কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

থিংকিং ডিসকোর্স

post title will place here

১. শিক্ষা সংলাপ :

ভারতে মুসলিমরা ১৮৫৭ সাল পর্যন্ত শাসন চালায়। অতঃপর ইংরেজরা প্রায় ১৯০ বছর। তাদের শাসনামলে তারা ইসলাম ও মুসলিমের বুকে ছুরি চালায় ইসলামবিদ্বেষী শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে। স্বৈরাচারী শাসকেরা মুসলিমদের জাতিসত্তা ও পরিচয়কে ধ্বংস করতে আঘাত হানে শিক্ষাব্যবস্থায়‌। এজন্য আজকের এই শিক্ষার সবচেয়ে দুর্বল দিক হলো লক্ষ্যের অনিশ্চয়তা। যা বহু আগে প্রখ্যাত পণ্ডিত M.V.রযিয়াল্লাহু আনহু. Jছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামffrআলাইহিস সালামys বলেছেন। সেই মুসলিম ইতিহাস, ঐতিহ্য বিজড়িত ভারতীয় উপমহাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় ধ্বংসের ছুরি চালিয়েছে আজ অবধি ভারতীয় উপমহাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় তেমন কোনো আমূল পরিবর্তন, পরিবর্ধন লক্ষণীয় হয়নি। পরিবর্তন হয়েছে ছোট সংকীর্ণ রাস্তার বদলে প্রশস্ত রাস্তার, পরিবর্তন এসেছে মানুষের মন, মস্তিষ্ক ও মেজাজের। অথচ জাতি গঠনের মূল হাতিয়ার শিক্ষার উন্নতির কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

ইতিহাস বলছে স্বাধীন ভারতের সর্বপ্রথম শিক্ষামন্ত্রী হন মাওলানা আবুল কালাম আজাদ। পরে ১৯৪৯ সালে পাকিস্তান শাসনামলে ‘মাওলানা আকরম খাঁ শিক্ষা কমিশন’ গঠিত হয়। ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাস সাক্ষী, পাকিস্তান আমলে এটাই ছিল প্রথম শিক্ষা কমিশন। অথচ সেই ইতিহাস বিজড়িত স্পর্শ আমাদের তথাকথিত বুদ্ধিজীবী ও পণ্ডিতদের স্পর্শ করেনি! দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় মুসলিম ইতিহাস, ঐতিহ্যের কোনো কথা তো দূরের কথা এর নাম-গন্ধের‌ও ছিটেফোঁটা না রাখার অপচেষ্টায় নেমেছে আজকের তথাকথিত সুশীল বুদ্ধিজীবী ও সেক্যুলার মোড়লেরা। মুসলিমদের জীবন্ত সত্য ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতির বদলে রাখা হয়েছে বিভিন্ন দেব-দেবী, মূর্তি আর অশ্লীলতার সুড়সুড়ি দেওয়ার মতো নানা ছবি ও অর্ধনগ্ন মেয়ের দেহ অবয়ব‌। জাতিকে সুকৌশলে মুসলিম ও মুসলমানিত্ব থেকে সরিয়ে ছবি-মূর্তির স্রোতে ভাসিয়ে নেওয়ার এক হীন, নোংরা প্রচেষ্টার পাঁয়তারা চালানোয় এক ধাপ এগিয়ে চলছে ধর্মবিদ্বেষী ও সেক্যুলার শিক্ষানীতি। দেশের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে শিক্ষাবিদদের কী ভূমিকা ও অবস্থান তা আমাদের কাছে দিবালোকের মতো স্পষ্ট। শিক্ষাব্যবস্থায় এই ধস মানে এ জাতির জাতীয় উন্নতি, অগ্ৰগতি, নীতি-নৈতিকতা ইত্যাদি সবদিক থেকে জাতিকে মেরুদণ্ডহীন, বিকলাঙ্গ জাতিতে পরিণত করার এক গভীর ষড়যন্ত্র। থিংকিং ডিসকোর্স (হাফিযাহুল্লাহরযিয়াল্লাহু আনহুমাinkinরযিয়াল্লাহু আনহা Disরযিয়াল্লাহু আনহুoursআলাইহিস সালাম) বরাবরই জট বেঁধেছে আমাদের জাতির বিবেক সমতুল্য বুদ্ধিজীবী ও শিক্ষাবিদদের মস্তিষ্কে। নচেৎ এমন অপ্রত্যাশিত ও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে যাচ্ছে তবুও জাতিসত্তা ও মনুষ্যবোধ জাগ্ৰত হয় না কেন?

২. চলমান রাজনীতি :

বলার অপেক্ষা রাখে না যে, চলমান রাজনীতির হালচাল নিদারুণ সংকটজনক ও সময়ের চাহিদায় অভাবনীয় মোড়ে অবস্থান নিচ্ছে। প্রায় সকল সেক্টরে দুর্নীতি আর যুলমের শিকার হতে হচ্ছে। অবস্থার আশু পরিবর্তন কামনা করা যেন দুরূহ ব্যাপার। রাজনীতির নীতি যেন আজ রাজনীতির মোটা কভারে শৌখিন আলমারিতেই তালাবদ্ধ। গণতন্ত্রের মূল শক্তি নাকি ‘জনগণ’! অথচ সেই জনশক্তির মত ও পথকে পাঁচ পয়সা পাত্তা না দিয়ে ইচ্ছামতো তাদেরকে ফুটবলের মতো লাথি মারছে। চলমান রাজনীতির অবস্থা বলে দিচ্ছে নিকট ভবিষ্যতে চলমান রাজনীতি আরো অকল্পনীয় ও বেগতিক হবে। চারদিকে দুর্নীতি আর যালেমের যুলমের শিকার অসহায় আমজনতা। ক্ষমতাধারী ব্যক্তিরা নিজেদের উদরপূর্তি করার জন্য কোটি কোটি টাকা লুটপাট করে ব্যাংকে ভরে আর পাশের বাড়ির লোক তেল, মরিচ কেনার টাকার অভাবে পান্তাভাত খেয়ে কোনোমতে দিন কাটায়। এটাই চলমান রাজনীতি!

যদি পুঁজিবাদী সমাজের এলিট শ্রেণি ঠিকমতো যাকাত দিত কিংবা শতকরা আড়াই টাকা দান‌ও করত তবুও এমন পরিস্থিতি হতো না। ইসলামের নীতিই সমাজব্যবস্থা ও জাতীয় উন্নতির জন্য যথেষ্ট। কেউ ক্ষুধার্ত থাকবে না, বাড়বে না নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘পাঁচটি বস্তু পাঁচটি বস্তুর কারণ হয়ে থাকে: (১) কোনো জাতি চুক্তি ভঙ্গ করলে আল্লাহ তাদের উপর তাদের শত্রুকে বিজয়ী করে দেন। (২) কেউ আল্লাহর নাযিলকৃত বিধানের বাইরের বিধান দিয়ে দেশ শাসন করলে তাদের মধ্যে দারিদ্র্য ছড়িয়ে পড়ে। (৩) কোনো সম্প্রদায়ের মধ্যে অশ্লীল কাজ ছড়িয়ে পড়লে তাদের মধ্যে মৃত্যু অর্থাৎ মহামারি ছড়িয়ে পড়ে (বিভিন্ন নাম না জানা রোগের আবির্ভাব হবে) (৪) কেউ মাপে বা ওযনে কম দিলে তাদের জন্য খাদ্য শস্যের উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং দুর্ভিক্ষ তাদের গ্ৰাস করে এবং (৫) কেউ যাকাত দেওয়া বন্ধ করলে তাদের উপর আসমানের বৃষ্টি বন্ধ করে দেওয়া হয়’।[1]

প্রচলিত রাজনীতির এপিঠ-ওপিঠ এক‌ই। ভালো বলার কোনো সুযোগ নেই। নোংরা রাজনীতির হাতিয়ার জনগণ- এটা সত্য হলেও কিন্তু রাজনীতির মাঠে দিনশেষে জনতাই ক্ষতিগ্রস্ত ও অভাবের তাড়নায় দিনাতিপাত করে। ইসলামী শাসনব্যবস্থা যতদিন পর্যন্ত অনুসরণ করা হবে না, ততদিন পর্যন্ত আমাদের এমন নাজেহাল অবস্থা দেখতে হবে। তখন আল্লাহর দেওয়া আসমান‌ও আমাদের উপর রহমতের বৃষ্টি বর্ষণ করে ফুলে-ফলে ভরিয়ে দিবে না আর তার‌ই দেওয়া যমীন‌ও আমাদের রহমতের সোনালি ফসল উৎপাদন করবে না।

আমরা চাই সকলের অধিকার, চাই স্থিতিশীল পরিবেশ ও আমাদের সমাজব্যবস্থা। আমরা চাই না জনগণকে নিয়ে রাজনীতি আর রেষারেষির কাদা ছোড়াছুড়ি করতে। আমরা চাই দিনশেষে আল্লাহর দেওয়া রিযিক্ব ভক্ষণ করে তাঁর শুকরিয়া আদায় করত বাঁচার মতো বাঁচতে।

৩. পাপ, পাপের শাস্তি ও বর্জনের মূলনীতি :

আমরা পাপ করি, কেউ পাপের ঊর্ধ্বে নই। জেনে, না জেনে, না বুঝে পাপ হয়ে যায়। অথচ পাপমুক্ত জীবন সকলের জন্য কাম্য। আমরা অনেকেই পাপ থেকে মুক্ত থাকতে সর্বাত্মক চেষ্টা করি কিংবা পাপের পথে না চলতে অনেক সময় অনেক কিছু পদক্ষেপ নিই, কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই আমরা আবার পুরনো বা আগের পাপে জড়িয়ে যাই‌। ফলে অনেকেই হতাশাগ্ৰস্ত হই, ইবাদত করে প্রশান্তি পায় না। এমনকি পাপের মধ্যে নিমজ্জিত হয়ে এক সময় ইবাদত পরিত্যাগ করে আবার পাপের মধ্যেই ডুবে থাকি। অনেকে নিরাশ হয় যে, আল্লাহ তাঁকে ক্ষমা করবেন না। যেহেতু সে অনেক পাপ করেছে। এমন অনেক চিন্তাভাবনা করে শয়তানের প্ররোচণায় পড়ে আমরা অনেকেই পাপ বর্জন করে পাপমুক্ত জীবন গড়তে ব্যর্থ হ‌ই। আবার অনেক সময় কিছু পদক্ষেপ নিলেও তা ধরে রাখতে পারি না‌। তাই আমাদের জানা উচিত, পাপ বর্জনের মূলনীতি কী? কীভাবে আমরা পাপমুক্ত জীবন গড়তে পারি? কীভাবে পাপের পথকে রুদ্ধ করা যায়? কীভাবে সুন্দর জীবন সাজানো যায়? এমন বিবিধ বিষয়ে সামান্য কয়েকটি পয়েন্ট তুলে ধরা হলো।

(ক) আল্লাহকে ভয় করে পাপ বর্জন করতে হবে : সর্বদা আল্লাহকে ভয় করতে হবে। তাঁকে ভয় করে পাপ ও পাপের পথকে বর্জন করে চলতে হবে। মনে রাখতে হবে, আমি আল্লাহকে দেখছি। যদি এটা মনে করতে না পারেন, তাহলে এটা মনে করতে হবে যে, আল্লাহ আমাকে দেখছেন। যদি এমন কনসেপ্ট (রযিয়াল্লাহু আনহুonরযিয়াল্লাহু আনহুআলাইহিস সালামরহিমাহুল্লাহহাফিযাহুল্লাহ) ধারণ করতে পারেন, তাহলেই আপনি পাপমুক্ত জীবন গড়তে পারবেন।

(খ) পাপকে সবসময় বড় মনে করবেন, কোনো পাপকে ছোট বা তুচ্ছ জ্ঞান করা যাবে না : আমরা অনেকেই অনেক সময় পাপকে তুচ্ছ জ্ঞান করি। যার ফলে ঐ পাপ বর্জন না করে পাপের পাঠশালায় নিয়মিত শরীক হ‌ই। দিন দিন ঐ ছোট্ট পাপই কিন্তু বড় বড় পাপের দিকে নিয়ে যায়। তাই পাপ বলতে ছোট, বড় বাছবিচার না করে পারতপক্ষে পাপ বর্জন করে চলাই আমাদের জন্য শ্রেয়।

(গ) পাপীদের সাথে উঠাবসা না করা, অসৎ সঙ্গ ত্যাগ করা : আমাদের পাপ বর্জন করতে না পারার আরেকটি কারণ হলো, পাপীদের তথা যারা পাপে অভ্যস্ত তাদেরকে বর্জন না করে তাদের সাথে উঠাবসা, খোশগল্প, আড্ডাবাজি, লেনদেন, মজা, তামাশা করে তাদের সাথে চলাফেরা করা।

(ঘ) পাপ করে পাপ প্রকাশ না করা : বর্তমান সময়ে পাপ করে অনেক মানুষ গর্ব করে প্রকাশ করে। অথচ পাপকে গোপন রাখতে হয়। এটা প্রকাশ করাটা যেন অহংকার, গর্বের কোনো বিষয় না হয়। বর্তমান যুবসমাজ অবৈধ সম্পর্ক করে এটা বন্ধুমহলে বলে, অভিভাবক‌রাও ইদানীং জোরেশোরে ১০ জনের সাথে কথা বলতে গিয়ে বলে, আমার মেয়ের যে ছেলের সাথে রিলেশন করে সে অনেক ভালো। মেয়ে আমার এক নাম্বার, মেয়ে আমার অনেক ভালো নাচ জানে- এজাতীয় আরো কত পাপ প্রকাশ করা হয় তা পাঠকমাত্রই জানে।

এমন কতজন আছে, যারা পাপ করে পাপকে উসকে দেয়, পাপের দিকে মানুষকে আকর্ষিত করে। পাপ বর্জনের অন্যতম মূলনীতি হলো পাপ প্রকাশ না করা। হাদীছে কঠোরভাবে ধমক ও শাস্তির কথা বলা হয়েছে, যে পাপ প্রকাশ করে তার ব্যাপারে।

(ঙ) পাপ করার পর ছওয়াবের কাজ করা : পাপ হয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে ছওয়াবের কাজ করলেই তা পাপ মাফ হয়ে যায়‌।
নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে একজন ছাহাবী এক মহিলাকে স্পর্শ করেন এবং সহবাস ছাড়া সব কাজ করেন। ঐ ছাহাবী পরে তার নিজের ভুল বুঝতে পেরে নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে বললেন, সে শয়তানের প্ররোচণায় পড়ে একাজ করেছে। উমার রযিয়াল্লাহু আনহু শুনে বলেন, আল্লাহ তোমার পাপ গোপন রেখেছে, যদি তুমি তা গোপন রাখতে! নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূরা হূদের ১১৪ নম্বর আয়াত পাঠ করে বলেন, ‘তুমি ছালাত ক্বায়েম করো দিনের দুই প্রান্তে ও রাত্রির কিছু অংশে। নিশ্চয় সৎকর্মসমূহ মন্দ কর্মসমূহকে বিদূরিত করে’। লোকদের মধ্যে একজন বললেন, এটা কি শুধু তার বেলায় প্রযোজ্য? রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘না, বরং সকলের জন্য’।[2]

(চ) পাপের কারণে তিরস্কার না করা : পাপের কারণে তিরস্কার না করে সংশোধনের জন্য নছীহত করা জরুরী। পরিশেষে পাপ বর্জন করে তওবা করতে পারে। সে পাপ করেছে বলে তাকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা বা তার সমালোচনা করা, তাকে পরিত্যাগ করা, তিরস্কার করা, অভিযুক্ত করা, আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করবেন না বলা মোটেও সমীচীন নয়। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘এক লোক বলল, আল্লাহর কসম! আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করবেন না। তখন আল্লাহ বলেন, কে আমার উপরে কসম দিতে পারে যে, আমি অমুককে ক্ষমা করব না। আমি অমুক ব্যক্তিকে ক্ষমা করে দিলাম এবং তোমার আমল বরবাদ করে দিলাম’।[3]

(ছ) পাপ করার পর নিরাশ না হয়ে খালেছঅন্তরে তওবা করা : আমাদের অনেকেই পাপ করার পর নিরাশ, হতাশাগ্রস্ত হয়। বরং মুমিনদের জন্য নিরাশ, হতাশাগ্রস্ত না হয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া ও তওবা করা আবশ্যকীয় কর্তব্য। আল্লাহ বলেন,قُلْ يَا عِبَادِيَ الَّذِينَ أَسْرَفُوا عَلَى أَنْفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوا مِنْ رَحْمَةِ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعًا إِنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ ‘বলুন, হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজেদের উপর বাড়াবাড়ি করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। অবশ্যই আল্লাহ সকল পাপ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’ (আয-যুমার, ৩৯/৫৩)

আপনারা জানেন যে, পূর্বের যুগে একজন ব্যক্তি ৯৯ জনকে হত্যা করে, সেও কিন্তু ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়। আল্লাহ তাকে নিরাশ করেননি তার রহমত থেকে। তাই নিরাশা, হতাশাগ্রস্ত হ‌ওয়ার কিছু নেই। আল্লাহ ক্ষমাশীল। তিনি রহীম, রহমান।

৪. রিযিক্ব ও ডিপ্রেশন :

আমাদের সমাজের প্রায় অনেকেই রিযিক্বের ব্যাপারে দুশ্চিন্তাগ্ৰস্ত । রিযিক্ব! রিযিক্ব! করে ছুটে চলা জীবনে অনেক ক্ষেত্রেই হালাল হারামের তোয়াক্কা না করে অর্থ জোগান দেয়। রিযিক্বের ব্যাপারে দুশ্চিন্তা শয়তানের প্রধান উন্মুক্ত হাতিয়ার। শয়তান মানুষকে রিযিক্বের ভয় দেখিয়ে পেরেশানিতে ফেলে। পৃথিবীর যত অন্যায় কাজ আছে তা করাতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালায়। আল্লাহ তাআলার বাণী,الشَّيْطَانُ يَعِدُكُمُ الْفَقْرَ وَيَأْمُرُكُمْ بِالْفَحْشَاءِ وَاللَّهُ يَعِدُكُمْ مَغْفِرَةً مِنْهُ وَفَضْلًا وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ ‘শয়তান তোমাদেরকে দারিদ্র্যের প্রতিশ্রুতি দেয় এবং অশ্লীলতার নির্দেশ দেয়। আর আল্লাহ তোমাদেরকে তাঁর পক্ষ থেকে ক্ষমা এবং অনুগ্রহের প্রতিশ্রুতি দেন। আর আল্লাহ সর্বব্যাপী প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ’ (আল-বাক্বারা, ২/২৬৮)

রিযিক্ব নিয়ে যে যত দুশ্চিন্তায় ভুগবে, তার সুখ, শান্তি ও জীবন চলার পথ তত বেশি সংকুচিত হবে। এজন্য তার একটাই মহৌষধ আর তা হলো ‘তাওয়াক্কুল’ তথা আল্লাহর উপর ভরসা। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কত‌ই না চমৎকার উদাহরণ দিয়ে বলেছেন, ‘যদি তোমরা আল্লাহর উপর যথার্থ ভরসা করতে, তাহলে পাখি যেমন সকালে খালি পেটে বের হয়ে সন্ধ্যায় পেট ভর্তি করে তার নীড়ে ফিরে, ঠিক তেমনি তোমরাও রিযিক্বপ্রাপ্ত হতে’।[4] মহান আল্লাহ বলেন,وَمَنْ يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَلْ لَهُ مَخْرَجًا - وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ وَمَنْ يَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ فَهُوَ حَسْبُهُ إِنَّ اللَّهَ بَالِغُ أَمْرِهِ قَدْ جَعَلَ اللَّهُ لِكُلِّ شَيْءٍ قَدْرًا ‘যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য উত্তরণের পথ তৈরি করে দেন এবং তিনি তাকে তার ধারণাতীত উৎস হতে দান করেন রিযিক্ব। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করে তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। আল্লাহ তাঁর ইচ্ছে পূরণ করবেনই; অবশ্যই আল্লাহ সবকিছুর জন্য স্থির করেছেন সুনির্দিষ্ট মাত্ৰা’ (আত-তালাক, ৬৫/২-৩)। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা বান্দাকে সৃষ্টির ৫০ হাজার বছর পৃর্বেই তার তাক্বদীরের বিষয়াদি লিখে রেখেছেন। তবুও আমরা আমাদের রিযিক্বের ব্যাপারে হতাশাগ্ৰস্ত, পেরেশান হ‌ই। অথচ আল্লাহ স্বয়ং দায়িত্ব নিয়েছেন রিযিক্বের। তবুও আমরা আমাদের জীবিকা নির্বাহ নিয়ে প্রফুল্ল ন‌ই!

রিযিক্বের ব্যাপারে হতাশা তথা ডিপ্রেশন বরাবরই শয়তানের প্ররোচনায় মানব মনে উদয় হয়। যিনি খালেক্ব (সৃষ্টিকর্তা), তিনিই রাযযাক্ব (রিযিক্বদাতা)। ভাগ্যে যতটুকু রিযিক্ব বরাদ্দ আছে তা ভোগ না করা পর্যন্ত আপনি কিংবা আমি কেউ দুনিয়া ত্যাগ করব না। মনে রাখবেন, যেই আল্লাহ মার‌ইয়াম (আ.)-কে বিনা মৌসুমে ফলমূল খাওয়াতে পারেন; যেই আল্লাহ সাত সমুদ্রের নিচের প্রাণীর খাদ্যের সরবরাহ ও তাদের জীবিকার ব্যবস্থা করতে পারেন; যেই আল্লাহ কাফের, অমুসলিম, নাস্তিক, ইসলামবিদ্বেষীর খাদ্যের দায়িত্ব‌ও নিয়েছেন সেই আল্লাহ আমাকে আপনাকে কি রিযিক্ব ছাড়াই রাখবেন?

বিশ্বাসকে দৃঢ় করুন। রিযিক্বের ব্যাপারে কোনো প্রকার দুশ্চিন্তাকে প্রশ্রয় না দিয়ে আল্লাহর উপর ভরসা করুন। তাহলে জীবনের সকল সমস্যা সমাধান হবে চিন্তাতীতভাবে, ইনশা-আল্লাহ।
আজকের এই চলমান মুহূর্তে অনেকেই বলছে, ২০২৩ সাল হবে ইতিহাসের রেকর্ডময় দরিদ্রতা, অভাব-অনটনের বছর। তাই অনেকেই অনেকভাবে দুর্ভিক্ষের চিন্তায় টাকাপয়সা, পণ্যদ্রব্য ইত্যাদি সবকিছুই স্টক করে রাখছে এই আশঙ্কায় যে, তাকে যেন অভাব পেয়ে না বসে।

এমন যত কথাই আসুক না কেন সফলতা, রিযিক্ব, দুশ্চিন্তা, পেরেশানি আর যাই হোক না কেন সবকিছু থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ ও পন্থা হলো তাওয়াক্কুল তথা আল্লাহর উপর ভরসা।

থিংকিং ডিসকোর্স-এ আমাদের অবস্থান দুই প্রান্তিকতায়। আমাদের অবস্থান আমরা স্পষ্ট করি না। চিন্তার দৈন্য, সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার ভাটা আর দায় ও দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে আমরা অনেকটাই পিছিয়ে পড়া জাতিতে পরিণত হয়েছি। তাই চিন্তার জগৎকে পরিশীলিত করতে হবে; পরিকল্পনা করতে হবে দূরদর্শিতা, বিচক্ষণতা ও সুদূরপ্রসারী চিন্তা দিয়ে। থিংকিং ডিসকোর্স-এ ফারাক কমাতে হবে, নচেৎ শিক্ষা, রাজনীতি, আত্মিক উন্নতি ও পাপের পথ বন্ধ হবে না। থিংকিং ডিসকোর্স-এ আমরা যদি আমাদের জাতীয় উন্নতির জন্য আত্মসমালোচনার শক্তিকে কাজে লাগাতে পারি, তাহলে আমরা সেরা জাতিতে পরিণত হব বলে মনে করি এবং আমাদের যাবতীয় সমস্যা‌ও অনায়াসে সমাধান হবে বলে প্রত্যাশা করতে পারি।

মাযহারুল ইসলাম

অধ্যয়নরত, দাওরায়ে হাদীছ, মাদরাসা দারুস সুন্নাহ, মিরপুর, ঢাকা।


[1]. ছহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৭৬৫।

[2]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৭৬৩।

[3]. সিলসিলা ছহীহা, হা/২০১৪।

[4]. তিরমিযী, হা/২৩৪৪‌, হাদীছ ছহীহ।

Magazine