কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ কারা?

post title will place here

সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য এবং তিনি আমাদের জন্য যথেষ্ট। রহমত ও শান্তি বর্ষিত হোক নির্বাচিত নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর এবং তাঁর সঙ্গী ও তাদের অনুসারীদের উপর।

দুনিয়া-আখেরাতের মুক্তি ও সফলতা নির্ভর করে হক্বের অনুসরণ ও আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহর পথে চলার উপর— এটা সবার জানা কথা। বর্তমান সময়ে প্রত্যেক আক্বীদার লোকেদের মাঝে নিজেদেরকে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ দাবি করার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে এবং অনেক মানুষ এ উপাধিতে ভূষিত হওয়ার জন্য উঠে-পড়ে লেগেছে। তারা বলে থাকে যে, তারাই মূলত এই উপাধির হক্বদার। পরবর্তীতে বহুকাল যাবৎ তাদের থেকে অন্যরা এ উপাধি ছিনিয়ে নিয়েছে। সুতরাং এ মূল্যবান উপাধির পরিভাষাটি কিছু বৈশিষ্ট্য এবং এর সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের কিছু বৈশিষ্ট্য মানুষের নিকট স্পষ্ট করা বিজ্ঞ আলেমদের উপর আবশ্যক হয়ে পড়েছে।

তাই, এ পুস্তিকায় আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের এমন কিছু নির্ণায়ক বৈশিষ্ট্য এবং নিদর্শন আলোচনা করা হবে যার মাধ্যমে মুসলিমরা প্রকৃত আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ পরিচয় জানতে পারবে। এর ফলশ্রুতিতে মুসলিমগণ তাদের পথে চলা সহজ হবে এবং সকল ক্ষেত্রে তাদের মানহাজ (পথ ও পদ্ধতি)-কে আঁকড়ে ধরে তাদের অন্তর্ভুক্ত হতে পারবে। এই পুস্তিকার উদ্দেশ্য অন্যান্য আক্বীদা বিষয়ক লিখিত বইয়ের ন্যায় শুধু আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের আক্বীদা বর্ণনা করা নয়। বরং এ পুস্তিকার উদ্দেশ্য হলো— আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ ও অন্যান্য বাতিল ফেরক্বাগুলোর মাঝে পার্থক্যসমূহ এবং তাদের থেকে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহকে পৃথককারী বৈশিষ্টগুলো বর্ণনা করা।

আস-সুন্নাহ দ্বারা উদ্দেশ্য : রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে ইলম, আমল, আক্বীদা, চরিত্র ও পথের উপর ছিলেন তাকে সুন্নাহ বলা হয়। অর্থাৎ রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা কিছু আমাদের নিকট নিয়ে এসেছেন তার সবই সুন্নাহ।

আল-জামাআহ দ্বারা উদ্দেশ্য : তারা রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম–এর ছাহাবী এবং পরবর্তীতে যারা ন্যায়নিষ্ঠার সহিত তাদের মানহাজ ও পথের অনুসারী।

আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ যারা তারা রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম–এর অবস্থা এবং সুন্নাহ সম্পর্কে জানার প্রতি বেশি আগ্রহী হয়ে থাকেন। তারাই ছাহাবীগণের মানহাজের সাথে মিল রাখার প্রতি বেশি গুরুত্ব দেন। শুধু আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ নামে প্রসিদ্ধতা অর্জন করা, সে নাম রেখে দেওয়া বা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহর মানহাজের অনুসারী দাবি করা অথবা নিজের দলের নাম— সালাফী, আহলুল হাদীছ কিংবা আহলুল আছার রাখলেই আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহর অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে বিষয়টি এমন নয়। বরং আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহতের মানহাজকে শক্তভাবে আঁকড়ে ধরে তার উরপ চলার নাম প্রকৃত আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ।

এটা একটা দাবি মাত্র যা সবাই করে থাকে। কিন্তু এ দাবি কারো ক্ষেত্রে ততক্ষণ পর্যন্ত সঠিক ও সত্য হিসাবে স্বীকৃত হবে না যতক্ষণ না নিম্নে বর্ণিত বৈশিষ্ট্যসমূহ তার মাঝে পাওয়া যাবে। এ বৈশিষ্ট্যসমূহই মূলত এ উপাধির প্রকৃত অধিকারী ও নিছক দাবিদারদের মাঝে পার্থক্যকারী। আমি ঐ বৈশিষ্ট্যগুলো পৃথক পৃথকাকারে নিম্নে উল্লেখ করেছি, যাতে বিষয়গুলো বুঝতে, আয়ত্ত করতে এবং সামঞ্জস্য বিধান করতে সহজ হয় ইনশা-আল্লাহ তাআলা।

(১আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ : তাদের আক্বীদার মূল উৎস— আল্লাহর কিতাব, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাহ, সালাফদের পথ এবং কুরআন ও সুন্নাহর দলীল হতে তাদের বুঝ। তারা নিজের বিবেক, আধ্যাত্মিকতা (কাশফ), নিজের পছন্দ, স্বপ্ন ইত্যাদিকে নক্বল তথা কুরআন ও সুন্নাহর উপর প্রাধান্য দেন না। তারা কোনো শায়খ (পীর), ওলীর বক্তব্যকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা এবং রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম–এর বক্তব্যের উপর প্রাধান্য দেন না।

(২আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ : আক্বীদার ক্ষেত্রে তারা কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা দলের অনুসরণ করেন না। সুতরাং তারা নিজেদেরকে আশআরী, মাতুরিদী, জাহম, জা‘দ, যায়েদ, উবায়েদ প্রমুখ ব্যক্তি ও দলের অনুসারী মনে করেন না। বরং তারা নিজেদেরকে সুন্নাহ এবং ছাহাবীদের (সালাফদের) অনুসারী মনে করে থাকেন। অর্থাৎ রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম–এর বাণী مَا أَنَا عَلَيْهِ وَأَصْحَابِيْ ‘আমি এবং আমার ছাহাবীগণ যে পথের উপর রয়েছি’।

(৩আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ : তারা মানহাজ এবং আত্মশুদ্ধির ক্ষেত্রে কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা ত্বরীক্বার অনুসারী হিসাবে দাবি করেন না। সুতরাং তারা নিজেদেরকে আব্দুল ক্বাদের জিলানী, রিফাঈ, ক্বাদেরী, তিজানী প্রমুখের মুরীদ মনে করেন না। অনুরূপভাবে নক্বশাবন্দী, আলাবী, শাযেলী ইত্যাদি ত্বরীক্বার অনুসারী মনে করেন না। বরং তাদের অনুসরণ, আত্মশুদ্ধি ও আদর্শ গ্রহণের মূল উৎস হলেন, إنَّما بُعِثتُ لِأُتَمِّمَ صَالِحَ الْأَخْلَاقِ ‘সর্বোত্তম স্বভাব-চরিত্রের পূর্ণতা দান করার জন্যই আমি প্রেরিত হয়েছি’ এ কথার কথক (অর্থাৎ রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যার ব্যাপারে বর্ণিত হয়েছে كَانَ خُلقُهُ الْقُرآنُ ‘তার চরিত্র ছিল কুরআন’। দ্বীনের মৌলিক বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে তারা মুসলিম উম্মাহকে যেমনভাবে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ ব্যতীত অন্য কোনো নাম দ্বারা পৃথক করেন না তদ্রূপ আত্মশুদ্ধি ও মানহাজের ক্ষেত্রে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ ব্যতীত অন্য নামে বিশেষিত করেন না।

(৪আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ : তারা ভয়ভীতি ও একাগ্রতাসহ আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী আমল করে থাকেন। তারা নিজের বা অন্য কারো পক্ষ থেকে খেয়ালখুশিমতো কোনো ইবাদত আবিষ্কার করেন না। তারা হেলেদুলে, নেচে-গেয়ে, বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে কোনো ইবাদত করেন না।

(৫আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ : তারা দু‘আ, সাহায্য প্রার্থনা, প্রাণী যবেহ ও মান্নতসহ কোনো ইবাদত গায়রুল্লাহর নামে সম্পাদন করেন না। যেমনটি বর্তমান কিছু আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহর বিরোধী কিছু দল ও মতের লোকেরা করে থাকে।

(৬আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ : তারা মানুষকে কবর যিয়ারতের প্রতি উৎসাহ প্রদান করেন। কেননা, তা পরকালের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। কবরবাসীর প্রতি সালাম দেওয়া, তাদের জন্য দু‘আ করার প্রতিও উৎসাহ প্রদান করে, বরকত হাছিলের জন্য নয় ও আল্লাহকে বাদ দিয়ে কবরে শায়িত ব্যক্তির নিকট দু‘আ করা বা কিছু চাওয়ার উদ্দেশ্যে নয়, কবরের মাটি নিয়ে শরীরে মাখার জন্য নয়, কবরের চারপাশে তাওয়াফ করার জন্য নয় অথবা কবরে পশু যবেহর উদ্দেশ্যে নয়।

 (আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ : তারা আল্লাহর জন্য এমন সকল গুণাবলিকে সাব্যস্ত করে যা আল্লাহ স্বয়ং নিজের জন্য সাব্যস্ত করেছেন অথবা রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর জন্য সাব্যস্ত করেছেন। তবে এ ক্ষেত্রে তারা কোনো ধরনের তা‘তীল (আল্লাহর নাম ও গুণাবলিকে অস্বীকার করা) বা তা‘বীল (দলীলের প্রকাশ্যরূপ হতে ভিন্ন অর্থ গ্রহণ করা) করে না। অপর পক্ষে অন্যান্য আক্বীদায় বিশ্বাসীরা তার গুণাবলিকে পুরোপুরি অস্বীকার করে অথবা কতিপয় অংশকে স্বীকার করলেও বাকী অংশর ক্ষেত্রে তা‘বীল করে তাকে।

(আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ : তারা এই বিশ্বাস রাখে যে, কথা ও কাজের নাম ঈমান, যা কখনো বৃদ্ধি পায় আবার কখনো হ্রাস পায়। তারা অঙ্গপ্রত্যঙ্গের মাধ্যমে সংঘটিত কার্যাবলিকে ঈমানের সংজ্ঞা হতে বের করে দেন না যেমনটি মুরজিয়া আক্বীদায় বিশ্বাসীরা করে থাকে। অনুরূপভাবে কাবীরা বা সাধারণ কোনো গুনাহের কারণেও ক্বেবলার অনুসারীদের কাফের বলে ঘোষণা দেন না যেমনটি খারেজী আক্বীদায় বিশ্বাসীরা দিয়ে থাকেন।

(আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ : তারা কেবল তাদের বিরুদ্ধাচরণের কারণে ভিন্ন মতাবলম্বী কোনো সম্প্রদায়কে কাফের ঘোষণা দেন না। তবে, মূলত কুফরী মতবাদের উপর যারা প্রতিষ্ঠিত তাদেরকে কাফের বলে ঘোষণা দিয়ে থাকেন। যেমন: ইসমাঈলিয়্যা ও নাছেরিয়্যা সম্প্রদায়।

 (১০আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ : তারা সর্বদা নিজেদেরকে কাফের, মুশরিক, মুলহিদ ও মুরতাদ হওয়া হতে সম্পূর্ণভাবে মুক্ত রেখে তাদের বিরুদ্ধে শত্রুতা ও ঘৃণা পোষণ করে থাকেন। তবে তারা মুমিনদেরকে খুব ভালোবাসে ও তাদের সাথে বন্ধুত্ব রাখেন এবং তাদের ঈমান ও সৎ আমলের ক্ষেত্রে তাদেরকে সহযোগিতাও করে থাকেন।

(১১আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ : তারা রাসূলের ছাহাবীদের খুব ভালোবাসেন এবং এ ধারণা পোষণ করেন যে, তারা সকলেই ন্যায়পরায়ণ। সকল ছাহাবী ও নবীর পরিবারবর্গকে ভালোবাসার মাধ্যমেও তারা আল্লাহর নৈকট্য কামনা করে থাকেন। আর যারা নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পরিবারকে গালিগালাজ করে বা তার সম্মানের ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করে তাদের থেকে তারা বেঁচে থাকেন।

(১২আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ : তারা ফিক্বহের ক্ষেত্রে কুরআন-হাদীছ ও ইজমা দ্বারা যা প্রমাণিত তা গ্রহণ করেন। ছাহাবী, তাবেঈ ও তাবে তাবেঈদের কথাকেও মূল্যায়ন করেন এবং বড় বড় মুসলিম মনীষীদের কথা অনুসরণ করেন যেমন— আবূ হানীফা, ইমাম মালেক, ইমাম শাফেঈ, আহমাদ ইবনু হাম্বল রহিমাহুমুল্লাহ। এছাড়াও পরবর্তী সুন্নাহর অনুসারী আলেম ও ফক্বীহবৃন্দের অনুসরণ করে থাকেন। যারা মূলত সকল মানুষের কাছে উত্তম গুণে গুণান্বিত বলে বিবেচিত হয়েছিলেন।

(১৩আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ : শরীআতের (বিধিবিধানের) দায়িত্বপ্রাপ্ত হওয়ার দৃষ্টি সকল মুসলিম তাদের নিকট সমান। তাদের কাছে সাধারণ ও বিশেষ ব্যক্তির মাঝে তেমন কোনো পার্থক্য নেই। তাদের কাছে শরীআত ও হাক্বীক্বত বলতে কিছু নেই। বরং দ্বীন ও শরীআত এক রবের পক্ষ হতে অবতীর্ণকৃত একই জিনিস, যা তিনি সকল মানুষের জন্য নবী মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর অবতীর্ণ করেছেন।

(১৪আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ : তারা প্রত্যেকটি বিষয়ের ক্ষেত্রে মধ্যমপন্থা অবলম্বনকারী। যার ফলে বাড়াবাড়ি-অত্যাচার, সীমালঙ্ঘন, কঠোরতা ও সহজতা আরোপ করার ক্ষেত্রেও মাঝামাঝি পন্থায় অবস্থান গ্রহণ করেছে।

(১৫আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ : তারা সকল মানুষকে এক মতের অনুসারী করার মাধ্যমে একই দলে পরিচালনা করার জন্য সবচেয়ে বেশি আগ্রহী সম্প্রদায়। তাদের আক্বীদা হলো— জিহাদ প্রতিষ্ঠা করা, প্রত্যেক পুণ্যবান বা পাপী ব্যক্তির পিছনে জুম‘আ ও জামাআতের ছালাত আদায় করা, বিদআতী বা পাপী ব্যক্তির পিছনে ছালাত শুদ্ধ মনে করা, যারা ঐক্য হয়ে চলে তাদেরকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসা, যারা বিভেদ সৃষ্টি করে তাদেরকে ঘৃণা করা, যে নিজেকে তাদের সাথে সম্পৃক্ত করার পরেও বুঝার ক্ষেত্রে ভুল করলে সুন্দরভাবে আদবের সহিত শিক্ষা দেওয়া এবং তাদের পদ্ধতিতে পরিচালনা করা। আর বিভিন্ন উপাধির মাধ্যমে সম্মানের আশা করা মূলত তাদের বৈশিষ্ট্য যারা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের অন্তর্ভুক্ত নয়।

(১৬আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ : যাদের মাঝে আলেম, ফক্বীহ, খত্বীব, আল্লাহর পথে আহ্বানকারী, সৎ কাজে আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধকারী, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যবসায়ী, কর্মী, ধনী, ফকীর, কালো-সাদা, আরাবী-অনারাবী সব রকমের মানুষ বিদ্যমান রয়েছে। আর তাদের মানহাজ বা কার্যক্রম হলো— তারা মানুষের কোনো দলকে খাটো করবে না, সমাজের স্তরের মাঝে পৃথক করবে না। তাদের ব্যতিরেকে অন্য কোনো জাতির উপর নেতৃত্ব দেওয়াকে পছন্দ করবে না এবং তারা আল্লাহর এ কথাকে বিশ্বাস করে যে, ﴿إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِنْدَ اللهِ أَتْقَاكُمْ﴾ ‘আল্লাহর কাছে সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তি হলো সেই, যে আল্লাহকে বেশি ভয় করে থাকে’ (আল-হুজুরাত, ৪৯/১৩)

(১৭আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ : তাদের মাঝে ইবাদতকারী, দুনিয়াবিমুখ, সাধারণ গুনাহগার, কাবীরা গুনাহগার ব্যক্তিও বিদ্যমান রয়েছে। তবে তারা ভুল ও পাপ হতে মুক্ত নয়। আর এই ভুল ও পাপ তাদেরকে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআত হতে বের করে দেয় না। বরং তাদের দ্বারা কখনো কখনো সামান্য বিদআতও হয়ে থাকে। তবে যখনই তারা তা বিদআত হিসাবে অবগত হতে পারে তখনই দ্রুত সত্যের দিকে ফিরে আসে। সুতরাং এর কারণে তারা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআত হতে বের হয়ে যায় না।

(১৮আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ : তারা সর্বদা সত্যের অনুসরণ করে এবং সৃষ্টির প্রতি দয়া প্রদর্শন করে, তারা অন্যায়কে অপছন্দ করে তবে অন্যায়কারীর সাথে বন্ধুত্ব রাখেন (অর্থাৎ পাপরে কারণে ব্যক্তিকে ঘৃণা করে না)। বিদআতকে ঘৃণা করেন তবে বিদআতীর প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন করেন।

এরাই মূলত আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআত। আর এগুলো হলো তাদের কিছু আলামত বা বৈশিষ্ট্য। বিধায় আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহের মাধ্যমে আমি সহযোগিতা কামনা করছি যে, তিনি যেন আমাদেরকেও তাদের মাঝে অন্তর্ভুক্ত করান এবং তাদের সাথে সকল সম্প্রদায়কেও একত্রিত হয়ে কাজ করার তাওফীক্ব দান করেন- আমীন!

মূল : আলাবী ইবনু আব্দুল কাদের আস-সাক্বক্বাফ

অনুবাদ : আল-ইতিছাম গবেষণা পর্ষদ

Magazine