হাদীছ বর্ণনার পরিভাষায় ইমাম বুখারী রাহিমাহুল্লাহ-এর মত:
উপরে আমরা হাদীছ বর্ণনার বিভিন্ন শব্দরূপ সম্পর্কে অবগত হলাম। এই শব্দগুলোর বিষয়ে ইমাম বুখারী রাহিমাহুল্লাহ ইমাম হুমায়দী রাহিমাহুল্লাহ-এর একটি বক্তব্য উদ্ধৃত করেছেন,كَانَ عِنْدَ ابْنِ عُيَيْنَةَ حَدَّثَنَا، وَأَخْبَرَنَا، وَأَنْبَأَنَا، وَسَمِعْتُ وَاحِدًا অর্থাৎ ‘ইবনু উয়াইনার নিকটে হাদ্দাছানা, আখবারানা, আম্বাআনা ও সামি‘তু একই অর্থবোধক’। তথা উপরে আমরা এই শব্দগুলোর ব্যবহারিক যে পার্থক্য তুলে ধরেছি, সেই পার্থক্য ইবনু উয়াইনার কাছে ছিল না। একই মত ইমাম হুমায়দী ও ইমাম বুখারী রাহিমাহুমাল্লাহ-এর। আরও স্পষ্ট করে বললে তারা সরাসরি শিক্ষক থেকে হাদীছ শ্রবণের ক্ষেত্রে অথবা ছাত্র যখন শিক্ষকের সামনে হাদীছ পড়েন, সেক্ষেত্রে অথবা যখন ইজাযার মাধ্যমে বর্ণনা করেন, এক কথায় নির্ভরযোগ্য সকল বর্ণনার মাধ্যমের ক্ষেত্রে তারা হাদ্দাছানা, আখবারানা, আম্বাআনা ও সা‘মিতু এই শব্দগুলোর ব্যবহারকে বিশুদ্ধ মনে করতেন।
পরিভাষাগুলো সরাসরি ছাহাবী থেকে প্রমাণিত:
উক্ত পরিভাষাগুলো মুহাদ্দিছদের নিজস্ব আবিষ্কৃত কোনো শব্দ নয়, বরং ছাহাবী ও আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত। এটা প্রমাণ করাই ইমাম বুখারী রাহিমাহুল্লাহ-এর উদ্দেশ্য। সেটির প্রমাণে ইমাম বুখারী রাহিমাহুল্লাহ সর্বপ্রথম ছাহাবীদের বক্তব্য তুলে ধরেছেন এবং সর্বশেষে রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বক্তব্য তুলে ধরবেন। ইমাম বুখারী রাহিমাহুল্লাহ এখানে তিনজন ছাহাবীর বক্তব্য এনেছেন—
(১) ইবনু মাসঊদ রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন,حدثنا رسول الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ অর্থাৎ ‘রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের হাদীছ বলেছেন’।
(২) একই হাদীছ আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ রাযিয়াল্লাহু আনহু-এর ছাত্র শাক্বীক্ব আবূ ওয়ায়েল যখন বর্ণনা করেন, তখন তিনি বলেন, سمعت النبي صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كلمةً অর্থাৎ ‘আমি নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে একটি শব্দ বলতে শুনেছি’।
(৩) হুযায়ফা ইবনুল ইয়ামান বলেন, حَدَّثَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَدِيثَيْنِ অর্থাৎ ‘তিনি আমাদের দুটি হাদীছ বলেছেন’।
এই তিনটি উদ্ধৃতি প্রমাণ করে যে, ছাহাবীরা কখনো حدثنا, কখনো سمعت ব্যবহার করতেন; অথচ উভয় ক্ষেত্রেই বক্তব্য সরাসরি নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছ থেকে গ্রহণ করেছেন। এমনকি একই হাদীছ বর্ণনায় আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ রাযিয়াল্লাহু আনহু একটি শব্দ চয়ন করেছেন আর তার ছাত্র আরেকটি শব্দ চয়ন করেছেন। সুতরাং এই শব্দগুলো সমার্থক ও গ্রহণযোগ্য।
‘আন’ শব্দের ব্যবহার সরাসরি ছাহাবী থেকে প্রমাণিত:
ইবনু আব্বাস, আনাস ও আবূ হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহুম —তিনজনই হাদীছ বর্ণনা করতে গিয়ে রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ থেকে হাদীছে কুদসী বর্ণনা করেছেন বুঝাতে গিয়ে তারা ‘আন’ শব্দ ব্যবহার করেছেন। তারা বলেন, يَرْوِيهِ عَنْ رَبِّهِ অর্থাৎ ‘তিনি তাঁর প্রতিপালক থেকে বর্ণনা করেন’।
فِيمَا يَرْوِيهِ عَنْ رَبِّهِ عز وجل অর্থাৎ ‘যা তিনি তাঁর প্রতিপালক থেকে বর্ণনা করেন’।
عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَرْوِيهِ عَنْ رَبِّكُمْ عَزَّ وَجَلَّ অর্থাৎ ‘নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে, তিনি তোমাদের প্রতিপালক থেকে বর্ণনা করেন’।
এই উদ্ধৃতিগুলো প্রমাণ করে যে, সাক্ষাৎ বা সংযুক্তির প্রমাণ থাকলে ‘আন’ শব্দ ব্যবহার করা যায়। যেমন রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে মহান আল্লাহর সংযোগের বিষয়টি প্রমাণিত। তিনি জিবরীল আলাইহিস সালাম-এর মাধ্যমে মহান আল্লাহর অহী পেয়ে থাকেন। সেহেতু এই ধরনের অবিচ্ছিন্ন বা মুত্তাছিল বর্ণনার ক্ষেত্রে ‘আন’ শব্দ ব্যবহার করা যায়। ‘আন’ বর্ণনার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম রাহিমাহুমাল্লাহ-এর মধ্যে মতভেদের উপর বিস্তারিত আলোচনা মিন্নাতুল বারী ১ম খণ্ডে করা হয়েছে।
সনদগুলো দিয়ে বর্ণিত রেওয়ায়াতসমূহ:
ইমাম বুখারী রাহিমাহুল্লাহ হাদীছ বর্ণনার পরিভাষা বুঝাতে যে সনদগুলো উল্লেখ করেছেন, সেগুলোর পূর্ণ হাদীছ তিনি উল্লেখ করেননি। কেননা পূর্ণ হাদীছ এখানে তার উদ্দেশ্য নয়। এখানে তার উদ্দেশ্য শুধু হাদীছ কী ধরনের শব্দ দিয়ে বর্ণিত হয়ে থাকে, তা দেখানো। তবে পাঠকদের বুঝার সুবিধার জন্য আমরা উল্লিখিত সনদগুলো দিয়ে বর্ণিত হাদীছের মতন বা টেক্সটগুলো অনুবাদ ও রেফারেন্সসহ দিয়ে দিচ্ছি।
حَدَّثَنِي مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ، حَدَّثَنَا غُنْدَرٌ، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، عَنْ قَتَادَةَ، قَالَ: سَمِعْتُ أَبَا العَالِيَةِ، حَدَّثَنَا - ابْنُ عَمِّ نَبِيِّكُمْ، يَعْنِي - ابْنَ عَبَّاسٍ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: لاَ يَنْبَغِي لِعَبْدٍ أَنْ يَقُولَ: أَنَا خَيْرٌ مِنْ يُونُسَ بْنِ مَتَّى. وَنَسَبَهُ إِلَى أَبِيهِ.
সনদ: মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার→ গুনদার→ শু‘বা→ ক্বাতাদা→ আবুল আলিয়া→ ইবনু আব্বাস→ রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
অনুবাদ: রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘কারও জন্য এটা বলা উচিত নয় যে, আমি ইউনুস ইবনু মাত্তা-এর চেয়ে উত্তম’।[1]
حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، عَنْ قَتَادَةَ، عَنْ أَنَسٍ رضي الله عنه عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَرْوِيهِ عَنْ رَبِّهِ، قَالَ: إِذَا تَقَرَّبَ العَبْدُ إِلَيَّ شِبْرًا تَقَرَّبْتُ إِلَيْهِ ذِرَاعًا، وَإِذَا تَقَرَّبَ مِنِّي ذِرَاعًا تَقَرَّبْتُ مِنْهُ بَاعًا، وَإِذَا أَتَانِي مَشْيًا أَتَيْتُهُ هَرْوَلَةً.
সনদ: শু‘বা→ ক্বাতাদা→ আনাস রাযিয়াল্লাহু আনহু।
অনুবাদ:নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর প্রতিপালক থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, ‘যদি কোনো বান্দা আমার দিকে এক বিঘত এগিয়ে আসে, আমি তার দিকে এক হাত এগিয়ে যাই। সে এক হাত এগিয়ে এলে, আমি এক গজ (দুই হাত) এগিয়ে যাই আর সে যদি আমার দিকে হেঁটে আসে, আমি তার দিকে দৌড়ে আসি’।
حَدَّثَنَا آدَمُ، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ زِيَادٍ، قَالَ: سَمِعْتُ أَبَا هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَرْوِيهِ عَنْ رَبِّكُمْ، قَالَ: لِكُلِّ عَمَلٍ كَفَّارَةٌ، وَالصَّوْمُ لِي وَأَنَا أَجْزِي بِهِ، وَلَخُلُوفُ فَمِ الصَّائِمِ أَطْيَبُ عِنْدَ اللَّهِ مِنْ رِيحِ المِسْكِ.
সনদ: আদম→ শু‘বা→ মুহাম্মাদ ইবনু যিয়াদ→ আবূ হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু।
অনুবাদ:রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি তাঁর প্রতিপালক থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, ‘প্রত্যেক আমলের জন্য একটি করে কাফফারা আছে; কিন্তু ছিয়াম আমার জন্য, আর আমিই এর প্রতিদান দেব। আর ছিয়াম পালনকারীর মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মিশকের সুগন্ধির চেয়েও অধিক উত্তম’।[2]
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ كَثِيرٍ، أَخْبَرَنَا سُفْيَانُ، حَدَّثَنَا الأَعْمَشُ، عَنْ زَيْدِ بْنِ وَهْبٍ، حَدَّثَنَا حُذَيْفَةُ، قَالَ: حَدَّثَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَدِيثَيْنِ، رَأَيْتُ أَحَدَهُمَا وَأَنَا أَنْتَظِرُ الآخَرَ: حَدَّثَنَا: أَنَّ الأَمَانَةَ نَزَلَتْ فِي جَذْرِ قُلُوبِ الرِّجَالِ، ثُمَّ عَلِمُوا مِنَ القُرْآنِ، ثُمَّ عَلِمُوا مِنَ السُّنَّةِ وَحَدَّثَنَا عَنْ رَفْعِهَا قَالَ: يَنَامُ الرَّجُلُ النَّوْمَةَ، فَتُقْبَضُ الأَمَانَةُ مِنْ قَلْبِهِ، فَيَظَلُّ أَثَرُهَا مِثْلَ أَثَرِ الوَكْتِ، ثُمَّ يَنَامُ النَّوْمَةَ فَتُقْبَضُ فَيَبْقَى أَثَرُهَا مِثْلَ المَجْلِ، كَجَمْرٍ دَحْرَجْتَهُ عَلَى رِجْلِكَ فَنَفِطَ، فَتَرَاهُ مُنْتَبِرًا وَلَيْسَ فِيهِ شَيْءٌ، فَيُصْبِحُ النَّاسُ يَتَبَايَعُونَ، فَلاَ يَكَادُ أَحَدٌ يُؤَدِّي الأَمَانَةَ، فَيُقَالُ: إِنَّ فِي بَنِي فُلاَنٍ رَجُلًا أَمِينًا، وَيُقَالُ لِلرَّجُلِ: مَا أَعْقَلَهُ وَمَا أَظْرَفَهُ وَمَا أَجْلَدَهُ، وَمَا فِي قَلْبِهِ مِثْقَالُ حَبَّةِ خَرْدَلٍ مِنْ إِيمَانٍ وَلَقَدْ أَتَى عَلَيَّ زَمَانٌ وَمَا أُبَالِي أَيَّكُمْ بَايَعْتُ، لَئِنْ كَانَ مُسْلِمًا رَدَّهُ عَلَيَّ الإِسْلاَمُ، وَإِنْ كَانَ نَصْرَانِيًّا رَدَّهُ عَلَيَّ سَاعِيهِ، فَأَمَّا اليَوْمَ: فَمَا كُنْتُ أُبَايِعُ إِلَّا فُلاَنًا وَفُلاَنًا.
সনদ: মুহাম্মাদ ইবন কাছীর→ সুফিয়ান→ আ‘মাশ→ যায়েদ→ ইবন ওয়াহহাব→ হুযায়ফা→ রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
সারমর্ম অনুবাদ: হুযায়ফা রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে দুটি হাদীছ বলেছেন। আমি একটি বাস্তবে দেখেছি এবং অন্যটির প্রতীক্ষায় আছি। তিনি বলেছিলেন, ‘আমানত প্রথমে মানুষের হৃদয়ের গভীরে প্রোথিত করা হয়েছিল, পরে তারা কুরআন শিক্ষা পায়, এরপর তারা সুন্নাহ শিক্ষা পায়’।
তিনি আমানত উঠে যাওয়া সম্পর্কে বলেছেন, ‘একটা সময় আসবে, যখন লোকেরা ঘুমাবে আর তাদের হৃদয় থেকে আমানত উঠিয়ে নেওয়া হবে এমনভাবে যে, শুধু আগুনের দাগের মতো দাগ থাকবে। তারপর সে আবার ঘুমাবে, অতঃপর (তার অন্তর থেকে অবশিষ্ট আমানতও) উঠিয়ে নেওয়া হবে, তখন তার দাগ হবে ফোসকার মতো যেমন তুমি কোন অঙ্গার পায়ে ফেললে পা ফোসকা পড়ে যায়, যা তুমি স্ফীত দেখতে পাও অথচ তার ভিতরে কিছুই থাকে না। অতঃপর মানুষ ব্যবসা করবে, কিন্তু প্রায়ই কেউই আমানত রক্ষা করবে না। সে সময় বলা হবে, ‘অমুক গোষ্ঠীতে একজন লোক আছে, সে বিশ্বস্ত। সেই ব্যক্তিকে বলা হবে, ‘তিনি কত বুদ্ধিমান, কত বিচক্ষণ, কতো শক্তিমান কিন্তু তার হৃদয়ে এক সরিষা দানার সমানও ঈমান থাকবে না’।
আমার এমন একটা সময় গেছে, যখন আমি কারো সাথে লেনদেন করতে পরওয়া করিনি। যদি সে মুসলিম হয়, তবে ইসলাম তাকে আমার উপর যুলম করা থেকে বিরত রাখবে। আর যদি সে খ্রিষ্টান হয়, তবে দায়িত্বশীল তাকে আমার উপর যুলম করা থেকে বিরত রাখবে। আর বর্তমানে আমি কেবল অমুক, অমুকের সাথে ব্যবসা করি’।[3]
حَدَّثَنَا الحَسَنُ بْنُ الرَّبِيعِ، حَدَّثَنَا أَبُو الأَحْوَصِ، عَنِ الأَعْمَشِ، عَنْ زَيْدِ بْنِ وَهْبٍ، قَالَ عَبْدُ اللَّهِ: حَدَّثَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ الصَّادِقُ المَصْدُوقُ، قَالَ: إِنَّ أَحَدَكُمْ يُجْمَعُ خَلْقُهُ فِي بَطْنِ أُمِّهِ أَرْبَعِينَ يَوْمًا، ثُمَّ يَكُونُ عَلَقَةً مِثْلَ ذَلِكَ، ثُمَّ يَكُونُ مُضْغَةً مِثْلَ ذَلِكَ، ثُمَّ يَبْعَثُ اللَّهُ مَلَكًا فَيُؤْمَرُ بِأَرْبَعِ كَلِمَاتٍ، وَيُقَالُ لَهُ: اكْتُبْ عَمَلَهُ، وَرِزْقَهُ، وَأَجَلَهُ، وَشَقِيٌّ أَوْ سَعِيدٌ، ثُمَّ يُنْفَخُ فِيهِ الرُّوحُ، فَإِنَّ الرَّجُلَ مِنْكُمْ لَيَعْمَلُ حَتَّى مَا يَكُونُ بَيْنَهُ وَبَيْنَ الجَنَّةِ إِلَّا ذِرَاعٌ، فَيَسْبِقُ عَلَيْهِ كِتَابُهُ، فَيَعْمَلُ بِعَمَلِ أَهْلِ النَّارِ، وَيَعْمَلُ حَتَّى مَا يَكُونُ بَيْنَهُ وَبَيْنَ النَّارِ إِلَّا ذِرَاعٌ، فَيَسْبِقُ عَلَيْهِ الكِتَابُ، فَيَعْمَلُ بِعَمَلِ أَهْلِ الجَنَّةِ.
সনদ: হাসান ইবন রাবী→ আবুল আহওয়াস→ আ‘মাশ→ যায়েদ ইবন ওয়াহহাব→ আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ রাযিয়াল্লাহু আনহু।
সারমর্ম অনুবাদ: আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমাদেরকে রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদীছ বর্ণনা করেছেন, যিনি সত্যবাদী ও সত্যায়িত হিসেবে স্বীকৃত ছিলেন। তিনি বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে প্রত্যেকের সৃষ্টি তার মায়ের গর্ভে ৪০ দিন শুক্ররূপে, এরপর ৪০ দিন রক্তবিন্দু, তারপর ৪০ দিন মাংসপিণ্ডরূপে থাকে। এরপর এক ফেরেশতা পাঠানো হয়, তাকে চারটি বিষয় লেখার আদেশ দেওয়া হয়— তার আমল, তার রিযিক্ব, তার আয়ু এবং সে ভাগ্যবান, না দুর্ভাগা হবে। এরপর তার মধ্যে রূহ ফুঁকে দেওয়া হয়’।
এরপর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের কোনো ব্যক্তি আমল করতে থাকে, এমনকি তার মাঝে ও জান্নাতের মাঝে কেবল এক হাত পরিমাণ অবশিষ্ট থাকে, অতঃপর তার ভাগ্যলিপি তার উপর বিজয়ী হয়, ফলে সে জাহান্নামীদের আমল করে (জাহান্নামে প্রবেশ করে)। আবার কোনো ব্যক্তি আমল করতে থাকে, এমনকি তার মাঝে ও জাহান্নামের মাঝে কেবল এক হাত পরিমাণ অবশিষ্ট থাকে, অতঃপর তার উপর ভাগ্যলিপি বিজয়ী হয়, ফলে সে জান্নাতীদের আমল করে (জান্নাতে প্রবেশ করে)। আবার কোন ব্যক্তি (পাপের) আমল করতে থাকে, এমনকি তার মাঝে ও জাহান্নামের মাঝে কেবল এক হাত পরিমাণ অবশিষ্ট থাকে, অতঃপর তার উপর ভাগ্যলিপি তার উপর বিজয়ী হয়, ফলে সে জান্নাতীদের আমল করে (জান্নাতে প্রবেশ করে)’।[4]
ابْنُ جُرَيْجٍ، عَنْ عَبْدَةَ، عَنْ شَقِيقٍ، سَمِعْتُ عَبْدَ اللَّهِ سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِئْسَ مَا لِأَحَدِهِمْ أَنْ يَقُولَ نَسِيتُ آيَةَ كَيْتَ وَكَيْتَ، بَلْ نُسِّيَ وَاسْتَذْكِرُوا القُرْآنَ، فَإِنَّهُ أَشَدُّ تَفَصِّيًا مِنْ صُدُورِ الرِّجَالِ مِنَ النَّعَمِ.
সনদ: ইবনু জুরাইজ→ আবদা→ শাক্বীক্ব→ আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ রাযিয়াল্লাহু আনহু।
অনুবাদ: আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, ‘এটা খুবই খারাপ কথা যে, কেউ বলবে, আমি অমুক আয়াত ভুলে গেছি। বরং বলা উচিত, ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। কুরআন পড়া অব্যাহত রাখবে! কারণ এটা মানুষের বক্ষসমূহ থেকে উটের চেয়েও দ্রুত হারিয়ে যায়’।
দুটি সূক্ষ্ম জ্ঞাতব্য:
আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহুমা বর্ণিত ইউনুস ইবন মাত্তার হাদীছে ছহীহ বুখারীর রেওয়ায়াতে ‘যা তিনি আল্লাহ থেকে বর্ণনা করেন’ কথাটি উল্লেখ নেই। তবে মুসনাদে আহমাদের রেওয়ায়াতে ‘আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মহান আল্লাহ বলেছেন’ এই বাক্য ব্যবহৃত হয়েছে। হয়তো এই রেওয়ায়াতকে সামনে রেখেই ইমাম বুখারী রাহিমাহুল্লাহ এই অধ্যায়ে কথাটি যুক্ত করেছেন।
وَقَالَ لَنَا الحُمَيْدِيُّ অর্থাৎ আমাকে হুমায়দী বলেছেন, সাধারণত ইমাম বুখারী রাহিমাহুল্লাহ তা‘লীক্ব বা টীকা সংযোজনের ক্ষেত্রে ‘ক্বলা’ শব্দ ব্যবহার করেন। তবে এটি টীকা নয়, কেননা হুমায়দী সরাসরি ইমাম বুখারী রাহিমাহুল্লাহ-এর উস্তায। সুতরাং এটি একটি মুসনাদ বর্ণনা। তবুও তিনি কেন ‘হাদ্দাছানা’ না বলে ‘ক্বলা’ বললেন, তার ব্যাখ্যায় অনেকেই বলেছেন, কোনো হাদীছ যদি ইমাম বুখারী রাহিমাহুল্লাহ আনুষ্ঠানিক দারস থেকে শ্রবণ করে থাকেন, তাহলে ‘হাদ্দাছানা’ ব্যবহার করেন আর যদি অনানুষ্ঠানিকভাবে গল্পের মধ্যে বা মুযাকারায় হাদীছ শুনে থাকেন, তাহলে ‘ক্বলা লানা’ বলে থাকেন। মহান আল্লাহ-ই অধিক অবগত।
(ইনশা-আল্লাহ চলবে)
আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রাযযাক
এমএসসি, ইসলামিক ব্যাংকিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স, ইউনিভার্সিটি অফ ডান্ডি, যুক্তরাজ্য।
[1]. ছহীহ বুখারী, হা/৩৩৯৫।
[2]. ছহীহ বুখারী, হা/৭৫৩৮।
[3]. ছহীহ বুখারী, হা/৬৪৯৭।
[4]. ছহীহ বুখারী, হা/৩২০৮।