কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

শা‘বান মাসে নফল ছিয়াম ও ছালাত

শা‘বান আরবী বছরের অষ্টম মাস। বছরে মাসের সংখ্যা ও গণনা সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারীমে বলেন, إِنَّ عِدَّةَ الشُّهُورِ عِنْدَ اللَّهِ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا فِي كِتَابِ اللَّهِ يَوْمَ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ مِنْهَا أَرْبَعَةٌ حُرُمٌ ذَلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ فَلَا تَظْلِمُوا فِيهِنَّ أَنْفُسَكُمْ وَقَاتِلُوا الْمُشْرِكِينَ كَافَّةً كَمَا يُقَاتِلُونَكُمْ كَافَّةً وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ مَعَ الْمُتَّقِينَ ‘নিশ্চয়ই আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টির দিন হতেই আল্লাহর বিধানে আল্লাহর নিকট মাস গণনায় বারোটি মাস, তন্মধ্যে চারটি নিষিদ্ধ মাস, এটাই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান। সুতরাং এটার মধ্যে তোমরা নিজেদের প্রতি যুলম করো না এবং তোমরা মুশরিকদের সাথে সর্বাত্মকভাবে যুদ্ধ করবে, যেমন তারা তোমাদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মকভাবে যুদ্ধ করে থাকে। আর জেনে রাখো, আল্লাহ তো মুত্তাক্বীদের সঙ্গে আছেন’ (আত-তওবাহ, ৯/৩৬)

শা‘বান মাসটি অত্যন্ত তাৎর্যপূর্ণ একটি মাস। শা‘বান মাস মাহে রামাযানের আগমনী বার্তা ঘোষণা করে। অধিক ছিয়ামের মধ্য দিয়ে রামাযান মাসের ফরয ছিয়াম পালনের অনুশীলন এবং সাহস সঞ্চয়ের মাস মাহে শা‘বান। এ মাসের বিশেষ মর্তবাও স্বীকৃত রয়েছে। উমামা ইবনু যায়েদ রযিয়াল্লাহু আনহু বলেন,قُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ لَمْ أَرَكَ تَصُوْمُ شَهْرًا مِنَ الشُّهُوْرِ مَا تَصُوْمُ مِنْ شَعْبَانَ قَالَ ذٰلِكَ شَهْرٌ يَغْفُلُ النَّاسُ عَنْهُ بَيْنَ رَجَبٍ وَرَمَضَانَ وَهُوَ شَهْرٌ تُرْفَعُ فِيْهِ الْأَعْمَالُ إِلَى رَبِّ الْعَالَمِيْنَ فَأُحِبُّ أَنْ يُرْفَعَ عَمَلِيْ وَأَنَا صَائِمٌ ‘আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! শা‘বান মাসের মতো এত অধিক ছিয়াম (নফল) অন্য মাসে আমি আপনাকে রাখতে দেখি না কেন? তিনি বলেন, রজব ও রামাযানের এটি মাঝখানের মাস যাতে লোকেরা গাফেল থাকে। এটি এমন মাস যাতে রব্বুল আলামীনের কাছে আমলসমূহ উঠানো হয়। তাই আমি পছন্দ করি ছিয়াম রাখা অবস্থায় আমার আমল উঠানো হোক’।[1]

একটি নফল ছিয়াম মুমিন ব্যক্তিকে বাঁচানোর মযবূত হাতিয়ার। এ মর্মে রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,مَنْ صَامَ يَوْمًا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ بَعَّدَ اللهُ وَجْهَهُ عَنِ النَّارِ سَبْعِيْنَ خَرِيْفًا ‘যে ব্যক্তি মহান আল্লাহর রাস্তায় এক দিন ছিয়াম রাখবে, আল্লাহ তাআলা তার চেহারাকে জাহান্নাম হতে ৭০ বছরের দূরত্ব করে দিবেন’।[2]

রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই মাসে সবচেয়ে বেশি নফল ছিয়াম পালন করতেন। রজব মাস ইবাদতের মাধ্যমে মনের ভূমি কর্ষণের জন্য, শা‘বান মাস আরও বেশি ইবাদতের মাধ্যমে মনের জমিতে বীজ বপনের জন্য আর রামাযান সর্বাধিক ইবাদত-বন্দেগীর মাধ্যমে সফলতার ফসল তোলার জন্য। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বহু ছহীহ হাদীছে প্রমাণিত হয়েছে যে, তিনি শা‘বান মাসে সবচেয়ে বেশি ছিয়াম রাখতেন। হাদীছে এসেছে,

عَنْ عَائِشَةَ رضي الله عنها قَالَتْ كَانَ رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَصُوْمُ حَتَّى نَقُوْلَ لَا يُفْطِـرُ وَيُفْطِـرُ حَتَّى نَقُوْلَ لَا يَصُوْمُ‏ وَمَا رَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اسْتَكْمَلَ صِيَامَ شَهْـرٍ اِلَّا رَمَضَانَ، وَمَا رَأَيْتُهُ أَكْثَرَ صِيَامًا مِنْهُ فِيْ شَعْبَانَ‏.

আয়েশা রযিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একাধারে ছিয়াম রাখা শুরু করতেন, এমনকি আমরা বলাবলি করতাম, তিনি (হয়তো আর) ছিয়াম পরিত্যাগ করবেন না। আবার তিনি ছিয়াম রাখা বন্ধ করতেন। তখন আমরা মনে মনে বলতাম, তিনি হয়তো আর ছিয়াম রাখবেন না। আমি নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে রামাযান মাস ব্যতীত অন্য কোনো মাসে পূর্ণ মাস ছিয়াম রাখতে এবং শা‘বান মাস ব্যতীত অন্য কোনো মাসে এত বেশি (নফল) ছিয়াম রাখতে দেখিনি।[3] অন্য এক বর্ণনায় এসেছে,

عَنْ عَائِشَةَ رضي الله عنها قَالَتْ لَمْ يَكُنِ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَصُوْمُ شَهْرًا أَكْثَرَ مِنْ شَعْبَانَ فَاِنَّهُ كَانَ يَصُوْمُ شَعْبَانَ كُـلَّهُ وَكَانَ يَقُوْلُ ‏خُذُوْا مِنَ الْعَمَلِ مَا تُطِيْقُوْنَ فَإِنَّ اللَّهَ لَا يَمَلُّ حَتَّى تَمَلُّوْا وَأَحَبُّ الصَّلَاةِ اِلَـى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا دُوْوِمَ عَلَيْهِ وَاِنْ قَلَّتْ ‏وَكَانَ اِذَا صَلَّى صَلَاةً دَاوَمَ عَلَيْهَا‏.

আয়েশা রযিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শা‘বান মাসের ন্যায় এত বেশি (নফল) ছিয়াম আর কোনো মাসে রাখতেন না। তিনি শা‘বান মাস (প্রায়) পুরোটাই ছিয়াম রাখতেন। তিনি সকলকে এ হুকুম দিতেন যে, তোমরা যতদূর আমলের সামর্থ্য রাখ, ঠিক ততটুকুই করো। আল্লাহ (ছওয়াব দানে) অপারগ নন, যতক্ষণ না তোমরা পরিশ্রান্ত হয়ে পড়। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে সবচেয়ে প্রিয় হলো এমন ছালাত যা সর্বদা আদায় করা হয়, পরিমাণে তা যত কমই হোক না কেন। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অভ্যাস ছিল যখন তিনি কোনো (নফল) ছালাত পড়তেন, পরবর্তীতে তা জারী রাখতেন।[4]

শা‘বানের মধ্যরাত্রির পরদিন ছিয়াম রাখা : যদি কেউ শা‘বান মাসে ছিয়াম রাখেন, তবে তা হবে সুন্নাত। শা‘বান মাসের শেষ দিন ছাড়া বাকী যে কোনো দিন ছিয়াম রাখা জায়েয বা ছওয়াবের কাজ। তবে ছিয়াম রাখার সময় মনে করতে হবে যে, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেহেতু শা‘বান মাসে ছিয়াম পালন করেছিলেন তাকে অনুসরণ করে ছিয়াম রাখা হচ্ছে। অথবা যদি কারও আইয়ামে বীযের নফল ছিয়াম তথা মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ এ তিন দিন ছিয়াম রাখার নিয়ম থাকে, তিনিও ছিয়াম রাখতে পারেন। হাদীছে এসেছে,

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رضي الله عنه قَالَ أَوْصَانِيْ خَلِيْلِـىْ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِثَلَاثٍ صِيَامِ ثَلَاثَةِ أَيَّامٍ مِنْ كُلِّ شَهْرٍ وَرَكْعَتَـىِ الضُّحَـى وَأَنْ أُوتِرَ قَبْلَ أَنْ أَنَامَ.

আবূ হুরায়রা রযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার প্রিয় বন্ধু রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে তিনটি বিষয়ের উপদেশ দিয়ে গেছেন- (১) আমি যেন প্রতি মাসে (১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে) তিনটি ছিয়াম রাখি, (২) চাশতের সময় দু’রাকআত ছালাত পড়ি, (৩) রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগেই বিতরের ছালাত আদায় করি।[5]

কিন্তু শুধু শা‘বানের ১৫ তারিখ ছিয়াম রাখা বিদআত হবে। কারণ শরীআতে এ ছিয়ামের কোনো ভিত্তি নেই।

অর্ধ শা‘বানের পর ছিয়াম রাখা : আবূ হুরায়রা রযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,إِذَا بَقِيَ نِصْفٌ مِنْ شَعْبَانَ فَلاَ تَصُومُوا ‘শা‘বান মাস অর্ধেক হয়ে গেলে তোমরা ছিয়াম রাখিয়ো না’।[6] এই হাদীছের অর্থ হলো যে ব্যক্তি শা‘বান মাসের প্রথম থেকে ছিয়াম রাখেনি সে যেনো অর্ধ শা‘বানের পর আর ছিয়াম শুরু না করে। তবে যে ব্যক্তি শা‘বান মাসের শুরু থেকে ছিয়াম রেখেছে বা যার উপর গত বছরের ছিয়াম ক্বাযা আছে অথবা যার প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার ছিয়াম রাখা অভ্যাস সেও ১৫ তারিখের পর রাখতে পারে।

অর্ধ শা‘বানের ছালাত : অর্ধ শা‘বানের রাতের ছালাতের প্রথম প্রচলন হয় হিজরী ৪৪৮ সনে। ফিলিস্তীনের নাবলুস শহরের ইবন আবিল হামরা নামক এক লোক বায়তুল মুক্বাদ্দাস আসেন। তার তেলাওয়াত ছিল সুমধুর। তিনি শা‘বানের মধ্যরাত্রিতে ছালাতে দাঁড়ালে তার পিছনে এক লোক এসে দাঁড়ায়, তারপর তার সাথে তৃতীয় জন এসে যোগ দেয়, তারপর চতুর্থ জন। তিনি ছালাত শেষ করার আগেই বিরাট একদল লোক এসে তার সাথে যুক্ত হয়ে পড়ে। পরবর্তী বছর এলে তার সাথে অনেকেই যোগ দেয় ও ছালাত আদায় করে। এতে করে মাসজিদুল আক্বছাতে এ ছালাতের প্রথা চালু হয়। কালক্রমে এ ছালাত এমনভাবে আদায় হতে লাগে যে অনেকেই তা সুন্নাত মনে করতে শুরু করে।[7] প্রথা অনুযায়ী এ ছালাতের পদ্ধতি হলো, প্রতি রাকআতে সূরা ফাতেহার পর সূরা ইখলাছ ১০ বার করে পড়ে মোট ১০০ রাকআত ছালাত পড়া। যাতে করে সূরা ইখলাছ ১০০০ বার পড়া হয়।[8]

মিশকাতের ভাষ্যকার মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী (মৃ. ১০১৪ হি.) বলেন, জেনে রাখো যে, ইমাম সুয়ূত্বী (৮৪৯-৯১১ হি.) তার কিতাবে দায়লামী ও অন্যদের আনীত হাদীছসমূহ যেখানে মধ্য শা‘বানে প্রতি রাকআতে ১০ বার করে সূরা ইখলাছসহ ১০০ রাকআত ছালাতের যে অগণিত ফযীলত বর্ণিত হয়েছে, তা সবই মাওযূ‘। তাছাড়া আলী ইবনু ইবরাহীম কোনো এক পুস্তিকায় বলেছেন, মধ্য শা‘বানের রাত্রিতে ছালাতে আলফিয়্যাহ নামে প্রতি রাকআতে ১০ বার করে সূরা ইখলাছসহ ১০০ রাকআত ছালাত জামাআত সহকারে যা আদায় করা হয় এবং যাকে লোকেরা জুমআ ও ঈদায়নের চাইতে গুরুত্ব দিয়ে আদায় করে থাকে, সে বিষয়ে যঈফ বা মাওযূ‘ ব্যতীত কোনো হাদীছ বা আছার বর্ণিত হয়নি।[9]

এ ধরনের ছালাত সম্পূর্ণ বিদআত। কারণ এ ধরনের ছালাতের বর্ণনা কোনো হাদীছের কিতাবে আসেনি। কোনো কোনো বইয়ে এ সম্পর্কে যে সকল হাদীছ উল্লেখ করা হয়, সেগুলো কোনো হাদীছের কিতাবে আসেনি। আর তাই আল্লামা ইবনুল জাওযী,[10] ইমাম নববী,[11] আল্লামা আবূ শামাহ,[12] শায়খুল ইসলাম ইবনু তায়মিয়্যা,[13] আল্লামা ইবনু আররাক,[14] আল্লামা সুয়ূত্বী,[15] আল্লামা শাওকানী,[16]সহ আরো অনেকেই এগুলোকে ‘বানোয়াট হাদীছ’ বলে সুস্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন। ১০০ রাকআত ছালাত পড়া সংক্রান্ত সমস্ত হাদীছই জাল বা বানাওয়াট। এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে কিছুই প্রমাণিত নেই।[17]

১০০ রাকআত ছালাত পড়ার বিদআতটি মসজিদের মূর্খ ইমামগণ অন্যান্য ছালাতের সঙ্গে যুক্ত করে এই ছালাত চালু করেন। এর মাধ্যমে তারা জনসাধারণকে একত্রিত করার এবং তাদের উপর সর্দারী করা ও পেটপূর্তি করার একটি ফন্দী এঁটেছিল মাত্র। এই বিদআতী ছালাতের ব্যাপক জনপ্রিয়তা দেখে নেক্কার, পরহেযগার ব্যক্তিগণ আল্লাহর গযবে যমীন ধ্বসে যাওয়ার ভয়ে শহর ছেড়ে জঙ্গলে পালিয়ে গিয়েছিলেন।[18]

শায়খ ইবনে বায রহিমাহুল্লাহ বলেন, এই রাতে মসজিদে গিয়ে একাকী বা জামাআতবদ্ধভাবে ছালাত আদায় করা, যিকির-আযকারে লিপ্ত হওয়া সম্পর্কে জানা যায় যে, শামের কিছু বিদ্বান এটি প্রথম শুরু করেন। তারা এই রাতে সুন্দর পোশাক পরে ও আতর-সুরমা লাগিয়ে মসজিদে গিয়ে রাত্রি জাগরণ করতে থাকেন। পরে বিষয়টি লোকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। মক্কা-মদীনার আলেমগণ এর তীব্র বিরোধিতা করেন। কিন্তু শামের বিদ্বানদের দেখাদেখি কিছু লোক এগুলো করতে শুরু করে। এইভাবে এটি জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।[19]

শা‘বানের ছিয়াম পালনের মাধ্যমে রামাযানের ছিয়াম পালনের অনুশীলন হয় এবং ছিয়াম রাখার অভ্যাস ও স্বাভাবিকতা সৃষ্টি হয়। উৎসাহ ও আনন্দও বৃদ্ধি পায়। ফলে রামাযান মাসে ছিয়াম পালনে কষ্ট অনুভব হয় না। তাই পবিত্র রামাযানের ছিয়াম সাধনা শুরু করার আগে শা‘বান মাসে কিছু নফল ছিয়াম রেখে রামাযানের প্রস্তুতি গ্রহণ করা বাঞ্ছনীয়। যাতে করে রামাযানের ছিয়াম পালন সহজসাধ্য ও স্বাচ্ছন্দ্যময় হয়।

মানুষের অসৎ প্রবৃত্তি দমনের জন্য ছিয়াম হলো সবচেয়ে মহৎ ফর্মুলা। শা‘বান মাসে ছিয়াম পালনের মাধ্যমে মুমিন তার প্রবৃত্তিকে পরিচ্ছন্ন করে রামাযানের ছিয়াম পালনের উপযোগী করে তুলবে এটাই এ মাসের ছিয়ামের তাৎপর্য।

মুহাম্মাদ গিয়াসুদ্দীন

শিবগঞ্জ, বগুড়া।

[1]. আবূ দাঊদ, নাসাঈ, হা/২৩৫৭, হাদীছ হাসান; আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৪২৫।

[2]. ছহীহ বুখারী, হা/২৮৪০, ছহীহ মুসলিম, হা/১১৫৩।

[3]. ছহীহ বুখারী, হা/১৯৬৯।

[4]. ছহীহ বুখারী, হা/১৯৭০।

[5]. ছহীহ বুখারী, হা/১৯৮১।

[6]. ইবনু মাজাহ, হা/ ১৬৫১; তিরমিযী, হা/৭৩৬; ইমাম তিরমিযী রহিমাহুল্লাহ বলেন, হাদীছটি হাসান ছহীহ।

[7]. ত্বরতুসী, হাওয়াদেছ ও বিদআহ, পৃ. ১২১, ১২২; ইবনু কাছীর, আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ১৪/২৪৭।

[8]. ইমাম গাযালী, এহইয়ায়ে উলূমুদ্দীন, ১/২০৩।

[9]. মিরক্বাত (দিল্লী ছাপা : তা.বি.), ৩/১৯৭।

[10]. কিতাবুল মাওযূআত, ১/১২৭-১৩০।

[11]. আল-মাজমূ‘, ৪/৫৬।

[12]. আল-বায়স, পৃ. ৩২-৩৬।

[13]. ইক্বতিদায়ে ছিরাতুল মুস্তাক্বীম, ২/৬২৮।

[14]. তানযীহুশ শরীআহ, ২/৯২।

[15]. আল-আমর বিল ইত্তেবা, পৃ. ৮১; আল-লাআলিল মাসনূআ, ২/৫৭।

[16]. ফাওয়ায়েদুল মাজমূআ, পৃ. ৫১।

[17]. আল্লাআলিল মাসনূআহ, আহকাম রজব ও শা‘বান, পৃ. ৪৩।

[18]. মিরক্বাত (দিল্লী : তাবি), ‘ক্বিয়ামু শাহরে রামাযান’ অধ্যায়, টীকা সংক্ষেপায়িত, ৩/১৯৭-১৯৮।

[19]. শায়খ আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায, আত-তাহযীরু মিনাল বিদা‘ (মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় : ১৩৯৬ হি.), পৃ. ১২-১৩।

সাওয়াল জওয়াব

প্রশ্ন (২) : বর্তমানে দেশে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন কর্মক্ষেত্র এবং উপার্জনের মধ্যে অধীনস্থতা বাধ্যতামূলক ও ইচ্ছাকৃত যে সকল শিরক ও হারাম মিশে আছে সেগুলো কী কী? তা স্পষ্ট করার জন্য অনুরোধ রইলো।

প্রশ্ন (৩) : শবে বরাত ইসলামী পরিভাষা না হলেও উপমহাদেশে শা‘বান মাসের মধ্যবর্তী রজনীকে বুঝানো হয়। এ মর্মে হাদীছগুলোকে ত্রুটিপূর্ণ বলা হলেও ইবনু মাজাহতে বর্ণিত (১৩৯০ নং) হাদীছকে আলবানী রহিমাহুল্লাহ হাসান বলেছেন। তাহলে আহলেহাদীছগণ একে বিদ‘আত বলেন কেন?

প্রশ্ন (৪) : জুম’আর খুৎবায় অনেক খতীব বলে থাকেন যে, রমাযান মাস পর্যন্ত জীবিত থাকার জন্য এবং রামাযানের ফযীলত লাভের জন্য اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِي رَجَبٍ وَشَعْبَانَ وَبَلِّغْنَا رَمَضَانَ এই দু’আটি বেশি বেশি পাঠ করা সুন্নাত। এই মর্মে সঠিক সমাধান জানতে চাই।

প্রশ্ন (২৫) : আমাদের এলাকায় মানুষ মারা গেলে বাড়ি থেকে জানাযার স্থানে নেওয়ার সময় চল্লিশ কদম পর্যন্ত গণনা করা হয়। প্রতি দশ কদম পর পর খাটিয়া বহনকারীদের পরিবর্তন করা হয়। ইহা কতটা শরীয়া সম্মত?

প্রশ্ন (২৬) : মৃত মহিলাকে গোসল দেওয়ার পর শরীরে আতর, করপুর, সুরমা লাগানো যাবে কি?

প্রশ্ন (২৭) : কোনো নারীকে যদি মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় এবং তার কোনো অভিভাবক খুঁজে পাওয়া না যায়, তাহলে ঐ নারীকে আমরা কাফন-দাফন ও জানাযা পড়ে কবরস্থ করব না-কি আগুনে পুড়িয়ে কিংবা মাটিতে পুঁতে ফেলব? কেননা নারী হওয়ার কারণে মুসলিম না-কি অমুসলিম আমরা বুঝতে পারছি না।

প্রশ্ন (২৮) : আমরা জানি যে, মৃত ব্যক্তির বাড়িতে খাওয়া-দাওয়ার অনুষ্ঠান করা বিদ’আত। কিন্তু মৃত ব্যক্তির পরিবার ও দূর-দুরান্ত থেকে জানাযায় উপস্থিত হতে আসা লোকজন, আত্মী-স্বজনদের খাওয়া-দাওয়ার জন্য সমাজের পক্ষ থেকে নিজ অর্থায়নে ব্যবস্থা করা যাবে কি? বেঁচে যাওয়া টাকা কি করতে হবে?

প্রশ্ন (২৯) : মৃত ব্যক্তির ভিডিও কিংবা অডিও লেকচার শোনা যাবে কি?

প্রশ্ন (৩০) : মৃত ব্যক্তিকে কবরস্থ করার কয়েক মাস পর ধসে তা নিচু হয়ে যায়। ফলে সেখানে বিভিন্ন জীব-জন্তু বসবাস করতে আরম্ভ করে। আমরা কি কবরগুলি ভরাট করতে পারব? বা এ ক্ষেত্রে করণীয় কী? জানিয়ে বাধিত করবেন।

প্রশ্ন (৫) : রজব মাসের বিশেষ ছালাত ‘ছালাতুররাগায়েব’ বলতে কোনো ছালাত আছে কি? থাকলে তা পড়ার পদ্ধতি কী?

প্রশ্ন (৭) : হায়েয শেষ হওয়ার পর ছালাতের ওয়াক্ত রয়েছে। কিন্তু পবিত্রতা সম্পন্ন হওয়ার পূর্বে যদি ওয়াক্ত চলে যায়, তাহলে ঐ ছালাত কি ক্বাযা করতে হবে? যদি করতে হয় তাহলে নিয়ম কী?

প্রশ্ন (৮) : ‘রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম–এর ছালাত বনাম প্রচলিত ছালাত ’বইয়ে জানাযার জন্য ২টি দু’আ দেওয়া রয়েছে। দু’আ ২টি একসাথে পড়া যাবে কি? দু’আগুলো একাধিকবার পড়া যাবে কি?

প্রশ্ন (৯) : যোহর, আছর, মাগরিব এবং এশার ফরয ছালাতে এক বা দুই রাকা‘আত ছুটে গেলে, ছুটে যাওয়া রাকা’আত আমি কিভাবে পড়ব?

প্রশ্ন (১০) : আমার বাবা পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত পড়েন। কিন্তু ছহীহ পদ্ধতিতে পড়েন না। তাকে বোঝানোর চেষ্টা করছি কিন্তু তিনি বুঝার চেষ্টা করেন না। এমতাবস্থায় আমার করণীয় কী?

প্রশ্ন (১১) : আমি একজন মেয়ে। আমার বয়স ১৮ বছর। আমি একটি মেসে থাকি। আমি নিয়মিত ছালাত পড়ি। কিন্তু আমার রুমমেট হিন্দু। হিন্দু মহিলাটির সামনে আমার ছালাত ছহীহ হবে কি? আর হিন্দু মেয়েটার সাথে একই রুমে থাকা শরীয়তসম্মত হবে কি?

প্রশ্ন (১২) : ফজরের ২ রাকা’আত সু্ন্নাত ও ফরযের মধ্যে না-কি আর কোনো ছালাত আদায় করা যায় না। এখন কেউ যদি ফজরের ২ রাকা’আত সুন্নাত ছালাত বাসায় পড়ে মসজিদে যায়; তাহলে আবার মসজিদে বসার পূর্বে ২ রাকা’আত ছালাত আদায় করতে পারবে কি?

প্রশ্ন (১৩) : যে সমস্ত ইমাম মীলাদ-ক্বিয়াম করে এবং নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে নূরের তৈরি বিশ্বাস করে। দলীল দেওয়ার পরও সে তার এই বিশ্বাস থেকে ফিরে আসে না। এমন ইমামের পিছনে ছালাত হবে কি?

প্রশ্ন (১৪) : যোহরের পূর্বের চার রাকা’আত সুন্নাত ছালাতের প্রত্যেক রাকা’আতেই কি সূরা ফাতেহার সাথে অন্য সূরা পড়তে হবে?

প্রশ্ন (১৫) : ছালাতে সিজদারত অবস্থায় সিজদার তাসবীহ পড়ার পর আল্লাহর কাছে নিজ মাতৃভাষায় কিছু চাওয়া যাবে কি?

প্রশ্ন (৪৭) : আমরা জানি যে, দু’আর শুরুতে হামদ ও দরূদ পাঠের কথা হাদীছে বর্ণিত হয়েছে (তিরমিযী, হা/৩৪৭৬)। দু’আর শেষে এমন কোনো কথা নেই। কিন্তু অনেক দু’আর বইয়ে দু’আর শেষে হামদ ও দরূদ পাঠের কথা লিখা আছে। প্রশ্ন হলো- হামদ ও দরূদ দ্বারা দু’আ শেষ করা কি শরীয়তসম্মত?

প্রশ্ন (৪৮) : আমি শুনেছি যে আল্লাহর ৯৯টি নাম পড়ে কেউ যদি হাত তুলে দু‘আ করে,তাহলে তার দু‘আ কবুল হয়, এ কথা কি ঠিক?

প্রশ্ন (৪৯) : এক প্রতিবেশি থেকে অপর প্রতিবেশি যদি খুবই সামান্য পরিমাণ (৫০, ১০০ গ্রাম) লবন ধার নেয় তাহলে সেটা ফেরত না নেওয়ার ব্যাপারে ইসলাম কিছু বলেছে কি? আমি শুনেছি লবন, পানি কাউকো দিলে তা ফেরত নিতে হয় না।

প্রশ্ন (৫০) : আমি কিছু অমুসলিমদের ইসলামের দাওয়াত দিয়েছি। ডা. জাকির নায়েকের লেকচার দেখে তারা ইসলাম সম্পর্কে জানতেঅনেকআগ্রহী। তারা পবিত্র কুরআন পড়তে চায়। তাদেরকে আমি কুরআন মাজীদউপহার দিতে চাচ্ছি। আমি কি তাদেরকে কুরআন মাজীদ দিতে পারব? যদি দিতেপারি তাহলে নির্ভরযোগ্য অনুবাদ গ্রন্থ কোনটি দয়া করে জানাবেন।

স্বাধীনতার মাসে দেশের শান্তি-সমৃদ্ধির শপথ নিন

হক্বের মানদণ্ড (পর্ব-৩)

প্রশ্ন (৩৯) : ছহীহ হাদীছে এক পাপাচারী মহিলা কর্তৃক তৃষ্ঞার্ত কুকুরকে কুয়া থেকে পানি উঠিয়ে পান করানোর প্রতিদানে জান্নাতের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে। আবার ছহীহ হাদীছে বলা হয়েছে, যে বাড়িতে কুকুর থাকে সেখানে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করে না। বিষয়টির ব্যাখ্যা জানতে চাই। মুমিন ব্যক্তি কি কোনো অসুস্থ বিপন্ন কুকুরকে তার বাড়িতে আশ্রয় দিলে তা ক্ষতিকর হবে?

প্রশ্ন (৪০) : ‘কোনো বান্দার পাপ বেড়ে গেলে আল্লাহ তাকে বেশি সন্তান দিয়ে তার পাপ মোচন করে দেন’ (মুসনাদে আহমাদ, হা/২৫২৩৬)। অত্র হাদীছটি কি ছহীহ?

প্রশ্ন (৪১) : মেয়েরা কি রেস্টুরেন্টে গিয়ে শুধুমাত্র খাওয়ার সময় মুখ খুলতে পারবে?

প্রশ্ন (৪২) : আমরা ছহীহ হাদীছ থেকে জানতে পারি যে, অহংকারসহ ও অহংকার ছাড়া টাখনুর নিচে পুরুষদের জন্য কাপড় ঝুলানো জায়েয না। কিন্তু একটি নির্ভরোগ্য ফতওয়া ওয়েবসাইট-এ পড়লাম, চার মাযহাবের বেশির ভাগ আলেমের মতে অহংকার ছাড়া টাখনুর নিচে কাপড় পরিধান করা মাকরুহ বা জায়েয। অথচ আমরা উমার রযিয়াল্লাহু আনহু-এর ঘটনা জানি, তিনি এক যুবককে কাপড় টাখনুর উপর উঠাতে বলেছিলেন। সঠিক সমাধান দিয়ে বাধিত করবেন।

প্রশ্ন (৪৩) : মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে নির্দেশনা রয়েছেযে, রাস্তার ডান পাশ দিয়ে হাঁটতে হবে। কিন্তুসরকারি নিয়ম বাম পাশ দিয়ে হাঁটতে হবে। এখন আমাদের করণীয় কী?

প্রশ্ন (৪৪) : যে ব্যক্তি যাদু ও কুফুরীকালাম দ্বারা আক্রান্ত তারা কিভাবে চিকিৎসা গ্রহণ করবে?

শা‘বান মাসে নফল ছিয়াম ও ছালাত

প্রশ্ন (১৮) : জনৈক আলেম বলেছেন, শা’বান মাসে মালাকুল মাউত বেশি পরিমাণ রূহ কবয করে থাকেন। অর্থাৎ বেশি মানুষ মারা যায়। এমন কোনো ছহীহ হাদীছ বা আছার আছে কি?

প্রশ্ন (১৯) : আমার বাবা মৃত্যুর পূর্বে দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার কারণে রমাযানের কয়েকটি ছিয়াম পালন করতে পারেননি। এজন্য তিনি খুবই মর্মাহত হোন এবং দুঃখ প্রকাশ করেন। তাই আমি উনার সন্তান হিসেবে ছিয়ামগুলো পালন করবো মর্মে কথা দেই। কিন্তু কয়েকজন বলল যে, ছিয়ামগুলো আমি পালন করলে বাবার পক্ষ থেকে আদায় হবে না বরং ফিদিয়া দিতে হবে। এ বিষয়ে সঠিক সমাধান দানে বাধিত করবেন।

প্রশ্ন (২০) : ইয়াওমুশ-শাকবাসন্দেহের দিন বলতে কোন দিনকে বোঝানো হয়। এইদিনেকিগতবছরেরক্বাযাছিয়ামপালনকরাযাবে?

প্রশ্ন (২১) : শুনেছি ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত যে, অন্যান্য মাসের তুলনায় রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শা‘বান মাসে বেশি ছিয়াম পালন করতেন। তাহলে কি পুরোশা‘বানমাস ছিয়াম পালন করা যাবে?

প্রশ্ন (২৩) : আছরের ফরয ছালাতের পরে নফল ইবাদত করা যায় না। প্রশ্ন হলো-আছর ছালাতের পর জানাযা দেওয়া যাবে কি-না? আমাদের এলাকায় বেশির ভাগ জানাযা আছরের পর হয়।হাদীছসহ উত্তর প্রত্যাশা করি।

Magazine