কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

উত্তরায় বিমান বিধ্বস্ত: ইতিহাসে ভয়াবহতার নতুন সংযোজন

post title will place here

২১ জুলাই ২০২৫। বাংলাদেশের ইতিহাসে এক শোকাবহ দিন। রাজধানী ঢাকার উত্তরার দিয়াবাড়ি এলাকায় অবস্থিত মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণে হঠাৎ করেই দেখা দেয় এক মর্মান্তিক দৃশ্য—বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান ‘এফ-৭ বিজিআই’ বিকট শব্দে আছড়ে পড়ে স্কুল শাখার একটি ভবনে। সেই সময় শ্রেণিকক্ষে ছিলেন বহু শিক্ষার্থী। কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই মৃত্যু গ্রাস করে ফেলে কোমলমতি অনেক ছাত্রছাত্রীর জীবন।

সর্বশেষ সংবাদ অনুযায়ী, (২৮ জুলাই পর্যন্ত) এ দুর্ঘটনায় ৩৪ জন নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থী। আহত হয়েছেন আরও শতাধিক। তাদের অনেকেই আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন। দুর্ঘটনার ভয়াবহতা শুধু নিহত ও আহতের সংখ্যায় সীমাবদ্ধ নয়, বরং এই ঘটনা বাংলাদেশের সামরিক ও নাগরিক বিমান ইতিহাসে এক বিরল ও হৃদয়বিদারক সংযোজন হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

বিমানের ইতিহাসে বাংলাদেশ: দুর্ঘটনার ছায়া

বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, গত ৩৪ বছরে অন্তত ৩২টি সামরিক বিমান দুর্ঘটনা ঘটেছে। অধিকাংশই প্রশিক্ষণ চলাকালে, আর যেগুলোর বেশিরভাগের কেন্দ্রবিন্দু ছিল পিটি-৬, ইয়াক-১৩০, এল-৩৯ এবং এফ-৭ সিরিজের যুদ্ধবিমান।

বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ১৯৯১ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত সকল বড় বিমান দুর্ঘটনার তালিকা তুলে ধরা হলো, যেখানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিমান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কিংবা প্রাণহানি ঘটেছে—

৯ মে ২০২৪: ইয়াক-১৩০ প্রশিক্ষণ বিমান, কর্ণফুলী নদীর মোহনায় বিধ্বস্ত; স্কোয়াড্রন লিডার মুহাম্মাদ আসিম জাওয়াদ নিহত।

২৩ নভেম্বর ২০১৮: এফ-৭ বিজি যুদ্ধবিমান, টাঙ্গাইলে রকেট ফায়ারিং অনুশীলনের সময় বিধ্বস্ত, পাইলট নিহত।

১ জুলাই ২০১৮: কে-৮ডব্লিউ প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত, দুই পাইলট নিহত।

২ জানুয়ারি ২০১৮: মিল এমআই-১৭ হেলিকপ্টার, শ্রীমঙ্গলে বিধ্বস্ত, কুয়েতি সামরিক কর্মকর্তাসহ কয়েকজন হতাহত হন।

২৬ ডিসেম্বর ২০১৭: দুইটি ইয়াক-১৩০ কক্সবাজারে বিধ্বস্ত।

১১ জুলাই ২০১৭: ইয়াক-১৩০ চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকায় বিধ্বস্ত, পাইলটরা ইজেক্ট করেন।

২১ জুলাই ২০১৫: এমআই-১৭১এসএইচ হেলিকপ্টার, মিরসরাইয়ে জরুরী অবতরণকালে ক্ষতিগ্রস্ত।

২৯ জুন ২০১৫: এফ-৭এমবি যুদ্ধবিমান, পতেঙ্গা উপকূলে বিধ্বস্ত, ফ্লাইট লেফট্যানেন্ট তাহমিদ নিহত।

১৩ মে ২০১৫: এমআই-১৭১ এসএইচ হেলিকপ্টার, শাহ আমানত বিমানবন্দরে বিধ্বস্ত, ১ প্রশিক্ষক নিহত।

৩০ এপ্রিল ২০১৪: পিটি-৬ প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত।

৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৪: পিটি-৬ প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত।

২০ মে ২০১৩: এল-৩৯ প্রশিক্ষণ বিমান, যশোরে রানওয়ে থেকে ছিটকে পড়ে।

১৪ জুলাই ২০১৩: ন্যাঞ্ছাং এ-৫ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত।

৮ এপ্রিল ২০১২: এল-৩৯ অ্যালবাট্রস জেট ট্রেনার, মধুপুরে বিধ্বস্ত, ফ্লাইট লেফট্যানেন্ট রেজা শরীফ নিহত।

২০ ডিসেম্বর ২০১০: পিটি-৬ প্রশিক্ষণ বিমান, বরিশালে বিধ্বস্ত, দুই স্কোয়াড্রন লিডার নিহত।

২০১০: এফ-৭এমবি যুদ্ধবিমান, পতেঙ্গায় বিধ্বস্ত।

২৩ সেপ্টেম্বর ২০১০: পিটি-৬ প্রশিক্ষণ বিমান, কর্ণফুলী নদীতে বিধ্বস্ত।

২২ অক্টোবর ২০০৯: পিটি-৬ ট্রেনার বিমান, বগুড়া সদরে বিধ্বস্ত।

১৬ জুন ২০০৯: এফটি-৬ যুদ্ধবিমান, চট্টগ্রামের কর্ণফুলীতে বিধ্বস্ত।

৮ এপ্রিল ২০০৮: এফ-৭এমবি যুদ্ধবিমান, টাঙ্গাইলের পাহাড়িয়া গ্রামে বিধ্বস্ত, স্কোয়াড্রন লিডার মোরশেদ নিহত।

৯ এপ্রিল ২০০৭: পিটি-৬ ট্রেনিং বিমান, যশোরে বিধ্বস্ত, ফ্লাইট ক্যাডেট ফয়সাল মাহমূদ নিহত।

২৪ এপ্রিল ২০০৬: পিটি-৬, কোটচাঁদপুর, ঝিনাইদহে বিধ্বস্ত, ফ্লাইট ক্যাডেট তানজুল ইসলাম নিহত।

৭ জুন ২০০৫: এফ-৭এমবি যুদ্ধবিমান, উত্তরায় বহুতল ভবনের সঙ্গে সংঘর্ষ।

৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৫: পিটি-৬ প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত।

২০০৩: পিটি-৬ প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত।

১৫ নভেম্বর ২০০৩: পাইপার সেসনা এস-২ বিমান বিধ্বস্ত।

২৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৩: এফটি-৭বি বিমান বিধ্বস্ত।

১৯ অক্টোবর ২০০২: এমআই-১৭-২০০ হেলিকপ্টার, কক্সবাজার উখিয়ায় বিধ্বস্ত, ৪ জন নিহত।

৩০ জুলাই ২০০২: এ-৫সি যুদ্ধবিমান, চট্টগ্রামে বিধ্বস্ত, ফ্লাইট লেফট্যানেন্ট আদনান নিহত।

৭ জানুয়ারি ২০০১: এফটি-৭বি ট্রেনার যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত, স্কোয়াড্রন লিডার মুহাম্মাদ মহসিন নিহত।

১৭ নভেম্বর ১৯৯৮: ন্যাঞ্ছাং এ-৫সি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত।

২৬ অক্টোবর ১৯৯৮: এফ-৭এমবি বিধ্বস্ত।

৮ মে ১৯৯৬: একটি মিগ-২১ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত।

১৯৯৪: একটি এফ-৭ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত।

১৯৯৩: দুটি পিটি-৬ ট্রেনিং বিমান সংঘর্ষ, তিন পাইলট নিহত।

১৯৯৩: একটি এফটি-৫ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত, ফ্লাইট লেফট্যানেন্ট কুদ্দুস নিহত।

৩০ এপ্রিল ১৯৯১: ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে ৪০টি এফ-৬ এবং ৪টি মিল-৮ হেলিকপ্টার সম্পূর্ণ ধ্বংস।

বাংলাদেশের কয়েকটি বিমানের ভাগ্যেও জুটেছে এমন ঘটনা। তেমন কিছু আলোচিত বিমান দুর্ঘটনা নিয়ে বিস্তারিত—

১৯৮৪ সাল: এ বছরের ৫ আগস্ট ঢাকায় খারাপ আবহাওয়ার মধ্যে অবতরণ করার সময় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফকার এফ২৭-৬০০ বিমানটি বর্তমান শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছাকাছি একটি জলাভূমির মধ্যে ক্র্যাশ করে। বিমানটি চট্টগ্রামের পতেঙ্গা বিমানবন্দর থেকে পূর্বনির্ধারিত ঘরোয়া যাত্রী ফ্লাইট পরিচালনা করছিল। এতে ৪ জন ক্রু ও ৪৫ জন যাত্রীসহ সবাই নিহত হন।

১৯৯৭ সাল: এ বছরের ২২ ডিসেম্বর ৮৫ জন যাত্রী নিয়ে ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া ফকার এফ২৮-৪০০০ মডেলের বিমানটি দুর্ঘটনার শিকার হয়। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট বিজি-৬০৯ ঢাকা থেকে সিলেট যাচ্ছিল। সিলেট বিমানবন্দরে অবতরণ করার সময় কুয়াশার কারণে রানওয়ের পাদদেশ থেকে ৫ থেকে সাড়ে ৫ কিলোমিটার দূরে উমাইরগাঁও নামক স্থানের একটি ধানক্ষেতে বিধ্বস্ত হয়। এতে ১৭ জন যাত্রী আহত হন।

২০০৪ সাল: এ বছরের ৮ অক্টোবর আবারও সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দুর্ঘটনা ঘটে। এটিও ১৯৯৭ সালে দুর্ঘটনার কবলে পড়া বিমানের মডেলের অনুরূপ ফকার এফ২৮-৪০০০ মডেল। সেদিন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট বিজি-৬০১ ঢাকা থেকে সিলেট যাচ্ছিল। অবতরণের পর রানওয়ে ভেজা থাকার কারণে বিমানটি রানওয়ে থেকে ছিটকে খাঁদে পড়ে যায়। এতে ৭৯ জন যাত্রী ও ৪ জন ক্রুর মধ্যে ২ জন যাত্রী আহত হন।

২০১৫ সাল: এ বছরের আগস্ট মাসে সিলেট বিমানবন্দরের রানওয়েতে আরেক দফা দুর্ঘটনা ঘটে। সেদিন দুবাই থেকে সরাসরি আসা উড়োজাহাজে ২২০ জন যাত্রী ছিলেন। ওই সময় বিজি-৫২ বিমানের ডানদিকের ইঞ্জিনের ভেতর পাখি ঢুকে পড়ে। তখন চারটি ব্লেড ভেঙে ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। সেদিন সকাল ৭টায় রানওয়েতে অবতরণের সময় এ ঘটনা ঘটে। তবে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

২০১৫ সাল: এ বছরের ৯ই মার্চ কক্সবাজারে একটি কার্গো বিমান বঙ্গোপসাগরে বিধ্বস্ত হয়। সে ঘটনায় পাইলটসহ ৩ জন নিহত হন। উড্ডয়নের ৫ মিনিটের মাথায় সাগরে আছড়ে পড়ে বিমানটি।

বিমান দুর্ঘটনার কারণ:

পাইলটের ত্রুটি: পাইলটের ভুল সিদ্ধান্ত, অপর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ, ক্লান্তি বা চাপের কারণে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

যান্ত্রিক ত্রুটি: বিমানের যন্ত্রাংশ বা সিস্টেমের ত্রুটি দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। যেমন, ইঞ্জিনের সমস্যা, ফ্লাইট কন্ট্রোল সিস্টেমের ত্রুটি ইত্যাদি। 

খারাপ আবহাওয়া: খারাপ আবহাওয়া, যেমন- ঝড়, বৃষ্টি, ঘন কুয়াশা ইত্যাদি বিমান চলাচলে বিঘ্ন ঘটাতে পারে এবং দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে।

অন্যান্য প্রযুক্তিগত সমস্যা: নেভিগেশন সিস্টেমে ত্রুটি, যোগাযোগে সমস্যা বা অন্যান্য প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণে দুর্ঘটনা হতে পারে।

ভূমিকম্প বা অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ: ভূমিকম্প বা অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণেও বিমান দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

বিমান দুর্ঘটনার প্রতিকার:

বিমানের নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ: বিমানের নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ এবং টেকনিক্যাল চেক করা উচিত, যাতে কোনো ত্রুটি থাকলে তা দ্রুত চিহ্নিত করে সমাধান করা যায়।

পাইলটদের উন্নত প্রশিক্ষণ: পাইলটদের উন্নত প্রশিক্ষণ দেওয়া উচিত, যাতে তারা যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত থাকে। 

আবহাওয়া পূর্বাভাসের আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার: আবহাওয়ার পূর্বাভাস জানার জন্য আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা উচিত, যাতে খারাপ আবহাওয়ার কারণে দুর্ঘটনা এড়ানো যায়।

জরুরী অবতরণের জন্য উন্নত প্রযুক্তি: বিমানের জরুরী অবতরণের জন্য উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা উচিত, যাতে বিমানটি নিরাপদে অবতরণ করতে পারে।

অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা: বিমানে উন্নত অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা থাকা উচিত, যাতে আগুন লাগলে তা দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

ব্ল্যাকবক্স পুনরুদ্ধার: বিমান দুর্ঘটনায় ব্ল্যাকবক্স (ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার) উদ্ধার করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি থেকে দুর্ঘটনার কারণ জানা যায়।

জরুরী অবতরণের জন্য প্রস্তুতি: যাত্রীদের জরুরী অবতরণের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে এবং কর্তৃপক্ষের নির্দেশাবলি কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হবে। 

ধোঁয়া থেকে বাঁচা: আগুন লাগলে দ্রুত নাক ও মুখ কাপড় দিয়ে ঢেকে নিতে হবে, যাতে ধোঁয়া শ্বাসনালিতে প্রবেশ করতে না পারে।

দ্রুত বিমান থেকে বের হওয়া: আগুন বা ধোঁয়ার কারণে দেরি না করে দ্রুত বিমান থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করতে হবে।

সফরে ইসলামের নির্দেশনা মেনে চলা:

সফরে পঠিতব্য দু‘আ ও যিকির-আযকার যথারীতি পাঠ করা। নিচে এ সংক্রান্ত আলোচনা উল্লেখ করা হলো:

(১) বাড়ির বাহিরে বিশেষত দূরবর্তী কোনো জায়গায় সফর করার ইচ্ছা করলে সেক্ষেত্রে মুস্তাহাব হলো দুই রাকাআত ছালাত আদায় করে তারপর বের হওয়া। এটা ব্যক্তিকে মন্দ প্রবেশ ও বহির্গমন থেকে রক্ষা করবে।[1]

(২) বাড়ি থেকে সফরে বের হওয়ার সময় পরিজনের উদ্দেশ্যে এই দু‘আ বলবে,

أَسْتَوْدِعُكُمُ ٱللَّهَ ٱلَّذِي لَا تَضِيعُ وَدَائِعُهُ.

অর্থ: ‘আমি তোমাদেরকে সেই আল্লাহর নিকট আমানত রাখছি, যার আমানত নষ্ট হয় না’।[2]

(৩) কেউ সফর করলে পরিজনের উচিত বিদায়কালে তার উদ্দেশ্যে নিম্নের দু‘আ বলা,

(ক)

أَسْتَوْدِعُ ٱللَّهَ دِينَكَ وَأَمَانَكَ وَخَوَاتِيمَ عَمَلِكَ.

অর্থ: ‘আমি তোমার দ্বীন, আমানত এবং আমলের শেষ পরিণতিকে আল্লাহর নিকট গচ্ছিত রাখছি’।[3]

(খ)

زَوَّدَكَ اللهُ التَّقْوَى وَغَفَرَ ذَنْبَكَ ويَسَّرَ لَكَ الـخَيْرَ حَيْثُمَا كُنْتَ.

অর্থ: ‘আল্লাহ তোমাকে তাক্বওয়ার পাথেয় দান করুন, তোমার গোনাহ মাফ করুন এবং যেখানেই থাক, তোমার জন্য কল্যাণকে সহজ করুন’।[4]

(গ)

ٱللَّهُمَّ اطْوِ لَهُ ٱلْبُعْدَ وَهَوِّنْ عَلَيْهِ ٱلسَّفَرَ.

অর্থ: ‘হে আল্লাহ! তুমি ওর জন্য (সফরের) দূরত্বকে সংকুচিত করে দাও এবং সফরকে সহজ করে দাও’।[5]

(৪) সফরের জন্য যখন বাড়ি থেকে বের হবে, তখন বলবে,

بِسْمِ اللَّهِ تَوَكَّلْتُ عَلَى اللَّهِ لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللَّهِ.

অর্থ: ‘আল্লাহর নাম নিয়ে বের হচ্ছি, আল্লাহর উপর ভরসা করছি, আর আল্লাহর তওফীক্ব ছাড়া পাপ থেকে ফিরার এবং সৎকাজ করার শক্তি কারও নেই’।

এই দু‘আ পড়ে ঘর থেকে কোথাও বের হলে পাঠকারীর জন্য আল্লাহ যথেষ্ট হন, তাকে পথ নির্দেশ করা হয়, সকল প্রকার বিপদ থেকে রক্ষা করা হয় এবং শয়তান তার নিকট থেকে দূরে সরে যায়।[6]

(৫) আকাশের দিকে দৃষ্টিপাত করে এই দু‘আ পড়তে হয়,

اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ أَنْ أَضِلَّ أَوْ أُضَلَّ أَوْ أَزِلَّ أَوْ أُزَلَّ أَوْ أَظْلِمَ أَوْ أُظْلَمَ أَوْ أَجْهَلَ أَوْ يُجْهَلَ عَلَيَّ.

অর্থ: ‘হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি, আমি স্পষ্ট হই বা আমাকে ভ্রষ্ট করা হয়, আমার পদস্খলন হয় বা পদস্খলন করানো হয়, আমি অত্যাচারী হই অথবা অত্যাচারিত হই অথবা আমি মূর্খামি করি অথবা আমার প্রতি মূর্খামি করা হয়—এসব থেকে’।[7]

(৬) আরও বলবে,

بِسْمِ اللَّهِ، وَالْحَمْدُ للَّهِ سُبْحَانَ الَّذِي سَخَّرَ لَنَا هَذَا وَمَا كُنَّا لَهُ مُقْرِنِينَ، وَإِنَّا إِلَى رَبِّنَا لَمُنقَلِبُونَ، «الْحَمْدُ لِلَّهِ، الْحَمْدُ لِلَّهِ، الْحَمْدُ لِلَّهِ، اللَّهُ أَكْبَرُ، اللَّهُ أَكْبَرُ، اللَّهُ أَكْبَرُ، سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ إِنِّي ظَلَمْتُ نَفْسِي فَاغْفِرْ لِي؛ فَإِنَّهُ لاَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلاَّ أَنْتَ.

অর্থ: ‘আল্লাহর নামে; আর সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য। পবিত্র মহান সেই সত্তা, যিনি একে আমাদের জন্য বশীভূত করে দিয়েছেন, অন্যথা আমরা একে বশীভূত করতে সক্ষম ছিলাম না। আর আমরা অবশ্যই প্রত্যাবর্তন করব আমাদের রব্বের দিকে। সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য, সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য, সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য। আল্লাহ সবচেয়ে বড়, আল্লাহ সবচেয়ে বড়, আল্লাহ সবচেয়ে বড়। হে আল্লাহ! আপনি পবিত্র-মহান; আমি আমার নিজের উপর যুলম করেছি, সুতরাং আপনি আমাকে মাফ করে দিন। কেননা, আপনি ছাড়া গুনাহ মাফ করার আর কেউ নেই’।[8]

(৭) আরও বলবে,

اللَّهُ أَكْبَرُ، اللَّهُ أَكْبَرُ، اللَّهُ أَكْبَرُ، سُبْحَانَ الَّذِي سَخَّرَ لَنَا هَذَا وَمَا كُنَّا لَهُ مُقْرِنِينَ * وَإِنَّا إِلَى رَبِّنَا لَمُنقَلِبُونَ «اللَّهُمَّ إِنّا نَسْأَلُكَ فِي سَفَرِنَا هَذَا البِرَّ وَالتَّقْوَى، وَمِنَ الْعَمَلِ مَا تَرْضَى، اللَّهُمَّ هَوِّنْ عَلَيْنَا سَفَرَنَا هَذَا وَاطْوِ عَنَّا بُعْدَهُ، اللَّهُمَّ أَنْتَ الصَّاحِبُ فِي السَّفَرِ، وَالْخَليفَةُ فِي الْأَهْلِ، اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ وَعْثَاءِ السَّفَرِ، وَكَآبَةِ الْمَنْظَرِ، وَسُوءِ الْمُنْقَلَبِ فِي الْمَالِ وَالْأَهْلِ.

অর্থ: ‘আল্লাহ সবচেয়ে বড়, আল্লাহ সবচেয়ে বড়, আল্লাহ সবচেয়ে বড়। পবিত্র মহান সেই সত্তা, যিনি আমাদের জন্য একে বশীভূত করে দিয়েছেন, অন্যথা আমরা একে বশীভূত করতে সক্ষম ছিলাম না। আর আমরা অবশ্যই আমাদের রব্বের নিকট প্রত্যাবর্তন করব। হে আল্লাহ! আমরা এই সফরে আপনার কাছে চাই পুণ্য ও তাক্বওয়া এবং এমন কাজ যা আপনি পছন্দ করেন। হে আল্লাহ! আমাদের জন্য এই সফরকে সহজ করে দিন এবং এর দূরত্বকে আমাদের জন্য কমিয়ে দিন। হে আল্লাহ! আপনিই সফরে আমাদের সাথী এবং আমাদের পরিবার-পরিজনের তত্ত্বাবধায়নকারী। হে আল্লাহ! আমরা আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করি সফরের কষ্ট-ক্লেশ থেকে, অবাঞ্ছিত অবস্থার দৃশ্য থেকে এবং সম্পদ ও পরিবারে অনিষ্টকর প্রত্যাবর্তন থেকে’।

(৮) কোনো নগর বা জনপদে প্রবেশ করার সময় বলবে,

اللَّهُمَّ رَبَّ السَّمَوَاتِ السَّبْعِ وَمَا أَظْلَلْنَ، وَرَبَّ الأَرَضِينِ السَّبْعِ وَمَا أَقْلَلْنَ، وَرَبَّ الشَّيَاطِينِ وَمَا أَضْلَلْنَ، وَرَبَّ الرِّيَاحِ وَمَا ذَرَيْنَ، فَإِنَّا نَسْأَلُكَ خَيْرَ هَذِهِ الْقَرْيَةِ وَخَيْرَ أَهْلِهَا، وَنَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّهَا وَشَرِّ أَهْلِهَا وَشَرِّ مَا فِيهَا.

অর্থ: ‘হে আল্লাহ! হে সপ্তাকাশ ও যা কিছুকে তা ছেয়ে আছে তার প্রতিপালক! হে সপ্ত পৃথিবী ও যা কিছু তা বহন করে তার প্রতিপালক! হে শয়তানদল ও তারা যাদেরকে ভ্রষ্ট করে তাদের প্রতিপালক! হে বায়ু ও যা কিছু তা উড়িয়ে থাকে তার প্রভু! আমি তোমার নিকট এই গ্রাম ও গ্রামবাসীর এবং এর মধ্যে যা কিছু আছে তার অমঙ্গল হতে পানাহ চাচ্ছি’।[9]

(৯) সফরে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে ‘বিসমিল্লাহ’ বলবে। এতে শয়তান মাছির মতো নগণ্য হয়ে যায়।[10]

(১০) উঁচুতে আরোহণ করার সময় ‘আল্লাহু আকবার’, আর নিচে নামার সময় ‘সুবহানাল্লাহ’ বলা।[11]

(১১) সফরে বা অন্য অবস্থায় কোনো ঘরে অবতরণ করলে এই দু‘আ বলা,

أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ.

অর্থ: ‘আল্লাহর পরিপূর্ণ কালেমাসমূহের অছীলায় আমি তাঁর নিকট তাঁর সৃষ্টির ক্ষতি থেকে আশ্রয় চাই’।[12]

(১২) সফর থেকে ফেরার সময় প্রতিটি উঁচু স্থানে তিন বার তাকবীর দিবে, তারপর বলবে,

لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ، وَلَهُ الْحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ، آيِبُونَ، تَائِبُونَ، عَابِدُونَ، لِرَبِّنا حَامِدُونَ، صَدَقَ اللَّهُ وَعْدَهُ، وَنَصَرَ عَبْدَهُ، وَهَزَمَ الْأَحْزابَ وَحْدَهُ.

‘একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই, তাঁর কোনো শরীক নেই; রাজত্ব তাঁরই, সমস্ত প্রশংসাও তাঁর; আর তিনি সকল কিছুর উপর ক্ষমতাবান। আমরা প্রত্যাবর্তনকারী, তওবাকারী, ইবাদতকারী এবং আমাদের রব্বের প্রশংসাকারী। আল্লাহ তাঁর ওয়াদা বাস্তবায়ন করেছেন, তিনি তাঁর বান্দাকে সাহায্য করেছেন, আর তিনি সকল বিরোধী দল-গোষ্ঠীকে একাই পরাস্ত করেছেন’।[13]

(১৩) আর তাতে আরও যোগ করতেন,

آيِبُونَ، تائِبُونَ عَابِدُونَ لِرَبِّنَا حَامِدُونَ.

‘আমরা প্রত্যাবর্তনকারী, তওবাকারী, ইবাদতকারী এবং আমাদের রব্বের প্রশংসাকারী’।[14]

(১৪) সফর থেকে ফিরে এসেও দুই রাকআত ছালাত পড়া সুন্নাত।[15]

(১৫) সালাম দিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করা; এতে সে ব্যক্তি আল্লাহর দায়িত্বে চলে যায়।[16]

পরিশেষে বলতে চাই, প্রশিক্ষণ বিমানের অনুশীলন জনবসতি থেকে দূরে নির্ধারিত নিরাপদ এলাকায় পরিচালনা করা উচিত। প্রশিক্ষণরত পাইলটদের নিয়ন্ত্রণে ভুলের সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই জনবসতিপূর্ণ এলাকা বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আকাশসীমায় অনুশীলন ঝুঁকিপূর্ণ। দুর্ঘটনা ঘটলে জানমালের বড় ক্ষতি হতে পারে। এজন্য এমন এলাকাকে অনুশীলনের জন্য বেছে নিতে হবে, যেখানে মানুষের বসবাস ও জনসমাগম কম এবং সম্ভাব্য দুর্ঘটনায় ক্ষতির আশঙ্কাও কম থাকবে। এতে প্রশিক্ষণও নিরাপদ হবে, জনগণের নিরাপত্তাও নিশ্চিত হবে।

প্রকৃতপক্ষে বিমান দুর্ঘটনা একটি জটিল সমস্যা, যা বিভিন্ন কারণের সমন্বয়ে ঘটে থাকে। এর মধ্যে রয়েছে যান্ত্রিক ত্রুটি, আবহাওয়ার অবস্থা এবং পাইলটের ভুল বা ত্রুটি। বিমান দুর্ঘটনা প্রতিরোধে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ, উন্নত প্রশিক্ষণ এবং আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার অপরিহার্য। তাই বিমান দুর্ঘটনা একটি সম্মিলিত সমস্যা, যা প্রতিরোধ করার জন্য বিমান সংস্থা, সরকার এবং যাত্রী সকলেরই সচেতন হতে হবে। এছাড়াও, যাত্রী নিরাপত্তা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং জরুরী পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণ করা উচিত।

ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ

চিকিৎসক, কলামিষ্ট ও গবেষক; প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি।


[1]. সিলসিলা ছহীহা, হা/১৩২৩।

[2]. মুসনাদে আহমাদ, ২/৪০৩; ইবনু মাজাহ, ২/১৩৩।

[3]. মুসনাদে আহমাদ, ২/৭; তিরমিযী, ২/১৫৫।

[4]. তিরমিযী, হা/১৫৫।

[5]. তিরমিযী, হা/৩৪৪৫।

[6]. তিরমিযী, ৩৪২৬, হাদীছ ছহীহ।

[7]. তিরমিযী, হা/৫০৯৪, হাদীছ ছহীহ।

[8]. আবূ দাঊদ, হা/২৬০২; তিরমিযী, হা/৩৪৪৬।

[9]. ইবনুস সুন্নী, ৫২৪।

[10]. আবূ দাঊদ, হা/৪৯৮২।

[11]. ছহীহ বুখারী, হা/২৯৯৩।

[12]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৭০৯।

[13]. ছহীহ বুখারী, হা/১৭৯৭; ছহীহ মুসলিম, হা/১৩৪৪।

[14]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৩৪২।

[15]. সিলসিলা ছহীহা, হা/১৩২৩।

[16]. আদাবুল মুফরাদ, হা/১১০৪।

Magazine