আল-ইবানাহ গ্রন্থ বিষয়ক বিভিন্ন সংশয়ের পর্যালোচনা
আমরা আগেই উল্লেখ করেছি যে, আল-ইবানাহ গ্রন্থটি ইমাম আবুল হাসান আশআরীর শেষ গ্রন্থ। এ গ্রন্থে তিনি সামগ্রিকভাবে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহর আক্বীদা তুলে ধরেছেন এবং বিরোধীদের খণ্ডন করেছেন। এ গ্রন্থে তিনি যে আক্বীদা তুলে ধরেছেন, তা অনেক ক্ষেত্রে পরবর্তী যুগের আশআরীদের আক্বীদা পরিপন্থী। পরবর্তী যুগের আশআরীরা আল্লাহর গুণাবলি তা‘বীল করে। তাই তার এ গ্রন্থটি পরবর্তী যুগের আশআরীদের বিপক্ষে দলীল।
পরবর্তী যুগের আশআরীদের আক্বীদা ও মানহাজ পরিপন্থী হওয়ার কারণে পরবর্তী যুগের আশআরীদের এ গ্রন্থের ব্যাপারে অবস্থানও ভিন্ন ভিন্ন। এ গ্রন্থের ব্যাপারে আমরা তাদের অবস্থানকে পাঁচ ভাগে বিভক্ত করতে পারি:
প্রথম অবস্থান: এটি আবুল হাসান আশআরীর নামে বানোয়াট গ্রন্থ
আধুনিক যুগের কারো কারো দাবি হলো, ইমাম আবুল হাসান আশআরী এ গ্রন্থ রচনা করেননি; বরং এটি তার নামে বানোয়াট প্রচলিত একটি গ্রন্থ। ড. খালিদ যুহরী তার ‘কিতাবুল ইবানাহ আন উছূলিদ দিয়ানাহ: তাহক্বীকুন ফী নিসবাতিহি ইলা আবিল হাসান আশআরী’ নামক গবেষণাপত্রে এমনটি দাবি করেছেন। একইভাবে আব্দুর রহমান বাদাবীও এমন সংশয়ের কথা উল্লেখ করেছেন।
তারা তাদের এ দাবির পক্ষে মৌলিকভাবে নিম্নের বিষয়গুলো দলীল হিসেবে উপস্থাপন করেছেন:
১. যারা ইমাম আবুল হাসান আশআরীর গ্রন্থের তালিকা দিয়েছেন, তাদের অনেকেই এ গ্রন্থের কথা উল্লেখ করেননি, যেমন ইবনু ফুওরাক। সর্বপ্রথম ইবনু আসাকির গ্রন্থটি আবুল হাসান আশআরীর দিকে সম্পৃক্ত করেন।
২. এ গ্রন্থে এমন আক্বীদা রয়েছে, যা আধুনিক যুগের আশআরী মতবাদ পরিপন্থী।
৩. এ গ্রন্থে বিরোধীদের সাথে কঠোরতা করা হয়েছে এবং বিদআতী ঘোষণা করা হয়েছে।
৪. ইমাম আশআরী হাম্বালী আক্বীদার বিরুদ্ধে ‘ইসতিহসানুল খাওয ফী ইলমিল কালাম’ নামক একটি গ্রন্থ লিখেন। তিনি এ গ্রন্থে ইলমুল কালাম অধ্যয়নের পক্ষে জোরালো অবস্থান নেন। কেননা হাম্বলীরা ইলমুল কালাম অধ্যয়ন হারাম করে দিয়েছিল। তাহলে কীভাবে তিনি তার পূর্বের অবস্থান বর্জন করে হাম্বলী আক্বীদার দিকে প্রত্যাবর্তন করতে পারেন?!
আপত্তিসমূহের পর্যালোচনা:
প্রথম আপত্তি: যারা ইমাম আবুল হাসান আশআরীর গ্রন্থের তালিকা দিয়েছেন, তাদের অনেকেই এ গ্রন্থের কথা উল্লেখ করেননি, যেমন ইবনু ফুওরাক। সর্বপ্রথম ইবনু আসাকির গ্রন্থটি আবুল হাসান আশআরীর দিকে সম্পৃক্ত করেন।
(ক) এ গবেষকের পূর্বে আজ পর্যন্ত কেউ এমন দাবি করেননি এবং এ ব্যাপারে কোনো দুর্বলতম মত কেউ দেননি। অথচ এর বিপরীতে যুগ যুগ ধরে এ গ্রন্থটি আবুল হাসান আশআরীর বলে স্বীকৃতি পেয়ে আসছে। আমরা ইতঃপূর্বে অনেক আলেমের তালিকা দেখেছি, যারা এ গ্রন্থটিকে ইমাম আবুল হাসান আশআরীর বলে মত দিয়েছেন। ড. খালিদ যুহরী তার মতের পক্ষে এমন একজনকে দেখাতে পারেননি, যিনি এ গ্রন্থটি বানোয়াট বলে দাবি করেছেন।
(খ) যারা আবুল হাসানের জীবনী লিখেছেন, তাদের কারো কারো, বিশেষ করে ইবনু ফুওরাক এ গ্রন্থটি ইমাম আবুল হাসানের দিকে সম্পৃক্ত না করা প্রমাণ করে না যে, গ্রন্থটি তার নয়। কেননা এটি স্বীকৃত বিষয় যে, অনেক সময় জীবনীকারগণ সকল গ্রন্থের তালিকা প্রদান করেন না। তাছাড়া ইবনু ফুওরাক গ্রন্থটির কথা নাকচও করেননি।
তাছাড়া ড. খালিদ যুহরীর ‘সর্বপ্রথম ইবনু আসাকির গ্রন্থটি আবুল হাসান আশআরীর দিকে সম্পৃক্ত করেন’ দাবি ভুল। কেননা ইবনু আসাকিরের পূর্বে ইমাম বায়হাক্বী গ্রন্থটি ইমাম আবুল হাসান আশআরীর দিকে সম্পৃক্ত করেন।[1] তাছাড়া ইবনু আসাকির ইমাম আশআরীর ব্যাপারে সর্বাধিক পাণ্ডিত্য রাখতেন। কাজেই তিনি যদি একাই গ্রন্থটিকে তার দিকে সম্পৃক্ত করতেন, তাহলে এটাই প্রমাণের জন্য যথেষ্ট হতো।
দ্বিতীয় আপত্তি: এ গ্রন্থে এমন আক্বীদা রয়েছে, যা আধুনিক যুগের আশআরী মতবাদ পরিপন্থী।
গ্রন্থটি নাকচ করার ক্ষেত্রে এটি কোনো ‘কারণ’ হতে পারে না। বরং এক্ষেত্রে কর্মপন্থা হওয়া উচিত ছিল, নিজেদের আক্বীদার সাথে নিজেদের ইমামের আক্বীদা মিলিয়ে দেখা ও পর্যালোচনা করা। এরপর নিজেদের ইমামের আক্বীদায় নিজেরা বিশ্বাসী হওয়া। কিন্তু এমনটি না করে এই অজুহাতে কিতাবটি নাকচ করা খুবই দুঃখজনক ব্যাপার। অথচ আমরা পূর্বে দেখেছি যে, প্রাধান্যযোগ্য মতানুযায়ী ইমাম আশআরী তৃতীয় স্তরে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহর আক্বীদা গ্রহণ করেন। তাছাড়া ইমাম আশআরী এ গ্রন্থে যে আক্বীদার কথা উল্লেখ করেছেন, কাছাকাছি আক্বীদা লালন করতেন আশআরীদের অন্যতম ইমাম বাকিল্লানী ও ইবনু ফুওরাক ও পূর্ববর্তী অনেক আশআরী। কাজেই প্রমাণিত হয়, পরবর্তী যুগের আশআরীরা তাদের ইমাম আবুল হাসান আশআরীর আক্বীদা থেকে বিচ্যুত হয়। কাজেই এ গ্রন্থটি নাকচ করার ক্ষেত্রে এটি কোনো প্রমাণ হতে পারে না।
তৃতীয় আপত্তি: এ গ্রন্থে বিরোধীদের সাথে কঠোরতা করা হয়েছে এবং বিদআতী ঘোষণা করা হয়েছে।
(ক) গ্রন্থটি নাকচ করার ক্ষেত্রে এটিও কোনো ‘কারণ’ হতে পারে না। কারণ, কিতাবের বিষয়বস্তু ও পদ্ধতি অনুযায়ী লিখন পদ্ধতি ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। কাজেই ইমাম আশআরীর ক্ষেত্রে এমনটি হওয়া খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার।
(খ) ড. খালিদ যুহরী যাকে কঠোরতা গণ্য করেছেন, ইমাম আবুল হাসান আশআরী শুধু এ গ্রন্থেই এমন কঠোরতা করেছেন, তা নয়। বরং ‘আল-ইবানাহ’ গ্রন্থ ছাড়াও অন্যান্য গ্রন্থে এমন কঠোরতা ও শব্দ প্রয়োগ পাওয়া যায়। যেমন তিনি আহলুস সুন্নাহ ওয়াল হাদীছের নীতি উল্লেখ করতে গিয়ে বলেছেন, ‘তারা বিদআতের দিকে আহ্বানকারী প্রত্যেক বিদআতীকে বর্জন করেন’।[2] আর তিনি ঘোষণা করেছেন, আহলুস সুন্নাহ ওয়াল হাদীছের নীতি আমার নীতি।
(গ) তাছাড়া তিনি পর্যায়ক্রমে বিদআতী আক্বীদা বর্জন করে আসছিলেন। তিনি ৪০ বছর পর্যন্ত মু‘তাযিলা আক্বীদায় বিশ্বাসী ছিলেন। এরপর যখন তাদের আক্বীদার ভ্রষ্টতা তার কাছে প্রকাশ পায়, তখন তিনি তা বর্জন করেন এবং তাদের ব্যাপারে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেন। যার প্রমাণ হলো, তার অধিকাংশ গ্রন্থ তাদের খণ্ডনে। এ হিসেবে পর্যায়ক্রমে তার গ্রন্থে বিদআতীদের প্রতি কঠোরতা আসা কোনো বিস্ময়কর ব্যাপার হতে পারে না। তাছাড়া ‘আল-লুমা ফির রদ্দি আলা আহলিয যাইগ ওয়াল বিদা’ নামক একটি গ্রন্থ লিখেন, যে গ্রন্থের নামেই কঠোরতা প্রকাশ পেয়েছে।
চতুর্থ আপত্তি: ইমাম আশআরী হাম্বলী আক্বীদার বিরুদ্ধে ‘ইসতিহসানুল খাওয ফী ইলমিল কালাম’ নামক একটি গ্রন্থ লিখেন।
(ক) এটিও একটি দুর্বল আপত্তি। কেননা আবুল হাসান আশআরী এ গ্রন্থের কোথাও উল্লেখ করেননি, এটি হাম্বলীদের বিরুদ্ধে লিখিত গ্রন্থ।
(খ) ইলমুল কালামের ব্যাপারে শুধু হাম্বলীদের এমন অবস্থান নয়; বরং অন্যান্য ইমাম, মুহাদ্দিছ ও মাযহাবের একই অবস্থান। কাজেই এখানে শুধু হাম্বলীদেরকে খাছ করার কোনো যৌক্তিকতা নেই।
(গ) ইলমুল কালাম বিষয়ে উপরিউক্ত গ্রন্থটি আগের। এরপর আবুল হাসান আশআরীর আক্বীদায় পরিবর্তন আসে এবং পূর্বের আক্বীদা থেকে ফিরে আসেন। কাজেই যদি ধরেও নেওয়া হয় যে, তিনি তা হাম্বলীদের বিরুদ্ধে লিখেন, তারপর তিনি তার পূর্বের অবস্থান থেকে ফিরে এসে ‘আল-ইবানাহ’ গ্রন্থ লিখেন।
(ঘ) আমরা যদি মেনে নিই যে, ইমাম আবুল হাসান আশআরী ইলমুল কালামের ব্যাপারে নিজের অবস্থান পরিবর্তন করেননি, তারপরও ‘আল-ইবানাহ’ গ্রন্থের সাথে তার এই অবস্থানের কোনো বৈপরীত্য নেই। কারণ, ‘আল-ইবানাহ’ গ্রন্থে তিনি ইলমুল কালাম প্রয়োগ করেননি এবং ইলমুল কালামের পক্ষে-বিপক্ষে কোনো কিছু বলেননি। কাজেই উক্ত বইয়ের দোহাই দিয়ে ‘আল-ইবানাহ’ গ্রন্থ নাকচ করার কোনো যৌক্তিক ‘কারণ’ নেই।
দ্বিতীয় অবস্থান: আল-ইবানাহ গ্রন্থটি প্রমাণিত কিন্তু তিনি এ গ্রন্থ থেকে ফিরে আসেন
বর্তমান যুগের আশআরী মতবাদের কিছু গবেষকের দাবি হলো, ‘আল-ইবানাহ’ গ্রন্থটি ইমাম আবুল হাসান আশআরী থেকে প্রমাণিত। কিন্তু তিনি ‘আল-ইবানাহ’ গ্রন্থ থেকে ফিরে আসেন এবং ‘আল-লুমা’ গ্রন্থটি লিখেন। কাজেই তার আক্বীদা হিসেবে ‘আল-লুমা’ গ্রন্থটি গণ্য হবে। এমনটি যারা দাবি করেছেন তাদের অন্যতম আহমাদ মুহাইমিদ তার ‘মারকাযু আবিল হাসান আশআরী’ গবেষণাপত্রে। তিনি যেসব আপত্তির ভিত্তিতে এমনটি দাবি করেছেন, তা হলো:
১. এ গ্রন্থে আবুল হাসান আশআরী নিজেকে হাম্বলীদের দিকে সম্পৃক্ত করেছেন।
২. এ গ্রন্থে কঠোরতা ও বাড়াবাড়ি রয়েছে।
৩. এ গ্রন্থে এমন সব আক্বীদা রয়েছে, যা বর্তমান আশআরীদের আক্বীদা পরিপন্থী।
আপত্তিসমূহের জবাব:
প্রথম আপত্তি: এ গ্রন্থে আবুল হাসান আশআরী নিজেকে হাম্বলীদের দিকে সম্পৃক্ত করেছেন।
আমরা ইতঃপূর্বে অবগত হয়েছি যে, ইমাম আবুল হাসান আশআরী তৃতীয় স্তরে এসে সালাফ ও আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহর আক্বীদা গ্রহণ করেন। আর ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বালকে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহর আক্বীদার ‘ইমাম’ বলা হয়। তাই নিজেকে ইমাম আহমাদের দিকে সম্পৃক্ত করা অযৌক্তিক বিষয় নয়।
দ্বিতীয় আপত্তি: এ গ্রন্থে কঠোরতা ও বাড়াবাড়ি রয়েছে।
আমরা এ বিষয়ে আলোচনা করেছি।
তৃতীয় আপত্তি: এ গ্রন্থে এমন সব আক্বীদা রয়েছে, যা বর্তমান আশআরীদের আক্বীদা পরিপন্থী।
আমরা এ বিষয়ে আলোচনা করেছি।
আমরা ‘আল-ইবানাহ ইমাম আশআরীর শেষ গ্রন্থ’ নামক শিরোনামে বিস্তারিত আলোচনা করেছি যে, ‘আল-ইবানাহ’ গ্রন্থটি তার শেষ গ্রন্থ এবং এ ব্যাপারে আলেমদের তালিকাও প্রদান করেছি।
তাছাড়া ‘আল-লুমা’ গ্রন্থের মাধ্যমে আল-ইবানাহ গ্রন্থ থেকে প্রত্যাবর্তন প্রমাণিত হয় না। কেননা উভয় গ্রন্থের বিষয়বস্তু ভিন্ন ভিন্ন। ‘আল-লুমা’ গ্রন্থে যে আলোচনা আছে, তা ‘আল-ইবানাহ’ গ্রন্থে নেই। কোনো কিতাব থেকে কারো প্রত্যাবর্তনের কথা তখন বলা সম্ভব, যখন তিনি নিজেই তা স্পষ্টভাবে ঘোষণা দিবেন অথবা কোনো জোরালো প্রমাণ পাওয়া যাবে। কিন্তু ‘আল-লুমা’ গ্রন্থে তেমন কোনো কথা নেই এবং কোনো জোরালো প্রমাণ নেই।
তৃতীয় অবস্থান: তিনি ‘আল-ইবানাহ’ গ্রন্থটি হাম্বলীদের সন্তুষ্ট করতে লিখেন
কতক আশআরীর মতে আবুল হাসান ‘আল-ইবানাহ’ গ্রন্থে যা লিখেছেন, তা মূলত তার আক্বীদা নয়। বরং তিনি হাম্বলীদের সন্তুষ্টি লাভের নিয়্যতে গ্রন্থটি সংকলন করেন। তিনি দুটি কারণে তাদের সন্তুষ্টি লাভের নিয়্যত করেন— (ক) তাদের থেকে নিজেকে রক্ষা করা। (খ) হাম্বলীরা সরাসরি তার কথা গ্রহণ না করার কারণে এ গ্রন্থের মাধ্যমে তাদের মাঝে পর্যায়ক্রমে নিজের অবস্থান শক্তিশালী করা। এমনটি যারা দাবি করেছেন, তাদের অন্যতম আবূ আলী আল-আহওয়াযী। তিনি এ দাবির পেছনে এ ঘটনাটি উল্লেখ করেন; হাম্বলী শায়খ ইমাম বারবাহারীর সাথে ইমাম আশআরীর কাহিনী। কাহিনীটি হলো— ইমাম আশআরী বাগদাদে আগমন করলে তিনি আবূ মুহাম্মাদ বারবাহারীর কাছে যান। তিনি তার কাছে গিয়ে বলেন, ‘আমি জুব্বায়ীর খণ্ডন করেছি। আমি অগ্নিপূজকদের খণ্ডন করেছি। আমি খ্রিষ্টানদের খণ্ডন করেছি’। তখন আবূ মুহাম্মাদ বারবাহারী বলেন, ‘আমি বুঝছি না আপনি কী বলছেন? আমাদের কাছে এগুলো তো কোনো কাজ নয়। আমরা কেবল তাই জানি, যা ইমাম আহমাদ বলেছেন’। এরপর ইমাম আশআরী বের হয়ে ‘আল-ইবানাহ’ গ্রন্থটি লিখেন। কিন্তু তিনি কবুল করেননি।[3]
এমনটি দাবি করেন যাহেদ কাওছারী ও সাঈদ ফুদাহ।[4]
আপত্তির পর্যালোচনা:
(ক) এমন কথা বলা মানে ইমাম আশআরীর ব্যাপারে খারাপ ধারণা প্রচার করা। কেননা এমন কাজ নিফাক্বী। আর আবুল হাসান আশআরী এমন নিফাক্বী থেকে পবিত্র। শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তায়মিয়া বলেন, ‘আবুল হাসান আশআরী দুটি দলের পরীক্ষায় পড়েন— একদল তাকে ভালোবাসত আর অন্যদল তাকে ঘৃণা করত। প্রত্যেক দল তার নামে মিথ্যাচার করে এবং বলে, তিনি এসব গ্রন্থ তাকিয়্যাহ[5]বশত লিখেছেন এবং হাম্বলীপ্রমুখ আহলুল হাদীছ ওয়াস সুন্নাহর সমর্থন আদায়ের জন্য লিখেছেন। এটি মূলত তার নামে মিথ্যাচার। তার এমন কোনো অভ্যন্তরীণ কথা পাওয়া যায় না, যা তার সেসব কথা পরিপন্থী, যা তিনি প্রকাশ করেছেন এবং তার বিশেষ সাথী ও অন্যদের থেকে এমন কথা কেউ বর্ণনা করেনি, যা তার গ্রন্থসমূহের বিদ্যমান নীতিসমূহের বিপরীত। কাজেই তার ব্যাপারে এ দাবি করা যে, ‘তিনি যা প্রকাশ করতেন তার বিপরীত গোপন রাখতেন’, শরীআতগত ও বিবেকগতভাবে একটি বাতিল দাবি।[6]
(খ) ইমাম আশআরী প্রাথমিক ৪০ বছর মু‘তাযিলা আক্বীদায় বিশ্বাসী ছিলেন। আর সে সময় মু‘তাযিলাদের শক্তি ও দাপট ছিল না; বরং মু‘তাযিলাদের ওপর আহলুস সুন্নাহর দাপট ছিল। এরপরও তার ব্যাপারে পাওয়া যায় না যে, তিনি আহলুস সুন্নাহর সমর্থন আদায়ের জন্য এবং তাদের থেকে রক্ষা পাওয়ার নিয়্যতে তিনি মু‘তাযিলাদের বিরুদ্ধে কিছু লিখেছেন। কাজেই তার ব্যাপারে এমন দাবি করা ভিত্তিহীন এবং তাকে কপট ও কাপুরুষ আখ্যা দেওয়া বৈ কি?
(চলবেইনশা-আল্লাহ)
* শিক্ষক, আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ, বীরহাটাব-হাটাব, রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ।
[1]. আল-ই‘তিক্বাদ, পৃ. ১০৮।
[2]. মাকালাতুল ইসলামিঈন, পৃ. ২৯৭।
[3]. সিয়ারু আলামিন নুবালা, ১৫/৯০; তবাকাতুল হানাবিলাহ, ২/১৮; আল-ওয়াফী, ১২/২৪৬; তাবয়ীনু কাযিবিল মুফতারী, পৃ. ৩৯০-৩৯১।
[4]. বুহুসুন ফী ইলমিল কালাম, পৃ. ৫৩।
[5]. তাকিয়্যাহ অর্থ অন্তরে কোনো কিছু গোপন রেখে, বাইরে তার বিপরীত বিষয় প্রকাশ করা। -অনুবাদক
[6]. মাজমূউল ফাতাওয়া, ১২/২০৪-২০৫।