কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

ইসলামবিদ্বেষীদের একাল-সেকাল

post title will place here

সুধীজন মাত্রই জানেন যে, ইসলামবিদ্বেষীদের আস্ফালন শুধু যে আজকের যুগে মুক্তমনা মানুষের এমনটি না; বরং ইতিহাসের কালো পাতায় ইসলামবিদ্বেষীদের একটি অধ্যায় খুব মোটা দাগে লিখিত আছে। বক্ষ্যমাণ প্রবন্ধে আমরা ইসলামবিদ্বেষীদের একাল-সেকাল নিয়ে আলোচনা করার প্রয়াস পাব ইনশা-আল্লাহ। সেই সাথে তুলনামূলকভাবে আলোচনা করব আজকের যুগের ইসলামবিদ্বেষীদের অবস্থান এবং সে যুগের আবূ জাহল, উতবা, উমাইয়া প্রমুখ নেতৃস্থানীয় ইসলামবিদ্বেষীদের অবস্থান।

প্রথমত, আমরা ইসলামবিদ্বেষীদের শ্রেণিবিন্যাস মোটামুটি এভাবে করতে পারি— ১. কাফের (ইয়াহূদী-খ্রিষ্টান), ২. মুশরিক, ৩. মুরতাদ ও ৪. নাস্তিক।

যুগে যুগে ইসলামবিদ্বেষীরা ইসলামের উপর ও নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর কালিমা লেপন করার হীন প্রচেষ্টা চালিয়েছে। কখনো জনসমক্ষে, কখনো নির্জনে, কখনো মজলিসে, কখনো-বা বাজার-ঘাটে বিভিন্ন রকম অশালীন বাক্য ও নাম ব্যবহার করে মানুষজনকে ইসলাম ও নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে দূরে রাখার মতো নগ্ন প্রচেষ্টা তারা চালায়। কুরআন মাজীদে এ তথ্য অনুসন্ধান করলে আমাদের সামনে বিষয়টি স্পষ্ট হবে। তারা রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নামে বিভিন্ন মিথ্যা অপবাদ আরোপ করে। পাঠক মহলের জ্ঞাতার্থে নিম্নে তার কিছু নমুনা পেশ করা হলো। তারা রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে পাগল, কবি, জাদুকর, মিথ্যাবাদী, জাদুতে আক্রান্ত, পথভ্রষ্ট, মিথ্যা রচনাকারী, কল্পকাহিনি বর্ণনাকারী ইত্যাদি অভিধায় আখ্যায়িত করে।

আজকের যুগে ইসলামবিদ্বেষীদের অবস্থান:

আজকের এই জ্ঞান-বিজ্ঞানের যুগে মানুষ ছুটছে উন্নতির উচ্চ শিখরে আরোহণ করার জন্য। তারা ছুটে চলছে পাগলা ঘোড়ার মতো। আধুনিকতার উৎকর্ষে সবকিছুর পরিবর্তন যেন খুব দ্রুত গতিতে ত্বরান্বিত হচ্ছে। ফলে মানুষের মাঝেও পরিবর্তন পরিলক্ষিত হচ্ছে। মানুষ প্রযুক্তির গোলকধাঁধায় পড়ে প্রযুক্তিনির্ভর হয়েছে এবং প্রযুক্তির কল্যাণে কীভাবে নিজেকে বিখ্যাত করা যায়, সেজন্য ধর্মের উপর আক্রোশমূলক কথা বলতে মোটেও কুণ্ঠাবোধ করে না। যার ফলশ্রুতিতে আজকের যুগে পশ্চিমা সংস্কৃতির সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্রের শিকার হচ্ছে মুসলিম তরুণ সমাজ। তাদের জীবনাচার হাতছাড়া হচ্ছে ইসলামের মৌলিক শিক্ষা থেকে। ধর্মের জয়গান, ধর্মের কথা, ধর্মের নীতি-নৈতিকতার কথা ভুলে গিয়ে অধঃপতনের অতল গহ্বরে হাবুডুবু খাচ্ছে আজকের যুগের অবুঝ উঠতি বয়সের তরুণ সমাজ। দূর অতীতের দিকে তাকানোর প্রয়োজন নেই, নিকট অতীতের দিকে তাকালেই আমাদের কাছে বিষয়টি পরিষ্কার হবে যে ইসলাম সম্পর্কে অবমাননা, নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে অবমাননাকারীদের প্রবণতা কীভাবে বাড়ছে। এদের মধ্যে দাউদ হায়দার, রাজিব হায়দার, আসিফ মহিউদ্দিন, কবি শামসুর রহমান আজাদ, ড. কবীর চৌধুরী প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য।

দেশে দেশে ইসলামবিদ্বেষীদের অপতৎপরতা:

এ কথা চিরন্তন সত্য যে, ইসলামের বিজয় অবশ্যম্ভাবী। প্রদীপ্ত সূর্যের আলোকে যেমন চামচিকা মুখের ফুৎকারে নিভিয়ে দিতে পারে না, তেমনি ইসলামবিদ্বেষীরাও ইসলামের অগ্রযাত্রাকে কখনো রুখতে পারবে না। তবুও ইসলামবিদ্বেষীরা ইসলামের অগ্রযাত্রাকে স্তব্ধ করার জন্য জোরালো প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সাময়িকভাবে এই অগ্রযাত্রা স্তিমিত হতে পারে বলে কাফের, মুশরিক, নাস্তিকরা খুশিতে বাগবাগ হয়। কিন্তু তারা এটা হয়তো জানে না যে, এই ক্রাইসিস তো সাময়িক সময়ের জন্য; চূড়ান্ত পর্যায়ের তো নয়। যার কারণে তারা দেশে দেশে ইসলামের বিরুদ্ধে বিভিন্ন বিস্ফোরক অপপ্রচার চালাচ্ছে। ফলে মুসলিম দেশ হোক অথবা অমুসলিম দেশ হোক তাদের সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে ইসলামের বিধিবিধানের ব্যাপারে অনৈসলামিক কর্মপদ্ধতি গ্রহণ করছে। যেমন তুরস্ক ১৯২৪ সালে কামাল পাশার নেতৃত্বে উছমানী সালতানাতের বিপর্যয় ঘটায়। ফলে সে ইয়াহূদী-খ্রিষ্টানদের ষড়যন্ত্রের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে ইসলামী খেলাফতকে নির্বাসনে পাঠায়। এমনকি সে তুরস্কে বোরকা, কুরআন নিষিদ্ধ ঘোষণা করে এবং আযানের আরবী বাক্য পরিবর্তন করে তুর্কি ভাষায় আযান চালু করে। বেশ কয়েক বছর আগে কলকাতায় আযান নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয় শব্দদূষণের অজুহাতে। শুধু তাই নয়, ইসরাঈল ২০১৭ সালে আযান নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। পর্দা বিধানের ক্ষেত্রে সুইজারল্যান্ড বোরকা নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এমনিভাবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ইসলামবিদ্বেষীরা ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান করছে।

ইসলামবিদ্বেষীদের বিরুদ্ধে আলেমসমাজ:

ইতিহাসের পাতায় ইসলামবিদ্বেষীদের বিরুদ্ধে ভূমিকায় চিরভাস্বর হয়ে আছে আলেমসমাজের নাম। যারা এই দ্বীনের হেফাযতের জন্য, ইসলামের সুমহান মর্যাদাকে সমুন্নত করার জন্য বিদ্বেষীদের সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্রের বেড়াজাল থেকে আমজনতাকে মুক্ত রাখার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছেন। কখনো মাঠে ময়দানে অগ্নিঝরা বক্তব্য দিয়ে সতর্ক করেছেন আর কখনো ক্ষুরধার লেখনীর মাধ্যমে ইসলামবিদ্বেষী ও নাস্তিক্যবাদের বিরুদ্ধে জাতিকে সতর্ক করেছেন। ফলে ইসলামবিদ্বেষীরা তাদের মিশনে আশানুরূপ সফল হতে পারেনি কেবল হক্বের অতন্দ্রপ্রহরী, বাতিলের আতঙ্ক আলেমসমাজের কারণে। যে যুগেই তারা ষড়যন্ত্র করেছে, তাদের ষড়যন্ত্র ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। আমরা দূর অতীতে লক্ষ্য করলে দেখতে পাব আমাদের পূর্বসূরিরা ইসলামবিদ্বেষ ও নাস্তিক্যবাদের বিরুদ্ধে কী করেছেন এবং তাদের সাথে বাহাছ-মুনাযারা করে কীভাবে বিজয়ীর ভূমিকা পালন করেছেন। যেমন—

(১) ইমাম আবূ হানীফা (৮০-১৫০ হি.) রাহিমাহুল্লাহ-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল মহান আল্লাহর অস্তিত্বের ব্যাপারে। তিনি জবাবে বলেন, একটি জাহাজে মানুষের প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী বোঝাই; তার মাঝি নেই, মাল্লা নেই, জাহাজে নেই কোনো জনপ্রাণী। সে জাহাজ সমুদ্রের উত্তাল তরঙ্গমালার সঙ্গে যুদ্ধ করে সামনের দিকে নির্দ্বিধায় এগিয়ে যাচ্ছে। অথচ আশ্চর্যের ব্যাপার হলো জাহাজটি নিজে নিজেই বন্দরে ভিড়ল। জাহাজে যা পণ্যসামগ্রী ছিল তা বন্দরে রাখল এবং অন্যান্য পণ্যদ্রব্য জাহাজের মধ্যে তুলে আরেক বন্দরের উদ্দেশ্যে যাত্রা আরম্ভ করল। ইমাম আবূ হানীফা রাহিমাহুল্লাহ-এর এ রকম অবিশ্বাস্য কথা শুনে উপস্থিত মানুষ তো সেদিন অবাক হয়েছেই, আজকে যারা শুনবে তারাও অবাক না হয়ে পারবে না। তারাও বলবে, নেই কোনো নাবিক, না আছে শ্রমিক আর না আছে মাঝি; অথচ জাহাজ চলবে গন্তব্যে? না, এটা কীভাবে সম্ভব হতে পারে? বিচক্ষণ মহামতি ইমাম বললেন, তোমরা যদি এটা মানতে না পার; তাহলে এই পৃথিবীর কোটি কোটি জীব, কীটপতঙ্গ, জড়-অজড় পদার্থ ছাড়াও সকল কিছুর সুন্দর ও সুচারুরূপে সার্বিক ব্যবস্থা করে দিচ্ছে কোন সেই সত্তা? যদি চালকবিহীন জাহাজ না চলে; তাহলে চালকবিহীন পৃথিবী, গ্রহ, নক্ষত্র ইত্যাদি চলে কীভাবে? এগুলোর‌ও তো একজন ক্ষমতাবান সৃষ্টিকর্তা আছে আর তিনি হলেন মহান প্রতিপালক আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা।[1]

(২) ইমাম শাফেঈ (১৫০-২০৪ হি.) রাহিমাহুল্লাহ-এর নিকট একদিন একদল লোক এসে প্রশ্ন করল, হে ইমাম শাফেঈ! আপনি আমাদের প্রমাণ দিন যে আল্লাহ আছেন। ইমাম শাফেঈ রাহিমাহুল্লাহ চিন্তা করলেন যে, এদের কুরআন-হাদীছ থেকে প্রমাণ দিলে তো এরা মানবে না; বরং এদের যৌক্তিক প্রমাণ (Logical ‍Answer) দেই। এজন্য তিনি তাদেরকে বললেন, আল্লাহর প্রমাণ হলো তুঁত গাছের পাতা। তারা বলল, সেটা কীভাবে সম্ভব? এই সামান্য গাছের পাতা দিয়ে কীভাবে আল্লাহর প্রমাণ নিরূপণ হয়? তখন ইমাম বিচক্ষণতার সাথে জবাব দিলেন, শোনো! তুঁত গাছের পাতার স্বাদ ও রস এক; কিন্তু সেই পাতা যদি রেশম পোকা খায়, তাহলে তার থেকে বের হয় রেশম। যদি মৌমাছি খায়, তাহলে বের হয় মধু আর যদি হরিণ খায়, তাহলে বের হয় মিশকে আম্বর। একটি গাছের পাতার স্বাদ ও রস এক হওয়ার পরেও তা থেকে বিভিন্ন উপাদান বের হচ্ছে, এটা দ্বারা কি প্রমাণ হয় না যে, একজন স্রষ্টার পক্ষে এটা সম্ভব? আর তিনিই তো আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা।[2]

(৩) ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বাল (১৬৪-২৪১ হি.) রাহিমাহুল্লাহ-কে যখন আল্লাহর অস্তিত্বের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, একটি দরজা-জানালাহীন ঘর; যে ঘরের চারদিক আবদ্ধ, ভিতর থেকে কেউ বাহিরে আসতে পারে না আর বাহির থেকে কেউ ভিতরে প্রবেশ করতে পারে না। হঠাৎ দেখা গেল ঘরটির একপাশে ফাটল ধরেছে আর সেই ফাটল থেকে এক সদ্য জীবন লাভ করা প্রাণীর আগমন ঘটল। ‌ইমাম আহমাদের এ কথা শুনে মানুষ তো বিস্মিত। মনে হয় যেন তারা আকাশ থেকে যমিনে পড়ল। ইমাম সাহেব তাদের এই অবাক চাহনি দেখে বললেন, একটি ডিম থেকে বাচ্চা বের হয় সেক্ষেত্রে অবাক হতে হয় না?[3]

অমুসলিম মনীষীদের দৃষ্টিতে মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম:

আল্লাহ তাআলা মানবজাতির হেদায়াতের জন্য যত নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন, তার মধ্যে পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসূল হলেন মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। শুধু এই শ্রেষ্ঠত্বের খেতাব ইসলাম দিয়েছে এমনটি নয়; বরং পৃথিবীর প্রায় সকলেই এই শ্রেষ্ঠত্বের কথা নিরপেক্ষ বিবেচনায় স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে। তারা বলেছে, মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হলেন শ্রেষ্ঠ নবী, রাসূল ও পৃথিবীর সফল ব্যক্তিত্ব। তাঁর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের সমাহার।

এ পর্যন্ত যে বা যারাই নিরপেক্ষভাবে ইসলাম ও মুসলিম বিষয়ে গবেষণা করতে এসেছে, প্রায় সকলেই অকপটে ইসলামের আদর্শ ও মহানুভবতা এবং নবী মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রশংসা করতে মোটেও কার্পণ্য করেনি। তন্মধ্যে পাঠক মহলের জ্ঞাতার্থে উল্লেখযোগ্য কিছু উক্তি পেশ করা হলো—

(১) Edward Gibbon বলেন, The greatest success of Mohammad's life was effected by sheer moral force without the stroke of a sword. অর্থাৎ ‘মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জীবনের বৃহৎ সাফল্য অর্জিত হয়েছিল এক নির্ভেজাল নৈতিক শক্তির প্রভাবে; তরবারীর আঘাতে নয়’।[4]

(২) Dr Gustav weil বলেন, Muhammad was shining example to his people. His character was pure and stainless. His house his dress his food they were characterized by a rail simplicity. অর্থাৎ ‘মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জনগণের কাছে ছিলেন একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্তস্বরূপ। তার চরিত্র ছিল বিশুদ্ধ ও কালিমামুক্ত। তার আবাস তার পোশাক-আশাক তার খাবারদাবার ইত্যাদির বৈশিষ্ট্য অপূর্ব ও সাধারণ’।[5]

(৩) মাইকেল এইচ হার্ট বলেন, My choice of Muhammad to lead the list of the world's most influential persons may surprise some readers and may be questioned by others, but he was the only man in history who wasp supremely successful on both the religious and secular levels. অর্থাৎ ‘বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গের তালিকায় শীর্ষে মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আমার চয়ন করায় অনেক পাঠক বিস্মিত হতে পারেন এবং কারো কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে; কিন্তু এটাই সত্য যে, তিনি মানব ইতিহাসের একমাত্র ব্যক্তি, যিনি ধর্মীয় ও ইহজাগতিক উভয় ক্ষেত্রেই সর্বাধিক সফল’।[6]

(৪) মি. গান্ধী বলেন, ‘আমি জানতে চেয়েছিলাম সর্বাধিক উত্তম এমন কারো জীবনী সম্পর্কে যিনি লক্ষ লক্ষ মানুষের অন্তরজুড়ে অবিসংবাদিত প্রভাব বিস্তার করে আছেন। আমি যখন তাঁর জীবনীর দ্বিতীয় খণ্ডটি পড়ে শেষ করলাম, তখন আমার আফসোস হচ্ছিল এজন্য যে, এ মহান জীবনে আরও কিছু করা বাকি রয়ে গেল’।[7]

পরিশেষে বলতে চাই, ইসলামবিদ্বেষ বলতে ইসলাম এবং মুসলিমদের প্রতি ভয়, ঘৃণা বা বৈষম্যমূলক মনোভাবকে বুঝায়। এটি বর্তমানে বিভিন্নভাবে প্রকাশ পাচ্ছে, যেমন- মুসলিমদের প্রতি শত্রুতা, তাদের নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অবমাননা, ধর্মীয় প্রতীকের অবমাননা অথবা তাদের বিরুদ্ধে সামাজিক ও রাজনৈতিক বৈষম্য। ইসলামবিদ্বেষ সাধারণত ইসলাম সম্পর্কে ভুল ধারণা, নেতিবাচক প্রচারণা এবং মুসলিমদের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট ধারণা থেকে উদ্ভূত হয়।

এই বিদ্বেষের শেকড় প্রাচীন হলেও সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন বিশ্বব্যাপী ঘটনাবলি যেমন, সন্ত্রাসবাদ বা মুসলিমপ্রধান দেশগুলোর সঙ্গে সাম্প্রতিক সংঘর্ষ এর প্রকোপকে বাড়িয়ে তুলেছে। ইসলামবিদ্বেষের ফলে মুসলিমরা শিক্ষা, কর্মসংস্থান, ও সামাজিক জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হচ্ছে বিশ্বব্যাপী, যা তাদেরকে একঘরে এবং অসহায় অবস্থায় ফেলে দিয়েছে।

ইসলামবিদ্বেষ প্রতিরোধে তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব, আন্তঃধর্মীয় সাংস্কৃতিক সংলাপ, ইসলাম সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং ধর্মীয় বৈষম্যের বিরুদ্ধে আইনগত ও নীতিগত পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে সমাধান করা যেতে পারে। কারণ ইসলাম একটি কালজয়ী আদর্শ ও জীবনবিধান। সকলের সফলতা, মুক্তির রাজপথে হাতছানি দেওয়ার জন্য ইসলাম ও নবী মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আগমন। আল্লাহ আমাদের পদযুগলকে অটুট রাখুক- আমীন!

দাওরায়ে হাদীছ, মাদরাসা দারুস সুন্নাহ, মিরপুর, ঢাকা; শিক্ষক, হোসেনপুর দারুল হুদা সালাফিয়্যাহ মাদরাসা, খানসামা, দিনাজপুর।


[1]. প্রফেসর এ এইচ এম শামসুর রহমান, সৃষ্টির বৈচিত্র্যে মহান স্রষ্টা, পৃ. ৪১।

[2]. সৃষ্টির বৈচিত্র্যে মহান স্রষ্টা, পৃ. ৪২।

[3]. প্রাগুক্ত।

[4]. History of the Saracen Empire, London, 1870.

[5]. story of the Islamic peoples.

[6]. The 100, A Ranking of the most influential person's in history.

[7]. https://www.goodreads.com/quotes/936395-i-wanted-to-know-the-best-of-the-life-of

Magazine