কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

চিকিত্সাবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে ছিয়াম

post title will place here

আল্লাহ তাআলা বলেন,يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর ছিয়াম ফরয করা হয়েছে যেরূপ ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর, যেন তোমরা তাক্বওয়া অর্জন করতে পারো’ (আল-বাক্বারা, ২/১৮৩)। একই সূরায় ১৮৫ নং আয়াতে বলা হয়েছে, পবিত্র রামাযান মাসেই আল-কুরআন নাযিল করা হয়েছে। শুধু পবিত্র আল-কুরআনই নয়; এই রামাযান মাসেই অন্যান্য আসমানী কিতাব ও ছহীফা নাযিল করা হয়েছে। রামাযান মাসের প্রথম রাত্রে নাযিল হয়েছে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম-এর প্রতি তাঁর ছহীফা। দাঊদ আলাইহিস সালাম-এর প্রতি যাবূর কিতাব নাযিল হয় এ মাসের ১২ তারিখে। মূসা আলাইহিস সালাম-এর প্রতি তাওরাত কিতাব নাযিল হয় এ মাসের ৬ তারিখে এবং ঈসা আলাইহিস সালাম-এর প্রতি ইঞ্জীল কিতাব নাযিল হয় ১৮ রামাযান। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি আল-কুরআন নাযিল হয় ২৪ রামাযান।[1] আল-কুরআনের উপরের আয়াতের সূত্র জানিয়ে দেয়, ছওম বা ছিয়াম পালনের ইতিহাস দীর্ঘ।

ছিয়ামের আসল উদ্দেশ্য তাক্বওয়া অর্জন। একই সাথে আমাদের শরীর ও মনের জন্য এর অনেক উপকারিতা রয়েছে। ছিয়াম রাখার কারণে উচ্চ রক্তচাপের মাত্রা কমে আসে। নির্দিষ্ট সময়ে ছিয়াম রাখার কারণে আমাদের শরীরের চর্বি Bআলাইহিমাস সালামrরাযিয়াল্লাহু আনহুম হয়। কিন্তু এই উপবাস যদি দীর্ঘসময় ধরে করা হয়, তাহলে মাংসপেশির শর্করা ভেঙে যায় যা স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সাহরী খেতে এবং ইফতার দেরি না করার ব্যাপারে উৎসাহিত করেছেন। নিয়মিত ছিয়াম রাখলে হৃদরোগের ঝুঁকি ৫৮% কমে যায়। ছিয়াম রাখার কারণে ক্ষতিকর কোলেস্টেরল LDL (Law Density Lipoprotein) কমিয়ে সুগারের Metabolism এর উন্নতি হয়। এটা ওজন বৃদ্ধি পাওয়া এবং ডায়াবেটিস এর ঝুঁকি কমায় অর্থাৎ হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। ছিয়াম রাখলে ৩০-৪০% ভালো কলেস্টেরল HDL (High Density Lipoprotein) বৃদ্ধি পায় এবং TG (ট্রাইগ্লিসারাইড নামক এক ধরণের চর্বি অণু, যা শরীরে অধিক মাত্রায় থাকলে হৃদরোগেরর ঝুঁকি বাড়ায়) ও শরীরের ওজন কমায়। এক কথায় বলা যায় ছিয়াম হচ্ছে হৃদরোগের ঝুঁকি কমানোর ঔষধবিহীন অন্যতম একটি মাধ্যম।

ইসলামের প্রথম যুগে ছিয়ামের নিয়ম ছিল এশার পর ঘুমিয়ে পরলে পরদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত পানাহার এবং কামাচার হারাম হয়ে যেত। ইসলামী শরীআতে সুবহে সাদিক থেকে সুর্যাস্ত সময় পর্যন্ত কিছু খাওয়া বা পান করা এবং যৌন তৃপ্তিকর কোনো কিছু করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়। সূর্যাস্তের পর থেকে সুবহে সাদিকের আগ পর্যন্ত যে-কোনো আহার বিহারে সংযম সাধনা নষ্ট হয় না। ছিয়াম পালনকারীর জন্য মিথ্যা, পরনিন্দা, পরের অকল্যাণ চিন্তা ও মন্দকর্ম শুধু নিষিদ্ধই নয়; অনৈতিকভাবেও এর চর্চা বা পরিচর্চা করলে প্রকৃত ছিয়াম হবে না। বর্তমানে এক মাস ছিয়ামের পরও যদি কেউ সাওয়ালের ছিয়াম, মুহাররমের ছিয়াম, আরাফাতের দিনে ছিয়াম, সপ্তাহে দুই দিন বা মাসে তিন দিন ছিয়াম রাখেন তাহলে তাঁদের স্বাস্থ্যের উপকারিতা অন্যদের চেয়ে বেশি হবে যা রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করেছেন। রামাযান মাসে ছিয়াম সাধনার পর তারাবীহর ছালাতসহ অন্যান্য ইবাদত বিশেষ করে যাকাত (সচ্ছল ব্যক্তিদের) ও ফেত্বরা প্রদান, লায়লাতুল ক্বদর, ই‘তিকাফ পালনের মাধ্যমে একজন মুমিন ব্যক্তি নিজেকে শুধু পরিশুদ্ধই করে না; দু‘আ কবুলের সুযোগ গ্রহণ করে আখেরাতের নাজাতের পথ খুঁজে নেয়। ছিয়ামের আসল উদ্দেশ্য মানুষের জাগতিক ও মনোদৈহিক উৎকর্ষ সাধন করে ছিয়াম পালনকারীদের মনে আধ্যাত্মিক চৈতন্য জাগ্রত করে। ছিয়াম অনুশীলনে ছিয়াম পালনকারীকে আত্মসংযম ও আত্মত্যাগে উদ্বুদ্ধ করে ধৈর্য ও সহানুভূতির অনুভূতি জাগিয়ে তুলে। ফলে ছিয়াম রিপুগুলোকে কামনা-বাসনার ঊর্ধ্বে উঠতে সাহায্য করে। সর্বশেষ ও পরিপূর্ণ আসমানী কিতাব আল-কুরআনে ছিয়ামের আবেদন অনেক বেশি তাৎপর্য বহন করে। মুসলিমদের জীবনে ছিয়াম শুধু উপবাস নয়; ছিয়ামে উপবাস আছে, কিন্তু উপবাসে ছিয়াম নেই। ফলে উপবাসের সাথে ছিয়ামের গুণগত তফাতটাও গৌণ নয়। আল্লাহ তাআলা আমাদের ছিয়াম পালন করার তাওফীক্ব দান করুন- আমীন!

 মো. কায়ছার আলী

শিক্ষক, প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট।


[1]. তাফসীরে ত্ববারী, ২৪/৩৭৭।

Magazine