নিত্যপণ্য ও ব্যবহারিক দ্রব্যের ঊর্ধ্বগতিতে জনজীবন বিপন্ন। নিয়ন্ত্রণহীন ‘সিন্ডিকেট’-এর হাতে দেশটি আজ যিম্মী। সিন্ডিকেট কী? সিন্ডিকেট হলো এমন একটি সংঘ যা নির্দিষ্ট কোনো স্বার্থ হাছিলের উদ্দেশ্যে অস্থায়ীভাবে একযোগে কাজ করে। এ কাজ ভালো কিংবা খারাপ দুইই হতে পারে। অনেক দেশের ব্যাংকিং সিন্ডিকেটের ওপরে দাঁড়িয়ে আছে সেসব দেশের অর্থনীতি। আবার অনেক দেশের বাজারকেন্দ্রিক সিন্ডিকেট সেসব দেশে দুর্ভিক্ষের মতো মারাত্মক ঘটনার জন্ম দিয়েছে। বাংলাদেশ তারই একটি জ্বলন্ত উদাহরণ। এখানে সিন্ডিকেটের হাতে সাধারণ মানুষ যিম্মী ও অসহায়। বিগত সরকারের আমলে ব্যবসায়ী, এমপি, মন্ত্রী ও আমলাদের যোগসাজশে দেশে শক্ত একটি সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে যা বর্তমান সরকারের কাছে নিয়ন্ত্রণ করা কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাবেক সরকারের প্রেতাত্মা ও দোসররা আজও ব্যবসায়িক মুনাফাকেন্দ্রিক বা আধিপত্য বিরাজের উদ্দেশ্য আদায়ের জন্য অথবা গণমানুষের সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য একসঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। তারা ব্যাংক ও শেয়ারবাজারকে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করে দেশের অর্থব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। সাথে সাথে নিত্যপণ্য তেল, নুন, লাকড়ি (গ্যাস), মাংস, ডিম, পেঁয়াজ, আলু, মরিচ ইত্যাদি বড় বড় কোম্পানি বা ফড়িয়ারা পর্যাপ্ত পরিমাণে পণ্য কিনে বিক্রি না করে গুদামজাত করে রাখে। এতে করে বাজারে ওই পণ্যটির কৃত্রিম সংকট তৈরি হয়। সরবরাহ ব্যবস্থা এক রকমের ঠিক থাকার পরও সংকট দেখিয়ে তারা বেশি দামে আড়ত/ডিলারদের কাছে বিক্রি করে। সম্প্রতি ভোক্তা অধিকার সংস্থার অভিযানে ডিম ও মুরগির বাজারে সিন্ডিকেট করা দেশের বৃহৎ পাঁচটি কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের নাম উঠে এসেছে। সেগুলো হলো কাজী ফার্মস, প্যারাগন প্যারাগন, সিপি, ডায়মন্ড এগ এবং পিপল ফিডস। এরা দেশে মোট খামারের তিন ভাগের এক ভাগ নিয়ন্ত্রণ করছে। এছাড়াও পরিবহণ খাত, সরকারি অফিস, আদালত পাড়া, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সর্বত্র বিভিন্ন গ্রুপ নিজেদের স্বার্থ হাছিলের জন্য একজোট হয়ে কাজ করে যাচ্ছে। পুরাতন সিন্ডিকেটগুলো নতুনদের নিজেদের গ্রুপে সংযুক্ত হতে দেয় না কিংবা নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখার জন্য এক সিন্ডিকেট আরেক সিন্ডিকেট গ্রুপের বিরুদ্ধে কাজ করে। সিন্ডিকেট শুধু অফিসে না, একদম মাফিয়া গ্রুপ থেকে রিকশাচালকদের মধ্যেও এক ধরনের সিন্ডিকেট কাজ করে। সরকারের উচিত হবে, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা, ভোক্তা অধিকার সংস্থা এবং জনগণের মাধ্যমে একযোগে ডি-সিন্ডিকাইজেশনে কাজ করে যাওয়া।