫৪:৪৬। মাধ্যমিক স্তরে ১,০৪,৭,১০০০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৫৬,৫৫,৩৮১ জন অর্থাৎ ৫৪% হলো মেয়ে শিক্ষার্থী। ১৯৯৯ সালে মেয়েদের হার ছিল ৪৩% এবং ২০০৯ সালে মেয়ে শিক্ষার্থীর হার ছিল ৫১.৬১%। সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধা এবং বেসরকারি প্রকল্প পরিচালনার ফলে অভিভাবকরা সচেতন হয়েছেন। যে মেয়েদের কয়েক বছর পূর্বেও অভিভাবকরা স্কুলে ভর্তি করতেন না, প্রয়োজন নয় এবং অর্থের অপচয় মনে করতেন, এখন মাধ্যমিক স্তরে সেই মেয়েদের সংখ্যা ছেলেদের চেয়ে বেশি।[1]
এখানে আমি ২০১৯ সালের তথ্য প্রদান করলাম। ২০২০ এবং ২০২১ সালে করোনাকালে কী পরিমাণ শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে, তা স্কুল পুরোপুরি চালু না হলে নিরূপণ করা সম্ভব নয়।
এই বিপুল পরিমাণ শিক্ষার্থীকে যে কোনো মূল্যে মানসম্মত শিক্ষার আওতায় নিয়ে আসতে হবে। মিলিনিয়াম ডিভলপমেন্ট গোল এর লক্ষ্যও তাই। যে চিরাচরিত নিয়মে আমরা শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করছি, তা থেকে বের হয়ে আসার সময় এখনই। একটি ছেলে বা মেয়ে শিক্ষা গ্রহণ করে সে যেন তার আচরণে পরিবর্তন ঘটাতে পারে, তার চরিত্র যেন সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য হয়, সে যেন অফিস বা পরিবার বা সামাজিক বা ব্যক্তি জীবনে যে কোনো সমস্যা সমাধানের যোগ্যতা অর্জন করতে পারে সেই রকম শিক্ষা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। এক্ষেত্রে পরিবার, স্কুল কর্তৃপক্ষ, শিক্ষক, কমিউনিটি, অভিভাবক প্রত্যেকের সরকারকে সহযোগিতা করা কর্তব্য। এই দায়িত্বে অবহেলা করলে এই বিশাল মানবসম্পদ নষ্ট হয়ে যাবে এবং দেশের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। করোনা মহামারিতে শিক্ষাক্ষেত্রে বিশেষ করে আমাদের মতো দেশের শিক্ষার্থীদের যে ক্ষতি হয়েছে, তা পুষিয়ে নিতে এখন থেকেই কাজ শুরু করা দরকার। শুধু কাজ শুরু করা নয়; মানসম্মত শিক্ষা বিস্তারে স্কুলের প্রধান শিক্ষকসহ প্রত্যেককে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে। নিজেদের মধ্যে কোনো সীমাবদ্ধতা থাকলে তা দূর করার চেষ্টা করতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘ভলান্টিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন ফর বাংলাদেশ’[2]-এর একজন কর্মকর্তা হিসেবে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে শিক্ষার বিস্তার নিয়ে ছাত্রজীবন থেকেই আমার কাজ কারার অভিজ্ঞতা আছে। শিক্ষার্থী, শিক্ষক, পরিচালনা পর্ষদ, অভিভাবক, কমিউনিটি এবং সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে আমি কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে প্রধান শিক্ষকের ভূমিকা একবারে কাছ থেকে দেখেছি। এই প্রবন্ধে শিক্ষা কী, মানসম্মত শিক্ষা কী, মানসম্মত শিক্ষার ক্ষেত্রে একজন প্রধান শিক্ষকের ভূমিকা কেমন হওয়া উচিত, সে সম্পর্কে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। শুধু যে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এটার প্রয়োজন তা নয়; মাদরাসার সুপার বা প্রাথমিক বিদ্যালয় এমনকি কলেজের অধ্যক্ষও এখান থেকে উপকৃত হতে পারেন। আর একটা কথা বলে রাখতে চাই, আমাদের শিক্ষকমণ্ডলী অনেক কিছু জানেন কিন্তু সেগুলোর যথাযথ অনুশীলন তাদের অধিকাংশ করেন না।
শিক্ষা কী?
Merriam Webster dictionary তে শিক্ষার সংজ্ঞা নিয়ে যে আলোচনা করা হয়েছে তার মূল ভাব হলো, শেখানোর প্রক্রিয়া বা কাজকে শিক্ষা বলে। বিদ্যার একটি শাখা যেটি প্রতিষ্ঠানে শিখন-শেখানো পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করে।
Wikipedia বলছে, শিক্ষা শিখন সুবিধা প্রদান করার প্রক্রিয়া অথবা জ্ঞান, দক্ষতা, মূল্যবোধ, বিশ্বাস এবং অভ্যাস অর্জনের একটি প্রক্রিয়া। শিক্ষার পদ্ধতি হলো— গল্প বলা, আলোচনা, শেখানো, প্রশিক্ষণ এবং গবেষণা। শিক্ষাপ্রক্রিয়া সাধারণত একজন নির্দেশক বা শিক্ষকের অধীনে সম্পন্ন হয় এবং শিক্ষার্থীদের নিকট হতেও শিক্ষক শেখেন। শিক্ষাদান ও বিতরণ আনুষ্ঠানিক এবং অনানুষ্ঠানিকভাবে সম্পন্ন হয়। যে কোনো অভিজ্ঞতা যার গঠনমূলক প্রভাব আছে চিন্তা, অনুভব অথবা কাজের উপর, তাকেও শিক্ষাসংক্রান্ত বিষয় বলা যায়। শিক্ষা দানের পদ্ধতিকে (Methods) শিক্ষাবিজ্ঞান (Pedagogy) বলা হয়।
Wikipedia থেকে আমরা শিক্ষা কী, কীভাবে এটি সম্পন্ন হয়, সে সম্পর্কে একটা পরিষ্কার ধারণা পেলাম। আমরা বলতে পারি, শিক্ষা প্রক্রিয়ায় কোনো ব্যক্তির অন্তর্নিহিত গুণাবলির পূর্ণ বিকাশের জন্য উৎসাহ দেওয়া হয় এবং সমাজের একজন উৎপাদনশীল সদস্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভের জন্য যে সকল দক্ষতা প্রয়োজন, সেগুলো অর্জনে সহায়তা করা হয়। সাধারণ অর্থে জ্ঞান বা দক্ষতা অর্জনই শিক্ষা। ব্যাপক অর্থে পদ্ধতিগতভাবে জ্ঞানলাভের প্রক্রিয়াকেই শিক্ষা বলে। তবে শিক্ষা হলো সম্ভাবনার পরিপূর্ণ বিকাশ সাধনের অব্যাহত অনুশীলন। বাংলা ‘শিক্ষা’ শব্দটি এসেছে ‘শাস’ ধাতু থেকে। যার অর্থ শাসন করা বা উপদেশ দান করা। অন্যদিকে শিক্ষার ইংরেজি প্রতিশব্দ Education এসেছে ল্যাটিন শব্দ Educare বা ‘এডুকাতুম’ থেকে। যার অর্থ বের করে আনা অর্থাৎ ভেতরের সম্ভাবনাকে বাইরে বের করে নিয়ে আসা বা বিকশিত করা। তবে শুধু শাসন বা উপদেশ দানের প্রক্রিয়াকে এখন আর শিক্ষা বলার সুযোগ নেই। শিক্ষা যে কোনোভাবেই মানুষ অর্জন করতে পারে। বিদ্যালয় এবং শিক্ষকের লেকচারের উপর কি শুধু শিক্ষা অর্জন নির্ভর করে? না। শিক্ষা হলো জ্ঞান অর্জন প্রক্রিয়া। সেটা হতে পারে শ্রেণিকক্ষে, রাস্তার কোনো একটা বিলবোর্ড থেকে। হতে পারে ইউটিউবে বা ইন্টারনেটে বা যে কোনো মাধ্যমে।
মানসম্মত শিক্ষা কী?
Tony Wagner তাঁর ২০১৮ সালে প্রকাশিত The Global Achievement Gap বইয়ে একুশ শতকে টিকে থাকার জন্য সাতটি দক্ষতা চিহ্নিত করেছেন আর এইগুলো মানসম্মত শিক্ষা দ্বারা লালিত হয়ে থাকে। সেগুলো— গঠনমূলক চিন্তা ও সমস্যা সমাধান, সহযোগিতা ও প্রভাব বিস্তারকারী নেতৃত্ব, তৎপরতা ও অভিযোজ্যতা, মৌখিক ও লিখিত যোগাযোগের কার্যকর দক্ষতা, তথ্যের জগতে প্রবেশ ও বিশ্লেষণ, কৌতূহল ও কল্পনাশক্তি।
২০১৬ সালে প্রকাশিত Robinson তাঁর বইয়ে আটটি ‘C’ চিহ্নিত করেছেন, যা গুণগত শিক্ষার সাথে সংশ্লিষ্ট। সেগুলো হলো— Curiosity, Creativity, Criticism, Communication, Collaboration, Compassion, Composure and Citizenship.
আমাদের স্কুলগুলোও পুরোপুরি না বুঝে বা সরকার কর্তৃক প্রদত্ত নির্দেশিকা বাস্তবায়নে এই যোগ্যতাগুলোই অর্জন করতে কাজ করে। শ্রেণিতে পাঠ্যবই পড়িয়ে ও পরীক্ষার মাধ্যমে মূল্যায়নের চেষ্টা করা হয় মানসম্মত শিক্ষার এই যোগ্যতাগুলো অর্জিত হয়েছে কি-না। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের মাধ্যমিক স্কুলের শত শত শিক্ষার্থীর জন্য যে মূল্যায়ন পদ্ধতি আছে, তাতে একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং টিকে থাকার জন্য যেসব দক্ষতা দরকার, তা অর্জিত হয়েছে কি-না মূল্যায়ন করা খুবই কঠিন। পাবলিক পরীক্ষা বা স্কুলের নিজস্ব পরীক্ষার মাধ্যমে কত নাম্বার পেয়েছে, ঠিকঠাক উত্তর দিয়েছে কি-না, গাইড বইয়ে যা আছে বা পাঠ্য বই অনুযায়ী উত্তর দিয়েছে কি-না তা পরখ করে দেখা হয়। সমস্যা চিহ্নিতকরণ, সমাধান, গঠনমূলক চিন্তা, কার্যকর মৌখিক ও লিখিত যোগাযোগের দক্ষতা, তথ্যজগতে প্রবেশ ও তথ্য বিশ্লেষণ ক্ষমতা, সহযোগিতার মাধ্যমে কাজ করার দক্ষতা কয়জন স্কুল শিক্ষার্থী অর্জন করে? গ্রামাঞ্চলের শত শত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের হাজার হাজার শিক্ষকও কি এই যোগ্যতাসমূহ অর্জন করার সুযোগ পান? তারা যে প্রশিক্ষণ পান তা কি যথেষ্ট এই সব যোগ্যতা অর্জন করার জন্য? এই যোগ্যতা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ট্রান্সফার করার জন্য তারা কি প্রস্তুত? এ সমস্ত প্রশ্নের উত্তর খোঁজ করার সময় আমাদের এসে গেছে।
শিক্ষক স্কুলে আসবেন। ঘণ্টা পড়ার সাথে সাথে ক্লাস শুরু করবেন। আর এক ঘণ্টা বাজলে ক্লাস শেষ করবেন। সামনের বেঞ্চে দুই চার জনের মৌখিক মূল্যায়ন করবেন। মাস ও বছর শেষে পরীক্ষা নিবেন আর কে কত নাম্বার পেলো তা দেখবেন, তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলবেন এই দিন শেষ। দ্রুতধাববান সভ্যতার সাথে টিকে থাকার জন্য বৈশ্বিক যোগাযোগ টিকিয়ে রাখতে তথ্যজগতে প্রবেশ এবং তা বিশ্লেষণ দক্ষতা অর্জনে কাজ শুরু করতে হবে এখনই; আজই। এই যোগ্যতা অর্জন করতে আমরা কেমন শিক্ষা চাই? মানসম্মত শিক্ষা বিস্তারে প্রধান শিক্ষক কী ভূমিকা রাখতে পারেন? তিনিই বা কেমন হবেন? আসুন! সে সম্পর্কে একটু আলোচনা করি।
প্রধান শিক্ষক কেমন হবেন তা ভলান্টিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন ফর বাংলাদেশ (ভাব বাংলাদেশ) এর ২০ বছরের অভিজ্ঞতা থেকে লেখা সদ্য প্রকাশিত বই Quality Education for Rural Bangladesh—এ তুলে ধরা হয়েছে।
একটি সর্বজন স্বীকৃত বিষয় হলো, স্কুলকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রধান শিক্ষকই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বলা হয়ে থাকে, যেমন প্রধানশিক্ষক তেমন স্কুল।
প্রধান শিক্ষকের মধ্যে নিম্নলিখিত গুণাবলির সংমিশ্রণ থাকা জরুরী।
অংশীদারদের ক্ষমতায়নের গুরুত্ব বুঝতে পারা : প্রধান শিক্ষক বুঝতে পারবেন স্কুল কমিউনিটির একটি প্রতিষ্ঠান। স্কুল কমিউনিটির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমের কেন্দ্রবিন্দু। কমিউনিটির বাচ্চাদের শিক্ষাসেবা প্রদান করে থাকে। প্রধান শিক্ষককে বাবা-মা ও কমিউনিটির সাথে সম্পর্ক স্থাপন এবং স্কুলের রূপকল্প পূরণে তাদের অংশীদারিত্ব অর্জন করতে হবে। তিনি অবশ্যই শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সাধারণভাবে এবং বিশেষত তাদের নিজ নিজ কাজের ক্ষেত্রে নেতৃত্বের ভূমিকার মধ্যে একটি সাধারণ পরিবেশ তৈরি করবেন।
লক্ষ্য ও পরিকল্পনা থাকতে হবে : প্রধান শিক্ষককে অবশ্যই নেতা (রাজনৈতিক নেতা নয়, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও স্কুলের স্টাফসহ কমিউনিটিকে বুঝতে সক্ষম হবেন) হতে হবে। স্কুলের জন্য অবশ্যই তার রূপকল্প থাকবে। লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে এবং লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য কর্মপরিকল্পনা হাতে নিতে হবে। রূপকল্প এগিয়ে নিতে তাঁর অনুসরণকারীদের দরকার, অধীনস্তদের নয়। তিনি কাজের প্রতি অনুরাগ এবং লক্ষ্য অর্জনে দৃঢ়তার সংমিশ্রণে আবেগের সাথে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কমিউনিটিকে অনুপ্রাণিত করবেন।
ঝুঁকি নেওয়ার মনোবল : নির্দেশনামূলক শিক্ষাবিজ্ঞান নিয়ত বিবর্তিত হয়। প্রযুক্তি শিক্ষার পরিবেশকে ধারাবাহিকভাবে পরিবর্তন করবে। শিক্ষার লক্ষ্যগুলো সম্পর্কে নতুন ধারণা এবং চিন্তাভাবনা বাজারের শক্তির পরিবর্তনের সাথে উদ্ভূত হবে। স্কুলকে নতুন কৌশল এবং পদ্ধতি নিয়ে পরীক্ষা করার জন্য প্রস্তুত হওয়া প্রয়োজন। প্রধান শিক্ষককে অবশ্যই নতুন পানির স্রোতে গা ভেজানোর, শিক্ষকদের ঝুঁকি নেওয়ার ও ঝুঁকি পরিচালনার ক্ষমতা দেওয়ার সাহস থাকতে হবে।
ইতিবাচক আচরণ ও উচ্চ প্রত্যাশা : স্কুলের প্রতি প্রধান শিক্ষকের ইতিবাচক মনোভাব থাকবে। এর শক্তি— শিক্ষার্থী, শিক্ষক, বাবা-মা এবং কমিউনিটির ক্ষমতা ও সম্ভাবনা সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখবেন। তিনি অবশ্যই ইতিবাচক বৈশিষ্ট্যগুলো ধারণ করবেন এবং তাঁকে অন্যদের মধ্যে ইতিবাচকতা তৈরি করতে হবে। উচ্চ প্রত্যাশা পূরণের জন্য একটি সহযোগী পরিবেশ তৈরি করা উচিত।
কোনো শিক্ষার্থী খারাপ শিক্ষার্থী নয় এবং কোনো শিক্ষকই খারাপ শিক্ষক নন (No student is a poor student and no teacher is a poor teacher) আমরা এই ধারণা প্রচার করি। আরও প্রচার করি সমাজের কোনো ব্যক্তি অশিক্ষিত নয় (No individual in society is uneducated)। নিরক্ষর ও অশিক্ষিত দুটো আলাদা বিষয়।
অবিচল থাকতে হবে : সাফল্যের জন্য নতুনত্ব প্রয়োজন। প্রয়োজন সমন্বয় এবং সময়। পরিবর্তনের প্রয়োজন হতে পারে। প্রধান শিক্ষক অবশ্যই একজন চমৎকার শিক্ষানবিস হবেন এবং সমস্ত উৎস থেকে অন্তর্ভুক্ত শিক্ষানবিস হতে হবে। নতুন পদক্ষেপ ও নতুন ধারণাগুলো কার্যকর হওয়ার সাথে সাথে বৃহত্তর ফলাফল অর্জনের জন্য ছোট ব্যর্থতাগুলোকে অভিজ্ঞতা অর্জনের উপায় হিসাবে গ্রহণ করা উচিত। প্রধান শিক্ষকের আরও কিছু বৈশিষ্ট্য থাকা প্রয়োজন। এই বৈশিষ্ট্যগুলো মানসম্মত শিক্ষা বিস্তারে অপরিহার্য।
(আগামী সংখ্যায় সমাপ্য)
মো. আরিফুর রহমান
প্রোগ্রাম ম্যানেজার, ভলান্টিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন ফর বাংলাদেশ এবং সাবেক ছাত্র, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
[1]. দ্য ডেইলি স্টার, ২০ এপ্রিল, ২০১৯।
[2]. ভলান্টিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন ফর বাংলাদেশ (ভাব বাংলাদেশ), আমেরিকা প্রবাসী বাংলাদেশিদের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। জাতিসংঘের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও ইউ.এন. ভলান্টিয়ার্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট ড. এ.টি রফিকুর রহমান ১৯৯৮ সালে আমেরিকার নিউইয়র্ক শহরে এটি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৯৯ সাল থেকে ফান্ড সংগ্রহ শুরু করে এবং ২০০০ সাল থেকে ১০টি স্কুলের ১০০ শিক্ষার্থীকে শিক্ষা বৃত্তির আওতায় নিয়ে এসে ১০,০০০ ডলার সহায়তার মাধ্যমে বাংলাদেশে এর যাত্রা শুরু। ২০০৬ সালে একটা বিদেশি বেসরকারি সংস্থা হিসেবে ভাব এন.জি.ও. ব্যুরোর নিকট থেকে নিবন্ধন গ্রহণ করে। বাংলাদেশে শুধু মাধ্যমিক শিক্ষার মান উন্নয়নে নিবেদিত একটি অনন্য স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ভাব। এ সংস্থাটির প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো স্বেচ্ছাসেবী উপদেষ্টা পরিষদ। অত্যন্ত দক্ষ স্বল্প সংখ্যক জনবল এবং একদল নিবেদিত ভলান্টিয়ার দক্ষতা ও জবাবদিহিতার সাথে নূন্যতম বাস্তবায়ন ব্যয়ে এর কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করছে।
‘উন্নত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থী এবং স্কুলের ক্ষমতায়ন’ এই লক্ষ্যে Quality, Sustainability এবং Employability অর্জনের জন্য ভাব শিক্ষাক্ষেত্রে তার ক্ষমতায়ন মডেলের উৎকর্ষের জন্য কাজ করে। এই মডেলের অংশগুলো যেমন— শিক্ষার্থীর ক্ষমতায়ন, শিক্ষকের ক্ষমতায়ন, বিদ্যালয়ের ক্ষমতায়ন ও কমিউনিটির ক্ষমতায়নের মাধ্যমে মাধ্যমিক শিক্ষার মান উন্নয়নে ভাব বাংলাদেশ কর্মসূচি চলমান রেখেছে। শিক্ষার্থীদের বিতর্ক প্রশিক্ষণ, ইংরেজি ভাষা দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণ কর্মশালা, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, ফুটবল, ক্রিকেট প্রশিক্ষণের ফলে ইংরেজি, কম্পিউটার, বিতর্কে এবং বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় শিক্ষার্থীরা সফলতা অর্জন করছে। যা গ্রামীণ মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর জন্য বিশাল অর্জন। ২০১৯ সালে ভাব এর প্রকল্পভুক্ত ১০টি স্কুল কম্পিউটারে শতভাগ সাক্ষরতা অর্জন করেছে। প্রকল্পভুক্ত গ্রামের স্কুলগুলোর শিক্ষার্থীরা বিটিভিতে বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে। ভাব এখন ‘মানসম্মত শিক্ষার টেকসই ক্ষমতায়ন মডেল’-এর আলোকে বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের ৮০টির বেশি স্কুলে কাজ করছে। এটি সংস্থাটির নিজস্ব শিক্ষা মডেল, যা বাংলাদেশের শিক্ষানীতির সাথে সংগতিপূর্ণ।