কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

আল-কুরআনের কিছু সূরা ও আয়াতের বিশেষ ফযীলত (পূর্ব প্রকাশিতের পর)

post title will place here

সূরা কাফিরূনের ফযীলত :

সূরা কাফিরূন একবার তেলাওয়াত করার ফযীলত হলো, কুরআনের এক-চতুর্থাংশ তেলাওয়াত করার ন্যায়।

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رضي الله عنه رضي الله عنه قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِذَا زُلْزِلَتْ تَعْدِلُ نِصْفَ الْقُرْاٰنِ وَقُلْ هُوَ اللّٰهُ اَحَدٌ تَعْدِلُ ثُلُثَ الْقُرْاٰنِ وَ قُلْ يَا اَيُّهَا الْكَافِرُوْنَ تَعْدِلُ رُبُعِ الْقُرْاٰنَ.

ইবনে আব্বাস রযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘ইযা যুলযিলাত’ কুরআনের অর্ধেকের সমান এবং ‘কুল হুয়াল্লাহু আহাদ’ কুরআনের এক-তৃতীয়াংশের সমান। আর ‘কুল ইয়া আয়্যুহাল কাফিরূন’ কুরআনের এক-চতুর্থাংশের সমান।[1] এই হাদীছে সূরা যিলযালের ফযীলত সম্পর্কে বর্ণিত অংশটি দুর্বল, আর বাকি অংশ ছহীহ (বিশুদ্ধ)।[2]

সূরা কাফিরূন মুমিন ব্যক্তিকে শিরক থেকে মুক্ত করার সূরা। হাদীছে এসেছে, ফারওয়া ইবনে নাওফাল রযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললেন, আমাকে এমন কিছু শিখান, যা আমি বিছানায় শোয়ার সময় পাঠ করব। তিনি বললেন, ‘কুল ইয়া আয়্যুহাল কাফিরূন’ পাঠ করো। কেননা তা শিরক থেকে মুক্তকারী সূরা।[3]

সূরা ইখলাছের ফযীলত :

সূরা ইখলাছ তেলাওয়াতকারীদের আল্লাহ তাআলা ভালোবাসেন। হাদীছে এসেছে,

عَنْ عَائِشَةَ اَنَّ رَسُوْلَ اللّٰهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَعَثَ رَجُلاً عَلَى سَرِيَّةٍ وَكَانَ يَقْرَاُ لِاَصْحَابِهِ فِىْ صَلاَتِهِمْ فَيَخْتِمُ بِـ(قُلْ هُوَ اللّٰهُ اَحَدٌ) فَلَمَّا رَجَعُوْا ذُكِرَ ذَلِكَ لِرَسُوْلِ اللّٰهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ سَلُوْهُ لِاَىِّ شَىْءٍ يَصْنَعُ ذَلِكَ فَسَاَلُوْهُ فَقَالَ لاَنَّهَا صِفَةُ الرَّحْمٰنِ فَاَنَا اَحِبُّ اَنْ اَقْرَاَ بِهَا. فَقَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَخْبِرُوْهُ اَنَّ اللهَ يُحِبُّهُ.

আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে একটি সৈন্যদলের প্রধান করে পাঠালেন, ঐ ব্যক্তি ছালাত পড়ানোর সময় প্রতি রাকআতে সূরা শেষ করে সূরা ইখলাছ তেলাওয়াত করতেন। যখন সেনাদল ফিরে আসল, তখন বিষয়টি রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে উল্লেখ করা হলে তিনি বললেন, তোমরা তাকে জিজ্ঞেস করো, কেন সে এটা করে। এরপর তারা তাকে জিজ্ঞেস করলে উত্তরে তিনি বললেন, এই সূরায় আল্লাহর গুণাবলির বর্ণনা রয়েছে। তাই আমি তা তেলাওয়াত করতে ভালোবাসি। এই উত্তর শুনে রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাকে জানিয়ে দাও যে, আল্লাহও তাকে ভালোবাসেন।[4]

সূরা ইখলাছ একবার তেলাওয়াত করার ফযীলত হলো, কুরআনের এক-তৃতীয়াংশ তেলাওয়াত করার সমান। আর রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতিদিন রাতে শোয়ার পূর্বে সূরা ইখলাছ তেলাওয়াত করার জন্য উৎসাহিত করেছেন। হাদীছে এসেছে,

عَنْ اَبِى الدَّرْدَاءِ رضي الله عنهرضي الله عنه عَنِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ اَيَعْجِزُ اَحَدُكُمْ اَنْ يَقْرَاَ فِىْ لَيْلَةٍ ثُلُثَ الْقُرْاٰنِ قَالُوْا وَكَيْفَ يَقْرَاَ ثُلُثَ الْقُرْاٰنِ قَالَ (قُلْ هُوَ اللّٰهُ اَحَدٌ) يَعْدِلُ ثُلُثَ الْقُرْاٰنِ.

আবু দারদা রযিয়াল্লাহু আনহু নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, তোমাদের জন্য কি সম্ভব নয় যে, তোমরা প্রতিদিন রাতে কুরআনের এক-তৃতীয়াংশ তেলাওয়াত করবে? ছাহাবীগণ বললেন, কুরআনের এক-তৃতীয়াংশ আমরা কীভাবে তেলাওয়াত করব? তিনি বললেন, ‘কুল হুয়াল্লাহু আহাদ’ কুরআনের এক-তৃতীয়াংশের সমান।[5] 

সূরা নাস এবং ফালাক্ব-এর ফযীলত :

সূরা নাস এবং ফালাক্ব ছওয়াবের দিক থেকে নিজেই নিজের দৃষ্টান্ত। হাদীছে এসেছে,

عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ رضي الله عنهرضي الله عنه قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَلَمْ تَرَ اٰيَاتٍ اُنْزِلَتِ اللَّيْلَةَ لَمْ يُرَ مِثْلُهُنَّ قَطُّ (قُلْ اَعُوْذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ) وَ (قُلْ اَعُوْذُ بِرَبِّ النَّاسِ.

উক্ববা ইবনে আমের রযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা কি জানো যে, আজ রাতে আমার উপর এমন কিছু আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে যে, এমন আয়াত ইতোপূর্বে আর কখনো দেখা যায়নি। আর তা হলো সূরা নাস এবং ফালাক্ব’।[6]

আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাওয়ার জন্য সূরা নাস এবং ফালাক্বের চেয়ে উত্তম কোনো সূরা নেই এবং সূরা নাস ও ফালাক্ব আসমানী মুছীবত (তুফান, বন্যা দুর্ভিক্ষ ইত্যাদি) থেকেও হেফাযত করে। হাদীছে এসেছে,

عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ رضي الله عنه قَالَ بَيْنَا اَنَا اَسِيْرُ مَعَ رَسُوْلِ اللّٰهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَيْنَ الْجُحْفَةِ وَالاَبْوَاءِ اِذْ غَشِيَتْنَا رِيْحٌ وَظُلْمَةٌ شَدِيْدَةٌ فَجَعَلَ رَسُوْلُ اللّٰهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَتَعَوَّذُ بِ (اَعُوْذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ) وَ (اَعُوْذُ بِرَبِّ النَّاسِ) وَيَقُوْلُ يَا عُقْبَةُ تَعَوَّذْ بِهِمَا فَمَا تَعَوَّذَ مُتَعَوِّذٌ بِمِثْلِهِمَا.

উক্ববা ইবনে আমের রযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জুহফা এবং আবওয়া নামক স্থানের মাঝে আমি রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে রাতে পথ অতিক্রম করছিলাম। হঠাৎ করে ঘোর অন্ধকার এবং প্রবল বাতাস আমাদেরকে ঢেকে দিল। তখন রাসূলূল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূরা নাস এবং ফালাক্ব তেলাওয়াত করে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাইতে লাগলেন এবং বলতে লাগলেন, হে উক্ববা! এই উভয় সূরার মাধ্যমে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করো। এই উভয় সূরার অনুরূপ কোনো কিছু দিয়ে কোনো আশ্রয় প্রার্থনাকারী আশ্রয় চাইতে পারে না।[7] অন্য এক বর্ণনায় এসেছে,

عَنْ عَابِسٍ الْجُهَنِىِّ رضي الله عنهرضي الله عنه اَخْبَرَهُ اَنَّ رَسُوْلَ اللّٰهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَهُ يَا ابْنَ عَابِسٍ اَلَا اَدُلُّكَ اَوْ قَالَ اَلَاُ اَخْبِرُكَ بِاَفْضَلِ مَا يَتَعَوَّذُ بِهِ الْمُتَعَوِّذُوْنَ قَالَ بَلَى يَا رَسُوْلَ اللّٰهِ قَالَ قُلْ اَعُوْذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ وَ قُلْ اَعُوْذُ بِرَبِّ النَّاسِ هَاتَيْنِ السُّوْرَتَيْنِ.

আবেস আল-জুহানী রযিয়াল্লাহু আনহু রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি তাকে বলেছেন, আমি কি তোমাকে এমন একটি উত্তম বিষয় জানাব না, যা দিয়ে আশ্রয় প্রার্থনাকারীরা আশ্রয় প্রার্থনা করবে? তিনি বললেন, অবশ্যই হে আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! তিনি বলেন, সূরা নাস এবং সূরা ফালাক্ব।[8]

রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুমানোর আগে এবং ঘুম থেকে উঠার পর সূরা নাস এবং ফালাক্ব তেলাওয়াত করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। হাদীছে এসেছে,

عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ رضي الله عنهرضي الله عنه قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثُمَّ قَالَ اَلَا اَعَلِّمُكَ سُوْرَتَيْنِ مِنْ خَيْرِ سُورَتَيْنِ قَرَاَ بِهِمَا النَّاسُ فَاَقْرَاَنِىْ قُلْ اَعُوْذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ وَ قُلْ اَعُوْذُ بِرَبِّ النَّاسِ فَاُقِيْمَتِ الصَّلَاةُ فَتَقَدَّمَ فَقَرَاَ بِهِمَا ثُمَّ مَرَّ بِىْ فَقَالَ كَيْفَ رَاَيْتَ يَا عُقْبَةَ بْنَ عَامِرٍ اقْرَاْ بِهِمَا كُلَّمَا نِمْتَ وَقُمْتَ.

উক্ববা ইবনে আমের রযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি কি তোমাকে এমন দুটি সূরা শেখাব না, যা লোকদের তেলাওয়াতকৃত সূরাসমূহ থেকে উত্তম? অতঃপর রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে সূরা ফালাক্ব এবং সূরা নাস শেখালেন। ইতোমধ্যে ছালাত শুরু হয়ে গেল। তিনি সামনে গিয়ে ছালাত পড়াতে শুরু করলেন এবং ছালাতে এই উভয় সূরা তেলাওয়াত করলেন। অতঃপর তিনি আমার পাশ দিয়ে অতিক্রমকালে বললেন, হে উক্ববা! এই সূরাদ্বয়ের গুরুত্ব বুঝেছ? অতঃপর তিনি বললেন, যখন ঘুমাতে যাবে এবং ঘুম থেকে জাগ্রত হবে, তখন এই সূরাদ্বয় তেলাওয়াত করবে।[9]

রাতে শোয়ার সময় সূরা নাস, ফালাক্ব ও ইখলাছ তেলাওয়াত করা এবং উভয় হাতের তালুতে ফুঁক দিয়ে তা সমস্ত শরীরে মাসাহ করা সুন্নাত। হাদীছে এসেছে,

عَنْ عَائِشَةَ اَنَّ النَّبِىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ اِذَا اَوَى اِلَى فِرَاشِهِ كُلَّ لَيْلَةٍ جَمَعَ كَفَّيْهِ ثُمَّ نَفَثَ فِيْهِمَا فَقَرَاَ فِيْهِمَا قُلْ هُوَ اللّٰهُ اَحَدٌ وَ قُلْ اَعُوْذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ وَ قُلْ اَعُوْذُ بِرَبِّ النَّاسِ ثُمَّ يَمْسَحُ بِهِمَا مَا اسْتَطَاعَ مِنْ جَسَدِهِ يَبْدَاَ بِهِمَا عَلَى رَاْسِهِ وَوَجْهِهِ وَمَا اَقْبَلَ مِنْ جَسَدِهِ يَفْعَلُ ذَلِكَ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ.

আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে যখন শোয়ার জন্য বিছানায় যেতেন, তখন নিজের উভয় তালু একত্রিত করে তাতে ফুঁক দিতেন এবং সূরা ইখলাছ, সূরা নাস ও সূরা ফালাক্ব তেলাওয়াত করে শরীরের যতটুকু সম্ভব, ততটুকু হাত দিয়ে মুছতেন। মাথা ও মুখ থেকে আরম্ভ করে তার দেহের সম্মুখভাগের উপর বুলাতেন। এরকম তিনি তিনবার করতেন।

আয়াতুল কুরসীর ফযীলত :

আয়াতুল কুরসী কুরআন মাজীদের সবচেয়ে দামী আয়াত। হাদীছে এসেছে,

عَنْ اُبَىِّ بْنِ كَعْبٍ رضي الله عنهرضي الله عنه قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَا اَبَا الْمُنْذِرِ اَتَدْرِىْ اَىُّ اٰيَةٍ مِنْ كِتَابِ اللّٰهِ مَعَكَ اَعْظَمُ قَالَ قُلْتُ اللّٰهُ وَرَسُوْلُهُ اَعْلَمُ. قَالَ يَا اَبَا الْمُنْذِرِ اَتَدْرِى اَىُّ اٰيَةٍ مِنْ كِتَابِ اللّٰهِ مَعَكَ اَعْظَمُ قَالَ قُلْتُ اللّٰهُ لَا اِلٰهَ اِلَّا هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّوْمُ. قَالَ فَضَرَبَ فِى صَدْرِىْ وَقَالَ وَاللهِ لِيَهْنِكَ الْعِلْمُ اَبَا الْمُنْذِرِ.

উবাই ইবনে কা‘ব রযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, হে আবুল মুনযের! তুমি জানো, আল্লাহর কিতাব (কুরআনের) মধ্য থেকে তোমার নিকট কোন আয়াতটি অধিক ফযীলতপূর্ণ? বর্ণনাকারী বললেন, আমি বললাম, আল্লাহ এবং তার রাসূল সর্বাধিক জ্ঞাত। তিনি আবার বললেন, হে আবুল মুনযের! তুমি জানো, আল্লাহর কিতাবের (কুরআনের) মধ্য থেকে তোমার নিকট কোন আয়াতটি অধিক ফযীলতপূর্ণ? বর্ণনাকারী বলেন, আমি বললাম, আয়াতুল কুরসী। তিনি আমাকে সাবাস জানিয়ে আমার বুকে হাত রেখে বললেন, হে আবুল মুনযের! তোমার জ্ঞানে বরকত হোক।[10]

শোয়ার আগে আয়াতুল কুরসী পাঠকারীর জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন ফেরেশতা নির্ধারণ করা হয়। যে চুরি, ডাকাতি এবং অন্যান্য ক্ষতিকর দিক থেকে তাকে সংরক্ষণ করতে থাকে। এমনকি শয়তানের খারাপ চক্রান্ত যেমন: কুপ্রবঞ্চনা, জাদু ও ভয় ইত্যাদি থেকেও সংরক্ষণ করে। হাদীছে এসেছে-

আবু হুরায়রা রযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে রামাযানের ফিতরা সংরক্ষণের জন্য দায়িত্ব দিয়েছিলেন। এক ব্যক্তি এসে অঞ্জলি ভর্তি করে ফিতরার মাল নিতে লাগল। আমি তাকে আটকিয়ে বললাম, আল্লাহর কসম! আমি তোমাকে যে কোনোভাবে রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট নিয়ে যাব। সে বলল, আমাকে ছেড়ে দিন, আমি গরীব মানুষ, আমার স্ত্রী সন্তান আছে, আর আমি অভাবের মধ্যে আছি। আমি তাকে ছেড়ে দিলাম। সকালে রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, আবু হুরায়রা! গতরাতে তোমার বন্দীর কী হলো? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! সে তার অভাবের কথা এবং স্ত্রী সন্তানের কথা বলেছিল, তাই আমি তাকে দয়া করে ছেড়ে দিয়েছি। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সতর্ক থাকো, সে মিথ্যা বলেছে, সে আবার আসবে। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলাতে আমি নিশ্চিত হলাম যে, সে আবার আসবে। তাই আমি তার অপেক্ষায় বসে থাকলাম। সে আসল এবং ফেতরার মাল থেকে মুষ্টি ভরে ভরে নিতে লাগল। আমি আবার তাকে আটক করলাম এবং বললাম, এখন আমি তোমাকে অবশ্যই রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট নিয়ে যাব। সে বলল, আমাকে ছেড়ে দাও, আমি অভাবী, আমার পরিবার-পরিজন আছে, ভবিষ্যতে আর আসব না। আমি দয়া করে তাকে আবার ছেড়ে দিলাম। সকালে রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, আবু হুরায়রা! তোমার বন্দীর কী হলো? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! সে তার মারাত্মক অভাবের কথা বলল, তার পরিবার-পরিজনের চাহিদার কথা বলল, আমি দয়ার বশবর্তী হয়ে তাকে ছেড়ে দিয়েছি। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সতর্ক থাকো, সে তোমার সাথে মিথ্যা বলেছে, সে আবার আসবে। তাই আমি তৃতীয়বার তার আগমনের অপেক্ষায় থাকলাম। সে আসল এবং আবার ফিতরার মাল মুষ্টি ভরে নিতে লাগল। আমি তাকে আটক করলাম এবং বললাম, আমি অবশ্যই তোমাকে রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট নিয়ে যাব, এটা তিনবারের শেষবার। প্রত্যেকবার তুমি ওয়াদা করো যে, আসবে না। কিন্তু তুমি আবার চলে আসো। সে বলল, আমি তোমাকে এমন কিছু কথা শেখাব, যার মাধ্যমে আল্লাহ তোমাকে উপকৃত করবেন। তবে এর বিনিময়ে তুমি আমাকে ছেড়ে দিবে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ঐ কথাগুলো কী? সে বলল, যখন তুমি রাতে শোয়ার জন্য বিছানায় যাবে, তখন আয়াতুল কুরসী পাঠ করবে। তাহলে একজন ফেরেশতা রাতব্যাপী তোমাকে সংরক্ষণ করবে; সকাল পর্যন্ত শয়তান তোমার নিকট আসবে না। এ কথা শুনে আমি তাকে আবার ছেড়ে দিলাম। সকালে রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, গতরাতে তোমার বন্দীর কী করলে? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! সে বলল যে, আমি তোমাকে এমন কিছু কথা শেখাব, যার মাধ্যমে আল্লাহ তোমাকে উপকৃত করবেন। তাই আমি তাকে ছেড়ে দিয়েছি। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, ঐ কথাগুলো কী? আমি বললাম, সে বলেছে, যখন তুমি রাতে বিছানায় শুতে যাবে, তখন আয়াতুল কুরসী প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পাঠ করবে। কেননা আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন ফেরেশতা রাতব্যাপী তোমাকে সংরক্ষণ করবে। আর শয়তান সকাল পর্যন্ত তোমার নিকট আসবে না। ছাহাবীগণ যেহেতু ভালো এবং কল্যাণের কাজে উৎসাহী ছিলেন, তাই তিনি আবু হুরায়রা রযিয়াল্লাহু আনহু-কে কিছু বললেন না; বরং বললেন, সে তোমাকে সত্য কথা শিখিয়েছে। কিন্তু সে নিজে মিথ্যুক। তুমি কি জানো, গত তিন রাত ধরে তোমার নিকট কে আসত? আবু হুরায়রা রযিয়াল্লাহু আনহু বললেন, না। তিনি বললেন, সে হলো শয়তান।[11]

সূরা বাক্বারার শেষ দুই আয়াত তেলাওয়াতের ফযীলত :

রাতে শোয়ার সময় সূরা বাক্বারার সর্বশেষ দুটি আয়াত তেলাওয়াতকারী সর্বপ্রকার বিপদাপদ থেকে রক্ষা পাবে। হাদীছে এসেছে, আবু মাসঊদ রযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,الْاٰيَتَانِ مِنْ اٰخِرِ سُوْرَةِ الْبَقَرَةِ مَنْ قَرَاَ بِهِمَا فِىْ لَيْلَةٍ كَفَتَاهُ ‘যে ব্যক্তি রাতে শোয়ার আগে সূরা বাক্বারার শেষ দুই আয়াত পাঠ করবে, তা তার জন্য যথেষ্ট হবে’।[12] সূরা বাক্বারার শেষ দুই আয়াত পাঠ করে আল্লাহর নিকট যে প্রয়োজনের কথা পেশ করা হয়, তা তিনি পূর্ণ করেন। হাদীছে এসেছে, ইবনে আব্বাস রযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন জিবরীল আলাইহিস সালাম নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট বসেছিলেন। সেই সময় সে উপর থেকে জোরে দরজা খোলার আওয়ায শুনতে পেয়ে মাথা উঠিয়ে বললেন, এটা আকাশের দরজাসমূহের মধ্যে একটি দরজা, যা ইতোপূর্বে আর কখনো খোলা হয়নি। আজকেই খোলা হলো। আর এই দরজা দিয়ে একজন ফেরেশতা পৃথিবীতে অবতরণ করলেন, যিনি ইতোপূর্বে আর কখনো পৃথিবীতে আসেননি। তারপর তিনি রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সালাম দিয়ে বললেন, আপনার জন্য দুটি বরকতময় নূরের সুসংবাদ, আপনার পূর্বে অন্য কোনো নবীকে এই নূর দেওয়া হয়নি। আর তা হলো- সূরা ফাতেহা এবং সূরা বাক্বারার শেষ দুই আয়াত। এর যে কোনো হরফ পড়ে দু‘আ করলে আপনাকে তা দেওয়া হবে।[13]

সূরা আলে ইমরানের শেষ দশ আয়াতের ফযীলত :

তাহাজ্জুদের জন্য উঠার পর ওযূ করার পূর্বে সূরা আলে ইমরানের শেষ দশ আয়াত পাঠ করা মুস্তাহাব। হাদীছে এসেছে,

عَنْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رضي الله عنهرضي الله عنه اَخْبَرَهُ اَنَّهُ بَاتَ لَيْلَةً عِنْدَ مَيْمُوْنَةَ زَوْجِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهِىَ خَالَتُهُ فَاضْطَجَعْتُ فِىْ عَرْضِ الْوِسَادَةِ وَاضْطَجَعَ رَسُوْلُ اللّٰهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَاَهْلُهُ فِىْ طُوْلِهَا فَنَامَ رَسُوْلُ اللّٰهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى اِذَا انْتَصَفَ اللَّيْلُ اَوْ قَبْلَهُ بِقَلِيْلٍ اَوْ بَعْدَهُ بِقَلِيْلٍ اسْتَيْقَظَ رَسُوْلُ اللّٰهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَجَلَسَ يَمْسَحُ النَّوْمَ عَنْ وَجْهِهِ بِيَدِهِ ثُمَّ قَرَاَ الْعَشْرَ الْاٰيَاتِ الْخَوَاتِمَ مِنْ سُوْرَةِ اٰلِ عِمْرَانَ ثُمَّ قَامَ اِلَى شَنٍّ مُعَلَّقَةٍ فَتَوَضَّاَ مِنْهَا فَاَحْسَنَ وُضُوْءَهُ ثُمَّ قَامَ يُصَلِّىْ قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ فَقُمْتُ فَصَنَعْتُ مِثْلَ مَا صَنَعَ.

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি এক রাতে তার খালা এবং রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রী মাইমূনা রাযিয়াল্লাহু আনহা-এর বাড়িতে ছিলেন। আব্দুল্লাহ বলেন, আমি বিছানার আড়াআড়ি শুয়েছিলাম, আর রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তার স্ত্রী বিছানার লম্বালম্বি শুয়েছিলেন। অর্ধরাতের সময় বা এর কিছু আগে অথবা পরে রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জাগ্রত হলেন এবং বসে বসে স্বীয় হাত দিয়ে চেহারা হতে নিদ্রার চিহ্ন মুছছিলেন। এরপর সূরা আলে ইমরানের শেষ দশ আয়াত তেলাওয়াত করলেন। এরপর দাঁড়িয়ে ঝুলানো পানির পাত্রের নিকট গেলেন। ভালো করে ওযূ করে ছালাতের জন্য দাঁড়িয়ে গেলেন। আব্দুল্লাহ বলেন, আমিও উঠলাম এবং তাই করলাম, যা রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করেছিলেন।[14]


[1]. সুনানে তিরমিযী, হা/২৮৯৪।

[2]. সিলসিলা যঈফা, হা/২৮১৯; জামেঊছ ছাগীর, হা/১৫৪৪।

[3]. তিরমিযী, হা/৩৪০৩, হাদীছ ছহীহ; মিশকাত, হা/২১৬১ ।

[4]. ছহীহ বুখারী, হা/৭৩৭৫; ছহীহ মুসলিম, হা/৮১৩।

[5]. ছহীহ মুসলিম, হা/৮১১।

[6]. ছহীহ মুসলিম, হা/৮১৪।

[7]. সুনানে আবূ দাঊদ, হা/১৪৬৫, হাদীছ ছহীহ; মিশকাত, হা/২১৬২।

[8]. নাসাঈ, হা/৫৪৪৯, হাদীছ ছহীহ।

[9]. নাসাঈ, হা/৫৪৩৭, সনদ হাসান; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬৬৫৮।

[10]. ছহীহ মুসলিম, হা/৮১০।

[11]. ছহীহ বুখারী, হা/২৩১১।

[12]. ছহীহ বুখারী, হা/৫০৪০; ছহীহ মুসলিম, হা/৮০৭।

[13]. ছহীহ মুসলিম, হা/৮০৬।

[14]. ছহীহ বুখারী, হা/১৮৩।

Magazine