কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

কিতাবুল ইলম: জ্ঞান অর্জনের স্বরূপ (মিন্নাতুল বারী-৩য় পর্ব)

post title will place here

[যে হাদীছের ব্যাখ্যা চলছে:

حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ سِنَانٍ، قَالَ: حَدَّثَنَا فُلَيْحٌ، ح وحَدَّثَنِي إِبْرَاهِيمُ بْنُ المُنْذِرِ، قَالَ: حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ فُلَيْحٍ، قَالَ: حَدَّثَنِي أَبِي قَالَ: حَدَّثَنِي هِلاَلُ بْنُ عَلِيٍّ، عَنْ عَطَاءِ بْنِ يَسَارٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: بَيْنَمَا النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي مَجْلِسٍ يُحَدِّثُ القَوْمَ، جَاءَهُ أَعْرَابِيٌّ فَقَالَ: مَتَى السَّاعَةُ؟ فَمَضَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُحَدِّثُ، فَقَالَ بَعْضُ القَوْمِ: سَمِعَ مَا قَالَ فَكَرِهَ مَا قَالَ. وَقَالَ بَعْضُهُمْ: بَلْ لَمْ يَسْمَعْ، حَتَّى إِذَا قَضَى حَدِيثَهُ قَالَ: أَيْنَ - أُرَاهُ - السَّائِلُ عَنِ السَّاعَةِ» قَالَ: هَا أَنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ، قَالَ: فَإِذَا ضُيِّعَتِ الأَمَانَةُ فَانْتَظِرِ السَّاعَةَ»، قَالَ: كَيْفَ إِضَاعَتُهَا؟ قَالَ: إِذَا وُسِّدَ الأَمْرُ إِلَى غَيْرِ أَهْلِهِ فَانْتَظِرِ السَّاعَةَ»[

শব্দ বিশ্লেষণ:

أُرَاهُ - হামযাতে পেশ দিয়ে পড়া বেশি বিশুদ্ধ। যার অর্থ হলো, আমার ধারণা বা আমি মনে করি। তথা হাদীছের বর্ণনাকারী মুহাম্মাদ ইবনে ফুলাইহ এখানে সন্দেহ পোষণ করেছেন এই মর্মে যে, আল্লাহর নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রশ্নকারী কোথায় বলেছেন, না অন্য কিছু বলেছেন। তথা তিনি এমনটাও বলতে পারতেন যে, প্রশ্নকারী কে? সারমর্ম হচ্ছে আল্লাহর নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘কোথায়’ বলেছেন না ‘কে’ বলেছেন এই বিষয়টি সন্দেহ হওয়ায় তিনি বলেন, আমি মনে করি বা আমি ধারণা করি যে, আল্লাহর নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রশ্নকারী কোথায়?

وُسِّدَ - ক্রিয়াটি وسادة থেকে এসেছে, যার অর্থ বালিশ। অতীত যুগে রাজা-বাদশাহ যখন তার সিংহাসনে আরোহণ করতেন, তখন সেখানে হেলান দেওয়ার জন্য বালিশ থাকত। সেখান থেকেই নেতৃত্বের জন্য এই ক্রিয়াটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

ফিক্বহী ব্যাখ্যা:

কিতাবুল ইলমের সাথে হাদীছের সম্পর্ক: উপর্যুক্ত হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, অজ্ঞ ও অযোগ্যদের তার অনুপযুক্ত পদে মূল্যায়ন করা ক্বিয়ামতের আলামত তথা জ্ঞান উঠে যাওয়া ও মূর্খ লোকদের সকল ক্ষেত্রে পদচারণা একটি ঘৃণিত বিষয়। যা প্রমাণ করে যে, জ্ঞানী ও যোগ্য ব্যক্তিগণ ন্যায় ও আমানতের সাথে দায়িত্ব পালন করেন। সুতরাং উপর্যুক্ত হাদীছ দ্বারাও জ্ঞানের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা ফুটে উঠেছে।

প্রশ্নের সাথে উত্তরের সামঞ্জস্যতা:

লোকটি আল্লাহর নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে প্রশ্ন করেছেন, ক্বিয়ামত কখন হবে? আল্লাহর নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তরে ক্বিয়ামতের কোনো নির্ধারিত সময় না বলে ক্বিয়ামতের আলামত বললেন। এই ধরনের উত্তরকে আরবী বালাগাতশাস্ত্রের ভাষায় বলা হয়—جواب علَى أسلوب الحكيم বা প্রজ্ঞাবান ব্যক্তির পদ্ধতিতে উত্তর দেওয়া। যেহেতু ক্বিয়ামতের নির্ধারিত সময় কারও পক্ষে জানা সম্ভব নয়, সেহেতু সেই বিষয়ে উত্তর দেওয়ারও কিছু নেই। তবে ক্বিয়ামতের আলামত বলার মাধ্যমে মানুষকে সতর্ক করা যায়। তাই আল্লাহর নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ক্বিয়ামতের আলামত উল্লেখ করেছেন। এই ধরনের উত্তর আল্লাহ তাআলাও দিয়েছেন। যেমন মহান আল্লাহ বলেন,يَسْأَلُونَكَ مَاذَا يُنْفِقُونَ قُلْ مَا أَنْفَقْتُمْ مِنْ خَيْرٍ فَلِلْوَالِدَيْنِ وَالْأَقْرَبِينَ وَالْيَتَامَى وَالْمَسَاكِينِ وَابْنِ السَّبِيلِ وَمَا تَفْعَلُوا مِنْ خَيْرٍ فَإِنَّ اللَّهَ بِهِ عَلِيمٌ ‘তারা আপনাকে জিজ্ঞেস করে যে, তারা কী খরচ করবে? আপনি বলে দিন! তোমরা কল্যাণকর যা খরচ করো— তা তোমাদের পিতা-মাতার জন্য, নিকটাত্মীয়, ইয়াতীম, মিসকীন ও মুসাফিরদের জন্য। আর তোমরা কল্যাণকর যা কিছুই করো না কেন, নিশ্চয় মহান আল্লাহ এই বিষয়ে সম্যক অবগত’ (আল-বাক্বারা, ২/২১৫)

উক্ত আয়াতে প্রশ্ন করা হয়েছে, খরচের পরিমাণ বা খরচের ধরন সম্পর্কে আর মহান আল্লাহ উত্তর দিচ্ছেন, কোথায় খরচ করবে সে বিষয়ে। তথা প্রশ্নের সাথে উত্তরের বাহ্যত মিল নেই। মূলত মহান আল্লাহর উদ্দেশ্য হচ্ছে, মানুষ কী খরচ করবে এটা জানার বিষয় নয়। মানুষ তার সাধ্য অনুযায়ী খরচ করবে। তবে মানুষের জানা উচিত সে কোথায় খরচ করবে এবং কার জন্য খরচ করবে। এই জন্য আল্লাহ তাআলা সেই প্রয়োজনীয় বিষয়ে মানুষকে অবগত করিয়েছেন। মহান আল্লাহ আরও বলেন, يَسْأَلُونَكَ عَنِ الْأَهِلَّةِ قُلْ هِيَ مَوَاقِيتُ لِلنَّاسِ وَالْحَجِّ ‘তারা আপনাকে নতুন চাঁদসমূহ সম্পর্কে প্রশ্ন করে, আপনি বলে দিন, চাঁদ মানুষের এবং হজ্জের জন্য সময় নির্ধারক’ (আল-বাক্বারা, ২/১৮৯)

উক্ত আয়াতে জিজ্ঞাসা ছিল, চাঁদ কেন ছোট-বড় হয়? মহান আল্লাহ চাঁদের ছোট-বড় হওয়ার প্রকৃত কারণ উল্লেখ না করে চাঁদের ছোট-বড় হওয়া আমাদের কী উপকারে আসে সেই উত্তর দিয়েছেন। তথা প্রশ্নের সাথে বাহ্যত উত্তরের মিল নাই। মহান আল্লাহর উদ্দেশ্য হচ্ছে, চাঁদ কীভাবে বড় ও ছোট হয় তা জানার চেয়ে চাঁদকে মহান আল্লাহ কোন উদ্দেশ্যে ছোট-বড় করেন তা জানা বেশি উপকারী। তাই তিনি প্রয়োজনীয় বিষয়টি উত্তর হিসেবে তুলে ধরেছেন। চাঁদের ছোট-বড় হওয়ার মাধ্যমে মানুষ মাসের সময় নির্ধারণ করতে পারে। যেমন- চাঁদের সাহায্যে হজ্জের সময় নির্ধারিত হয়ে থাকে।

অযোগ্য দায়িত্বশীল ও আমানতের খেয়ানত: উক্ত হাদীছে রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমানত নষ্ট হওয়াকে অযোগ্য লোকের হাতে দায়িত্ব দেওয়ার সাথে তুলনা করেছেন। যখনই অযোগ্য লোকেরা দায়িত্ব পাবে, তখনই আমানত নষ্ট হয়ে যাবে তথা আমানত নষ্ট হওয়ার বিষয়টি শুধু অর্থনৈতিক নয়; বরং ব্যাপক অর্থবোধক। দায়িত্ব সংক্রান্ত যেকোনো ধরনের অন্যায়পরায়ণতা আমানতের খেয়ানত। মহান আল্লাহ বলেন,إِنَّ اللَّهَ يَأْمُرُكُمْ أَنْ تُؤَدُّوا الْأَمَانَاتِ إِلَى أَهْلِهَا وَإِذَا حَكَمْتُمْ بَيْنَ النَّاسِ أَنْ تَحْكُمُوا بِالْعَدْلِ إِنَّ اللَّهَ نِعِمَّا يَعِظُكُمْ بِهِ إِنَّ اللَّهَ كَانَ سَمِيعًا بَصِيرًا‘নিশ্চয় মহান আল্লাহ তোমাদেরকে আমানত তার যথাযোগ্য হক্বদারের নিকট পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আর যখন তোমরা মানুষের মধ্যে বিচার-ফয়সালা করবে, তখন ন্যায়বিচারের সাথে ফয়সালা করবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদেরকে যে সদুপদেশ প্রদান করেন, তা কত চমৎকার! নিশ্চয় মহান আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা’ (আন-নিসা, ২/৫৮)। মহান আল্লাহ আরও বলেন,

يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُونُوا قَوَّامِينَ بِالْقِسْطِ شُهَدَاءَ لِلَّهِ وَلَوْ عَلَى أَنْفُسِكُمْ أَوِ الْوَالِدَيْنِ وَالْأَقْرَبِينَ إِنْ يَكُنْ غَنِيًّا أَوْ فَقِيرًا فَاللَّهُ أَوْلَى بِهِمَا فَلَا تَتَّبِعُوا الْهَوَى أَنْ تَعْدِلُوا وَإِنْ تَلْوُوا أَوْ تُعْرِضُوا فَإِنَّ اللَّهَ كَانَ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرًا

‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর জন্য সাক্ষীস্বরূপ ন্যায়ের সাথে প্রতিষ্ঠিত থাকবে! যদিও তা তোমাদের অথবা পিতা-মাতা এবং আত্মীয়স্বজনের বিরুদ্ধে হয়। তারা ধনী কিংবা গরীব হোক। মহান আল্লাহ তাদের (উভয়ের) অভিভাবক। অতএব, তোমরা প্রবৃত্তির অনুসরণ করবে না, পাছে তোমরা ন্যায় বিচার করবে না আর যদি তোমরা (সাক্ষ্য) বিকৃত করো অথবা মুখ ফিরিয়ে নাও, তাহলে মহান আল্লাহ তোমাদের কার্যক্রম সম্পর্কে সম্যক অবগত’ (আন-নিসা, ২/১৩৫)। মহান আল্লাহ আরও বলেন,يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُونُوا قَوَّامِينَ لِلَّهِ شُهَدَاءَ بِالْقِسْطِ وَلَا يَجْرِمَنَّكُمْ شَنَآنُ قَوْمٍ عَلَى أَلَّا تَعْدِلُوا اعْدِلُوا هُوَ أَقْرَبُ لِلتَّقْوَى وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا تَعْمَلُونَ ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা মহান আল্লাহর জন্য ন্যায়নিষ্ঠতাসহ সাক্ষী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত থাকবে! কোনো সম্প্রদায়ের প্রতি তোমাদের শত্রুতা যেন তোমাদেরকে উদ্বুদ্ধ না করে যে, তোমরা ইনছাফ করবে না। তোমরা ইনছাফ করবে। এটি তাক্বওয়ার অধিক নিকটবর্তী। আর তোমরা মহান আল্লাহকে ভয় করো! নিশ্চয় মহান আল্লাহ তোমরা যা করো, সে বিষয়ে সম্যক অবগত’ (আল-মায়েদা, ৫/৮)। মহান আল্লাহ আরও বলেন,إِنَّ اللَّهَ يَأْمُرُ بِالْعَدْلِ وَالْإِحْسَانِ وَإِيتَاءِ ذِي الْقُرْبَى وَيَنْهَى عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالْمُنْكَرِ وَالْبَغْيِ يَعِظُكُمْ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُونَ ‘নিশ্চয় আল্লাহ ন্যায়, সদাচরণ ও নিকটাত্মীয়কে প্রদান করার নির্দেশ দেন এবং অশ্লীলতা, মন্দ ও সীমালঙ্ঘন করতে নিষেধ করেন। তিনি তোমাদের উপদেশ দেন, যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ করতে পারো’ (আন-নাহল, ১৬/৯০)

উপরের আয়াতগুলো স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, ন্যায়পরায়ণতা প্রতিষ্ঠা করা অন্যতম একটি আমানত। যারা নিজ নিজ দায়িত্বের জায়গা থেকে ন্যায় বজায় রাখতে পারে না, তারা আমানতের খেয়ানত করে। পৃথিবীতে যেদিন অযোগ্য মানুষ দায়িত্বশীল হবে এবং যখন তারা তাদের দায়িত্বের হক্ব আদায় করতে পারবে না, দায়িত্বের জায়গা থেকে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না; তখন সমগ্র পৃথিবীতে অন্যায়-অনাচার ও যুলম ছড়িয়ে পড়বে। মানুষ পশু-প্রাণীর মতো হয়ে যাবে, তখনই মূলত ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে।

বক্তব্য চলা অবস্থায় কেউ কোনো প্রশ্ন করলে বক্তব্য কি থামানো যাবে?

প্রথমত, উপর্যুক্ত হাদীছ থেকে আমাদের শিক্ষা হচ্ছে, কোনো মানুষ ভিন্ন কোনো কথায় ব্যস্ত থাকলে সেই কথা শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে কোনো প্রশ্ন করা উচিত নয়।

দ্বিতীয়ত, কেউ যদি প্রশ্ন করেই বসে; তাহলে কী করা হবে? উপর্যুক্ত হাদীছে আল্লাহর নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কথা শেষ না হওয়া পর্যন্ত তার প্রশ্নের দিকে দৃষ্টিপাত করেননি। যা প্রমাণ করে, চলমান কথা চালিয়ে যেতে হবে এবং চলমান কথা শেষ হওয়ার পরেই প্রশ্নকারীর প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।

তৃতীয়ত, অন্যান্য হাদীছকে একত্রিত করলে দেখা যায় বিভিন্ন সময় রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই বক্তব্যের মধ্যে বক্তব্য থামিয়ে প্রয়োজনীয় কথা বলেছেন।

عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ: جَاءَ رَجُلٌ وَالنَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَخْطُبُ النَّاسَ يَوْمَ الجُمُعَةِ، فَقَالَ: «أَصَلَّيْتَ يَا فُلاَنُ؟» قَالَ: لاَ، قَالَ: «قُمْ فَارْكَعْ رَكْعَتَيْنِ.

জাবের ইবনু আব্দুল্লাহ রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা একজন ব্যক্তি আগমন করলেন এমন অবস্থায় যে এসময় আল্লাহর নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমআর খুৎবা দিচ্ছিলেন। অতঃপর তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে অমুক! তুমি কি ছালাত আদায় করেছ?’ তখন ঐ ব্যক্তি বলল, ‘জি, না’। তখন আল্লাহর নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘দাঁড়াও এবং দুই রাকআত ছালাত আদায় করো’।[1]

উপরিউক্ত হাদীছে আল্লাহর নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চলমান খুৎবা থামিয়ে উক্ত ব্যক্তির সাথে কথা বলেছেন। যা প্রমাণ করে, জরুরী কিছু হলে সাথে সাথে কথা থামিয়েও বলা যায় আর মহান আল্লাহই সবকিছু সম্যক অবগত।

সারমর্ম ও শিক্ষা:

১. প্রশ্নকারীর পরিচয় জেনে উত্তর দেওয়া উচিত। যেমনটি রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রশ্নকারীর পরিচয় খুঁজে নিয়েছেন।

২. আলেমের ধৈর্য অনেক বড় বিষয়। যেমনটি রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উক্ত ব্যক্তিকে কোনো প্রকার তিরস্কার না করে ধৈর্যের সাথে তার প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন।

৩. চলমান কথার মধ্যে কোনো কথা না বলা জ্ঞানার্জনের ক্ষেত্রে অন্যতম একটি আদব।

৪. উত্তরের মধ্যে কোনো অস্পষ্টতা থাকলে পুনরায় জিজ্ঞেস করে নেওয়া যায়। যেমন উপর্যুক্ত হাদীছে প্রশ্নকারী পুনরায় জিজ্ঞেস করে জেনে নিলেন, আমানত কীভাবে নষ্ট হয়ে যাবে?

৫. প্রশ্নকারীর জন্য কোন কথাটি বেশি উপকারে আসবে, সেটি মাথায় রেখে উত্তর দেওয়া। যেমন রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ক্বিয়ামতের নির্ধারিত সময় উল্লেখ না করে ক্বিয়ামতের আলামত বলে দিলেন।

৬. রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মজলিস সকলের জন্য উন্মুক্ত ও প্রশস্ত ছিল। দ্বীনী মজলিসগুলো এমনই হওয়া উচিত।

(ইনশা-আল্লাহ চলবে)


* ফাযেল, দারুল উলূম দেওবান্দ, ভারত; বি. এ (অনার্স), মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সঊদী আরব; এমএসসি, ইসলামিক ব্যাংকিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স, ইউনিভার্সিটি অফ ডান্ডি, যুক্তরাজ্য।

[1]. ছহীহ বুখারী, হা/৯৩০।

Magazine