১১, ১২ও১৩তারিখেপাথরমারারসময়: ১১, ১২ ও ১৩ তারিখে প্রতিটি জামরায় ৭টি করে মোট ২১টি পাথর মারতে হবে। এ দিনগুলোতে পাথর মারার সময় হলো সূর্য ঢলে যাওয়ার পর হতে মাগরিব পর্যন্ত। সূর্য ঢলার পূর্বে পাথর মারলে তাকে পুনরায় পাথর মারতে হবে। তবে জরুরী প্রয়োজনে রাতে পাথর মারতে পারে। ইবনু আব্বাস রযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাখালরা রাতে পাথর নিক্ষেপ করবে এবং দিনে পশু-প্রাণী চরাবে।[1] এই হাদীছ প্রমাণ করে, জরুরী প্রয়োজনে রাতে পাথর মারা যাবে।
রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এরপাথরমারারনিয়ম : যুহরী হতে বর্ণিত, যখন রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাথর মারতেন, মিনার মসজিদের দিক হতে মারতেন। আর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখনই পাথর মারতেন, সাতটি পাথর মারতেন এবং প্রত্যেকটি পাথর মারার সময় তাকবীর বলতেন। তারপর সামনে এগিয়ে গিয়ে কিবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে দুই হাত তুলে দু‘আ করতেন এবং এ স্থানে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতেন। তারপর দ্বিতীয় জামরায় এসে সাতটি পাথর মারতেন এবং প্রতিটি পাথর মারার সময় তিনি তাকবীর বলতেন। অতঃপর বাম দিকে সরে ওয়াদীর নিকটবর্তী হতেন। তারপর কিবলামুখী হয়ে দুই হাত তুলে দু‘আ করতেন। অতঃপর আকাবার পাশে এসে বড় জামরায় সাতটি পাথর মারতেন এবং প্রতিটি পাথর মারার সময় তাকবীর বলতেন। তারপর ফিরে যেতেন। এখানে দেরি করতেন না।[2]
পাথর মারতে অক্ষম হলে অন্যরা তার পাথর মারতে পারে। ১২ বা ১৩ তারিখে পাথর মারা হলে মিনার কাজ শেষ হয়ে যায়। তারপর মক্কায় চলে আসতে হবে।
যাকরাযাবেনা :
(১) ১১, ১২ ও ১৩ তারিখে সূর্য ঢলার আগে পাথর মারা।
(২) একবারেই সাতটি পাথর মারা।
কিছুকথা :
কারণবশত মিনার দিনগুলো মক্কায় কাটানো যায়। ইবনু উমার রযিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, আব্বাস রযিয়াল্লাহু আনহু রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম–এর কাছে অনুমতি চেয়েছিলেন এ মর্মে যে, তিনি হাজীদের পানি পান করানোর জন্য মিনার রাতগুলো মক্কায় কাটাবেন। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে অনুমতি দিয়েছিলেন।[3] আবুল বাদ্দাহ ইবনু আছিম ইবনু আদী তার পিতা হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘উটের রাখালদের মিনায় রাত্রিযাপন করার দরকার নেই। তাদের আরো বলেছিলেন, তারা ঠিকমতো পাথর মারবে এবং দুই দিনের পাথর জমা করে এক দিনে মারবে’।[4] এই হাদীছে বুঝা যায়, কারণবশত দুই দিনের পাথর এক দিনে মারতে পারে। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাখালদের বলেছিলেন, ‘তারা রাতে পাথর মারবে এবং দিনে উট চরাবে’।[5]
ইবনু আব্বাস রযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিনার রাতগুলোতে প্রত্যেক রাতেই কা‘বাঘর যিয়ারত করতেন এবং তাওয়াফ করতেন।[6] এ হাদীছ প্রমাণ করে, মিনার রাতগুলোতে মিনায় বসে গল্প না করে কিছু সময় বের করে হারামে এসে তাওয়াফ করা যায়। হাজীদের জন্য জরুরী হলো, তারা মসজিদে জামাআতের সাথে ছালাত আদায় করবে আর তার পক্ষে সম্ভব হলে মসজিদে খায়েফে ছালাত আদায় করবে। মসজিদে খায়েফে ছালাত আদায় করা উত্তম। ইবনু আব্বাস রযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,صَلَّى فِي مَسْجِدِ الْخَيْفِ سَبْعُونَ نَبِيًّا ‘মসজিদে খায়েফে ৭০ জন নবী ছালাত আদায় করেছেন’।[7]
মিনার দিনগুলো শেষ হলে হজ্জের কাজ শেষ হয়ে যায়। এ সময় হারামে চলে যাওয়া ভালো। তারপর মক্কায় অবস্থান করবে এবং হারামে জামাআতে ছালাত আদায় করবে। কারণ রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আমার এ মসজিদে ছালাত আদায় করা অন্য মসজিদে ছালাত আদায় করার চেয়ে ১ হাজারেরও বেশি গুণ নেকী। তবে মসজিদে হারামে ছালাত আদায় ১ লক্ষ গুণ বেশি নেকী’।[8] অতএব, প্রত্যেক হাজীর জন্য উচিত, হারামে ছালাত আদায়ের আশায় হারামের পাশে থাকা।
বিদায়তাওয়াফ : যখন মানুষের হজ্জের কাজ শেষ হবে ও বাড়ি ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করবে, তখন সে যেন তাওয়াফের মাধ্যমে বায়তুল্লাহ ত্যাগ করে। ইবনু আব্বাস রযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, হজ্জ শেষে মানুষ বিভিন্ন পথে বাড়ি ফিরতে লাগল। তখন রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কা‘বায় সব শেষে তাওয়াফ না করে কেউ যেন বাড়ি না ফিরে।[9] এই হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, বাড়ি ফেরার পূর্বমুহূর্তে বিদায় তাওয়াফ করতে হবে এবং দুই রাকআত ছালাত আদায় করতে হবে। তবে বিদায়ের সময় কোনো ঋতুবতী মহিলাকে বিদায় তাওয়াফ করতে হবে না। ইবনু আব্বাস রযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, জনগণকে এ মর্মে আদেশ দেওয়া হয়েছে যে, বায়তুল্লাহর তাওয়াফ যেন তাদের শেষ কাজ হয়। তবে এ আদেশ ঋতুবতী মহিলাদের জন্য শিথিল করা হয়েছে।[10] ঋতুবতী মহিলা বিদায় তাওয়াফ না করে বাড়ি ফিরতে পারে এ শর্তে যে, তারা তাওয়াফে ইফাযা বা তাওয়াফে যিয়ারাহ করেছে। হাদীছে এসেছে,
عَنْ عَائِشَةَ أَنَّ صَفِيَّةَ بِنْتَ حُيَيٍّ زَوْجَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَاضَتْ فَذَكَرْتُ ذَلِكَ لِرَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ أَحَابِسَتُنَا هِيَ قَالُوا إِنَّهَا قَدْ أَفَاضَتْ قَالَ فَلاَ إِذًا.
আয়েশা রযিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত যে, নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিণী ছাফিয়্যা বিনতে হুয়াই রযিয়াল্লাহু আনহা ঋতুবতী হলেন এবং পরে এ কথাটি আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে অবগত করা হলো। তখন তিনি বললেন, সে কি আমাদের যাত্রায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে? তারা বললেন, তিনি তো তাওয়াফে যিয়ারাহ সমাধা করে নিয়েছেন। আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাহলে তো আর বাধা নেই।[11] ইবনু আব্বাস রযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ঋতুবতীদের অনুমতি দেওয়া হয়েছে যে, তারা তাওয়াফে ইফাযা করে থাকলে বিদায় তাওয়াফ করা লাগবে না।[12]
হাজী গণ যমযমের পানি নিয়ে যেতে পারে : কল্যাণের আশায় সম্ভব হলে যমযমের পানি নিয়ে যেতে পারে। আয়েশা রযিয়াল্লাহু আনহা বলেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাত্রে এবং মশকে যমযমের পানি বহন করতেন। তিনি অসুস্থ ব্যক্তিদের উপর যমযমের পানি ঢালতেন এবং তাদের পান করাতেন।[13] এ হাদীছ প্রমাণ করে, মানুষ যমযমের পানি নিয়ে যেতে পারে এবং তা রোগীদের জন্য ব্যবহার করতে পারে। অতএব, শেষ কথা হলো, সেভাবেই হারাম থেকে বের হতে হবে যেভাবে অন্যান্য মসজিদ হতে বের হয়। তবে পিছন দিকে সরে বের হতে হবে না। বাম পা আগে বের করে এ দু‘আ পড়ে হারাম ত্যাগ করবে-
اللهم صل على محمد وسلم اللَّهُمَّ إِنِّى أَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ
যা করা যাবে না :
(১) পাথর মারার পূর্বে বিদায় তাওয়াফ করা।
(২) বিদায় তাওয়াফের পর মক্কায় দীর্ঘ দিন থাকা।
(৩) হারাম ত্যাগের সময় পিছন দিকে হেঁটে বের হওয়া।
পরিশেষে আল্লাহর কাছে কায়মনোবাক্যে দু‘আ করি, আল্লাহ যেন আমাদের হজ্জের নিয়মকানুন যথাযথভাবে জেনে-বুঝে পালন করার তাওফীক্ব দান করেন এবং আমাদের হজ্জ কবুল করে জান্নাতুল ফেরদাউস দান করেন- আমীন!
[1]. সিলসিলা ছহীহা, হা/২৪৭৭।
[2]. ছহীহ বুখারী, হা/১৭৫৩।
[3]. আবূ দাঊদ, হা/১৯৫৯, হাদীছ ছহীহ।
[4]. তিরমিযী, হা/৯৫৫, হাদীছ ছহীহ; ইবনু মাজাহ, হা/৩০৩৭।
[5]. সিলসিলা ছহীহা, হা/২৪৭৭।
[6]. সিলসিলা ছহীহা, হা/৮০৪।
[7]. ত্বাবারানী, আল-মু‘জামুল কাবীর, হা/১২২৮৩; সিলসিলা ছহীহা, হা/২০২২; আলবানী, মানাসিকুল হজ্জ ওয়াল উমরা, পৃ. ৩৯।
[8]. ইরওয়াল গালীল, হা/১১২৯।
[9]. ছহীহ বুখারী, হা/১৬৩৪।
[10]. ছহীহ বুখারী, হা/১৭৫৫।
[11]. ছহীহ বুখারী, হা/১৭৫৭।
[12]. ছহীহ বুখারী, হা/১৭৬০।
[13]. সিলসিলা ছহীহা, হা/৮৮৩।