কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

হক্বের মানদণ্ড (পর্ব-৩)

সনদেরগুরুত্ব : ইবনুল মুবারাক রহিমাহুল্লাহ বলেন,الإسناد من الدين ولولا الإسناد لقال من شاء ما شاء অর্থাৎ সনদ হচ্ছে দ্বীনের অংশ। কেননা দ্বীনের ক্ষেত্রে যদি সনদের গ্রহণযোগ্যতা না থাকত তাহলে সত্য-মিথ্যার বাছবিচার না করে যার যা ইচ্ছা তাই বলত। এ জন্যই অধিকাংশ আলেমদের নিকট মুআল্লাক্ব বর্ণনা (বিচ্ছিন্ন সূত্রে বর্ণিত হাদীছ) শরীআতের দলীল হতে পারে না।[1]

আনাস রযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, ইমাম ত্বহত্ববী রহিমাহুল্লাহ-এর তিনটি হাদীছ ব্যতীত অন্য কোনো বর্ণনা দ্বারা ইমাম মুসলিমের মূলনীতি অনুযায়ীও ছাহাবীর সাথে ইমাম আবূ হানীফার সাক্ষাৎ সাব্যস্ত নয়। আশ্চর্যের বিষয় হলো ইমাম আবূ হানীফার সূত্রে ইমাম ত্বহত্ববীর বর্ণিত তিনটি হাদীছ অধিকাংশের নিকট মাওযূ তথা জাল। বিশেষ করে প্রথম হাদীছটিকে অধিকাংশ বিশ্লেষক মুহাদ্দীছগণ জাল বলেছেন। সুতরাং ইমাম মুসলিমের মূলনীতির উপর নির্ভর করে কীভাবে একই যুগের হওয়ার ভিত্তিতে আনাস রযিয়াল্লাহু আনহু-এর সাথে ইমাম আবূ হানীফা রহিমাহুল্লাহ-এর সাক্ষাৎ প্রমাণ করবেন?! এই হাদীছগুলো যে জাল তার প্রমাণ দেখুন।

‘মাজমাউল বিহার’ গ্রন্থের লেখক শায়খ ইবনু তাহের হানাফী রহিমাহুল্লাহ বলেন,طلب العلم فريضة على كل مسلم روي عن أنس بطرق كلها معلومة واهية وقال أحمد: لا يثبت في هذا الباب شئ وكذا قال ابن راهويه وابو على النيسابوري والحاكم انتهى مختصرا ‘এই হাদীছটি আনাস রযিয়াল্লাহু আনহু হতে কয়েকটি সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যার সবগুলো সূত্রই দুর্বল। ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বল রহিমাহুল্লাহ বলেছেন, এই বিষয়ে কোনো হাদীছ প্রমাণিত হয়নি। ইবনু রাহওয়াই, আবূ আলী নিসাপূরী এবং ইমাম হাকেম অনুরূপ মন্তব্য করেছেন। নূরুদ্দীন আলীও অনুরূপ মন্তব্য করেছেন’।[2] ইবনু হিব্বান রহিমাহুল্লাহ বলেন, ‘এই হাদীছটি বাতিল। এর কোনো ভিত্তি নেই’।[3] ইবনুল জাওযী উক্ত হাদীছটিকে তার ‘মাওযূআত’ (জাল হাদীছ সংকলন) নামক গ্রন্থে উল্লেখ্য করেছেন।[4]

সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ আমীন (ইবনুল আবেদীন) বলেন,وجاء من طرق أنه روي عنه أحاديث ثلاثة لكن قال أئمة المحدثين مدارها على من اتهمته الأئمة بوضع الأحاديث ‘ইমাম আবূ হানীফা রহিমাহুল্লাহ হতে উক্ত তিনটি হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু যে বর্ণনাকারীদের উপর হাদীছ তিনটি নির্ভর করে, তাদের প্রত্যেককে মুহাদ্দীছ ইমামগণ হাদীছ জালকারী দোষে অভিযুক্ত করেছেন’।[5] তিনি আরও বলেন, ‘তাহযীবুল আসমা’ নামক গ্রন্থে ইমাম নববী শাফেঈ এবং ইয়াফী শাফেঈ রহিমাহুমাল্লাহ তার লিখিত ইতিহাস গ্রন্থে লিখেছেন যে, জাবের ইবনু আব্দুল্লাহ, আব্দুল্লাহ ইবনু উনাইস, আয়েশা বিনতু আজরাদ, ওয়াছেলা ইবনুল আসক্বা এবং আব্দুল্লাহ ইবনু জায‘ আয-যুবাইদী রহিমাহুমুল্লাহ ও ইমাম আবূ হানীফা রহিমাহুল্লাহ-এর যুগে জীবিত ছিলেন এবং তাদের থেকে বর্ণনাও করেছেন। ত্বহত্ববী গ্রন্থের মধ্যে তা বর্ণিত হয়েছে যে, ইমাম আবূ হানীফা রহিমাহুল্লাহ ৯৪ হিজরীতে ১৪ বছর বয়সে কূফা নগরীতে আব্দুল্লাহ ইবনু উনাইস রযিয়াল্লাহু আনহু থেকে নিম্নের এই হাদীছ শুনেছেন, حبك الشئ يعمي ويصم ‘কোনো কিছুর অতিমাত্রার ভালোবাসা মানুষকে অন্ধভক্ত ও বধির বানিয়ে দেয়’।[6] তিনি আরও বলেন, ইমাম আবূ হানীফা রহিমাহুল্লাহ আয়েশা বিনতু আজরাদ রহিমাহুল্লাহ থেকে নিম্নোক্ত হাদীছটি বর্ণনা করেছেন।

أكثر جند الله في الأرض الجراد لا آكله ولا احرمه

‘যমীনে আল্লাহর সবচেয়ে বড় সৈন্যদল হলো পঙ্গপাল, আমি তা খাই না এবং হারাম হিসাবে সাব্যস্ত করি না’।[7] তিনি আরও বলেন, ইমাম আবূ হানীফা রহিমাহুল্লাহ ওয়াছেলা ইবনুল আসক্বা থেকে দুইটি হাদীছ বর্ণনা করেছেন।

এক.دَعْ مَا يَرِيبُكَ إِلَى مَا لاَ يَرِيبُكَ ‘যে বিষয়ে তোমার সন্দেহ হয় তা ছেড়ে দিয়ে যাতে সন্দেহের সম্ভবনা নেই তা গ্রহণ করো’।[8]

দুই. لا تظهر شماتة لأخيك فيعافيه الله ويبتليك ‘তোমার ভাইয়ের কষ্টে আনন্দ প্রকাশ করো না। করলে আল্লাহ তাকে কষ্ট হতে মুক্তি দিবেন এবং তোমাকে পরীক্ষার সম্মুখীন করে দিবেন’।[9] তিনি আরও বলেছেন, ৯৬ হিজরীতে ইমাম আবূ হানীফা তার পিতার সাথে হজ্জে গিয়ে আব্দুল্লাহ ইবনু হারেছ ইবনু জায‘ থেকে কা‘বার নিকটে এই নিম্নের হাদীছ শুনেছেন।

এক. إعانة المسلم فريضة على كل مسلم ‘অপর মুসলিমের সাহায্য করা প্রত্যেক মুসলিমের উপর ফরয’।[10]

দুই. من نفقه في الدين كفاه الله همه ورزقه من حيث لا يحتسب ‘যে ব্যক্তি দ্বীনের জন্য সম্পদ ব্যয় করবে আল্লাহ তার পেরেশানী দূর করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট হয়ে যাবেন এবং তাকে এমন স্থান থেকে রিযিক্ব দিবেন যার কল্পনা সে করেনি’।[11]

আর জাবের রযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন, একজন আনছারী ব্যক্তি নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম–এর নিকট এসে জিজ্ঞেস করলেন, আমার কোনো ছেলে সন্তান হয় না। তখন রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, فأين كنت من كثرة الاستغفار وكثرة الصدقة يرزق بها الولد ‘তুমি বেশি বেশি ক্ষমা চাও এবং বেশি বেশি দান করো তাহলে এর বিনিময়ে আল্লাহ তোমাকে ছেলে সন্তান দান করবেন। অতঃপর ঐ ব্যক্তি বেশি বেশি দান ও ইস্তেগফার করা আরম্ভ করলে তার নয়টি ছেলে সন্তান হয়।

জবাব : আল্লাহর নিকট মিথ্যুকদের থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি! এই চার জন ছাহাবীর সাথে ইমাম আবূ হানীফা রহিমাহুল্লাহ-এর সাক্ষাৎ এবং তাদের থেকে হাদীছ বর্ণনা মর্মে মিথ্যা দাবির খণ্ডন করার পর এবং এই দাবির খণ্ডনে ইবনু তাহের, ইবনু খাল্লিক্বান, ইমাম নববী এবং ইবনু হাজার আল-আসক্বালানী রহিমাহুল্লাহ-এর সুস্পষ্ট বক্তব্য পেশ করার পর তাদের এই দাবির আর খণ্ডন করার প্রয়োজন ছিল না। কিন্তু লেখক যেহেতু ছহীহ ও ভুল বর্ণনার পার্থক্য না করে শায়খ মুহাম্মাদ শাহ নাওয়ামুয-এর অন্ধ অনুসরণ করতে গিয়ে এই ব্যাপারে মারাক্তক ভুল করেছে, তাই এরও একটি তাহক্বীক্ব হওয়া জরুরী।

তাহক্বীক্ব : তাদের দাবি অনুসারে জাবের ইবনু আব্দুল্লাহ, আব্দুল্লাহ ইবনু উনাইস এবং অন্যান্যরা ইমাম আবূ হানীফা রহিমাহুল্লাহ-এর যুগে জীবিত ছিলেন এবং তাদের থেকে ইমাম আবূ হানীফা রহিমাহুল্লাহ হাদীছ বর্ণনা করেছেন।

এই কথাকে ইমাম নববী রহিমাহুল্লাহ-এর দিকে ধাবিত করা (যেমনটি ‘তানভীরুল হক্ব’-এর লেখক করেছেন) মিথ্যা এবং (নাঊযুবিল্লাহ) এই মিথ্যুক থেকে আমরা আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। কেননা ইমাম নববী রহিমাহুল্লাহ ‘তাহযীবুল আসমা’ গ্রন্থের কোথাও এ কথা বলেননি যে, ইমাম আবূ হানীফা রহিমাহুল্লাহ-এর যুগে তারা জীবিত ছিলেন। কারো সন্দেহ হলে ‘তাহযীবুল আসমা’ খুলে দেখতে পারেন; বরং ইমাম নববী রহিমাহুল্লাহ-এর কথা দ্বারাই প্রমাণিত হয় যে, জাবের ইবনু আব্দুল্লাহ এবং আব্দুল্লাহ ইবনু উনাইস রযিয়াল্লাহু আনহুমা ইমাম আবূ হানীফা রহিমাহুল্লাহ-এর জন্মের কয়েক বছর আগে মৃত্যুবরণ করেছেন। সামনে এই বিষয়ে আলোকপাত করা হবে। লেখক যখন ইমাম নববী রহিমাহুল্লাহ-এর বক্তব্যের উদ্ধৃতি দেওয়ার ক্ষেত্রে ভুল তথ্য দিয়েছেন। তখন বোঝাই যাচ্ছে ইমাম শাফেঈ রহিমাহুল্লাহ-এর বক্তব্য উপস্থাপনেও তিনি একই ভুল করেছেন। তবে ইমাম শাফেঈ রহিমাহুল্লাহ-এর কথা যে, ইমাম আবূ হানীফা রহিমাহুল্লাহ–এর যুগে এই সকল ছাহাবী জীবিত ছিলেন এবং তাদের সাথে তার সাক্ষাৎ হয়েছে এবং তাদের থেকে তিনি হাদীছ বর্ণনা করেছেন। আসুন! দেখা যাক, এর আসল রহস্য। ইমাম শাফেঈ রহিমাহুল্লাহ-এর জীবনীসম্বলিত কিতাব ‘মিরআতুল জিনান’ গ্রন্থের মূল বক্তব্য উপস্থাপন করার মাধ্যমে কোনটি সত্য আর কোনটি মিথ্যা তা জানার চেষ্টা করি।

قال العيافي في تاريخ مراءة الجنان في حوادث سنة خمسين ومائة فيها توفي فقيه العراق الإمام أبو حنيفة النعمان بن ثابت الكوفي مولى بني تيم الله بن ثعلبة ومولده سنة ثمانين رأى أنسا وروى عن عطاء بن أبي رباح وطبقته. فكان قد أدرك أربعة من الصحابة هم أنس بن مالك بالبصرة وعبد الله بن أبي أوفى بالكوفة وسهل بن سعد الساعدي بالمدينة وأبو طفيل عامر بن واثلة بمكة. قال بعض أصحاب التاريخ ولم ير أحدا منهم ولا أخذ عنه وأصحابه يقولون لقي جماعة من الصحابة وروي عنهم ولم يثبت ذالك عند أهل النقل.

‘ইয়াফী রহিমাহুল্লাহ “রআতুল জিনান” নামক গ্রন্থে বলেন, বনি তায়মুল্লাহর দাস ইরাকের বিদ্বান ইমাম আবূ হানীফা নূ‘মান ইবনু ছাবেত আল-কূফী রহিমাহুল্লাহ, ৮০ হিজরীতে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৫০ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি আনাস রযিয়াল্লাহু আনহু-এর সাক্ষাৎ পান। আতা ইবনু আবি রিবাহ এবং তার সমকালীনদের থেকে হাদীছ বর্ণনা করেন। তিনি চার জন ছাহাবীর সাক্ষাৎ লাভ করেন; বাছরা নগরীতে আনাস ইবনু মালেক, কূফা নগরীতে আব্দুল্লাহ ইবনু আবি আওফা, মদীনা নগরীতে সাহল ইবনু সা‘দ এবং মক্কা নগরীতে আবূ তুফাঈল আমের ইবনু ওয়াছেলা রযিয়াল্লাহু আনহুম। কিন্তু অনেক ইতিহাসবেত্তা বলেছেন, ইমাম আবূ হানীফা রহিমাহুল্লাহ তাদের কারো সাথে সাক্ষাৎ লাভ করতে পারেননি এবং তাদের থেকে কোনো হাদীছও বর্ণনা করেননি। তবে তার কিছু সাথিরা বলে থাকেন যে, তিনি একদল ছাহাবীর সাক্ষাৎ পেয়েছেন এবং তাদের থেকে হাদীছ বর্ণনা করেছেন। কিন্তু তাদের এই বক্তব্য কোনো দলীল দ্বারা প্রমাণিত নয়।[12]

উক্ত আলোচনা থেকে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে যে, ইতিহাস প্রমাণ করে জাবের ইবনু আব্দুল্লাহ এবং আব্দুল্লাহ ইবনু উনাইস রযিয়াল্লাহু আনহুমা-এর সাথে ইমাম আবূ হানীফা রহিমাহুল্লাহ–এর সাক্ষাৎ লাভের কথা উল্লেখ নেই। সুতরাং এটা শুধু ধোঁকাবাজি বৈ কিছুই নয়। আর কুরত্বাসীর বর্ণনার উপর নির্ভর করা লজ্জাকর বিষয়। যদিও যুক্তির দাবিতে মেনেও নেওয়া হয় যে, ইমাম শাফেঈ রহিমাহুল্লাহ ছাহাবীদের সাথে সাক্ষাতের কথা বলেছেন, তবুও ইমাম শাফেঈ রহিমাহুল্লাহ–এর এই কথা অগ্রহণযোগ্য বিবেচিত হবে এবং বিবেক এবং বর্ণনার বিরোধী হবে। কেননা এই পাঁচ জন ছাহাবীর মধ্য হতে কোনো ছাহাবীর সাথে তার সাক্ষাৎ হওয়া অসম্ভব বিষয়। কথার কথা ইমাম শাফেঈ রহিমাহুল্লাহ যদি বলেন, ইমাম আবূ হানীফা রহিমাহুল্লাহ আদম আলাইহিস সালাম–এর সাথে সাক্ষাৎ করেছেন, তাহলে কি তার এই কথা গ্রহণযোগ্য হয়ে যাবে?! জাবের ইবনু আব্দুল্লাহ রযিয়াল্লাহু আনহু–এর সাথে ইমাম আবূ হানীফা রহিমাহুল্লাহ-এর সাক্ষাৎ হয়নি তার প্রমাণ হলো, ইমাম আবূ হানীফা রহিমাহুল্লাহ-এর জন্মের এক বছর পূর্বে জাবের রযিয়াল্লাহু আনহু ইন্তেকাল করেন। অর্থাৎ ইমাম আবূ হানীফা রহিমাহুল্লাহ ৮০ হিজরীতে জন্মগ্রহণ করেন আর জাবের রযিয়াল্লাহু আনহু ৭৯ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন। ইবনুল আবেদীন আশ-শামী রহিমাহুল্লাহ ‘রাদ্দুল মুখতার’ গ্রন্থে বলেছেন, بأنه مات قبل ولادة الإمام بسنة ‘ইমাম আবূ হানীফা রহিমাহুল্লাহ-এর জন্মের এক বছর পূর্বে জাবের রযিয়াল্লাহু আনহু মৃত্যুবরণ করেছেন’।[13] ইবনু শাহীন রহিমাহুল্লাহ বলেন, هذا وهم صريح فإن جابر بن عبد الله باتفاق الروايات مات في بضع وسبعين ولم يعش إلى ثمانين وهي التي ولد فيها الإمام أبو حنيفة. فكيف يتصور رواية عنه ‘সকল বর্ণনার ঐকমত্যে একথা সুস্পষ্ট যে, জাবের রযিয়াল্লাহু আনহু ৮০ হিজরী পর্যন্ত জীবিত ছিলেন না, যে হিজরীতে ইমাম আবূ হানীফা রহিমাহুল্লাহ-এর জন্মগ্রহণ করেছিলেন; বরং তার জন্মের কয়েক বছর পূর্বে জাবের রযিয়াল্লাহু আনহু মৃত্যুবরণ করেন। সুতরাং ইমাম আবূ হানীফা রহিমাহুল্লাহ তার থেকে হাদীছ বর্ণনা করার কথা কীভাবে চিন্তা করা যায়’।[14] ‘তাহযীবুল আসমা’ নামক গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে। জাবের রযিয়াল্লাহু আনহু ৭৩ হিজরীতে মদীনায় মৃত্যুবরণ করেন। আবার অনেকে বলেছেন, ৭৮ বা ৬৮ হিজরীতে। মৃত্যুর সময়ে তার বয়স ছিল ৯৪ বছর। আর শেষ বয়সে তার দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছিলেন।[15]

‘তানভীরুল হক্ব’-এর লেখক জাবের রযিয়াল্লাহু আনহু থেকে যে হাদীছটি বর্ণনা করেছেন এবং দাবি করেছেন, হাদীছটি ইমাম আবূ হানীফা রহিমাহুল্লাহ জাবের রযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন, সে হাদীছটি মূলত মাওযূ বা জাল। হানাফী বিদ্বান আল্লামা শামী রাদ্দুল মুখতারে বলেছেন হাদীছটি মাওযূ বা জাল।[16]

Þ যদি কেউ আপত্তি তোলে যে, এক বর্ণনা অনুযায়ী ইমাম আবূ হানীফা রহিমাহুল্লাহ ৭০ হিজরীতে জন্মগ্রহণ করেছেন, তাহলে তো ইমাম আবূ হানীফা রহিমাহুল্লাহ-এর সাথে জাবের রযিয়াল্লাহু আনহু–এর সাক্ষাৎ হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে?

জবাব : তোমরা সঠিক ও গ্রহণযোগ্য মত গ্রহণকারী যদি হয়ে থাক তাহলে ৭০ হিজরীতে জন্মগ্রহণের বর্ণনাকে প্রত্যাখ্যাত বলে মেনে নাও। কেননা জমহূর বিদ্বানদের মতে ইমাম আবূ হানীফা রহিমাহুল্লাহ ৮০ হিজরীতে জন্মগ্রহণ করেছেন। লেখক মহাশয়ও বলেছেন, ইমাম আবূ ইউসুফ রহিমাহুল্লাহ থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি ৮০ হিজরীতে জন্মগ্রহণ করেছেন। সুতরাং ৮০ হিজরীতে জন্ম একথাই সত্য ৭০ হিজরীতে জন্ম একথা নিছক মিথ্যা। এই তাহক্বীক্ব যদি তোমাদের নিকট গ্রহণীয় না হয় তাহলে ইমাম নববী রহিমাহুল্লাহ–এর এক বর্ণনায় বলা হয়েছে যে, জাবের রযিয়াল্লাহু আনহু আট হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেছেন সেটাকে মেনে নাও। (যে দিকে যায় সে দিকের দরজা বন্ধ -অনুবাদক)।

Þ যদি কেউ আপত্তি তোলে যে, উক্ত হাদীছটি তো ইমাম আবূ হানীফা রহিমাহুল্লাহ–এর মুসনাদে লিপিবদ্ধ রয়েছে। তাহলে কীভাবে বলা যায় যে, হাদীছটি মাওযূ বা জাল?!

জবাব : উক্ত হাদীছটিকে ইমাম আবূ হানীফা রহিমাহুল্লাহ নিজে লিপিবদ্ধ করেননি। কেননা তার নামে ‘মুসনাদে আবি হানীফা’-এর হাদীছসমূহ তার নিজ হাতে একত্রিত করা হাদীছ নয়; বরং ৬৭৪ হিজরী পর্যন্ত ইমাম আবূ হানীফা রহিমাহুল্লাহ-এর মুসনাদগুলোকে অনেক মানুষ পৃথক পৃথকভাবে সংরক্ষণ করে রেখেছিলেন। পরবর্তীতে ৬৭৪ হিজরীতে খাওয়ারেযমী সবগুলোকে একত্রিত করেন।[17]

(চলবে)

মূল (উর্দূ) : সাইয়্যেদমিয়াঁনাযীর হুসাইন দেহলভী রহিমাহুল্লাহ

অনুবাদ : আখতারুজ্জামান বিন মতিউর রহমান

শিক্ষক, আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ, ডাঙ্গীপাড়া, পবা, রাজশাহী।


[1]. শারহু নুখবাতুল ফিকার, ‘মুআল্লাক্ব হাদীছের বর্ণনা’, পৃ. ৬২।

[2]. তানযীহুশ শরীআহ, ‘ইলম’ অধ্যায়, দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ, ১/২৫৮।

[3]. কিতাবুল মাজরূহীন, ‘তারজুমাতু তা‘রেফু ইবনু সালমান’, ১/৩৮২।

[4]. কিতাবুল মাওযূআত, ‘ইলম’ অধ্যায়, ১/১৫৪; আল-ফাওয়ায়েদুল মাজমূআহ, ‘কিতাবুল ফাযায়েল’, ‘ইলমের ফযীলত’ অধ্যায়, পৃ. ২৭২।

[5]. রাদ্দুল মুহতার, ‘ভূমিকা’, ১/৪৪।

[6]. ত্বহত্ববী, ‘ভূমিকা’, ১/৪৭।

[7]. গ্রাগুক্ত।

[8]. গ্রাগুক্ত

[9]. প্রাগুক্ত।

[10]. প্রাগুক্ত।

[11]. মুসনাদে খাওয়ারেযমী, ১/২৪।

[12]. মিরআতুল জিনান, ১/১৫০।

[13]. রাদ্দুল মুখতার, ‘ভূমিকা’, ১/৪৪।

[14]. ত্বহত্ববী ‘ভূমিকা’, ১/৪৭।

[15]. তাহযীবুল আসমা ফী তরজুমাতু জাবের ইবনু আব্দিল্লাহ।

[16]. রাদ্দুল মুহতার, ‘ভূমিকা’, ১/৪৪।

[17]. বুসতানুল মুহাদ্দীছিন, তাযকিরাতু মুওয়াত্ত্বা ইমাম আযম, পৃ. ৫০।

Magazine