কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

ছালাতের গুরুত্ব ও ফযীলত

post title will place here

ছালাত ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। ইসলামে এর রয়েছে মহান মর্যাদা ও বিশাল গুরুত্ব। বক্ষ্যমান প্রবন্ধে ছালাতের গুরুত্ব, ফযীলত ও ছালাত পরিত্যাগের ভয়াবহতা নিয়ে সংক্ষিপ্ত পরিসরে আলোকপাত করা হবে ইনশাআল্লাহ।

(ক) ছালাতের গুরুত্ব :

(১) ছালাত ইসলামের ২য় রুকন : কালেমা শাহাদাতের পরেই ছালাতের স্থান। সুতরাং ইসলামে ছালাতের গুরুত্ব কতটুকু তা সহজেই অনুমেয়। ইবনু উমার রাযিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,بُنِيَ الْإِسْلَامُ عَلى خَمْسٍ شَهَادَةِ أَنْ لَّا إِلهَ اِلَّا اللّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُه رَسُوْلُه وَإِقَامِ الصَّلَاة وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ وَالْحَجِّ وَصَوْمِ رَمَضَانَ ‘পাঁচটি স্তম্ভের উপর ইসলামের ভিত্তি স্থাপিত। এ সাক্ষ্য দেওয়া যে, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোনো ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল, ছালাত ক্বায়েম করা, যাকাত আদায় করা, হজ্জ পালন করা আর রামাযান মাসের ছিয়াম রাখা’।[1]

(২) আল্লাহ তাআলা ছালাতকে মে‘রাজরে রজনিতে নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওপর ফরয করেছেন : এটা ছালাতের গুরুত্ব বহন করে। কারণ অপরাপর সকল ইবাদতের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা যখন নির্দেশনা নাযিল করেছেন, তখন নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুনিয়াতেই অবস্থান করেছিলেন। শুধু ছালাতের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম।

(৩) ক্বিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম ছালাতের হিসাব নেওয়া হবে : আবূ হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,إِنَّ أَوَّلَ مَا يُحَاسَبُ بِهِ الْعَبْدُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مِنْ عَمَلِه صَلَاتُه فَإِنْ صَلُحَتْ فَقَدْ أَفْلَحَ وَأنْجَحَ وَإِنْ فَسَدَتْ فَقَدْ خَابَ وَخَسِرَ ‘ক্বিয়ামতের দিন বান্দার সর্বপ্রথম যে আমলের হিসাব নেওয়া হবে, তা হলো তার ছালাত। যদি তার ছালাত সঠিক হয়, তাহলে সে সফলকাম হবে ও নাজাত পাবে। আর যদি ছালাত বিনষ্ট হয়ে যায়, তাহলে সে বিফল ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে’।[2]

(৪) ছালাত নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এরসর্বশেষ অছিয়ত : মৃত্যুকালে নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সর্বশেষ অছিয়ত ছিল ছালাত। হাদীছে এসেছে, আলী ইবনু আবী তালেব রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শেষ কথা ছিল, الصَّلاَةَ وَمَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ ‘তোমরা ছালাত এবং তোমাদের অধীনস্থ দাস-দাসীর প্রতি যত্নবান হবে’।[3]

(৫) ছালাতকে আল্লাহ কুরআনে ঈমান বলে আখ্যায়িত করেছেন : ছালাত কত গুরুত্বপূর্ণ তা এই আয়াত থেকে বুঝা যায়, যেখানে আল্লাহ ছালাতকে ঈমান বলে আখ্যায়িত করেছেন। আল্লাহ বলেন, وَمَا كَانَ اللّهُ لِيُضِيعَ إِيمَانَكُمْ ‘আর আল্লাহ অবশ্যই তোমাদের (বায়তুল মাক্বদিসের দিকে মুখ করে আদায়কৃত পূর্বের) ঈমান (ছালাতকে) বরবাদ করবেন না’ (আল-বাক্বারা, ২/১৪৩)

(৬) সাতবছরথেকেছালাতেরআদেশদিতেহবে : ছালাত একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, সাত বছর থেকেই পিতা-মাতা সন্তানকে ছালাতের আদেশ দিবেন। আমর ইবনু শুআইব রাহিমাহুল্লাহ তার পিতার মাধ্যমে, তিনি তাঁর দাদা হতে বর্ণনা করেছেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,مُرُوا أَوْلَادَكُمْ بِالصَّلَاةِ وَهُمْ أَبْنَاءُ سَبْعِ سِنِينَ وَاضْرِبُوهُمْ عَلَيْهَا وَهُمْ أَبْنَاءُ عَشْرٍ وَفَرِّقُوا بَيْنَهُمْ فِي الْمَضَاجِعِ ‘তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে সালাত আদায়ের জন্য আদেশ করো, যখন তাদের বয়স সাত বছর হয়। আর তোমরা তাদেরকে ছালাত আদায়ের জন্য প্রহার করো, যখন তাদের বয়স দশ বছর হয় এবং তাদের ঘুমানোর স্থান পৃথক করে দাও’।[4]

(খ) ছালাতের ফযীলত :

(১) ছালাত জান্নাত লাভের অন্যতম মাধ্যম : ছালাতের মাধ্যমে একজন মুমিন জান্নাত লাভ করে। মহান আল্লাহ বলেন,وَالَّذِينَ هُمْ عَلَى صَلَاتِهِمْ يُحَافِظُونَ-أُولَئِكَ فِي جَنَّاتٍ مُكْرَمُونَ ‘আর যারা তাদের ছালাতের হেফাযত করে, তারা সম্মানিত হবে জান্নাতে’ (আল-মা‘আরিজ,৭০/৩৪-৩৬)। আবূ উমামা রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,صَلُّوا خَمْسَكُمْ وَصُومُوا شَهْرَكُمْ وَأَدُّوا زَكَاةَ أَمْوَالِكُمْ وَأَطِيعُوا ذَا أَمْرِكُمْ تَدْخُلُوا جَنَّةَ رَبِّكُمْ ‘তোমাদের ওপর ফরযকৃত পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত আদায় করো, তোমাদের জন্য নির্দিষ্ট করা (রামাযান) মাসের ছিয়াম পালন করো, তোমাদের ধনসম্পদের যাকাত আদায় করো এবং তোমাদের শাসকের আনুগত্য করো, এভাবে তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের জান্নাতে প্রবেশ করো’।[5]

(২) ছালাত পাপ মোচনের অন্যতম মাধ্যম : আবূ হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন,أَرَأيْتُمْ لَوْ أَنَّ نَهْرَاً بِبَابِ أَحَدِكُمْ يَغْتَسِلُ مِنْهُ كُلَّ يَوْمٍ خَمْسَ مَرَّاتٍ هَلْ يَبْقَى مِنْ دَرَنِهِ شَيْءٌ؟ قَالُوْا لاَ يَبْقَى مِنْ دَرنهِ شَيْءٌ قَالَ فَذَلِكَ مَثَلُ الصَّلَوَاتِ الخَمْسِ يَمْحُو اللهُ بِهِنَّ الخَطَايَا ‘তোমরা ভেবে দেখেছো কি, যদি তোমাদের কারো বাড়ির দরজার সামনে একটি নদী থাকে, যাতে সে প্রতিদিন পাঁচবার করে গোসল করে, তাহলে তার শরীরে কোনো ময়লা অবশিষ্ট থাকবে কি? ছাহাবীগণ বললেন, না কোনো ময়লা অবশিষ্ট থাকবে না। তিনি বললেন, ‘এটা হলো পাঁচ ওয়াক্ত ছালাতের উদাহরণ, এর দ্বারা আল্লাহ পাপরাশি নিশ্চিহ্ন করে দেন’।[6] অন্য হাদীছে এসেছে, আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, এক ব্যক্তি এক মহিলাকে চুম্বন দিয়ে ফেলেন। অতঃপর তিনি (অনুতপ্ত হয়ে) নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে ঘটনাটি বলেন। তখন আল্লাহ এ আয়াত অবতীর্ণ করেন,وَأَقِمِ الصَّلَاةَ طَرَفَيِ النَّهَارِ وَزُلَفًا مِنَ اللَّيْلِ إِنَّ الْحَسَنَاتِ يُذْهِبْنَ السَّيِّئَاتِ ‘তুমি ছালাত প্রতিষ্ঠা করো দিবসের দুই প্রান্তে এবং রাত্রির কিছু অংশে। নিশ্চয় পুণ্য কর্মাদি পাপরাশিকে বিদূরিত করে থাকে’ (হূদ,১১/১১৪)। লোকটি বললেন, এ বিধান কি কেবল আমার জন্য? তিনি বললেন, ‘আমার উম্মতের সকলের জন্য’।[7]

অন্য হাদীছে এসেছে, আবূ হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,الصَّلَوَاتُ الخَمْسُ وَالجُمُعَةُ إِلَى الجُمُعَةِ كَفَّارَةٌ لِمَا بَيْنَهُنَّ مَا لَمْ تُغشَ الكَبَائِرُ ‘পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত, এক জুমআ থেকে পরবর্তী জুমআ পর্যন্ত এর মধ্যবর্তী সময়ে যেসব পাপ সংঘটিত হয়, সেসবের মোচনকারী হয় (এই শর্তে) যদি সে কাবীরা গুনাহে লিপ্ত না হয়’।[8] হাদীছে আরও এসেছে, আবূ উছমান রাহিমাহুল্লাহ বলেন, একদা একটি গাছের নিচে আমি সালমান রাযিয়াল্লাহু আনহু-এর সাথে ছিলাম। তিনি গাছের একটি শুষ্ক ডাল ধরে হেলিয়ে দিলেন। এতে ডালের সমস্ত পাতাগুলো ঝরে গেল। অতঃপর তিনি বললেন, হে আবূ উছমান! তুমি আমাকে জিজ্ঞেস করবে নাকি যে, কেন আমি এরূপ করলাম? আমি বললাম, কেন করলেন? তিনি বললেন, একদা আমিও আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে গাছের নিচে ছিলাম। তিনি আমার সামনে অনুরূপ করলেন; গাছের একটি শুষ্ক ডাল ধরে হেলিয়ে দিলেন। এতে তার সমস্ত পাতা খসে পড়ল। অতঃপর বললেন, ‘হে সালমান! তুমি আমাকে জিজ্ঞেস করবে নাকি যে, কেন আমি এরূপ করলাম? আমি বললাম, কেন করলেন? তিনি উত্তরে বললেন, ‘মুসলিম যখন সুন্দরভাবে ওযূ করে পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত আদায় করে, তখন তার পাপরাশি ঠিক ঐভাবেই ঝরে যায় যেভাবে এই পাতাগুলো ঝরে গেল’।[9] আর তিনি এই আয়াত পাঠ করলেন,وَأَقِمِ الصَّلاَةَ طَرَفَىِ النَّهَارِ وَزُلَفاً مِّنَ اللَّيْلِ إِنَّ الْحَسَنَاتِ يُذْهِبْنَ السَّيِّآتِ ذلِكَ ذِكْرى لِلذَّاكِرِيْنَ ‘আর তুমি দিনের দুই প্রান্তভাগে ও রাতের কিছু অংশে ছালাত ক্বায়েম করো। অবশ্যই পুণ্যরাশি পাপরাশিকে দূরীভূত করে দেয়। এটা উপদেশ গ্রহণকারীদের জন্য উপদেশ’ (হূদ, ১৩/১১৪)

(৩) পাঁচ ওয়াক্ত ফরয ছালাত আদায়কারী ৫০ ওয়াক্ত ছালাতে ছওয়াব লাভ করে : আনাস রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন,فُرِضَتْ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَيْلَةَ أُسْرِيَ بِهِ الصَّلَوَاتُ خَمْسِينَ ثُمَّ نُقِصَتْ حَتَّى جُعِلَتْ خَمْسًا ثُمَّ نُودِيَ يَا مُحَمَّدُ إِنَّهُ لاَ يُبَدَّلُ الْقَوْلُ لَدَىَّ وَإِنَّ لَكَ بِهَذِهِ الْخَمْسِ خَمْسِينَ ‘মে‘রাজের রাতে নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর ৫০ ওয়াক্ত ছালাত ফরয করা হয়েছিল। অতঃপর তা কমাতে কমাতে পাঁচ ওয়াক্ত করা হয়। অতঃপর ঘোষণা করা হলো, হে মুহাম্মাদ! নিশ্চয়ই আমার নিকট কথার কোনো রদবদল করা হয় না। আপনার জন্য এই পাঁচ ওয়াক্তের বদৌলতে ৫০ ওয়াক্তের ছওয়াব রয়েছে’।[10]

(৪) ছালাতপাপথেকেদূরেরাখে : ছালাত বান্দাকে পাপ থেকে দূরে রাখে। মহান আল্লাহ বলেন,إِنَّ الصَّلَاةَ تَنْهَى عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالْمُنْكَرِ ‘নিশ্চয় ছালাত অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে’ (আল-আনকাবূত, ২৯/৪৫)। আবূ হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘এক লোক নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আসলেন এবং তাঁকে বললেন, অমুক লোক রাত্রে ছালাত আদায় করে কিন্তু ভোরে উঠে চুরি করে। তিনি বললেন, ‘তুমি যে আমলের কথা বলছো, তা তাকে অচিরেই বাধা দিবে’।[11]

(৫) ছালাত আদায়কারী হাশরের মাঠে ছিদ্দীক্ব ও শহীদগণের সাথে অবস্থান করবে : হাদীছে এসেছে, আমর ইবনু মুররাহ আল-জুহানী রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, এক ব্যক্তি নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! যদি আমি এ সাক্ষ্য প্রদান করি যে, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোনো মা‘বূদ নেই, আপনি আল্লাহর রাসূল; পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত আদায় করি, যাকাত দেই, রামাযানের ছিয়াম রাখি, রাত্রিতে তারাবীহ পড়ি? তিনি (রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন,مَنْ مَاتَ عَلَى هَذَا كَانَ مِنَ الصِّدِّيقِينَ وَالشُّهَدَاءِ ‘যে ব্যক্তি এমন আমলের উপর মারা যাবে, সে ছিদ্দীক্ব ও শহীদগণের সাথে অবস্থান করবে’।[12]

(৬) ছালাত হচ্ছে নূর : ছালাত হলো নূর। যে নূর দিয়ে মুমিন ব্যক্তি হাশরের মাঠের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা পাবে। আবূ মালেক আল আশআরী রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘পবিত্রতা হলো ঈমানের অর্ধেক। ‘আল-হামদুলিল্লাহ’ মানুষের আমলের পাল্লাকে পরিপূর্ণ করে দিবে এবং ‘সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদুলিল্লাহ’ আকাশমণ্ডলী ও যমীনের মাঝে ছওয়াবে পরিপূর্ণ করে দেয়, ছালাত হলো নূর বা আলো। দান-খয়রাত হলো (দানকারীর পক্ষে) দলীল। ছবর বা ধৈর্য হলো জ্যোতি। কুরআন হলো তোমার পক্ষে অথবা বিপক্ষে দলীল। প্রত্যেক মানুষ ভোরে ঘুম হতে উঠে নিজের আত্মাকে বিক্রয় করে; হয় তাকে সে আজাদ করে অথবা ধ্বংস করে’।[13] অন্য হাদীছে এসেছে, বুরায়দা রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,بَشِّرْ الْمَشَّائِينَ فِي الظُّلَمِ إِلَى الْمَسَاجِدِ بِالنُّورِ التَّامِّ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ‘ক্বিয়ামতের দিনের পূর্ণ জ্যোতির সুসংবাদ দিন তাদেরকে, যারা অন্ধকারে মসজিদে হেঁটে যায়’।[14]

(গ) ছালাত পরিত্যাগের ভায়াবহতা :

(১) ছালাত পরিত্যাগ করা জাহান্নামে যাওয়ার কারণ : মহান আল্লাহ বলেন, يَتَسَاءَلُونَ-عَنِ الْمُجْرِمِينَ-مَا سَلَكَكُمْ فِي سَقَرَ-قَالُوا لَمْ نَكُ مِنَ الْمُصَلِّينَ ‘তারা পরস্পরে জিজ্ঞাসাবাদ করবে অপরাধীদের সম্পর্কে, তোমাদেরকে কীসে জাহান্নামে নিয়ে এসেছে? তারা বলবে, আমরা ছালাত আদায়কারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম না’ (মুদ্দাছ্ছি,৭৪/৪০-৪)। আল্লাহ আরো বলেন,فَوَيْلٌ لِلْمُصَلِّينَ-الَّذِينَ هُمْ عَنْ صَلَاتِهِمْ سَاهُونَ-الَّذِينَ هُمْ يُرَاءُونَ ‘কাজেই দুর্ভোগ সে ছালাত আদায়কারীদের জন্য, যারা তাদের ছালাতের ব্যাপারে উদাসীন, যারা লোক দেখানোর জন্য তা করে’ (আল-মাঊন, ১০৭/৪-৬)। আল্লাহ অন্যত্র বলেন,فَخَلَفَ مِنْ بَعْدِهِمْ خَلْفٌ أَضَاعُوا الصَّلَاةَ وَاتَّبَعُوا الشَّهَوَاتِ فَسَوْفَ يَلْقَوْنَ غَيًّا ‘তাদের পরে আসলো এমন এক প্রজন্ম, যারা ছালাত বিনষ্ট করেছিল এবং কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করেছিল। সুতরাং শীঘ্রই তারা জাহান্নামের শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে’ (মারইয়াম, ১৯/৫৯)

(২) ছালাত পরিত্যাগকারীর হাশরের মাঠের ভয়াবহতা : আল্লাহ বলেন,يَوْمَ يُكْشَفُ عَنْ سَاقٍ وَيُدْعَوْنَ إِلَى السُّجُودِ فَلَا يَسْتَطِيعُونَ ‘সেদিন আল্লাহ তার পায়ের গোছা উন্মুক্ত করে দিবেন এবং তাদেরকে সিজদা করার আহ্বান জানানো হবে কিন্তু তারা সিজদা দিতে সক্ষম হবে না’ (আল-ক্বলম, ৬৮/৪২)। 

অন‍্যত্র আল্লাহ বলেন,وَمَنْ أَعْرَضَ عَنْ ذِكْرِي فَإِنَّ لَهُ مَعِيشَةً ضَنْكًا وَنَحْشُرُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَعْمَى ‘যে আমার স্মরণ থেকে বিমুখ হবে, অবশ্যই তার জীবন হবে সংকীর্ণ এবং আমি তাকে ক্বিয়ামতের দিন অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করব’ (ত্বো-হা, ২০/১২৪)

(৩) ছালাত পরিত্যাগকারী মুমিনদের বন্ধু ন: ছালাত পরিত্যগকারী মুসলিমদের ভাই হতে পারে না। আল্লাহ বলেন, فَإِنْ تَابُوا وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ وَآتَوُا الزَّكَاةَ فَإِخْوَانُكُمْ فِي الدِّينِ ‘অতঃপর তারা যদি তওবা করে, ছালাত পড়ে ও যাকাত দেয়, তাহলে তারা তোমাদের দ্বীনী ভাই’ (আত-তওবা, ৯/১১)

(৪) ছালাত পরিত্যাগকারীর উপর থেকে আল্লাহর যিম্মা উঠে যায় : ছালাত পরিত্যাগকারীর উপর থেকে আল্লাহর যিম্মা উঠে যায়। মুআয রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে ১০টি বিষয়ে উপদেশ দিয়েছেন। তন্মধ্যে একটি হলো, ইচ্ছাকৃতভাবে কখনও কোনো ফরয ছালাত ছেড়ে দিয়ো না। কারণ যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে ছালাত পরিত্যাগ করে, তার থেকে আল্লাহর যিম্মা উঠে যায়।[15]

(৫) ছালাত পরিত্যাগকারীদেক্বারূন, ফিরআউন, হামান ও উবাই ইবনু খালাফ-এর সাথে হাশর হবে : আব্দুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আছ রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন ছালাত সম্পর্কে আলোচনায় বললেন,مَنْ حَافَظَ عَلَيْهَا كَانَتْ لَه نُورًا وَبُرْهَانًا وَنَجَاةً يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَمَنْ لَمْ يُحَافِظْ عَلَيْهَا لَمْ يَكُنْ لَه نُورٌ وَلَا بُرْهَانٌ وَلَا نَجَاةٌ وَكَانَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَعَ قَارُونَ وَفِرْعَوْنَ وَهَامَانَ وَأُبَيِّ بْنِ خَلَفٍ ‘যে ব্যক্তি ছালাতের হেফাযত করবে, তা ক্বিয়ামতের দিন তার জন্য জ্যোতি, দলীল ও মুক্তির উপায় হবে। আর যে ব্যক্তি ছালাতের হেফাযত করবে না, তার জন্য এটা জ্যোতি, দলীল ও মুক্তির কারণ হবে না। ক্বিয়ামতের দিন সে ক্বারূন, ফিরআউন, হামান ও উবাই ইবনু খালাফ-এর সাথে থাকবে’।[16]

(ঘ) ছালাত পরিত্যাগকারীর হুকুম :

যারা ছালাত আদায় করে না, তাদের ব্যাপারে ইসলামে ভয়াবহ বক্তব্য এসেছে। জাবের রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, بَيْنَ الْعَبْدِ وَبَيْنَ الْكُفْرِ تَرْكُ الصَّلَاةِ ‘(মুমিন) বান্দা ও কুফরীর মধ্যে পার্থক্য হলো ছালাত পরিত্যাগ করা’।[17] বুরায়দা রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,الْعَهْدُ الَّذِي بَيْنَنَا وَبَيْنَهُمْ الصَّلَاةُ فَمَنْ تَرَكَهَا فَقَدْ كَفَرَ ‘আমাদের ও তাদের (মুনাফেক্বদের) মধ্যে যে প্রতিশ্রুতি রয়েছে, তা হলো ছালাত। অতএব, যে ছালাত পরিত্যাগ করল, সে কুফরী করল’।[18] আব্দুল্লাহ ইবনু শাক্বীক্ব রাহিমাহুল্লাহ বলেন, ‘নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ছাহাবীগণ ছালাত ছাড়া অন্য কোনো আমল পরিত্যাগ করাকে কুফরী বলে মনে করতেন না’।[19]

পরিশেষে বলব, আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে যেন ছালাতের ব্যাপারে যত্নবান হওয়ার তাওফীক্ব দান করেন এবং সাথে সাথে ছালাত আদায়ের মাধ্যমে আমাদেরকে জান্নাতে দাখিল করে নেন- আমীন

মো. দেলোয়ার হোসেন

অধ্যয়নরত, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।


[1]. ছহীহ বুখারী, হা/৮; ছহীহ মুসলিম, হা/১৬; মিশকাত, হা/৪।

[2]. তিরমিযী, হা/৪১৩, হাদীছ ছহীহ; মিশকাত, হা/১৩৩০।

[3]. ইবনু মাজাহ, হা/২৬৯৮, হাদীছ ছহীহ; আবূ দাঊদ, হা/৫১৫৬।

[4]. আবূ দাঊদ, হা/৪৯৫, হাসান; মিশকাত, হা/৫৭২।

[5]. তিরমিযী, হা/৬১৬, হাদীছ ছহীহ; মিশকাত, হা/৫৭১।

[6]. ছহীহ বুখারী, হা/৫২৮; ছহীহ মুসলিম, হা/৬৬৭; মিশকাত, হা/৫৬৫।

[7]. ছহীহ বুখারী, হা/৫২৬; ছহীহ মুসলিম, হা/২৭৬৩; মিশকাত, হা/৫৬৬।

[8]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৩৩; মিশকাত, হা/৫৬৪।

[9]. আহমাদ, হা/২১৫৯৬, হাসান; মিশকাত, হা/৫৭৬।

[10]. তিরমিযী, হা/২১৩, হাদীছ ছহীহ।

[11]. আহমাদ, হা/৯৭৭৭, হাদীছ ছহীহ; মিশকাত, হা/১২৩৭।

[12]. ছহীহ ইবনু খুযায়মা, হা/২২১২; ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৩৪৩৮।

[13]. ছহীহ মুসলিম, হা/২২৩; মিশকাত, হা/২৮১।

[14]. আবূ দাঊদ, হা/৫৬১; ছহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারগীব, হা/৩১৫, ৪২৫।

[15]. আহমাদ, হা/২১৫৭০, হাসান; মিশকাত, হা/৬১।

[16]. আহমাদ, হা/৬৫৭৬, হাসান; মিশকাত, হা/৫৭৮।

[17]. ছহীহ মুসলিম, হা/৮২; তিরমিযী, হা/২৬২০; আবূ দাঊদ, হা/৪৬৭৮; ইবনু মাজাহ, হা/১০৭৮; নাসাঈ, হা/৪৬৪; মিশকাত, হা/৫৬৯।

[18]. তিরমিযী, হা/২৬২১, হাদীছ ছহীহ; ইবনু মাজাহ, হা/১০৭৯; নাসাঈ, হা/৪৬৩; মিশকাত, হা/৫৭৪।

[19]. তিরমিযী, হা/২৬২২, হাদীছ ছহীহ; মিশকাত, হা/৫৭৯।

Magazine