(এপ্রিল’২২ সংখ্যায় প্রকাশিতের পর)
১৩তম দলীল : মৃত ব্যক্তির সাথে সৎ সন্তানাদির সৎ আমল সংযুক্ত হবে। সন্তানাদির ছওয়াব কমতি ছাড়াই পিতা-মাতার জন্য সন্তানাদির অনুরূপ ছওয়াব রয়েছে। কেননা সন্তানাদি পিতা-মাতার প্রয়াসফল এবং উপার্জন। আল্লাহ তাআলা বলেন, وَأَنْ لَيْسَ لِلْإِنْسَانِ إِلَّا مَا سَعَى ‘আর মানুষ তাই পায়, যা সে করে’ (আন-নাজম, ৫৩/৩৯)। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,إِنَّ مِنْ أَطْيَبِ مَا أَكَلَ الرَّجُلُ مِنْ كَسْبِهِ وَوَلَدُهُ مِنْ كَسْبِهِ ‘কোনো ব্যক্তির নিজ হাতের উপার্জিত খাদ্য সর্বোত্তম খাদ্য। তার সন্তানও তার উপার্জন’।[1]
১৪তম দলীল : আয়েশা রযিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,أَنَّ رَجُلاً قَالَ لِلنَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ أُمِّى افْتُلِتَتْ نَفْسُهَا وَأَظُنُّهَا لَوْ تَكَلَّمَتْ تَصَدَّقَتْ فَهَلْ لَهَا أَجْرٌ إِنْ تَصَدَّقْتُ عَنْهَا قَالَ نَعَمْ فَتَصَدَّقَ عَنْهَا ‘জনৈক ব্যক্তি নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বললেন, আমার মায়ের আকস্মিক মৃত্যু ঘটে,[2] কিন্তু আমার বিশ্বাস- তিনি (মৃত্যুর পূর্বে) কথা বলতে সক্ষম হলে ছাদাক্বা করে যেতেন। এখন আমি তাঁর পক্ষ হতে ছাদাক্বা করলে তিনি এর প্রতিফল পাবেন কি? তিনি [নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেন, হ্যাঁ’ [তুমি তার পক্ষ থেকে ছাদাক্বা করো]’।[3]
১৫তম দলীল : ইবনু আব্বাস রযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, বানু সা‘এদার নেতা সা‘দ ইবনু উবাদাহ রযিয়াল্লাহু আনহু-এর মা মারা গেলেন এবং তিনি সেখানে অনুপস্থিত ছিলেন। অতঃপর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম!إِنَّ أُمِّى تُوُفِّيَتْ وَأَنَا غَائِبٌ عَنْهَا ، فَهَلْ يَنْفَعُهَا شَىْءٌ إِنْ تَصَدَّقْتُ بِهِ عَنْهَا قَالَ نَعَمْ قَالَ فَإِنِّى أُشْهِدُكَ أَنَّ حَائِطِى الْمِخْرَافَ صَدَقَةٌ عَلَيْهَا ‘আমার মা আমার অনুপস্থিতিতে মারা গেছেন। এখন আমি যদি তার পক্ষ থেকে ছাদাক্বা করি, তবে তা কি তাঁর কোনো উপকারে আসবে? তিনি বলেন, হ্যাঁ। সা‘দ রযিয়াল্লাহু আনহু বললেন, তাহলে আপনাকে সাক্ষী করে আমি আমার মিখরাফ[4] বা ফলবান বাগানটি তাঁর উদ্দেশ্যে ছাদাক্বা করলাম’।[5]
১৬তম দলীল : সা‘দ ইবনু উবাদাহ রযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম!إِنَّ أُمِّى مَاتَتْ أَفَأَتَصَدَّقُ عَنْهَا قَالَ نَعَمْ قَالَ فَأَىُّ الصَّدَقَةِ أَفْضَلُ قَالَ سَقْىُ الْمَاءِ فَتِلْكَ سِقَايَةُ سَعْدٍ بِالْمَدِينَةِ ‘আমার মা মৃত্যুবরণ করেছেন, আমি কি তাঁর পক্ষ হতে ছাদাক্বা করব? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমি বললাম, কোন ছাদাক্বা উত্তম? তিনি বললেন, পানি পান করানো। সেটাই মদীনায় (এখনো) সা‘দ রযিয়াল্লাহু আনহু-এর পানি পান করানোর ব্যবস্থাপনা’।[6]
১৭তম দলীল : আবূ হুরায়রা রযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলেন,إِنَّ أَبِى مَاتَ وَتَرَكَ مَالاً وَلَمْ يُوصِ فَهَلْ يُكَفِّرُ عَنْهُ أَنْ أَتَصَدَّقَ عَنْهُ قَالَ نَعَمْ ‘আমার পিতা মারা গেছেন এবং তিনি কিছু সম্পদ রেখে গেছেন; কিন্তু অছিয়ত করেননি। তার পক্ষ থেকে ছাদাক্বা করা হলে কি তার গুনাহ ক্ষমা হবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ’।[7]
১৮তম দলীল : আব্দুল্লাহ ইবনু আমর রযিয়াল্লাহু আনহু আ‘ছ ইবনু ওয়ায়েল আস-সাহমী তার পক্ষ থেকে ১০০ গোলাম আযাদ করার অছিয়ত করেন। তার এক ছেলে হিশাম ৫০টি গোলাম আযাদ করেন। পরে আরেক ছেলে আমর রযিয়াল্লাহু আনহু বাকী ৫০টি আযাদ করার ইচ্ছা করেন। তিনি বিষয়টি রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞস করার মনস্থ করেন। অতঃপর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে তিনি বলেন, হে আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম!إِنَّ أَبِى أَوْصَى بِعِتْقِ مِائَةِ رَقَبَةٍ وَإِنَّ هِشَامًا أَعْتَقَ عَنْهُ خَمْسِينَ وَبَقِيَتْ عَلَيْهِ خَمْسُونَ رَقَبَةً أَفَأُعْتِقُ عَنْهُ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّهُ لَوْ كَانَ مُسْلِمًا فَأَعْتَقْتُمْ عَنْهُ أَوْ تَصَدَّقْتُمْ عَنْهُ أَوْ حَجَجْتُمْ عَنْهُ بَلَغَهُ ذَلِكَ ‘আমার পিতা তার পক্ষ থেকে ১০০ গোলাম আযাদ করার অছিয়ত করে যান। তার ছেলে হিশাম ৫০টি গোলাম আযাদ করেছেন, এখন ৫০টি আযাদ করার বাকী আছে। আমি কি তার পক্ষ থেকে তা আযাদ করব? রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে যদি মুসলিম হতো, তাহলে তোমরা তার পক্ষ থেকে তা আযাদ করলে অথবা ছাদাক্বা করলে কিংবা হজ্জ করলে তার কাছে এর ছওয়াব পৌঁছত’। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, فَلَوْ كَانَ أَقَرَّ بِالتَّوْحِيدِ فَصُمْتَ وَتَصَدَّقْتَ عَنْهُ نَفَعَهُ ذَلِكَ ‘সে যদি তাওহীদের উপর মারা যেত, তাহলে তোমরা তার পক্ষ থেকে ছাদাক্বা করলে তা তার উপকারে আসত’।[8]+[9]
১৯তম দলীল : শারীদ ইবনু সুওয়াইদ আছ-ছাক্বাফী রযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললাম, আমার মা একটি গোলাম আযাদ করার অছিয়ত করেছেন। আর আমার নিকট একটি হাবশী দাসী রয়েছে, আমি যদি আমার মায়ের পক্ষ হতে মুক্ত করি, তবে কি তা যথেষ্ট হবে? তিনি বললেন, তাকে (সেই দাসীকে) আমার নিকট নিয়ে এসো। পরে আমি তাকে তাঁর নিকট নিয়ে গেলাম। নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন,مَنْ رَبُّكِ؟ قَالَتْ: اللهُ، قَالَ: مَنْ أَنَا؟ قَالَتْ: أَنْتَ رَسُوْلُ اللهِ، قَالَ أَعْتِقْهَا فَإِنَّهَا مُؤْمِنَةٌ ‘তোমার রব কে? তিনি বললেন, আমার রব আল্লাহ। তিনি তাকে বললেন, আমি কে? তিনি বললেন, আপনি আল্লাহর রাসূল। তিনি বললেন, তাকে মুক্ত করে দাও, সে ঈমানদার’।[10]
২০তম দলীল : ইবনু আব্বাস রযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
أَنَّ امْرَأَةٌ مِنْ خَثْعَمٍ قَالَت يَا رَسُولُ اللَّهِ إِنَّ فَرِيضَةَ اللَّهِ على عباده في الحج أَدْرَكَتْ أَبِى شَيْخًا كَبِيرًا لاَ يَسْتَطِيعُ أَنْ يَثْبُتُ عَلَى الرَّاحِلَةِ أَفَأَحُجُّ عَنْهُ قَالَ نَعَمْ وَذَلِكَ فِى حَجَّةِ الْوَدَاعِ. وفي رواية لمسلم فَحُجِّى عَنْهُ.
‘খাছআম গোত্রের এক মহিলা এসে বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আল্লাহ তাঁর বান্দাদের উপর যে হজ্জ ফরয করেছেন, তা আমার বৃদ্ধ পিতার উপরও ফরয হয়েছে, কিন্তু তিনি সওয়ারীর উপর ঠিকভাবে বসে থাকতে সক্ষম নন। আমি কি তার পক্ষ থেকে হজ্জ আদায় করতে পারি? তিনি বললেন, হ্যাঁ। এ ছিল বিদায় হজ্জের সময়কার ঘটনা। মুসলিমের অন্য বর্ণনায় রয়েছে, তুমি তার পক্ষ থেকে হজ্জ করো’।[11]
২১তম দলীল : আবূ রাযীন রযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, হে আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম!إِنَّ أَبِى شَيْخٌ كَبِيرٌ لاَ يَسْتَطِيعُ الْحَجَّ وَلاَ الْعُمْرَةَ وَلاَ الظَّعْنَ قَالَ فَحُجَّ عَنْ أَبِيكَ وَاعْتَمِرْ ‘আমার পিতা অতি বৃদ্ধ, হজ্জ এবং উমরা আদায় করতে তিনি অক্ষম এবং সওয়ারীতে সফর করতেও অসমর্থ। তিনি বললেন, তোমার পিতার পক্ষ থেকে তুমি হজ্জ ও উমরা আদায় করো’।[12]
২২তম দলীল : ইবনু আব্বাস রযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, সিনান ইবনে আব্দুল্লাহ জুহানী রযিয়াল্লাহু আনহু-এর স্ত্রী তাকে বললেন, যেন তিনি রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করেন যে, তার মাতা হজ্জ না করেই মৃত্যুবরণ করেছেন। তার মাতার পক্ষ থেকে হজ্জ আদায় করলে তা যথেষ্ট হবে কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ। (অতঃপর তিনি বলেন),لَوْ كَانَ عَلَى أُمِّهَا دَيْنٌ فَقَضَتْهُ عَنْهَا أَكَانَ يُجْزِئُ عَنْهَا قَالَ نَعَمْ قَالَ فَلْتَحُجَّ عَنْ أُمِّهَا ‘যদি তার কোনো ঋণ থাকত আর তার পক্ষ হতে সে আদায় করত, তাহলে কি তার মাতার পক্ষ থেকে আদায় হতো না? সে বলল, হ্যাঁ। তিনি বলেন, সে যেন তার মাতার পক্ষ থেকে হজ্জ আদায় করে’।[13]
২৩তম দলীল : ইবনু আব্বাস রযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,أَنَّ امْرَأَةً مِنْ جُهَيْنَةَ جَاءَتْ إِلَى النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَتْ إِنَّ أُمِّى نَذَرَتْ أَنْ تَحُجَّ فَلَمْ تَحُجَّ حَتَّى مَاتَتْ أَفَأَحُجُّ عَنْهَا قَالَ نَعَمْ حُجِّى عَنْهَا أَرَأَيْتِ لَوْ كَانَ عَلَى أُمِّكِ دَيْنٌ أَكُنْتِ قَاضِيَةً اقْضُوا اللَّهَ فَاللَّهُ أَحَقُّ بِالْوَفَاءِ ‘জুহাইনা গোত্রের একজন মহিলা নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বললেন, আমার মাতা হজ্জের মানত করেছিলেন, তবে তিনি হজ্জ আদায় না করে মৃত্যুবরণ করেছেন। আমি কি তার পক্ষ হতে হজ্জ করতে পারি? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তার পক্ষ থেকে তুমি হজ্জ আদায় করো। তুমি এ ব্যাপারে কী মনে কর যে, যদি তোমার মাতার উপর ঋণ থাকত, তাহলে কি তুমি তা আদায় করতে না? সুতরাং আল্লাহর হক্ব আদায় করে দাও। কেননা আল্লাহর হক্বই সবচেয়ে বেশি আদায়যোগ্য’।[14]
অন্য বর্ণনায় রয়েছে, فَاقْضُوا اللَّهَ الَّذِى لَهُ فَإِنَّ اللَّهَ أَحَقُّ بِالْوَفَاءِ ‘কাজেই তার উপর যে মানত আছে, তা তুমি আদায় করো। আল্লাহ অধিক হক্বদার, যে তাঁর জন্য কৃত মানত মানুষেরা পূর্ণ করবে’।[15] অন্য আরেকটি বর্ণনায় রয়েছে, একজন ব্যক্তি নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বললেন,إِنَّ أُخْتِى نَذَرَتْ أَنْ تَحُجَّ وَإِنَّهَا مَاتَتْ فَقَالَ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَاقْضِ اللَّهَ فَهْوَ أَحَقُّ بِالْقَضَاءِ ‘আমার বোন হজ্জের মানত করেছিল। কিন্তু সে মারা গেছে। তখন নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘কাজেই আল্লাহর হক্ব আদায় করে দাও। কেননা আল্লাহর হক্বই সবচেয়ে বেশি আদায়যোগ্য’।[16]
২৪তম দলীল : ইবনু আব্বাস রযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে বলতে শুনলেন, ‘লাব্বাইকা শুবরুমা’। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, শুবরুমা কে? লোকটি বললেন, আমার ভাই কিংবা আমার বন্ধু। তিনি বললেন, তুমি কি নিজের হজ্জ করেছ? তিনি বললেন, না। তিনি বললেন, حُجَّ عَنْ نَفْسِكَ ثُمَّ حُجَّ عَنْ شُبْرُمَةَ ‘প্রথমে তোমার নিজের হজ্জ আদায় করে নাও, অতঃপর শুবরুমার পক্ষ থেকে হজ্জ আদায় করো’।[17]
২৫তম দলীল : আয়েশা ও আবূ হুরায়রা রযিয়াল্লাহু আনহুমা হতে বর্ণিত,أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ إِذَا أَرَادَ أَنْ يُضَحِّىَ اشْتَرَى كَبْشَيْنِ عَظِيمَيْنِ سَمِينَيْنِ أَقْرَنَيْنِ أَمْلَحَيْنِ مَوْجُوءَيْنِ فَذَبَحَ أَحَدَهُمَا عَنْ أُمَّتِهِ لِمَنْ شَهِدَ لِلَّهِ بِالتَّوْحِيدِ وَشَهِدَ لَهُ بِالْبَلاَغِ وَذَبَحَ الآخَرَ عَنْ مُحَمَّدٍ وَعَنْ آلِ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ‘রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানীর ইচ্ছা করলে দুটি মোটাতাজা, মাংসল, শিংযুক্ত, ধূসর বর্ণের ও ছিন্নমুষ্ক মেষ ক্রয় করতেন। অতঃপর এর একটি নিজ উম্মতের যারা আল্লাহর একত্বের সাক্ষ্য দেয় এবং তাঁর নবুঅতের সাক্ষ্য দেয়, তাদের পক্ষ থেকে এবং অপরটি মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর পরিবারবর্গের পক্ষ থেকে কুরবানী করতেন’।[18]
(চলবে)
মূল : ড. সাঈদ ইবনু আলী ইবনু ওয়াহাফ আল-ক্বাহত্বানী রহিমাহুল্লাহ
অনুবাদ : হাফীযুর রহমান বিন দিলজার হোসাইন
নারায়ণপুর, নবাবগঞ্জ, দিনাজপুর।
[1]. আবূ দাঊদ, ‘ক্রয়-বিক্রয় ও ইজারা’ অধ্যায়, ‘পিতা সন্তানের সম্পদ ভোগ করতে পারে’ অনুচ্ছেদ, হা/৩৫২৮; তিরমিযী, ‘বিচারকার্য’ অধ্যায়, ‘পিতা তার সন্তানের সম্পদ হতে নিতে পারে’ অনুচ্ছেদ, হা/১৩৫৮; নাসাঈ, ‘ক্রয়-বিক্রয়’ অধ্যায়, ‘উপার্জনের প্রতি উৎসাহিত করা’ অনুচ্ছেদ, হা/৪৪৫৪; ইবনু মাজাহ, ‘ব্যবসাবাণিজ্য’ অধ্যায়, ‘উপার্জনের প্রতি উৎসাহিত করা’ অনুচ্ছেদ, হা/২১৩৭; হাকেম, ২/৪৬; ত্বায়ালিসী, হা/১৫৮০; মুসনাদে আহমাদ, ৬/৪১, ১২৬, ১৬২, ১৭৩, ১৯৩, ২০১, ২০২, ২২০; হাকেম বলেন, ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিমের শর্তানুযায়ী হাদীছটি ছহীহ এবং ইমাম যাহাবী তাতে ঐকমত্য পোষণ করেছেন। আর আলবানী রহিমাহুল্লাহ বলেন, ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিমের শর্তানুযায়ী হাদীছটি ছহীহ। সেটা কয়েক দিক থেকে সঠিক নয়। কারণ, সেটা বর্ণনা করার ক্ষেত্রে প্রশস্ত নয়। এই হাদীছের শাহেদ হাদীছ রয়েছে। যা আব্দুল্লাহ ইবনু আমর রযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত; আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ এবং আহমাদ, ২/১৭৯, ২০৪, ২১৪, সনদ হাসান।
[2]. আলবানী রহিমাহুল্লাহ বলেন, শব্দটির ‘الف’ ও প্রথম ‘ت’ বর্ণে পেশ এবং ‘لا’ বর্ণে যের, মাজহূল করে। অর্থাৎ, ছিনিয়ে নেওয়া হলো বা হঠাৎ মারা গেল।
[3]. ছহীহ বুখারী, ‘জানাযা’ অধ্যায়, ‘হঠাৎ মৃত্যু’ অনুচ্ছেদ, হা/১৩৮৮; ছহীহ মুসলিম, ‘যাকাত’ অধ্যায়, মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে দান করে তার জন্য ছওয়াব পৌঁছানো’ অনুচ্ছেদ, হা/১০০৪; আবূ দাঊদ, ‘অছিয়ত’ অধ্যায়, ‘যে ব্যক্তি অছিয়ত না করে মারা গেছে তার পক্ষ থেকে ছাদাক্বা করা’ অনুচ্ছেদ, হা/২৮৮১; নাসাঈ, ‘অছিয়ত’ অধ্যায়, ‘হঠাৎ মৃত্যু হলে মৃতের পক্ষ হতে তার পরিবারের ছাদাক্বা করা মুস্তাহাব’ অনুচ্ছেদ, হা/৩৬৭৯; ইবনু মাজাহ, ‘অছিয়ত’ অধ্যায়, ‘অছিয়ত করার পূর্বে ঋণ পরিশোধ করতে হবে’ অনুচ্ছেদ, হা/২৭১৭ (২৭১৫); বায়হাক্বী, ৪/৬২, ৬/২৭৭-২৭৮; মুসনাদে আহমাদ, ৬/৫১। আলবানী রহিমাহুল্লাহ বলেন, এ ধারাবাহিকতাটা ইমাম বুখারী রহিমাহুল্লাহ-এর দু’বর্ণনার একটি বর্ণনাতে রয়েছে এবং শেষ অতিরিক্তটুকু অন্য বর্ণনাতে রয়েছে এবং ইবনু মাজাহতেও রয়েছে। ইবনু মাজাহতে আরো একটি অতিরিক্ত রয়েছে। আর ইমাম মুসলিমেরটা শ্রেষ্ঠতর।
[4]. অর্থাৎ ফলপ্রসূ। ফলফলাদি আরোহণ বা সংগ্রহ করার কারণে সেটাকে المخراف বলা হয়।
[5]. ছহীহ বুখারী, ‘অছিয়ত’ অধ্যায়, ওয়াক্বফ ও ছাদাক্বার সাক্ষী রাখা’ অনুচ্ছেদ, হা/২৭৬২ (২৭৫৬); আবূ দাঊদ, ‘অছিয়ত’ অধ্যায়, ‘যে ব্যক্তি অছিয়ত না করে মারা গেছে তার পক্ষ থেকে ছাদাক্বা করা’ অনুচ্ছেদ, হা/২৮৮২; নাসাঈ, ‘অছিয়ত’ অধ্যায়, ‘মৃতের পক্ষ থেকে ছাদাক্বার ফযীলত’ অনুচ্ছেদ, হা/৩৬৮৫; তিরমিযী, ‘যাকাত’ অধ্যায়, ‘মৃতের পক্ষ থেকে ছাদাক্বা’ অনুচ্ছেদ, হা/৬৬৯; বায়হাক্বী, ৬/২৭৮; মুসনাদে আহমাদ হা/৩০৮০, ৩৫০৫, ৩৫০৮।
[6]. নাসাঈ, ‘অছিয়ত’ অধ্যায়, সুফিয়ানের বর্ণনায় বর্ণনা বিরোধ’ অনুচ্ছেদ, হা/৩৬৬৩, ৩৬৬৪; আবূ দাঊদ, ‘যাকাত’ অধ্যায়, ‘পানি পান করানোর ফযীলত প্রসঙ্গে’ অনুচ্ছেদ, হা/১৬৮১; ইবনু মাজাহ, ‘শিষ্টাচার’ অধ্যায়, ‘পানি দান করার ফযীলত’ অনুচ্ছেদ, হা/৩৬৮৪; আলবানী রহিমাহুল্লাহ নাসাঈ, ২/৫৬০, ৫৬১-তে হাদীছটিকে হাসান বলেছেন; মুসনাদে আহমাদ, ৫/২৮৫।
[7]. ছহীহ মুসলিম, ‘অছিয়ত’ অধ্যায়, ‘মৃতের নিকট দানের ছওয়াব পৌঁছা’ অনুচ্ছেদ, হা/১৬৩০; নাসাঈ, ‘অছিয়ত’ অধ্যায়, ‘মৃতের পক্ষ থেকে ছাদাক্বার ফযীলত’ অনুচ্ছেদ, হা/৩৬৫০; বায়হাক্বী, ৬/২৭৮; মুসনাদে আহমাদ, ২/৩৭১।
[8]. আবূ দাঊদ, ‘অছিয়ত’ অধ্যায়, ‘মৃত কাফেরের অছিয়ত পূরণ করা মুসলিম ওয়ালীর জন্য অত্যাবশ্যাক কি না?’ অনুচ্ছেদ, হা/২৮৮৩; বায়হাক্বী, ৬/২৭৯; আলবানী রহিমাহুল্লাহ বলেন, তার ধারাবাহিকতায়; মুসনাদে আহমাদ, হা/৬৭০৪-এ আরো একটি বর্ণনা রয়েছে, সেগুলোর প্রত্যেকটির সনদ হাসান।
[9]. আমি (লেখক) বলি যে, এ বর্ণনা থেকে স্পষ্ট হয় যে, নফল ছিয়ামের ছওয়াব মৃত ব্যক্তিকে হাদিয়া দেওয়া হলে, মৃত ব্যক্তির সাথে সংযুক্ত হবে। আল্লাহই অধিক অবগত।
[10]. নাসাঈ, ‘অছিয়ত’ অধ্যায়, ‘মৃত্যের পক্ষ থেকে ছাদাক্বার ফযীলত’ অনুচ্ছেদ, হা/৩৬৫১; আলবানী রহিমাহুল্লাহ সিলসিলা ছহীহা, হা/৩১৬১-তে হাদীছটিকে হাসান বলেছেন।
[11]. ছহীহ বুখারী, ‘ইহরাম অবস্থায় শিকার এবং অনুরূপ কিছু বদলা’ অধ্যায়, ‘যে ব্যক্তি সওয়ারীতে বসে থাকতে অক্ষম, তার পক্ষ হতে হজ্জ আদায় করা’ অনুচ্ছেদ, হা/১৮৫৪; ছহীহ মুসলিম, ‘হজ্জ’ অধ্যায়, ‘বিকলাঙ্গ, বার্ধক্য ইত্যাদির কারণে অক্ষম ব্যক্তির পক্ষ হতে অথবা মৃত ব্যক্তির পক্ষ হতে হজ্জ সম্পাদন’ অনুচ্ছেদ, হা/১৩৩৪ (২৩৭৫)।
[12]. আবূ দাঊদ, ‘হজ্জ’ অধ্যায়, ‘কারো পক্ষ থেকে হজ্জ করা’ অনুচ্ছেদ, হা/১৮১০; তিরমিযী, ‘হজ্জ’ অধ্যায়, ‘বৃদ্ধ পিতার পক্ষ থেকে হজ্জ করা’ অনুচ্ছেদ, হা/৯৩০; নাসাঈ, ‘হজ্জ’ অধ্যায়, ‘অসমর্থ ব্যক্তির পক্ষ থেকে উমরা করা’ অনুচ্ছেদ, হা/৩৬৩৮; ইবনু মাজাহ, ‘হজ্জ’ অধ্যায়, ‘জীবিত ব্যক্তি হজ্জ করতে অপারগ হলে তার পক্ষ থেকে হজ্জ করা’ অনুচ্ছেদ, হা/২৯০৬; দেখুন- নাসাঈ, ২/৫৫৬; আবূ দাঊদ, ১/৩৪১; ইবনু মাজাহ, ২/১৫২; তিরমিযী, ১/২৭৫।
[13]. মুসনাদে আহমাদ, ১/২১৭, ২৪৪, ২৭৯; নাসাঈ, ‘হজ্জ’ অধ্যায়, ‘যে ব্যক্তি হজ্জ না করে মারা গেল তার পক্ষ থেকে হজ্জ আদায় করা’ অনুচ্ছেদ, হা/২৬৩১; ইবনু খুযায়মা, হা/৩০৩৪, ৩০৩৫; আলবানী রহিমাহুল্লাহ নাসাঈ, ২/৫৫৬-তে হাদীছটিকে হাসান বলেছেন।
[14]. ছহীহ বুখারী, ‘ইহরাম অবস্থায় শিকার এবং অনুরূপ কিছুর বদলা’ অধ্যায়, ‘মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে হজ্জ বা মানত আদায় করা’ অনুচ্ছেদ, হা/১৮৫২।
[15]. ছহীহ বুখারী, ‘কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরা’ অধ্যায়, ‘কোনো বিষয়ে প্রশ্নকারীকে স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেওয়ার উদ্দেশে সুস্পষ্ট হুকুম বর্ণিত আছে এরূপ কোনো বিষয়ের সঙ্গে আরেকটি বিষয়ের নিয়ম মোতাবেক তুলনা করা’ অনুচ্ছেদ, হা/৭৩১৫।
[16]. ছহীহ বুখারী, ‘শপথ ও মানত’ অধ্যায়, ‘মানত আদায় না করে কেউ যদি মারা যায়’ অনুচ্ছেদ, হা/৬৬৯৯।
[17]. আবূ দাঊদ, ‘হজ্জ’ অধ্যায়, কারো পক্ষ থেকে হজ্জ করা’ অনুচ্ছেদ, হা/১৮১১; ইবনু মাজাহ, ‘হজ্জ’ অধ্যায়, ‘মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে হজ্জ করা’ অনুচ্ছেদ, হা/২৯০৩; আলবানী রহিমাহুল্লাহ আবূ দাঊদ, ১/৩৪১-এ হাদীছটিকে ছহীহ বলেছেন; ইরওয়াউল গালীল, ৪/১৭১।
[18]. ইবনু মাজাহ, ‘কুরবানী’ অধ্যায়, ‘রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কুরবানী’ অনুচ্ছেদ, হা/৩১২২; আলবানী রহিমাহুল্লাহ ইবনু মাজাহ, ৩/৮১-তে হাদীছটিকে ছহীহ বলেছেন।