একাকীত্ব, মানসিক রোগ, অর্থনৈতিক সংকট, বেকারত্ব, পারিবারিক কলহ, মাদকাসক্তি ও দারিদ্র্যসহ নানা কারণে দেশে প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ আত্মহত্যা করছে। গত দুই বছরে করোনা সংক্রমণ চলাকালে আত্মহত্যার এই প্রবণতা আরো বেড়ে গেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতি বছর বিশ্বে যেসব কারণে মানুষের মৃত্যু ঘটে, এর মধ্যে আত্মহত্যা ১৩তম প্রধান কারণ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আত্মহত্যার প্রবণতার অন্যতম কারণ জেনেটিক (বংশানুক্রমিক) কারণ। আত্মহত্যার প্রায় ৫০ শতাংশ ক্ষেত্রেই জিনগত কারণ দায়ী। ফলে কোনো পরিবারে একজন আত্মহত্যা করলে এর প্রভাব অন্য সদস্যদের ওপরও পড়ে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)-এর হিসাব মতে, বর্তমানে দেশে প্রতি লাখে ৮.০৫ শতাংশ মানুষ আত্মহত্যা করছে। এটাকে ২০৩০ সালের মধ্যে ২.৪ শতাংশে নামিয়ে আনতে সামাজিকভাবে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। বিবিএস সূত্র জানায়, সর্বশেষ ২০২০ সালের জরিপে দেখা যায়, প্রতি লাখে ৮.০৫ শতাংশ মানুষ আত্মহত্যা করে। সে সময়ে দেশের মোট জনসংখ্যা ধরা হয় ১৭ কোটি ১৬ লাখ। ২০২০ সালে সারা দেশে মোট ১৩ হাজার ৮১৪ জন মানুষ আত্মহত্যা করে। আত্মহত্যার ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের গড় প্রায় সমান। ২০১৯ সালে প্রতি লাখে আত্মহত্যার হার ছিল ৭.৫৬ শতাংশ। তখন দেশের মোট জনসংখ্যা ধরা হয়েছিল ১৬ কোটি ৫৯ লাখ। সে হিসাবে ওই সময়ে দেশে মোট জনসংখ্যার ১২ হাজার ৯৫৮ জন মানুষ আত্মহত্যা করেছিল। এতেই স্পষ্ট হয়, দেশে আত্মহত্যার হার বাড়ছে। ২০১৫ সালে প্রতি লাখে ৭.৬৮, ২০১৬ সালে ৭.৮৪, ২০১৭ সালে ৩.৭৯ ও ২০১৮ সালে ৭.৬৮ শতাংশ মানুষ আত্মহত্যা করেছিল। ২০১৫ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত প্রতি লাখে আত্মহত্যার হার ৭ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও এটা এখন ৮ শতাংশের ওপরে চলে এসেছে। বিবিএস সূত্র জানায়, ২০২১ সালের প্রথম ১০ মাসে দেশে মোট মৃত্যুর কিছু কারণ খুঁজে বের করে বিবিএস। ১০ মাসে যখন করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে ৫ হাজার ২০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে, তখন ১১ হাজারের বেশি মানুষ আত্মহত্যা করেছেন। মহামারির এ সময়ে দেশে শুধু হার্টঅ্যাটাক, হার্ট-ফেইলিওর ও হৃদরোগে প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার মানুষের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর বিশ্বে ৮ লাখ লোক আত্মহত্যা করে। মৃত্যুর হার প্রতি লাখে ১৬ জন। ২০১৪ সালে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের এক গবেষণায় বলা হয়, বাংলাদেশে গড়ে প্রতিদিন ২৮ জন মানুষ আত্মহত্যা করে। আর পুলিশ সদর দফতরের হিসাবে বছরে গড়ে ১০ হাজার মানুষ ফাঁসিতে ঝুলে ও বিষপান করে আত্মহত্যা করে। এর বাইরে ঘুমের ওষুধ সেবন, ছাদ কিংবা উঁচু স্থান থেকে লাফিয়ে পড়া কিংবা রেললাইনে ঝাঁপ দেয়ার মতো ঘটনাগুলোও বিরল নয়।