বাংলাদেশে কতজন বিদেশী কর্মী কর্মরত রয়েছে, তার কোনো সঠিক হিসাব পাওয়া যায় না। দেশের কোনো সংস্থার কাছেই এর কোনো পরিসংখ্যান নেই। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে ৪৫ হাজার বিদেশী কর্মী কাজ করছে, যার মধ্যে মাত্র ৭ হাজার কর্মীর ওয়ার্ক পারমিট আছে। বিডার মতে, ওয়ার্ক পারমিটবিহীন কর্মীরা বছরে অন্তত ৫ বিলিয়ন ডলার রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে। আবার অনেকের মতে, বাংলাদেশে অন্তত ২০ লাখ বিদেশী কর্মী বৈধ বা অবৈধভাবে কাজ করছে, যাদের বেশির ভাগই ভারতীয়। ২০১৫ সালে সিপিডি’র দেওয়া প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতীয়দের মধ্যে কমপক্ষে ৫ লাখ অবৈধ শ্রমিক হিসাবে কাজ করছে। ভারতীয় নাগরিকেরা প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে কম করে হলেও ১০ বিলিয়ন ডলার নিয়ে যায়। ভারতীয় ছাড়াও চীন, শ্রীলঙ্কা, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ডসহ বিশ্বের অর্ধ শতাধিক দেশের নাগরিক এখানে বৈধ-অবৈধভাবে কাজ করে। দক্ষ শ্রমিকের অভাবই এর কারণ এবং এই সুযোগটি ভারত খুব ভালোভাবেই নিয়ে যাচ্ছে।
উল্লেখ করা যেতে পারে, বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশীদের সংখ্যা এক কোটির ওপর। প্রতিবছর রেমিট্যান্স হিসাবে তারা পাঠায় ১৫-১৬ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে ভারতীয়রাই যদি ৫-১০ বিলিয়ন ডলার নিয়ে যায় তাহলে অবশিষ্ট থাকলো কী? এই সঙ্গে অন্যান্য দেশের কর্মীরাও তো রয়েছে। জনশক্তি, প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থান ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্যমতে, ২০১৮ সালে বিদেশে কর্মসংস্থান হওয়া বাংলাদেশী কর্মীদের মধ্যে ৪৩ শতাংশ দক্ষ, বাকি ৫৭ শতাংশ অদক্ষ। বিএমইটির আরও তথ্য, ১৯৭৬ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত প্রায় ১ কোটি ২২ লাখ কর্মীর বিদেশে কর্মসংস্থান হয়েছে, যাদের অর্ধেকই অদক্ষ। দেশে কারিগরি শিক্ষার প্রসার ঘটলে দক্ষ শ্রমিক সংকট কমবে এবং বাড়বে কর্মসংস্থান। প্রয়োজনে কর্মী তৈরির উদ্যোগ নিতে হবে। কারিগরি শিক্ষার ক্ষেত্রে সরকারকে অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে। ভারতীয়রা আমাদের দুর্বলতার সুযোগে এখানে এসে বৈধ-অবৈধভাবে কাজ করবে এবং কাড়ি কাড়ি টাকা নিয়ে যাবে তা হতে পারে না।