কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

আরাফার খুৎবা

[যুলহিজ্জাহ, ১৪৪৩ হি. মোতাবেক ৮ জুলাই, ২০২২। আরাফার মাঠে অবস্থিত ‘মসজিদে নামিরাই’ আরাফার খুৎবা প্রদান করেন শায়খ ড. আব্দুল করীম আল-ঈসা হাফিযাহুল্লাহউক্ত খুৎবা বাংলা ভাষায় অনুবাদ করেন আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ, রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ এর সম্মানিত সিনিয়র শিক্ষক শায়খ মুহাম্মাদ হযরত আলী। খুৎবাটি ‘মাসিক আল-ইতিছাম’-এর সুধী পাঠকদের উদ্দেশ্যে প্রকাশ করা হলো।]

সমস্ত প্রশংসা সর্বজ্ঞানী, সবজান্তা আল্লাহর জন্য, তাঁর সদৃশ কোনো কিছুই নেই, তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা। তিনিই আল্লাহ আসমানে এবং যমীনে, তিনি তোমাদের গোপন-প্রকাশ্য বিষয় জানেন, তিনি জানেন যা তোমরা উপার্জন কর। তাঁর কাছেই আছে গায়েবের চাবিকাঠি; যা তিনি ছাড়া আর কেউ জানেন না। তিনি জানেন যা আছে স্থলভাগে ও জলভাগে, এমন কোনো বৃক্ষপত্র পতিত হয় না, যা তিনি জানেন না। যমীনের অন্ধকারে কোনো শষ্যদানা, সজীব বা নির্জীব যে কোনো বস্তু; সব কিছু রয়েছে সুষ্পষ্ট কিতাবে।

আর আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোনো মা‘বূদ নেই, তিনি গোপন ও অতিগোপন বিষয়ও জানেন; আসমান ও যমীনের কোনো কিছুই তাঁর কাছে গোপন থাকে না। নিশ্চয়ই তোমাদের মা‘বূদ আল্লাহ, যিনি ব্যতীত সত্য কোনো মা‘বূদ নেই। জ্ঞানগতভাবে তিনি প্রতিটি জিনিসকে পরিব্যাপ্ত করে আছেন। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয়ই মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। মহান আল্লাহ তাঁর বিবরণ দিয়েছেন এভাবে যে, ‘আর তিনি আপনাকে শিক্ষা দিয়েছেন, যা আপনি জানতেন না। আর আপনার উপর আল্লাহর মহান অনুগ্রহ রয়েছে’। তাঁর উপর, তাঁর পরিবার-পরিজনের উপর এবং তাঁর সমস্ত ছাহাবীদের উপর আল্লাহর দরূদ ও প্রভূত সালাম বর্ষিত হোক।

অতঃপর, হে বায়তুল্লাহর হাজীগণ! প্রতিটি জায়গায় অবস্থিত হে মুসলিমগণ, আপনারা মহান আল্লাহকে ভয় করুন, তবে আপনারা সফলতা, নাজাত ও দুনিয়া-আখেরাতে সুখ পাবেন। মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘যদি তারা ঈমান আনয়ন করত এবং তাক্বওয়া অবলম্বন করত, তবে তারা আল্লাহর কাছ থেকে কল্যাণ লাভ করত, যদি তারা বুঝত’ (আল-বাক্বারা, ২/১০৩)। আল্লাহ তাআলা আরো বলেন, ‘তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, আর জেনে রাখো, নিশ্চয়ই আল্লাহ মুত্তাক্বীদের সাথে আছেন’ (আল-বাক্বারা, ২/১৯৪)। তিনি আরো বলেন, ‘তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, আর জেনে রাখো, নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্ব বিষয়ে পরিজ্ঞাত’ (আল-বাক্বারা, ২/২৩১)

আমরা কীভাবে আল্লাহকে ভয় করব না এবং একত্ববাদের সাথে তাঁর ইবাদত করব না, অথচ তিনি কল্যাণ ও অকল্যাণ সাধনকারী। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যদি আল্লাহ আপনাকে কোনো ক্ষতি দ্বারা স্পর্শ করেন, তবে তিনি ছাড়া তা মোচনকারী আর কেউ নেই। আর যদি তিনি আপনার মঙ্গল করতে চান, তবে তাঁর অনুগ্রহকে প্রতিরোধকারী কেউ নেই। তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা তার কাছে তিনি সেটা পৌঁছান। আর তিনি পরম ক্ষমাশীল, অতিদয়ালু’ (ইউনূস, ১০/১০৭)। তিনি তাক্বওয়া ও ইলম শিক্ষার মাঝে যোগসূত্র স্থাপন করে বলেন, ‘তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, আর তিনি তোমাদের ইলম দান করবেন। আল্লাহ সর্ব বিষয়ে পরিজ্ঞাত’ (আল-বাক্বারা,২/২৮২)। তাক্বওয়ার অন্তর্ভুক্ত হলো তিনি আমাদেরকে যে আল্লাহর একত্ববাদের ‍দিকে আহ্বান করেন, তার সে আহ্বানে সাড়া দেওয়া এভাবে যে, ইবাদতকে আল্লাহর জন্য একনিষ্ঠ করা এবং এর কোনো কিছুকে আল্লাহ ছাড়া আর কারো কাছেই সমর্পণ না করা, সে যে-ই হোক না কেন!

হে লোকসকল! তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের উপাসনা করো, যিনি তোমাদের ও তোমাদের পূর্ববর্তীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাক্বওয়া অবলম্বন করতে পার। যিনি তোমাদের জন্য যমীনকে বিছানাস্বরূপ এবং আকাশকে ছাদস্বরূপ সৃষ্টি করেছেন এবং তিনি আসমান থেকে তোমাদের জন্য পানি বর্ষণ করেন, অতঃপর তিনি তা দ্বারা তোমাদের জন্য জীবিকাস্বরূপ ফলমূল উৎপন্ন করেন। কাজেই তোমরা জেনে-শুনে আল্লাহর সাথে সমকক্ষ স্থির করো না। এটাই ছিল সমস্ত নাবীদের দাওয়াত। যেমন, ইবরাহীম আলাইহিস সালাম তাঁর জাতীকে বলেছিলেন, ‘তোমরা আল্লাহর উপাসনা করো, তাঁকে ভয় করো। এটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর, যদি তোমরা বুঝ’ (আল-আনকাবূত, ২৯/১৬)। আল্লাহ তাআলা ‍কিতাব অবতীর্ণ করেছেন, নাবী-রাসূলগণকে তাঁদের সম্প্রদায়ের কাছে শিক্ষক ও তাওহীদের দিকে আহ্বানকারী হিসেবে প্রেরণ করেছেন। তাওহীদ হলো এককভাবে আল্লাহর ইবাদত করা। প্রত্যেক নাবী তাঁর জাতিকে বলেছেন, ‘হে আমার সম্প্রদায়, তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো, তিনি ব্যতীত তোমাদের আর কোনো সত্যিকার মা‘বূদ নেই। তোমরা কি ভয় করবে না?’ (আল-আ‘রাফ ৭/৬৫)। কাজেই এটি স্থিরকৃত বিষয় যে, ইবাদতের ক্ষেত্রে আল্লাহকে একক জানার এই তাওহীদ, এটাই হলো ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এর অর্থ। ‘আর আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা দুই ইলাহা গ্রহণ করো না, নিশ্চয়ই সত্য ইলাহ একজনই। অতএব তোমরা কেবল আমাকেই ভয় করো। আসমানসমূহ ও যমীনের মাঝে যা কিছু আছে, সবই তাঁর জন্য। আর তাঁর জন্যই রয়েছে একনিষ্ঠ শাশ্বত আনুগত্য। তারপরও তোমরা আল্লাহ ছাড়া অন্যকে ভয় করবে?’ তোমাদের কাছে যেসব নেয়ামত আছে, তা আল্লাহর পক্ষ থেকে, তারপর তোমাদের যখন দুঃখ স্পর্শ করে, তখন তোমরা তাঁর কাছে রোনাজারি করো। অতঃপর যখন তিনি তোমাদের দুঃখ দূর করে দেন, তখনই তোমাদের মধ্যে একদল তাদের প্রতিপালকের সাথে শিরক স্থাপন করে। ফলে আমি তাদেরকে যা দিয়েছি, তা তারা অস্বীকার করে। তবে তোমরা ভোগ করে নাও, অচিরেই তোমরা (এর পরিণাম) জানতে পারবে’ (আন নাহল, ১৬/৫১-৫৫)

কাজেই আল্লাহর একত্বের সাক্ষ্য দেওয়া এবং মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রিসালাতের সাক্ষ্য দেওয়া আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উপায় এবং পরকালে নাজাতের কারণ। মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রিসালাতের সাক্ষ্য দেওয়ার অন্যতম অর্থ হলো তিনি যে বার্তা দিয়েছেন, তা সত্যায়ন করা, তাঁর নির্দেশসমূহ মেনে চলা এবং তিনি যে বিধান নিয়ে এসেছেন, তদনুযায়ী আমল করা। যেমনটা মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘হে নাবী! নিশ্চয়ই আমরা আপনাকে সাক্ষী, শুভসংবাদদানকারী ও ভীতিপ্রদর্শনকারী, আল্লাহর দিকে তাঁর অনুমতিক্রমে আহ্বানকারী এবং আলোক উজ্জ্বল প্রদীপরূপে পাঠিয়েছি’ (আল-আহযাব, ৩৩/৪৫-৪৬)

এই দুই শাহাদাহ ইসলামের রুকনসমূহের মধ্যে প্রথম রুকন। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘ইসলাম পাঁচটি স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত। তা হলো (১) এই সাক্ষ্য দেওয়া যে, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোনো মা‘বূদ নেই এবং নিশ্চয়ই মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল, (২) ছালাত প্রতিষ্ঠা করা, (৩) যাকাত প্রদান করা, (৪) রামাযানের ছিয়াম পালন করা এবং (৫) বায়তুল্লাহর হজ্জ পালন করা, যার সে পর্যন্ত পৌঁছার সামর্থ্য রয়েছে’।[1] হে হাজীবৃন্দ! আল্লাহ তাআলা এই ফরয পালন করা সহজ করে দিয়ে আপনাদের উপর অনুগ্রহ করেছেন। কাজেই এটি পালনে আপনারা নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হজ্জের অনুসরণ করুন। তিনি বলেছেন, ‘যাতে তোমরা আমার থেকে হজ্জের নিয়মকানুন গ্রহণ করতে পার’।[2] আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘হজ্জ হয় সুনির্দিষ্ট কতিপয় মাসসহূহে। অনন্তর যে ব্যক্তি এই মাসগুলোতে হজ্জ করার সংকল্প করে, সে যেন হজ্জের সময় স্ত্রী মিলন, পাপাচারিতা এবং কলহ-বিবাদ না করে। আর তোমরা যা কিছু ভালো কর, তা তিনি জানেন। আর তোমরা পাথেয় সংগ্রহ করবে। তবে তাক্বওয়ার পাথেয় সর্বোত্তম পাথেয়। অতএব, হে জ্ঞানবান ব্যক্তিবর্গ! তোমরা আমাকে ভয় করো’ (আল-বাক্বারা, ২/১৯৭)

হে বায়তুল্লাহর হাজীগণ! প্রতিটি জায়গায় অবস্থিত হে মুসলিমগণ! আমি আপনাদেরকে এবং নিজেকে তাক্বওয়ার উপদেশ দিচ্ছি। কেননা এটি শ্রেষ্ঠ পাথেয়। অনুরূপভাবে আমি আপনাদেরকে এবং নিজেকে তাক্বওয়ার উপদেশ দিচ্ছি সৎকাজে প্রতিযোগিতা করার। মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমরা দ্রুত ধাবিত হও তোমাদের রবের ক্ষমা ও এমন জান্নাতের দিকে, যার প্রশস্ততা আসমানসমূহ ও যমীন বরাবর। এটি মুত্তাক্বীদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে’ (আলে ইমরান, ৩/১৩৩)। হে আল্লাহর বান্দাগণ! ভালো কাজে ধাবিত হওয়ার অন্যতম অর্থ হলো সেসব ইসলামী মূল্যবোধ ধারণ করার ব্যাপারে আগ্রহী হওয়া, যা মুসলিমের সকল আচার-আচরণকে শালীন ও মার্জিত করে তাকে একজন পূর্ণাঙ্গ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলে। মহান রবের ঘোষণা অনুযায়ী এসবের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেন নাবী মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আমার কাছে তোমাদের মাঝে সবচেয়ে প্রিয় এবং ক্বিয়ামতের দিন আমার সবচেয়ে নিকটবর্তী হবে ঐ বক্তি যে তোমাদের মাঝে সর্বোৎকৃষ্ট চরিত্রের অধিকারী হবে’।[3]

অজ্ঞতা-মূর্খতার মোকাবেলা করার ব্যাপারে আল্লাহ বলেছেন, ‘আপনি ক্ষমার নীতি গ্রহণ করুন। ভালো কাজের নির্দেশ দান করুন। আর জাহেলদের এড়িয়ে চলুন’ (আল-আ‘রাফ ৭/১৯৯)

হে বায়তুল্লাহর হাজীগণ! হে মুসলিম সম্প্রদায়! ইসলাম প্রতিপালনের অন্তর্ভুক্ত হলো এমন সব কাজ থেকে দূরে থাকা, যা তাদের মাঝে পারস্পরিক ঘৃণা, হিংসা-বিদ্বেষ ও বিভেদ সৃষ্টি করে এবং যা কিছু আমাদের পারস্পরিক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ বিনষ্ট করে, তা থেকে দূরে থাকা। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা সমবেতভাবে আল্লাহর রজ্জুকে মযবূতভাবে ধারণ করো। পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না’ (আলেইমরান, /১০৩)। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘মানুষের মাঝে সর্বোত্তম হলেন ঐ ব্যক্তি যিনি মানুষের সবচেয়ে বেশি উপকার সাধন করেন’।[4] ইসলাম সকলের কল্যাণকে ভালোবাসে এবং তাদের মাঝে ভালোবাসার বন্ধন সৃষ্টি করতে চায়। এসব মহান মুল্যবোধ ও আদর্শের কারণেই ইসলামের আলো প্রসারিত হয়েছে। এই কল্যাণের তাবলীগ করার জন্য ধারাবাহিকভাবে সচেষ্ট থেকেছেন কিছু মানুষ, যারা আল্লাহর সাথে কৃত ওয়াদা বাস্তবায়ন করেছেন। অনুরূপভাবে এই কাজে গভীর ইলমের অধিকারী আলেমদের বরকতময় অবদান রয়েছে। তারা সকল বিষয়ে ইসলামের সঠিক ব্যাখ্যা দান করেছেন, ইসলাম সম্পর্কে ভুল ও ভ্রান্ত ধারণার মুলোৎপাটনে নিরলসভাবে কাজ করেছেন।

বায়তুল্লাহর হাজীগণ! দু‘আ কবুলের স্থানসমূহের মাঝে আরাফায় আপনাদের এই অবস্থান অন্যতম একটি স্থান। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরাফায় অবস্থান করেছেন, আরাফায় খুৎবা দিয়ে এক আযান ও দুই ইক্বামতে যোহর ও আছরের ছালাত একত্রিত করে ক্বছর করে আদায় করার পর আল্লাহর কাছে দু‘আ করেছেন, তাঁর ‍যিকির করেছেন এবং সূর্যাস্ত পর্যন্ত এখানে অবস্থান অব্যাহত রেখেছেন। অতঃপর ধীরে-সুস্থে পথ চলে মুযদালিফায় গিয়েছেন এবং ছাহাবীদেরকেও শান্ত ও ধীরস্থিরতার সাথে পথ চলতে আদেশ করেছেন। মুযদালিফায় মাগরিবের তিন রাক‘আত ছালাত এবং এশার দুই রাক‘আত ছালাত আদায়া করেছেন। এখানে রাত্রি যাপন করেছেন। এখানে ফজরের ছালাত আদায় করে যিকিরের জন্য বসেছেন এবং প্রভাত স্পষ্ট হওয়া পর্যন্ত যিকির করেছেন। তারপর মিনায় গিয়েছেন, অতঃপর জামরায়ে আকাবায় (বড় জামরায়) সাতটি কঙ্কর নিক্ষেপ করেছেন। তারপর কুরবানীর পশু যবেহ করেছেন। এবং মাথা মুণ্ডন করে প্রাথমিক হালাল হয়ে গিয়েছেনে। তারপর মক্কায় ‍গিয়ে তাওয়াফ করে পুনরায় মিনায় ফিরে এসেছেন এবং আইয়ামে তাশরীকের রাতগুলোতে এখানে রাত্রি যাপন করেছেন। মিনায় রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিক পরিমাণে আল্লাহর যিকির করতেন এবং প্রত্যেহ জামরাগুলোতে কঙ্কর নিক্ষেপ করতেন; প্রথমে ছোট জামরায় সাতটি কঙ্কর নিক্ষেপ করতেন, তারপর মধ্য জামরায় সাতটি কঙ্কর নিক্ষেপ করতেন। এরপর আল্লাহর কাছে দু‘আ করতেন। তারপর জামরায়ে আকাবায় সাতটি কঙ্কর নিক্ষেপ করতেন। তিনি মা‘যূর ব্যক্তিকে মিনায় রাত্রি যাপন করা থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। তিনি ১৩ যিলহজ্জ পর্যন্ত এখানে অবস্থান করেছেন। তবে ১২ ‍যিলহজ্জে চলে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন। হজ্জের কার্যক্রম সম্পন্ন করার পর মক্কা থেকে যাত্রা করার পূর্বে তিনি বিদায়ী তাওয়াফ করেছেন।

অতএব, হে মুসলিমবৃন্দ! আপনারা মহান এই সুযোগ কাজে লাগান। আরাফার দিন, যাতে আল্লাহ তাআলা এই আয়াত নাযিল করেছেন, ‘আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পরিপূর্ণ করে দিলাম, তোমাদের উপর আমার নেয়ামতের পূর্ণতা দান করলাম, আর দ্বীন হিসেবে তোমাদের জন্য ইসলামকে মনোনিত করলাম’ (আল-মায়েদা, /)। এই ব্যাপারে রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আরাফার দিনের চেয়ে এমন কোনো দিন নেই, যাতে আল্লাহ অধিক পরিমাণ মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন। এ সময় আল্লাহ নিকটবর্তী হোন তারপর তাদের নিয়ে ফেরেশতাদের কাছে গর্ব করেন’।[5] কাজেই বেশি বেশি দু‘আ করুন। কেননা আল্লাহ তাআলা আপনাদের দু‘আ কবুল করার ওয়াদা করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘আর তোমাদের প্রতিপালক বলেছেন, তোমরা আমার কাছে দু‘আ করো, আমি তোমাদের দু‘আ কবুল করব’ (গাফির, ৪০/৬০)। তিনি আরো বলেছেন, ‘আর যখন আমার বান্দা তোমাকে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে, (তবে বলুন যে,) নিশ্চয়ই আমি নিকটবর্তী। আমি আহ্বানকারীর আহ্বানে সাড়া দেই, যখন সে আহ্বান করে’ (আল-বাক্বারা, ২/১৮৬)

হে আল্লাহ! হাজীদের হজ্জের কার্যাবলিকে কবুল করুন। তাঁদের দু‘আ কবুল করুন। তাঁদের কার্যাবলি সহজ করে দিন। তাদের পাপরাশি ক্ষমা করে দিন। তাদেরকে তাদের দেশে নিরাপদে ফিরিয়ে দিন এমন অবস্থায় যে তারা ছওয়াব সঞ্চয় করেছেন, তাদের সম্মান-মর্যাদা সমুন্নত হয়েছে। তাদের মাঝে কেউ কেউ বলেন, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে দুনিয়াতে ও আখেরাতে কল্যাণ দান করুন এবং আমাদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে পরিত্রাণ দিন’ (আল-বাক্বারা, ২/২০১)। হে আল্লাহ! মুসলিমদের অবস্থা সংশোধন করে দিন। তাদের মাঝে বন্ধুত্ব সৃষ্টি করে দিন। তাদের মাঝে কল্যাণ ও ইলমের বিস্তার ঘটান। তাদের সন্তানদের সংশোধন করুন। তাদের রিযিক্বে বরকত দিন। তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করান। হে আল্লাহ! সম্মানিত হারামাইনের খাদেম বাদশা সালমান বিন আব্দুল আযীয এবং তার সুযোগ্য যুবরাজকে ভালো কাজের তাওফীক্ব দিন, সংশোধন করুন এবং সাহায্য করুন। তাদেরকে এবং তাদের সরকারকে উত্তম প্রতিদান দান করুন। ইসলাম, মুসলিম ও সমগ্র মানবতার জন্য যা তারা করেছেন এবং ভবিষ্যতে যা করবেন তার বিনিময়স্বরূপ। আর আপনি তাদের সাথে সাহায্য-সহযোগিতাকারী হিসেবে থাকুন। আল্লাহ তাআলা আমাদের নবী মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, তাঁর পরিবার-পরিজন ও ছাহাবীদের উপর সালাত ও সালাম বর্ষণ করুন।

অনুবাদ  : শায়খ মুহাম্মাদ হযরত আলী


[1]. ছহীহ বুখারী, হা/৮; ছহীহ মুসলিম, হা/১৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/৬০২২।

[2]. ছহীহ মুসলিম, হা/৩০২৮।

[3]. তিরমিযী, হা/২০১৮।

[4]. ছহীহুল জামে‘, হা/৩২৮৯।

[5]. ছহীহ মুসলিম, হা/৩১৭৯।

Magazine