মহান আল্লাহর সৃষ্ট সর্বশ্রেষ্ঠ জীব হলো মানুষ। তিনি তাঁর এ সৃষ্টিকে আশরাফুল মাখলূকাত অর্থাৎ সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি বলে উল্লেখ করেছেন।
মানবদেহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের নাম মস্তিষ্ক। দেহের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম কাজগুলো নিপুণভাবে করে যায় এই ব্রেন বা মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশ। মস্তিষ্কই মানুষের শরীর ও মনের চালিকাশক্তি। একে তাই দেহের ‘হেড অফিস’ বা ‘সদর দপ্তর’ বলা হয়। প্রাণিজগতে বুদ্ধিমত্তায় সবার ওপরে মানবজাতির অবস্থান। মানুষের বুদ্ধি, চিন্তা করার ক্ষমতা, স্মৃতিশক্তি ও মেধা তাকে আগ্রহী করে তুলেছে, নিয়োজিত করেছে জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চায়। এর সফল প্রয়োগে হাজার বছরে মানবজাতি হয়ে উঠেছে চেনা দুনিয়ার নিয়ন্ত্রক। বুদ্ধিমত্তার শিখরে পৌঁছানো এই মানুষের সকল কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করে তার শরীরের ছোট্ট একটি অঙ্গ মস্তিষ্ক। আরও অনেক প্রাণীর মস্তিষ্ক থাকা সত্ত্বেও প্রায় ১.৫ কিলোগ্রাম ওযনের এই অঙ্গটির বিশেষ গঠন ও বিস্ময়কর কার্যক্ষমতাই মানুষকে করেছে অন্যান্য প্রাণী থেকে ভিন্ন, দিয়েছে অনন্য কিছু ক্ষমতা।
মস্তিষ্ক নিয়ন্ত্রণ করে আমাদের সমস্ত জৈবিক কাজ, শ্বাসপ্রশ্বাস, হৃৎস্পন্দন থেকে শুরু করে হাঁটাচলা, দেখাশোনা, কথা বলার মতো দৈনন্দিন কাজগুলো। আবার সেই একই মস্তিষ্ক থেকে প্রসূত হয় বুদ্ধিমত্তা, মেধা, আবেগ, স্মৃতিশক্তি, সৃজনশীলতা সবকিছু। একজন মানুষের জীবদ্দশায় এই কাজগুলো নিরবচ্ছিন্নভাবে করে যায় মস্তিষ্কের প্রায় ৮৬ বিলিয়ন নিউরন আর তাদের মধ্যে রয়েছে ১০০ ট্রিলিয়ন সংযোগ! এরকম ট্রিলিয়ন সংখ্যক নিউরন একত্রিত হয়ে আমাদের দেহ পরিচালনা করেছে। এখানে অবশ্যই অসীম শক্তিধর একজন আছেন যিনি এই বিশ্বজগতকে সৃষ্টি করেছেন। তিনি হচ্ছেন আল্লাহ তাআলা, যিনি সমগ্র জীব ও জীবনের সৃষ্টিকর্তা। কিন্তু বিনিময়ে আমরা রবকে কী দিচ্ছি? আমাদের কি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিত নয়? আল্লাহ তাই একদিকে যেমন আমাদের চোখ-কান দিয়েছেন, তেমনিভাবে তিনি আমাদেরকে শিখিয়ে দিয়েছেন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার ভাষা, وَهُوَ الَّذِي أَنْشَأَ لَكُمُ السَّمْعَ وَالْأَبْصَارَ وَالْأَفْئِدَةَ قَلِيلًا مَا تَشْكُرُونَ ‘তিনি তোমাদের কান, চোখ ও অন্তঃকরণ সৃষ্টি করেছেন; তোমরা খুব অল্পই কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে থাকো’ (আল-মুমিনূন, ২৩/৭৮)।
আজ পর্যন্ত পৃথিবীতে যত ডিজিটাল ডাটা তৈরি হয়েছে, তার সবকিছুই একজন মানুষের একটি মস্তিষ্কেই এঁটে যাবে! এতই অকল্পনীয় এর ক্ষমতা! তাই মানব মস্তিষ্ক এই মহাবিশ্বের সবচেয়ে বড় রহস্য। কেন একে মহাবিশ্বের সবচেয়ে বড় রহস্য বলা হয়, তারও একটি ব্যাখ্যা প্রয়োজন। যে গ্যালাক্সিতে আমাদের সৌরজগতের অবস্থান, সেই মিল্কিওয়ের দৈর্ঘ্য প্রায় ১ লক্ষ আলোকবর্ষ। অর্থাৎ এক সেকেন্ডে ৩ লক্ষ কিলোমিটার গতিতে ভ্রমণ করলে এর একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে যেতে সময় লাগবে প্রায় ১ লক্ষ বছর। মিল্কিওয়েতে আছে কমপক্ষে ১০০ বিলিয়ন নক্ষত্র। অথচ আমাদের এই মস্তিষ্কে নিউরন আছে প্রায় ৮৬ বিলিয়ন। একটি নিউরন ও তার আশেপাশের নিউরনগুলোর মধ্যে গড়ে ১০ হাজার সংযোগ থাকে। সেই হিসেবে মস্তিষ্কে প্রতি কিউবিক সেন্টিমিটারে যে পরিমাণ সংযোগ থাকে, তার সংখ্যা মিল্কিওয়ের নক্ষত্রের সংখ্যার চেয়েও বেশি। আর পুরো মস্তিষ্কে সংযোগ থাকে প্রায় ১০০ ট্রিলিয়ন। এ থেকে অনুমান করা যায়, আমাদের মস্তিষ্কের ক্ষমতা অকল্পনীয়।
আরেকটি উদাহরণ দেওয়া যাক। ১৯৯০ সালে উৎক্ষেপণের পর থেকে গত ৩৪ বছরে হাবল স্পেস টেলিস্কোপ যত উপাত্ত বিশ্লেষণ করেছে, সেই পরিমাণ উপাত্ত বিশ্লেষণ করতে মস্তিষ্কের সময় লাগবে ৩০ সেকেন্ডেরও কম। মস্তিষ্কের উপরিভাগে যে অংশটিকে কর্টেক্স বলে, এখানে ছোট একটি বালুকণার সমান আয়তনে তথ্য ধারণ করা সম্ভব প্রায় ২ হাজার টেরাবাইট।
গত ১০০ বছরে মস্তিষ্ক গবেষণায় অভাবনীয় অগ্রগতি সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের মোটামুটি ধারণা থাকলেও, অনেক কিছুই এখনও অজানা। মস্তিষ্ক নিয়ে আমাদের জানার পরিধি যত বাড়ছে, আরও নতুন নতুন রহস্য আমাদের সামনে উন্মোচিত হচ্ছে।
মস্তিষ্ক খুলির ভিতর অবস্থিত। খুলি কতকগুলো শক্ত হাড় দ্বারা তৈরি। মস্তিষ্কের বাহিরে তিন স্তরবিশিষ্ট পর্দা থাকে, যাকে বলা হয় মেনিনজিস। মস্তিষ্কের ওযন প্রায় ১.৫ কিলোগ্রাম। আমাদের খুলির ভেতর CSF (Cerebrospinal Fluid) নামক এক ধরনের তরল পদার্থ থাকে। ব্রেন এই তরল পদার্থের মধ্যে ভেসে থাকে বলে মস্তিষ্কের ওযন মনে হয় মাত্র ৫০ গ্রাম। এই জন্য মাথা ভার মনে হয় না। মস্তিষ্কের কোষকে বলা হয় নিউরন। মস্তিষ্কে রয়েছে প্রায় ৮৬ বিলিয়ন নিউরন। প্রতিটি নিউরন কমপক্ষে ১০ হাজার নিউরনের সাথে সংযুক্ত থাকতে পারে। আমরা মস্তিষ্ককে যদি সুবিশাল আকাশের সাথে কল্পনা করি, তবে নিউরনগুলো হচ্ছে একেকটা নক্ষত্র।
আমাদের মস্তিষ্কের প্রধান অংশের নাম Cerebrum, ডান Cerebrum এবং বাম Cerebrum। শরীরের ডান অংশ নিয়ন্ত্রণ করে বাম Cerebrum এবং বাম অংশ নিয়ন্ত্রণ করে ডান Cerebrum। Cerebrum-এর চারটি অংশ আছে। সেগুলো হলো— Frontal lobe, Parietal lobe, Occipital lobe এবং Temporal lobe.
Cerebrum-এর সামনের অংশের নাম Frontal lobe। এটা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের হাঁটাচলা, কাজকর্ম, কথা বলা, নির্বাহী কাজকর্ম, বুদ্ধি, বিবেচনা ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করে। Parietal lobe নিয়ন্ত্রণ করে শরীরে অনুভূতি। যেমন কোনো জায়গা কেটে গেলে আমরা ব্যথা পাই। তারপর চোখ বুজেও কোনো কিছু ধরলে আমরা বুঝতে পারি জিনিসটা কী? এই সব নিয়ন্ত্রণ করে Parietal lobe.
Temporal lobe আমাদের শরীরের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ এবং শব্দ কান দিয়ে শুনতে সাহায্য করে।
Occipital Lobe নিয়ন্ত্রণ করে আমাদের মহামূল্যবান জিনিস এই সুন্দর পৃথিবী চোখ দিয়ে দেখা।
একটা জিনিস লক্ষণীয়, যেমন- আমি যদি হাঁটতে না চাই, তাহলে বসে থাকতে পারি আবার হাঁটতে চাইলে হাঁটতেও পারি। এটা সম্পূর্ণ আমার ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল। এটার নাম Voluntary Action। আবার কিছু অঙ্গ ইচ্ছার উপর নির্ভর করে না। যেমন- হৃৎপিণ্ড। হৃৎপিণ্ড নিজেই পাম্প করতে থাকে। এটা মিনিটে ৭২ বার পাম্প করতে থাকে। হৃৎপিণ্ড আমি বললেই বন্ধ হবে না। এটাকে বলা হয় Autonomic action।
Cerebrum মানুষের Voluntary action নিয়ন্ত্রণ করে। Autonomic action নিয়ন্ত্রণ করে Hypothalamus ও brainstem। Hypothalamus থাকে Cerebrum-এর মধ্যে ও Brainstem থাকে Cerebrum-এর নিচে ও Cerebellum এর সামনে।
Brain-এর পিছনের অংশটুকুকে বলা হয় Cerebellum. Cerebellum-এর কাজ হচ্ছে শরীরের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ করা। আমরা যে হাঁটাচলা করি তা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য Cerebellum গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যদি Cerebellum-এ কোনো রোগ হয়, তাহলে মানুষ হাঁটতে পারবে না এবং একদিকে পড়ে যাবে। এমনকি বসা থেকে উঠতেই পারবে না। Medulla Oblongata থেকে রশির মতো একটি অঙ্গ কোমর পর্যন্ত গিয়ে শেষ হয়েছে। চিকিৎসা বিদ্যায় এটাকে Spinal Cord বলা হয়। Mid Brain, Pons ও Medulla Oblongata-কে একত্রে Brainstem বলে।
Cerebrum-এর ভিতরে আরেকটি অংশ আছে, যার নাম Lymbic System। এই System মানুষের আবেগ, অনুভূতি, ভালোবাসা, রাগ, ক্রোধ, হিংসা, ভালোলাগা বা ভালো না লাগা নিয়ন্ত্রণ করে। Lymbic System-এর যদি কোনো অস্বাভাবিকতা দেখা দেয়, তাহলে মানুষের ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়। যাকে চিকিৎসা বিদ্যায় বলা হয় Schizophrenia। আমাদের প্রচলিত ভাষায় বলা হয় পাগল।
নিউরোট্রান্সমিটার (Neurotransmitter) হচ্ছে এক ধরনের রাসায়নিক তরল জাতীয় পদার্থ। Brain-এর মধ্যে অনেক ধরনের নিউরোট্রান্সমিটার আছে, যেমন- এসিটাইলকলিন, এন্ড্রোনালিন, ডোপামিন ইত্যাদি। এসব রাসায়নিক পদার্থ Brain-এর স্বাভাবিক কাজকর্মে সহায়তা করে থাকে। এসব রাসায়নিক পদার্থ বেশি কাজকর্ম (Overactive) করে থাকলে যেমন অনেক রোগের সৃষ্টি করে, তেমনই কম কাজকর্ম (Underactive) করলে অনেক রোগের সৃষ্টি করে। যেমন Brain-এর ডোপামিন কমে গেলে Perkinsonism রোগের সৃষ্টি করে, যার লক্ষণ হচ্ছে হাত-পা কাঁপানো, হাত পা শক্ত হয়ে যাওয়া এবং হাঁটাচলা করতে অসুবিধা হওয়া। আবার Dopamine-এর Overactive হলে Schizophrenia রোগ সৃষ্টি হয়, আমরা যাকে মানসিক ভারসাম্যহীনতা বলে থাকি। মজার ব্যাপার হচ্ছে, ঐ সব রোগে CT Scan করলে কোনো ধরনের অস্বাভাবিকতা ধরা পড়ে না। কারণ এসব রোগে Brain-এর গঠনগত কোনো সমস্যা হয় না, শুধু Functional সমস্যা হয়।
হরমোন হচ্ছে এক ধরনের তরল পদার্থ, যা আমাদের শরীরে বিভিন্ন জৈবিক কাজ সাধন করে। হরমোন যেখান থেকে নিঃসরণ হয়, তাকে বলা হয় গ্লান্ড। আমাদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে অনেকগুলো গ্লান্ড আছে এবং প্রত্যেকের নিজস্ব কাজ আছে। যেমন গলায় থাকে থাইরয়েড গ্লান্ড। থাইরয়েড থেকে নিঃসরণ হয় থাইরক্সিন, যা আমাদের শরীরে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জৈবিক কাজ সম্পন্ন করে। কিডনির ওপরে একটা গ্লান্ড থাকে যার নাম Suprarenal Gland। এখান থেকে যেসব হরমোন নিঃসরণ হয়, তা আমাদের শরীরের লবণ ও পানি নিয়ন্ত্রণ করে। ছেলেদের Testis এবং মেয়েদের Overy থেকে কিছু হরমোন নিঃসরণ হয়, যা ছেলেমেয়েদের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য গঠন করতে সাহায্য করে। এছাড়া আরও কিছু গ্লান্ড আছে, যা প্রত্যেকেই আপন আপন কাজ করে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এসব গ্লান্ড থেকে যেসব হরমোন নিঃসরণ হয়, সেগুলো কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করে Pituitary gland অথবা Master gland। এই Pituitary gland, Barin-এর মধ্যে অবস্থিত।
আমাদের মস্তিষ্ককে ইংরেজিতে বলা হয় Brain। Brain-এর প্রতিটি কোষকে বলা হয় Neuron। Brain-এর নিচ থেকে আমাদের পেছনে মেরুদণ্ডের মাঝে দড়ির মতো একটি জিনিস বের হয়ে কোমরে গিয়ে শেষ হয়েছে। তাকে বলা হয় Spinal Cord। Spinal Cord থেকে জালের মতো সমস্ত শরীরে Neuron গুলো ছড়িয়ে পড়েছে। Brain, Spinal Cord ও শরীরের সমস্ত Neuron-গুলোকে একসাথে বলা হয় স্নায়ুতন্ত্র। ইংরেজিতে বলা হয় Nervous System। Nervous System সম্পর্কে জানা, গবেষণা করা এবং লব্ধ জ্ঞান প্রয়োগ করাই হচ্ছে নিউরোলজি (Neurology)।
মন ও ব্রেন নিয়ে পৃথিবীতে অনেক গবেষণা হয়েছে। ডা. গোন্ড ফেটইন, ড. জন মোটিল, ডা. পেনফিন্ড ও ড. জন দীর্ঘ গবেষণা করে দেখেছেন, একজন প্রোগ্রামার যেভাবে কম্পিউটার পরিচালনা করে, মনও ঠিক সেভাবে ব্রেনকে পরিচালিত করে। বুকের মধ্যে হৃদয় আছে সেটি Heart নামে পরিচিত। কিন্তু মন আমাদের Brain-এ অবস্থিত, বুকের মধ্যে নয়। Heart নিয়ন্ত্রণ করে এই Brain। সংক্ষেপে বলতে গেলে মানুষের প্রতিটি অঙ্গ নিয়ন্ত্রণ করে Brain।
একজন মানুষ খুব জ্ঞানী, কম কথা বলে, ভাবুক আর একজন তত জ্ঞানীও নয়, বেশি ভাবে না— এই দুইজনের মধ্যে যে পার্থক্য এটিও Brain-এর গঠনতন্ত্রের উপর নির্ভরশীল। Brain যদি খালি চোখে দেখি, তাহলে দেখব অনেকগুলো গর্তের মতো এবং অনেকগুলো উঁচু টিলার মতো। গর্তের মতো অংশগুলোকে চিকিৎসা বিদ্যায় বলা হয় Sulcus এবং উঁচু টিলার মতো অংশকে বলা হয় Gyrus। গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষের বুদ্ধি-বিবেচনার যে তারতম্য তা অনেকখানি নির্ভর করে এই Sulcus ও Gyrus-এর গঠনতন্ত্রের উপর।
Brain-কে বাঁচিয়ে রাখতে অনবরত রক্তপ্রবাহ থাকতে হবে। Brain-এ রক্তপ্রবাহ সচল করার জন্য তিনটি Artery (ধমনি) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তিনটি Artery হচ্ছে— Anterior Cerebral Artery, Middle Cerebral Artery ও Pesterior Cerebral Artery। এসব Artery হৃৎপিণ্ড থেকে উৎপন্ন হয়। উপর্যুক্ত Artery গুলো সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম Artery-তে বিভক্ত হয়ে আমাদের Brain-এ রক্ত প্রবাহিত করে। কোনো কারণে রক্তনালিতে Block বা বাধা হলে অথবা রক্তনালি ছিঁড়ে গেলেই মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহে সমস্যা সৃষ্টি হয়, একে চিকিৎসা বিদ্যায় বলা হয় Stroke। আমাদের মস্তিষ্কে স্বাভাবিক রক্তের প্রয়োজন হয় 50ml/100g/min. অর্থাৎ 100g Brain-এ প্রতি মিনিটে 50ml রক্তপ্রবাহ প্রয়োজন। যদি কোনো কারণে রক্তপ্রবাহে বিঘ্ন ঘটে এবং রক্তপ্রবাহ (18ml/100g/min.)-এর নিচে চলে যায়, তাহলে Brain-এর কোষগুলো কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলে; কিন্তু আবার রক্তপ্রবাহ স্বাভাবিক হলে নিউরন কর্মক্ষমতা ফিরে পায়। কোনো কারণে যদি রক্তপ্রবাহ (8ml/100g/min.)-এর নিচে চলে যায়, তাহলে নিউরনগুলো মরে যায় এবং আর কখনো জীবিত হয় না।
আমাদের মস্তিষ্ক মিরাকলে পরিপূর্ণ। প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ১০০ মিলিয়ন ইনফরমেশন আমাদের মস্তিষ্কে প্রবেশ করে বিভিন্ন অনুভূতিসম্পন্ন অঙ্গের মাধ্যমে। অনুভূতিসম্পন্ন অঙ্গগুলো হচ্ছে চোখ, কান, চর্ম, নাক ও জিহ্বা। কিন্তু মস্তিষ্ক প্রয়োজনীয় ইনফরমেশন নিয়ে কাজ করে এবং বাকিগুলো নিয়ে কাজ করে না। এটা আমাদের মস্তিষ্কের অন্যতম বিস্ময়কর দিক। আমাদের Brain Stem-এ কতকগুলো জালের মতো নিউরন থাকে, তাকে চিকিৎসা বিদ্যায় Reticular formation বলা হয়। এই Reticular formation ট্র্যাফিক কন্ট্রোল এর কাজ করে। ১০০ মিলিয়ন ইনফরমেশন থেকে প্রয়োজনীয় ইনফরমেশন বাছাই করে এবং Cerebrain-এ পাঠায় আর মস্তিষ্ক সেই অনুযায়ী কাজ করে।
গবেষণায় দেখা গেছে, আমরা যে খাদ্য খাই এবং তাতে যে শক্তি উৎপন্ন হয়, তার ২০% শক্তি মস্তিষ্ক ব্যবহার করে। মস্তিষ্ক প্রতিদিন প্রায় ২০ ওয়াটের সমান বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে। এতদিন বিজ্ঞানীরা ধারণা করত, মানুষ জন্মের সময় মস্তিষ্কে যত সংখ্যক নিউরন থাকে তারপর আর নিউরন তৈরি হয় না। শুধু বিভিন্ন কারণে নিউরন মারা যায়। কিন্তু সম্প্রতি গবেষণায় দেখা গেছে, মস্তিষ্কে সারাজীবনই নতুন নিউরন যোগ হয়, যার সংখ্যা মাসে হাজার থেকে লক্ষাধিক হতে পারে। নিউরন বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়, পুষ্টিকর খাদ্য ও ব্যায়ামের মাধ্যমে। বয়সের সাথে সাথে আমাদের মস্তিষ্কের আকার ছোট হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, নিউরনের সংখ্যা কমে না, শুধু নিউরনের আকার ছোট হয়। একজন মানুষের ৮০ বছরে মস্তিষ্কের ওযন ১০% হ্রাস পায়। চিকিৎসা বিদ্যায় এটাকে Senile Atrophy বলা হয়। এর ফলে মানুষ বিভিন্ন সমস্যায় ভুগে থাকেন। ভুলে যাওয়া (Forgetfulness) তার মধ্যে সবচেয়ে কমন সমস্যা।
গবেষণায় দেখা গেছে, পুষ্টিকর খাদ্য, ব্যায়াম, ধূমপান না করা, মদ্যপান না করা এবং সবসময় হাসিখুশি থাকলে Senile Atrophy অনেকটাই প্রতিরোধ করা সম্ভব। মস্তিষ্কের গঠন ও কার্যপরিধি বড় রহস্যময়। আইনস্টাইন ফোন নম্বর ও বন্ধুদের নাম মনে রাখতে পারত না। কিন্তু সে পরমাণু বোমা আবিষ্কার করে বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। নজরুল ও রবীন্দ্রনাথ লেখাপড়া করে সেই রকম কোনো সনদ অর্জন করতে পারেনি, কিন্তু দুজনই বাংলা সাহিত্যের বিখ্যাত প্রতিভা। তাদের জীবনী নিয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি হচ্ছে। ব্রেন অতি চমৎকার একটি অঙ্গ। এ বিষয়ে গবেষণা চলছে এবং অনন্তকাল গবেষণা চলবে।
তথ্যসূত্র:
১. আল-কুরআনুল কারীম।
২. হাসান তারেক চৌধুরী, মস্তিষ্ক।
৩. ডা. মো. আনোয়ার হোসেন বাবলু, স্ট্রোক ও মাথা ব্যথার সাতকাহন।
মো. হারুনুর রশীদ
ফরক্কাবাদ, বিরল, দিনাজপুর।