কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

আল-আসাদের পতন: এক যুগ পর সিরিয়ায় আরব বসন্তের পুনরুজ্জীবন

post title will place here

বিশ্ববাসী বাংলাদেশের ফ‌্যাসিস্ট হাসিনার পতনের পর, ৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রি. আরেকটি পতন দেখল সিরিয়ার স্বৈরশাসক বাশার আল-আসাদের। এর মধ‌্যদিয়ে ১৯৭০ সালে শুরু হওয়া আসাদ পরিবারের দীর্ঘ প্রায় ৫৪ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। হাসিনা আশ্রয় নেয় ভারতে আর বাশার রাশিয়াতে। সিরিয়ার বাথ পার্টির নেতা হাফিজ আল-আসাদ ১৯৭০ সালে একটি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেন। তিনি আলাভী শীআ হওয়া সত্ত্বেও সুন্নীদের সরকার, সামরিক বাহিনী এবং পার্টির সিনিয়র পদে নিয়োগ দেন। আসাদের সকল প্রধানমন্ত্রী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং তার মন্ত্রিসভার অধিকাংশই ছিলেন সুন্নী। তিনি তার বক্তৃতায়, প্রায়শই ইসরাঈলের সাথে যুদ্ধের কথা উল্লেখ করার সময় জিহাদ এবং শাহাদা শব্দ ব্যবহার করে জনগণের মন জয় করেন এবং দেশবাসীর আস্থাভাজন হওয়ার চেষ্টা করে সফল হন। ২০০০ সালে পিতার মৃত‌্যুর পর, বাশার আল-আসাদ প্রেসিডেন্ট হিসেবে সিরিয়ার দায়িত্ব নেন। তিনিও পিতার মতো, প্রথমে নমনীয় আচরণ দেখালেও পরে কঠোর স্বৈরচারী হয়ে ওঠেন। এর ফলে ধীরে ধীরে গণমানুষের মাঝে সরকারবিরোধী মনোভাব তৈরি হয়। আর এতে ঘি ঢেলে দেয় কবি-সাহিত্যিক-সংস্কৃতি কর্মীরা। ২০১১ সালে আরব বসন্ত সিরিয়ার সরকারের পতনে ‘বাটারফ্লাই ইফেক্ট’ তৈরি করে যার ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন দেশপ্রেমিক সাধারণ মানুষ ও সশস্ত্র বিপ্লবী যোদ্ধাদের মাঝে। এতে নেতৃত্ব দেয় এইচটিএস প্রধান আল-জুলানী। তিনি সশস্ত্র ১২টি গোষ্ঠীকে এক ছাতার নিচে নিয়ে আসেন। তারা সশস্ত্র সংগ্রামের সাথে সাথে গণমানুষের সমর্থন আদায়ে সমর্থ‌ হন। জনগণ তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার এবং মুক্তির দাবিতে রাস্তায় নেমে আসেন, যা আসাদের শাসনের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে ওঠে। তিনি বাবা আসাদের মতো সংলাপের পরিবর্তে কঠোর দমননীতি গ্রহণ করে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের ওপর সামরিক অভিযান, বোমাবর্ষণ এবং রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের মাধ‌্যমে দেশটিকে ধীরে ধীরে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেন। গত এক যুগের সংঘাতে ৫ লাখেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারায়, বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন প্রায় ১২ মিলিয়ন মানুষ, যার মধ্যে প্রায় ৬ মিলিয়ন মানুষ এখন শরণার্থী অথবা বিদেশে আশ্রয়প্রার্থী। আর কারাবরণ করেন অগণিত মানুষ। মানবাধিকার সংগঠন সিরিয়ান নেটওয়ার্ক ফর হিউম্যান রাইটসের তথ্য অনুযায়ী, হালাসহ আল-আসাদের কারাগারে অন্তত ১ লাখ ৩৬ হাজার ৬১৪ জন বন্দী ছিলেন। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ২০১৭ সালে সিদনায়া কারাগারকে ‘মানব কসাইখানা (আয়নাঘর)’ বলে আখ্যায়িত করে। এই সংঘর্ষে দেশীয় নানা গোষ্ঠী, যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক, ইরান ও রাশিয়াসহ আন্তর্জাতিক শক্তি জড়িয়ে পড়ে। শেষ পর্যন্ত অবশ্য বাশার আল-আসাদের মিত্ররা তাকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়। আসাদ সরকারের পতন মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে নতুন এক পালাবদলের সূচনা করে। এটি ইরান, ফিলিস্তীন, ইসরাঈল, লেবানন, ইরাকসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর রাজনীতিতে নতুন রূপ নেবে। বাশার আল–আসাদের পতনের আগে থেকেই ইদলিব দেশপ্রেমী মুজাহিদ দল ‘হায়াত তাহরির আল–শামস (এইচটিএস)’-এর নিয়ন্ত্রণে ছিল। সিরিয়ান স্যালভেশন গভর্নমেন্ট তাদেরই সরকার। বাশারকে ক্ষমতাচ্যুত করা বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর নেতৃত্বে ছিল এই এইচটিএস। সালাফী মতাদর্শের অনুসারী, এইচটিএস প্রধান আবূ মুহাম্মাদ আল–জুলানি এই বিপ্লবের নেতৃত্ব দেন। পতনের পর, জনগণ আসাদের ছবি ছিঁড়ে ফেলেন এবং তার বাবা হাফিজ আল-আসাদের মূর্তি ভেঙে ফেলেন। মানুষ নতুন করে প্রাণ ফিরে পান।


Magazine