কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

নারীরা কেন একাধিক পুরুষের সাথে একত্রে সংসার করতে পারবে না

post title will place here

আল্লাহ তাআলা পুরুষদের একত্রে চারজন স্ত্রী রাখার অনুমতি দিয়েছেন; কিন্তু একথা বলেননি যে, চারজন বিয়ে করতেই হবে। তিনি অনুমোদন দেওয়ার সাথে সাথে পুরুষদের সতর্কবার্তাও প্রদান করেছেন, যেন তারা কোনো অবস্থাতেই স্ত্রীদের ওপর সীমালঙ্ঘন না করে। আল্লাহ তাআলার বাণী,﴿فَإِنْ خِفْتُمْ أَلَّا تَعْدِلُوا فَوَاحِدَةً أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ ذَلِكَ أَدْنَى أَلَّا تَعُولُوا﴾ ‘তোমরা যদি আশঙ্কা কর যে, সুবিচার করতে পারবে না, তবে একজনকে বা তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসীকেই গ্ৰহণ করো’ (আন-নিসা, ৪/৩)। অন্যত্র আল্লাহ তাআলা বলেন,﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا يَحِلُّ لَكُمْ أَنْ تَرِثُوا النِّسَاءَ كَرْهًا وَلَا تَعْضُلُوهُنَّ لِتَذْهَبُوا بِبَعْضِ مَا آتَيْتُمُوهُنَّ إِلَّا أَنْ يَأْتِينَ بِفَاحِشَةٍ مُبَيِّنَةٍ وَعَاشِرُوهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ فَإِنْ كَرِهْتُمُوهُنَّ فَعَسَى أَنْ تَكْرَهُوا شَيْئًا وَيَجْعَلَ اللَّهُ فِيهِ خَيْرًا كَثِيرًا﴾ ‘হে ঈমানদারগণ! জোর জবরদস্তি করে নারীদের উত্তরাধিকার হওয়া তোমাদের জন্য বৈধ নয়। তোমরা তাদেরকে যা দিয়েছো তা থেকে কিছু আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যে তাদেরকে অবরুদ্ধ করে রেখো না; যদি না তারা স্পষ্ট খারাপ আচরণ করে। আর তোমরা তাদের সাথে সদ্ভাবে জীবনযাপন করবে। তোমরা যদি তাদেরকে অপছন্দ কর তবে এমন হতে পারে যে, আল্লাহ যাতে প্রভূত কল্যাণ রেখেছেন তোমরা তাকে অপছন্দ করছ’ (আন-নিসা, ৪/১৯)। আল্লাহ তাআলা আরও বলেন,﴿وَلَنْ تَسْتَطِيعُوا أَنْ تَعْدِلُوا بَيْنَ النِّسَاءِ وَلَوْ حَرَصْتُمْ فَلَا تَمِيلُوا كُلَّ الْمَيْلِ فَتَذَرُوهَا كَالْمُعَلَّقَةِ وَإِنْ تُصْلِحُوا وَتَتَّقُوا فَإِنَّ اللَّهَ كَانَ غَفُورًا رَحِيمًا﴾ ‘তোমরা যত ইচ্ছে কর না কেন তোমাদের স্ত্রীদের প্রতি সমান ব্যবহার করতে কখনোই পারবে না। তবে তোমরা কোনো একজনের দিকে সম্পূর্ণভাবে ঝুঁকে পড়ো না ও অপরজনকে ঝুলন্ত অবস্থায় রেখো না; যদি তোমরা নিজেদেরকে সংশোধন কর এবং তাক্বওয়া অবলম্বন কর তবে নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’ (আন-নিসা, ৪/১২৯)

নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,مَنْ كَانَتْ لَهُ امْرَأَتَانِ فَمَالَ إِلَى إِحْدَاهُمَا جَاءَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَشِقُّهُ مَائِلٌ ‘যে ব্যক্তি দু’জন স্ত্রী থাকা অবস্থায় তাদের একজনের প্রতি ঝুঁকে পড়ল, ক্বিয়ামতের দিন সে কাঁধ ঝোলানো অবস্থায় উপস্থিত হবে’।[1] একজন ছাহাবী এসে নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! স্ত্রীর উপর স্বামীর হক্ব কী? তিনি বলেন,أَنْ تُطْعِمَهَا إِذَا طَعِمْتَ وَتَكْسُوَهَا إِذَا اكْتَسَيْتَ أَوِ اكْتَسَبْتَ وَلَا تَضْرِبِ الْوَجْهَ وَلَا تُقَبِّحْ وَلَا تَهْجُرْ إِلَّا فِي الْبَيْتِ ‘তুমি যখন আহার করবে তাকেও আহার করাবে। তুমি পোশাক পরিধান করলে তাকেও পোশাক দিবে। তার মুখমণ্ডলে মারবে না, তাকে গালমন্দ করবে না এবং পৃথক রাখতে হলে ঘরের মধ্যেই রাখবে’।[2]

কোনো স্বামী যদি স্ত্রীর ভরণপোষণ করতে না পারে তাহলে তার জন্য একাধিক বিয়ে করা বৈধ নয়। আল্লাহ তাআলা ঢালাওভাবে সকল পুরুষকে একাধিক স্ত্রী গ্রহণের অনুমতি দেননি, বরং শর্তসাপেক্ষে দিয়েছেন। যারা এ শর্ত পূরণ করতে পারবে, তারা একাধিক স্ত্রী গ্রহণ করতে পারবে, নচেৎ নয়।

এখন শুনুন, কেন নারীরা একত্রে একাধিক পুরুষ গ্রহণ করতে পারবে না তার গোপন রহস্য। আল্লাহ তাআলা কুরআনে নারীদের সাদৃশ্য দিয়েছেন শস্য খেতের সাথে। আল্লাহ তাআলা বলেন,﴿نِسَاؤُكُمْ حَرْثٌ لَكُمْ فَأْتُوا حَرْثَكُمْ أَنَّى شِئْتُمْ﴾ ‘তোমাদের স্ত্রীরা তোমাদের শস্যক্ষেত্র সদৃশ। অতএব, তোমরা তোমাদের শস্যখেতে যেভাবে ইচ্ছে গমন করতে পার’ (আল-বাক্বারা, ২/২২৩)

একটা উদাহরণ দিই, কোনো একটি খেতে চারজন লোক একত্রে শস্যের বীচি ছিটিয়ে দিল। এখন চারা অঙ্কুরিত হওয়ার পর তারা কি বলতে পারবে কার বীচি থেকে চারা উৎপন্ন হয়েছে, আর কার বীচি থেকে হয়নি? কখনো পারবে না। নারীদের জরায়ু হলো একটা ঝিনুকের ন্যায়, যে ঝিনুক অধীর আগ্রহ নিয়ে বৃষ্টির অপেক্ষার প্রহর গুণতে থাকে। যখনই আল্লাহর হুকুমে আকাশ থেকে রহমতের বৃষ্টি পতিত হয়, তখন ঝিনুক এক ফোঁটা পানি নিয়ে গভীর পানিতে ডুব দেয়। 

এক ফোঁটা পানি থেকে আবিষ্কৃত হয় মণিমুক্তা, যা আমরা অঢেল অর্থ দিয়ে ক্রয় করে নিয়ে এসে প্রিয়জনকে উপহার দিই। নারীর জরায়ুতে উপযুক্ত সময়ে এক ফোঁটা বীর্য পতিত হওয়ার সাথে সাথে ঝিনুকের ন্যায় জরায়ুর মুখ বন্ধ হয়ে যায়। এখন কথা হলো কোনো নারীর সাথে যদি চারজন পুরুষ একত্রে সহবাস করে তাহলে নারী বুঝবে কীভাবে যে কার বীর্য দ্বারা সন্তান জন্মগ্রহণ করেছে? বিশেষ করে ওই চারজন পুরুষ যদি কপট প্রকৃতির হয় তাহলে তারা সবাই বলবে এই সন্তান তার বীর্য দিয়ে জন্মগ্রহণ করেনি। 

পরবর্তীতে এই সন্তানটি কাকে বাবা হিসেবে পরিচয় দিবে? কে তার দেখভাল করবে? কার কাছে সে মাথা গোঁজার স্থান পাবে? এই সন্তান সকলের নিকট অবহেলার পাত্রে পরিণত হবে। সবাই তাকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করবে। সমাজের মধ্যে এই সন্তান মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে না। কারো সামনে বুক টান করে কথা বলতে পারবে না। কেউ তাকে গ্রহণ করবে না। কারণ তার পিতৃপরিচয় নেই; নেই তার বংশের নাম-নিশানা।

বংশ পরিচয় যেন পৃথিবী থেকে বিলীন না হয়ে যায় এজন্য ইসলাম নারীদের একাধিক স্বামী রাখার অনুমতি দেয়নি। তবে ইসলাম নারীদের অনুমতি দিয়েছে যে, স্বামী তাকে ছেড়ে দিলে অন্যত্র বিয়ে বসতে পারবে। পুরুষরা হলো স্বয়ংক্রিয় মেশিনের মতো, যেখানে ইচ্ছে তারা তাদের উৎপাদিত জিনিস ফেলতে পারে; কিন্তু নারী তা পারে না। প্রশ্ন আসতে পারে, এই ক্ষমতা আল্লাহ তাআলা তাদের দেননি কেন? নিম্নের দুটি আয়াত দেখুন,

আল্লাহ তাআলা বলেন,﴿وَلَا تَتَمَنَّوْا مَا فَضَّلَ اللَّهُ بِهِ بَعْضَكُمْ عَلَى بَعْضٍ لِلرِّجَالِ نَصِيبٌ مِمَّا اكْتَسَبُوا وَلِلنِّسَاءِ نَصِيبٌ مِمَّا اكْتَسَبْنَ وَاسْأَلُوا اللَّهَ مِنْ فَضْلِهِ إِنَّ اللَّهَ كَانَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمًا﴾ ‘আর তোমরা ওসবের আকাঙ্ক্ষা করো না যার দ্বারা আল্লাহ তোমাদের কাউকে অন্যের উপর প্রাধান্য দান করেছেন। পুরুষরা যা উপার্জন করেছে তাতে তাদের অংশ রয়েছে এবং নারীরা যা উপার্জন করেছে তাতে তাদের অংশ আছে এবং তোমরা আল্লাহরই নিকট তাঁর অনুগ্রহ প্রার্থনা করো, নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্ব বিষয়ে মহাজ্ঞানী’ (আন-নিসা, ৪/৩২)। আল্লাহ একই সূরাতে একটি আয়াত পরে বলেন,﴿الرِّجَالُ قَوَّامُونَ عَلَى النِّسَاءِ بِمَا فَضَّلَ اللَّهُ بَعْضَهُمْ عَلَى بَعْضٍ وَبِمَا أَنْفَقُوا مِنْ أَمْوَالِهِمْ﴾ ‘পুরুষগণ নারীদের উপর কর্তৃত্বশীল, যেহেতু আল্লাহ তাদের মধ্যে একের উপর অপরকে প্রাধান্য দান করেছেন এজন্য যে, তারা স্বীয় ধনসম্পদ হতে ব্যয় করে থাকে’ (আন-নিসা, ৪/৩৪)। আল্লাহ তাআলা অন্যত্র বলেন, ﴿وَلِلرِّجَالِ عَلَيْهِنَّ دَرَجَةٌ﴾ ‘আর তাদের উপর (স্ত্রীদের) রয়েছে পুরুষের প্রাধান্য’ (আল-বাক্বারা, ২/২২৮)

আল্লাহ তাআলা মানুষ সৃষ্টি করেছেন। আর তিনি বুঝেন মানুষের চাহিদা বা প্রয়োজনের কথা। একটা নারী প্রতি মাসে ৭/৮ দিন অসুস্থ থাকে। অসুস্থ থাকাবস্থায় স্বামী তার মনোবাসনা পূরণ করতে পারে না। কারণ আল্লাহ তায়ালা নিষেধ করেছেন,﴿فَاعْتَزِلُوا النِّسَاءَ فِي الْمَحِيضِ وَلَا تَقْرَبُوهُنَّ حَتَّى يَطْهُرْنَ فَإِذَا تَطَهَّرْنَ فَأْتُوهُنَّ مِنْ حَيْثُ أَمَرَكُمُ اللَّهُ﴾ ‘ঋতুস্রাবাস্থায় নারীদের থেকে দূরে থাকো। পবিত্র হওয়ার আগ পর্যন্ত তাদের নিকটবর্তী হবে না। পবিত্র হলে আল্লাহ যেভাবে আদেশ করেছেন, সেভাবে আসো (সহবাস করো)’ (আল-বাক্বারা, ২/২২২)

এখন কথা হলো স্ত্রীর অসুস্থাবস্থায় যদি স্বামীর কামবাসনা জাগ্রত হয় তাহলে স্বামী কী করবে? যেনা-ব্যভিচারে লিপ্ত হবে, না-কি বৈধ পন্থায় দ্বিতীয় বিয়ে করে মনোবাসনা পূরণ করবে? একটি মহিলার উদরে সন্তান চলে আসলে একটা সময় তার সাথে আর সহবাস করা যায় না। এই অবস্থা চলতে থাকে সন্তান প্রসব করা পর্যন্ত। সন্তান প্রসব করার পর আরও ৪০ দিন স্বামীকে অপেক্ষা করতে হয়।

আল্লাহ তাআলা এজন্য চার পর্যন্ত বিয়ে বৈধ করেছেন, যেন তাঁর বান্দারা অবৈধ কর্মে লিপ্ত না হয়।

ইসলাম মানুষের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রেখেছে। মানুষের অন্তর্নিহিত কথা আল্লাহ বুঝেন। আর এজন্যই তার প্রণীত প্রত্যেকটি বিধি মানুষের জন্য কল্যাণকর ও হৃদয়ঙ্গম। কিন্তু আমরা মানুষরা আমাদের অপ্রতুল জ্ঞান দিয়ে তা অনুধাবন করতে পারি না, পারলেও নিজ স্বার্থের বিরুদ্ধে যায় বিধায় মানতে নারাজ। প্রশ্নবিদ্ধ করি ইসলামকে, সমালোচনার তীক্ষ্ম তীর ছুড়ি আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দিকে। অনেক বিষয় আছে যা আমাদের চর্মচোখে চিত্তাকর্ষক মনে হয়, অথচ আল্লাহর নিকট তা বিদঘুটে। আল্লাহর তাআলা এরশাদ করেছেন,﴿وَعَسَى أَنْ تَكْرَهُوا شَيْئًا وَهُوَ خَيْرٌ لَكُمْ وَعَسَى أَنْ تُحِبُّوا شَيْئًا وَهُوَ شَرٌّ لَكُمْ﴾ ‘তোমরা অনেক বিষয় অপছন্দ মনে কর, অথচ এতে রয়েছে প্রভূত কল্যাণ। আবার অনেক বিষয় পছন্দ করো, অথচ এতে রয়েছে ক্ষতি’ (আল-বাক্বারা, ২/২১৬)

বর্তমানে তরুণীদের স্বচ্ছ নির্মল হৃদয়ে বিষবাষ্প ঢুকিয়ে দিচ্ছে কিছু ইসলামবিদ্বেষী মহল। নারী স্বাধীনতার নামে তাদের রাস্তায় নামাচ্ছে। নিরাপদ দুর্গ থেকে নিয়ে যাচ্ছে উন্মুক্ত মাঠে-প্রান্তরে। অযাচিত অনর্থক প্রশ্ন উত্থাপন করে নারীদের মগজ ধোলাই করে দিচ্ছে। তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে নারী ভোগ করা।

নারীদের বেহায়া বেলেল্লাপনার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। সুকৌশলে শ্লীলতাহানি করছে। নারীরা আজ শ্লোগান দিচ্ছে, ‘আমার দেহ, আমার মন, যাকে ইচ্ছা তাকে দেব’। অথচ তার এই দেহটা হলো আল্লাহর পক্ষ থেকে আমানত। একমাত্র এটা ভোগ করবে তার স্বামী। এই বিপথগামী নারীদের কে বুঝাবে? কে তাদের ফিরিয়ে আনবে প্রখর রোদ থেকে ছায়াতলে? যত দিন যাচ্ছে তত বিপথগামী হচ্ছে নারীরা। এখন নারীরা হরহামেশা ধর্ষণের শিকার হচ্ছে, ইতোপূর্বে যার সংখ্যা ছিল একেবারেই নগণ্য। আল্লাহ তাআলা তাদের হেদায়াতের দীপ্তিময় আলোয় আলোকিত করুন- আমীন!

সাঈদুর রহমান

শিক্ষক, আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ, বীরহাটাব-হাটাব, রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ।


[1]. আবূ দাঊদ, হা/২১৩৩, হাদীছ ছহীহ।

[2]. আবূ দাঊদ, হা/২১৪২, হাদীছ হাসান।

Magazine