কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

কার সাথে পর্দা করবেন?

post title will place here

ভূমিকা :

ইসলামে সবকিছুর সীমারেখা সুস্পষ্ট। এখানে মন যা চায় করা যায় না। যা খুশী দেখা যায় না বা শোনা যায় না। নারী-পুরুষ মিলেই আমাদের সমাজ। সেজন্য পারস্পরিক নানামুখী উঠাবসা অবশ্যম্ভাবী। কিন্তু সব পুরুষের সাথেই কি একজন নারী দেখাসাক্ষাৎ, লেনদেন, ওঠাবসা, কথাবার্তা ইত্যাদি করতে পারবে নাকি কোনো বাঁধাধরা নিয়মনীতি আছে? পুরুষের ক্ষেত্রেও কি সেসব নিয়মকানুন প্রযোজ্য নয়?

ইসলামে একজন নারীকে যেমন বিশেষ পর্দা মেনে চলতে হয়, তেমনি একজন পুরুষকেও নারীদের সাথে বিশেষ নিয়মনীতি মেনেই চলতে হয়। কোনো নারী চাইলে যে কোনো পোশাকে যে কোনো পুরুষের সাথে দেখাসাক্ষাৎ করতে পারে না। অনুরূপভাবে কোনো পুরুষও চাইলে যে কোনো নারীর সাথে দেখাসাক্ষাৎ করতে পারে না।

তাছাড়া কোনো পুরুষ চাইলে যে কোনো নারীকে বিয়ে করতে পারে না এবং কোনো নারীও চাইলে যে কোনো পুরুষের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে না। তাই মাহরাম-গায়ের মাহরাম সম্পর্কিত জ্ঞান না থাকলে এমন কাউকে বিয়ে করা পড়ে যেতে পারে, যার সাথে বিয়ে করাই আসলে হারাম।

সেজন্য কার সাথে দেখাসাক্ষাৎ চলবে আর কার সাথে চলবে না, সে জ্ঞানটুকু প্রত্যেকটা পুরুষ ও নারীর অবশ্যই থাকতে হবে। তাদেরকে মাহরাম নারী-পুরুষ সম্পর্কে জানতেই হবে। তেমনিভাবে কার সাথে বিয়ে করা চলবে আর কার সাথে চলবে না- সে বিষয়ক জ্ঞান থাকাও জরুরী। অন্যথা পর্দা সম্পর্কিত বিধিবিধান অবহেলিত থেকে যাবে। পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের এ বিষয়ক দ্ব্যর্থহীন ও স্পষ্ট নির্দেশনাগুলো অধরা থেকে যাবে এবং মারাত্মকভাবে উপেক্ষিত হবে। নিষিদ্ধ কাউকে বিয়ে করে ইলাহী নির্দেশনা লঙ্ঘিত হতে পারে। কারণ আমি যদি বুঝি ও মানি যে, নারী হিসেবে বা পুরুষ হিসেবে আমাকে অপর পুরুষ বা নারীর সাথে ইসলামের নিয়ম মেনেই উঠাবসা করতে হবে। কিন্তু কার সাথে সেই বিশেষ নিয়ম মেনে চলতে হবে আর কার সাথে চলতে হবে না, অথবা কার সাথে কতটুকু নিয়ম মেনে চলতে হবে, সে জ্ঞানটুকু যদি না থাকে, তাহলে কারো পক্ষে আসলে ইসলামের এ সম্পর্কিত নির্দেশনাগুলো মানাই সম্ভব নয়। বিয়ে করা বা না করার ক্ষেত্রেও ঠিক একই কথা প্রযোজ্য।

বাংলাদেশে একজন মুসলিম নারীকে ইসলামী পোশাক পরানো যতটা কঠিন, তার চেয়ে কঠিন তাকে মাহরাম-গায়ের মাহরাম বিষয়টা মানানো। পুরুষরাও এক্ষেত্রে নির্দোষ নয়; বরং তাদের মধ্যেও এ ব্যাপারটা নিয়ে যথেষ্ট অবহেলা ও অবজ্ঞা বিদ্যমান। আর এর জন্য দায়ী আমাদের পরিবার ও সমাজব্যবস্থা। এক্ষেত্রে আমাদের আলেমসমাজও পুরোপুরি দায়মুক্ত নন। কারণ তারাও জনগণকে ব্যাপারটা বুঝাতে এবং ব্যাপক প্রচারণা চালাতে ব্যর্থ হয়েছেন— যদিও অনেকের ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা রয়েছে।

দুঃখের বিষয় হচ্ছে, আমাদের সমাজে হাতেগোনা দুয়েকজন ছাড়া কেউ এই বিধান মানে না। তারা মনে করে, পর্দা মানে শুধু বাজারের মানুষের সামনে বোরকা পরা; পর্দা মানে অপরিচিত মানুষের সাথে দেখাসাক্ষাৎ না করা। অথচ মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে মাহরাম নারী-পুরুষের নাম ধরে ধরে স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন[1]— যেখানে ইসলামের বেশিরভাগ রুকনের বিশদ বিবরণ কুরআন মাজীদে আসেনি। আর কতিপয় মাহরামের কথা হাদীছে রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্পষ্ট ভাষায় বলে দিয়েছেন। তাহলে বিষয়টা কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ অনুধাবন করতে পারেন?

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, আমাদের সমাজে এই গুরুত্বপূর্ণ বিধানটি কেনো এত উপেক্ষিত?

এর পেছনে কিছু কারণ বিদ্যমান :

(১) জ্ঞানের নিদারুণ অভাব : বেশিরভাগ মুসলিমের এ সম্পর্কিত কোনো জ্ঞান নেই। না তাদের মুখস্থ আছে মাহরাম নারী-পুরুষের তালিকা, না তাদের জানা আছে এ সম্পর্কিত বিধিবিধান।

(২) দুঃখজনক ভর্ৎসনা : যারা কুরআন-হাদীছের অকাট্য এ বিধানের কাছে আত্মসমর্পণ করতে চান, তারা পারিবারিক ও সামাজিকভাবে নানা ভর্ৎসনা ও তিরস্কারের শিকার হন। যেমন— খুব ছূফী হয়ে গেছো! বড় হাজী হয়ে গেছো! এত দরবেশ কোত্থেকে আসলো রে! মেয়েটা এত অসামাজিক হয়ে গেল যে, আমাদের সামনে পর্যন্ত আসে না! আত্মীয়স্বজনের সম্পর্ক পর্যন্ত তুমি মানো না! বেশি ভালো, ভালো না! ইত্যাদি ইত্যাদি।

(৩) নানা অজুহাত : এ সম্পর্কিত অজুহাতের শেষ নেই। যেমন—

[ক] সারাজীবন একসাথে চলেছি, দেখাদেখি হয়েছে, কত গপ্প করেছি, এখন তা বাদ দিলে কেমন একটা লাগে না!

[খ] পরিবার, আত্মীয়স্বজন ও সমাজের লোকজন বাঁকা চোখে দেখে!

[গ] সবাই অসামাজিক মনে করে!

[ঘ] মামাতো-খালাতো-ফুফাতো, চাচাতো ভাই-বোনের সাথে দেখা পর্যন্ত করা যাবে না, এ কি করে হয়!

[ঙ] চাচী-মামীর সাথে পর্যন্ত দেখা করা যাবে না, এটা কোনো কথা হলো!

[চ] আরে ছোটোবেলা থেকে ভাই-বোনের মতো একসাথে বড় হয়েছি; এখন দেখাদেখি করা যাবে না, তা কী করে হয়!

[ছ] পুরো মহল্লাবাসী নারী-পুরুষ তো একসাথে চলতে চলতে প্রায় একটি পরিবারের মতো হয়ে গেছি, এখন তাদের সাথে দেখাসাক্ষাৎ না করলে একেবারেই বেমানান দেখায় না?!

[জ] শিক্ষক তো পিতার মতো, তাহলে সেখানে আবার পর্দা কীসের! ইত্যাদি।

প্রিয় দ্বীনী ভাই ও বোন! আপনি কার কাছে আত্মসমর্পণ করবেন, সে সিদ্ধান্ত আপনার। পরিবার ও সমাজের কাছে নাকি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে?

আমার অনুরোধ, এতসব কারণ দেখিয়ে আর অজুহাত পেশ করে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অবাধ্য হবেন না। কুরআন মাজীদ ও ছহীহ হাদীছের সুস্পষ্ট বিধানের বিরুদ্ধাচরণ করবেন না। মনে রাখবেন, এসব অজুহাত পেশ করলে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নাফরমানীর পাশাপাশি অবস্থার প্রেক্ষিতে ঈমানহারা হওয়ার সম্ভাবনাও কিন্তু রয়েছে।

অতএব, আসুন! ইসলামের বিধানের কাছে আত্মসমর্পণ করে পূর্ণ মুমিন হওয়ার চেষ্টা করি। প্রতিটি পরিবার থেকে এ ব্যাপারে শক্ত পদক্ষেপ নিয়ে অবস্থার পরিবর্তন করা আমাদের ঈমানী দায়িত্ব।

উল্লেখ্য, মাহরাম নারী-পুরুষের পরিচয় তুলে ধরাই এ প্রবন্ধটির মূল উদ্দেশ্য; যাতে কার সাথে পর্দা করতে হবে আর কার সাথে করতে হবে না সে বিষয়ে জাগ্রত জ্ঞান অর্জিত হয় এবং পূর্ণ পর্দার বিধান মেনে চলা যায়।

মহান আল্লাহ এক্ষুদ্র প্রয়াসটুকু কবুল করুন। আমীন!

মাহরাম কে? মাহরাম (مَحْرَمٌ) আরবী শব্দ। শব্দটি একবচন, বহুবচনে মাহারিম (مَحَارِمُ) ব্যবহৃত হয়। আভিধানিক অর্থে মাহারিম এমন সব বিষয়কে বলে, যেগুলোকে হালাল করে নেওয়া বৈধ নয়। এমন নিকটাত্মীয়কে মাহরাম বলে, যাকে বিয়ে করা বৈধ নয়। শব্দটি নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।[2]

পরিভাষায়— যেসব নারী ও পুরুষের সাথে চিরস্থায়ী বৈবাহিক সম্পর্ক হারাম, তারা হচ্ছেমাহরাম’

শায়খ উছাইমীন রহিমাহুল্লাহ বলেছেন, ‘একজন নারীর মাহরাম পুরুষ হচ্ছে তার স্বামী এবং প্রত্যেক এমন পুরুষ, যার সাথে বংশ, বিয়ে বা দুধ-সম্পর্কীয় কারণে তার বিবাহ বন্ধন চিরস্থায়ীভাবে হারাম। এরাই হচ্ছে মাহরাম পুরুষ। আর যাদের সাথে তার অস্থায়ীভাবে বিবাহ বন্ধন হারাম, তারা তার মাহরাম নয়। যেমন— স্ত্রীর বোন (ছোট হোক বা বড়), স্ত্রীর ফুফু, স্ত্রীর খালা। কেননা স্ত্রীর বোন, তার ফুফু এবং খালাকে বিয়ে করা একজন পুরুষের জন্য অস্থায়ীভাবে হারাম অর্থাৎ যতদিন তার স্ত্রী তার অধীনে স্ত্রী হিসেবে থাকবে, ততদিন তার বোন, ফুফু ও খালাকে বিয়ে করা হারাম। সেকারণে তারা তার মাহরাম নয়। অতএব, কোনো পুরুষের জন্য তার স্ত্রীর বোন, ফুফু বা খালা কাউকেই দেখা জায়েয নেই। কারণ তারা গায়ের মাহরাম’।[3]

আর একজন পুরুষের জন্য সেসব নারীকে মাহরাম বলে, যাদের বিয়ে করা সেই পুরুষের উপর হারাম। মাহরাম নারীদেরকে ‘মুহাররামাত’ (مُحَرَّمَاتٌ)ও বলে।[4]

কেবল এই মাহরাম নারী-পুরুষের মাঝে ইসলামের বিশেষ পর্দার বিধান নেই। গায়ের মাহরামদের মধ্যে অবশ্যই পর্দা ও বিশেষ নিয়মনীতি মেনে চলতে হবে।

উল্লেখ্য, সফরের ক্ষেত্রে কোনো নারী কারো জন্য মাহরাম হতে পারবে না।

মাহরাম কত ধরনের? দুই দিক বিবেচনায় মাহরামের প্রকার নিরূপণ করা যায়:

এক. স্থায়ী বা অস্থায়ী হওয়ার দিক দিয়ে মাহরাম দুই প্রকার:

(১) অস্থায়ী মাহরাম : অস্থায়ী মাহরাম এমন নারীকে বুঝায়, যাকে বিশেষ অবস্থায় বিয়ে করা হারাম। সেই বিশেষ অবস্থা কেটে গেলে বা না থাকলে তাকে বিয়ে করা হালাল হয়ে যায়।[5] মাহরামের সংজ্ঞায় শায়খ উছাইমীন রহিমাহুল্লাহ–এর বক্তব্যে এ ব্যাপারটি উদাহরণসহ আরো স্পষ্টভাবে উপরে গত হয়ে গেছে।

(২) স্থায়ী মাহরাম : সেই নারীকে স্থায়ী মাহরাম বলে, যাকে নির্ধারিত পুরুষের জন্য বিয়ে করা চিরদিন হারাম।[6]

দুই. কারণ বা হেতু বিবেচনায় শেষোক্ত তথা স্থায়ী মাহরামগণ তিন ভাগে বিভক্ত:

(১) বংশসূত্রে মাহরাম : বংশসূত্রে যেসব নারীকে বিয়ে করা হারাম, তারা এ শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত।

(২) বৈবাহিকসূত্রে মাহরাম : বিয়েসূত্রে যেসব নারীকে বিয়ে করা হারাম, তারা এ শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত।

(৩) দুধপানসূত্রে মাহরাম : দুধপানসূত্রে যেসব নারীকে বিয়ে করা হারাম, তারা এ শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত।

মাহরামনারী-পুরুষেরবিবরণ : মাহরাম নারী-পুরুষের সংখ্যা সীমাবদ্ধ, কিন্তু গায়ের মাহরামের সংখ্যা সীমাবদ্ধ নয়। তাছাড়া এ বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মহান আল্লাহ আল-কুরআনে মাহরাম নারী-পুরুষের নাম ধরে ধরে তাদের বিবরণ পেশ করেছেন। তিনি বলেন,

حُرِّمَتْ عَلَيْكُمْ أُمَّهَاتُكُمْ وَبَنَاتُكُمْ وَأَخَوَاتُكُمْ وَعَمَّاتُكُمْ وَخَالَاتُكُمْ وَبَنَاتُ الْأَخِ وَبَنَاتُ الْأُخْتِ وَأُمَّهَاتُكُمُ اللَّاتِي أَرْضَعْنَكُمْ وَأَخَوَاتُكُمْ مِنَ الرَّضَاعَةِ وَأُمَّهَاتُ نِسَائِكُمْ وَرَبَائِبُكُمُ اللَّاتِي فِي حُجُورِكُمْ مِنْ نِسَائِكُمُ اللَّاتِي دَخَلْتُمْ بِهِنَّ فَإِنْ لَمْ تَكُونُوا دَخَلْتُمْ بِهِنَّ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ وَحَلَائِلُ أَبْنَائِكُمُ الَّذِينَ مِنْ أَصْلَابِكُمْ وَأَنْ تَجْمَعُوا بَيْنَ الْأُخْتَيْنِ إِلَّا مَا قَدْ سَلَفَ إِنَّ اللهَ كَانَ غَفُورًا رَحِيمًا - وَالْمُحْصَنَاتُ مِنَ النِّسَاءِ إِلَّا مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ كِتَابَ اللهِ عَلَيْكُمْ وَأُحِلَّ لَكُمْ مَا وَرَاءَ ذَلِكُمْ أَنْ تَبْتَغُوا بِأَمْوَالِكُمْ مُحْصِنِينَ غَيْرَ مُسَافِحِينَ فَمَا اسْتَمْتَعْتُمْ بِهِ مِنْهُنَّ فَآتُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ فَرِيضَةً وَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ فِيمَا تَرَاضَيْتُمْ بِهِ مِنْ بَعْدِ الْفَرِيضَةِ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيمًا حَكِيمًا

‘তোমাদের উপর হারাম করা হয়েছে তোমাদের মাতাদেরকে, তোমাদের মেয়েদেরকে, তোমাদের বোনদেরকে, তোমাদের ফুফুদেরকে, তোমাদের খালাদেরকে, ভাতিজীদেরকে, ভাগ্নীদেরকে, তোমাদের সেসব মাতাকে যারা তোমাদেরকে দুধপান করিয়েছেন, তোমাদের দুধবোনদেরকে, তোমাদের শাশুড়িদেরকে, তোমরা যেসব স্ত্রীর সাথে মিলিত হয়েছো সেসব স্ত্রীর অপর স্বামী থেকে যেসব কন্যা তোমাদের কোলে রয়েছে তাদেরকে, আর যদি তোমরা তাদের সাথে মিলিত না হয়ে থাকো তবে তোমাদের উপর কোনো পাপ নেই এবং তোমাদের ঔরসজাত পুত্রদের স্ত্রীদেরকে এবং দুই বোনকে একত্র করা (তোমাদের উপর হারাম করা হয়েছে)। তবে অতীতে যা হয়ে গেছে, তা ভিন্ন কথা। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। আর নারীদের মধ্যে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ নারীগণও তোমাদের জন্য হারাম। তবে তোমাদের ডান হাত যাদের মালিক হয়েছে (দাসীগণ) তারা ছাড়া। আল্লাহ এসব ব্যবস্থা তোমাদের উপর ফরয করে দিয়েছেন। তোমাদের জন্য নিষিদ্ধ নারীদের ছাড়া অন্য সকল নারীকে মোহরের অর্থের বিনিময়ে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করতে চাওয়া তোমাদের জন্য বৈধ করা হয়েছে, অবৈধ যৌন সম্পর্কের জন্য নয়। সুতরাং তাদের মধ্যে তোমরা যাদের সম্ভোগ করেছো, তাদেরকে তাদের নির্ধারিত মোহর দিয়ে দাও। আর নির্ধারণের পর যে ব্যাপারে তোমরা পরস্পর সম্মত হবে, তাতে তোমাদের উপর কোনো অপরাধ নেই। নিশ্চয় আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়’ (আন-নিসা, ৪/২৩-২৪)

আল্লামা আব্দুর রহমান নাছের আস-সা‘দী রহিমাহুল্লাহ উক্ত আয়াতদ্বয়ের তাফসীরে বলেন, ‘এই আয়াতে কারীমাগুলো বংশসূত্রে মাহরাম নারীদেরকে, দুধপানসূত্রে মাহরাম নারীদেরকে, বিয়েসূত্রে মাহরাম নারীদেরকে এবং একত্রকরণসূত্রে মাহরাম নারীদেরকে অন্তর্ভুক্ত করে। অনুরূপভাবে যাদের সাথে বিয়ে বৈধ এমন নারীদেরকেও অন্তর্ভুক্ত করে’।[7]

পুরুষদের মধ্যে কে কে মাহরাম এবং কার কার সাথে দেখা করা চলবে আর কার কার সাথে চলবে না, তার বিবরণ তুলে ধরে মহান আল্লাহ বলেন,

وَقُلْ لِلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَى جُيُوبِهِنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ أَوْ آبَائِهِنَّ أَوْ آبَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ أَبْنَائِهِنَّ أَوْ أَبْنَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي أَخَوَاتِهِنَّ أَوْ نِسَائِهِنَّ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُنَّ أَوِ التَّابِعِينَ غَيْرِ أُولِي الْإِرْبَةِ مِنَ الرِّجَالِ أَوِ الطِّفْلِ الَّذِينَ لَمْ يَظْهَرُوا عَلَى عَوْرَاتِ النِّسَاءِ وَلَا يَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ مِنْ زِينَتِهِنَّ وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ

‘আর মুমিন নারীদেরকে বলে দিন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে অবনমিত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাযত করে। আর যা সাধারণত প্রকাশ পায়, তা ব্যতীত তাদের সৌন্দর্য তারা প্রকাশ করবে না। তারা যেন তাদের ওড়না দিয়ে বক্ষদেশকে আবৃত করে রাখে। আর তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, নিজের ছেলে, স্বামীর ছেলে, ভাই, ভাইয়ের ছেলে, বোনের ছেলে, আপন নারীগণ, স্বীয় মালিকানাধীন দাসী, অধীনস্থ যৌনকামনামুক্ত পুরুষ অথবা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ বালক ছাড়া কারো কাছে নিজেদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। আর তারা যেন নিজদের গোপন সৌন্দর্য প্রকাশ করার জন্য সজোরে পদচারণা না করে। হে মুমিনগণ! তোমরা সকলেই আল্লাহর নিকট তওবা করো, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো’ (আন-নূর, ২৪/৩১)

(চলবে)

আব্দুল আলীম ইবনে কাওছার মাদানী
বি. এ. (অনার্স), উচ্চতর ডিপ্লোমা, এম. এ. এবং এম.ফিল., মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সঊদী আরব;
অধ্যক্ষ, আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ, রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ।


[1]. দ্রষ্টব্য: আন-নূর, ২৪/৩১; আন-নিসা, ৪/২৩।

[2]. দ্রষ্টব্য: খলীল ইবনে আহমাদ আল-ফারাহীদী, আল-আইন, ৩/২২২; আযহারী, তাহযীবুল লুগাহ, ৫/৩০।

[3]. মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ইবনে উছাইমীন, ২১/১৮৮।

[4]. দ্রষ্টব্য: মুহাম্মাদ সাঈদ রসলান, মুহাররামাত মিনান নিসা, পৃ. ২৭।

[5]. হুসাইন ইবনে আওদাহ, আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়্যাতুল মুয়াসসারাহ, ৫/৭৪।

[6]. প্রাগুক্ত।

[7]. আব্দুর রহমান নাছের আস-সা‘দী, তাইসীরুল কারীমির রহমান ফী তাফসীরি কালামিল মান্নান, পৃ. ১৭৩।

Magazine