কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

যুবসমাজের অধঃপতনের কারণ ও উত্তরণের উপায়

post title will place here

اَلْحمْدُ لِلَّهِ عَلَى إِحْسَانِهِ، وَالشُّكْرُ لَهُ عَلَى تَوْفِيْقِهِ وَاِمْتِنَانِهِ، وَأَشْهَدُ أَنْ لاَّ إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ تَعْظِيْمًا لِّشَأْنِهِ، وَأَشْهَدُ أَنَّ نَبِيَّنَا مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَعَلَى آلِهِ وَأَصْحَابِهِ وَسَلَّمَ تَسْلِيْمًا مَزِيْدًا. أَمَّا بَعْدُ:

যৌবনের গুরুত্ব :

মানুষ দুনিয়াতে একটির পর একটি ধাপ পার করে তার জীবন অতিবাহিত করে। মানুষের স্তরগুলো বীর্য থেকে জমাট রক্ত, অতঃপর তা হতে গোশতপিণ্ড, তারপর শৈশব, তারপর যৌবন, তারপর বার্ধক্যের প্রারম্ভ এবং পরে সম্পূর্ণ বার্ধক্য। আল্লাহ তাআলা বলেন,الَّذِي خَلَقَكُمْ مِنْ تُرَابٍ ثُمَّ مِنْ نُطْفَةٍ ثُمَّ مِنْ عَلَقَةٍ ثُمَّ يُخْرِجُكُمْ طِفْلًا ثُمَّ لِتَبْلُغُوا أَشُدَّكُمْ ثُمَّ لِتَكُونُوا شُيُوخًا وَمِنْكُمْ مَنْ يُتَوَفَّى مِنْ قَبْلُ وَلِتَبْلُغُوا أَجَلًا مُسَمًّى وَلَعَلَّكُمْ تَعْقِلُونَ ‘তিনিই তোমাদের সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে, অতঃপর শুক্রবিন্দু থেকে, অতঃপর জমাট বাঁধা রক্ত থেকে, অতঃপর তোমাদেরকে বের করে এনেছেন শিশুরূপে, অতঃপর তিনি তোমাদের বৃদ্ধি দান করেন, যাতে তোমরা তোমাদের পূর্ণশক্তির বয়সে পৌঁছতে পার, অতঃপর আরো বৃদ্ধি দেন যাতে তোমরা বৃদ্ধ হও। তোমাদের মধ্যে কারো কারো আগেই মৃত্যু ঘটান, যাতে তোমরা তোমাদের জন্য নির্দিষ্ট সময়ে পৌঁছে যাও আর যাতে তোমরা (আল্লাহর সৃষ্টি কৌশল) অনুধাবন কর’ (আল-মুমিন, ৪০/৬৭)। আল্লাহ তাআলা আরও বলেন,اللهُ الَّذِي خَلَقَكُمْ مِنْ ضَعْفٍ ثُمَّ جَعَلَ مِنْ بَعْدِ ضَعْفٍ قُوَّةً ثُمَّ جَعَلَ مِنْ بَعْدِ قُوَّةٍ ضَعْفًا وَشَيْبَةً ‘আল্লাহ তিনি, যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেন দুর্বল (শিশুকাল) অবস্থায়, অতঃপর তিনি দুর্বলতার পর শক্তি (যৌবনকাল) দিয়েছেন, তারপর শক্তির পর পুনরায় দিয়েছেন দুর্বলতা ও বার্ধক্য’ (আর-রূম, ৩০/৫৪)। একজন মানুষের জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় হলো তার যৌবনকাল। এই সময়টাতে একজন যুবককে হাতছানি দিয়ে ডাকতে থাকে অসংখ্য অশুভ শক্তি। এই বয়সটা অত্যধিক ঝুঁকিপূর্ণ। তাই যে তার যৌবনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে সেই হলো সফল যুবক। যুবকরাই হলো যে কোনো জাতির চালিকাশক্তি ও প্রাণ। যুবকদের শক্তিকে ভিত্তি করেই যে কোনো আন্দোলন প্রতিষ্ঠা লাভ করে ও সফল হয়, যার নজির বর্তমান পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সরকার পরিবর্তন।

ইসলামের প্রাথমিক যুগে রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যেসব ছাহাবী ঈমান আনেন এবং তাঁকে, তাঁর দ্বীনের সাহায্য-সহযোগিতা করেন তাদের অধিকাংশই ছিলেন যুবক শ্রেণির। এমনকি রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে ও তাঁর মৃত্যুর পরে তাদের হাতেই ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছিল। যেমন রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উছামা ইবনু যায়েদ রযিয়াল্লাহু আনহু-কে ১৮ বছর বয়সে সেনাপতি, আত্তাব ইবনু উসাইদ রযিয়াল্লাহু আনহু-কে মাত্র ২০ বছর বয়সে মক্কার গভর্নর এবং মুআয ইবনু জাবাল রযিয়াল্লাহু আনহু-কে ৩০ বছর বয়সে ইয়ামানের গভর্নর নিয়োগ করেন। এছাড়াও আব্দুল্লাহ ইবনু যিয়াদ রযিয়াল্লাহু আনহু ২৩ বছর বয়সে খোরাসানের গভর্নর নিযুক্ত হন। হাজ্জাজ বিন ইউসুফ রহিমাহুল্লাহ মুহাম্মাদ বিন কাসেম রহিমাহুল্লাহ-কে ১৭ বছর বয়সে যুদ্ধের সেনাপতি নিযুক্ত করেন। তিনি পারসিকদের সাথে যুদ্ধ করে জয়ী হন। তারপর তাকে সিন্ধু প্রদেশের সেনাপতির দায়িত্ব দেওয়া হলে তিনি সিন্ধু ও ভারত উপমহাদেশ জয় করেন।

যুবকের সংজ্ঞা :

মহান আল্লাহ বলেন, حَتَّى إِذَا بَلَغَ أَشُدَّهُ وَبَلَغَ أَرْبَعِينَ سَنَةً ‘অবশেষে সে যখন পূর্ণশক্তি লাভ করে এবং ৪০ বছরে পৌঁছে যায়’ (আল-আহক্বফ. ৪৬/১৫)। এখানে (أَشُدَّهُ) আশুদ্দা বা পূর্ণশক্তি বলতে যৌবন কালকে বুঝানো হয়েছে। এই কথাটি কুরআনুল কারীমের ছয়টি স্থানে এসেছে (আল-আনআম, ৬/১৫২; ইউসুফ, ১২/২২; আল-ইসরা, ১৭/৩৪; আল-কাহফ, ১৮/৮২; আল-ক্বাছাছ, ২৮/১৪)। পরিপূর্ণ প্রাপ্ত বয়স হলো ১৫ বছর। এ ক্ষেত্রে ছেলে ও মেয়ে উভয় সমান। তবে এর আগে যদি ছেলের স্বপ্নদোষ হয় আর মেয়ের হায়েয হয় তখন সেটাই সাবালক বয়স।[1]

এর আরও প্রমাণ হলো, ইবনু উমার রযিয়াল্লাহু আনহুমা হতে বর্ণিত, উহুদ যুদ্ধের দিন তিনি যুদ্ধের জন্য নিজেকে পেশ করার পর নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে অনুমতি দেননি। তখন তাঁর বয়স ছিল ১৪ বছর। তবে খন্দক যুদ্ধের দিন তিনি নিজেকে পেশ করলে নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে অনুমতি দিলেন। তখন তাঁর বয়স ছিল ১৫ বছর।[2]

একজন মানুষ এভাবে বাড়তে বাড়তে ৪০ বছর বয়সে উপনীত হয়। এ বয়স হলো জ্ঞান ও বিবেক শক্তির পূর্ণতা ও পরিপক্কতার বয়স। এজন্যই মুফাসসিরগণের মতে, প্রত্যেক নবীকে ৪০ বছর বয়সে নবুঅত প্রদান করা হয়েছে।[3] যেমন ইউসুফ আলাইহিস সালাম-এর ব্যাপারে আল্লাহ বলেন, وَلَمَّا بَلَغَ أَشُدَّهُ آتَيْنَاهُ حُكْمًا وَعِلْمًا ‘আর তিনি যখন পূর্ণ যৌবনে উপনীত হলেন, তখন আমরা তাকে হিকমত ও জ্ঞান দান করলাম’ (ইউসুফ, ১২/২২)। এখানে হিকমত অর্থ নবুঅত। মহান আল্লাহ মূসা আলাইহিস সালাম-এর ব্যাপারে বলেন, وَلَمَّا بَلَغَ أَشُدَّهُ وَاسْتَوَى آتَيْنَاهُ حُكْمًا وَعِلْمًا ‘আর তিনি যখন যৌবনে পদার্পণ করলেন ও পূর্ণ বয়সে উপনীত হলেন, তখন আমরা তাকে প্রজ্ঞা ও জ্ঞান দান করলাম’ (আল-ক্বাছাছ, ২৮/১৪)

‘ফাতা’ শব্দের অর্থও যুবক। শব্দটি কোনো বিশেষ ব্যক্তির সাথে সম্বন্ধ করা হলে অর্থ হয় খাদেম। মূসা আলাইহিস সালাম-এর সাথী ইউশা ইবনু নূন-এর ক্ষেত্রে ফাতা শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন,وَإِذْ قَالَ مُوسَى لِفَتَاهُ لَا أَبْرَحُ حَتَّى أَبْلُغَ مَجْمَعَ الْبَحْرَيْنِ أَوْ أَمْضِيَ حُقُبًا ‘আর স্মরণ করুন, যখন মূসা তার সঙ্গী যুবককে বলেছিলেন, দুই সাগরের মিলনস্থলে না পৌঁছে আমি থামব না অথবা আমি যুগ যুগ ধরে চলতে থাকব’ (আল-কাহফ, ১৮/৬০)। যুবক বয়সে উপনীত হওয়ার সময় উন্নতির ধারা যেমন— বুদ্ধি, শক্তি ও ভালো-মন্দ পৃথকীকরণে যোগ্যতা ইত্যাদি অব্যাহত থাকে ৩০ থেকে ৪০ বছর পর্যন্ত।[4]

৪০ বছর বয়সে উপনীত হলে নিম্নোক্ত দু‘আটি পড়া উচিত—

رَبِّ أَوْزِعْنِي أَنْ أَشْكُرَ نِعْمَتَكَ الَّتِي أَنْعَمْتَ عَلَيَّ وَعَلَى وَالِدَيَّ وَأَنْ أَعْمَلَ صَالِحًا تَرْضَاهُ وَأَصْلِحْ لِي فِي ذُرِّيَّتِي إِنِّي تُبْتُ إِلَيْكَ وَإِنِّي مِنَ الْمُسْلِمِينَ

অর্থ : ‘হে আমার রব! তুমি আমাকে আর আমার পিতা-মাতাকে যে নেয়ামত দান করেছ, তজ্জন্য শুকরিয়া-কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার শক্তি আমাকে দান করো আর আমাকে এমন সৎকর্ম করার সামর্থ্য দাও, যাতে তুমি সন্তুষ্ট হও আর আমার সন্তানদেরকে সৎকর্মপরায়ণ করে আমার প্রতি অনুগ্রহ করো, আমি অনুশোচনা ভরে তোমার দিকে প্রত্যাবর্তন করছি এবং আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত’ (আল-আহক্বফ, ৪৬/১৫)

যুবকদের ফযীলত সম্বলিত কিছু হাদীছ :

(১) রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,إِنَّ اللهَ لَيَعْجَبُ مِنَ الشَّابِّ لَيْسَتْ لَهُ صَبْوَةٌ ‘তোমার প্রতিপালক এমন যুবককে ভালোবাসেন যার প্রবৃত্তিপূজা এবং হক্ব পথ থেকে বিচ্যুতি নেই’।[5]

(২) রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,سَبْعَةٌ يُظِلُّهُمُ اللَّهُ فِي ظِلِّهِ يَوْمَ لاَ ظِلَّ إِلَّا ظِلُّهُ (وَفِيْهَا) شَابٌّ نَشَأَ فِي عِبَادَةِ رَبِّهِ ‘যেদিন আল্লাহর ছায়া ছাড়া কোনো ছায়া থাকবে না, সেদিন আল্লাহর তাআলা সাত শ্রেণির মানুষকে সে ছায়ায় আশ্রয় দিবেন। তার মধ্যে যে যুবক আল্লাহর ইবাদতের মধ্যে গড়ে উঠেছে’।[6]

(৩) রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,الحَسَنُ وَالحُسَيْنُ سَيِّدَا شَبَابِ أَهْلِ الجَنَّةِ ‘হাসান ও হুসাইন জান্নাতবাসী যুবকদের সরদার’।[7]

(৪) রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, وَإِنَّ لَكُمْ أَنْ تَشِبُّوا فَلَا تَهْرَمُوا أَبَدًا (জান্নাতীদেরকে জান্নাতে প্রবেশের পর বলা হবে) ‘তোমরা যুবক থাকবে, কখনো বৃদ্ধ হবে না’।[8]

(৫) পবিত্র অহী লেখক ও কুরআন একত্রকারী ছাহাবী যায়েদ ইবনু ছাবেত রযিয়াল্লাহু আনহু ছিলেন একজন যুবক। তাকে লক্ষ্য করে আবূ বকর রযিয়াল্লাহু আনহু বলেন,إِنَّكَ رَجُلٌ شَابٌّ عَاقِلٌ لاَ نَتَّهِمُكَ وَقَدْ كُنْتَ تَكْتُبُ الوَحْيَ لِرَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَتَتَبَّعِ القُرْآنَ فَاجْمَعْهُ অর্থাৎ ‘তুমি একজন বুদ্ধিমান যুবক। আমরা তোমাকে কোনোরূপ দোষারোপ করি না। আর তুমি রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অহী লিখতে। ফলে তুমি কুরআনের সংকলন করে তা একত্রিত করো’।[9]

(৬) রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে যারা যুদ্ধ করেছেন তারা ছিলেন যুবক শ্রেণির। আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ রযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, كُنَّا نَغْزُو مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَنَحْنُ شَبَابٌ ‘আমরা যুবক বয়সে নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে যুদ্ধ করতাম’।[10]

(৭) আনাস ইবনু মালেক রযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আনছার সম্প্রদায়ে ৭০ জন যুবক ছিলেন। তাদেরকে ক্বারী বলা হতো। তারা মসজিদে থাকতেন। সন্ধ্যা হলে তারা মদীনার একপ্রান্তে গমন করতেন। তারা আলোচনা করতেন ও ছালাত আদায় করতেন। তারা আহলে ছুফফার জন্য কাঠ সংগ্রহ করে তা বিক্রয় করে খাদ্য ক্রয় করতেন।[11]

যুবকের প্রকারভেদ :

যুবক তিন শ্রেণির— (ক) সৎ যুবক, (খ) বিপথগামী যুবক এবং (গ) মাঝামাঝি দিশেহারা যুবক।

(ক) সৎ যুবকের কিছু বৈশিষ্ট্য : (১) সে দ্বীনের প্রতি ভালোবাসার সহিত বিশ্বাসী, পরিতৃপ্ত ও খুশি হয় এবং দ্বীনের মধ্যেই সে সাফল্য ও বিজয় দেখে। আর দ্বীন হতে বঞ্চিত হওয়া সুস্পষ্ট ক্ষতি ও সর্বনাশ মনে করে। (২) সে একনিষ্ঠভাবে এক আল্লাহর ইবাদত করে এবং তাতে আল্লাহর সাথে কাউকে অংশীদার স্থাপন করে না। (৩) সে তার সকল বিষয়ে রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করে। (৪) সে সঠিকভাবে পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত প্রতিষ্ঠা করে। (৫) তার ওপর যাকাত ফরয হলে সে তা হক্বদারের নিকট প্রদান করে। (৬) তার ওপর উমরা বা হজ্জ ফরয হলে সে তা দ্রুত আদায় করে। (৭) সে মানুষকে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়। (৮) সে মানুষকে সৎ কাজের আদেশ করে ও মন্দ কাজ হতে বিরত থাকার আহ্বান করে। (৯) সে অন্যের জন্য সেটাই ভালোবাসে, যা সে নিজের জন্য পছন্দ করে। (১০) সে কাউকে ভালোবাসে ও কারো সাথে শত্রুতা করে শুধু আল্লাহর জন্যই। (১১) সে বড়দের শ্রদ্ধা করে ও ছোটদের স্নেহ-মায়া করে।

এই শ্রেণির যুবকই সমাজ ও জাতির জন্য গর্বের ও মর্যাদার কারণ হয়ে থাকে। অর্থাৎ দেশ-জাতি সবাই উপকৃত হয়।

(খ) বিপথগামী যুবকের বৈশিষ্ট্য : (১) সে তার আক্বীদায় বিপথগামী, চালচলনে বেখেয়াল, নিজে প্রতারিত-বিভ্রান্ত, অন্যায়-অপরাধে নিমজ্জিত, সে অন্যের থেকে সত্য গ্রহণ করে না এবং বাতিল থেকেও বিরত থাকে না। মনে হচ্ছে যে, তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে দুনিয়ার জন্য এবং দুনিয়াকে সৃষ্টি করা হয়েছে একমাত্র তার জন্য। (২) আল্লাহর অধিকার ও মানুষের অধিকার নষ্ট ও ধ্বংস হওয়াতে সে পরোয়া করে না। (৩) সে তার দ্বীনের মধ্যে সরল-সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত, চরিত্রে সে সামাজিক রীতি-প্রথা থেকেও বিচ্যুত। কিন্তু খারাপ কর্মসমূহ তার জন্য সুশোভিত করা হয়েছে ফলে সে তা ভালো দেখে, অথচ সে আমলের দিক দিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত। এটা তার ওপর অশুভ লক্ষণ এবং সমাজের ওপর বিপদ যা তার জাতিকে নিকৃষ্ট স্তরে টেনে নিয়ে যায়। এই শ্রেণির যুবকরাই জাতির মর্যাদা ও সম্মানের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

(গ) মাঝামাঝি দিশেহারা, কিংকর্তব্যবিমূঢ় ও দিশেহারা যুবকের বৈশিষ্ট্য : সে সঠিক ও বিপথগামী রাস্তার ক্রসিংয়ের মধ্যে দ্বিধাগ্রস্ত। সে সত্যকে চিনেছে ও তাতে সে আস্থাশীল-নিশ্চিন্ত এবং রক্ষণশীল সমাজে জীবনযাপন করে। কিন্তু প্রত্যেক দিক দিয়ে খারাপ ও অকল্যাণের সকল পথ তার ওপর খোলা। যেমন আক্বীদায় সন্দেহ-সংশয় প্রবেশ করা, চরিত্রে বিচ্যুতি ঘটা, আমলে বিকৃতি ও ভ্রান্তির অনুপ্রবেশ, ভালো রীতি-নীতি হতে বের হয়ে যাওয়া এবং বিভিন্ন প্রকার বাতিল স্রোত-ধারায় প্রবাহিত হওয়া। ফলে সে চিন্তা ও মানসিকতার ঘূর্ণিপাকের মধ্যে পড়ে রয়েছে। যার দরুন সে দ্বিধাগ্রস্তের মতো একবার এদিকে আরেকবার অন্য দিকে ছুটাছুটি ও প্রত্যাবর্তন করছে। এই শ্রেণির যুবক তার জীবনে নেতিবাচক। আর এই শ্রেণির যুবকই বর্তমান বেশি। কারণ তারা কিছু ইসলামী সংস্কৃতির জ্ঞান অর্জন করেছে। কিন্তু পাশাপাশি অন্যান্য জ্ঞান-বিজ্ঞানও চর্চা করেছে যা বাস্তবিক তার ধারণা মতে দ্বীনের সাথে সাংঘর্ষিক। তার জন্য প্রয়োজন সকল প্রকার সংশয় থেকে মুক্ত হতে খালেছ ও নির্ভরযোগ্য বিজ্ঞ আলেমের কাছে কুরআন-সুন্নাহ এবং ইসলামী সংস্কৃতির অনুশীলন করা।

সতর্কতা : বর্তমান যামানায় অধিকাংশ যুবক-যুবতী অশ্লীল উপন্যাস, ভিডিও এবং ইন্টারনেট নিয়ে ব্যস্ত থাকে। তারা কি কখনো ভেবে দেখেছে, তাদের মাঝে একজন রাসূল আল্লাহর পক্ষ থেকে কিতাব (জীবনবিধান) নিয়ে এসেছেন? আল্লাহ তাআলা ভালো-মন্দ যাচাই করার জন্য বিবেক দিয়েছেন। অনেক যুবক আছে, যারা কুপ্রবৃত্তি ও আশা-আকাঙ্ক্ষার পেছনে তাদের মূল্যবান যৌবনকে নষ্ট করে। তারা পানি ছাড়াই সাঁতার কাটে এবং ডানা ছাড়াই আকাশে উড়ে। অথচ অনেক যুবক আছে, প্রতি বছর তাদের ঈমান বৃদ্ধি হয়, দ্বীনের ওপর তাদের দৃঢ়তা বাড়ে, চরিত্রে উন্নতি হয় এবং তাদের চেষ্টা-প্রচেষ্টা আরও বেড়ে যায়। তাই নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, مَنْ طَالَ عُمُرُهُ، وَحَسُنَ عَمَلُهُ ‘তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি সবচেয়ে উত্তম, যে দীর্ঘ জীবন পেয়েছে এবং তার আমল সুন্দর হয়েছে’।[12]

(আগামী সংখ্যায় সমাপ্য)

মাহবূবুর রহমান মাদানী

শিক্ষক, আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ, ডাঙ্গীপাড়া, পবা, রাজশাহী।


[1]. মা‘রেফাতুস সুনান ওয়াল আছার, হা/১১৮৬২।

[2]. ছহীহ বুখারী, হা/৪০৯৭।

[3]. তাফসীর ফাতহুল ক্বাদীর, উক্ত আয়াতের তাফসীর দ্রষ্টব্য।

[4]. তাফসীর ফাতহুল ক্বাদীর, সূরা আল-কাহফ, ১৮/৬০-এর আলোচানা দ্রষ্টব্য।

[5]. আহমাদ, হা/১৭৪০৯, সনদ জায়্যেদ।

[6]. ছহীহ বুখারী, হা/১৪২৩; ছহীহ মুসলিম, হা/১০৩১।

[7]. তিরমিযী, হা/৩৭৬৮; মিশকাত, হা/৬১৫৪, হাসান ছহীহ।

[8]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৮৩৭; মিশকাত, হা/৫৬২৩।

[9]. ছহীহ বুখারী, হা/৪৯৮৬; মিশকাত, হা/২২২০।

[10]. আহমাদ, হা/৩৭০৬, সনদ ছহীহ।

[11]. আহমাদ, হা/১৩৪৬২।

[12]. তিরমিযী, হা/২৩২৯; মিশকাত, হা/৫২৮৫, হাদীছ ছহীহ।

Magazine