নিশ্চয়ই জেনে রাখো! দুনিয়ার মায়ায় মত্ত ব্যক্তি, দুনিয়ার ধোঁকার অধোগামী ব্যক্তি, দুনিয়ার কামনা-বাসনার প্রতি আসক্ত ব্যক্তি তার অন্তরকে মৃত্যু থেকে গাফেল করে রাখে। মৃত্যুকে স্মরণ করার কোনো উপায় নেই তার; তাই সে স্মরণও করে না। তার নিকট মৃত্যুর কথা উপস্থাপন করা হলে সে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং পালিয়ে বেড়ায়। তবে আমাদের চেয়ে বহুগুণ উত্তম ইসলামী মনীষীগণ, যারা ঈমান-আমলে ছিলেন আমাদের থেকে বহু অগ্রগামী। তবুও তারা ছিলেন মৃত্যুর ভয়ে সর্বদা শঙ্কিত।
প্রিয় পাঠক! একটু জেনে নিই সে সকল মনীষী মৃত্যুটাকে কেমন মনে করতেন।
১. ওমর ইবনে আব্দুল আযীয রহিমাহুল্লাহ তার সহপাঠীকে লক্ষ্য করে বলেন, তুমি মৃত্যুকে স্মরণ করো বেশি বেশি। যদি তুমি দুনিয়ায় স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবনযাপনকারী হও, তবে মৃত্যুকালটা তোমার জন্য হবে খুবই সংকীর্ণ। আর যদি তুমি নীরস জীবনযাপনকারী হও, তবে তোমার মৃত্যুকালটা হবে স্বাচ্ছন্দ্যময়।
২. ওমর ইবনে আব্দুল আযীয রহিমাহুল্লাহ প্রতি রাতে ফক্বীহদেরকে একত্রিত করতেন, অতঃপর তারা মৃত্যু, ক্বিয়ামত এবং আখিরাতের কথা স্মরণ করতেন। আর তারা এমনভাবে ক্রন্দন করতেন, যেন তাদের সামনে কোনো জানাযা/লাশ উপস্থিত।
৩. রবী‘ ইবনে খায়ছাম রহিমাহুল্লাহ বলেন, মৃত্যুর চেয়ে কল্যাণকর অদৃশ্য বিষয় আর কী হতে পারে, যার অপেক্ষা মুমিনগণ করেন।
৪. রবী‘ ইবনে খায়ছাম রহিমাহুল্লাহ তার ঘরে একটি কবর খুঁড়েছিলেন। আর অধিকাংশ সময় তিনি তাতেই ঘুমাতেন ও মৃত্যুর কথা স্মরণ করতেন এবং বলতেন, যদি আমার অন্তর থেকে এক মুহূর্তের জন্যও মৃত্যুর ভয় দূর হয়ে যায়, তাহলে আমার অন্তর নষ্ট হয়ে যাবে।
৫. কা‘ব রহিমাহুল্লাহ বলেন, যে ব্যক্তি মৃত্যু কী জিনিস তা বুঝতে পারে, তার উপর দুনিয়ার বালা-মুছীবত ও দুশ্চিন্তা সহজ হয়ে যায়।
৬. ইবরাহীম তায়মী রহিমাহুল্লাহ বলেন, দু’টি জিনিস আমার থেকে দুনিয়ার স্বাদ নিঃশেষ করে দিয়েছে- (ক) মৃত্যুর স্মরণ এবং (খ) মহান প্রতিপালকের সম্মুখে দণ্ডায়মান হওয়া।
৭. মুতাররিফ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে শিখ্খীর রহিমাহুল্লাহ বলেন, নিশ্চই এই মৃত্যু ভোগ-বিলাসীদের বিলাসিতাকে বন্ধ করে দেয়। কাজেই তোমরা এমন নিয়ামত/ভোগ-বিলাস অনুসন্ধান করো, যাতে কোনো মরণ নেই।
৮. কতক বিদ্বান তাদের ভাইদের নিকটে এ বলে চিঠি লেখেন যে, হে ভাই! তুমি তোমার এই ঘরে মৃত্যু থেকে সতর্কতা অবলম্বন করো এমন এক ঘরে স্থানান্তরিত হবার পূর্বে, যেখানে তুমি মৃত্যু কামনা করবে কিন্তু তুমি তা পাবে না।
প্রিয় মুসলিম ভাই ও বোনেরা! ধোঁকার দুনিয়া ছেড়ে পরকালমুখী হোন! আজই পাপের তওবা করে নিন! হতে পারে এমন এক সময় আসবে, তওবা করারও সুযোগ থাকবে না। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর একটি হাদীছ স্মরণ করেই শেষ করছি, একদা রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইবনু ওমর রযিয়াল্লাহু আনহু-কে বললেন, তুমি যখন সকাল করবে, তখন সন্ধ্যার আশা করবে না। আর যখন সন্ধ্যা করবে, তখন সকালের আশা করবে না। আর মৃত্যুর পূর্বেই তোমার জীবনকে কাজে লাগাও। কাজে লাগাও অসুস্থতার পূর্বে সুস্থতাকে। কেননা হে আল্লাহর বান্দা! তুমি জানো না আগামীকাল তোমার কী নাম হবে! (মানুষ না লাশ)।
অধ্যয়নরত, মাদরাসা দারুল হাদীস সালাফিইয়াহ, পাঁচরুখী, নারায়ণগঞ্জ।
[1]. ইহ্ইয়া উলূমিদ দ্বীন, ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ৪৭৭-৪৭৯।