সারা
দুনিয়াতে প্রতি বছর যত খাবার উৎপাদন হয় তার একটি বড় অংশ মাঠ থেকে আর
খাবার টেবিল পর্যন্ত পৌঁছায় না। সেটি অপচয় হয়ে যায়। আর খাদ্য অপচয়ের
ক্ষেত্রে উন্নত, উন্নয়নশীল আর অনুন্নত কেউই বাদ যায় না। বাংলাদেশে প্রতি
বছর যত খাবার উৎপাদন হয়, তারও একটি বড় অংশ ভাগাড়ে যায়, মানে নষ্ট হয়।
জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক সংস্থা ইউনেপ ২০২১ সালে ফুড ওয়েস্ট ইনডেক্স (Food
Waste Index-2021) নামে রিপোর্ট প্রকাশ করে যাতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে
বছরে এক কোটি ৬ লাখ টন খাদ্য অপচয় হয়। মাথাপিছু খাদ্য অপচয়ের হারও
বাংলাদেশে অনেক বেশি। ইউনেপের ওই ইনডেক্স অনুযায়ী একজন বাংলাদেশি বছরে ৬৫
কেজি খাদ্য উপাদান কিংবা তৈরি খাদ্য নষ্ট করেন। ইউনেপ-এর রিপোর্ট অনুযায়ী,
সবচেয়ে বেশি খাবার অপচয় হয় চীনে। সেখানে বছরে খাদ্য অপচয়ের পরিমাণ ৯
কোটি ১৬ লাখ টন। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত ও পাকিস্তানের পর তৃতীয় সর্বোচ্চ
খাদ্য অপচয় হয় বাংলাদেশে। ২০২১ সালে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO)
বাংলাদেশে একটি গবেষণা চালায় যাতে বলা হয়, বাংলাদেশে উচ্চ আয়ের পরিবারে
বেশি খাদ্য অপচয় হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, উচ্চ আয়ের পরিবারে এক মাসে
মাথাপিছু ২৬ কেজি খাদ্য অপচয় হয়। তুলনায় মধ্য এবং নিম্ন আয়ের পরিবারে
অপচয় কম হয়। এফএও’র গবেষণায় দেখা গেছে, শস্যদানা মানে চাল, গম ও ডাল এসব
উৎপাদন থেকে মানুষের প্লেট পর্যন্ত পৌঁছানোর আগেই প্রায় ১৮ শতাংশ অপচয়
হয়। ফল আর সবজির ক্ষেত্রে অপচয় হয় ১৭ থেকে ৩২ শতাংশ পর্যন্ত। জাতিসংঘের
হিসাব অনুযায়ী, ২০৭৫ সাল নাগাদ বিশ্বের জনসংখ্যা দাঁড়াবে ৯৫০ কোটিতে। এই
বিপুল জনসংখ্যার চাহিদা মেটানোর জন্য ভবিষ্যতে আরো খাদ্যের দরকার হবে। শুধু
অপচয় বন্ধ করেই এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব বলে মনে করেন গবেষকরা।