আবারো আফগানিস্তানের ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে তালেবান। একের পর এক প্রদেশ ও প্রাদেশিক রাজধানী দখল করে ১৫ আগস্ট বিনা বাধায়, বিনা রক্তপাতে কেন্দ্রীয় রাজধানী কাবুল দখল করে তারা। এর আগে কখনো বিদেশি সেনা, কখনো তল্লাশিচৌকিতে হামলা চালিয়ে আবার কখনো এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আলোচনায় এসেছে তারা। তালেবান প্রথম ক্ষমতায় আসে ১৯৯৬ সালে। এই বিজয় অর্জনে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয়েছে তাদের। এর আগে ২০০১ সালে ক্ষমতাচ্যুত হয় তালেবান। ১৯৮৯ সালে আফগানিস্তান থেকে তৎকালীন সোভিয়েত সেনা প্রত্যাহারের পর ১৯৯৪ সাল নাগাদ তালেবানের উত্থান হয়। তাদের যাত্রা শুরু দেশটির কান্দাহার প্রদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে। এই প্রদেশের যে এলাকায় পশতু জাতিগোষ্ঠীর বসবাস, সেখান থেকে তাদের উত্থান। শুরুর দিকে সে সময় ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক আন্দোলনে যুক্ত ছিল তারা। এবার বিদেশী দখলদার শক্তিকে লজ্জাজনকভাবে পরাজিত করে আফগানিস্তানে ২০ বছর পর ফের ক্ষমতায় ফিরেছে তালেবান। এক সমঝোতা বৈঠকের পর দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি। তার সঙ্গে দেশ ছেড়েছেন তার ঘনিষ্ঠ সহযোগীরাও। স্টাফসহ আশরাফ গনি প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ ত্যাগের পর তা দখলে নিয়েছে তালেবান। তালেবান যোদ্ধারা আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে প্রবেশের পর ‘সাধারণ ক্ষমা’ ঘোষণা করেছে। তালেবানের রাজনৈতিক মুখপাত্র বলেন, ইসলামী ইমারত আফগানিস্তানের দরজা ওই ব্যক্তিদের জন্যও উন্মুক্ত থাকবে, যারা আমাদের বিরুদ্ধে হামলায় সহযোগিতা করেছে। কাতারে এক চুক্তির বলে দেশটি থেকে তলপি-তলপা গুটিয়ে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা আফগানিস্তান ত্যাগ করেছে। ২০ বছরব্যাপী এই যুদ্ধে বেসামরিক আফগান নিহত হয়েছে ৪৭ হাজার ২৪৫ জন। যুক্তরাষ্ট্রের নিয়মিত বাহিনীর সৈন্য নিহত হয়েছে ২ হাজার ৪৬১ জন। সেনাবাহিনী সংশ্লিষ্ট যুক্তরাষ্ট্রের বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছে ৩ হাজার ৮৪৬ জন। ন্যাটোসহ অন্য আইএসএএফভুক্ত অন্যান্য দেশের সৈন্য নিহত হয়েছে ১ হাজার ১৪৪ জন। আফগানিস্তানের সৈন্য ও পুলিশ মিলিয়ে নিহত হয়েছে ৬৬ হাজার জন। তালেবানসহ আফগান বিভিন্ন সশস্ত্র দলের যোদ্ধা নিহত হয়েছে ৫১ হাজার ১৯১ জন। দাতব্য সংস্থার কর্মী নিহত হয়েছে ৪৪৪ জন। সাংবাদিক নিহত হয়েছে ৭২ জন। আফগানিস্তানে যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ২ দশমিক ৩১ ট্রিলিয়ন ডলার খরচার হিসাব দেওয়া হয়েছে ব্রাউন ইউনিভার্সিটির ‘কস্ট অব ওয়ার প্রজেক্ট’র তথ্যে। তবে যেসব সৈন্য আহত হয়েছে, তাদের চিকিৎসা ও সহায়তার জন্য আগামীতে যে ব্যয় যুক্তরাষ্ট্রকে করতে হবে, তা হিসাব করলে খরচ আড়াই ট্রিলিয়ন ডলারে গিয়ে ঠেকবে বলে হিসাব দেয় হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি। আফগানিস্তানে যুদ্ধ চালাতে গিয়ে যে দেনা করতে হয়েছে, তার সূদের যে জের ২০৫০ সাল অবধি টানতে হবে, তাতে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ ব্যয় ৮ ট্রিলিয়ন ডলারে গিয়ে ঠেকতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে।